#পুরোনো লেখা
আজ সক্কালবেলা বেরিয়ে কাজে যাওয়ার পথে দেখলাম, রাস্তায় কিছু কিছু জায়গায় ম্যালা পুলিশ। ঊর্দি পরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অটোদের কেস দিচ্ছে, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সেটা তাদের আজকের কাজ নয়। ভাবলাম কিছু মিছিল টিছিল আছে বোধ হয় আজ গরু সংক্রান্ত, তাই বিশেষ ব্যবস্থা। কে একজন বললেন, "আজ এইচ এসের রেজাল্ট!" মনে মনে ভাবলাম, হ্যাঁ আয়, দু বছর পর থেকে রেজাল্টের দিন কার্ফু জারি করা হবে এরপর!
পুলিশের কি হল জানি না, তবে আমার এই উদ্ভট ধারণাপোষণকারী বড়ভাইটি আমার স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন। এইচ এস, মানে সায়েন্স, মানে পরীক্ষায় গোল্লা পেয়ে হাবু ফেরেন বাড়ি। মানুষ গতজন্মে পাপ করলে ইহজন্মে পশুপাখি হয়ে জন্মায় শুনেছিলাম। আমার পাপের বোঝা এমন ভারি ছিল, ভগবান আমায় পশুপাখি না করে সায়েন্স নিয়ে পড়ালেন। যমালয়ে জীবন্ত মানুষ পার্ট টু। আর সায়েন্সে আমি তো যেন রসগোল্লায় কাঁচালঙ্কা। কেউ বুঝতেই পারে না হচ্ছেটা কি।
আমাকে সায়েন্স নিয়ে পড়তে হয়েছিল, কারণ মাধ্যমিকে নাকি আমাকে ইংরাজি-বাংলায় ব্রাইট মনে হয়েছিল স্যারদের। প্রথমত, এটা কেমন যুক্তি, আমি আজ অব্দি বুঝিনি। মানে একটা লোকের এসরাজ শুনতে ভালোলাগে শুনে আমি যদি তাকে জিজ্ঞেস করি, "আচ্ছা তাহলে তো তোমার গ্রীন স্যলাডে বাঁধাকপি নিশ্চয়ই ভালোলাগে?", বা সে প্রতিদিনই ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে বলে তাকে যদি বলি "জ্যোতির্বিজ্ঞানে তোমার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল", কেমন হবে ঘটনাটা! যাই হোক। দ্বিতীয়ত, তাঁরা বোঝেননি, বাংলা-ইংরেজিতে আমি ব্রাইট হলেও বাকি সব সাবজেক্টে স্কচ ব্রাইট। কাজেই এইচ এসে আমাকে কোনো অসম তুলনায় পড়তে হয়নি। কেউ আমায় বলেননি যে অমুক দাদা বা তমুক দিদির মার্কশীটটা দ্যাখ্ একবার! বরং, আমার কাছে সবাই-ই খুব আবেগের জায়গা থেকে এটুকুই চেয়েছিলেন যে, মনা তুই পাশ করে দেখা! হাম ভেট চড়ায়েঙ্গে!
এবার মনার কথা বলি। মনার মাথায় অঙ্ক, ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি একসঙ্গে ঢুকতো না। প্রতি পরীক্ষায় এই তিনটের যে কোনো একটায় লাল দাগ থাকবেই। মনার বলতে কোনো লজ্জা নেই। অঙ্কের কথা তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। দু' বছরে পাঁচবার অঙ্ক টিউটর বদলেছিলাম। প্রথম দিকে আমি টিউটর ছাড়তাম, শেষদিকে তারাই আমায় ছাড়তেন। ফিজিক্স এসবের মধ্যে মন্দের ভালো। প্র্যাক্টিকাল করতে ভালোবাসতাম। আর কেমিস্ট্রি উরে বাবা রে বাবা রে বাবা! অরগ্যানিক কেমিস্ট্রিতে মৌচাকের মতো দেখতে কিছু ডিজাইন থাকত। অ্যাসেটিক অ্যাসিডের ফরমুলা বলার সময় CH3 বলে তারপর মুখ দিয়ে কুউউহ্ টাইপের একটা শব্দ করতাম (COOH), বেশ কোকিল কোকিল লাগত। আর ল্যাবে তো মনা একেবারে কুত্তা। যা-ই দিয়ে বলা হত এটা কি বার করো, আমি প্রাণপণে শুঁকতাম। শুঁকে যে কি উদ্ধার করতাম কে জানে, কিন্তু শুঁকতাম। তারপর এর-ওর পায়ে পায়ে ঘুরতাম, আমার মালটা আর কেউ পেয়েছে কিনা। একবার খুব ভালোবেসে একটা হলুদ মতো কিসে জানি কি একটা অ্যাসিড ঢেলেছি, আর সে কি অপূর্ব একটা কচি কলাপাতা রঙ, কিন্তু ল্যাব অ্যাসিস্টান্ট তপন এসে হঠাৎ এমন ঝাড়লো যে রঙটা মিলিয়ে গেল।
এইচ এসে আমি ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছিলাম। তার বেশি কিছু না। ভাগ্যিস পাইনি, তাহলে হয়তো আবার ভাবা হত কোয়ান্টাম ফিজিক্সে আমার ফিউচার খুব স্কচব্রাইট। আসলে তো ফুটুরডুম!