এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • স্মরণে শংকর গুহ নিয়োগী

    পুণ্যব্রত গুণ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১১২৪ বার পঠিত
  • শংকর গুহ নিয়োগীর সঙ্গে প্রথম দেখা ভূপালে ১৯৮৫-র জুলাইয়ে, সেদিন জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন আন্দোলনরত গ্যাসপীড়িত কয়েক জন। তাঁর কথা, তাঁর আন্দোলনের কথা  শুনেছি অবশ্য আরও কয়েক বছর আগে—দল্লী-রাজহরার ঠিকাদারী লোহা খনিশ্রমিকরা যে স্বাস্থ্য-আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাতে প্রথম যে তিনজন চিকিৎসক যোগ দেন তাঁদের মধ্যে বিনায়ক সেন, আশীষ কুন্ডুর সঙ্গে ছিলেন মেডিকাল কলেজে আমার অগ্রজ পবিত্র গুহ। ১৯৮৩-তে শহীদ হাসপাতাল যখন উদবোধন হল, তাতেও গিয়েছিলেন আমার কিছু বন্ধু। স্বপ্ন দেখতাম শহীদ হাসপাতালের মত কোনও কর্মসূচীতে কাজ করব। শহীদ হাসপাতালেই কাজ করার সুযোগ পেলাম ১৯৮৬-তে। ছিলাম ১৯৯৪ অবধি আট বছর। তার পরেও যেখানে কাজ করেছি চেষ্টা চালিয়েছি শহীদ হাসপাতালের শিক্ষাগুলোকে অনুসরণ করার আমি ও আমার সহকর্মীরা।


    এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শংকরের (শংকর তাঁর আসল নাম নয়, আসল নাম ধীরেশ), বাবা হেরম্ব কুমার, মা কল্যাণী। আসামের নওগাঁও জেলার যমুনামুখ গ্রামে বাবার কর্মস্থলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা, আসামের সুন্দর প্রকৃতি তাঁকে প্রকৃতিপ্রেমী করে তোলে। আর আসানসোলের সাঁকতোরিয়া কয়লাখনি অঞ্চলে জ্যাঠামশাইয়ের কাছে থেকে মাধ্যমিকের পড়াশুনা, যেখানে খনিশ্রমিকদের জীবন কাছ থেকে দেখে তিনি বুঝতে শেখেন কেমন করে বড়লোক আরও বড়লোক, গরীব আরও গরীব হয়। জলপাইগুড়িতে আই এস সি পড়ার সময় তিনি ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন, হয়ে ওঠেন ছাত্র ফেডারেশনের একনিষ্ঠ কর্মী। ১৯৫৯-এর বাংলাজোড়া খাদ্য আন্দোলনের ঢেউ তাঁকে ভাসিয়ে নেয়। কুশল ছাত্রসংগঠক হিসেবে তিনি অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পান। রাজনীতিতে মেতে থাকায় আই এস সি-র ফল ভালো হয়নি। তাও পারিবারিক সুপারিশে উত্তরবঙ্গের ইঞ্জিয়ারিং কলেজে তিনি সীট পান। এই অন্যায়কে মেনে নিতে না পেরে তাঁর ঘর ছাড়া।

    ১৯৬১-তে তিনি পৌঁছলেন নবনির্মিত ইস্পাত শহর ভিলাইয়ে। তখনও ১৮ বছর বয়স হয়নি। কিছু দিন অপেক্ষা করতে হল। তাঁর পর প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণান্তে ইস্পাত কারখানার কোক ওভেন বিভাগে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে যোগদান। কাজ করার পাশাপাশি একদিকে তিনি দুর্গ কলেজে বিজ্ঞানে স্নাতকপাঠ নিতে থাকেন, অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমার পড়াশুনা করতে থাকেন। এই পর্যায়ে একদিকে তাঁকে দেখা যায় ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রূপে, অন্যদিকে শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে। কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙ্গনের পথ ধরে তিনি সি পি আই এম, পরে সি পি আই এম এল-এর সংস্পর্শে আসেন। যদিও গণ আন্দোলন গণ সংগঠন বর্জনের প্রশ্নে সি পি আই এম এল-এর পার্টি লাইনের বিরোধিতা করায় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। এই সময়ে কোক ওভেন বিভাগে প্রথম সার্থক শ্রমিক ধর্মঘট সংগঠিত করে প্রশাসনের বিষ নজরে পড়েন তিনি, পুলিশ তাঁর পিছনে পড়ে।

    শুরু হয় ধীরেশের আত্মগোপনকারী জীবনের। কখনও ফেরিওয়ালা, জেলে বা ছাগল-ব্যবসায়ী, কখনও কৃষিশ্রমিক, বাঁধনির্মাণ-শ্রমিক হিসেবে তাঁর দিন কাটতে থাকে। সঙ্গে তিনি শ্রমজীবী মানুষদের অধিকার-অর্জনের আন্দোলনে সংগঠিত করতে থাকেন। অবশেষে তিনি কাজ করতে থাকেন ভিলাই ইস্পাত কারখানার কোয়ার্জাইট খনি দানীটোলায়। এখানে তিনি নাম নেন ‘শংকরলাল ঠাকুর’। বিয়ে করেন সহকর্মী শ্রমিক সিয়ারামের কন্যা আশাকে। আভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার দিনগুলোতে তাঁর দু’বছর কাটে রায়পুর জেলে মিসা-য় বন্দী হয়ে।
    দানীটোলা থেকে কিছু দূরে লোহাখনি শহর দল্লী-রাজহরা। তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের ছত্তিশগড় এলাকার দুর্গ জেলায় অবস্থিত এই শহর দল্লী ও রাজহরা দুই লোহাখনির নামে। এখানকার প্রায় দশ হাজার ঠিকাদারী শ্রমিক খনিতে পাথর ভাঙ্গা আর ট্রাকে পাথর লোড করার কাজ করতেন। অবর্ণনীয় দুর্দশায় তাঁদের দিন কাটত। আই এন টি ইউ সি ও এ আই টি ইউ সি—দুই শ্রমিক ইউনিয়নে তাঁরা বিভক্ত ছিলেন। ১৯৭৭-এ জরুরী অবস্থার অবসানে দুই ইউনিয়ন-সম্পাদিত এক অন্যায় বোনাস-সমঝোতার বিরোধিতা করে তাঁরা ইউনিয়ন দুটি থেকে বেরিয়ে এসে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলনের নেতা খুঁজছেন তাঁরা, অন্য ইউনিয়নগুলি শ্রমিকদের জঙ্গী মেজাজ দেখে কাছে ঘেঁষার সাহস পেল না। নিয়োগী সবে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। শ্রমিকদের এক প্রতিনিধিমন্ডলী নিয়োগীকে নেতৃত্বের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানাতে দানীটোলা গেলেন। তাঁদের অনুরোধে নিয়োগী দল্লী-রাজহরা এলেন। ১৯৭৭ থেকে আমৃত্যু দল্লী-রাজহরা ছিল শংকর গুহ নিয়োগীর শ্রমিক আন্দোলন-সংক্রান্ত, সমাজ-পরিবর্তনের আন্দোলন-সংক্রান্ত ভাবনা-চিন্তার পরীক্ষাগার।

    ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ নামে নতুন ইউনিয়ন গড়ে উঠল। প্রথম লড়াই জয়যুক্ত হল। দ্বিতীয় লড়াই idle wages (শ্রমিককে মালিক কাজ দিতে না পারলে যে বেতন দেওয়া উচিত) ও ঘর মেরামতের জন্য ভাতার দাবীতে। মালিক দাবী মেনে  না নিলে শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করেন। ধর্মঘট ভাঙ্গতে রাতের অন্ধকারে দু’জীপ পুলিশ আসে। একটি জীপ ইউনিয়ন অফিস থেকে নিয়োগীকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘুম ভেঙ্গে শ্রমিকরা অন্য জীপের পুলিশদের আটক করে নেতার মুক্তির দাবী জানাতে থাকে। ২রা জুন প্রথম দফায় গুলি চালিয়েও  পুলিশরা নিজেদের মুক্ত করতে পারে না। ৩রা জুন আরও বড় পুলিশ বাহিনী আবার গুলি চালায়। এক মহিলা শ্রমিক ও এক বালক সহ এগারো জন শহীদ হন। ধর্মঘট চলতেই থাকে। প্রশাসন বাধ্য হয় নিয়োগীকে মুক্তি দিতে, ঠিকাদার ও ইস্পাত কারখানার কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় শ্রমিকদের দাবী মেনে নিতে।

    এবার শুরু নতুন ধারার শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরীর কাজ। এ যাবৎ ট্রেড ইউনিয়ন বলতে লোকে বুঝত শ্রমিকদের আর্থিক দাবী-দাওয়া আদায়ের সংগঠনকে, যা বেতনবৃদ্ধি-বোনাস-ছুটি-চার্জশিটের জবাব ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলন করার সংগঠন। অর্থাৎ ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিক-জীবনের এক-তৃতীয়াংশ, আট ঘন্টার সংগঠন, যে আট ঘন্টা শ্রমিক কলে-কারখানায় কাটান।

    নিয়োগী শ্রমিকদের খন্ড-বিখন্ড মানুষ হিসেবে দেখতেন না, দেখতেন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে, যে মানুষ উৎপাদনের কাজ ছাড়াও পরিবারে-সমাজে থাকে—খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যা, নিজের অবসর বিনোদন, সন্তানদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য যাকে ভাবতে হয়, যাকে সম্পর্ক রাখতে হয় সমাজের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে। নিয়োগীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন ইউনিয়নের কর্মসূচীতে সামিল হল আর্থিক দাবীর লড়াইয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য-শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ-ইতিহাস চেতনা-নারী মুক্তি-সমাজের অন্যান্য শোষিত অংশের মুক্তি, নিপীড়িত জাতিসত্ত্বার মুক্তির মত বিষয়গুলি।

    সুস্বাস্থ্যের জন্য শ্রমিকদের লড়াইয়ের শুরু ১৯৭৭-এই। ইউনিয়ন তৈরী হওয়ার কয়েক মাস পরেই, ১৯৭৭-এর ডিসেম্বরে ইউনিয়নের এক উপাধ্যক্ষা কুসুম বাই স্থানীয় ভিলাই ইস্পাত কারখানার হাসপাতালে প্রসবের সময় ডাক্তার-নার্সদের অবহেলায় প্রাণ হারান। ঠিকাদারী শ্রমিকদের জামা-কাপড় পাহাড়ির লাল ধূলোয় রাঙ্গা, তাঁরা তাঁদের শরীরে হাত লাগাতে ঘৃণা করতেন। অন্য কোথাও হলে হাসপাতালে ভাঙ্গচুর হত, এখানে দশ হাজার শ্রমিক হাসপাতালের সামনে জমায়েত হয়ে শপথ নিলেন—নিজেদের মাতৃভবন গড়ে তোলার যাতে আর কোনও মা-বোনকে সন্তান জন্মের সময় প্রাণ হারাতে না হয়।

    দল্লী-রাজহরার শ্রমিকবস্তিগুলোতে পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল না, জঞ্জাল সাফাইয়ের ব্যবস্থা ছিল না। ১৯৮১-র ১৫ই আগস্ট শ্রমিকরা শুরু করলেন ‘স্বাস্থ্য কে লিয়ে সংঘর্ষ করো’ (স্বাস্থ্যের জন্য সংগ্রাম কর) অভিযান। মনে রাখবেন যখন শ্রমিকরা এই আন্দোলনের পথে পা বাড়াচ্ছেন তখন কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কোনও চিকিৎসক নেই। (প্রথম দফায় চিকিৎসকরা যোগ দেন ১৯৮১-তে।) শ্রমিকরা তাঁদের বস্তির জঞ্জাল খনির লোহাপাথর পরিবহনের এগারোটা ট্রাকে ভরে নিয়ে চললেন মাইন্স-ম্যানেজারের বাড়ীতে, মাইন্স ম্যানেজারকে বলা হল বস্তির জঞ্জাল সাফাইএর ব্যবস্থা না হলে রোজ শ্রমিক-বস্তির জঞ্জাল তাঁর বাড়ীর সামনে ফেলে আসা হবে। কর্তৃপক্ষ জঞ্জাল সাফাইএর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হল।

    ১৯৮১-তেই তিনজন সমাজ-পরিবর্তনকামী বাঙ্গালী তরুণ ডাক্তার যোগ দিলেন স্বাস্থ্য-আন্দোলনে। তাঁরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্যসচেতন করার প্রয়াস চালাতেন, সাথে সাথে ছোটখাট চিকিৎসাও করতেন। শ্রমিকদের মধ্যে উদ্দীপনা এল, প্রায় দু’শ জন শ্রমিক ইউনিয়নের স্বাস্থ্য-কমিটির স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার জন্য নাম লেখালেন। কমিটির কিছুজন একটি ডিস্পেন্সারী চালানোর দায়িত্ব নিলেন, বাকীরা দায়িত্ব নিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল গড়ে তোলার।

    ১৯৮২-র ২৬শে জানুয়ারী থেকে ইউনিয়নের গ্যারেজ ঘরে শুরু হল শহীদ ডিস্পেন্সারী, ১৯৮৩-র শহীদ দিবসে ১৯৭৭-এর শহীদদের স্মৃতিতে উদবোধন করা হল শহীদ হাসপাতালের। সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামের নেতা শ্রমিক শ্রেণী, তার দৃঢ. মিত্র কৃষক। দল্লী রাজহরার খনিশ্রমিক এলাকার অসংগঠিত শ্রমিক, গ্রামের গরীব কৃষকদের উপহার দিলেন এই হাসপাতাল, হাসপাতালের উদবোধন করলেন এলাকার সবচেয়ে বয়স্ক শ্রমিক ও সবচেয়ে বয়স্ক কৃষক।

    দল্লী-রাজহরার শ্রমিকরা যখন স্বাস্থ্যের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছেন, তখন দেশের আন্যান্য প্রান্তে চলছিল ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার, যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসার পক্ষে আন্দোলন, স্বাস্থ্যের অধিকারের দাবীতে আন্দোলন। যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসাপ্রণালীর বড় মাপের প্রয়োগের প্রথম পরীক্ষাগার হয়ে উঠল শহীদ হাসপাতাল।

    পাশাপাশি মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করার জন্য, রোগের আর্থসামাজিক কারণগুলি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য, মানুষের হাতে রোগ-প্রতিরোধ ও রোগ-চিকিৎসার সাধারণ প্রযুক্তিগুলি তুলে দেওয়ার জন্য নানান প্রয়াস নেওয়া হতে থাকল।

    আমি যখন কাজে যোগ দিই তখন ছিল ১৫ বেডের একতলা হাসপাতাল, ১৯৮৮-তে দোতলা তৈরী হল, ১৯৯১-তে দোতলার দুটি ওয়ার্ড চালু হওয়ার পর বেডের সংখ্যা বেড়ে হল ৪৫। আধুনিক প্যাথোলজি ল্যাবরেটরী গড়ে তোলা হল, এক্স-রে মেশিন এল, আধুনিক অপারেশন থিয়েটার গড়ে তোলা হল। সব কিছুই কিন্তু হল বাইরের কোন অনুদান না নিয়ে, নিয়োগীর অনুপ্রেরণায় শ্রমিকরা দেখতে ও দেখাতে চেয়েছিলেন তাঁদের ক্ষমতা কতটা। একেকটা করে অর্থনৈতিক আন্দোলনে জয়ের পর শ্রমিকরা চাঁদা দিতে থাকেন হাসপাতালের একেকটি কাজের জন্য।

    শংকর গুহ নিয়োগী তাঁর আন্দোলনে এক নতুন ধারণার অবতারণা করেন—‘সংঘর্ষ ও নির্মাণের রাজনীতি’, তাঁর সংগঠনের স্লোগান ছিল ‘নির্মাণকে লিয়ে সংঘর্ষ, সংঘর্ষকে লিয়ে নির্মাণ’। নির্মাণের জন্য সংগ্রাম—শোষণমুক্ত সাম্যময় নতুন সমাজের জন্য সংগ্রাম। সংগ্রামের জন্য নির্মাণ—এই সংগ্রাম চলাকালীন ছোট ছোট নির্মাণ-কাজের মধ্যে দিয়ে নতুন সমাজের স্বপ্নের একেকটি টুকরোকে সাকার করে তোলা, যা দেখে নতুন নতুন মানুষ ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামে যুক্ত হতে অনুপ্রেরণা পান। এই ধারণা প্রয়োগের অন্যতম স্থান ছিল শহীদ হাসপাতাল।
    সমাজে শ্রেণীবিভাজনের প্রতিফলন ঘটে যে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে, সেখানে সবার ওপরে থাকেন কোন প্রশাসক, তাঁর নীচে চিকিৎসকরা, তারপর যথাক্রমে সেবিকারা, অন্যান্য কর্মীরা, সবার শেষে সাফাই কর্মীরা। শহীদ হাসপাতালে এরকম কোন hierarchy ছিল না। সেখানে সমস্ত কর্মীই প্রশাসক, দুসপ্তাহ ছাড়া সপ্তাহের এক নির্দিষ্ট দিনে সবাই মিলে বসে তাঁরা নীতিগত বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতেন, সেখানে বোঝাই যাবে না কে চিকিৎসক আর কে সাফাই কর্মী। পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গে আমাদের কাজের জায়গায় আমরা এই ধারণার প্রয়োগ করে চলেছি। আমাদের স্বপ্নের সমাজে ডাক্তারের সঙ্গে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পর্ক, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে রোগীদের সম্পর্ক কেমন হবে তার নমুনা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা আমাদের কর্মসূচীতে। অনুপ্রাণিত হয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ডাক্তাররা আমাদের কাজে যুক্ত হচ্ছেন।




    স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে কেমন করে আন্দোলনের হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা যায় তাও দেখিয়েছিল শহীদ হাসপাতাল ও শংকর গুহ নিয়োগীর নেতৃত্বাধীন ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা। হাসপাতালের প্রচার আন্দোলনে এক বড় জায়গা নিয়েছিল ডায়রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই। ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে দূষিত জলের ভূমিকা, ডায়রিয়ার প্রতিরোধে শুদ্ধ জলের প্রয়োজনীয়্তার প্রচার এলাকার মানুষকে সচেতন করে, সচেতন মানুষদের নিয়ে পানীয় জলে দাবীতে আন্দোলনে নামে ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ ও ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা। রাজ্য প্রশাসন ও ভিলাই ইস্পাত কারখানা ১৯৮৯-এ দল্লী-রাজহরা ও তার আশে-পাশের গ্রামগুলিতে ১৭৯টি নলকূপ বসাতে বাধ্য হয়।

    শহীদ হাসপাতালের পরোক্ষ চাপে ডোন্ডী-লোহারা বিধানসভা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে ওঠে। দল্লী-রাজহরাস্থিত ভিলাই ইস্পাত কারখানার বড় হাসপাতালে নানান ধরনের বিশেষজ্ঞ থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা হত না সেখানে, রোগীদের যেতে হত ৮৪ কিলোমিটার দূরের দুর্গ জেলা হাসপাতালে বা ৯১ কিলোমিটার দূরের ভিলাই ইস্পাত কারখানার প্রধান হাসপাতালে। শহীদ হাসপাতালের জেনেরাল ফিজিশিয়ানরা শল্য-চিকিৎসার মত বিশেষজ্ঞ পরিষেবা দিতে থাকায় তার উপর চাপ তৈরী হয়, সে হাসপাতাল বিশেষজ্ঞ পরিষেবা দিতে বাধ্য হয়।

    এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য আন্দোলনগুলির পাশে দাঁড়ানো তো আছেই। লাল-সবুজ (ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চার পতাকার রং শ্রমিক-কৃষক মৈত্রীর প্রতীক) পরিবারের কোন সংগঠন আন্দোলনে নামলে সে সংগঠনের সমস্ত সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব নিত শহীদ হাসপাতাল।

    শহীদ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বলতে পারি কেবল পেশাদার হিসেবে আমরা সেখানে কাজ করিনি, আমরা ছিলাম এক বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের কর্মীও, সেভাবেই আমাদের গড়ে তুলেছিলেন নিয়োগী। তিনি আমাদের বুঝিয়েছিলেন সমাজ পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবীদের কাজ মেহনতী মানুষদের নেতৃত্ব দেওয়া নয়, আমাদের কাজ সমাজবিজ্ঞানের কথাগুলি তাঁদের কাজে পৌঁছে দেওয়া, যে বিজ্ঞানে আমরা প্রশিক্ষিত (আমাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞান) সেই বিজ্ঞানকে জনবোধ্য করে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া।
    বামপন্থী অন্যান্য যেকোন সংগঠন তাঁর ডাক্তারদের ব্যবহার করে অন্যভাবে—ডাক্তার ভাল রোজগার করবেন সংগঠনকে মোটা লেভি দেবেন, সংগঠনের হয়ে মাঝে-মধ্যে চিকিৎসা শিবির করবেন, সংগঠনের সদস্যদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবেন—এটুকুই। স্বাস্থ্য যে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মত আন্দোলনের বিষয়, সেই আন্দোলনে যে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা সংগঠকের ভূমিকা পালন করতে পারেন তা তাঁদের মাথায় থাকে না। এঁদের চেয়ে ব্যতিক্রমী ছিলেন শংকর গুহ নিয়োগী।

    তাই ভিলাইএর মিল মালিকদের নিযুক্ত হত্যাকারী গুলি করে তাঁকে হত্যা করার ২১ বছর পরেও তিনি হারিয়ে যান না। ১৯৮৩-তে শহীদ হাসপাতালের উদবোধনে ইন্দো-জাপান স্টীলের শ্রমিকরা যে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প গড়ে তুলেছিলেন তা বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালেরপ নিয়ে কম খরচে শল্য চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়। ১৯৯৫-এ কানোরিয়া জুট মিলের শ্রমিকরা ছত্তিশগড়ের স্বাস্থ্য আন্দোলনের অনুসরণে যে শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র আরম্ভ করেন তা কম খরচে যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসার মডেল কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক পরিচালনার মডেল হিসেবে গড়ে ওঠে। শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ একই ধরনের স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালান হাওড়ার বাউড়িয়া ও বাইনান, বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়, সুন্দরবনের জেমসপুরে; স্বাস্থ্য সচেতনতার কর্মসূচী চালান, স্বাস্থ্যকর্মীদের বাহিনী গড়ে তোলেন পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে, মেহনতী মানুষের ন্যায্য আন্দোলনের পাশে দাঁড়ান। একই ধারায় গড়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনায় সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল ও জনসেবা ক্লিনিক, বাঁকুড়ায় আমাদের হাসপাতাল, পুরুলিয়ায় ভালোপাহাড় স্বাস্থ্য কেন্দ্র…। বাণিজ্যিক নয়, মানবিক স্বাস্থ্য পরিষেবার খোঁজে প্রকাশিত হয় ‘স্বাস্থ্যের বৃত্তে’। আর এসবের মধ্যে মৃত্যুতেও অমর হয়ে থাকেন শংকর গুহ নিয়োগী।  

     

    ('স্বাস্থ্যের বৃত্তে' পত্রিকার অক্টোবর-নভেম্বর, ২০১২ সংখ্যায় আজ প্রকাশিত)

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ | ১১২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সোমেন রায় | 212.78.237.99 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০২:১১89361
  • এক জিনিয়াসের স্মরণে আরেকজন প্রকৃত গুণী মানুষের আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ। অসামান্য লেখা। খুব ভালো লাগল।

    শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ দীর্ঘজীবী হোক।
  • দীপক পিপলাই | 127.194.68.104 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৪:৪০89362
  • ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে 'শংকর (ধীরেশ) গুহ নিয়োগী' এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী নাম ৷ সবরকম চালু ধ্যান-ধারণার সাথে যাঁর চিন্তা-ভাবনা ও কাজকর্মের বিস্তর ফারাক ৷ 'তত্ত্ব' অনুযায়ী যিনি 'বাস্তব'কে যান্ত্রিকভাবে পাল্টাতে চান নি; বাস্তব-কে পাল্টাতে গিয়ে তত্ত্বের দিকে তাকিয়েছেন - শিক্ষা নেবার জন্য ৷ যাঁরা কমিউনিস্ট আন্দোলনের বৃত্তে আজীবন ব্যর্থতার 'রোল মডেল', তাঁরাই নিয়োগীর যান্ত্রিক ও একপেশে সমালোচক; অথবা নিয়োগী সম্পর্কে যাঁদের সুচিন্তিত ও সুনিয়ন্ত্রিত কর্মসূচিকে বলা যায় : 'নীরবতার চক্রান্ত' ! নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েও, শংকর গুহ নিয়োগী - সৃষ্টিশীল কমিউনিস্ট-কর্মকাণ্ডের এক অনুকরণীয় পথিকৃৎ ৷
    দল্লী-রাজহরার 'শহীদ হাসপাতাল'-এ পুণ্য-কে দেখেছি সর্বক্ষণের এক আত্মনিয়োজীত চিকিৎসক হিসেবে ৷ আজ-ও সে নিয়োগী-র বিস্ময়কর জীবন-দর্শনের অক্লান্ত সৈনিক ৷ এ'লেখা তারই সাক্ষ্য ৷
  • b | 135.20.82.166 (*) | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৫:৩০89363
  • কে মরেছে ভিলাইতে ছত্তিশগড়ের গাঁওয়ে কার মাথা নয় তত দামী
    ঝমাঝম ঝমাঝ্ম নাচ হবে কোন পথে কোন পথ হতে পারে আরো লঘুগামী
    বিচার দেবার আগে জেনে নাও দেগে দাও প্রশ্ন করো তুমি কোন দলে ...
  • aranya | 78.38.243.161 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০১:৫৮89364
  • বড় ভাল লেখা। শংকর গুহ নিয়োগী এক স্বপ্নের নাম। সে স্বপ্ন আজও, এই আকালেও, যারা দেখে চলেছেন - পুণ্যব্রত গুণের মত মানুষেরা, তাদের জন্য ভালবাসা।

    এই লেখাগুলো যে গুরু-তে বেরোয়, তার জন্য অনেক, অনেক ধন্যবাদ গুরু কর্তৃপক্ষ-কেও।
  • কল্লোল | 125.241.78.127 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৪:৪২89365
  • পুণ্যব্রত যখন শংকর গুহনিয়োগীকে নিয়ে লেখেন, যখন শহীদ হাসপাতাল নিয়ে লেখেন, তখন তা মহাকাব্যের মর্যাদা পায়।
    একটা বিষয় সবার দৃষ্টি আকর্ষন করছি - শহীদ হাসপাতালের পরিচালন পদ্ধতি, যা বেলুড় শ্রমজিবী হাসপাতালেও অনুসৃত হয়। যা মাসুমে আমরা অনুসরণ করা শুরু করেছিলাম। কোন ঊর্দ্ধ-অধঃ সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সমান। কেউ বেশী সমান নন।
    পূন্যব্রতর কাছে অনুরোধ। যেহেতু তিনি এতো কাছ থেকে দল্লী-রাজহারার শ্রমিক আন্দোলনের সাথে ছিলেন, ঐ সংগঠনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে যদি কিছু লেখেন। আমি সাগ্রহে তাকিয়ে থাকবো।
    প্রসঙ্গত - "স্বাস্থ্যের বৃত্তে" হাতে এসেছে, এই ব্যাঙ্গালোরেও। ব্যাঙ্গালোরের গুরু ও চন্ডালদের অনুরোধ এই পত্রিকাটি সংগ্রহ করুন। চাইলে আমি যোগাযোগকারীর ভূমিকা আনন্দে পালন করবো।
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 (*) | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২ ০৬:১৫89366
  • খুব ভাল লেখা। তবে শ্রমজিবি হাসপাতাল সম্পর্কে আরেকটু ডিটেল থাকলে ভাল লাগত। অবশ্য তাতে লেখার ফোকাস নষ্ট হয়ে যেতে পারত। একটা সম্পুর্ণ লেখা কি নামানো যায় শুধু সেটার ওপর ? ..

    প্রসংগত, দীপক (পিপলাই) বাবুর কাছ থেকে পুলিন পিপলাই ও চিন্তা আন্দোলন সম্পর্কে কিছু লেখা আশা করছি।..
  • দীপক পিপলাই | 127.194.64.130 (*) | ০২ অক্টোবর ২০১২ ০৪:৩৩89367
  • শংকর গুহ নিয়োগী এবং 'শহীদ হাসপাতাল' নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে, অপর এক ব্যক্তি এবং সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক আন্দোলন নিয়ে আলোচনার অবতারণা করা - সমীচীন হবে কি ?
    তবে, যথাযথ স্থানে ও সময়ে অবশ্যই সে আলোচনা হ'তে পারে; আজকের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে, তার গুরুত্ব-ও অনস্বীকার্য ৷
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 (*) | ০৩ অক্টোবর ২০১২ ০৮:০৬89368
  • না না এখানে নয়। আপনার কাছ থেকে একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেখা আশা করছি। অন্তত যদি `কি হবে কবরে শুয়ে` থেকেও কিছু নির্যাস দেন। এখানে অনেকেই আমরা সমৃদ্ধ হব ...
  • শুদ্ধ | 69.93.197.241 (*) | ০৪ অক্টোবর ২০১২ ০৪:৩৮89369
  • তত্ত্ব কোনো পাথর নয় যে বুকে চাপিয়ে দম বন্ধ করে মরে যেতে হবে। তত্ত্ব এক পাহাড়ি নদীর মতন ক্ষুরধারা, গভীরচারি। তাকে তার মতন জ্ঞানে নিতে পারলে তত্ত্বের থেকে তত্ত্বের উত্তরণ হয় নতুন তত্ত্বে। শঙ্কর গুহনিয়োগীর আদর্শগত শক্তি, সৃষ্টিশীলতা এবং শ্রমজীবি হাসপাতালের মতন কর্মকান্ডর আরো আরো বিস্তার চাই।

    যে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় একটি তামাশার মত, যেখানে চিকিৎসাক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বেশীরভাগ মানুষেরা যান্ত্রিক ও তাত্ত্বিক/প্রায়োগিক ধাঁচে নড়বড়ে অবস্থায় নিজেদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন, যেখানে চিকিৎসাধীন মানুষ ও তার আত্মীয়রা অজ্ঞানতা ছাড়াও ডিজইনফর্মেশন থেকে শুরু করে মিসইনফর্মেশনের শিকার এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সেখানে চিকিৎসা শুধুমাত্র কিছু প্রযুক্তি-প্রকৌশলীর কাজ না হয়ে সামাজিক চিকিৎসা আন্দোলন হয়ে ওঠার আশু প্রয়োজন।

    কিছু ডাক্তার তাঁদের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে যা করে চলেন তা নিতান্তই সামান্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখানে এখন সবচেয়ে বেশী জরুরী রোগ সংক্রান্ত শ্রেণী ও সমাজধারণার পরিস্কার নিরিখ গড়ে তোলা, রোগের চিকিৎসা যে মূলত একটি সামাজিক ক্রিয়া যার একটি অংশ সরাসরি বিজ্ঞান নির্ভর ও বাকীটা সমাজবিজ্ঞান নির্ভর এটিকে সামনে নিয়ে আসা। ডঃ পুণ্যব্রত গুণের মতন মান্য এবং অসামান্য মানুষের লেখার মধ্যে এত বড় মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার কিছুই নেই এমনিতে। কিন্তু গত কিছুকালের ভয়াবহ কিছু অভিজ্ঞতার থেকে কয়েকটি কথা বলে ফেলার আবেগ সামলাতে পারলাম না। সামগ্রিক চিকিৎসা শাস্ত্র, তার জোর ও দুর্বলতা, আমাদের দেশের নানান আর্থ-সামাজিক পরিবেশে তার প্রয়োগ, এই সব নিয়ে সোজাসুজি আলোচনাটাও এখন আমাদের জন্য খুব প্রয়োজন। ওনাদের কাজ তাই আরো আরো ছড়িয়ে দেওয়ার রাস্তাটাও এখন বানানো দরকার। আশায় রইলাম, সুদিন আসবেই।
  • arindam | 69.93.244.48 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১২ ০২:৩৫89370
  • খুব ভাল লেখা। আরও বিস্তারিত জানতে চাই...স্বাস্থ্য আন্দোলনের কাহিনী। নানারকম বাধা ও তাকে অতিক্রম করার কথা...
  • ranjan roy | 24.96.8.216 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১২ ০৫:৪৩89371
  • 'স্বাস্থ্যের বৃত্তে" পত্রিকাটির গ্রাহক হতে চাই। আমার আইডি [email protected]
  • biswajit roy chowdhury | 37.125.202.124 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১২ ১০:৩৬89372
  • শিলিগুড়িতে থাকি। 'স্বাস্থ্যের বৃত্তে" পত্রিকাটির গ্রাহক হতে চাই। কিভাবে সম্ভব , জানতে পারলে কৃতজ্ঞ থাকব।

    [email protected]
  • মৌ | 233.223.141.85 (*) | ১১ অক্টোবর ২০১২ ১১:৪১89373
  • দারুন লাগলো। আরও জানার ইচ্ছা রাখলাম।
  • pi | 127.194.4.183 (*) | ১৩ অক্টোবর ২০১২ ১০:৩২89374
  • পুণ্যব্রতদার মন্তব্য আপডেট করতে অসুবিধা হওয়াতে এটা জানিয়ে দিতে বল্লেন ঃ
    স্বাস্থ্যের বৃত্তের গ্রাহক হতে ১৫০ টাকা চেকে বা করে পাঠান এই ঠিকানায়ঃ
    SWASTHYER BRITTO, HA 44, SALT LAKE, SECTOR-3, CALCUTTA-700097.
    বাইরের চেক হলে ৩০ টাকা অতিরিক্ত যোগ করুন।
  • রাকেশ ভট্টাচার্য্য | 2345.110.9004512.106 (*) | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:৪৪89375
  • লেখায় দল্লী-রাজহরার শহীদ হাসপাতালের সাথে পশ্চিমবঙ্গে পরবর্তীতে গড়ে ওঠা বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে , এগুলি একদম ই এক নয়। শহীদ হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল একটা বৃহত্তর আর্থসামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং তার একটা স্থানিকতা ছিল, যে জায়গায় বাকি আন্দোলনগুলি হচ্ছিল সেই জায়গাতেই স্বাস্থ্য-আন্দোলন হচ্ছিল এবং সেই স্বাস্থ্য-আন্দোলনের অংশ হিসাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শহীদ হাসপাতাল নিয়োগীর জীবদ্দশায় অন্তত আর সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় নি, পরিপূরক অংশ হিসেবেই থেকেছে। পরবর্তীতে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্য-কেন্দ্রগুলি মোটেই তা নয়। স্থানিক ভাবে বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসাবে ম্যাক্সিমাম জায়গাতেই এগুলো গড়ে ওঠেনি। বেলুড়ের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও ক্রমেই হাসপাতালের কর্মসূচী বাকি কর্মসূচীকে ছাপিয়ে গেছে। বাকি গুলির ক্ষেত্রেও প্রথম থেকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিই প্রধান ছিল । এই কেন্দ্রগুলি বিচ্ছিন্নভাবে নিজেদের in itself model হিসাবে দাঁড় করাতে চেয়েছে, শহীদ হাসপাতালের মত বৃহত্তর আন্দোলনের পরিপূরক অংশ হিসাবে গড়ে ওঠেনি। অবশ্য শহীদ হাসপাতাল ও, আমার মত, নিয়োগীর জীবদ্দশাতেই একমাত্র তার original spirit এ নিবদ্ধ ছিল, তার পরে ভিন্ন চরিত্র ধারণ করতে শুরু করে, হাসপাতাল ই প্রধান হয়ে ওঠে। দুটো মডেল আলাদা, এক করে দেওয়া উচিত নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন