এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বিশ্বাস অবিশ্বাস ধর্ম অধর্ম --- কিছু এলোমেলো ব্যক্তিগত কথন

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৯৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • আমার শৈশবের অনেকখানি আর কৈশোর ছিল ভারী একলামত| আমি যখন আট নয় বছরের মেয়ে, তখনই আমাকে প্রায় পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত| প্রায় বললাম, কারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আমার মতামত গ্রাহ্য করা হত না, কিন্তু কাজকর্মে, আচার আচরণে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত ব্যবহার আশা করা হত| আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম ভাইয়ের আগে জন্মানোয় আমাদের প্রাচুর্য্যের সময়ের পুরোটা, আট বছর ধরে আমি ভোগ করেছি, কিন্তু ভাই মাত্র দুই বছর ----- তাই এখন আর আমার কিছুই প্রাপ্য নয়|

    নয় বছর বয়সেই আমার পাড়ার মাঠে খেলাধুলো একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমাকে বিকেলে বাড়ী থেকে বেরোতেই দেওয়া হত না, 'বড় হয়ে গেছি' এই অজুহাতে আমার বিকেলের খেলাধুলো বন্ধ হয়| আমার মামাবাড়ী আবার খুব ধার্মিক টাইপেরও ছিল| প্রতিদিন দুইবেলা নিত্যপুজো ছাড়াও প্রতি মাসে পুর্নিমার দিন সত্যনারায়ণ পুজো, দোল, জন্মাষ্টমী, বেশ কয়েকটা সংক্রান্তি, অরণ্যষষ্ঠী (যেটাকে জামাইষষ্ঠী বলে), ইতুপুজো হত| আর হত মাটির মূর্তি কিনে এনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো আর সরস্বতীপুজো| এইসব পুজোর পরে আমাদের চরণামৃত নিতে ডাকত| এইখানে একটা মজা হত| আমি যদি আগেও পৌঁছে যেতাম তবু কিন্তু আমাকে কখনই আগে চরণামৃত বা প্রসাদ দিত না দিদা| ভাই আগে এলে ভাইকে দেবে, তারপর অপেক্ষা করবে কখন মামাতোদিদি আসবে, ওকে দিয়ে তারপর আমাকে| আর যদি মামাতোদিদি আগে পৌঁছয় তাহলে ওকে, তারপর ভাইকে তারপর সবশেষে আমাকে|

    তো এইসব দেখে দেখে আমি ক্রমশঃ ঠাকুরবিমূখ হয়ে উঠছিলাম| এদিকে আমার মা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে 'বৈধব্য' পালন করতেন, কতটা স্বেচ্ছায় আর কতটা কোনও এক অনির্দেশ্য পাপের ভয়ে তা সম্ভবতঃ উনি নিজেও তলিয়ে ভাবেন নি কোনওদিন| প্রতিদিন একবেলা আতপচালের ভাত আর মাসে দুটো একাদশীতে অন্নবর্জিত আহার মা'র পেটে সহ্য হত না, নানা গোলমাল লেগেই থাকত কিন্তু তাও নিয়মের পরিবর্তন হত না| বাড়ীতে বেড়াতে আসা সহানুভুতিশীল আত্মীয় প্রতিবেশীদের কেউ কেউ আবার মা'কে আমাদের জন্য মাছ মাংস রান্না না করবার সুপরামর্শ দিতেন --- 'বিধবা মানুষ তুমি কেন আবার আমিষ ঘাঁটবে?' মা যখন জানাতেন যে আমাদের এই বাড়বৃদ্ধির বয়সে মাছমাংস দরকার, তখন এঁরা বলতেন 'মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে, দুদিন বাদে শ্বশুরবাড়ী যাবে, ওকেই দাও ওগুলো রান্না করতে|' এইসময় দিদার একেবারে বাঁধা মন্তব্য ছিল 'হুঁঃ রান্না! সারাদিন বই মুহ বইস্যা থাকে, মেয়েরে শ্বশুরবাড়ীর সামনের দরজা দিয়া ঢুকাইয়া পাছদরজা দিয়া বাইর কইর্যাত দিবনে|' অতঃপর আগন্তুকরা এবং উপস্থিত আত্মীয়রা মিলে নয় দশ বছরের 'বুড়োধাড়ি' আমার বিবেক জাগ্রত করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন| এতেকরে ঠাকুর বাকুরের সাথে সাথেই আমি ক্রমশঃ রান্নাবান্নার প্রতিও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছিলাম| কিন্তু সে অন্য গল্প, এখন থাক|

    তো, বুড়োধাড়ি আমি রান্না করতে না এগিয়ে গেলে এই সব ঠাকুরেরা নাকি দেখে দেখে পাপ দেবে, মা আমাদের মত সেদ্ধ চালের ভাত খেলেও ঠাকুর পাপ দেবে| আবার ঠাকুর সম্পর্কে বা বড়দের কোনও কাজ সম্পর্কে বেশী প্রশ্ন করলেও ঠাকুর পাপ দেবে| সেই পাপের ফল কখনও যদি পরীক্ষায় খুব খারাপ নম্বর হয় তো কখনও তা বাবার নেই হয়ে যাওয়া,কখনও বা তা আরও অনুচ্চার্য্য অনির্দেশ্য কোনও ভয়| এদিকে ভয়ডর আমার প্রথম থেকেই বেশ কমসম আর সেটা বড়রা জানেও| আমার মায়ের নিয়ম ছিল সন্ধ্যের বাতি জ্বলার আগে ঘরে ঢুকতে হবে| আমার খুব ছোটবেলায়্ আমরা কটকে থাকতাম| সেখানে একবার বিকেলে খেলে ফিরতে দেরী হওয়ায় মা আমাকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়| সেই ঘরে মা'র ঠাকুরের ছোট ছোট ছবি, মুর্তি থাকত আর থাকত এটাসেটা সংসারের নানান জিনিষ, বাবার কিছু কাগজপত্র ইত্যাদি| তো, মা'র পরিকল্পনা ছিল আমি কান্নাকাটি করলে ভবিষ্যতে আর দেরী না করার কড়ারে খুলে দেবে| আমি নাকি কান্নাকাটি না করে নিশ্চিন্তে আসন থেকে তুলে ঠাকুর আর ঠাকুরের ছোট্ট ছোট্ট থালা গেলাস জানলা দিয়ে নীচে ফেলছিলাম| আমাদের বাড়ীর পেছনদিকটায় ছিল সুন্নি মুন্নিদের ঘর| একটা উঠোনের চারিদিকে গোলকরে পরপর কিছু ঘর, ৫-৬টা পরিবার থাকত| আমার এসব কিছুই মনে নেই, শুধু আবছা মনে পড়ে থালা গেলাসগুলো নীচের উঠোনে পড়ে একটা সুন্দর ঠননন ঠননন আওয়াজ হচ্ছিল| সুন্নিরা মেথর ছিল, তাই নাকি ভয়ে ঠাকুরের মুর্তি বা ছবিতে হাত না দিয়ে হাঁউমাউকরে চেঁচিয়ে মা'কে ডাকে| তা আমার বছর তিনেক বয়সের এই কালাপাহাড়সদৃশ কর্মটা এইসময় বারেবারে সবাই মা'কে মনে করিয়ে দিয়ে সাবধান করে দেয় যে আমার পাপের পরিমাণের একটা নিয়মিত চেক-ব্যালেন্স দরকার; নচেৎ নিজে তো পাপে ডুববোই সঙ্গে সঙ্গে মা আর ভাইকেও ডোবাবো|

    তো এইসব দেখেশুনে আমার ঠাকুর বাকুরে অভক্তি, বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে| অন্যত্র সেকথা লিখেওছি, এখানে আরেকবার টুকে দিই| ক্লাস নাইনে আমাদের সহায়ক পাঠ হিসেবে বাংলায় একটা গল্প আর একটা কবিতার বই ছিল, 'গল্পসংকলন' আর 'কবিতাসংকলন'| কবিতাসংকলনেই পড়ি 'চাঁদ সদাগর' কবিতাটা| এই কবিতাটা আমার একেবারে মাথায় গেঁথে যায়| আমার বাড়ীর খাতায় নীল আর কালো কালির কলম দিয়ে বড় বড় করে লিখে রাখি ----
    'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
    মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'

    চন্নামিত্তি ও প্রসাদ বিতরণের ধরণ দেখে যে বিতৃষ্ণা শুরু হয়েছিল, মায়ের বৈধব্যপালন যার ভিৎ তৈরী করেছিল এই কবিতা তাকে শক্তপোক্ত চারটে দেওয়াল দেয়| তাই এরপরে অতি তুচ্ছ কারণে বড়মামা প্রচন্ড বকে এবং মা বলে 'ঠাকুরকে ডাক যাতে মানুষ হতে পারিস, অনেক বড় হতে পারিস' আমি প্রবল বিতৃষ্ণা ও বিরক্তিতে ভাবি ঠাকুর আবার কী! ঠাকুর ফাকুর সব বাজে কথা| এরপরে যখন দিদাও ছুতোনাতায় গল্প করা নিয়ে বকতে থাকে, পড়াশোনা না করা নিয়ে ব্কতে থাকে, তখন আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, একদিন সুযোগ পেয়েও যাই| দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা আর মা মেজমামার বাড়ী তখন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট খাট্ থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি| দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি --- তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই --- তোষক সরিয়ে ফর মুখগুলোতে পা ঘষি --- সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি --- এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়| এই মূর্তিগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, লক্ষ্মী সরস্বতীর মুখে ঘষে ঘষে পায়ের পাতা মুছি --- পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই --- তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি --- আর মনে মনে বলে আসি যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত অন্যায় করে, অন্যায় মিথ্যে বলে সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম --- ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি মানি না| আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না ওদের উত্তরাধিকার|

    সরস্বতীপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে হয় বাড়ীতে একবার আবার স্কুলে গিয়েও| বাড়ীতে আমি চেষ্টা করি না দেওয়ার, কিন্তু হয় না| মা জোর করে ধমক দিয়ে হাত বা চুল ধরে টেনে অঞ্জলী দেওয়াতে নিয়ে আসে, কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোয় না 'না আমি অঞ্জলী দেব না', বরং মুখ বুজে ফুল বেলপাতা হাতে নিই --- একটাও মন্ত্র উচ্চারণ করি না বরং মনে মনে আওড়াই 'মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর' ---- আবার ফুল বেলপাতা ছুঁড়েও দিই মূর্তির পায়ের দিকে| মনে মনে যা তীব্রভাবে অস্বীকার করে চলি মুখে কিছুতেই তার প্রকাশ হয় না বরং দিব্বি সকলের মন পছন্দ কাজগুলো আপাতভাবে চালু থাকে --- মনে মনে বলি এই ঠাকুরটা আসলে কেউ নয় কিচ্ছু নয় আমরা ফুল বেলপাতা দিচ্ছি তাই --- কিন্তু তাহলে বাকীদের বলে দিচ্ছি না কেন? মা বকবে? মারবে? বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বলবে 'জিজির বাড়ী চলে যা' --- হ্যাঁ বলতেও পারে ---- তাহলে আপাতত এসব না বলাই ভাল --- যখন স্বাধীন হয়ে যাব, চাকরি করব তখন বলব -- তখন কেউ কিছু বলতে পারবে না -- কিছু বললেও তখন আর আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না --- অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন --- নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায় --- আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি| নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি --- মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল 'তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি 'না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত, মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবারি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে| আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়| আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের ছবিগুলো দেখি বরং|

    তো, এইসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে স্কুল পাশ করে কলেজে ঢুকি আর আরো বেশী করে লোকজনের 'ঠাকুর ঠাকুর' দেখে দ্বিধা কেটে যেতে থাকে, নিজের প্রত্যয়ে স্থির হয়ে উঠতে থাকি| বাড়ীর ধমক, মায়ের হাতের থাপ্পড়, কিল কিছুই আর আমাকে কোনও ঠাকুরের সামনে মাথা নত করাতে, প্রণাম করাতে পারে নি| এইসব বকাবকির মধ্যে এইটুকু লাভ হয়েছে মা মাসে দুবার একাদশী করাটা বন্ধ করেছে আর আতপ চাল খাওয়াটাও| সাদা ব্লাউজ ছেড়ে অল্প কিছুদিন রঙীন ব্লাউজ, শাড়ীর পাড়ের সাথে রং মিলিয়ে, তাও পরতে শুরু করে| কিন্তু ঐটুকুই, ওর চেয়ে বেশী আর কিছু পরিবর্তন করাতে পারি নি, মাছ মাংস খাওয়াতে পারি নি| দীর্ঘ ১৫ - ১৬ বছরের অনভ্যাসে মা'র ততদিনে মাছে গন্ধ লাগে| দিদা, মা, অন্য আত্মীয় পরিচিতরা বলেছে সেরকম সেরকম বিপদে পড়লে ঠিক ঠাকুরকে ডাকবি| নাঃ ডাকি নি| বি এসসি অনার্সে উপর্যুপরি ফেল করে শুরু থেকে আবার শুরু করতে হয়েছে, চাকরী, একটা ভদ্রস্থ আয় হয় এমন চাকরীর জন্য দীর্ঘদিন লড়তে হয়েছে, মন্দার সময় চাকরী থেকে ছাঁটাই হয়ে গেছি ---- কিন্তু তবু কোনওদিন ঠাকুরবাকুরে বিশ্বাস আসে নি আর| এইসব লড়াইয়ের গল্প বলতে গেলে মস্ত উপন্যাস হয়ে যাবে ---- গাড়ী কিনে শোরুম থেকে আনতে গিয়ে দেখেছিলাম শোরুমের লোকজন একটা মোটা গাঁদার মালা, আস্ত নারকেল আর মিষ্টির বাক্স নিয়ে রেডী 'পুজা চড়হানেকে লিয়ে'| তা মালা আর নারকেল ফেরত দিয়ে মিষ্টিটা ওঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত কিঞ্চিৎ খুশী, কিন্তু ভারী অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন একটু বয়স্ক হোমরা চোমরাগণ| একই ব্যপার বাড়ী কিনে পুজো, গৃহপ্রবেশ, হাউস ওয়ার্মিং পার্টি কিচ্ছুটি না করায়| কিন্তু নাঃ আমার মা দিদাদের উত্তরাধিকার আমি আর বহন করি না|

    কথা হল এই অস্বীকার না করার জন্য আমার ওপরে যতটা সম্ভব মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু একেবারে প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয় নি| এতদূর যে যায় নি, সে কি নিতান্তই আমি অর্থনৈতিকভাবে এবং সর্বোতভাবে স্বাধীন বলে? না কি লোকজন আসলে অতটা গুরুত্ব দেয় নি, নিজেরা যে যেমন আছে বিশ্বাস আর গোঁড়ামি নিয়ে তেমনি থেকেই গেছে বলে? আমার অবিশ্বাস কাউকে বদলাতে বাধ্য করে নি, অন্য কারো জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই কি আমার অবিশ্বাস আমি চর্চা করে যেতে পারি? পদাবলী কীর্তনকে পাঁঠাবলী কীর্তন বলে অভিহিত করেছি, দুই একবার থানায়ও ফোন করেছি আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে, কিন্তু কখনও জনমত সংগঠনের চেষ্টা করি নি এই শব্দ দানবের বিরুদ্ধে| বোঝানোর চেষ্টা করি নি ছোট ছোট বাচ্চাদের কানের কি ভীষণ ক্ষতি হয় এই বছরে তিরিশবার বিভিন্ন পুজোর সমাইক অত্যাচারে| যারা চেষ্টা করেছেন অন্যকে বোঝানোর, লিখেছেন অন্ধত্বের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রাণ দিতে হচ্ছে একে একে| মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নরেন্দ্র দাভোলকর খুন হয়েছেন ২০১৩র আগস্টে, ২০১৫র ফেব্রুয়ারীতে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, খুন হয়েছেন তার পরে পরে আরো অনেকে| বিভিন্ন খুনের জাস্টিফিকেশান হিসেবে এসেছে তথাকথিত নাস্তিকতার অভিযোগ| আর অন্যদিকে উদ্দাম হয়ে উঠেছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দাপাদাপি| একদিকে গোটা ভারত জুড়ে দাপাচ্ছে ব্রাহ্মণ্য ও উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ব আর একদিকে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে দাপাচ্ছে শারিয়া আইনের প্রবর্তনে উন্মুখ সালাফিজম|

    এই অদ্ভুত কালো দুঃসময়ে জোর গলায় বলবার সময় এসেছে আমি মানিনা আপনাদের এই ধর্ম ও তার উগ্র প্রচার| আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে উগ্র ধর্মাচরণ প্রবর্তনে বাধা দেব| আমি আপনার ঘরে ঢুকে দেখতে যাব না আপনার ফ্রীজে বা ভাঁড়ারঘরের মিটসেফে গরু কিম্বা শুয়োরের মাংস রাখা আছে কিনা, ঘরের কোণায় ঠাকুরের পট আছে নাকি নামাজের ব্যবস্থা --- কিন্তু প্রকাশ্যে চৌমাথার ওপরে আপনি এই নিয়ম প্রবর্তন করতে চাইলে আমি বাধা দেব| আমি বিচার চাই সবকটি হত্যাকান্ডের --- বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব যে বিচার হয় নি, আমি বিচার চাই| না ফাঁসি চাই না, বিচার চাই|
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 140.160.143.215 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৭:৫৪57397
  • সেকুলারিজমের ভারতীয় সংজ্ঞা তা বলে না।
  • i | 134.168.34.244 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৯:১৫57383
  • খানিকটা আগে পড়েছি কোথাও? ছোটোবেলার গল্পে না নাস্তিক হওয়ার টইতে এখন মনে পড়ছে না সঠিক।
    মতে মিলুক না মিলুক ,লেখার ভাব পছন্দ হোক নাই হোক, দ র লেখার সততা আমাকে মুগ্ধ করে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
    বলছিলাম,নাস্তিক হওয়ার গল্পগুলি একত্র করে কোথাও রাখলে হ'ত না? অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর এক বছর হ'ল। একটা বিশেষ বুলবুলভাজা সংখ্যা করা যায় যেখানে এই গল্পগুলি , সঙ্গে আরো কিছু প্রয়োজনীয় লেখা থাকবে?
  • d | 144.159.168.72 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৯:২৭57384
  • মতে না মিলতেই পরে। কিন্তু লেখার ভাবে কী অসুবিধে হল একটু ডিটেলে বলা যাবে?
  • i | 134.168.34.244 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৯:৩৪57385
  • এই লেখাটা নয়, এমনিই যা যা পড়েছি এ যাবৎ সব মিলিয়ে বললাম আর কি।
    এই লেখাটায় লেখক যা বলতে চেয়েছেন তার এক্সপ্রেশন একদমই ঠিক। আর সততার কথা তো বললামই।
  • de | 69.185.236.54 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৯:৫৪57386
  • খুব তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে পড়লাম - তাতেই অসাধারণ লাগলো! তুলে রাখলাম, পরে ধীরেসুস্থে পড়বো -
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১০:১৩57387
  • আমিও পড়েছি। আমার একটা জিনিষ মনে হয়েছে। ধার্মিক নাস্তিকের সঙ্গে ভালমানুষ মন্দমানুষ ভালমন্দে মেশানো মানুষ সবকিছু মিশে গেছে। ধার্মিক মানে এইরকম, নাস্তিক মানে ঐরকম - এইটাইপ লেগেছে। কিছু লোক বা সমাজ কারোকে বুলি করছে এবং ঘটনাচক্রে তারা ধার্মিক, অতয়েব একটা কনক্লুশান টানা হোক, এমন ঐকিক নিয়ম মনে হয়েছে। ধার্মিক কে নাস্তিক দিয়ে রিপ্লেস করলেও এরকম বুলি করতে থাকা মানুষের অভাব হতো কি? জানিনা। তবে এতটা সাদা কালো বিভাজন এবং তার সংগে ডিরেক্ট ধার্মিক নাস্তিক জুড়ে দেওয়াটা, কী জানি।
    সততা, ভালমানুষ হওয়া, ঘৃণা, আক্রোশ, এগুলো অন্য জিনিস।
    পরিশেষে, নানান মন্তব্য পড়ে অভিজিৎ রায় একজনই ছিলেন। প্রত্যেকে আমরা আলাদা।
  • S | 202.156.215.1 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১২:০৮57369
  • কেন আমাগো সিনেমার হিরোরা বা হিরৈনরা - সবাইকে তো সুন্দর গ্ল্যামারাস হ'তে হয়। যে নায়িকা ডাস্কি সেও রং চঙ্গ মেখে সাদা হয়ে দাড়িয়ে পরে। আমরা তাই দেখেই ধন্য ধন্য করি। নইলে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির মতন অ্যাক্টরকে এতোদিন পরে আমরা চিনতে পারি? যেখান সলমন ভাই এতো কিছু করেও এক নম্বর হিরো।

    তাছাড়া আম লাইফেও, ইন্ডিয়াতে ভালো দেখতে হ`লে এবং ভালো পোষাক পরলে (লোকে অবশ্যি দাম নয়, রঙ্গ দেখে) তবেই তো আপনি হিরো হ'তে পারবেন। এই ব্যাপার গুলো কি জাতীয় ইনসিকিউরিটি থেকে আসে?
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১২:১৫57370
  • এই আমাগো ইন্ডিয়া। ঃ-)
  • S | 202.156.215.1 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১২:৩০57371
  • মুম্বাইতে দেখতাম লোকে লিফটের মধ্যেই (মানে সামনা সামনি) অন্যের পা থেকে মাথা অবধি মাপে। জুতো জামা গায়ের রং দেখে বোঝার চেস্টা করে মাইনে/আয় কত? এই নাকি দেশের আধুনিকতম শহরের শিক্ষিত লোকজন।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১২:৩৪57372
  • হু,
    বুঝলে কিনা একে বলে মধ্যপন্থা। সূক্ষ্ম ম্যানেজমেন্টের কৌশল আরকি। ইঁদুর দূর করতে সেঁকো বিষ ছড়ানো আর ইঁদুরমারণ মন্ত্র দুটোই জম্পেশ করে করে নিল। বলা তো যায় না কখন কোন্‌টা কাজে লেগে যায়!
    ঃ-)
    ঐ যে তোমাদের চাঁদ সদাগরবাবু, লোহার বাসরের দরজায় হেতালের লাঠি নিয়ে তো রইলেন, চারপাশে পাহারার বন্দোবস্তও করলেন বিস্তর, কিন্তু আগে থেকেই উৎকোচ খেয়ে যে ব্যাটা মিস্ত্রীরাই ফুটো রেখে দিয়েছে সূক্ষ্ম কোণে, সে বিষয়ে কোনো খোঁজই তো রাখেন নি। পুরো ব্যাপারটাই দড়ি টানাটানি কেস!
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ১২:৩৭57373
  • বড়েস,
    মেপে বোঝে? মানে মোটামুটি কাছাকাছি অনুমান করতে পারে?
    ঃ-)
    কী অবস্থা!!!! হয়তো ঝপ করে পেল্লায় চাঁদা চেয়ে বসলো! ঃ-)
  • দিলীপ ঘোষ | 111.221.133.206 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০১:৩৩57398
  • খুব সৎ সুপাঠ্য লেখা |
  • dd | 116.51.26.55 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৯57399
  • "সোভিয়েত ইউনিয়নে কামিউনিষ্ট সরকার দ্বারা জুইশদের পার্সিকিউশনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে।" কথাটা সর্বাংশে সঠিক নয়। ৎসারের আমলে ইহুদীদের জমি কেনার অধিকার ছিলো না। ইওরোপের অন্যান্য দেশের মতই তীব্র অ্যাণ্টি সেমিটিসম চালু ছিলো।

    স্তালিন এসে অনেকটাই সামাল দিয়েছিলেন।ক্ষমতায় এসেই উনি অ্যান্টি সেমিটিসমকে আইনগত ভাবে ব্যান করেন। ইহুদীদের স্বদেশের দাবীর (Zionism)প্রথম স্বীকৃতিও তার কাছ থেকেই। সেই মতন ১৯২৮ সালে খোদ রাশিয়ায় এক ইহুদী অটোনমাস শহর গড়বার প্রতিশ্রুতি দেন ও ১৯৩৪ সালে রাশিয়া চীন বর্ডারে শহর গড়ে তোলেন Birobidzhan নামে। ১৯৪৮ সালেও সেখানে ৩৫ হজার ইহুদী বাস করতেন। ঐ শহরের সাইনবোর্ডগুলি ইডীশ আর রাশান - দুই ভাষাতেই লেখা হোত। যুদ্ধের পর,হলোকস্টের ঘটনা সবার চোখের সামনে আসলে স্তালিন ক্রিমিয়াতেও ইহুদীদের জমি দিতে চেয়েছিলেন। রাশিয়ার সব থেকে মহার্ঘ জমি।

    আর এ তো সবাই জানে - ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে রাশিয়ার থেকেই।

    পরে অবশ্য সবই বদলে যায়।
  • | 127.194.1.68 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৬57402
  • দেবব্রত,
    আপনি যেটা লিখেছেন সেটা নিয়ে তথ্য দেবেন নাকি?
    "বস্তুত সেকুলারিসম এবং জাতীয়তাবাদের( এটিও নব্য ধর্ম ) নামে পৃথিবীতে যত মানুষের হত্যা হয়েছে প্রথাগত ধর্ম তার তুলনায় নস্যি ।"

    জাতীয়তাবাদের নামে পৃথিবীতে বহু মানুষের হত্যা হয়েছে। সেটা প্রথাগত ধর্ম ও ধর্মীয় বিরোধ দ্বারা হত্যার তুলনায় নস্যি, সেটা যদি তুলনামূলক তথ্য-আলোচনা করে বুঝিয়ে দেন তো ভাল হয়।

    আইসিস-এর হত্যাকাণ্ড (ঐ নস্য-জাতীয়ই হবে হয়তো) ধর্মীয় না জাতীয়তাবাদী? অবিভক্ত ভারতে দাঙ্গায়, পাক-ভারত-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-গুরু হত্যাগুলো ধর্মীয় না জাতীয়তাবাদী? ধর্ম ও জাতীয়বাদকে সবসময় আলাদা করা যায় কি? যেখানে যায় না, সেখানে হত্যাগুলো নস্য-দলে নাকি জাতীয়তাবাদের পাপের ভাগে ফেলবেন? এরকম ভাগ করাও যায় কি?

    "সেকুলারিসম...(এটিও নব্য ধর্ম )-এর নামে পৃথিবীতে যত মানুষের হত্যা হয়েছে প্রথাগত ধর্ম তার তুলনায় নস্যি।" সেকুলারিসম-এর নামে হত্যা মানে? কোনো রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে যদি, ধরা যাক কোনো স্বর্ণমন্দিরে, কোনো ধর্মীয় দল সশস্ত্র বা সন্ত্রাসী প্রস্তুতি নেয়, তাহলে সেই স্বর্ণমন্দির আক্রমণ করে ধর্মীয় দলকে হত্যা করা কি 'সেকুলারিজম'-এর দ্বারা হত্যা, নাকি রাষ্ট্রীয় হত্যা? যদি সেটা 'সেকুলারিজম'-এর দ্বারা হত্যা হয়, তাহলে অনুরূপ যুক্তিতে, যেখানে কোনো মানুষকে অন্য যে কোনো ধর্মের মানুষ মারছে, সেটা ধর্মীয় হত্যা বলতে হয়। ধর্ম সম্পর্কে (অ-)বিশ্বাস আলাদা, এবং একজন অন্যজনকে মারছে, সুতরাং ধর্মের কারণে মারছে, এটাই যুক্তি হলে--
    ১। জাপানে মার্কিন পরমাণু বোমা, ২। ভিয়েতনামে মার্কিন নাপাম বোমা, ৩। আফগানিস্তানে রাশিয়ান আগ্রাসন, ৪। সূর্য সেনের ইংরেজকে বোমা মারা...
    এগুলোও ধর্মীয় হত্যা।
  • | 127.194.1.68 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪২57403
  • দেবব্রত,
    আপনি আরও লিখেছেন,
    "মিলিটারি এথিস্ট ,জাতীয়তাবাদ এবং সেকুলারিসম যেহেতু ধর্মের রকমফের তাই ধর্মের মতই আধিপত্যবাদি।"
    "মিলিটারি এথিস্ট"? কী বললেন, "মিলিটারি এথিস্ট"???? সেটা কী জিনিস?
    মনে হয় এটা টাইপো, আপনি "মিলিট্যান্ট এথিস্ট" লিখতে গিয়েছিলেন। তো, সত্যিই টাইপো কিনা, সেটা না জেনে মন্তব্য করছি না।

    তবে "মিলিটারি এথিস্ট"-দের চাইতে খারাপ ও খুনে একটি জিনিস আমার জানা আছে। তা হল "ধর্মধ্বজী মিলিটারি।"
  • | 127.194.1.68 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫১57404
  • দ,
    বড় ভাল লিখেছেন।
    বানানো কথা, খুব বড় কথা, লেখার মতো লোক বোধহয় আপনার চাইতে সহজপ্রাপ্য। (সেনসাস করিনি, আন্দাজে বললাম, যাঁরা স্তালিন ঠিক ক'জনকে কোথায় মেরেছিলেন, আর সেকুলার-রাষ্ট্রীয়-ধর্মীয় মৃত্যুর সংখ্যা খুব ভাল করে তুলনা করতে পারেন, তাঁরা ক্ষমা করে দেবেন, প্লিজ)।

    দ,
    আপনি নিজের কথাটা লিখেছেন। কেউ যদি 'কমিউনিস্ট বাবাজ্যাঠা'দের কাছ থেকে ধর্ম করার জন্য অত্যাচারিত হয়ে থাকেন, তাঁর এমন অকপট লেখাও আমার এমনই মনের মাঝে বাজবে। কিন্তু তার সঙ্গে আপনার লেখাটা মিলিয়ে দেখতেই হবে, এমন মস্তিষ্কবানের দলে আমি নেই।
  • রৌহিন | 233.223.135.252 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৪:২৯57405
  • লেখাটা পড়তে পড়তে বড্ডই একাত্ম বোধ করে ফেললাম। শেষের কিছু কমেন্টও পড়লাম - তাই কয়েকটা কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি।
    জাতীয়তাবাদ আর ধর্মের মধ্যে আমি অন্ততঃ খুব একটা তফাৎ দেখি না, এবং উভয়েই তাদের প্রয়োজনে নির্বিচারে খুন, অত্যাচার করে থাকে। কিন্তু সেকুলারিজম, প্রকৃত অর্থে, আজ অবধি কোথাও এই ধরণের ফতোয়া দিয়েছে বলে শুনিনি।
    রাশিয়া এবং চিনে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পর বহু ধার্মিক মানুষ খুন হয়েছেন - অতএব নাস্তিকেরাও খুন করে - এটা অতি সরলীকরণ - এবং ইচ্ছাকৃত। ওই খুনগুলোকে (বা তৎসংলগ্ন অত্যাচারকে) অস্বীকার করার কিছু নেই, মহত্ত্ব দেবারও না - কিন্তু এটা পরিষ্কার বুঝে নেওয়া দরকার যে ওগুলো রাজনৈতিক মতাদর্শজনিত হত্যা বা অত্যাচার - নাস্তিকতাজনিত নয়।
    আজ অবধি কোন "নাস্তিক রেজিম" হত্যার ফতোয়া দিয়েছেন ধার্মিকদের বিরুদ্ধে, আমি অন্ততঃ শুনিনি। আমি অবশ্যই অনেক কিছুই শুনিনি। কিন্তু একটু স্পেসিফিকালি শুনতে চাই।
    ক্রুসেড, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তালিবান রেজিম, আইসিস রেজিম, বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা, ভারত-পাক যুদ্ধ, গুজরাট দাঙ্গা, মুজফফরনগর, রামজন্মভূমি, অক্ষরধাম মন্দির, ইজরায়েল দ্বারা গাজা ধ্বংস - এবং এরকম ছোট বড় আরো অজস্র হত্যাকাণ্ড হয়েছে শুধু ধর্মের নামে। এটাকে কাউন্টার করতে শুধু "নাস্তিক রেজিমে যত হত্যাকান্ড হয়েছে" বলে দায় সারলে তা মানতে পারবো না।
    ধর্ম যতদিন আংশিক হলেও লোকশিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত ছিল, ততদিন তার ন্যুনতম গ্রহণযোগ্যতাটুকু রয়ে গেছিল। আজ তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ধর্মের বদলে সাধারণ শিক্ষা অনেক বেশি সামাজিক ও যথাযথ হবার স্কোপ রাখে এখন - সুতরাং ধর্মের এবার মিউজিয়ামে যাবার সময় এসেছে। সেটা ধর্মব্যবসায়ীরাও বোঝে বলেই তাদের অস্তিত্বের সঙ্কটে নখ দাঁত বের করেছে আরো বেশি করে। এবং তাদের এতদিনের কুক্ষীগত ক্ষমতাকে যতটা সম্ভব কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের অপ্রয়োজনীয় অস্তিত্বটা আরেকটু টেনে নিয়ে যাবার অভিপ্রায়ে।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৬:০০57400
  • সবই রাজনীতি ডিডিদা। ক্রিমিয়ার য়িহুদিদের জমি দিতে চাওয়া এবং একই সঙ্গে ক্রিমিয়ার মূল অধিবাসী মুসলমান তাতারদের রাতারাতি উৎখাত করে ট্রেনের পর ট্রেন ভরে মধ্য এশিয়া থেকে সুদূর প্রাচ্য অবধি নির্বাসন স্তালিনের কাজ। একজন শিশু জল তেষ্টা পেয়েছে মাঝ পথে ট্রেন কী কারণে থামায় তার মা জল আনতে ট্রেন থেকে নামে, পাঁচ বছরের মেয়েটা জানলা দিয়ে দেখে মাকে গুলি করল স্তালিনের পুলিশ মা লুটিয়ে পড়ল। ট্রেন ছেড়ে দেয়। এই সেদিন সেই মেয়েটা থুরথুরে বুড়ি হয়ে গিয়েও ইন্টারভিউ দিল টিভিতে। আরো অনেক আছে।
  • ranjan roy | 24.99.201.169 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৬:০৩57406
  • জ এবং রৌহিনের কথাটা ভাবাচ্ছে।
    ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ, ভাষাগত জাতীয়্তাবাদ এসব কিন্তু এক ধরণের সম্প্রদায়বাদ বলেই মনে হয়।
    কিন্তু দেবব্রত বোধহয় সেকুলার রাষ্ট্রের ধর্মীয় কমিউনিটি দমনের কথা বলতে চেয়েছেন বলে মনে হল।
    কিন্তু দেবব্রত, এই পার্সিকিউশন পরম্পরাগত ধার্মিক ও অন্যান্য পার্সিকিউশনের চেয়ে বেশি-- এমন সিদ্ধান্তে কী করে এলেন, একটু বুঝিয়ে দেবেন?
  • Robu | 11.39.37.113 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৬:১৫57407
  • ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে না হলে গ্রাহ্য হয়না।
  • দেবব্রত | 212.142.91.25 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৭:১২57408
  • মর্ডান যুগের পূর্বে ধর্ম কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির ধর্মাচারণের প্রাইভেট ক্রিয়াকলাপ ছিলোনা, অন্য সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনার থেকে আলাদাও ছিলোনা ,বরং মানুষের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের সাথে -অর্থনীতি ,রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ,রাজনীতি এবং যুদ্ধ - ধর্ম অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত ছিল । ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল বলা যে এইখানে রাজনীতির শেষ ধর্মের শুরু অথবা উলটোটা । ক্রুসেডের পেছনে ধর্মীয় কারন অন্যতম ইন্সপিরিসেন হলেও ভেতরে ছিল গভীর রাজনৈতিক কারন। ইসলামিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে পাপাল মনার্কি প্রতিষ্ঠার রাজনীতি । আধুনিক 'নেসান স্টেট' এর জন্মের ইতিহাসের সাথে -৩০ বছরের ইউরোপ জুড়ে ক্যাথলিক -প্রটেস্টান্ট আভন্ত্যরিন যুদ্ধ , অটোম্যান সাম্রাজ্যের আক্রমণের মুখে স্পেনের গৃহযুদ্ধ সম্পর্কিত । ১৬-এবং ১৭ শতকের ইউরোপের আভ্যন্তরীণ যুদ্ধ 'ধর্মীয় ভায়লেন্সের’ মিথের জন্মদাতা । হ্যা ঠিকই শুনছেন 'ধর্মীয় ভায়লেন্সের’ মিথ ।

    ৩০ বছরের ক্যাথলিক -প্রটেস্টান্ট আভন্ত্যরিন যুদ্ধ সেন্ট্রাল ইউরোপের ৩৫% এর অধিক জনসংখ্যার মৃত্যুর কারন । অথচ এই সময়ে পুরো আরব দুনিয়া এবং বাকি বিশ্বে যুদ্ধের পরিস্থিতি নগণ্য । যাই হউক 'জ' বাবু কমেন্ট অংশে আপনার লম্বা প্রশ্নাবলীর জবাব দেওয়া সম্ভব নয় । সেই বিষয়ে প্রবন্ধ ফাঁদা যেতেই পারে ।

    শুনতে অবাক লাগলেও । 'সেকুলারিসম’ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে -রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্র থেকে ধর্মকে বাদ দেওয়ার অথবা রাষ্ট্রের পরিচালনায় চার্চের উপস্থিতি নগণ্য করার ক্ষেত্রে যে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে তার তুলনায় ধর্মের কারনে হত্যা সত্যিই নগণ্য । চোখ রাখুন লেখার ইচ্ছা রইল ।

    জাতীয়তাবাদ যে আধুনিক রাষ্ট্রীয় ধর্ম এ বিষয়ে সন্দেহ’র অবকাশ না থাকলেও পশ্চিমি সেকুলারইসম যে আদতে ধর্ম এ বিষয় মেনে নেওয়া একটু চাপের তা বুঝলাম - সেইটাও প্রবন্ধে ফাঁদা যেতে পারে । তবে তার পূর্বে নিতসে পড়ে নিতে পারেন এ বিষয়ে যুক্তির সারবত্তা উনি যে ভাবে ব্যখা করেছেন তার ওপর প্রশ্নের জায়গাই নেই ।

    'মিলিট্যান্ট এথিসম’ ধর্ম সকল অপরাধের কারন সুতরাং বল প্রয়োগে আগাছা নির্মূলের প্রয়োজনীয়তার দার্শনিকতা থেকেই উদ্ভূত । সুতরাং স্তালিনের অর্থডক্স চার্চ দমন এথিস্ট'ত বটেই এবং আমার মনের মত নাস্তিকতা শ্রেষ্ঠ অথবা ফায়ারিং স্কোয়াড এই আধিপত্যের ফলাফল । কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারন নয় -যদিও নব্য এথিস্ট সমাজ দায় ঝাড়তে স্তালিনের এই গণহত্যা এথিসিমের আওতায় নয় বলে প্রচার করে ।

    জ বাবু আপনি একটু ওভারল্যাপ করছেন -মধ্যপ্রাচ্য পশ্চিমি সেকুলারিসম কোনদিনই মনের থেকে মানেনি , তাই ধর্ম সেখানে মানুষের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের সাথে -অর্থনীতি ,রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ,রাজনীতি এবং যুদ্ধ অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত । মধ্যপ্রাচ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টেট এবং চার্চ বিছিন্ন নয় সুতরাং মর্ডান পশ্চিমি দুনিয়ার ধর্মের অবস্থানে আইসিস এর ধর্মের ভিত্তিতে লড়াই বলে সেটাকে ঠিক ধরা যাবে না । ধর্ম এবং রাজনীতির মিশ্র লড়াই -১৭০০ সালের সময়ের ইউরোপের অবস্থান ।
  • দেবব্রত | 212.142.91.25 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ০৮:৫৬57409
  • ৩০ বছরের প্রটেস্টান্ট ক্যাথলিক যুদ্ধের অবশেষে ,৩৫% সেন্ট্রাল ইউরোপের জনসংখ্যার হত্যার অবশেষে ইউরোপ যখন বৃহৎ রাজতন্ত্রের শাসনের সম্মুখীন তখন থেকেই ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত হওয়ার সূত্রপাত । প্রত্যেকেই নিজ নিজ অঞ্চলের স্বশাসনের দাবীদার ,প্রত্যেকের নিজস্ব প্রফেশনাল আর্মি এবং হয় রাজা অথবা রানীর দ্বারা শাসিত -সম্ভবত তখন থেকেই ইউরোপে ক্রনিক এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের যুদ্ধের পার্মানেন্ট রেসিপি এবং সাময়িক অবসান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পড়ে । এই নব্য উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে চার্চের ভূমিকাকে পেছন দিকে ঠেলতে শুরু করে এবং রাজা বা রানীর একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হতে শুরু হয় । যখন ১৬’স শতাব্দীতে নূতন শব্দের উদ্ভব হয় ‘ “secularisation” তার প্রকৃত অর্থ ছিল চার্চের পসেসন থেকে জমি এবং অন্যান্য সম্পদ রাষ্ট্রের পজেসনে হস্তান্তকরন । এ এক নূতন এক্সপেরিমেন্ট ,“secularisation” পরিস্থিতির দাবি , নূতন ন্যাচারাল ল । ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের ক্ষমতা থেকে ,সরকার পরিচালনার ক্ষমতা থেকে চার্চের অপসরণ । আমি যে সময়ের কথা বলছি সে হোল ইউরোপে সেকুলার রাষ্ট্রের জন্মের ঠিক পূর্বের মুহূর্ত , এখন সেকুলারিসম এর হত্যার ধারাবাহিকতার হিসাব করতে গেলে তার জন্মের মুহূর্ত থেকেই জানা প্রয়োজন ।

    এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নূতন ধর্মের অথবা ধর্মের স্থানের ব্যাখ্যার প্রয়োজন - এই ব্যাখ্যা দিলেন 'মার্টিন লুথার ‘ ইনিই প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি চার্চ এবং রাষ্ট্রের সেপারেসনের কথা বললেন । মধ্যযুগীয় ক্যাথলিকিসম অবশ্যই গোষ্ঠী চেতনা , গোষ্ঠী বদ্ধতা, অধিকাংশ ক্যাথলিক সমাজের সাথে সমাজের মধ্যে ধর্মকে জড়িয়ে বাঁচেন । কিন্তু মার্টিন লুথারের মতে খ্রিস্টানরা যিশুর সামনে একাকী দাঁড়াবে ,ভরসা করবে কেবল বাইবেল। নো মোর গোষ্ঠী চেতনা । লুথারের মতে মানুষের পাপের প্রতি আগ্রহ বিপুল এবং সেই পাপ দমন করার অধিকার কেবল রাষ্ট্রের । লুথারের মতে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব সমাজের পাপী ,বদমাশ এবং লোভী অংশকে শক্ত হাতে সাজা দেওয়া, কি ভাবে ? “in the same way as a savage wild beast is bound with chains and ropes”। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রয়োগ করতে থাকলো লুথারের বানী গোষ্ঠীহীন' স্বাধীন ব্যাক্তি’ একাকী খ্রিস্টানের ওপর -ততদিনে তার গোষ্ঠী বদ্ধতা বিলুপ্তির পথে 'যিশুর সামনে একাকী খ্রিস্টান ,ভরসা কেবল বাইবেল’ ।

    লুথারের ধর্ম বিষয়ক চিন্তা - ধর্ম কেবল ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের এ বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার নেই ( কিন্তু পাপীর সাজা দেওয়ার অধিকার আছে ) মর্ডান সেকুলার আইডিয়ালের ভিত্তি স্থাপিত হতে শুরু হোল 'মার্টিন লুথারের’ হাত ধরে ।

    ১৫২৫সালে শুরু হোল জার্মানির কৃষক বিদ্রোহ , সদ্য সেকুলার স্টেটের প্রথম বিদ্রোহ , ক্যাপিটালইসমের শৈশব । প্রমাণিত হোল সেকুলার পলিটিকাল থিয়োরি আদৌ পূর্বের ধর্মীয় শাসনের তথাকথিত বর্বরতার তুলনায় সহনশীল, শান্তির এবং গণতান্ত্রিক থিয়োরি নয় , বরং প্রটেস্টান্ট ক্যাথলিক আভ্যন্তরীণ যুদ্ধের হিংস্রতার তুলনায় বেশী হিংস্র । জার্মানির চাষিরা সেই সময় তাদের চিরাচরিত ট্র্যাডিশনাল অধিকার জার্মানির রাজা ছিনিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদে , ক্ষমতার কেন্দ্রিকরনের প্রতিবাদে বিদ্রোহ সংঘটিত করতে থাকে । রাষ্ট্র ( ধর্মীয় নয় -প্রাথমিক সেকুলার স্টেট ) নির্মম ভাবে হত্যা করে সমস্ত বিদ্রোহীদের , প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ।

    কমপক্ষে ৬৫০০০ জার্মান চাষিকে হত্যা করা হয় বিদ্রোহের অপরাধে । জ আপনাকে আমি ১৫২৫ সাল থেকে হিসাব দেওয়া শুরু করলাম গুনতে থাকুন । এইবার লুথার কে দেখুন - উনি বিশ্বাস করতেন চাষিরা চূড়ান্ত অন্যায় করেছে , ধর্মের সাথে রাজনীতি মিশিয়েছে , এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য ছিল । কি বললেন “A worldly kingdom,” he insisted, “cannot exist without an inequality of persons, some being free, some imprisoned, some lords, some subjects.” সেকুলারিসম এর বৈষম্যের ভিত্তি স্থাপন শুরু হোল ! লুথার রাজা কে বললেন “Let everyone who can, smite, slay and stab, secretly or openly, remembering that nothing can be more poisoned, hurtful, or devilish than a rebel.” বিদ্রোহ সবথেকে বড় অপরাধ খতম কর । সেকুলারিসমের আইডিয়া তৈরি হওয়া শুরু হোল । জার্মানির ৬৫০০০ কৃষক হত্যা দিয়ে শুরু হয়ে গেল সেকুলারিসমের ভিত্তি স্থাপন ।

    এখন কমেন্ট তো প্রবন্ধ লেখা যায়না । তবে জ বাবু গুনতে থাকুন - এর পর আমি একে একে আপনাকে ফ্রান্স , জেফারসনের ইন্ডিয়ান হত্যা , প্রত্যেকটা কলোনি , দাস ব্যাবসা ইত্যাদি গোনাতে গোনাতে ১৯২০’র তুরস্কে কেমাল আতাতুর্কের আর্মেনিয়ান গণহত্যার ময়দানে ঘুরিয়ে আনব । তার পর মনে হয়না আমাকে আর এগোতে হবে ।
  • দেবব্রত | 212.142.91.25 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ১০:০১57410
  • জ মাফ করবেন ,উইকি মতে সংখ্যা টি অনেক বেশী 'The German Peasants' War, Great Peasants' War or Great Peasants' Revolt (German: Deutscher Bauernkrieg) was a widespread popular revolt in the German-speaking areas of Central Europe from 1524 to 1525. It failed because of the intense opposition of the aristocracy, who slaughtered up to 100,000 of the 300,000 poorly armed peasants and farmers.'

    অর্থাৎ তিন লাখ কৃষক হত্যা দিয়ে সেকুলারিসম এর শুভ উদ্বোধন !
  • kl | 24.96.112.219 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ১০:১১57401
  • সে-র মত আমার ও মনে হলো - "কিছু লোক বা সমাজ কারোকে বুলি করছে এবং ঘটনাচক্রে তারা ধার্মিক, অতয়েব একটা কনক্লুশান টানা হোক, এমন ঐকিক নিয়ম মনে হয়েছে।" স্তালিন এর সময়ে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী দের , মাও আমলে বুদ্ধিস্ট দের বিপুল সংখ্যায় খুন করা হয়েছিল সেটা তো অনেকে বলেইছে।সেই খুনি দের ক্ষেত্রে ও তাদের মতবাদ ই ঢাল হয়েছিল । কদিন আগেও চীনে জিনজিয়াং এ এথনিক ক্লিয়ান্সিং হয়েছে মুসলিম দের ওপর।
    ধর্ম বা নাস্তিক্য কোনটাই চাপিয়ে দেওয়া সমর্থন করিনা । ধর্মচর্চার ব্যাপারে রামকেষ্ট -র কথাটা বেশ - " ধর্ম করতে চাইলে কর কিন্তু তা কর মনে, বনে এবং ঘরের কোনে "।
  • Tim | 140.126.225.237 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ১০:১৩57411
  • লাইনটা পড়ে তো তিনলাখ লোকের মধ্যে একলাখকে মেরেছিলো মনে হয়। যাই হোক সেই সংখ্যাটাও অনেক, জাস্টিফাই করছিনা, জাস্ট কনফিউশন এড়াচ্ছি।
  • hu | 140.160.143.215 (*) | ০২ মার্চ ২০১৬ ১১:২২57412
  • সেকুলার রাষ্ট্রের করা ম্যাসাকারকে "সেকুলারিজমের নামে হত্যা" কেন বলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।
  • Robu | 11.39.36.197 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৩57413
  • শ্রীলন্কায় এলটিটিই হত্যাকে কি বৌদ্ধদের দ্বারা হিন্দু হত্যা বলা হবে?
    তবে দেবব্রত বাবু, আপনি লিখতে থাকুন, আপনার লেখা পড়তে ভাল লাগে, একমত সবসময় তো হওয়ার দরকার নেই।
  • | 229.64.165.195 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৬57419
  • শেষের দিকের আলোচনাটা ইন্টারেস্টিং। দেবব্রতর সাথে একেবারেই একমত নই। তবে আপনি যে লেখাটির কথা বলেছেন সেটি লিখুন, সেখানে দ্বিমত জানানো যাবেখন।

    'সে' তাতার মুসলিমদের ওপরে অত্যাচারের কথা বেশ বিস্তারিত রাশিয়ার টইতে লিখেছিলেন। কিন্তু ওটা আমার মতে ঠিক নাস্তিক কর্তৃক নাস্তিকতাকে ঢাল রেখে অত্যাচার নয় বলেই মনে হয়েছে। অত্যাচার কখনই সমর্থনযোগ্য কিছু নয়। তবে কার্য্যকারণ অন্য বলে আমার ধারণা।

    'জ'-এর এই বক্তব্যটি সামান্য বদলে বলি কেউ যদি নাস্তিক/সন্দেহবাদী বা নিরীশ্বরবাদী কোনও বাবা মা আত্মীয়স্বজনের হাতে ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের জন্য (যেটা অন্য কাউকে কোনওভাবে অত্যাচার করে নি) নিজে অত্যাচারিত হয়ে থাকেন, তাঁর কথা আমিও মন দিয়ে শুনব।

    কমিনুশ্ট কথাটা আপাতত বাদ রাখছি কারণ সেক্ষেত্রে দেবব্রতর কভার করা অংশটায় ঢুকতে হয়। সেটা আপাতত ঢুকছি না।
  • | 229.64.165.195 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৭57420
  • *কমিউনিস্ট
  • দেবব্রত | 212.142.91.230 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৬ ০৫:৩৮57421
  • দ - আপনি ভুল বুঝবেন না , তবে আমার সাথে একমত হওয়া মুস্কিল আমার মতামতের নির্জাস এই রকম

    ১ লোকায়ত ধর্ম ছাড়া সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আদপে আধিপত্যবাদি ,দাসত্বের দর্শন এবং রাজনৈতিক দর্শন
    ২ তথাকথিত সেকুলার মডেল যেহেতু খ্রিস্টধর্মের মরাল এবং এথিকস অনুসৃত তাই ইহাও তাই এবং এনার হাত ধর্মের মতই রক্তাক্ত এবং প্রমাণিত সত্য যে এই সেকুলার নেসান স্টেট এর মডেল চূড়ান্ত রূপে ব্যার্থ
    ৩ মিলিট্যান্ট এথিসিম চূড়ান্ত আধিপত্যবাদি ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে ধর্মের তুলনায় অধিক এবং এই এথিসিমের নামে যা কীর্তিকলাপ হয়েছে সেই কাহিনী শুনলে চেঙ্গিস খান গঙ্গায় ডুবে মরতেন ।

    ৪ জাতীয়তা বাদ নব্য ধর্ম এবং রাষ্ট্র নব্য ঈশ্বর ।

    ' If God is, man is a slave; now, man can and must be free; then, God does not exist.I defy anyone whomsoever to avoid this circle; now, therefore, let all choose.'
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন