এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   সমাজ

  • জাতীয়সঙ্গীত বিতর্ক: বাংলাদেশী লেখকের দৃষ্টিতে 

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৫৮ বার পঠিত
  • (বাংলাদেশের জাতীয়সঙ্গীত বিতর্ক নিয়ে আলোচনা করলেন আখতারুজ্জামান আজাদ।
    সম্পূর্ন লেখাটি পাঠকের উদ্দেশ্যে নিবেদিত হলো। আগ্রহী হলে পড়তে পারেন।
    মাননীয় লেখকের উদ্দেশ্যে আমার সশ্রদ্ধ নমস্কার!)
    -------------------------------------------------------------------
     
    বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত : পরিবর্তনের ধড়িবাজি
    আখতারুজ্জামান আজাদ

    'আমার সোনার বাংলা' গানের রচনাকাল হিশেবে ১৯০৫ সালই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে, গানটি যে ১৯০৫ সালেই রচিত হয়েছে, এ-ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ নেই। কেননা গানটির পাণ্ডুলিপি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই, রচনাকালও আনুমানিক। এই গান ১৯০৫-এর আগেও রচিত হয়ে থাকতে পারে। ব্রিটিশ ভারতে প্রথম বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল ঐ বছরের ১৬ অক্টোবর। আর কোলকাতা টাউন হলে এই গান গাওয়া হয়েছিল আগস্টের ৭ বা ২৫ তারিখে। একেক জায়গায় একেক তারিখ পাওয়া যায়। গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতেই লিখেছিলেন, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে, কোলকাতা টাউন হলে গানটি প্রথমবার গাওয়ার নেপথ্য উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গ-রদ— এটুকু সর্বজনস্বীকৃত। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ছিলেন না। তিনি অখণ্ড বঙ্গ চেয়েছিলেন। কোথাও-কোথাও তথ্য দেখা যায়— বঙ্গভঙ্গের ফলে যে দুই বঙ্গ আলাদা হয়েছিল, পিছিয়ে-পড়া মুসলমানজনগোষ্ঠী এতে চাকরিবাকরিতে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উপকৃত হচ্ছিল। আবার, এও দেখা যায় যে, বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গ আলাদা কোনো রাজ্য হয়নি, বরং আসামকেও এর সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের একাংশ বিশ্বাস করে— বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা যারা করেছিলেন, তারা পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের উন্নতি বরদাশত করতে পারেননি। আবার বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন যারা, তাদের কারো-কারো ভাষ্য হলো— বঙ্গভঙ্গের ফলে 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশে বাঙালিরা অনেকটা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছিল। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতাকারীরা এটিকে মেনে নিতে পারেননি। তারা এটিকে ব্রিটিশদের 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' ষড়যন্ত্র হিশেবেও আখ্যায়িত করেন। মোদ্দা কথা— বঙ্গভঙ্গের সাথে বা বঙ্গভঙ্গ রদের সাথে ধর্মের চেয়ে রাজনীতি ও অর্থনীতিই বেশি জড়িত। রদের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ফলে, নিঃসন্দেহে বলা যায়— 'আমার সোনার বাংলা' গানের সাথে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

    'আমার সোনার বাংলা' বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। তবে, গানটিকে আসমানি আঘাতের মতো রাতারাতি এ-দেশের জাতীয় সংগীত বানানো হয়নি। বরং ইতিহাসের বহু স্তর ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে এই গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট আন্দোলনে ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পরপরই সেই গানের আবেদন বা মেয়াদ শেষ হয়ে যায় না। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেছে— এর মানে এই না যে, ১৯১১ সালেই ছয়বছর-বয়স্ক 'আমার সোনার বাংলা' গানের অকালমৃত্যু হয়ে গেছে।

    এ-কথা নিশ্চয়ই সবার জানা— দেশবিভাগের পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী একমাত্র উর্দুকে সমগ্র দেশের রাষ্ট্রভাষা হিশেবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং ১৯৫২ সালে এর প্রেক্ষিতে ভাষা-আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে উর্দুর বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছিল। তখনকার বাঙালি কবি-সাহিত্যিকরা পূর্ব পাকিস্তানকে 'পূর্ব পাকিস্তান' সম্বোধন না-করে 'পূর্ব বাংলা' সম্বোধন করতেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ ছিলেন, সরকারি গণমাধ্যমে কোনো ধরনের রবীন্দ্রসংগীত বাজানো তখন নিষিদ্ধ ছিল, ব্যক্তিপর্যায়েও রবীন্দ্রচর্চা ছিল দুরূহ। কাজী নজরুল ইসলামের সেসব গানই তখন বাজানো হতো, যেগুলো 'হিন্দুয়ানি না' কিংবা 'কম হিন্দুয়ানি'। কথিত 'হিন্দুয়ানি' শব্দ সরিয়ে, যেমন 'সজীব করিব মহাশ্মশান'-কে 'সজীব করিব গোরস্তান' বানিয়ে, তৎকালে নজরুলের গানের মুসলমানি করা হয়েছে। কথিত আছে— পাকিস্তান আমলে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নাম বদলে রাখা হয়েছিল ফাতেমাচূড়া, ময়মনসিংহকে করা হয়েছিল মোমেনশাহী, সিলেটকে জালালাবাদ। বাংলা বাক্য আরবি-ফারসি কিংবা উর্দু হরফে লেখার প্রস্তাব দেওয়ার মতো অকল্পনীয় ধৃষ্টতাও ঐ আমলে দেখানো হয়েছে। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ থাকে। ১৯৬৭ সালের ২৩ জুন আইউব খান সরকার রবীন্দ্রসংগীত প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন বলেছিলেন— 'রবীন্দ্রসংগীত আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ নয়।'

    ১৯৬১ সাল ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপন তখন অত সহজ কম্ম ছিল না। বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীদের নেতৃত্বে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সেই পরিস্থিতিতেও রবীন্দ্রশতবর্ষ উদযাপন করেছিলেন এবং এই অপরাধে শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ করে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা করে গোবিন্দ চন্দ্র ও মোফাজ্জল হায়দারকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের সেই অপরাধের শাস্তিও দিয়েছিল। ১৯৬১ সালের রবীন্দ্রশতবর্ষ উদ্‌যাপন হয়ে উঠেছিল ১৯৭১ সালে তাদের মৃত্যুর কারণ। অর্থাৎ সামরিক শাসকদের রবীন্দ্রভীতি আর বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের রবীন্দ্রপ্রীতি কোনো মামুলি ব্যাপার বা ছেলেখেলা ছিল না, ছিল এক রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের সূচনাপর্ব। এই রবীন্দ্রনাথের গানই প্রাক-একাত্তরকালে স্বাধীনতাকামী জনতাকে উদ্বেলিত করেছে, একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উজ্জীবিত করেছে, একাত্তর-পরবর্তীকালে যুগিয়েছে স্বৈরাচারপতনের মন্ত্রণা। অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানিদের উর্দু জাতীয়তাবাদের বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার বাসিন্দাদের পালটাপালটি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যতম নিয়ামক হিশেবে কাজ করেছেন ১৯৪১ সালে মারা যাওয়া রবীন্দ্রনাথ। জীবিত না-থেকেও রবীন্দ্রনাথ পূর্ব পাকিস্তানে জীবিত ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রভাবক হিশেবে।

    একষট্টি-পরবর্তীকালে সন্‌জীদা খাতুনদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, যার সদস্য ছিলেন মূলত একষট্টিতে রবীন্দ্রশতবর্ষ উদ্‌যাপনের আয়োজকরা। পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা উদ্যানের অশ্বত্থগাছের পাদদেশে ছায়ানটের জনা বিশেক শিল্পী বসে পড়েছিলেন সেরেফ গান গাওয়ার জন্য। মূলত রবীন্দ্রনাথের গানই ছিল সেই সংগীতায়োজনের উপজীব্য। ও রকম গুমোট পরিস্থিতিতে বন্দুকের নলের মুখে রবীন্দ্রনাথকে উপজীব্য করে প্রকাশ্যে গান গাইতে বসা, উপর্যুপরি বাংলা গান গাইতে থাকা, উর্দু-আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই সহজ কোনো কাজ ছিল না। তখন সেরেফ এ-রকম একটা সংগীতায়োজনই ছিল বিশাল রাজনৈতিক প্রতিবাদ। সম্ভবত ১৯৬৭ সালেই পহেলা বৈশাখকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহারের সূত্রপাত হয় এবং এই হাতিয়ার ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকদের বিপক্ষে, এই হাতিয়ার ছিল বাংলার স্বাধিকার আদায়ের পক্ষে, এই হাতিয়ার ছিল বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক-সামরিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। একাত্তরের যুদ্ধ নিছক সামরিক ছিল না। যুদ্ধ পর্যন্ত পৌঁছতে, অর্থাৎ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে যে সাংস্কৃতিক ধাপগুলো ছিল; এদের মধ্যে এই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনও ছিল অন্যতম। পূর্ব পাকিস্তানে কৌশলগত পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপনের সাথে জড়িত প্রয়াত রবীন্দ্রনাথ।

    শত্রুমুক্ত বাংলাদেশে 'আমার সোনার বাংলা' আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সংগীত হয় ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি। কিন্তু তা শেখ মুজিবুর রহমানের একক পছন্দে হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ জাতীয় সংগীত হিশেবে গাওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রেও এই গানকে জাতীয় সংগীত হিশেবেই গাওয়া হতো। আরেকটু পিছিয়ে গেলে, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রামপরিষদের সভায়ও 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত হিশেবে। ২৩ মার্চ পাকিস্তানদিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান থাকলেও ঢাকা টেলিভিশনের বাঙালি কর্মীরা পাকিস্তানদিবসের কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করতে দেননি। পাকিস্তানের জাতীয় সংগীতের বদলে এদিন প্রচারিত হয় 'আমার সোনার বাংলা'। পাকিস্তানের জাতীয় পতাকার বদলে পর্দায় ভেসে উঠেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন এই গান। এর পর ৩ মার্চ পল্টন ময়দানের জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে 'আমার সোনার বাংলা' গানটিকে গ্রহণের ঘোষণা আসে। ১৯৭০ সালে জহির রায়হানের 'জীবন থেকে নেওয়া' চলচ্চিত্রেও 'আমার সোনার বাংলা' গানটি ব্যবহৃত হয়। ১৯৬৬ সালে ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামি লিগের তিনদিনব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশনেরও উদ্বোধন হয়েছিল 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়ার মধ্য দিয়ে। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত সাংসদদের সম্মানে শেখ মুজিব কার্জন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান পরিবেশিত হয়েছিল। ঐ অনুষ্ঠানে সন্‌জীদা খাতুনকে 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন শেখ মুজিব।

    ঢাকা জেলা ছাত্রলিগের সাবেক সভাপতি 'আবদুল আজিজ বাগমার' জন্ম দিয়েছিলেন 'অস্থায়ী পূর্ববঙ্গ সরকার'। সংক্ষেপে 'অপূর্ব সংসদ'। আরো সংক্ষেপ করে লেখা হতো 'অপু'। তারা একটি সরকারকাঠামোও ঠিক করেছিলেন। আবদুল আজিজ বাগমাররাও 'অপু-৩' ইশতেহারে নতুন দেশের নাম 'বাংলাদেশ' এবং জাতীয় সংগীত হিশেবে 'আমার সোনার বাংলা' প্রস্তাব করেছিলেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হুট করে ১৯৭১ সালে এসে পড়েনি। এর বহু বছর আগে থেকেই স্বাধীনতার কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল, সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হচ্ছিল এবং নতুন দেশের জাতীয় সংগীতও ভেবে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেমন আচমকা আসেনি, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও আচমকা আসেনি। স্বাধীনতা এসেছে পর্যায়ক্রমে এবং সেইসব পর্যায়ের প্রতিটি পর্যায়ে 'আমার সোনার বাংলা' গানকেই জাতীয় সংগীত হিশেবে ভেবে রাখা হয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই এই গানকে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দিয়ে গাওয়া হয়েছে, এই গান কাজ করেছে দেশ স্বাধীন করার সাংস্কৃতিক মন্ত্র হিশেবেও। বাংলাদেশের সম্ভাব্য জাতীয় সংগীত যেহেতু দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে; তাই, এই গানে যুদ্ধের প্রসঙ্গ নেই, শহিদদের উল্লেখ নেই। মোদ্দা কথা— বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং 'আমার সোনার বাংলা' গান পরস্পরের সাথে বিচ্ছিন্ন কোনো সত্তা না, এরা বরং একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্যই, ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নির্বাচনের জন্য সরকারকে মোটেই বেগ পেতে হয়নি, জাতীয় সংগীত হিশেবে তখন 'আমার সোনার বাংলা'ই হয়ে উঠেছিল স্বয়ংক্রিয় পছন্দ।

    বাংলাদেশে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রথম উদ্যোগ এসেছিল খন্দকার মোশতাক আহমেদের হাত ধরে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মোশতাক রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন তিরাশি দিন। এই ক'দিনেই তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান 'জয় বাংলা' পালটে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ'-এর আদলে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' করেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের নাম 'রেডিও পাকিস্তান'-এর আদলে 'রেডিও বাংলাদেশ' করেছিলেন এবং উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুকেই বদলে ফেলে তিনি পাকিস্তানি ভাবাদর্শ চালু করতে চেয়েছিলেন এবং এরই অংশস্বরূপ জাতীয় সংগীতেও হাত দিয়েছিলেন। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্য তিনি উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন, সেই কমিটির প্রধান করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক কাজী দীন মুহম্মদকে, নির্দেশ দিয়েছিলেন এক মাসের মধ্যে নতুন জাতীয় সংগীত নির্ধারণ করতে। দীন মুহম্মদ কমিটি এ-ব্যাপারে তিনটি বৈঠক করে এবং দুটো গানের যেকোনো একটিকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব দেয়— কাজী নজরুল ইসলামের 'চল চল চল' এবং ফররুখ আহমদের 'পাঞ্জেরি'। কিন্তু অভ্যুত্থান-পালটাঅভ্যুত্থানের ডামাডোলে মোশতাক জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করে যেতে পারেননি।

    উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো— কাজী দীন মুহম্মদ ছিলেন পাকিস্তানের একজন দালাল শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধকালে 'পূর্ব পাকিস্তান'-এর যে-পাঁচসদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল পশ্চিম পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল, দীন মুহম্মদ ছিলেন সেই পাঁচজনের একজন। বাকি চারজন ছিলেন অবজার্ভার গ্রুপ অব পাবলিকেশন্সের মালিক হামিদুল হক চৌধুরী, পাকিস্তানের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মাহমুদ আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাজ্জাদ হোসেন এবং বিচারপতি নুরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের দালালি করার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষককে স্বাধীন বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়া হয়েছিল, দীন মুহম্মদ তাদের অন্যতম। দীন মুহম্মদের ব্যাপারে এই তথ্যগুলোর উৎস 'মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র' কর্তৃক ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত বই 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়'। দীন মুহম্মদ যে-ফররুখ আহমদের কবিতাকে জাতীয় সংগীত হিশেবে প্রস্তাব করেছিলেন, মজার ব্যাপার হলো— মুক্তিযুদ্ধকালে সেই ফররুখও পাকিস্তানের দালাল ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ মে সংবাদপত্রে যে-পঞ্চান্ন বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন; তাদের তালিকার দীন মুহম্মদও আছেন, ফররুখও আছেন। পঞ্চান্নজনের পুরো তালিকা পাওয়া যাবে ঐ একই বইয়ে (একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়)। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে ফররুখ নিয়মিত লেখালিখি করেছিলেন বিধায় স্বাধীন দেশে তিনি বেতারের চাকরি খুইয়েছিলেন, যুদ্ধের পর বাংলা অ্যাকাডেমিতে তার প্রবেশ অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল এবং ১৯৭৪ সালে মৃত্যুর পর তাকে কবরস্থ করার জায়গা নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কবি বে-নজীর আহমদ শাহজাহানপুর পারিবারিক কবরস্থানে ফররুখকে কবর দেওয়ার জায়গা করে দেন। উল্লেখ্য, বে-নজীরও স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন।

    ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলা হয়েছিল প্রকাশ্যে। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে তৎকালীন বিমানবাহিনীপ্রধান গোলাম তাওয়াব একটি 'সিরাত মাহফিল'-এর আয়োজন করেছিলেন। তারিখ হিশেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ৭ মার্চকেই, কারণ পাঁচ বছর আগের এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমান একই মাঠে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। সিরাত মাহফিলে বক্তব্য রাখেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, যাদের অধিকাংশই বাহাত্তরের দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত। বক্তব্য রাখেন তরুণ মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও। স্বাধীনতাবিরোধীদেরকে একযোগে মাঠে নামালে মুক্তিযোদ্ধারা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখান, তা পরখ করে দেখাই ছিল ঐ মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্য। আলোচ্য মাহফিল থেকে দাবি ওঠে জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের, এমনকি বাংলাদেশকে 'ইসলামি প্রজাতন্ত্র' ঘোষণারও। সেই মাহফিলে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল— 'মোদের নেতা তাওয়াব ভাই, চান-তারা পতাকা চাই।'

    ১৯৭৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিনেট অধিবেশনে কোরান তেলাওয়াতের আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ায় জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির নেতা ডা. ইউসুফ বলেছিলেন— 'স্যার, আমাদের পতাকায় ইসলামি রং নেই, এটা আমাদের ভালো লাগে না। এটা ইসলামি তাহজ্জিব ও তমুদ্দুনের সাথে মিলছে না।' উত্তরে জিয়া বলেছিলেন— 'হবে, হবে। সবকিছুই হবে। আগে হিন্দুর লেখা জাতীয় সংগীত বদলানো হোক। তারপর জাতীয় পতাকার কথা ভাবব।' ডা. ইউসুফ ও জিয়াউর রহমানের এই কথোপকথন পেয়েছি সাংবাদিক আবেদ খানের 'ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি' বইয়ে। তবে, অভিযোগ আছে— সাংবাদিক হিশেবে আবেদ খান আওয়ামি লিগ-অনুগত। তাই, তার বইয়ের বক্তব্য বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করতে হবে নিজ দায়িত্বে। ওদিকে ১৯৭৮ সালেরই ৮ মে ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে জিয়াউর রহমানকে প্রশ্ন করা হয়েছিল— 'জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা বদলানোর ব্যাপারে কোনো-কোনো মহল হইতে দাবি উঠিয়াছে। সে-সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?' এর জবাবে জিয়া বলেছিলেন— 'এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা যায় না। এগুলি পারমানেন্সির ভিত্তিতেই গ্রহণ করা হয়।'

    জিয়াউর রহমানের আমলে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয় এর পরের বছর। ১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিল জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব আসে। ঐ সময়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ্‌ আজিজুর রহমান এক গোপন চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদকে লেখেন— 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন। আমার সোনার বাংলা গানটি আমাদের সংস্কৃতির চেতনার পরিপন্থি বিধায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন আবশ্যক।' ঐ চিঠিতে 'আমার সোনার বাংলা'র পরিবর্তে 'প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ'-কে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করেন শাহ্‌ আজিজ (গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির, সুরকার আলাউদ্দিন আলী)। প্রধানমন্ত্রীর ঐ চিঠি পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রেডিও, টেলিভিশন এবং সব সরকারি অনুষ্ঠানে প্রথম বাংলাদেশ গানটি প্রচারের নির্দেশনাও জারি করে। এ-সময়ে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি 'প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ' গাওয়া শুরু হয়। কিন্তু জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের পরিকল্পনা ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেমে যায়। এই অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত তথ্যগুলো নিয়েছি দৈনিক যুগান্তরের ২০১৯ সালের ৭ আগস্টের অনলাইন সংস্করণ থেকে। উল্লেখ্য— মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতা করার দায়ে শাহ্‌ আজিজুর রহমান বাহাত্তরের দালাল আইনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি পেয়েছিলেন। মুক্তি পেয়ে আবারও তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং ১৯৭৪ সালে আবারও গ্রেপ্তার হন।

    জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের তোড়জোড় খালেদা জিয়ার আমলেও দেখা গিয়েছিল। ২০০২ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামির আমির মতিউর রহমান নিজামী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি যৌথ সুপারিশপত্র প্রধামন্ত্রীর কাছে জমা দেন। তাতে বলা হয়— 'সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন।' প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চিঠিটা প্রত্যাখ্যান না-করে সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ে পাঠান। সংস্কৃতিমন্ত্রী বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে সচিবের কাছে প্রেরণ করেন। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনকে সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয় অভিহিত করে সচিব তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান। একই বছরের ১৯ আগস্ট প্রস্তাবটি সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই সরকারের আমলে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। এই অনুচ্ছেদে ব্যবহৃত তথ্যগুলোও নিয়েছি দৈনিক যুগান্তরের ২০১৯ সালের ৭ আগস্টের অনলাইন সংস্করণ থেকে। উল্লেখ্য— মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা সংঘটনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার দায়ে নিজামী-মুজাহিদ উভয়েরই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

    বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলার উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি হলো সংক্ষেপে এই। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের উদ্যোগের কথা শুনেছি, তবে দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকসম্মেলন ডেকে সম্প্রতি একই দাবি তুলেছেন গোলাম আজমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আজমি। 'মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস' তুলে ধরার জন্যও আজমি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের 'সঠিক ইতিহাস'-এ বাবা আজমের অবস্থান কী বা কোথায়, পুত্র আজমি তা উল্লেখ করেননি। একই সাংবাদিকসম্মেলনে তিনি তার বাবাকে উলটো 'সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি' হিশেবে সাব্যস্ত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম আজম ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামির আমির এবং ছিলেন একাত্তরের গণহত্যার শীর্ষ-কুশীলবদের একজন। গোলাম আজম বাংলাদেশের শুধু জন্মের বিরোধিতা করেছিলেন, তা না। যুদ্ধে পরাজয় আঁচ করতে পেরে একাত্তরের নভেম্বরেই তিনি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। বাংলাদেশের বিরোধিতা তিনি যে কেবল যুদ্ধকালেই করেছিলেন, তা-ও না। যুদ্ধশেষেও তিনি পাকিস্তানে বসে বাংলাদেশবিরোধিতা অব্যাহত রেখেছিলেন। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে গোলাম আজম 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ' পালন করেন, লন্ডনে গিয়ে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার' কমিটি গঠন করেন। সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক যুবসম্মেলনে গিয়ে তিনি মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে আহ্বান জানান বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিশেবে স্বীকৃতি না-দেওয়ার জন্য এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে কোনো সহযোগিতা না-করার জন্য। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, গোলাম আজম তাতেও বিরোধিতা করেছিলেন। সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে আজম চেষ্টা করেছিলেন দুই দেশকে নিয়ে একটা কনফেডারেশন গড়ে তুলতে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৮ সালে মা মারা যাওয়ার পর জিয়াউর রহমান সরকার গোলাম আজমকে বিনা ভিসায় পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসতে দিয়েছিলেন। সেই যে এলেন, তিনি পাকিস্তানে আর ফিরে গেলেন না। পরবর্তী ষোলো বছর তিনি বিদেশী নাগরিক হিশেবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর সরকারগঠনে বিএনপিকে সহযোগিতার পুরস্কারস্বরূপ ১৯৯৪ সালে আদালতের রায়ের মাধ্যমে গোলাম আজম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন।

    উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে যারা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছিলেন; সামান্য চোখ বোলালেই দেখা যায়— এদের প্রত্যেকেই হয় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বুদ্ধিজীবী অথবা বাহাত্তরের দালাল আদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধী হিশেবে ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত বা নব্বই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতা কিংবা কোনো যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। এদের সমস্যা কেবল জাতীয় সংগীতে না; জাতীয় পতাকা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদমিনার, বাংলা বর্ষবরণ— এদের সমস্যা সবকিছুতেই। জাতীয় সংগীতে বা 'আমার সোনার বাংলা'য় যাদের আপত্তি আছে; স্মৃতিসৌধ বা শহিদমিনারে ফুল দেওয়াও তাদের কাছে হারাম, শিখা চিরন্তনও হারাম, পান্তা-ইলিশও হারাম। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ বা বাংলাদেশের জন্মের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সবকিছুতেই এদের আপত্তি। কারণ শহিদমিনারের ইতিহাস পাকিস্তানরাষ্ট্র দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরির ইতিহাস, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকার ইতিহাস রেসকোর্স ময়দানে তিরানব্বই হাজার সৈন্যসহ পতিত পাকিস্তানরাষ্ট্রের আত্মসমর্পণের ইতিহাস,  জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত স্তম্ভের ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির সাতটি প্রলয়ঙ্কর পর্বের ইতিহাস (ভাষা-আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, সংবিধান-আন্দোলন, শিক্ষা-আন্দোলন, ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ)। একাত্তরে এরাই মুক্তিযোদ্ধাদেরকে গালি দিতেন 'কাফের-মুরতাদ' বলে, ডাকতেন 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বলে, সাব্যস্ত করতেন 'রুশ-ভারতের চর' বলে। একাত্তরের পর এরাই চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের জন্মের সাথে সম্পৃক্ত সবকিছুকে সমূল উৎপাটন করতে।

    আগেই উল্লেখ করেছি— 'আমার সোনার বাংলা' হঠাৎ করে এক রাতের মধ্যে জাতীয় সংগীত হয়ে যায়নি, হয়েছে বছরের পর বছর ধরে ক্রিয়াশীল ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। আবার জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের আওয়াজও হঠাৎ নয়। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পর খন্দকার মোশতাকের হাত ধরে, এই আওয়াজের সর্বশেষ প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের পুত্র আবদুল্লাহিল আমান আজমির কণ্ঠে। মধ্যবর্তী ঊনপঞ্চাশ বছরে পাকিস্তানপন্থি বহু বাঙালি বুদ্ধিজীবী জাতীয় সংগীত হিশেবে 'আমার সোনার বাংলা'-কে বহুভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন, ওয়াজ মাহফিলের সিকি-শিক্ষিত বক্তারা এই গানে হিন্দুয়ানি উপকরণ ও শেরেক খুঁজে পেয়েছেন, মাদ্রাসাগুলো বন্ধ রেখেছে 'আমার সোনার বাংলা' গাওয়া। মুক্তিযুদ্ধকালে অল্পকিছু বাদে অধিকাংশ মাদ্রাসারও ভূমিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। ফলে, এ-কথা আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না— জাতীয় সংগীত হিশেবে 'আমার সোনার বাংলা' যাদের পছন্দ না; তারা কারা, তাদের উদ্দেশ্য কী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তাদের অবস্থান কী।

    রবীন্দ্রবিরোধীদের কেউ-কেউ বলছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'ধনধান্য পুষ্পভরা' বা কাজী নজরুল ইসলামের 'চল চল চল' গানকে জাতীয় সংগীত করতে। কিন্তু যেসব অভিযোগ 'আমার সোনার বাংলা'র বিরুদ্ধে আছে, এই দুই গানও তা থেকে মুক্ত না। 'ধনধান্য পুষ্পভরা'র একটি বাক্য— 'ও মা, তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি।' চাইলে দ্বিজেন্দ্রলালের এই 'মা'-কে 'মা কালী' আখ্যা দিয়ে এই গানেও হিন্দুত্ব বা শেরেক খোঁজা যায়, একই জিনিশ খোঁজা যায় নজরুলের 'চল চল চল' গানের 'সজীব করিব মহাশ্মশান' বাক্যেও। তদুপরি দ্বিজেন্দ্রলাল আবার অমুসলমান। ওদিকে দ্বিজেন্দ্রলাল-নজরুল কারো জন্মই বাংলাদেশে না, দুজনেরই জন্মস্থান রবীন্দ্রনাথের রাজ্যে। এর ওপর নজরুল আবার হিন্দুদের শ্যামাসংগীতও লিখে বসে আছেন, ভগবান-বুকে পদচিহ্ন আঁকতে চেয়েছেন, মসজিদের তালা ভাঙতে চেয়েছেন, ছেলের নাম রেখে বসে আছেন কৃষ্ণ মোহাম্মদ। কারো-কারো অভিযোগ— 'আমার সোনার বাংলা' গানে সরাসরি 'বাংলাদেশ' শব্দটি নেই, বাংলাদেশের অবাঙালি আদিবাসীদের উল্লেখ নেই। ঘটনা হলো— 'বাংলাদেশ' শব্দ 'ধনধান্য পুষ্পভরায়'ও নেই, 'চল চল চল' গানেও নেই। আর একইসাথে বাঙালি-অবাঙালি সবার কথা উল্লেখ আছে, এমন কোনো গান অদ্যাবধি রচিত হয়নি; যা দেশের জাতীয় সংগীত হওয়ার উপযোগী। রবীন্দ্রনাথের 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে' গানে 'বাংলাদেশ' আছে, কিন্তু এই গানেরই অন্য দুটো বাক্য— 'ও গো মা, তোমার কী মূরতি আজি দেখি রে' এবং 'হৃদয় আজি ভরে গেছে সোনার মন্দিরে'। তাই, এই গানও 'মূরতি' আর 'মন্দির'-এ মার খেয়ে যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ভাবধারার সাথে সংঘর্ষ বাধিয়ে ফেলে। ফলে, অজুহাত খুঁজতে চাইলে নানানভাবেই খোঁজা যাবে, শতভাগ বিতর্কমুক্ত বা সর্বজনগ্রহণযোগ্য কোনো জাতীয় সংগীত খুঁজে পাওয়া কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।

    একটা মজার ব্যাপার এখানে উল্লেখ না-করলেই না। 'আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে' গানটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৫ সালে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্মের অন্তত ছেষট্টি বছর আগেই রবীন্দ্রনাথ 'বাংলাদেশ' শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এর আগে কেউ 'বাংলাদেশ' শব্দ ব্যবহার করেছেন, এমনটি অদ্যাবধি চোখে পড়েনি। বলাই বাহুল্য— 'বাংলাদেশ' নামক রাষ্ট্রের নামকরণ হয়েছে রবীন্দ্রনাথের এই গানের সূত্র ধরেই। রবীন্দ্রনাথে যাদের বিপুল ব্যারাম, তারা শেষমেশ 'বাংলাদেশ' নামও পালটাবেন কি না; এ-ব্যাপারে অবশ্য কোনো উচ্চবাচ্য শুনিনি। রবীন্দ্রনাথ এমনই এক মহাসমুদ্র; যার বুক থেকে কয়েক কলসি পানি তুলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা যায়, কিন্তু পুরোটা সেচে ফেলা যায় না। সব নদীকে যেমন কোনো-না-কোনোভাবে সাগরে মিশতেই হয়, তেমনি ১৮৬১-পরবর্তী গোটা বাঙালি জাতিকেই রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে কিছু-না-কিছু ধার নিতে হয়। রবীন্দ্রনাথ এমনই এক ব্যাংক, যার কাছে অবিভক্ত বাঙালি জাতি সরাসরি দায়বদ্ধ।

    উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের বিরুদ্ধে হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার বুকে গুলি চালিয়ে উর্দুর বিপরীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনে বাধা দিয়ে এবং রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন নিষিদ্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আরো শক্তিশালীভাবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্ত প্রতিচ্ছবি এবং তার রচিত 'আমার সোনার বাংলা'ও এখন থেকে একশো উনিশ বছর আগে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি ঐতিহাসিক গান। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা এই গানকে জাতীয় সংগীত হিশেবে ব্যবহার শুরু করেছেন দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই। তাই, এই গানকে জাতীয় সংগীত থেকে সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ধারাবাহিকতার সুতো কেটে দেওয়া, স্বাধীনতাসংগ্রামীদের আবেগ-অনুভূতিকে কবরস্থ করা, মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারকে অস্বীকার করা, স্বাধীনতাবিরোধী সম্প্রদায় ও তাদের উত্তরসূরিদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিজয় নিশ্চিত করা। শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবার মৃত্যুর পর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের চেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার। সেসব চেষ্টার একটিও সফল হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুতীব্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতন হয়েছে রক্তলোলুপ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার। এখন আবার জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের সুর তুলেছেন গোলাম আজমের ব্রিগেডিয়ার পুত্র।

    মনে রাখতে হবে— 'আমার সোনার বাংলা' শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, পৈতৃক সম্পত্তিও নয়; এই গানকে শেখ হাসিনাও জাতীয় সংগীত বানাননি, তার পিতার একক ইচ্ছেয়ও এই গান জাতীয় সংগীত হয়নি। 'আমার সোনার বাংলা' জাতীয় সংগীত হয়েছে একটি নিরবচ্ছিন্ন, ধারাবাহিক ও ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। এই নিরবচ্ছিন্নতাকে বিচ্ছিন্ন করার, ধারাবাহিকতাকে অধারাবাহিক করার কিংবা ঐতিহাসিকতাকে ইতিহাসচ্যুত করার কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের জন্ম যারা চায়নি, 'আমার সোনার বাংলা'র ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি তাদের সম্মিলিত বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির চেয়ে যোজন-যোজন বেশি।

    ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:1989:e97c:578:5634:1232:5476 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৩৭743661
  • রবীন্দ্রনাথ- যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠে নি। এমনই প্রতিভা ঐ কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান, তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে তিনি জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠেন।
    প্রতিক্রিয়াশীল নষ্টরা অনেক লড়াই করেছে তাঁর সাথে, পেরে ওঠে নি; তাঁকে মাটি থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আকাশ হয়ে ওঠেন; জীবন থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হলে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন জাতির স্বপ্নালোকে। নষ্টরা তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। যদিও তিনি জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা,তবুও তিনি জাতীয় কবি নন। তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই। তাতে কিছু যায় আসে নি তাঁর; দশকে দশকে বহু একনায়ক মিশে যাবে মাটিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙলায় ও বিশ্বে।
     
    (হুমায়ুন আজাদ)
  • Ranjan Roy | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:১৭743663
  • অত্যন্ত প্রাসংগিক দুটি লেখা। দীপকে ধন্যবাদ।
  • সিএস  | 103.99.156.98 | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৬743665
  • পাকিস্তান পর্বে রবিবাবুকে নিয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষর সমস্যা ছিল ও তজ্জনিত বিধিনিষেধ ছিল সে ধারণা ছিল। আবার ঐ সময় জুড়েই প্রতিবাদীদের কাছে, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে রবিবাবুর গান এক বড় জোরের জায়গা ছিল সে ধারণাও ছিল। কিন্তু '৭৬ পরবর্তী সময়েও সামরিক শাসন বা বিএনপির সময়ে রবিবাবুকে নিয়ে অসৈরণ যে চলতে থেকেছিল সে ধারণা ছিল না। এই সময়ে সেগুলো ফিরে এসেছে আবার, ইতিহাস দেখলে সেটা নতুন কিছু নয়, বাংলাদেশের প্রগতি - প্রতিক্রিয়া জনিত লড়াইয়ের অংশই। এই ইতিহাসটা এই লেখায় আছে।

    পাকিস্তান পর্বে লালনকে নিয়েও মনে হয় একই সমস্যা ছিল, ইসলামিস্ট বা পাকিস্তানপন্থীদের, লালনকে ইসলাম - কোরাণ অনুযায়ী ছকে ফেলা, সাজিয়ে নেওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল। পরে কী হয়েছিল বা এখন কী হয়েছে, সে ধারণা নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন