এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০২২ | ৪৪৭৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    বড় সংকটে পড়িয়াছি। আমি জানিতাম বাঙালী ঘোর কালীভক্ত। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আমরা সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এবং অনেকের বিরচিত কালীকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনিয়া আশৈশব লালিত হই। কলিকাতায় এবং তার উপকণ্ঠে ঐতিহ্যশালী মন্দির বলিতে কালীঘাটের কালী মন্দির, বঊবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, ঠনঠনিয়ার কালীবাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির। কোনটি ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন, কোনটির বয়স ৩০০ বছর।

    বাঙালী প্রাচীন কালে ডাকাইতি করিতে, বর্তমান কালে নির্বাচনের অথবা ফুটবলের ময়দানে নামিতে আগে কালীমাতার প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকায়। বাঙালী কম্যুনিস্ট নেতা কংকালীতলার শ্মশানে পূজা দিয়া সগর্বে ঘোষণা করেন যে তিনি একাধারে বাঙালী,  কালীভক্ত এবং কম্যুনিস্ট। স্বাধীনতার সংগ্রামেও বাঙালী কালীমাতার দানবদলনী রূপ দেখিয়া প্রেরণা পায়। চারণকবি মুকুন্দদাস গাহিয়াছেনঃ

    “দানবদলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব রাখিবে বঙ্গে?
    সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান,  থাকে থাকুক প্রাণ,
    যায় যাবে রঙ্গে”।

    ইহার পর ঠাকুর রামকৃষ্ণ আসিয়া মা কালীর সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি সর্বত্র নারীর মধ্যে মা কালীর দরশন করিলেন। এমনকি চিৎপুরের পথে সন্ধ্যায় শান্তিপুরী শাড়ি পরা মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা শোভিতা পুরুষের মন ভুলাইতে ব্যস্ত নারীকে নমস্কার করিয়া সারদা মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাইলেন – ‘তোমার দখিণেশ্বরের শাশুড়ি’ বলিয়া। [1]

    কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নবদ্বীপের রাস্তায় দেয়ালে ঘুঁটে  দেয়ার সময় ঘোমটা খসিয়া পড়া নারীর লজ্জায় জিভ কাটিতে দেখিয়া সেই স্থানে ঐরূপ কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। [2]

    খর্বদেহ পাদুকা পরিহিত কৃশকায় বাঙালী আসলে শক্তি এবং তন্ত্রের সাধক। তাহার দেবী বিশালাক্ষী, নৃমুণ্ডমালিনী, লোলজিহ্বা, এক হস্তে খর্পর, অপর হস্তে ছিন্নমস্তক। তাঁহার ‘নিপতিত পতি শবরূপে পায়। নিগমে তাহার নিগুঢ় না পায়’।

    জনৈকা আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যাপিকা কলিকাতায় কালীমূর্তি দর্শনে উল্লসিত হইয়া খল খল হাসিয়াছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে তিনি  শায়িত শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বুকের উপর পদস্থাপন করিয়া দণ্ডায়মান ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি দেখেন নাই। [3]

    কিন্তু ইদানীং জনৈকা রাজনৈতিক বামা হররমার কালীমূর্তি বিষয়ক মন্তব্যে শুরু হইয়াছে তর্জা ঃ ধূম মচালে! ধূম মচালে!

    আসুন, কিঞ্চিৎ তলাইয়া দেখা যাক – শ্মশানবাসিনী দেবী কালিকার পুজায় আমিষ ও কারণবারির নৈবেদ্য কতদূর ঐতিহ্য সম্মত।

    “মজলো আমার মনভ্রমরা কালীপদ হৃদকমলে”

    বাঙালী বরাবরই কালীতে মজেছে। সারা ভারতের যেখানেই বাঙালীর পা’ পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি কালী মন্দির, সঙ্গে একটি অতিথিশালা, বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি ও ছোটখাট থিয়েটারের স্টেজ। এই হচ্ছে বাঙালীর পরিচয়।

    আমি নিজে কয়েক দশক আগে দিল্লির সবচেয়ে পুরনো কালীবাড়িতে টিকিট কেটে তিনদিন ছিলাম। পনের টাকায় তক্তপোষ, বিছানা, সকালের চা, জলখাবার ও দুবেলা ভাত ডাল মাছের ঝোল। ভাবা যায় !

    হ্যাঁ, কালীবাড়িতে মাছমাংস হয়, সে আপনি যতই নাক সিঁটকান গে’। বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পড়েছি পাঁচবছর। সেখানেও দু’বেলা আমিষ আহার।

    আর এইখানেই শুরু হয়েছে যত ঝামেলা! জনৈক বামা রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ কালীমাতার  আহারের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করায় শুরু হয়েছেঃ  হারে রে রে রে রে! কালীমাতার আমিষ ভোজন! এসব বলিস কী রে!

    গণ্ডগোলের মূলে হল  দুটো পুজোকে — কালীপুজো আর মহালক্ষ্মী পুজো - ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলার রাজনীতি।

    বাঙালীর কালীপুজো বনাম উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো

    নিঃসন্দেহে দুটো পুজোই দীপাবলীর রাতে হয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের দেবীর নাম মহালক্ষ্মী, তিনি আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দেবীর মত ধনদাত্রী।  

    তিনি আমাদের মা কালীর মত লোলজিহ্বা করালবদনী নন। তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ঝোলে না, তিনি নগ্নিকা নন। তাঁর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া, থুড়ি খর্পর,  থাকে না। পাশে  ডাকিনী যোগিনী, শেয়াল কিছুই নেই। তিনি আদৌ শ্মশানচারিণী নন, তাঁর প্রতিমার ধারে কাছে কোন যুদ্ধ বা রক্তারক্তি ব্যাপার নেই। তাঁর আবাস মানুষের গৃহে, সিন্দুকের পাশে।

    উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো করে দোকানদারেরা হালখাতা করে। অর্থাৎ ওদের গত বছরের দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ করে সেই খাতা বন্ধ করে লালশালুতে মোড়া নতুন খাতায় লিখে দেবীর পায়ে ছোঁয়ায়। কিন্তু বাঙালীর হালখাতা যে পয়লা বৈশাখে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে খর্চা আছে।

    কাজেই হিন্দি বলয়ে দেওয়ালির সময় নিরিমিষ খেতে হয়। আর আপনি যদি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে পুজোর বিধি নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চান তাহলে দেখবেন বলা হচ্ছে --

    কালীপুজোর সময় বাড়ির রান্নায় রসুন চলবে না। মাছ-মাংস দূর কী বাত! পাড়ায় ওসবের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

    আর একই বিধান দুর্গাপুজোর সময়েও, নবরাত্রির পুরো ন’দিন ধরে।

    আহা রে! বাঙালী অষ্টমীর দিন নবমীর দিন মাছ, কষা মাংস খাবে না, দশমীর দিন জোড়া ইলিশের দিকে তাকাবে না — এমন অলুক্ষুণে কথা কে কবে শুনেছে! আর সারাবছর কালীঘাটে মায়ের কাছে বলিপ্রদত্ত পশুর মাংস যে আমাদের মহাপ্রসাদ — এসব ভুলে যেতে হবে?

    মন ভাল করতে এবার একটি রামপ্রসাদী শুনুন। এই গানটি ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও বড় পছন্দ।

    ‘এবার কালী তোমায় খাব।
    ডাকিনী যোগিনী দুটা, তরকারি বানায়ে খাব,
    তোমার মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বলে সম্ভার চড়াব’।

    দেবী কালীর উৎপত্তি ও কালী মন্দির নিয়ে দুটি কথা

    দেবী কালী বৈদিক দেবী নন। বস্তুতঃ ঋগবেদে ইন্দ্র এবং অগ্নি হলেন প্রধান দেবতা। প্রায় ১০০০ শ্লোকের ৭০০ শ্লোকই এদের দুজনের মহিমা নিয়ে। বেদ পুরুষ প্রধান। দেবী বলতে উষা ও সরস্বতীকে নিয়ে দু’টি বা তিনটি শ্লোক।  আজকাল একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ তম সূক্তের (৮টি শ্লোক) মধ্যে কালীর উল্লেখ রয়েছে। কথাটি সর্বৈব ভুল। যে কেউ বেদের বই খুলে মিলিয়ে নিতে পারেন — ওই আটটি অনুবাকে দুর্গা বা কালীর কোন উল্লেখ নেই।

    কালীর উৎপত্তি পাওয়া যাবে তন্ত্রে এবং পুরাণকথায়। কালী হলেন দুর্গারই আরেক এবং প্রধান রূপ। দেবীভাগবতে বা আমাদের চণ্ডীপাঠে জানা যাচ্ছে যে শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং রক্তবীজের বধের জন্যে দেবী দুর্গার ক্রোধ উৎপন্ন হলে তাঁর ভ্রূকুটি থেকে ভীষণদর্শনা ভীমা কালীর উৎপত্তি।  যাতে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুর না জন্মায় তাই কালী এবং তাঁর দুই সহচরী ও সঙ্গের শৃগাল রক্ত পান করে নেয়।

    আবার পার্বতী বা সতী যখন নেমতন্ন না পাওয়া স্বামী শিবকে তাঁর শ্বশুরের যজ্ঞে জোর করে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইলেন তখন  তিনি দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে স্বামীকে দশদিকে আটকে দিলেন।

    শক্তিরূপা কালীর দশরূপ হল কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

    কালীর ছিন্নমস্তা রূপের বর্ণনা শুনুন।

    “ষষ্ঠে ছিন্নমস্তারূপ ধারণ করিলে,
    নিজ মুণ্ড ছিন্ন করি করেতে ধরিলে”।

    এবার কল্পনা করুনঃ দেবীর ছিন্নমস্তক  থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত তিনটি ধারায় উপচে পড়ছে, এবং তা পান করছে তাঁর দুই সহচরী এবং তিনি নিজে। কীভাবে? তাঁর বাঁ হাতে ধৃত নিজের ছিন্ন মুণ্ড নিজেরই রক্তধারা পান করছে!

    গড়পড়তা লোক এই দৃশ্যে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালী যে ভীষণের সাধনা করে।

    নজরুল গান বেঁধেছেন “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে দিতে কোল”।

    বিবেকানন্দ কবিতা লিখেছেনঃ
    “লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর, দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
    নাচে তারা উন্মাদ তাণ্ডবে, মৃত্যুরূপা মা আমার আয়”।
    (ইংরেজি থেকে অনুবাদ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

    “স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী”

    সর্বত্র কালী মূর্চ্ছিত শিবের বুকে এক পা তুলে দণ্ডায়মান। ডান পা তুললে দক্ষিণাকালী, বাঁ পা তুললে বামা। তাঁর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাই পুজোয় নৈবেদ্যে লাগে শুধু রক্তজবা নয়, কারণবারি (মদ), মৎস (মাছ), মাংস, মুদ্রা (শস্য, মতান্তরে আরাধনার বিশেষ আসনভঙ্গী)।

    কারণ তন্ত্রসাধনায় আবশ্যক উপকরণ হল পঞ্চ ম’কার। পাঁচটি ম --- মদ্য, মৎস্য, মাংস, মুদ্রা এবং মৈথুন। কালের প্রভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মৈথুন শুধু তন্ত্রমতে সাধনরত সাধক সাধিকার বা ভৈরব-ভৈরবীর জন্যে। এই শতাব্দীতে পশুবলি প্রথা প্রায় অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে কাপালিকদের নরবলি। কিন্তু এসব প্রথা যে ছিল তা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    মনে করুন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় নবকুমারকে বলি দেওয়ার চেষ্টা। কান পেতে শুনুন বিখ্যাত “নেচে নেচে আয় মা শ্যামা” গানটির দ্বিতীয় অন্তরাটি “মা, কোথায় পাব মহিষবলি, কোথায় পাব নরবলি”।

    কিন্তু মা কালীর নিত্যপুজোয় তন্ত্রমতে প্রথম চারটি ম’ আজও লাগে।

    দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র দেখুনঃ

    ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং দক্ষিণকালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং স্বাহা।।

    মন্দিরগুলোঃ

    অধিকাংশ প্রাচীন কালীমন্দিরের সম্বন্ধ সতীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই শক্তিপীঠের সঙ্গে। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে ১৮টি পড়েছে অবিভক্ত  বাংলাদেশে। পশ্চিম এবং পূর্বের ভাগ প্রায় সমান সমান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটিতে দেবীর নৈবেদ্য কী কী দেওয়া হয় দেখুন।

    * তারাপীঠ: একান্নটি পীঠের অন্যতম। আজও দেবীর ভোগে  দেওয়া হয় মাছের মাথা, কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংসের ভোগ, শোল পোড়া।

    * কালীঘাটঃ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যের বিচারে গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের পরেই কালীঘাটের কালীমন্দির। এখানে দেবীর ভোগ হয় মাছের কালিয়া  এবং পাঁঠার মাংসে। এছাড়া রয়েছে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই, ইলিশ চুনো মাছের টক।

    * বেহালার সিদ্ধ্বেশ্বরী কালী মন্দির ৩৫০ বছর পুরনো। এখানে বার্ষিক পুজোয় ভোগে দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, মাছ মাংস, চাটনি, পায়েস।

    * হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দুই শতাব্দী প্রাচীন। এখানে তন্ত্রমতে পুজো হয়, ফলে পঞ্চ মকারের প্রথম চারটি নিত্য ভোগে লাগে।

    * অম্বিকা কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের নিত্যদিনের অন্নভোগে মাছ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি ও ইলিশ।

    * ঘাটশিলার রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে আজও পশুবলি হয়, বলির বেদী ও হাড়িকাঠ প্রকাশ্যে রয়েছে।

    * উত্তরপাড়ার কাছে ভদ্রকালী মন্দির আনুমানিক ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়। সেখানেও তন্ত্রমতে মায়ের নৈবেদ্যে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। মা সারদা ঠাকুরের তিরোধানের পর একটি কালী মন্দির গড়ে তোলেন। তাতে ঠাকুরের প্রিয় জিওল মাছ ভোগ দেওয়া হয়।

    * বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা কালী মন্দিরে পশুবলি হয়, আগে নরবলি হত। আজকাল আঙুল কেটে মায়ের ঠোঁটে রক্ত ছোয়ানো হয়।

    * বোলপুরের কাছে সুরুলের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় বলি দেওয়া হয়; সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো-আখ।

    * বোলপুরের থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলার মহাশ্মশান। সেখানের কালীমন্দির ও একটি শক্তিপীঠ এবং তন্ত্রসাধনার জন্যে বিখ্যাত। ওখানে সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল। সুতরাং তন্ত্রমতে পুজোর সময় কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় তা পাঠকেরাই বুঝে নিন।

    * গুয়াহাটির স্টেশনের কাছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রসাধনার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।  পুরাণকথা অনুসারে এই শক্তিপীঠে সতীর যোনি পড়েছিল। এখানেও দেবীর ভোগে আমিষ দেওয়া হয়। পুজারীরা মনে করেন যে  আষাঢ় মাসে দেবী পার্বতীর মেন্সট্রুয়েশন হয়। তাখন তিন চারদিন ভক্তরা দর্শন করতে পারেন না। ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হয়ে যায়।

    * ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।

    * বাংলাদেশের যশোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বারো ভুঁইঞার অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্য  রায়ের নির্মিত। ওখানে ছাগবলি এখনও হয়। অন্যে পরে কা কথা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্বয়ং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের দু’দিনের সফরে গিয়ে ওই মন্দিরে দেবীদর্শন করে দেবীপ্রতিমার মাথায় মুকুট চড়িয়ে এসেছেন।

    * শেষ করছি রামকৃষ্ণদেবের  সাধনার সঙ্গে যুক্ত বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা বলে। ওখানে এখন বলি বহুদিন বন্ধ। তবে ১৯৬৮-তেও আমি মোষ বলি দেখেছিলাম। এখন দেবীর পুজোয় পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়, মাংস নয়।

    শেষ কথাঃ

    দেখতেই পাচ্ছেন, বৈদিক মন্ত্র এবং তন্ত্রসাধনার পথ সমান্তরাল। তন্ত্রমতের দার্শনিক ভিত্তি হল সাংখ্য দর্শন।  দেবী বা প্রকৃতি হলেন প্রধান এবং সক্রিয়। পুরুষ হলেন নির্বিকার এবং অচেতন। তাই অচেতন শিব বিনা দ্বিধায় শক্তিস্বরূপা কালীর পায়ের নীচে বুক পেতে পড়ে থাকেন।

    তন্ত্রের কালীমাতা  দিগম্বরী; হিন্দি বলয়ের কোন দেবী এমন নন। কোনও দেবীর হাতের খর্পর থেকে রক্ত ঝরে না। আমাদের মিশনের কালীকীর্তনে আছেঃ

             “বসন নাহিক গায়, পদ্মগন্ধে অলি ধায়,
            বামা চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে”।

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেখা যাচ্ছে মহিষাসুর বধের আগে দেবী দুর্গা সুরাপান করছেন এবং মহিষাসুরকে বলছেন “গর্জ গর্জ ক্ষণং মুঢ় মধু  যাবৎ পিবাম্যহং”।

    নে নে, যতক্ষণ মধুপান করছি, ততক্ষণ খুব গর্জন করে নে। তারপর তোর শেষ।
    মধুপানে দেবীর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠল। দেবী তারপর অসুরকে বধ করলেন।

    অর্থাৎ খাওয়াদাওয়া, পান করা নিয়ে আমাদের ধর্মে কোন বিরোধ নেই। এমনকি বৈদিক ধর্মের নিয়মবেত্তা মহর্ষি মনু তাঁর সংহিতায় বিধান দিচ্ছেনঃ ভোজনের যোগ্য পশুমাংস আহারে কোন পাপ হয় না। কারণ ব্রহ্মা খাদক এবং খাদ্য উভয়কেই ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছেন। (৫/৩০, মনুসংহিতা)।

    সেই খাদ্যগুলো কী? মাছ, হরিণ, কুক্কুট ভেড়া, খরগোস এবং বলি দিয়ে পবিত্র করা হয় এমন মাংস। (৩/২৬৭ থেকে ৩/২৭২; মনু সংহিতা)।

    আমার বিবেচনায় হিন্দুধর্ম এবং শাস্ত্র বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্র্যময়। যাঁরা দেওয়ালির রাতে কেবল ধনপ্রাপ্তির জন্যে নিরামিষ ভোগ দিয়ে মহালক্ষ্মীর পুজো করতে চান, তাই করুন। কিন্তু যে বাঙালীরা বারোয়ারি কালীপুজোয় খিচুড়িভোগ ছাড়াও ঘরে বা কালীমন্দিরে মায়ের পুজোয় মাছ-মাংসের নৈবেদ্য চড়াতে চান তাঁদের বাধা দেওয়া কেন?

    সবাইকেই কি জোর করে বাটা কোম্পানির সাত নম্বর মাপের জুতো পরাতে হবে? আপনারাই বলুন।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [1] গবেষক ও সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর প্রবন্ধ, ৪র্থ পিলার্স ডট কম, ৭ম জুলাই, ২০২২
    [2] ঐ
    [3] ঐ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:2107:955d:4c73:bd0a | ১৫ জুলাই ২০২২ ২১:২১737845
  • খুব ভালো লাগলো এই লেখা। রঞ্জনদা, মন্ত্রের মধ্যে হ্রীং, ক্রীং, হুং এই শব্দগুলোর মানে কী? এগুলো তো সংস্কৃত নয় মনে হয়? তাহলে কোন ভাষা?
  • Ranjan Roy | ১৫ জুলাই ২০২২ ২১:৪৫737846
  • সত্যি বলতে কি আমি ঠিক জানি না। এই সব তান্ত্রিক মন্ত্রের ভাষা সংস্কৃত হলেও কিছুটা সান্ধ্যভাষার মত। এগুলোকে বীজ মন্ত্র বলে। যেমন ওঁ মানে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, হ্রীং মানে কালিকা, ধূম মানে দুর্গা, হ্রীং মানে মহা লক্ষ্মী। 
    তবে ওঁ বাদে বাকিগুলো  ঠিক তৎসম , মানে সংস্কৃত  রুট থেকে এসেছে বলে আমার মনে হয় না। আমার ভুল হতে পারে।
     
    হয়ত দীপ বা এলেবেলে এ নিয়ে কিছু আলোকপাত করতে পারেন।
     আর কীকরে যেন দু'তিনবার পোস্ট হয়ে গেছে, অ্যাডমিন যদি ডিলিট করেন তো ভাল হয়।
  • 4z | 2606:40:4d4:35ab::a61:d575 | ১৫ জুলাই ২০২২ ২২:৪০737847
  • রঞ্জনদার লেখা দুতিনবার পোস্ট হবে না এ হতে পারে! 
     
    আমাদের বাড়ির কালীপুজোয় ছোট থেকে দেখে আসছি আমিষভোগ আর কারণবারি দিয়ে পুজো করতে। হঠাৎ করে এই কথাগুলো উঠতে দেখে তাই অবাক লাগছে। যদিও এই সরকারের আমলে কোন কিছুতেই আর অবাক হওয়া উচিত না।
  • এলেবেলে | ১৫ জুলাই ২০২২ ২২:৫৪737848
  • রঞ্জনবাবুর প্রাসঙ্গিক লেখাটি নিয়ে ঠিক তিনটে কথা বলার।
     
    ১. ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং... 'দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র' নয়, এটি আদতে দক্ষিণাকালীর প্রণাম মন্ত্র।
     
    ২. দক্ষিণাকালীর মূর্তির উদ্ভব নিয়ে আগমবাগীশের ওই কৃষ্ণবর্ণা গোপবালার গপ্পোটি বহুপ্রচলিত ঢপের কেত্তন। এই কেত্তনটি সম্ভবত প্রথম গান নারায়ণ সান্যাল, তারপর পল্লবিত হয়ে তা বর্তমান গপ্পের আকার নেয়। আগমবাগীশ মূলত মহানির্বাণ তন্ত্রকে অনুসরণ করে এই মূর্তি প্রচলন করেন যার অত্যন্ত গূঢ় তাৎপর্য বিদ্যমান।
     
    ৩. রামপ্রসাদ বা রামকৃষ্ণ কালীকে বাংলার শ্যামা মায়ের আঙ্গিকে গড়েপিটে নিলেও প্রকৃতপক্ষে মূলত বাংলার স্বদেশিদের হাতফেরতা হয়ে কালী আমবাঙালির আরাধ্যা দেবতা হয়ে ওঠেন।
  • Ranjan Roy | ১৬ জুলাই ২০২২ ০০:০৬737849
  • এলেবেলে
      অনেক ধন্যবাদ।
     
    অনেক  আগে, মানে ছোটবেলায়,  আমাদের বাড়িতে  মহানির্বাণ তন্ত্রের একটি ছবি ছিল। লুকিয়ে চুরিয়ে অবাক হয়ে দেখতাম। আজকাল সেসব নিয়ে ওপেন ফোরামে কথাবার্তা বললে কেস খেয়ে যেতে পারি। কী দিনকাল পড়েছে!
     
    ফোর্জি,
      ঃ)))
  • শিবাংশু | ১৬ জুলাই ২০২২ ১৮:০৯737854
  • @রঞ্জন, 
    আমার বইটিতে এসবের বিশদ আলোচনা তো আপনি পড়েছিলেন :-)
    আপনার কাছে কি বইটি নেই? 
  • Ranjan Roy | ১৬ জুলাই ২০২২ ২২:৫০737855
  • শিবাংশু
     
     একদম ঠিক বলেছেন।
    কিন্তু ডিসেম্বর মাসে ওটা কোলকাতার বিকাশ গণচৌধুরি পড়তে নিয়েছে।
    ওটা হাতের কাছে থাকলে---।
  • Swati Ray | 117.194.33.254 | ১৮ জুলাই ২০২২ ১০:০৯737867
  • বাঙালীর ধর্মে যে কি আছে আর কি নেই এটা আমি কোনদিনই ভেবে কূল পাই না। তত্ত্ব কথা  নিয়ে বলছি না , লোকাচার নিয়ে বলছি। গোটা বাংলা যখন পুজোর সময় মাছ মাংস খায়  রাস্তায় রাস্তায় রোলের দোকান আর বিরিয়ানির স্টল , তখন আমার বাপের বাড়ির নিয়ম ছিল পুজোর মধ্যে পাক্কা নিরামিষ আর দশমীতে গিয়ে ইলিশ দিয়ে আমিষ মুখ। তাই এই সব আমিষ/ নিরামিষ  মদ্য মাংস গ্রহণ /বর্জন এই সব নিয়ে বিতর্ক দেখলে খুব কনফিউজড লাগে !  ধুর বাবা যার যা ইচ্ছে তাই করুক না ! এই সব লোকাচার পালন  করলেও লবডঙ্কা  না করলেও তো কপালে তাই ! 
  • Kishore Ghosal | ১৯ জুলাই ২০২২ ২৩:৩৮737897
  • ওঁ বৈদিক বা উপনিষদের মন্ত্র - এই শব্দকে আদি ও প্রণব মন্ত্র বলা হয়।  বাকি শব্দগুলি অনার্য শব্দ - তন্ত্রের বীজমন্ত্র - পরে এগুলির সংস্কৃতায়ন হয়ে তন্ত্র দেবীপূজায়  আবশ্যিক হয়ে গেছে। মা সরস্বতীর মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠায় এরকমই আরও কিছু একাক্ষরী বীজ মন্ত্রের প্রচলন আছে,  "ওঁ আং হ্রীং ক্রোং যং রং লং বং শং ষং সং হৌং"।    
     
    উত্তরপাড়া/কোতরং অঞ্চলে শকুন্তলা কালীবাড়ি খুবই বিখ্যাত। ছোকরা বয়সে কিছুদিন উত্তরপাড়ায় যখন ছিলাম, শুনেছি বিশেষবিশেষ দিনে মায়ের সামনে কম করে দু/তিনশ "পাঁঠা পড়ত" (এই ভাষাটাই শুনেছিলাম, আজও মনে আছে)। সেই বলির রক্তে ভেসে যেত মায়ের নাট মন্দির - ভক্ত মহিলা ও পুরুষ - সেই রক্ত নিয়ে গায়ে মাথায় মাখত - আরও ভয়ংকর ব্যাপার কোলের ছেলে-মেয়েদের সেই রক্তে গড়াগড়ি দেওয়াত। এই শুনে আমার অবিশ্যি ভক্তি উথলে ওঠেনি, এবং বিশেষ ওই দিনগুলিতে কোনদিন যেতেও ইচ্ছে হয়নি। 
     
    বছর ছয়েক আগে কামাখ্যা দর্শনে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল, সে সময় বলির ঘরে (ওখানে মায়ের সামনে বলি হয় না) মায়ের নামে পাঁঠা "উচ্ছ্যুগ্যু" হওয়ার পর বলির ঘরে এনে বলি দেওয়া হয়। শম্বুক গতিতে চলতে থাকা লাইনের জন্যে প্রায় আধঘন্টা ওই বলিঘরের কাছেই থাকতে হয়েছিল, এবং অন্ততঃ পনের ষোলোবার - পাঁঠাটির ম্যাঅ্যাঅ্যা (মা) ডাক আর ঘিপ-শব্দে তার মায়ের কাছে  নিশ্চিত পৌঁছে যাওয়ার বার্তাটি টের পেয়েছিলাম। 
     
    মায়ের এই প্রসাদি পাঁঠা কিন্তু নিরামিষ ভাবে  রান্না করার নিয়ম।  তাতে প্যাঁজ, রসুন দেওয়া চলবে না - আদা, ধনে, জিরে, আর গরমমশলা দিয়ে রান্না।  বছরে দু চারদিন "নিরামিষ-মাংস" বেশ লাগে।   
  • Kishore Ghosal | ১৯ জুলাই ২০২২ ২৩:৪৫737898
  • "পনের ষোলোবার - পাঁঠাটির"   ভুল হয়েছে - ...পনের-ষোলটি পাঁঠার -হবে...  
  • দীপ | 42.110.136.195 | ১৯ জুলাই ২০২২ ২৩:৪৮737899
  • তা মা তো পাঁঠা খান, সেইজন্য মায়ের সামনে বলি দেওয়া হয়। মা তো ঘাসপাতা চিবোন না। এই লেখায় তো সেটাই বলা হয়েছে।
     
  • ar | 173.48.167.228 | ২০ জুলাই ২০২২ ০৯:১৭737905
  • অনেক জায়্গায় আবার, বিশেষ করে বাড়ির পুজো হলে, নিয়মরক্ষার জন্য চালকুমড়ো বলি দেয়। মা চালকুমড়ো খেয়ে রেগে যান বলে শোনা যায়নি।
  • | ২০ জুলাই ২০২২ ১১:২৫737906
  • উত্তরপাড়া কোতরং নয় শকুন্তলা কালীবাড়ি কোন্নগরে। কোন্নগর একেবারে আলাদা একটা জনপদ নিজস্ব ইতিহাস নিয়েই বহাল। 
     
    শকুন্তলা কালীবাড়ি আসলে ডাকাতে কালী ছিল। তা পুজো হয় বৈশাখমাসের শুরু দিকে এক শনিবারে। কিছু একটা তিথি আছে মনে নেই। পুজোর দিনে আগে,  মানে সত্তর ও আশির দশকের শুরু দিকে ,  হাজার পাঁচেকের মত পাঁঠা এক রাতেই বলি হত। পাঁঠা ছাড়াও এখানে মোষবলিও হত কিছু কিছু। মূলত লোকে মানসিক করে রাখত। সেই পাঁঠাবলির লিস্টিতে নাম লেখানোর জন্য একমাস আগে থেকে খাতা খুলত এবং লোকে গিয়ে লিখিয়ে নম্বর নিয়ে আসত। যেহেতু এই পুজোর নিয়ম সূর্য ওঠার আগেই কালী বিসর্জন  দিতে হবে তাই একরাতে যতটা সম্ভব বলি হত, বাকীগুলো এবং আরো সব মানসিকের বলি টলি গোটা বৈশাখমাস জুড়ে শনি আর মঙ্গলবার হত। এবং হ্যাঁ বলির রক্ত মাখামাখি পাঁঠা বা মোষের মুন্ডু আলাদা করে বিক্রি করা ইত্যাদি রমরমিয়ে চলত। 
     
    এরপরে ঐ আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় বিজ্ঞান সংসদ থেকে এত এত বলির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু হয়, বলি বন্ধ করার আবেদন নিয়ে আমরা তখন কোন্নগর নবগ্রাম জুড়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি, লোকজনকে বুঝিয়েছি। আমাকে প্র‌্যাকটিকালি নিজের বাড়ি থেকে শুরু করতে হয়েছিল। যাই হোক অনেকে বুঝলেও অনেকে বোঝেও নি। এছাড়া আয়োজক পুজকদের এবং আরো কিছু ব্যবসার খাতিরে পুরো বন্ধ করার বিরুদ্ধেও জনমত গড়ে তুলতে নামে আয়োজক তরফের লোকজন। সম্পূর্ণ বন্ধ করা যায় নি, তবে অনেক কমে এসেছিল বলির সংখ্যা। পুজোর রাতে সাড়ে সাতশো আটশোয় দাঁড়ায় (যেটাও আমাদের মতে অতিইই বেশী। ) এরপরে তো নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে আবার তাবিজ কবচ পুজোআচ্চা বাড়তে শুরু করে করে। এখন নাকি ঐ রাতে পনেরোশো মত হয়। 
  • Ranjan Roy | ২০ জুলাই ২০২২ ১৩:৪৫737911
  • ছোটবেলায় পুজো পুজো খেলার সময় সবাই সমস্বরে চেঁচাতামঃ জয় মা কালী! পাঁঠাবলি।
      আসলে কালীমাতার অনুসঙ্গে পাঁঠাবলি কথাটা না এসেই পারে না।  এখন এই কথাটা বললেই গোবলয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে ঘা লাগে! 
       এদিকে যে আমার  শাক্ত ঐতিহ্যের বাঙালী অনুভূতিতে ঘা লাগছে! সেই নালিশ শুনবে কোন বিচারক?
  • Kishore Ghosal | ৩১ জুলাই ২০২২ ০৮:৩৭738062
  • @ দবাবু, উত্তরপাড়ায় সেই ১৯৯০-৯১ সালে কিছুদিন বাস করেছিলাম, তাই শকুন্তলা কালীবাড়ির সঠিক অবস্থানটা ভুল করে ফেলেছি।  
  • Abhyu | 97.81.101.181 | ৩১ জুলাই ২০২২ ০৯:২৪738063
  • স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপুজোয় বলি দেবার বন্দোবস্ত করছিলেন। শ্রীশ্রীমা সারদাদেবী সেটা বন্ধ করেন। বেলুড় মঠে পশুবলি হয় না। তাতে তো কিছু অসুবিধে হয়েছে বলে শুনিনি।
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১১:১৩738064
  • সারদা দেবী বিবেকানন্দকে পশুবলি দিতে নিষেধ করেছিলেন কারণ বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসী বলি দিতে পারেনা। সে সর্বপ্রাণীকে অভয় দিয়েছে। তাই সন্ন্যাসীর পক্ষে পশুবলি নিষিদ্ধ। সারদা দেবী সেজন্য‌ই বারণ করেছিলেন।
    তবে সরাসরি বলি না দিলেও অষ্টমীর দিন, কালীপূজার দিন দেবীকে মাংস উৎসর্গ করা হয়। কালীঘাট থেকে মাংস নিয়ে আসা হয়। সেটা অবশ্য বলি ছাড়া সম্ভব নয়।
    আর বিবেকানন্দের জন্মতিথিতে বিবেকানন্দকে নানারকম মাংসের পদ দেওয়া হয়।
  • দীন | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১১:২৫738065
  • আর সারদাদেবী সন্ন্যাসীকে বলি দিতে নিষেধ করেছিলেন ঠিক‌ই, কিন্তু গৃহীকে কোনোরকম নিষেধ করেননি। জয়রামবাটীতে সিংহবাহিনীর মন্দির আছে, মুখোপাধ্যায় বংশ (সারদা দেবীর পিতৃকুল) তার পূজারী। মাঝে মাঝে সেখানে বলি দেওয়া হয়। সারদা দেবী সেখানে কোনো বারণ নিষেধ করেন নি, বরং সেই মাংস রান্না করে খাইয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিচারণায় তার উল্লেখ আছে। ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য তাঁর গ্রন্থে এসব তথ্যের উল্লেখ করেছেন।
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১১:৩৩738066
  • একবার রাধুর‌ (সারদা দেবী র ভাইয়ের মেয়ে, ভাইয়ের অকালমৃত্যু ও এইঘটনায় তার স্ত্রীর মস্তিষ্ক বিপর্যয়ের পর রাধু সারদা দেবীর কাছেই পালিত হয়) স্বামী মন্মথের মাংস খাওয়ার ইচ্ছে হয়। জনৈক ব্যক্তি বাজার থেকে মাংস কিনে আনার কথা বললে সারদা দেবী বলেন, "ও তো বৃথামাংস। কালীঘাট থেকে নিয়ে আসবে।" 
     
     
     
     
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১১:৩৯738067
  • আসলে আমাদের মতো ভণ্ড ও ন্যাকা জাত খুব কমই আছে। আমরা এখানে কালী মদ, মাংস খায় বলে লাফাচ্ছি আর বলির কথা শুনলেই ন্যাকাকান্না  জুড়ছি।
    আর রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাটন, চিকেন সাঁটাতে কোনো সমস্যা নেই; খালি বলি দিলেই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা হয়ে যায়!
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১১:৪১738068
  • নাকি সেটা খাওয়ার পর বাতাপির মতো পেট থেকে জ্যান্ত হয়ে বেরিয়ে আসে?
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১২:৩৮738069
  • আর‌ ঋগ্বেদের‌ দশম মণ্ডলে‌ দেবীসূক্তম আছে। এখানে দুর্গা, কালী র উল্লেখ নেই বটে কিন্তু শক্তিবাদের মূলচিন্তার উৎস পাওয়া যায়। সেইজন্য দুর্গাপূজার সময় বা চণ্ডীপাঠের শুরুতে দেবীসূক্তম পাঠ করা হয়।
    প্রসঙ্গত রেডিওতে মহিষমর্দিনী অনুষ্ঠানে এটি সমবেত কণ্ঠে গীত হয়। এটি বহুলপ্রচারিত, তাই এর অনুবাদ আর দিচ্ছি না।
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১৫:৩৪738070
  • ঋগ্বেদ ও সামবেদে আমরা রাত্রিসূক্তম পাই। এই রাত্রিদেবীর কল্পনা থেকেই পরবর্তীকালে কালী ও ভুবনেশ্বরী রূপকল্পনা এসেছে।
    সামবেদের অন্তর্গত কেনোপনিষদে ব্রহ্মবিদ্যাস্বরূপিণী উমা হৈমবতীর উল্লেখ আছে। অর্থাৎ দেবীই স্বয়ং ব্রহ্ম।
    "কালী ব্রহ্ম জেনে মর্ম ধর্মাধর্ম সব ছেড়েছি।" (রামপ্রসাদ)
       
    যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকে অম্বিকা ও দুর্গা শব্দের উল্লেখ পাই। ইনি অগ্নিবর্ণা, স্বীয় তাপে শত্রুদহনকারিণী, কর্মফলদাত্রী।  ইনি কন্যাকুমারী। অর্থ দেবী কন্যা ও কুমারী। অর্থাৎ এখানে দেবী কুমারী রূপে পূজিতা। এই কল্পনাই পরবর্তীকালে কুমারী পূজায় রূপ নিয়েছে।
     
    প্রসঙ্গত বৈদিক সাহিত্যে নির্ঋতি দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ইনি ভীষণা, প্রলয়রূপিণী। চণ্ডীতেও দেবীকে নির্ঋতিরূপিণী বলে নমস্কার করা হয়েছে।
     
    শ্রদ্ধেয় যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি মহাশয়ের মতে যজুর্বেদের রুদ্রযজ্ঞ ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে। রুদ্র ও রুদ্রাণী অভিন্ন। শুধু তাই নয়, রুদ্র নিষ্ক্রিয় আধারস্বরূপ মাত্র, শক্তিস্বরূপিণী রুদ্রাণীর দ্বারাই সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাই রুদ্রাণীই ক্রমশ প্রাধান্য পেয়েছেন। এই কল্পনাই আরো নানা চিন্তাভাবনা, দার্শনিক তত্ত্ব, আচার-অনুষ্ঠান গ্রহণ করে দুর্গাপূজায় পরিণত হয়েছে।
     
    তবে দেবী শুধুমাত্র রৌদ্রী নন; তিনি ব্রাহ্মী, বৈষ্ণবী, রৌদ্রী। সমস্ত কিছুই তিনি। তাঁর সৃজনীশক্তির দ্বারা ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু তাঁর স্থিতিশক্তির দ্বারা পালন করেন, তমোগুণের দ্বারা শিব সংহার করেন। চণ্ডীতে এই তত্ত্ব খুব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। সগুণরূপে তিনি বিশ্বাত্মিকা ত্রিগুণময়ী, নির্গুণস্বরূপে বিশ্বাতীতা পরব্রহ্মস্বরূপিণী।
  • দীপ | 42.110.147.165 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১৬:৫৮738072
  • বস্তুত বেদ ও শক্তিসাধনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ভারতীয় দর্শনের সগুণ উপাসনার সমস্ত শাখার উৎস বেদান্ত দর্শন যেখান থেকে দ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত, অদ্বৈত প্রভৃতি শাখার সৃষ্টি হয়েছে। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত - সমস্ত শাখাই এই দার্শনিক চিন্তার ফলশ্রুতি। 
    চণ্ডীর প্রথম চরিত্র ঋগ্বেদস্বরূপা, মধ্যমচরিত্র যজুর্বেদস্বরূপা ও উত্তরচরিত্র সামবেদস্বরূপা। খুব স্পষ্টভাবেই বেদ ও শক্তিবাদের অভিন্নতা স্পষ্ট হয়।
    বৈদান্তিকের ব্রহ্ম ও শাক্তের শক্তি অভেদ। অদ্বৈতবাদীর দৃষ্টিত যিনি নির্গুণ চৈতন্যস্বরূপ ব্রহ্ম, শক্তিসাধকের কাছে তিনিই জগদ্ব্যাপিনী শক্তি, জগন্মাতা। চণ্ডীতে দেবী তাই শুম্ভকে বলেন, "একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মমাপরা।"
    (একমাত্র আমিই এই জগতে বিরাজিত, আমি ব্যতীত দ্বিতীয়া আর কে আছে?)
    এই অর্ধশ্লোকে সমগ্র অদ্বৈতবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ বেদান্ত ও তন্ত্রে কোনো বিভেদ নেই। উভয়ের সিদ্ধান্ত‌ই মূলত এক। বৈদান্তিকের ব্রহ্ম, শাক্তের মহামায়া। পার্থক্য এটুকুই যে শাক্তের কাছে জগৎ পুরোপুরি মিথ্যা নয়। অবশ্য‌ই এই জগৎ অনিত্য, প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তনশীল; কিন্তু এ জগন্মাতার অসীম লীলাবৈচিত্রের প্রকাশ। তাই এই জগৎ শাক্তের দৃষ্টিতে পুরোপুরি মিথ্যা নয়।
  • দীপ | 42.110.145.47 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১৯:২২738075
  • অদ্বৈতবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা শঙ্কর নিজেই শক্তিবন্দনা করেছেন। তাঁর ভাবনার অসামান্য প্রকাশ ঘটেছে ভবান্যষ্টকম, দেব্যপরাধক্ষমাপন স্তোত্রম, মীনাক্ষীপঞ্চকম, আনন্দলহরী প্রভৃতি স্তোত্রে। আনন্দলহরী স্তোত্রের প্রথমেই তিনি বলেছেন, "শক্তির সঙ্গে যুক্ত বলেই শিব এই জগৎ নির্মাণে সক্ষম, নচেৎ তিনি স্বীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালনেও সমর্থ নন।" দেব্যপরাধক্ষমাপন স্তোত্রেও এই এক‌ই মনোবৃত্তি প্রকাশিত হয়েছে। এই স্তবের শেষ শ্লোকে শঙ্কর বলেছেন, "জননি, আমার মতো পাপীও কেউ নেই, তোমার মতো পাপনাশিনীও কেউ নেই। অত‌এব হে মহাদেবি, আমাকে নিয়ে তোমার যা ইচ্ছা, তাই করো।" ভবান্যষ্টকম স্তবের প্রত্যেক স্তবকের শেষে শঙ্কর বলেছেন, "হে ভবানি, তুমি, তুমি, তুমিই আমার একমাত্র গতি।" জগন্মাতার প্রতি ঐকান্তিক আবেগ শঙ্করের রচনায় প্রকাশিত। শৃঙ্গেরী মঠে শঙ্কর দক্ষিণভারতীয় শক্তিসাধকের ইষ্টদেবী রাজরাজেশ্বরী ত্রিপুরসুন্দরীকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। 
    অর্থাৎ শঙ্করের চিন্তায় বেদান্ত ও শক্তিবাদের সমন্বয় ঘটেছে।
    চৈতন্য‌ও শক্তিবন্দনা করেছেন। চৈতন্যভাগবতে এর উল্লেখ রয়েছে।
    শঙ্করের মতো রামকৃষ্ণের চিন্তাতেও বেদান্ত ও শক্তিবাদ মিলিত হয়েছে। ভৈরবী ব্রাহ্মণীর কাছে তিনি তন্ত্রমতে সাধনা করেছেন, আর তোতাপুরীর কাছে অদ্বৈতমতের সাধনা সম্পন্ন করেছেন। এই উভয় চিন্তাই তাঁর মধ্যে সম্মিলিত হয়েছে। সেজন্য‌ই রামকৃষ্ণ বলেন, "কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্ম‌ই কালী। ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ।" কথামৃতে রামকৃষ্ণ ও কেশব সেনের কথোপকথন পাওয়া যায়, যেখানে শক্তিবাদ ও অদ্বৈতবাদের ঐক্য স্থাপিত হয়েছে।
    এক‌ইভাবে শ্রদ্ধেয় শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব এবং তাঁর সুযোগ্য ছাত্র ও শিষ্য শাক্তদর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দেখিয়েছেন বেদ ও তন্ত্র পরস্পরবিরোধী তো নয়‌ই, বরং তন্ত্র বেদান্তদর্শনকে সর্বসাধারণের জন্য সহজভাবে প্রকাশ করেছে।
  • দীপ | 42.110.145.47 | ৩১ জুলাই ২০২২ ১৯:২৫738076
  • সুযোগ্য ছাত্র স্যার জন উডরফ
  • দীপ | 2402:3a80:196f:9a1c:18e8:aef9:f013:45a9 | ৩১ জুলাই ২০২২ ২০:১৩738077
  • পশুবলির মূল উদ্দেশ্য সমস্ত পশুভাবকে নাশ করে দিব্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হ‌ওয়া। এটিই মূল তাৎপর্য‌। সাধক যতদিন এই স্তরে উন্নীত না হন, ততদিন রূপক হিসেবে বাহ্যিক বলিদান করেন। সেক্ষেত্রে পশু বা ফল বলিদান করা যায়। 
  • দীপ | 2402:3a80:196f:9a1c:18e8:aef9:f013:45a9 | ৩১ জুলাই ২০২২ ২০:৩৭738078
  • এবং কুমারী পূজা।
    শক্তিসাধকের দৃষ্টিতে সমগ্র জগৎ মহাশক্তির পরিণাম। এই মহাশক্তিই দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত। ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত হলেও তিনি এক। এই অনাদি, অনন্ত শক্তিই জগন্মাতা। ক্ষুদ্র পরমাণু থেকে সর্বত্র‌ই তিনি প্রকাশিত। 
    জগন্মাতা শক্তিরূপে সর্বত্র প্রকাশিত হলেও নারীশরীরে তাঁর প্রকাশ বেশী। নারীশরীর জগন্মাতার সৃজনী ও পালনীশক্তির প্রকাশ। তাই নারীশরীর শক্তিসাধকের কাছে জগন্মাতার প্রতীক। এমনকি  সমস্ত স্ত্রীপ্রাণী তাঁর কাছে জগন্মাতার প্রতীক রূপে পবিত্র। তাই প্রত্যেক নারীশরীরকে তিনি জগন্মাতার প্রতীক রূপে সম্মান প্রদর্শন করেন। কুমারী, যুবতী, প্রৌঢ়া, বৃদ্ধা- সব নারীই তাঁর কাছে পূজনীয়।
     
  • দীপ | 2402:3a80:196f:9a1c:18e8:aef9:f013:45a9 | ৩১ জুলাই ২০২২ ২০:৫৪738079
  • এর আগেই দেখিয়েছি দুর্গাসূক্তমে দেবী কন্যাকুমারী নামে অভিহিতা। এর অর্থ দেবী কন্যা ও কুমারী। এই চিন্তাই পরবর্তীকালে পুরাণ ও তন্ত্র দ্বারা আরো সমৃদ্ধ হয়ে বর্তমান কুমারী পূজায় রূপ নিয়েছে। 
    চণ্ডীতেও বলা হয়েছে, "হে দেবি, সমস্ত নারী আপনার‌ই অংশস্বরূপিণী।" (একাদশ অধ্যায়, নারায়ণী স্তূতি)
    অর্থাৎ শক্তিসাধকের কাছে নারী জগন্মাতার প্রতীক।
    এই চিন্তা পরবর্তীকালে আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। দেবী পুরাণে দেবীপূজা উপলক্ষ্যে কুমারী ও অন্যান্য নারীদের সম্মান প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।
    এটিই শক্তিসাধনার মূল‌ কথা। 
    শক্তিসাধক যখন উপলব্ধির সর্বোচ্চ শিখরে, তখন তিনি সমগ্র জগৎকে শক্তিময় রূপে উপলব্ধি করেন। প্রত্যেক নারীশরীর তাঁর কাছে জগন্মাতার প্রতীক। এই সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হ‌ওয়াই শক্তিসাধকের লক্ষ্য।
  • Abhyu | 97.81.101.181 | ৩১ জুলাই ২০২২ ২২:৫৫738080
  • সর্বসমক্ষে একটা প্রাণীর ঘ্যাঁচ করে গলা কাটার মধ্যে একটা বীভৎসতা আছে। প্রাণীটা যত বড় হয়, তত বেশি রক্ত ছেটে, তত বেশী বীভৎস হয়ে ওঠে ব্যাপারটা। সেই জন্যেই পাড়ার দোকানে আপনার সামনে মুরগী কেটে দেয়, কিন্তু পাঁঠা কাটে না। সেই জন্যেই আপনি আপনার বাচ্চাকে কোলে করে মুরগী কাটা দেখাতে নিয়ে যান না। সেই জন্যেই দময়ন্তীদিরা বলির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে (আর অন্য কারণও আছে)।

    এই নিয়ে ১৯০০ সাল নাগাদ একটা উপন্যাসও লেখা হয়েছিল। আজ ২০০০ সাল পেরিয়ে আরো কুড়ি বছর পেরিয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন