এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • জয়দ্রথ বধ

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৫২৫ বার পঠিত
  • **********************************
    কতকগুলো ডিসক্লেইমার।
    এক তো শুধুমাত্র কালীপ্রসন্ন সিংহ সম্পাদিত মহাভারতের অনুবাদ ফলো করেছি, আর কোনোই ভার্শন নয়।
    অলৌকিক অংশগুলো ছেঁটে বাদ দিয়েছি।
    সংখ্যা, যেমন "ষাঠ হাজার ক্ষত্রিয় নিহত হলো" ইত্যাদি অসম্ভব সংখ্যা পুরোটা বাদ দেই নি। মনে হলো সেগুলো লিখলে একটা ধারনা করা যাবে , সেই জন্য।
    ***********************************************************
    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আঠারো দিনের মধ্যে চতুর্দশ দিনের লড়াইটাই ছিলো সব থেকে বেশে রক্তক্ষয়ী। আর দিন না বলে, দিন আর রাত বলাই ভালো -কেনো না লক্ষ পিদিম জ্বালিয়ে চাঁদের আলোয় রাত্রিবেলাতেও যুদ্ধ হয়েছিলো।সেই একেবারে শেষ রাতে ঘন্টাখানেকের বিশ্রাম।তারপর পরের দিন আবার সকাল থেকেই শুরু।

    কোনো ব্রেক নেই, উইক এন্ড নেই। ঈশ্বরও সপ্তাহে একদিনের বিশ্রাম নিয়েছিলেন।কিন্তু মহাভারতের যোদ্ধাদের সেইটুকু অবসরও ছিলো না। গত তেরোদিন ধরে সুর্য্যোদয় থেকে সুর্য্যাস্ত পর্যন্ত্য একটানা লড়াই চলছে, আর এই চৌদ্দতম দিনের লড়াই ও হবে প্রায় নাগাড়ে চব্বিশ ঘন্টা।
    এই চৌদ্দতম দিনের লড়াইতে দুটো বড় ঘটনা। দিনের শেষে জয়দ্রথের মৃত্যু আর রাত্রিবেলা ঘটোৎকচের । অবশ্য মাঝারী মাপের কিছু নেতাও প্রাণ হারিয়েছিলেন - যেমন বিন্দ, অনুবিন্দ,অলম্বুশ,শ্রুতায়ু।

    কিন্তু ফার্স্ট হাফের লড়াই ঐ জয়দ্রথকে নিয়েই।
    জয়দ্রথকে সুর্য্যাস্তের আগেই বধ করবেন অর্জুন - এই প্রতিজ্ঞার কথা জানতেন কৌরবেরাও। কোনো মতে জয়দ্রথকে টিঁকিয়ে রাখতে পারলেই কেল্লা ফতে। প্রতিজ্ঞা রক্ষায় অসফল অর্জুনের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

    কিন্তু ধর্মযুদ্ধ বলে কথা, জয়দ্রথকে তো আর ছুটি দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেওয়া যাবে না। তাকে রণাংগনেই থাকতে হবে।কৌরব সেনাপতি দ্রোণ তাই প্রতিরক্ষায় মন দিলেন।গড়লেন এমন এক ব্যুহ যে দেখে তাজ্জব বনলেন সিদ্ধ আর চারণেরাও।
    কেমন সেই ব্যুহ? প্রথমে শকট ব্যুহ। তার পিছনে চক্র ব্যুহ।সেই চক্রের মাঝে সুচী ব্যুহ, জয়দ্রথ থাকবেন সেখানেই। শকট ব্যুহ মানে সামনেটা সরু (সুচীমুখ) ও পরে বৃত্তাকার।সুচীমুখ মানে বোধ হয় রোমান ফ্যালান্ক্সের মতন সারিবদ্ধ সেনানী। এই ব্যুহ দ্রোণ আগেও সাজিয়েছেন। আউট ফ্ল্যাংক করে পিছন থেকে শত্রুর আক্রমনের সম্ভাবনা থাকলে এই ব্যুহ স্থাপন করা হয়।কিন্তু খুব দ্রুতগামী অশ্বারোহী বাহিনী না থাকলে পাশ থেকে ঘিড়ে ধরে শত্রুকে পিছন থেকে আক্রমন করা কি সহজ ছিলো ?

    যাই হোক, এই শকট ব্যুহের পিছনেই আরেকটি ব্যুহ,চক্র ব্যুহ। এই খানে মহাভারত কিছুটা অস্পষ্ট। কেননা পরের লাইনেই আছে না, ব্যুহ তো একটাই। সেই কম্পোসিট ব্যুহের "অগ্রভাগ শকটাকার,পশ্চাদভাগ চক্রাকার"। তার পরের লাইনে আবার অন্য কথা। লেখা আছে চক্র নয়,পদ্ম ব্যুহ।চক্রব্যুহ আর পদ্মব্যুহের সেনা বিন্যাস কিন্তু যথেষ্টই আলাদা।আসলে মহাভারতের যুদ্ধ খুবই নায়ক নির্ভর। সেনাদলের এক জোটে আক্রমন,কৌশল নিয়ে চিন্তা -সেটা তখনো দানা বাঁধে নি।যুদ্ধের বিবরনী তাই শুধু রথী মহারথীদের সংগ্রামের বিবরন । সাধারন সেনাদের যেনো কোনো ভুমিকাই নেই। তাদের শস্ত্রাঘাতেও কোনো নায়ক নিহত বা আহত হন না। সৈন্য সংস্থাপন বা রণকৌশল তাই উপক্ষিতই থেকে গেছে। যেহেতু পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে চক্রব্যুহের বদলে পদ্মব্যুহই লেখা আছে,তাই আমিও আগাগোড়াই পদ্মব্যুহই লিখছি।
    শকটব্যুহের দ্বাররক্ষী দ্রোণাচার্য্য স্বয়ং। সেই ব্যুহভেদ করে এগিয়ে গেলে দ্বিতীয় ব্যুহ,পদ্মব্যুহ। পদ্মব্যুহের দ্বাররক্ষী কৃতবর্মা। এই পদ্মভ্যুহের মধ্যেই গুঢ় সুচী ব্যুহ (এই ব্যুহের রথী স্থাপনার বর্ণনায় অসংগতি আছে,আমি পঞ্চনবতিতম অধ্যায়ের বিবরনীটাই নিলাম)। এই সুচীব্যুহের (অর্থাৎ লাইন দিয়ে পরপর দাঁড়িয়ে থাকা) প্রথমে দুর্যোধন,পরে শল, শল্য,কৃপ ও কর্ণপুত্র বৃষসেন। সব শেষে জয়দ্রথ। তার সাথে তিন হাজার সিন্ধু দেশের ঘোড়া ও আরো সাত হাজার অন্য ঘোড়া।গান্ধার দেশের মহারথীরা তার দেহরক্ষী। কর্ণ তার বামদিকে,দক্ষিনে অশ্বত্থামা।

    দ্রোণ নিজেই ঘোড়ার পিঠে চেপে ব্যুহ প্রদর্শন করলেন। মহাভারতে আর কোনো বীর নায়ক ঘোড়ায় চড়েন নি। এর আগে দেখেছি শকুনি যুদ্ধে হেরে রথ ফেলে ঘোড়ায় চেপে "নীচ লোকের ন্যায়্পলায়ন" করছেন। যুধিষ্ঠিরও, দ্রোণের হাত থেকে বাঁচতে একবার স্রেফ ঘোড়ায় চড়েই পালিয়েছিলেন।রথে না চড়ে ঘোড়ার পিঠে ওঠাটা নায়কদের পক্ষে উপযুক্ত ছিলো না। খুব সম্মানের ঘটনা না।

    পান্ডবপক্ষেও সাজ সাজ রব। সকাল থেকেই যুধিষ্ঠির পুজোআচ্চায় বসেছেন। নানান মাংগলিক দ্রব্য স্পর্শ ও দর্শন করছেন। তার মধ্যে আছে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ আর আট হাজার গৌরীগর্ভজাত তনয় (মতান্তরে আট বছর বয়সী মায়ের সন্তান)। দান ও করেছেন প্রচুর।

    অর্জুনও প্রস্তুত। মহাদেবকে নমষ্কার করে তিনি মেঘগম্ভীরনির্ঘোষ তপ্তকাঞ্চনপ্রভাসম রথে আরোহন করলেন।তার রথের প্রবল ঘর্ঘর ধ্বনির কথা এর আগে একাধিক বার উল্লেখিত হয়েছে। তবে ইন্টেরেস্টিং তথ্য এই যে একবার যুধিষ্ঠির এটাও বলেছেন যে বিশ্বকর্মা নির্মিত এই রথ ছিলো নিঃশব্দ।

    আর কোনো দিনের যুদ্ধের বিবরনে মহাভারতকার এতো বিস্তৃত বর্ণনা দেন নি।তবে সব সময়ে পারম্পর্য্য রক্ষা হয় নি, কয়েক যায়গায় পুনরুক্তিও আছে।

    তবে দিনের বেলার লড়াই এর গতি মোটামুটি এইরকম।
    দ্রোণ আর কৃতবর্মাকে অতিক্রম করে অর্জুন একাকীই পৌঁছাবেন জয়দ্রথের কাছে। পরে যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে প্রথমে সাত্যকি আর পরে ভীম,এরা অর্জুনের সাথে সুচীব্যুহে মিলিত হবেন। এ ছাড়াও আরো কিছু দ্বৈরথ হয়েছিলো। আমিও এই ভাবেই লিখছি। মূলে কিন্তু কিছুটা খাপছাড়া ভাবে লেখা।
    তো যুদ্ধ শুরু হোলো। শকট ব্যুহের দ্বাররক্ষী দ্রোণাচার্য্য গায়ে আঁটলেন সাদা রঙের বর্ম। মাথায় বাঁধলেন পাগড়ী। তার ঘোড়াগুলি লাল রঙের আর পতাকা কৃষ্ণাজিনসম্পন্ন(কৃষ্ণসার হরিনের চামড়া)। অর্জুনের ঘোড়ারা সাদা রঙের ।কপিধ্বজ।তার মাথায় মণি মুক্তাখচিত মুকুট।

    গান্ডীবের টংকার দিয়ে উদ্বোধন হোলো। বাজলো পাঞ্চজন্য। ভেরী আর মৃদংগের ধ্বনীতে রণাংগন রোমাঞ্চিত হলো। যেন কিছুটা ওয়ার্ম আপ করা। অর্জুন প্রথমে গেলেন শত কৌরবের একজন - দুর্মর্ষণের কাছে। গাছের থেকে তাল পরলে যেরকম শব্দ হয়, সৈন্যদের ছিন্ন মস্তক পতনের শব্দও সেরকম। এবারে অর্জুনের মুখোমুখী দুঃশাসন।"বেগবান বায়ু যেরকম মেঘমন্ডল ছিন্ন ভিন্ন করে",সে রকম অর্জুন কুরুসেনাদের বিধ্বস্ত করছিলেন। তার এক এক শরে "দুই তিনজন মানুষ বিদীর্ণ হইয়া ধরাতলে নিপাতিত হইতে লাগিল"।

    দুঃশাসনের পক্ষে ঐ তেজ হজম করা সম্ভব ছিলো না। তিনি তাড়াতাড়ি সৈন্য সামন্ত নিয়ে শকট ব্যুহের ভিতরেই সেঁধিয়ে গেলেন। তার পিছু পিছু ধাওয়া করে আসলেন অর্জুন। এবারে তিনি দ্রোণের মুখোমুখী।অর্জুন আচার্য্যের অনুমতি চাইলেন শকটব্যুহ ভেদ করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। দ্রোণ বললেন আমাকে না হারিয়ে তুমি তো ব্যুহ প্রবেশ করতে পারবে না। "দ্রোণাচার্য্য এই বলিয়া হাসিতে হাসিতে তীক্ষ্ণশরজালদ্বারা অর্জুন ও তাঁহার রথ,অশ্ব , ধ্বজ ও ও সারথিকে সমাচ্ছন্ন করিয়া ফেলিলেন"।
    দুজনেই সমান সমান। তবে অর্জুন কুরুসেনাদের নিধনে যত যত্নবান, দ্রোণ কিন্তু তার সব বান ও অস্ত্র অর্জুন আর বাসুদেবকে লক্ষ্য করেই নিক্ষেপ করছেন। কৃষ্ণ কিন্তু বাদ সাধলেন। অর্জুনকে স্মরণ করিয়ে দিলেন দ্রোণের সাথে এতক্ষন যুদ্ধ করলে জয়দ্রথের কাছে পৌঁছাবে কখন? যুদ্ধের মাঝে মাঝে এই রকম পরামর্শ দিয়েই যাবেন শ্রীকৃষ্ণ। অর্জুন তখন দ্রোণকে প্রদক্ষিণ করে (মানে পাশ কাটিয়ে) ব্যুহের ভিতরে যাবার চেষ্টা করলেন। দ্রোণ বললেন ভো অর্জুন, তুমি না দ্বৈরথ যুদ্ধে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত্য শত্রুকে অতিক্রম করে পালিয়ে যাও না? অর্জুনের উত্তর ছিলো ক্লাসিক। অর্জুন বললেন "আপনি তো আমার শত্রু নন। আপনি আমার গুরুদেব"।

    পাঞ্চালদেশের (বেরিলি,বদায়ুন,রোহিলাখন্ড নিয়ে সেই দেশ) দুই বীর যুধামন্যু আর উত্তমৌজা। এরা দুজনে ছিলেন অর্জুনের পার্শ্বরক্ষক। এদের নিয়ে অর্জুন শকটব্যুহ ভেদ করে চললেন পদ্মব্যুহের দিকে। তাকে আটকাতে হাজির কৌরব পক্ষের কৃতবর্মা,কম্বোজ,শ্রুতায়ু। তাদের সাথে আরো রয়েছেন অভিষহ, শুরসেন, শিতি, বসাতি, মাবল্লেক, কৈকেয়, মদ্রক,নারায় ও গোপাল সেনারা।

    এই সব দেশের যে কটির পরিচয় এখনো পাওয়া যায় তাদের কথা বলি। শুরসেন ছিলো মথুরার রাজধানী।শিবি হচ্ছে পাঞ্জাবের ঝাংএর শোরকোট অঞ্চল। কেকয়ও পাঞ্জাবে- এখনকার সাহপুর জেলা। মদ্র দেশ হচ্ছে বর্তমান শেয়ালকোটের কাছে। কম্বোজ ষোড়োশ মহাজনপদের একটি। ঘোড়ার জন্য বিখ্যাত এটি উত্তর পশ্চিম ভারতে অবস্থিত ছিলো। সম্ভবতঃ গান্ধারের প্রতিবেশী দেশ।

    আর এই যোদ্ধারা? কৃতবর্মা ভোজ বংশের নৃপতি। শ্রুতায়ু ছিলেন কলিংগরাজ। এবং প্রথমে একবার উল্লেখিত হলেও সাত্বতের পরে আর কোনো খবর মেলে নি।

    অর্জুন পদ্মব্যুহের দরজায় পা রাখতে না রাখতে পিছু পিছু দ্রোণ আবার এসে হাজির।অর্জুনকে তাড়া করে এসে তিনি আবার যুদ্ধপ্রার্থী। এইবারের লড়াইতে দ্রোণ আরো ভয়ংকর।সঞ্জয় উবাচ ঃ "তৎকালে রণস্থলে দ্রোণাচার্য্যের এই এক আশ্চর্য্য নিপুনতা দেখিলাম যে, যুবা অর্জুন যুদ্ধে সাধ্যানুসারে যত্ন করিয়াও কোনোরকমে তাহাকে বিদ্ধ করিতে পারিলেন না।দ্রোণাচার্য্য, অর্জুন ও কৃষ্ণ- দুজনকেই যথেচ্চ বানবিদ্ধ করতে লাগলেন।

    এবারেও অর্জুন দ্রোণকে "পরিত্যাগ" করে কৃতবর্মার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। পরিষ্কার করে কোথাও লেখা নেই, কিন্তু মন হয় দ্রোণ যেন হাল ছেড়েই দিলেন।পরাজিত অর্জুনকে তাড়া করে আসতে পারতেন। কিন্তু তা আর করলেন না। পদ্মব্যুহের দ্বাররক্ষী কৃতবর্মার সাথেও অর্জুনের লড়াই চললো অনেকক্ষন।কেউই হটবার পাত্র নন। অর্জুন কৃতবর্মাকে আশীবিষসদৃশ অগ্নিশিখাকার একুশটা তীর মারলেন তো,কৃতবর্মাও পাল্টা মারে দশ বানে অর্জুনের বক্ষ বিদ্ধ করে "বীরনাদ করিতে লাগিলেন"। কৃষ্ণ কিন্তু শংকিত। এতো সময় এখানেই চলে গেলে জয়দ্রথের কাছে পৌঁছবে কখন ? বল্লেন "হে পার্থ, কৃতবর্মাকে দয়া করিবার প্রয়োজন নাই।তাড়াতাড়ি একে সংহার করো।" অর্জুনও তৎক্ষনাত কৃতবর্মাকে ঘায়েল করে পদ্মব্যুহের মধ্যে প্রবেশ করলেন। মুশকিল হোলো,তার দুই পার্শ্বরক্ষক, যুধামন্যু আর উত্তমৌজাকে কিন্তু কৃতবর্মা আটকে দিলেন।তারা খুব চেষ্টা করলেন কিন্তু কৃতবর্মাকে অতিক্রম করতে পারলেন না।

    অগত্যা - অর্জুন একাকীই ব্যুহের মধ্যে ঢুকলেন।কিন্তু একটা ব্যাপার বেশ চিন্তা করবার সেটি হল বাসুদেব অর্জুনকে বললেন সম্বন্ধের ব্যাপার ছাড়ো, কৃতবর্মাকে দয়া দেখিও না,আর অর্জুনও তক্ষুনি তাকে আহত করে এগিয়ে গেলেন। যেনো এই পরামর্শের জন্যই এই খেলাচ্ছলের যুদ্ধ শেষ করলেন। পরের অধ্যায়েও মহাভারতকার লিখলেন (অর্জুন) কৃতবর্মাকে সম্মুখে প্রাপ্ত হইয়াও বিনাশ করিলেন না। একটা গোপন বোঝাপরা চোরাস্রোত মহাভারতে সব সময়েই রয়েছে। রচনাকার বহুক্ষেত্রে শুধু ইংগিত দিয়েছেন ,স্পষ্টাস্পষ্টি কিছু লেখেন নি।যদিও এই কৃতবর্মাও অভিমন্যু বধের সপ্তরথীদের অন্যতম।

    তো,পদ্মব্যুহের মধ্যে অর্জুনের প্রথম প্রতিদ্বন্দী বরুণপুত্র শ্রুতায়ুধ। অর্জুনের সাথে দ্বৈরথে তিনি কিন্তু খুব সুবিধে করে উঠতে পারছিলেন না। অচিরেই তিনি রথ,অশ্ব,সারথিবিহীন হলেন।তিনি তখন পিতৃদত্ত স্বর্গীয় গদা নিয়ে ছুটে এলেন অর্জুনকে মারবেন বলে। বরুণের নির্দেশ ছিলো যে এই গদা শত্রুগনের অজেয় কিন্তু "যে ব্যাক্তি যুদ্ধে প্রবৃত্ত না হইবে তাহার উপর কদাচ এই গদা প্রয়োগ করিও না। যদি কর,তাহা হইলে ইহা বিপরীতগামিনী হইয়া তোমাকেই বিনাশ করিবে"। তবে জলাধিপতি বরুণ এও জানতেন যে দিব্যাস্ত্রের ফলেই তার পুত্র অবাধ্য হবে। হলো ও তাই। শ্রুতায়ুধ হাতের কাছে বাসুদেবকে পেয়ে তাকেই মারলেন মোক্ষোম এক ঘা। "মহাবীর বাসুদেব অনায়াসে স্বীয় পীন স্কন্ধদেশে সেই গদাঘাত সহ্য করলেন"। দৈব বাক্য তো বিফল হয় না। সেই গদাও রিবাউন্ড করে করে শ্রুতায়ুধকে শমনসদনে পাঠিয়ে দিলো।তবে সারথি কিন্ত্য ধর্মযুদ্ধে বধ্য।বাসুদেবকে অর্জুনের প্রতিদ্বন্দী সব মহারথীরাই আঘাত করেছেন।
    নিজের গদায় নিজেই মরলেন শ্রুতায়ুধ। অর্জুনের প্রতিপক্ষ এবার কাম্বোজদের রাজা সুদক্ষিন।এই কাম্বোজদেরই কর্ণ যুদ্ধে হারিয়েছিলেন কিন্তু এই মহাসমরে তারা কিন্তু কর্নের দলেই রইলেন। সুদক্ষিনের নিক্ষিপ্ত শক্তি (বল্লম জাতীয় অস্ত্র, ভারী হতো ওজনে) অর্জুনকে ভেদ করে মাটীতে পরলো।অর্জুনও আঘাতে সংজ্ঞা হারালেন,আবার জ্ঞান ফিরেও পেলেন তৎক্ষনাত। সুদক্ষিনকে আঘাত করলেন চৌদ্দটি নারাচ (বর্মভেদী লৌহময় বান) দিয়ে। তারপর আরো অজস্র অস্ত্র নিক্ষেপ করে সুদক্ষিনের রথ খন্ড খন্ড করে ফেললেন। ক্রমে "সুদক্ষিনের গাত্র শিথিল,বর্ম্ম ছিন্ন,মুকুট ও অংগদ পরিভ্রষ্ট হইলো।তপ্তকাঞ্চন মালালংকারংকৃত ,তাম্রলোচন সুদর্শন প্রানত্যাগ করিলেন"। কাম্বোজেরা বোধহয় ইন্দো ইরানীয়ান সংকর জাতি। তাই কি তাম্রলোচন ?
    সুদক্ষিনের পরই অম্বষ্ঠ দেশের রাজা শ্রুতায়ু, অর্জুনের প্রতিপক্ষে।অম্বষ্ঠরা উত্তর পশ্চিম ভারতের একটি উপজাতি। শ্রুতায়ুও লড়াই করলেন মুলতঃ গদা নিয়েই, এবং ইনিও অর্জুনের নাগাল না পেয়ে বাসুদেবকেই তাড়না করতে লাগলেন।ক্রুদ্ধ অর্জুন বানাঘাতে তার গদা খন্ড খন্ড করে দিলে শ্রুতায়ু আরেকটা গদা নিয়ে চড়াও হলেন। অর্জুন দুই ক্ষুরপ্র (তীর। এর ফলকটি খুরপার মতন,অর্থাৎ ধারালো আর চওড়া) দিয়ে শ্রুতায়ু দুই হাত কেটে দিলেন।

    তার পুত্র নিয়তায়ু এইবারে অর্জুনের প্রতিদ্বন্দী । তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন বংগ ও কলিংগের সেনারা - হাতীর পিঠে। "তখন বংগদেশীয় সহস্র সহস্র সুশিক্ষিত ক্রোধনস্বভাব গজারোহীরা" এবং অন্যান্য ভুপালগন রণাংগনে। আরো ছিলেন বিকটবেশ, বিকটচক্ষু, আসুরিক মায়াভিজ্ঞ যবন (গ্রীক) পারদ, শক, বাহ্লীক (উত্তর ভারতের এক উপজাতি) ও প্রাগজ্যোতিষের (আসামের) ম্লেচ্ছগন। আরো ছিলো দার্ব্বাতিসার, দরদ ও পুন্ড্রদেশের (উত্তর বংগ) সেনানীরা। গুহবাসী পাহাড়িয়া উপজাতিরাও ছিলেন। এই ম্লেচ্ছরা ছিলো "মুন্ডিত,অর্ধমুন্ডিত,অপবিত্র, জটিলবক্ত্র"।

    এই লড়াইও অর্জুন হেলায় জিতলেন। ষাঠ হাজার ঘোড়া আর দশ হাজার ক্ষত্রিয় বীর মারা গেলেন।এর পরের লড়াই অবন্তী দেশের (মালব) বিন্দ আর অনুবিন্দের সাথে।এই সময়ে কৃষ্ণ এতো দ্রুত রথ চালাচ্ছিলেন যে অর্জুনের নিক্ষিপ্ত বান মাটীতে পড়বার আগেই রথ সেটিকে অতিক্রম করে যাচ্ছিলো। আসলে বাসুদেবের চিন্তা ছিলো অযথা সময় যেন নষ্ট না হয়। কতক্ষনে জয়দ্রথের কাছে তিনি রথ নিয়ে যেতে পারবেন সেটাই তার প্রধান লক্ষ্য।অতো দ্রুত ছুটে ও শরাঘাতে আহত ঘোড়াগুলি খুবই হাঁফিয়ে গেছিলো। সেই ক্লান্ত বাহনদের দেখে বিন্দ আর অনুবিন্দ নামলেন যুদ্ধে। বড়োভাই বিন্দ অচিরেই প্রান হারালেন , ক্রুদ্ধ অনুবিন্দ ছুটে এসে গদা ঘুড়িয়ে মারলেন - হ্যাঁ, সেই কৃষ্ণকেই, তার কপালে।বাসুদেবের কিন্তু কোনো হেলদোল হোলো না, তিনি মৈনাক পর্বতের মতন অকম্পিত রইলেন। অতঃপর অর্জুনের শরাঘাতে অনুবিন্দ নিহত হলেন।
    কেশব এবার ক্লান্ত ঘোড়াদের একটু বিশ্রাম দিলেন।জল খাওয়ালেন। মালিশ করলেন।গায়ে বিঁধে থাকা তীরের ফলাগুলি বার করলেন।তারপর উজ্জীবীত ঘোড়াদের নিয়ে রথে আবার জয়দ্রথের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন । অর্জুনের ঘোড়া চারটি - নাম তাদের বলাহক,মেঘপুষ্প,শৈব্য ও সুগ্রীব - কিন্তু কুরুক্ষেত্রের আঠারো দিনই বেঁচে থাকবে। আর একজন রথীর ক্ষেত্রেও এরকম ঘটনা ঘটেনি। ঘোড়াদের নাম ও বিশেষ হতো না।হাতীদের নামকরণ হতো কিন্তু ঘোড়ারা যেনো কনসিউমেবল কমোডিটি। অর্জুনের রথের ঘোড়ারা একেবারে ব্যতিক্রম ।

    বোধহয় কৃষ্ণ ও অর্জুন - এদেরো একটু বিশ্রাম দরকার ছিলো।চিন্তায় চিন্তায় কৃষ্ণ তো আগের রাত থেকেই জেগে।সহকারী দারুককে নির্দেশ দিয়েছিলেন্র রথে যেন অস্ত্র শস্ত্র সব গুছিয়ে রাখা হয়। এমন কি নিজের দিব্য গদা কৌমুদিকীকেও রথে রাখতে বলেছিলেন।জয়দ্রথ বধ না হলে কৃষ্ণ কী করতেন কে জানে !!

    কিছুক্ষন পরেই তারা জয়দ্রথের দেখা পেলেন। তারা "আমিষলোভী শ্যনপক্ষীর ন্যায় বিক্রমপ্রকাশপুর্বক ক্রোধভরে সিন্ধুরাজের সমীপে গমন করিতে লাগিলেন"। এর আগে এক অধ্যায়ে একটি উল্লেখ দেখে মনে হয় তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। সময় বেশী নেই।জয়দ্রথকে পাহাড়া দিচ্ছেন দিব্যকবচধারী দুর্য্যোধন।

    এবারে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে। সেই যখন অর্জুন দ্রোণকে দ্বিতীয় বার পাশ কাটিয়ে ("পরিত্যাগ করিয়া") পদ্মব্যুহের ভিতরে ঢুকলেন - সেই সময়ে। একটি ফ্ল্যাশ ব্যাক।
    ফিরে আসি চুরানব্বইতম অধ্যায়ে। দ্রোণের প্রতি দুর্য্যোধনের অভিযোগ।দুর্য্যোধন চটে কাঁই।বললেন ,আপনার প্রতিশ্রুতি পেয়েই আমি জয়দ্রথকে বাড়ী পাঠাই নি,এখন কতই সহজে অর্জুন ব্যুহ মধ্যে ঢুকে গেলো। আমাদের আশ্রয়েই আপনি জীবিকা নির্বাহ করে আমাদেরই অপকারে আপনি প্রবৃত্ত হয়েছেন।খুবই কড়া কথা।দ্রোণ বললেন, অর্জুনের রথ অত্যন্ত দ্রুতগামী । একবার ফাঁক পেয়েই ব্যুহ মধ্যে ঢুকে গেছে।আর আমার ও বয়স হয়েছে (দ্রোণ তখন পঁচাশী)। অতো আর ছুটতে পারি না।তাছাড়া আমি তো বলেই ছিলাম যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করাও আমার একটা অ্যাজেন্ডা। সেই সব ছেড়ে আমি ব্যুহের দ্বার ফেলে রেখে যাই কী করে? এরপর দ্রোণ একটি সুক্ষ্ণ চাল চাললেন। দ্রোণ বললেন,মহারাজ, আপনিই বা কম কিসে? আপনি জগতের পতি। আপনিই যান না। অর্জুনকে ঠেকান।। তখন দুর্য্যোধন খুব স্তুতি করলে দ্রোণ সন্তুষ্ট হয়ে মন্ত্র টন্ত্র পরে দুর্য্যোধনের গায়ে এক অজেয় কবচ এঁটে দিলেন।

    এই কবচ কুন্তলের ব্যাপারটা একটু ভোজবাজীর মতন। সঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না। কবচ মানে ঠিক বর্ম নয়। অনেকটা মাদুলির মতন। যা হোক, দুর্য্যোধন আপাততঃ তাতেই খুসী হলেন।তিনি ত্রিগর্ত্ত দেশের (পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলা) রথ, গজ ও সেনানী নিয়ে অর্জুনকে ধরতে ব্যুহের মধ্যে ঢুকলেন।
    দ্রোণ কী করলেন? আজকে তিনি সত্য ই ব্যার্থ।
    অর্জুনের সাথে দ্রোণের প্রথম লড়াইএর পর তার মুখোমুখী হল ধৃষ্টদ্যুম্ন। দুজনেই লড়াই করলেন মহাবিক্রমে।সমানে সমানে। উল্লেখযোগ্য যে রচনাকার ধৃষ্টদ্যুম্নের তরোয়ালের সাথে তুলনা করেছেন মৌর্ব্বী বিদ্যুতের, ঝোড়ো হাওয়ার সাথে, মেঘ গর্জনের সাথে। মহাভারতের প্রথম সারির নায়কেরা তরোয়াল নিয়ে ক্বচিৎ যুদ্ধ করেছেন।ঘোড়ার পিঠে চড়ার মতন হাতে তরোয়াল নিয়ে লড়াইটাও খুব রাজোচিত ছিলো না।
    আরেকটি ঘটনা, দ্রোণাচার্য্য তার সেনাদের ঠিক মতন সংযুক্ত করতে পারছিলেন না। লীডারশিপের দুর্দশা।তিনি বারবার যত্ন নিলেও কোরব সেনারা ত্রিধা বিভক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। কিছু গেলো ভোজরাজের কাছে,কিছু জলসন্ধের কাছে,বাকীরা দ্রোণের কাছেই থেকে গেলেন। যেন কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই। তিনি যতোই চেষ্টা করছেন সেনাদের সংহত করতে ততবারই বিফল হছেন ধৃষ্টদ্যুম্নের কৌশলে। ত্রিধা বিভক্ত কৌরব সেনারা কচুকাটা হচ্ছিলো।

    গুরুত্বপুর্ণ এটি এই কারনে যে মহাভারতে সাধারন সেনানীদের কথা প্রায় উল্লেখই হত না। তবে এই দিনে কৌরব সেনাদের এরকম বিশৃংখল অবস্থা বোধ হয় ঘটেছিলো, কেননা তাদের সব মহারথীরাই খুব রক্ষণাত্মক লড়াইতে ব্যুহের মধ্যে নিশ্চল হয়ে শুধু প্রতিরক্ষীর ভুমিকায় ছিলেন। দিনের শেষে যখন অর্জুন জয়দ্রথের মুখোমুখী তখনই তার আসরে নেমে যুদ্ধে অংশ নিলেন। তুলনায় পান্ডবেরা ছিলো অল আউট অ্যাটাকে। অর্জুনের সাথেও যুধামন্যু আর উত্তমৌজা ছাড়া সাহায্যকারী কেউ ছিলেন না।

    এরমধ্যে আবার ভীমসেন হাজির। তাকে আটকাতে এলেন বিন্দ আর অনুবিন্দ (এর কিছু পরেই এই দুই ভাই অর্জুনের হাতে নিহত হবেন)। আরো এলেন তিন ধৃতরাষ্ট্র তনয় - বিবংশতি,চিত্রসেন ও বিকর্ন। এই সেই বিকর্ন যিনি সব সময়েই পান্ডবদের পক্ষে সওয়াল করেছেন নির্ভয়ে। খুব সংকুল যুদ্ধ শুরু হল। পান্ডেবেরা চাইছেন অর্জুনকে সাহায্য করতে ব্যুহের ভিতরে ঢুকতে -আর কৌরবেরা তাদের আটকাচ্ছেন।
    সঞ্জয় উবাচ ঃ ঐ সময়ে সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ কৃপ প্রমুখ মহা ধনুর্দ্ধর মহারথীগনে পরিরিত হইয়া সমুদয় সেনার পশ্চাদ্ভাগেঅবস্থান করিতেছিলেন।দ্রোণপুত্র অশ্ব্ত্থামা তাহার দক্ষিন ভাগে,সূতপুত্র কর্ণ বামভাগে অবস্থানপুর্বক তাহার চক্রে রক্ষা করিতে লাগিলেন।সৌমদত্তপ্রমূখ বীরগন তাহার পৃষ্ঠ রক্ষায় নিযুক্ত হইলেন।যুদ্ধবিশারদ, নীতিজ্ঞ, মহাধনুর্দ্ধর কৃপ, বৃষসেন, শল ও শল্য প্রমূখ বীরগন এইরূপে সিন্ধরাজের রক্ষায় উপায়বিধান করিয়াছিলেন।

    প্রবল লড়াই শুরু হল।দুই পক্ষের তাবৎ রথী মহারথীরা পরষ্পরের সাথে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন।
    তবে এই লড়াইএর হীরো নাম্বার ওয়ান ছিলেন সাত্যকি। যদুবংশের রাজা শিনির পৌত্র। কৃষ্ণের সারথ্য করেছেন কখনো আর ছিলেন অর্জুনের শিষ্য।

    দ্রোণের সাথে ধৃষ্টদ্যুম্নের লড়াইতে আবার ফিরে আসি। প্রথমটায় চমক দিলেও শেষ পর্যন্ত্য অভিজ্ঞতার কাছে হার মানলো তারুণ্য।দুজনের রথ একেবারে এ ওর ঘাড়ে এসে পরলে ধৃষ্টদ্যুম্ন ধনুক ছেড়ে তরোয়াল হাতে দ্রোণের ঘোড়ার উপর লাফিয়ে, কখনো রথের চূড়ায় উঠে, কখনো ঘোড়াদের পিছনে রথদন্ডের উপর দাঁড়িয়ে দ্রোণকে আক্রমন করলেন।কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। দ্রোণ তার অসি,ঢাল,ঘোড়া ও রথ সবই ছিন্ন ভিন্ন করে দিলেন।অবস্থা সংগীন দেখে সাত্যকি ছুটে এসে ধৃষ্টদ্যুম্নকে নিজের রথে তুলে নিয়ে পালিয়ে গেলেন।
    দ্রোণের সাথে সাত্যকির তুমুল লড়াই শুরু হল।"ঐ মহারথদ্বয়ের শরজালে আকাশমার্গ ও দশদিক সমাচ্ছন্ন হইলো।" সেই ভয়ানক যুদ্ধ দেখতে অন্য যোদ্ধারা তাদের লড়াই বন্ধ করলেন।যাবতীয় রথী, গজারোহী, অশ্বারোহী ও পদাতিরা এই দ্বৈরথের চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে অনিমেষ নয়নে এই লড়াই দেখতে লাগলেন। প্রথম রাউন্ডে সাত্যকিরই জয়।তিনি আচার্য্যের ধনুক ষোলোবার ছিন্ন করলেন। দ্রোণ চিন্তা করলেন পরশুরাম,কার্ত্তবীর্য্য ও ভীষ্মের মতন সাত্যকিও সমান বীর। দ্রোণ দিব্য আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহন করলে সাত্যকিও দিব্য বারুণাস্ত্র গ্রহন করলেন।

    টাইমের একটু গন্ডগোল রয়েছে এই ধারা বিবরনীতে, কেননা এবারে লেখা হয়েছে তখন সুর্য্যাস্ত হবার মুখে যদিও এর পরেও লড়াই চলবে অনেকক্ষন। সকলেই চিন্তিত। দিনের শেষে কে বেঁচে থাকবে - অর্জুন না জয়দ্রথ? সাত্যকির এখনো অনেক যুদ্ধ বাকী।তারপরে অর্জুনের সাথে মোলাকাত হবে দিনের শেষের দিকেই।

    সংকুল যুদ্ধ শুরু হলে আর দ্বৈরথ লড়াই চললো না।কিন্তু সাত্যকি এমনই পরাক্রমে যুদ্ধ করতে লাগলো যে দ্রোণকে আবার ছুটে আসরে হলো অবস্থা সামলাতে।এই সেকেন্ড রাউন্ড কিন্তু দ্রোণেরই। তার প্রহারে বিপর্য্যস্ত হলেন সাত্যকি।কুরু সেনাদের বিজয় উল্লাসের সিংহনাদ শুনে শংকিত হয়ে ছুটে এলেন মহারাজ যুধিষ্ঠির স্বয়ং। তার সাথে এলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন ও আরো রথীরা। কিন্তু দ্রোণ অপ্রতিরোধ্য। তাকে কেউই সামলাতে পারছে না।বিশেষতঃ পাঞ্চাল সেনাদের নাগালে পেলে দ্রোণের বীরত্ব যেন দশগুন বেড়ে যায়।কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে আগাগোড়াই, দ্রোণ যতদিন জীবিত ছিলে,পাঞ্চাল সেনাদের প্রতি তার আক্রোশ ছিলো চোখে পড়ার মতন।
    এইসময়েই আবার একটা ঘটনা ঘটে গেলো। জয়দ্রথের সামনে পৌঁছে বাসুদেব বার বার তার পাঞ্চজন্য বাজালেন। সেই শংখধ্বনি শুনেই খুবই বিচলিত হয়ে পরলেন যুধিষ্ঠির। (কৃষ্ণ কি সংকেত পাঠাচ্ছিলেন সাহায্যের জন্য?)

    যুধিষ্ঠির সাত্যকিকে বললেন পদ্মব্যুহের মধ্যে ঢুকে অর্জুনের কাছে যেতে। সাত্যকি প্রথমে নারাজ ছিলেন,কেননা গুরুদেব অর্জুন তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যুধিষ্ঠিরকে যেন অরক্ষিত না রাখা হয়। দ্রোণাচার্য্যে যে যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করবার ফন্দী আঁটছেন এ তো সকলেরই জানা ছিলো। কিন্তু যুধিষ্ঠির সাত্যকিকে বোঝালেন, কেনো এতো চিন্তা করছো? এই তো আমার পাশেই রয়েছেন ভীম, দ্রুপদ, শিখন্ডী, ঘটোৎকচ, বিরাট, ধৃষ্টকেতু, কুন্তিভোজ, নকুল, সহদেব ইত্যকার সকলেই। আরে, ধৃষ্টদ্যুম্ন একাই দ্রোণকে আটকাতে পারবে। তুমি অর্জুনের কাছেই যাও। অগত্যা সাত্যকি ভীমসেনকে দায়িত্ব দিলন যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করার আর নিজে পদ্মব্যুহের দিকে রওয়ানা দিলেন।

    তো সাত্যকি চললেন অল আউট অ্যাটাকে। রথের ঘোড়াদের স্নান করানো হল,এবং মালিশ।মত্তকর মদ্যপান করানো হল। সাত্যকি নিজেও "কিরাতদেশোদ্ভব মদ্যপানে বিহ্বলিত ও লোহিতলোচন হইয়া দর্পন স্পর্শপুর্বক শরাসন গ্রহন করিয়া অত্যন্ত আহ্লাদিত ও তেজস্বী হইয়া উঠিলেন"।

    আবার দ্রোণের মুখোমুখী। তৃতীয়বার। তবে এইবারের লড়াইএর উদ্দেশ্য আলাদা।আগের দুই বারে ছিলো দুই যোদ্ধার ডুয়েল। এবারে সাত্যকিকে পৌঁছাতে হবে অর্জুনের কাছে। দ্রোণ তাই তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমিও কি তোমার গুরুদেব অর্জুনের মতন পালিয়ে যাবে কাপুরুষের মতন? সাত্যকি বললেন, হে ব্রহ্মণ, আপনার মংগল হোক। কিন্তু আমার তাড়া আছে। এই বলে দ্রুত রথ চালিয়ে পাশ কাটিয়ে তিনি পদ্মব্যুহের দ্বারে এসে পরলেন।সারথিকে বললেন, মন দিয়ে রথ চালাও হে।। দ্রোণ তো এখুনি এসে পরবেন আমাদের তাড়া করে। দ্বিতীয় অর্থাৎ এই পদ্মব্যুহের দ্বাররক্ষী ভোজরাজ কৃতবর্মা।কিন্তু তার সাথে লড়াই শুরু হতে হতে না হতেই দ্রোণ এসে হাজির। উনি কৃত্তবর্মাকে বললেন তুমি ব্যুহের দ্বার সামলাও,সাত্যকিকে আকি রুখছি।
    ততক্ষনে পান্ডবদের দল ও এসে গেছে। ভীমসেন আর তার সাথে পাঞ্চাল সেনারা ।

    এইখানে মহাভারতের বিবরনীতে একটু কন্টিনিউইটির অভাব।কেননা আবার লেখা হলো দ্রোণ সাত্যকিকে খুঁজেই যাচ্ছেন। হয়তো পাঞ্চাল সেনাদের দেখে প্রতিহিংসাপরায়ন দ্রোণ সাময়িক ভাবে বিস্মৃত হয়েছিলেন সাত্যকির কথা। সেই সুযোগে সাত্যকি দারুন লড়াই করে পদ্মব্যুহের ভিতরে ঢুকে গেলেন।তাই দেখি দ্রোণ তার সারথিকে বলছেন, ঐ যে তুমুল হট্টগোল চলছে, মনে হয় সাত্যকি ওখানেই রয়েছে। তুমি ওখানেই আমাদের নিয়ে চল।

    সারথি বললেন এতোক্ষনে সাত্যকি নিশ্চয়ই অনেক দুর চলে গেছেন।এদিকে আমাদের পিছন পিছন এসে গেছে পান্ডব ও পাঞ্চাল সেনারা। এবার আপনি ই বলুন, কী করব?
    বলতে না বলতেই দুঃশাসন এসে হাজির। সাত্যকির পরাক্রমে বিধ্বস্ত হয়ে উনি চুপিচুপি পদ্মব্যুহ ছেড়ে বাইরে চলে আসছিলেন।একেবারে দ্রোণের সামনেই, ধরা পরে গেলেন।
    দ্রোণও ব্যাংগের চাবুকে জর্জরিত করলেন দুঃশাসনকে। "ও হে দুঃশাসন, রথীরা পালায় কেন? মহারাজের মংগল তো ? সিন্ধুরাজ বেঁচে আছেন তো ?আর আপনিই বা পালাচ্ছেন কেনো? যান,যান। জয়দ্রথকে সাহায্য করুন। আরে, এতো দিন এতো বড় বড় আস্ফালন শুনলাম আপনার মুখে আর এখন আপনি শত্রুদের হর্ষবর্ধন করছেন?
    সঞ্জয় বললেন, দুঃশাসন এমন ভান করলেন যেনো এই কথাগুলি উনি শুনতেই পান নি। যাহোক, তিনি আবার রথ ঘুড়ালেন। ম্লেছ সেনাদের নিয়ে উনি আবার ব্যুহের মধ্যে সাত্যকিকে তাড়া করতে ঢুকলেন।

    এইখানে একটা সন্দেহ উঁকি মারে। দ্রোণ কি ইচ্ছা করেই কৃতবর্মাকে সরিয়ে দিয়ে খুব ঢিলেঢালা ভাবে সাত্যকির মোকাবেলা করে তার ব্যুহ প্রবেশের পথ সুগম করলেন?
    পাঞ্চালেরা ঘিড়ে ধরলে্ন দ্রোণকে। কিন্তু দ্রোণ একাই একশো। রাজকুমার বীরকেতু নিহত হলেন। পর পর প্রান হারালেন পাঞ্চাল বীর সুধন্বা, চিত্র্কেতু, চিত্ররথ, চিত্রবর্মা। এবারে দ্রোণের বিরুদ্ধে লড়াইতে নামলেন ধৃষ্টদ্যুম্ন। সকালের প্রথম দ্বৈরথে কোনো রকমে প্রান নিয়ে পালিয়েছিলেন দ্রুপদনন্দন। এবারে কিন্তু অতো সহজে হার মানলেন না। তার শরে একবার সংজ্ঞা হারালেন দ্রোণ। ব্যাস, ধৃষ্টদ্যুম্ন অমনি নিজের রথ থেকে নেমে তরোয়াল হাতে ছুটলেন দ্রোণের দিকে।কিন্তু তখুনি জ্ঞান ফিরে পেয়ে দ্রোণ তার এক বিঘৎ লম্বা ছোট্টো বানে ধৃষ্টদ্যুম্নকে বিদ্ধ করলেন।

    দুটি বিষয় একটু অদ্ভুত। এক তো ধৃষ্টদ্যুম্নের এই তরোয়াল প্রীতি। রাজা গজারা তীর ধনুক থাকতে পারত পক্ষে তরোয়াল নিয়ে লড়াই করতেন না। ভারতীয় যুদ্ধ শাস্ত্রে অসিবিদ্যা খুব কল্কে পায় নি। ভীমের ছেলে সুতসোম - তারও অসিবিদ্যার প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো। এ ছাড়া কোনো নায়কের তরোয়াল হাতে লড়াইএর কথা নেই। সেই দিক দিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্ন একটি ব্যতিক্রম।
    অন্যটি এই বিতস্তি প্রমান তীর। এর জন্য নিশ্চয়ই ধনুক ও ছিলো খুব ছোটো।ক্লোজ কোয়ার্টার ফাইট, মানে হাতাহাতি লড়াইতে এই ছোটো তীর ধনুক হয়তো কাজে দিতো। এটাও উল্লেখ আছে যে অর্জুন আর আরো অল্প কয়জনের কাছেই এই ছোটো বিঘৎ পরিমান তীর থাকতো। ভাবতে ইচ্ছে করে এটি আদতে ছিলো ক্রস বো, যদিও ভূ ভারতে ক্রস বো'র কোনো অস্তিত্ব কোনোদিনই ছিলো না।

    এরপর দ্রোণের বানে সারথির মৃত্যু হলে ধৃষ্টদ্যুম্ন রনে ভংগ দিলেন। দ্রোণের লড়াই চললোই।নিষধরাজ বৃহৎক্ষত্র নিহত হলেন দ্রোণের সাথে সম্মুখ সমরে।এর পরে আরো প্রান হারালেন শিশুপাল তনয় ধৃষ্টকেতু ও তার পুত্র। মহাভারতকার সখেদে বলেছেন আগুন দেখলে পতংগ যেমন ঝাঁপিয়ে পরে মৃত্যু বরন করে শিশুপালের পুত্র ও পৌত্র সেভাবেই অবধারিত মৃত্যু বরন করলেন।নিহত হলেন জরাসন্ধের পুত্রও।
    এইবারে দ্রোণের মোকাবেলায় আসলেন স্বয়ং মহারাজ যুধিষ্ঠির। ঠিক কী কারনে তিনি দ্রোণের সাথে লড়াইতে মাতলেন বোঝা গেলো না। যুধিষ্ঠিরকে বন্দী করবার দ্রোণের অভিষন্দী সকলেরই জানা ছিলো। ঐ কারনেই সাত্যকিও যুধিষ্ঠিরের পাশ ছাড়তে চান নি। যাই হোক, প্রথমে কিছুক্ষন যুধিষ্ঠির ভালোই যুঝলেন। তীরের বদলে তীর,গদার বদলে গদা। কিন্তু অল্প পরেই একেবারে পর্য্যুদস্ত হয়ে পরলেন যুধিষ্ঠির। দ্রোণের শরজালে তার রথ একেবারে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো। তাকে আর দেখাই যাচ্ছিলও না। বড়ো রথের মধ্যে গোপন প্রকোষ্ঠও থাকতো। বোধহয় যুধিষ্ঠির সেখানেই লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু পান্ডব সেনারা মহা হট্টগোল শুরু করে দিলেন - আমাদের মহারাজা নিশ্চয়ই নিহত হয়েছেন।দ্রোণ এইবারে যুধিষ্ঠিরের সারথি আর রথকে বিনষ্ট করে দিলে যুধিষ্ঠির অস্ত্র ত্যাগ করে কুরুক্ষেত্রের মাটীতে দুই হাত তুলে দাঁড়িয়ে রইলেন। অর্থাৎ আমি নিরস্ত্র তাই অবধ্য। তাকে বন্দী করবার জন্য ছুটে এলেন দ্রোণ। পান্ডব সৈন্যরা হাহাকার শুরু করে দিলেন - আমাদের মহারাজকে বন্দী করা হবে। ভাগ্য ভালো,সেই শুনে সহদেব দ্রুতগামী রথে এসে যুধিষ্ঠিরকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন।

    ইতিমধ্যেই যুধিষ্ঠির আবার শুনতে পেলেন পদ্মব্যুহের থেকে কৃষ্ণের পাঞ্চজন্যনিনাদ। কেনো কৃষ্ণ শংখধ্বনি করছেন? চিন্তায় আকুল হয়ে পরলেন যুধিষ্ঠির। তৎক্ষনাৎ ভীমকে নির্দেশ দিলেন পদ্মব্যুহের মধ্যে ঢুকে অর্জুনকে সাহায্য করতে। ভীম রাজী কিন্তু তার আগে ধৃষ্টদ্যুম্নকে ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করার দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। এরপর মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি। কিরাতদেশীয় মদ্যপানে আরক্তলোচন ও উজ্জীবিত হয়ে হয়ে ভীম তখুনি তার সারথি বিশোককে নিয়ে ব্যুহের দিকে চললেন।বিকর্ণ সহ একুশ জন ধৃতরাষ্ট্র পুত্র খুব চেষ্টা করলো তাকে আটকাতে কিন্তু ভীমসেনকে থামানো গেলো না।

    তাকে রুখতে এলেন সেই দ্রোণাচার্য্যই। প্রথমেই একটি নারাচে ভীমের কপাল বিদ্ধ করে দ্রোণ শ্লাঘাভরে বল্লেন - তোমার ছোটোভাই আমার অনুমতি নিয়েই ব্যুহের মধ্যে প্রবেশ করেছে - কিন্তু তাই বলে ভেবো না তোমাকেও অনুমতি দেবো।ভীমের উত্তর ঠিক ভীমেরই মতন।যথেষ্ট বিনয় সহকারে তিনি বল্লেন, আজ্ঞে আমি ঠিক অর্জুনের মতন আপনার কৃপাপ্রার্থী নই। এখন যুদ্ধে আমরা পরষ্পরের শত্রু।এই বলে গদা ঘুড়িয়ে ছুঁড়লেন। সেই গদার আঘাতে দ্রোণের রথ চুড়মার। কৌরব ভায়েরা আবার ভীমকে ঘিড়ে ফেলতেই ভীম অবিলম্বে তাদের সাতজনকে যমালয়ে জমা করে দিলেন।

    আবার দ্রোণের সাথে মুখোমুখী লড়াই। ভীমের হাতে সময় বেশী নেই। তীর ধনুকে বড্ডো সময় বেশী নেয়। তিনি গদার আঘাতে ডাইনে বাঁয়ে যতেক রথীদের যমালয়ে পাঠাতে শুরু করলেন। দ্রোণের সাথে যুদ্ধে বড়ো বেশী সময় চলে যাচ্ছে।ভীমসেন ধৈর্য্য হারালেন। রথ থেকে নেমে উনি পায়ে হেঁটে দ্রোণের রথের দিকে এগোলেন। দ্রোণের তীরগুলি অবলীলায় সহ্য করলেন, যেমন ষাঁড়েরা সহ্য করে অবিরল বর্ষণ, তেমনই নির্লিপ্ত ভাবে চোখ বুঁজে পৌঁছে গেলেন দ্রোণের রথের পাশে।।গদাটদারও দরকার নেই। রথের যোয়ালটা ধরে রথ ও দ্রোণকে তুলে দুরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। দ্রোণ মাটীর থেকে উঠে আরেকটি রথে উঠে ব্যুহদ্বারে চলে গেলেন। ততক্ষনে বিশোক অতি দ্রুত রথ নিয়ে এসে ভীমকে নিয়ে পদ্মব্যুহের ভিতরে ঢুকে গেলেন। মহাভারতকার যদিও খুব স্পষ্টভাবে লেখেন নি কিন্তু মনে হয় দ্রোণ হার মেনেই আবার স্বস্থানে ফিরে গেলেন। এই রকম রথ টথ শুধু টেনে ছুঁড়ে দিয়ে যুদ্ধ করবার কোনো সমাধান বোধহয় দ্রোণের কাছেও ছিলো না।

    কিন্তু পরম আশ্চর্য্যের কথা, পদ্মব্যুহের দ্বাররক্ষী কৃতবর্মা গেলেন কই? মহাভারকার এখানে নীরব।

    অর্জুনের সাক্ষাত পেয়ে ভীম উল্লাসে সিংনাদ করে উঠলেন। অর্জুন আর কৃষ্ণও তাকে দেখে সিংহনাদে অভ্যর্থনা জানালেন। সেই নাদ শুনে যুধিষ্ঠির নিশ্চিন্ত হলেন।কিন্তু দুশ্চিন্তা তো ছিলোই। অর্জুন কি পারবে শেষরক্ষা করতে? জয়দ্রথ নিহত হলে কি দুর্যোধন সন্ধির প্রস্তাব আনবেন? দুর্যোধনরও তো অনেক ভাই মারা গেছেন।তাহলে নিশ্চয়ই দুর্যোধন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আসবে।
    সঞ্জয় উবাচ ঃ এইরূপে কৃপাপরতন্ত্র রাজা যুধিষ্ঠির যখন নানা প্রকার চিন্তা করিতেছিলেন, তৎকালে কুরুপান্ডবের ঘোরতর যুদ্ধ হইতেছিলো।
    এখন থেকে জয়দ্রথ বধ পর্যন্ত্য দ্রোণের আর কোনো ভুমিকা থাকবে না।

    এবারে আবার আরেকটা ফ্লাশব্যাক। সাত্যকি। তিনিও ছুটে চলেছেন পদ্মব্যুহের অভ্যন্তরে অর্জুনের কাছে, ভীমের আগেই তিনি প্রবেশ শুরু করেছিলেন। তাকে বাধা দিতে এলো দুঃশাসন। সাত্যকির পরাক্রমে ভীত দুঃশাসন এখান থেকেই পালিয়ে গেছিলেন। দ্রোণের দাবড়ানি খেয়ে আবার ফিরে এসেছিলেন।

    দ্রোণকে এড়িয়ে সাত্যকি ঢুকেছেন পদ্মব্যুহের মধ্যে। কৃতবর্মার সাথে তুমুল যুদ্ধ। ভোজরাজকে রথশুণ্য করে জিতলেন সাত্যকি। সময় নষ্ট করার নেই। সাত্যকি তবু তার সারথিকে আশ্বাস দিলেন, তুমি নিঃশংকচিত্তে মন্দগতিতে রথচালনা কর। নির্দেশ দিলেন ঐ যে ত্রিগর্ত্তদেশীয় রাজনেরা আছেন,সেখানে নিয়ে চলো আমাকে। রাজা জলসন্ধ নিহত হলেন সাত্যকির হাতে।এই যুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে হাতীর পিঠে সওয়ারী রাজা জলসন্ধ তরোয়াল বিঘুর্নিত করে ছুঁড়ে সাত্যকির শরাসন ছিন্ন করে দেন। তলোয়ারকে এইরকম ক্ষেপনীয় অস্ত্রের মতন ব্যবহার বিরল,যদিও এই ঘটনার কিছু পরেই ভীমসেনকে আমরা দেখবো এইভাবে হাতের তরোয়াল ছুঁড়ে কর্ণের ধনুক কেটে ফেলছেন।
    এইবারে শেষবারের মতন দ্রোণ আর সাত্যকির ডুয়েল হবে, এর আগে অপ্রতিরোধ্য সাত্যকি দুর্য্যোধনকে নাস্তানাবুদ করে তুলেছিলেন। কৃতবর্মাও সাত্যকির শরে সংজ্ঞা হারিয়ে নিজের রথের মধ্যে শুয়ে পরেন।

    দ্রোণের সাথে লড়াইতে এইবারে সাত্যকির সারথি মুর্ছিত হয়ে পরলে সাত্যকি নিজেই রথ চালাতে শুরু করেন। আর ঐ অবস্থাতেই দ্রোণের সারথিকে নিহত করেন। সারথিহীন দ্রোণের ঘোড়াগুলি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে এলোমেলো ছোটাছুটি করতে থাকে। কিছুটা সামলে নিয়ে দ্রোণ ফিরে এসে দেখলেন যে ব্যুহ ভেদ করে সাত্যকি অনেক ভিতরে প্রবেশ করে গেছে। তিনি আবার স্বস্থানে অর্থাৎ ব্যুহদ্বারে ফিরে এসে পান্ডব ও পাঞ্চালদের নিবারিত করতে লাগলেন। অর্জুন,সাত্যকি আর ভীমও - পর পর তিন জন সেই অভেদ্য ব্যুহ ভেদ করে ঢুকে পরেছেন।
    সেনাপতি হিসেবে দ্রোণ এইদিনে ব্যার্থ ছিলেন সন্দেহ নেই। পাঞ্চাল নিধনে তার অবসেসনও কিছুটা এর জন্য দায়ী।
    সাত্যকিকে আটকাতে তখন বাকী রইলো দুর্যোধন।(কর্ণ ও অন্যান্য মহারথীরা তখনো পদ্মব্যুহের মধ্যে সুচীবুহ্যয় জয়দ্রথের প্রতিরক্ষায় সামিল।অর্জুন সেইখানে পৌঁছেছেন। সাত্যকির এখনো কিছুটা পথ বাকী)। দুর্য্যোধন আর দুঃশাসনের রণসংগীদের মধ্যে ছিলো যবন, শক, দরদ,বর্ব্বর ও তাম্রলিপ্তকেরা। এই তাম্রলিপ্তক কথাটাই ভাবায়। এ নিশ্চয় আমাদের তমলুক। এর আগে আসাম ও পুন্ড্র(উত্তর বংগ) সেনাদেরও মহাভারতকার ম্লেচ্ছ বলেছেন। যবনদের বিশেষণ হিসেবে ধনুর্ধর কথাটি ব্যবহার হয়েছে একাধিকবার ।এই যবনেরা লোহা আর কাঁসার বর্ম পরতো। তাদের লম্বা দাড়ি ছিলো।

    সাত্যকি তিনশো ঘোড়া আর চারশো হাতী ঘায়েল করলেন।সবাই পালিয়ে যেতে থাকলে দুঃশাসন তখন পাহাড়িয়াদের পাঠালেন। তারা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে লড়েন না,পাথর ছুঁড়ে যুদ্ধ করেন। এরকম পাঁচশো পাষাণযোদ্ধাও গতায়ু হল। তুংগন, খশ, লম্পক ও পুলিন্দ জাতির সেনাদের মৃতদেহে রণাংগন পুর্ণ হল।

    সেই যে অর্জুনের দুই পার্শ্বরক্ষক ছিলো, দুই পাঞ্চাল বীর উত্তমৌজা ও যুধামন্যু। যারা শকট ব্যুহ ভেদ করলেও পদ্মব্যুহের মুখে এসে আটকা পরেন। কৃতবর্মাকে হারিয়ে কিছুতেই আর ভিতরে ঢুকতে পারেন নি। কিন্তু তারা হাল ছাড়েন নি, ধনুকও না।
    সরাসরি লড়াই বাদ দিয়ে তারা কৌশলের আশ্রয় নিলেন। তারা চুপিচুপি কৌরব ব্যুহের পিছন দিক দিয়ে এসে ব্যুহের ভিতরে ঢুকবার চেষ্টা করলেন।দুর্য্যোধনের নজরে পরতেই তো তিনি রে রে করে তেড়ে এলেন। দুই পাঞ্চাল বীর একই রথের ভিতর থেকে তীর ছুঁড়ে দুর্য্যোধনের রথের ঘোড়াগুলিকে মেরে ফেললেন। দুর্য্যোধন রথ ছেড়ে গদা হাতেই ছুটে এলেন ওদের মোকাবেলায়। গদার আঘাতে ভেঙে দিলেন ওদের রথ।কিন্তু ওদের থামাতে পারলেন না।ওরা অন্য একটি রথে চড়েই অর্জুনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। অবশেষ ওরা পৌছেও যাবেন সূচীব্যুহে।

    অর্জুন দূর থেকেই সাত্যকির রথ চিনতে পারলেন।এবং মোটেই খুসী হলেন না। অর্জুন বললেন কেশবকে - আমি সাত্যকির হাতেই যুধিষ্ঠিরের রক্ষার দায়িত্ব দিতে এসেছিলাম। আর দিন ও তো অস্তগত প্রায়।আমার জয়দ্রথ নিধনের প্রচেষ্টায় আমি নিজেই গুরুতর ভাবে আক্রান্ত। এখন তো দেখছি সাত্যকির অবস্থাও সুবিধের নয়।উনি ক্লান্ত, ওনার সারথি আর ঘোড়ারাও শ্রান্ত। সাত্যকির অস্ত্রও নিঃশেষিতপ্রায়। কিন্তু সাত্যকিকে আক্রমন করছে ভুরিশ্রবা, উনি খুবই উজ্জিবীত। সাত্যকিকে অবিলম্বে সাহায্য করতেই হবে।
    এই ভুরিশ্রবার সাথে সাত্যকির শত্রুতা অতি প্রাচীন।বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত এই বৈরীতা। কুরুক্ষেত্রের যূদ্ধের চতুর্থ দিনে এই ভুরিশ্রবাই সাত্যকির দশ পুত্রকে বধ করেছিলেন। সাত্যকি আর ভুরিশ্রবার লড়াই এমন ভয়ংকর হয়ে উঠলো যে দুজনেরই ঘোড়ারা নিহত ও শরাসন ছিন্ন হল। অতএব দুজনেই ষাঁড়ের চামড়ার ঢাল আর তরোয়াল নিয়েই মুখোমুখী হলেন। অবশেষে দুজনের ই ঢাল আর তরোয়ালও ভগ্ন হল।তারা সাধারন সেনানীদের মতন মল্লযুদ্ধে ব্যাপৃত হলেন। শ্রান্ত সাত্যকি কিন্তু পেরে উঠছিলেন না। ভুরিশ্রবা তাকে মাটীতে ফেলে পদাঘাত করলেন ( এরও আবার একটি সাপোর্টিং উপকথা আছে কিন্তু সেটি তত প্রাসংগিক নয়)। কৃষ্ণ বিপদ দেখে অর্জুনকে বল্লেন দেখো,দেখো,ওখানে সত্যকির কী হাল। অর্জুন বললেন আমি তো জয়দ্রথের দিকেই তাকিয়ে আছি,খেয়ালই করি নি সাত্যকির কী অবস্থা।এই বলে অর্জুন দূর থেকে ক্ষুরপ্রবান নিক্ষেপ করে ভুরিশ্রবার দুটি হাতই কেটে ফেললেন।
    ছিন্নহস্ত ভুরিশ্রবা খুবই তিরষ্কার করলেন অর্জুনকে।এ কী রকমের ধর্মযুদ্ধ? আমি লড়াই করছি সাত্যকির সংগে আর আপনি তার মধ্যে ঢুকে আমার হাত কেটে দিলেন?
    অর্জুন বললেন - এই তো কুরুক্ষেত্র ব্যাপী বিশাল রণাংগন। আমি সমানেই রথী গজ ও অশ্ব নিধন করে চলেছি । আপনাকে শরাঘাত করতে পারবো না এটা কোন আইনে রয়েছে?
    ভুরিশ্রবা বললেন, বুঝেছি এই সবই বাসুদেবের পরামর্শের ফল। হবে না কেন? ওদের বংশই ব্রাত্যক্ষত্রিয়। অর্থাৎ নীচু জাতের ক্ষত্রিয়। আমিও অস্ত্রত্যাগ করলাম, এইবার ধ্যানযোগে মৃত্যুবরন করব।

    তিনি অস্ত্রত্যাগ করলে সাত্যকি অসি হাতে লাফিয়ে এলেন। সবাই বারন করা স্বত্তেও শুনলেন না, মানলেন না, মৃত্যুপথযাত্রী নিরস্ত্র শত্রুবধের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা। ভুরিশ্রবার মাথা কেটে ফেললেন সাত্যকি।

    আর ভীম? সূচীব্যুহের কাছে পৌঁছে ভীম কিন্তু তখনই অর্জুনের পাশে যাওয়ার চেষ্টা করলেন না।মনে হয় নিজের ডানদিক দিক দিয়ে ভীম ফ্ল্যাংকিং ট্যাকটিক নিলেন। কেননা অনেকক্ষন ধরে তার সাথে কর্ণের যুদ্ধ হবে আর কর্ণ ছিলেন জয়দ্রথের বাম পাশে
    ভীম আর কর্ণের প্রায় সাত রাউন্ড লড়াই হবে। তার মধ্যে শেষ বার ছাড়া প্রতিবারই ভীমই জিতবেন।
    যেমন প্রথম রাউন্ড।
    দুজনেই দুজনকে শরবিদ্ধ করছেন। । ভীমের তীরের আঘাতে কর্ণের বর্ম্মভেদ করে রক্তধারা বইতে লাগলো। এরপরে ভীম কর্ণের সারথি আর চারটি ঘোড়াকেই নিধন করলে কর্ণ আরেকটি রথে উঠলেন। ভীমের সিংনাদ কৃষ্ণ আর অর্জুন তো শুনতে পেলেনই,যুধিষ্ঠিরও শুনতে পেলেন।পান্ডবেরা শংখধ্বনি করে ভীমকে উৎসাহ দিলেন।
    মহাভারতকার দুইবার উল্লেখ করেছেন যে কর্ণ "মৃদুভাবে শরবর্ষণ" করছিলেন,কিন্তু এর কারনটি উল্লেখ করেন নি। ভীমের শরজাল শব্দ করা পাখীর ঝাঁকের মতন কর্ণকে আচ্ছন্ন করল। ভীম দ্বিতীয়বার কর্ণের সারথি আর ঘোড়াদের বিনষ্ট করলে কর্ণ স্রেফ পালিয়ে গেলেন।

    ইতিমধ্যে দুর্য্যোধন আবার পিরে গেছেন দ্রোণের কাছে। তার কাছে নিশ্চয়ই খবর পৌঁছেছে যে শুধু অর্জুনই নয়,সাত্যকি আর ভীম ও সুচীব্যুহে প্রবেশ করেছেন।এবারে কী হবে?
    দ্রোণ এইবারে যাচ্ছেতাই ভাবে দুর্য্যোধনকে তিরষ্কার করলেন। বললেন, মনে নেই, রাজসভায় দ্যুত ক্রীড়া? এইখানেও জয়দ্রথকে খুঁটি করে আমরা সর্বস্ব পণ করেছি। ওহে দুর্য্যোধন,তুমি জয়দ্রথের কাছেই ফিরে যাও আর তাকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হও। আমি এইখানেই ,ব্যুহদ্বারেই থাকবো আর পান্ডব আর পাঞ্চালদের নিবারন করব। আর অপরাপর সৈন্যদের না হয় পাঠিয়ে দেবো ব্যুহের ভিতরে।
    এইবার ভীম আর কর্ণের দ্বিতীয় রাউন্ড। কর্ণ আবার এক নতুন রথে এসেছেন। দুইজনেই ক্রুদ্ধ।দুইজনের রথই একেবারে এ ওর ঘাড়ে এসে পরলো। কর্ণের ঘোড়াগুলি সাদা রঙের আর ভীমের ঘোড়াগুলি ভাল্লুকের মতন, কালো রংএর। কবি বললেন ঐ সাদা আর কালো ঘোড়াদের একত্র দেখে মনে হল আকাশের সাদা কালো মেঘের কথা।

    "তাহারা কখনো গাভীলাভার্থী মত্ত বৃষদ্বয়ের ন্যায় চিৎকার, কখনো আমিষলোলুপ শার্দ্দুলযুগের ন্যায় তর্জনগর্জন, কখন পরষ্পরের প্রতি প্রহারে উদ্যত। ভীম আবার কর্ণের শরাসন ছিন্ন করে তৃতীয়বার তার ঘোড়া আর সারথিকে নিধন করলেন।কর্ণ একেবারে হতাশ হয়ে পরলেন।

    দুর্য্যোধন তার ভাই দুর্জ্জয়কে বললেন, যাও,যাও। কর্ণকে সাহায্য কর আর ঐ মাকুন্দ ভীমটাকে সংহার করে এসো।ভীম এবারে শুধু সারথি আর ঘোড়াই নয়,দুর্জ্জয়কেও যমালয়ে পাঠিয়ে দিল।মহাবীর কর্ণ কেঁদেই ফেললেন।
    কিন্তু ভীম আর কর্ণের লাগাতার লড়াই চলতেই থাকলো। কর্ণ কিছুতেই এঁটে উঠতে পারছিলো না। দুর্য্যোধনও বারবার তার ভাইদের পাঠাচ্ছিলেন কর্ণকে সাহায্য করতে।প্রথমে এক জন, তার পরে দুই, এর পরে পাঁচ ও পরে একসাথে সাতজন - এইভাবে একুত্রিশজনকে ভাইকে পাঠালেন,কিন্তু সকলেই ভীমের হাতে নিহত হলেন। মারা গেলেন বিকর্ণও। এই সেই কৌরব যিনি সদাই পান্ডবদের সমর্থন করে এসেছিলেন। যুদ্ধে তাকে নিহত করে ভীমও বিচলিত হয়ে পরলেন। শোকে আকুল হয়ে বিলাপ করে বললেন এই তো ক্ষত্রিয়ের ধর্ম।

    ভীম একাই এতো কৌরব সেনা নিহত করছিলেন যে "সহস্র সহস্র কৌরবসৈন্য ভীমের বান গাঢ়বিদ্ধ হইয়া ,'এ কি
    আশ্চর্য্য ব্যাপার' বলিয়া পলায়ন করিতেছিলো"। এরমধ্যে ভীম একবার তেলেধোয়া কর্নিবানে কর্ণের কর্নচ্ছেদ করে তার সুর্য্যপ্রভ কুন্তল ভুপাতিত করলেন। কেনো জানি না, মনে হয়,রচনাকর এই শ্লোকটি লিখেছিলেন শুধু অনুপ্রাসের জন্যই।
    দীর্ঘ ও পৌনঃপুনিক বর্ননা রয়েছে এই ভীম আর কর্ণের দ্বৈরথের। সেই একই ঘটনা, তার ঘোড়াগুলি ও সারথি ভীমের হাতে নিহত হচ্ছে আর কর্ণ তখন যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করছেন।
    এর মধ্যে একবার দেখি ভীমের রণচাতুর্য্য দেখে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন পান্ডবপক্ষের উত্তমৌজা, সাত্যকি, অর্জুন ও কেশব এবং কৌরবপক্ষের ভুরিশ্রবা, কৃপাচার্য্য, মদ্ররাজ, অশ্বত্থামা এমন কি জয়দ্রথ স্বয়ং !! ক্ষত্রিয় ধর্মের এক বিস্ময়কর বর্ননা।
    শেষ রাউন্ডে কিন্তু ভীমের সার্বিক পরাজয়। এইবারে ভীমের তুনীর আর ধনুক বিনষ্ট হল। অশ্বরাও বানবিদ্ধ হয়ে প্রানত্যাগ করলো কিন্তু সারথি বিশোক জীবিত ছিলেন। তিনি ভীমকে নিয়ে যুধামন্যুর রথে উঠে বসলেন।কর্ণ সেই রথের উপরেও হামলা চালালে ধনুক ও শরশুন্য ভীম ঢাল আর তরোয়াল "গ্রহন" করলেন। কর্ণ অবলীলাক্রমে ভীমের ঢাল ছিন্ন করে দিলে ভীম জলসন্ধের মতনই তরোয়াল ছুঁড়ে মারলেন। সেই নিক্ষিপ্ত অসির আঘাতে কর্ণের ধনুক ছিন্ন হল।

    রথহীন ভীম রথের ধ্বজা নিয়েই মাটীতে নেমে কর্ণকে যুদ্ধে আহ্বান জানালেন।কর্ণ কিন্তু তাকে রথে চড়েই তাড়া করলেন।অস্ত্রহীন ভীম দৌড়ে পালালেন, কিন্তু লুকোবেন কোথায়? অর্জুনের বানে নিহত হাতীদের স্তুপ পরে আছে, তো তারই মধ্যে ঢুকলেন। ভাবলেন কর্ণ তো আর রথে নিয়ে এই খানে আসতে পারবে না। কিন্তু কর্ণ হাতীদের মৃতদেহ শরাঘাতে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলেন। ভীমসেন অগত্যা সেই হাতীদের দেহাবশেষ ছুঁড়েই যুদ্ধ করতে লাগলেন। সে ও শেষ হয়ে গেলে, রনাংগনে পরে থাকা রথের চাকা,মৃত অশ্ব – যা কিছু পেলেন হাতের কাছে তাইই ছুঁড়ে মারলেন। এই সবই বিফলে গেলে ভীম ঘুঁষি পাকিয়ে কর্ণের দিকে অগ্রসর হলেন। কর্ণ এই সময়ে ভীমকে বধ করতে পারতেন কিন্তু কুন্তীর কাছে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
    কর্ণ তাই ধনুকের ছিলা দিয়ে ভীমের গাত্রস্পর্শ করলেন। অপমান?? ভীম তখনই সেই ধনুক কেড়ে নিয়ে কর্ণের মাথায় ধাই ধপা ধপ।।।।।।!
    কর্ণ ক্রোধে আরক্তলোচন হয়ে বললেন "হে তুবরক (মানে মাকুন্দ)! তুমি মুঢ়, উদরপরায়ন,সংগ্রামকাতর ও বালক"। আরো বললেন এই রণাংগন তোমার পক্ষে উপযুক্ত স্থান নয়। আমার মতন বীরের সংগে লড়াই করতে আসাটাও তোমার উচিৎ হয় নি। আরে, যে খানে প্রচুর খাবার দাবার আছে সেখানেই বরং চলে যাও। ভীমও ছাড়বার পাত্র নন। বললেন য্যা য্যা। তোমাকে তো আজই কতোবার হারিয়ে দিয়েছি। খামখাই কেনো বড়াই করছ?এসো,আমরা কুস্তী লড়ি। বলাই বাহুল্য কর্ণ তাতে মোটেও রাজী ছিলেন না।
    ভীমের দুর্দশা দেখে অর্জুন, সেই অর্জুনকেই ছুটে আসতে হল। তেমন জমাটি লড়াই কিন্তু হল না। কেশবএর নির্দেশ অনুসারে অর্জুন শরক্ষেপন করলে কর্ণ নিদারুন আহত হলেন। কর্ণ "এক্ষনে অর্জুনশরে দৃঢ়তর আহত হইয়া রথারোহনে সত্বর ভীমের নিকট হইতে পলায়ন করিতে লাগিলেন”। অর্জুন এতই পরাক্রান্ত যুদ্ধ করতে লাগলেন যে অশ্ব্ত্থামা কর্ণকে সাহায্য করতে এসে নিজেই দৌড়ে পালিয়ে গেলেন।
    এইবারে অর্জুনের ফাইনাল এনকাউন্টার। সাথে রয়েছেন ভীম,সাত্যকি,যুধামন্যু আর উত্তমৌজা। বিপক্ষে জয়দ্রথকে ঘিড়ে রয়েছেন কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, বৃষসেন, দুর্য্যোধন আদি কৌরবেরা।

    জয়দ্রথবধের আগে কর্ণ আর অর্জুনের শেষবারের মতন ডুয়েল হল।কর্ণ দাঁড়াতেই পারলেন না।অর্জুনের নিক্ষিপ্ত ভল্লাস্ত্রে (লম্বা তীর। আবার বল্লমের মতন হাতে ছুঁড়েও মারা যায়। ফলার ছিলো চওড়া আর ধারালো) কর্ণের সারথি আর ঘোড়ারা নিহত হল। কর্ণ একেবারে ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন। অবশেষে অশ্বত্থামার রথে উঠে তিনি যুদ্ধে ক্ষান্তি দিলেন।
    এর আগেই অবশ্য কর্ণ স্বয়ং দুর্যোধনকে বলেছেন ভীমের শরাঘাতে আমার শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। নেহাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে থাকতেই হবে তাই ই এখনো রয়েছি। তার আর লড়াই করবার মতন শারীরিক বা মানসিক ক্ষমতা ছিলো না।
    অর্জুন যেনো একেবারে ক্ষেপে গেছেন। তিনি সাক্ষাত কৃতান্তের মতন রণস্থলীতে।"চতুর্দিকেভ্রমন করিয়া কখন মহাস্ত্রনিক্ষেপ, কখন রথমার্গে নৃত্য, কখন জ্যাশব্দ, কখন তলধ্বনি করিতে লাগিলেন"। অবশেষে অর্জুন জয়দ্রথের মুখোমুখী হলে। জয়দ্রথ কিছুটা যুঝলেন।অর্জুন প্রথমেই তার সারথির শিরশ্ছেদ করে তাকে অচল করে দিলেন। কৃপাচার্য্য একবার শেষচেষ্টা করলেন অর্জুনকে প্রতিহত করতে। ততক্ষনে কৌরব সেনারা জয়দ্রথকে একলা ফেলে পালিয়ে যেতে শুরু করেছে।

    কৃষ্ণ বললেন, "হে অর্জুন! দিবাকর অস্তাচলশিখরে আরোহন করিতেছেন; অতএব তুমি শীঘ্র দুরাত্মা জয়দ্রথের শিরশ্ছেদন কর"। এইবারে যা হোল তা কিন্তু অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স। কোনো নাটক নয়,দীর্ঘ বর্ননা নয়, ব্রহ্মাস্ত্র,ঐন্দ্রাস্ত কিছুই নয়।
    একবার নিজের শুকনো ঠোঁটটা জিভে চেটে অর্জুন একটি "ভীষণ" শর নিক্ষেপ করলেন। "শ্যেনপক্ষী যেমন বৃক্ষাগ্র হইতে শকুন্তকে হরণ করিয়া থাকে, তদ্রূপ সেই গান্ডীবমুক্ত অশনিসদৃশ শর জয়দ্রথের মস্তক হরণ করিল"।
    উৎফুল্ল কৃষ্ণ পাঞ্চজন্যধ্বনিতে রণস্থলী মুখরিত করলেন।
    এইবারে পান্ডব শিবিরে শুধু অভিনন্দনের পালা। যুধিষ্ঠির আনন্দাশ্রুপুর্ণলোচনে কৃষ্ণ আর অর্জুনকে আলিংগন করলেন।অভিনন্দন জানালেন ভীম আর সাত্যকিকেও। যুধামন্যু আর উত্তমৌজার কথা উল্লেখিত হয় নি, কিন্তু তারাও যে পান্ডব শিবিরে বীরের সম্মান পেয়েছিলে সেটি অনুমান করতে দ্বিধা হয় না।

    কতকগুলি ঘটনা বিশ্লেষণের উপযুক্ত। এক তো দ্রোণের ব্যুহসজ্জা, শকট ব্যুহের দ্বাররক্ষী তিনি নিজেই।পদ্মব্যুহের দ্বাররক্ষী কৃতবর্মা।আর সুচীব্যুহে জয়দ্রথের পাশে রইলেন শল, শল্য, অশ্বত্থামা,কর্ণ ও বৃষসেন। বেশীর ভাগ সময়টাই তারা রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দাঁড়িয়ে রইলেন।এবং যখন অর্জুন ব্যুহ মধ্যে একাকী, সাত্যকি আর ভীম তখনও তার সাহায্যে এসে পৌঁছায় নি, সেখানেও এই মহারথীরা অর্জুনকে আগ বাড়িয়ে সন্মিলিত আক্রমন করলেন না।খুবই স্ট্যাটিক লড়াই করলেন তারা।

    দ্রোণ আর কৃতবর্মাকে পাশ কাটিয়ে ব্যুহে ঢুকে গেলেন অর্জুন,ভীম আর সাত্যকি।চালাকি করে পিছন দিয়ে ঢুকে গেলেন যুধামন্যু আর উত্তমৌজা। প্রতিরক্ষা তাহলে তো খুব মজবুত ছিলো না।

    হয়তো আগের দিনের যুদ্ধ দ্রোণকে প্রভাবিত করেছিলো। অভিমন্যু একাই চক্রব্যুহের মধ্যে ঢুকে পরলে জয়দ্রথ অন্য কোনো পান্ডব বীরকে ব্যুহে প্রবেশ করতে দেন নি । সপ্তরথী বেষ্টিত রণক্লান্ত অভিমন্যুকে দুঃশসনের অনামা তনয় নিহত করেছিলেন।দ্রোণ কি একই ভবিতব্য ভেবে রেখেছিলেন অর্জুনের জন্যও ?

    কেমন করে সাত্যকি আর অর্জুন ব্যুহে ঢুকলেন? রথেরা পরস্স্পরকে মন্ডলাকারে ঘুড়ে যুদ্ধ করতেন,বিমানের ডগ ফাইটের মতন। কেননা শত্রু রথের বাম দিকে আসতে পারলে ডানহাতি তীরন্দাজদের সুবিধে। ডান হাতিরা বাম দিকে যতো স্বচ্ছন্দে তীর ছুঁড়তে পারতেন ডানদিকে ততোটা নয়। বোধহয় খুব দ্রুত রথের গতি বাড়িয়ে দ্রোণের ডানদিকে এসে তারা বুহের ভিতরে চলে গেছেন,আবার রথ ঘুড়িয়ে তাদের পিছু নিতে দ্রোণের যা সময় লাগবে তাতে তারা এতোটা ভিতরে চলে যাবেন যে অরক্ষিত ব্যুহদ্বার রেখে দ্রোণ বেশীক্ষন তাদের তাড়া করতে পারবেন না।

    দিনের শেষে রণক্লান্ত অর্জুনের সাথেও জয়দ্রথের লড়াইটা জমলো কোথায়? কর্ণও ভীমের সাথে যেরকম জবরদস্ত লড়াই করলেন,অর্জুনের সাথে তেমন লড়লেন না। বাকী রথীরাও অর্জুনকে তেমন বেগ দেন নি। শল,শল্য আর বৃষসেনের তো উল্লেখই হোলো না।

    দুর্যোধন এই দিনের শেষেও সন্ধ্যাবেলাতে কর্ণের কাছে দ্রোণের ব্যাপারে অভিযোগ তুললে, আশ্চর্য্যের ব্যাপার, কর্ণ কিন্তু দ্রোণকেই সমর্থন জানান। বলেন, ওঁনার বয়স হয়েছে, তাই দ্রুতগতিতে ছুটতে পারেন না। ওনার হাতের পেশীও শিথিল। তাও ও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। এই সবই দৈব। এই দেখো না, অর্জুন,ভীম আর সাত্যকি না হয় পর পর শকট ব্যুহ আর পদ্মব্যুহ ভেদ করলেন, কিন্তু আমরাও ছিলাম জয়দ্রথের পাশেই।জয়দ্রথ নিজেও কম বীর নন, কিন্তু শল, শল্য, কৃপাচার্য্য, অশ্বথামা - কেউই জয়দ্রথকে রক্ষা করতে পারলাম না।

    নেহাৎই স্তোকবাক্য। নিজের অক্ষমতার সাফাইও। আসলে আদের দিনের অন্যায় যুদ্ধে নিতান্ত কিশোর ষোড়োশ বর্ষীয় অভিমন্যুকে ছয় রথী আক্রমন করে হারিয়ে দেওয়ায় নিজেরাই লজ্জিত ছিলেন। তুলনায় পান্ডবেরা ছিলেন প্রতিহিংসার আগুনে তপ্ত।

    দ্রোণের বিষয়ে কর্ণের "দ্রুতগতিতে ছুটিতে অক্ষম" যুক্তিটিও বোধগম্য নয়। রথে আসীন দ্রোণ তো ছুটবেন না। ছুটবে তো রথের ঘোড়ারা। সন্দেহ থেকেই যায় অভিমন্যুবধের প্রায়শ্চিত্ত তিনি করেছেন অর্জুন,সাত্যকি ও ভীমকে ব্যুহভেদ করতে দিয়ে, ভেবেছেন বাকীটা বুঝে নেবে কৃতবর্মা ও আন্যান্য মহারথীরা।

    সারথির নৈপুণ একটা বড়ো বিষয়। সেক্ষেত্রে ভীমের সারথি বিশোক, সাত্যকির সারথী দারুক - এরা খুবই রণনিপুন। কৃষ্ণের কথা তো ছেড়েই দিলাম । সেই তুলনায় দ্রোণ আর কর্ণের সারথিরা অনামা।কৃষ্ণ অবশ্য শুধু সারথি ই নন, তিনি যেনো পুরো রণনাট্যের ডিরেক্টর।তিনিই পরিচালনা করছেন অর্জুনকে।

    এই দিনে আট অক্ষৌহিনী সেনা ঘায়েল হয়েছিলো - মানে সতেরো লক্ষ। এটিই সবথেকে রক্তাক্ষয়ী দিন।
    এর পরে, মহাভারতের যুদ্ধ আর একবারই প্রচন্ড রক্তাক্ষয়ী হবে - সেটি শেষের আগের দিন। সপ্তদশতম দিনে যেদিন কর্ণ নিহত হবেন।
    ************************************************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৫২৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • TB | 118.171.130.186 (*) | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:১৯69364
  • বাপ্রে! কি ফাইট কি ফাইট!

    আমিই টেনশানে টায়ার্ড হয়ে গেলাম। ভাগ্যি ছোটোকালে উপেন্দ্রকিশোরের পর আর এগৈ নি, হার্ট এট্যাক হয়ে যাবে তো টেনশানে!
  • avi | 113.24.84.18 (*) | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৮:১১69365
  • ভীষণ ভালো লাগলো, একে মহাভারত, তায় মিলিটারি কারিকুরি, একেবারে আমার জন্য অর্ডার দিয়ে বানানো।
  • avi | 113.24.84.18 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:০১69377
  • কি চাপ! স্ট্যাটিক যুদ্ধ রথ কেন, ট্যাঙ্ক দিয়েও হতে পারে। আগবাড়িয়ে লড়তে না গিয়ে একটা লোকেশনে দাঁড়িয়ে ব্লক করা।
  • কল্লোল | 125.185.152.192 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০১:১৮69366
  • কিন্তু মায়াবী অংশটুকু বাদ পড়লে একটু অসুবিধা হয়। অর্জুন তো জয়দ্রথের কাছে পৌঁছাতেই পারে নি। তাতেই না সূর্য গ্রহণের গপ্পো, ও কৌশলে জয়দ্রথ বধ।

    লেখাটি বড্ড ভালো হয়েছে।
  • dd | 116.51.30.128 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৬69367
  • @কল্লোল।
    নাঃ। অর্জুন দিব্বি খুঁজে পেয়েছিলেন জয়দ্রথকে। দু জনের মধ্যে লড়াইও হচ্ছিলো। আর অর্জুন সেই সময়েই জয়দ্রথের সারথিকে আর ঘোড়াগুলিকে খতম করেন ও জয়দ্রথের "অগ্নিশিখাসদৃশ বরাহধ্বজ"ও কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু টাইম চলে যাচ্ছিলো।

    কৃষ্ণ তখন অর্জুনকে বল্লেন আমি ম্যাজিক করে সুর্য্যাস্ত করে দিচ্ছি, কিন্তু তুমি বাপু ঘাবড়িও না।

    তারপর যোগমায়ায় অন্ধকার হলে জয়দ্রথ ঘাড় উঁচু করে "দিবাকরে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ" করিতে লাগিলেন। অর্জুন তখন আরো প্রচুর লড়াই টড়াই করে জয়দ্রথকে নিধন করলেন। সেখানেও প্রচুর অলৌকিক ঘটনা রয়েছে।

    ইন ফ্যাক্ট ,জয়দ্রথ মারা গেলেই কৃষ্ণ আবার সুর্য্যকে ফিরিয়ে আনলেন আর এর পরেও আরো কিছুক্ষন যুদ্ধ হয়েছিলো। মেইনলি অর্জুন আর কৃপাচার্য্যের সাথে আর কর্ণের সাথে সাত্যকির।
  • dd | 116.51.24.231 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৪69378
  • ওম্মা। সিংগুল ডিএর কথা শুনুন। স্টাটিক ইলেকট্রিসিটি হয়, ভেরিএবেল হয়,ক্লাস হয়, আর যুদ্ধ হতে পারে না ? এইজ্জে" In a static battle, both sides suffer heavy casualties and battlefronts move so slowly that the result is "static" (a lack of change). Movement is limited by the amount of casualties. বেশী লিখতে গেলে একটা কেনো তিনটে প্রবন্ধ হয়ে যাবে। কুইক এগজাম্পল হচ্ছে ফার্স্ট ওয়ার্লড ওয়ার বনাম সেকেন্ড ওয়ার্লড ওয়ার - স্টাটিক আর ডাইনামিক যুদ্ধ।

    @ cb, মহাভারত তো মহারূপকথা। ও গুলো লিটেরেলি নিতে নেই। পন্ডিতেরা বলেন ঐ আট শো বি সি নাগাদ যুদ্ধটা হয়েছিলো। সেই সময়ে যেরকম ভাবে যুদ্ধ হয়ে থাকতে পারে, সেটাই লেখার।
  • কান্তি | 113.57.238.14 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:০৫69368
  • তাহলে চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ- অংশটিই শুধু বর্জিত হোয়েছে?
  • avi | 113.24.84.18 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১১69379
  • একটা প্রশ্ন আছে। মহাভারতের যুগে সব শরেই কি ধারালো লোহার ফলা লাগানো থাকতো, নাকি শুধু বিশেষ দিব্যাস্ত্রগুলোতে? সাধারণ শরে কি অন্য কোনো তামাজাতীয় ধাতু থাকত যার মারণক্ষমতা তুলনায় কম?
    আর তখন আর্যরা কি লোহার ব্যবহার অত নিপুণভাবে জানত না, তাই দিব্যাস্ত্র সব দুর্গম জায়গার সিলেক্টেড জনতার থেকে বর হিসেবে লাভ করতে হত?
  • dd | 116.51.30.128 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২২69369
  • প্রচুর প্রচুর অলৌকিক গল্প আছে। শুধু এই যুদ্ধের বিবরণীতেই।যেমন আরেকটা - যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরলে অর্জুন ধাঁ করে এক তীর মেরে কুরুক্ষেত্রের মধ্যেই এক হ্রদের সৃষ্টি করলেন। ব্যাস। অমনি সেই জলপুর্ণ হ্রদে প্রচুর পাখী এসে গেলো। পদ্ম ফুল ফুটে উঠলো। ঋষিরাও হাজির।

    "অশ্বগনের জলপানের নিমিত্ত অস্ত্র দ্বারা অবনী বিদারকপুর্ব্বক ,হংস- কার্ন্ডব-চক্রবাক সুশোভিত মৎস্য কুর্ম্মসমাকীর্ণ, ঋষিগন সেবিত,নির্মল সলিল সম্পন্ন, বিকশিত কমলদলপশোভিত, সুবিস্তীর্ণ জলাশয় নির্মান করলেন। "

    আর অলম্বুষের কথা তো বাদই দিলাম।
  • dd | 116.51.24.231 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২৫69380
  • @ ব্ল্যাং।ব্যুহটা আমিও বুঝি না। তবে চীনেও নানান ব্যুহ হত। যদিও ভারতের মতন অতো ইলবোরেট নয়।এবং ওদের নিদৃষ্ট যুদ্ধক্ষেত্রও থাকতো। সেগুলিকে বেশ রথের উপযোগী করে লেভেল করে রাখা হতো। পুরোটাই একটা যেনো স্পোর্টং ইভেন্ট।

    এই টা দেখতে পারিস - বোঝা যায় ব্যুহ যুদ্ধ কেমন ছিলো
  • dd | 116.51.24.231 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩০69381
  • লৌহ যুগ তো শুরু হয়ে গেছে,তবে সবাই কি আর লোহার তীর পেতো? নিশ্চয়ই বাঁশ বা কাঠ পুড়িয়ে ছুঁচলো করে রাখা তীরও ব্যবহার হতো। তামা নয় ব্রোঞ্জের ফলকও থাকতে পারে।

    বেশ কয়েকবার লোহার কথা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা আছে। নারাচ তো পুরোটাই লোহার,বর্মভেদী তীর।
  • | 24.97.215.142 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩২69382
  • ও আচ্ছা move so slowly that the result is static
    বুঝলাম বুঝলাম।
  • cb | 208.147.160.75 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৩69370
  • যেরকম গতিতে যুদ্ধ হচ্ছে, একটা জিনিষ আশ্চর্য লাগে , এরা কি সবাই উলভেরাইনের বংশধর?? মানে এত বাণ বিদ্ধ হল, শল্য এসে ফুঁড়ে দিল, সেকেন্ডের মধ্যে রিজুভিনেট হয়ে আবার লড়াইতে নেমে পড়লেন!!! ম্যাক্স একটু টাইম আউট
  • T | 24.100.134.21 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৪৩69383
  • ভালো লেগেছে। এইরকম আরো অনেক চাই।
  • souvik | 132.170.238.113 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৫০69384
  • আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে যুদ্ধ কেমন হত সেটা পিটার ব্রুকের মহাভারত এ সবচেয়ে ভালো দেখিয়েছে।এই লেখাটাও অবশ্য খুব ভালো লাগলো
  • hu | 108.228.61.183 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:২৬69385
  • লেখাটা দুর্দান্ত হয়েছে। আমি একটা জিনিস ভেবে পাই না। এত যোদ্ধার মধ্যে কে নিজের পক্ষের, কে শত্রু পক্ষের বুঝত কি করে? যারা রথে চড়ে যুদ্ধ করছে তাদের নাহয় নিজেদের পতাকা আছে। কিন্তু পদাতিকরা? ঘোড়সওয়াররা? দুই প্রতিপক্ষের কি আলাদা ইউনিফর্ম থাকত?
  • avi | 113.24.84.18 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৫৬69386
  • dd, dd, মহাভারতের মিলিটরি ব্যাপার স্যাপার নিয়ে অনেক প্রশ্ন মাথায় জমে আছে যে। আরো লিখতে থাকুন এই নিয়ে, দারুণ লেগেছে এটা। আচ্ছা, গদা নিয়ে প্রশ্ন করি? গদা কি লোহার তৈরি হত? আমার মহাভারত পড়ে মনে হয়েছিল গদার বড়ি যারা দিতে এবং নিতে পারতো, তারা একালের WWE ধরণের ক্ষমতার অধিকারী। তই বোধ হয় সাধারণ যোদ্ধাদের ওপর গদাঘাত মানা ছিল, তবে থোড়াই মানা হত এসব। তারপর ধরুন বর্শা। খুব কাজের জিনিস, যে কেউ মানবে। মানুষ সেই প্রস্তর যুগ থেকে ব্যবহার করছে। অথচ মহাভারতের যুগে সেরকম কল্কে পায় নি। ওদিকে ইলিয়াডের গ্রীসে জনতা বেসিক্যালি বর্শা দিয়েই লড়েছে।
  • hu | 108.228.61.183 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:৫৫69387
  • যুধিষ্ঠির শক্তি নামে একটি অস্ত্রে পারঙ্গম ছিলাম। আমার ধারনা ছিল সেটা বর্শা জাতীয়।
  • PM | 116.76.172.239 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৭:৫৮69371
  • লেখাটা তো দারুন ভালো। বলার অপেক্ষা রাখে না।

    কিন্তু ডিডিদা, জয়দ্রত বধের সময় আচমকা অন্ধকার অলৌকিক হবে কেনো-- অনেকেই ওটাকে পূর্নগ্রাস সূর্য্যগ্রহন বলেছেন তো ঃ)। খুব সম্ভবতঃ নারলিকার এই পূর্ণগ্রাস আর অরেকটি অয়ট্রোলজিকাল ঘটনা দিয়ে ( মনে করতে পারছি ন ঠিক কি ছিলো সেটা) কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কালনির্নয়ের চেষ্টা করেছিলেন। ঐ দুটো ঘটনা একি বছরে নাকি গত ৫০০০ বছরে একবার-ই ঘটেছিলো।

    সাত্যকি সেই উপেন্দ্রকিশোরের "ছেলেদের মহাভারত" পড়ার সময় থেকে আমার প্রিয় নায়ক, কেনো কে জানে। মনে হয় যুদ্ধে ওর কনট্রিবিউসন আর বিরত্বের তুলনায় ভীষণ আন্ডার রেটেড।

    কখনো সাত্যকি আর ওর সংসপ্তক বাহিনী নিয়ে লিখলে খুব ভালো লাগবে।
  • Kaju | 131.242.160.210 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৩১69372
  • এই এত এত বিবরণ লেখা ডিডিদা পারলেন কী করে? ভয় লেগে গেল আপনার এত লেখার শক্তি দেখে। অত্যন্ত তথ্যবহুল গুরুত্বপূর্ণ লেখা। পড়তে পড়তেই মাথা ঘুরে গেল !
  • d | 144.159.168.72 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৫০69373
  • দারুণ দারুণ দারুণ।

    ইয়ে একটা খটকা। বেশ কয়েকবার দেখলাম 'স্ট্যাটিক' লড়াই। কিন্তু লড়াই মনে রথ ঘোড়া নিয়ে স্ট্যাটিক হয় কী করে?
    স্ট্র্যাটেজিক হবে কি?
  • Blank | 213.132.214.83 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:৪৪69374
  • দারুন হয়েছে ডিডি দা।
    তবে এই বুহ্য ব্যপারটা ঠিক বুঝিনা। লোক গুলো অমনি চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকবে মাঠে। তা ওরা থাকুক অমনি করে।
    ঐ সময় একসেট সৈন্য নিয়ে হস্তিনাপুর অ্যাটাক করে দখল করে নিলেই তো হয়।
  • cb | 208.147.160.75 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:১১69375
  • ডিডিদা, আমার পোশ্চেনটার দিকেও একটু খেয়াল রাখবেন, অলরেডি বহু কোশ্চেন জমে গেছে
  • Blank | 213.132.214.84 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:১৫69376
  • আমার টা পোশ্নো না। প্রসেস ইমপ্রুভমেন্টের সাজেশান, ভ্যালু অ্যাডিশান
  • dd | 116.51.28.200 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:৪৯69388
  • গদা নিশ্চয়ই লোহার হতো। তবে পুরোনো স্কাল্পচার থেকে শুরু করে এমন কি মুঘল আমলেও গদার যে উদাহরন মিউজিয়ামে এখনো পাওয়া যায় সেগুলি কিন্তু বেশ ছোটো।

    যে ছবি আমরা দেখে অভ্যস্ত - সেই বিশাল গদা যা হনুমান বা যাত্রাপালার ভীমের হাতে,সেটা বোধয় নিতান্ত মীথ। গদা প্রায়ই ছুঁড়ে মারা হতো।সুতরাং ওরকম ধামসা চেহারা বোধয় ছিলো না।

    শক্তি হচ্ছে জ্যাভেলিন বা বল্লম, যা ছুঁড়ে মারা হতো। আর প্রাস প্রায় দুই মানুষ লম্বা, বাঁশের দ্ন্ড ও লোহার তীক্ষন ফলক। ব্যবহারের নিয়ম চার প্রকার, আকর্ষণ, বিকর্ষণ,ধুনন (অর্থাৎ ইতঃস্তত পরিচালন) ও পশ্চাৎ বিদ্ধকরণ।

    কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের একেবারে শেষদিনে প্রাসধারী অশ্বারোহী সেনাদের বেশ অনেকটা বিবরণী আছে। সহদেব আর শকুনির যুদ্ধেও প্রাস ব্যবহার করা হয়েছিলো। আর কখনোই,কোনোদিনে কোনো মহারথী প্রাস ব্যবহার করেন নি।
  • dd | 116.51.30.253 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৩৯69395
  • মহাভারতের যুদ্ধে ভীষ্ম পর্ব খুবই নেগেলেক্টেড। একে তো সঞ্জয় এলেনই এগারোতম দিনে,এসে ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন ভীষ্মের পতন হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধের বর্ননা একেবারে রেকারিং ডেসিমেলের মতন। এই ১৪তম দিন ছাড়া কর্ণ পর্বের শেষ দিন অর্থাৎ ১৭ দিন আর একেবারে লাস্ট দিনের বিবরণী যা কিছু ইন্টেরেস্টিং।

    আমার যেটা অদ্ভুত লাগে যে অর্জুন কেনো জয়দ্রথের উপরে রেগে গেলেন। উনি নিজে দক্ষিন দিকে চলে গেলেন নারায়নী সেনা ধ্বংশ করতে। আর দ্রোণের ব্যুহ দেখেই যুধিষ্ঠিরের পিলে চমকে গেলো। উনি একাকীই পাঠালেন বালক অভিমন্যুকে ব্যুহ ভেদের জন্য। তাকে ঘিড়ে ধরে ছয় জন প্রবীন মহারথী ইন্ক্লুডিং দ্রোণ আর কৃপাচার্য্য ,অন্যায় যুদ্ধে বালককে নিধন করলেন।অর্জুন দিনের শেষে এই নিয়ে প্রচুর ক্ষেদ ও বিলাপও করলেন। কিন্তু রাগ হলো জয়দ্রথের উপর।

    কেনো? না উনি ব্যুহের মুখে দাঁড়িয়ে বাকী সব পান্ডবদেরকে আটকে দিয়েছিলেন বলে। যুদ্ধ করেই সেটি করেছেন। অন্যায় কিছুই করেন নি। কিন্তু কেস খেয়ে গেলেন উনি একাই। স্ট্রেঞ্জ লজিক।
  • T | 24.100.134.154 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:০৫69396
  • ডিডিদা, জয়দ্রথ দ্রৌপদী হরণের চেষ্টা করেছিলেন। পুরোনো সেই রাগ থেকেও হতে পারে।
  • de | 69.185.236.53 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২৩69389
  • ক্ষী যুদ্ধু, ক্ষী যুদ্ধু বাপ্পো!!
    খুব ভালো হয়েচে - আপনি পুরো মহাভারতটাই এইভাবে লিখলেই তো পারেন -

    বড়বড় যোদ্ধাদের দিকে সাধারণ সৈনিকরা বোধ্ধয় তীরটীর ছুঁড়তো না - বড় যোদ্ধারা শুধুই বড়দের সঙ্গে লড়তেন।

    আর ওই ইউনিফর্মের প্রশ্ন আমারো -

    সারথীরা রীতিমতো এক্সপার্ট হতেন দেখা যাচ্ছে - এতো তাড়াতাড়ি কোঅর্ডিনেট করা - কম কথা নয়!
  • পুপে | 131.241.184.237 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:২৩69390
  • দারুণ লেখা। মনশ্চক্ষে যুদ্ধটা দেখতে পাচ্ছিলাম। :) এরম লেখা আরো হোক।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৯:৩৬69391
  • যদিও প্রচুর ভোদকা খেয়ে লেখাটা এবং আহাউহু কমেন্টগুলো পড়েছি তবু প্রশ্ন যুদ্ধ অস্ত্র এসব বিনা আর টপিক নাই? চতুদ্দিকে অ্যাতো যুদ্ধেও মন ভরেনা আপনাদের? তারিয়ে তারিয়ে কেবল যুদ্ধ উপভোগ? আমার তরফ থেকে কমেন্ট হিসেবে একটি ছোটো সাইজের ছ্যাঃ। সেটি ইগনোর করতেই পারেন। আপ কি মর্জি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন