এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০২২ | ৪৪৮৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    বড় সংকটে পড়িয়াছি। আমি জানিতাম বাঙালী ঘোর কালীভক্ত। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আমরা সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এবং অনেকের বিরচিত কালীকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনিয়া আশৈশব লালিত হই। কলিকাতায় এবং তার উপকণ্ঠে ঐতিহ্যশালী মন্দির বলিতে কালীঘাটের কালী মন্দির, বঊবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, ঠনঠনিয়ার কালীবাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির। কোনটি ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন, কোনটির বয়স ৩০০ বছর।

    বাঙালী প্রাচীন কালে ডাকাইতি করিতে, বর্তমান কালে নির্বাচনের অথবা ফুটবলের ময়দানে নামিতে আগে কালীমাতার প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকায়। বাঙালী কম্যুনিস্ট নেতা কংকালীতলার শ্মশানে পূজা দিয়া সগর্বে ঘোষণা করেন যে তিনি একাধারে বাঙালী,  কালীভক্ত এবং কম্যুনিস্ট। স্বাধীনতার সংগ্রামেও বাঙালী কালীমাতার দানবদলনী রূপ দেখিয়া প্রেরণা পায়। চারণকবি মুকুন্দদাস গাহিয়াছেনঃ

    “দানবদলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব রাখিবে বঙ্গে?
    সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান,  থাকে থাকুক প্রাণ,
    যায় যাবে রঙ্গে”।

    ইহার পর ঠাকুর রামকৃষ্ণ আসিয়া মা কালীর সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি সর্বত্র নারীর মধ্যে মা কালীর দরশন করিলেন। এমনকি চিৎপুরের পথে সন্ধ্যায় শান্তিপুরী শাড়ি পরা মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা শোভিতা পুরুষের মন ভুলাইতে ব্যস্ত নারীকে নমস্কার করিয়া সারদা মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাইলেন – ‘তোমার দখিণেশ্বরের শাশুড়ি’ বলিয়া। [1]

    কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নবদ্বীপের রাস্তায় দেয়ালে ঘুঁটে  দেয়ার সময় ঘোমটা খসিয়া পড়া নারীর লজ্জায় জিভ কাটিতে দেখিয়া সেই স্থানে ঐরূপ কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। [2]

    খর্বদেহ পাদুকা পরিহিত কৃশকায় বাঙালী আসলে শক্তি এবং তন্ত্রের সাধক। তাহার দেবী বিশালাক্ষী, নৃমুণ্ডমালিনী, লোলজিহ্বা, এক হস্তে খর্পর, অপর হস্তে ছিন্নমস্তক। তাঁহার ‘নিপতিত পতি শবরূপে পায়। নিগমে তাহার নিগুঢ় না পায়’।

    জনৈকা আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যাপিকা কলিকাতায় কালীমূর্তি দর্শনে উল্লসিত হইয়া খল খল হাসিয়াছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে তিনি  শায়িত শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বুকের উপর পদস্থাপন করিয়া দণ্ডায়মান ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি দেখেন নাই। [3]

    কিন্তু ইদানীং জনৈকা রাজনৈতিক বামা হররমার কালীমূর্তি বিষয়ক মন্তব্যে শুরু হইয়াছে তর্জা ঃ ধূম মচালে! ধূম মচালে!

    আসুন, কিঞ্চিৎ তলাইয়া দেখা যাক – শ্মশানবাসিনী দেবী কালিকার পুজায় আমিষ ও কারণবারির নৈবেদ্য কতদূর ঐতিহ্য সম্মত।

    “মজলো আমার মনভ্রমরা কালীপদ হৃদকমলে”

    বাঙালী বরাবরই কালীতে মজেছে। সারা ভারতের যেখানেই বাঙালীর পা’ পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি কালী মন্দির, সঙ্গে একটি অতিথিশালা, বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি ও ছোটখাট থিয়েটারের স্টেজ। এই হচ্ছে বাঙালীর পরিচয়।

    আমি নিজে কয়েক দশক আগে দিল্লির সবচেয়ে পুরনো কালীবাড়িতে টিকিট কেটে তিনদিন ছিলাম। পনের টাকায় তক্তপোষ, বিছানা, সকালের চা, জলখাবার ও দুবেলা ভাত ডাল মাছের ঝোল। ভাবা যায় !

    হ্যাঁ, কালীবাড়িতে মাছমাংস হয়, সে আপনি যতই নাক সিঁটকান গে’। বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পড়েছি পাঁচবছর। সেখানেও দু’বেলা আমিষ আহার।

    আর এইখানেই শুরু হয়েছে যত ঝামেলা! জনৈক বামা রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ কালীমাতার  আহারের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করায় শুরু হয়েছেঃ  হারে রে রে রে রে! কালীমাতার আমিষ ভোজন! এসব বলিস কী রে!

    গণ্ডগোলের মূলে হল  দুটো পুজোকে — কালীপুজো আর মহালক্ষ্মী পুজো - ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলার রাজনীতি।

    বাঙালীর কালীপুজো বনাম উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো

    নিঃসন্দেহে দুটো পুজোই দীপাবলীর রাতে হয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের দেবীর নাম মহালক্ষ্মী, তিনি আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দেবীর মত ধনদাত্রী।  

    তিনি আমাদের মা কালীর মত লোলজিহ্বা করালবদনী নন। তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ঝোলে না, তিনি নগ্নিকা নন। তাঁর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া, থুড়ি খর্পর,  থাকে না। পাশে  ডাকিনী যোগিনী, শেয়াল কিছুই নেই। তিনি আদৌ শ্মশানচারিণী নন, তাঁর প্রতিমার ধারে কাছে কোন যুদ্ধ বা রক্তারক্তি ব্যাপার নেই। তাঁর আবাস মানুষের গৃহে, সিন্দুকের পাশে।

    উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো করে দোকানদারেরা হালখাতা করে। অর্থাৎ ওদের গত বছরের দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ করে সেই খাতা বন্ধ করে লালশালুতে মোড়া নতুন খাতায় লিখে দেবীর পায়ে ছোঁয়ায়। কিন্তু বাঙালীর হালখাতা যে পয়লা বৈশাখে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে খর্চা আছে।

    কাজেই হিন্দি বলয়ে দেওয়ালির সময় নিরিমিষ খেতে হয়। আর আপনি যদি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে পুজোর বিধি নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চান তাহলে দেখবেন বলা হচ্ছে --

    কালীপুজোর সময় বাড়ির রান্নায় রসুন চলবে না। মাছ-মাংস দূর কী বাত! পাড়ায় ওসবের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

    আর একই বিধান দুর্গাপুজোর সময়েও, নবরাত্রির পুরো ন’দিন ধরে।

    আহা রে! বাঙালী অষ্টমীর দিন নবমীর দিন মাছ, কষা মাংস খাবে না, দশমীর দিন জোড়া ইলিশের দিকে তাকাবে না — এমন অলুক্ষুণে কথা কে কবে শুনেছে! আর সারাবছর কালীঘাটে মায়ের কাছে বলিপ্রদত্ত পশুর মাংস যে আমাদের মহাপ্রসাদ — এসব ভুলে যেতে হবে?

    মন ভাল করতে এবার একটি রামপ্রসাদী শুনুন। এই গানটি ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও বড় পছন্দ।

    ‘এবার কালী তোমায় খাব।
    ডাকিনী যোগিনী দুটা, তরকারি বানায়ে খাব,
    তোমার মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বলে সম্ভার চড়াব’।

    দেবী কালীর উৎপত্তি ও কালী মন্দির নিয়ে দুটি কথা

    দেবী কালী বৈদিক দেবী নন। বস্তুতঃ ঋগবেদে ইন্দ্র এবং অগ্নি হলেন প্রধান দেবতা। প্রায় ১০০০ শ্লোকের ৭০০ শ্লোকই এদের দুজনের মহিমা নিয়ে। বেদ পুরুষ প্রধান। দেবী বলতে উষা ও সরস্বতীকে নিয়ে দু’টি বা তিনটি শ্লোক।  আজকাল একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ তম সূক্তের (৮টি শ্লোক) মধ্যে কালীর উল্লেখ রয়েছে। কথাটি সর্বৈব ভুল। যে কেউ বেদের বই খুলে মিলিয়ে নিতে পারেন — ওই আটটি অনুবাকে দুর্গা বা কালীর কোন উল্লেখ নেই।

    কালীর উৎপত্তি পাওয়া যাবে তন্ত্রে এবং পুরাণকথায়। কালী হলেন দুর্গারই আরেক এবং প্রধান রূপ। দেবীভাগবতে বা আমাদের চণ্ডীপাঠে জানা যাচ্ছে যে শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং রক্তবীজের বধের জন্যে দেবী দুর্গার ক্রোধ উৎপন্ন হলে তাঁর ভ্রূকুটি থেকে ভীষণদর্শনা ভীমা কালীর উৎপত্তি।  যাতে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুর না জন্মায় তাই কালী এবং তাঁর দুই সহচরী ও সঙ্গের শৃগাল রক্ত পান করে নেয়।

    আবার পার্বতী বা সতী যখন নেমতন্ন না পাওয়া স্বামী শিবকে তাঁর শ্বশুরের যজ্ঞে জোর করে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইলেন তখন  তিনি দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে স্বামীকে দশদিকে আটকে দিলেন।

    শক্তিরূপা কালীর দশরূপ হল কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

    কালীর ছিন্নমস্তা রূপের বর্ণনা শুনুন।

    “ষষ্ঠে ছিন্নমস্তারূপ ধারণ করিলে,
    নিজ মুণ্ড ছিন্ন করি করেতে ধরিলে”।

    এবার কল্পনা করুনঃ দেবীর ছিন্নমস্তক  থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত তিনটি ধারায় উপচে পড়ছে, এবং তা পান করছে তাঁর দুই সহচরী এবং তিনি নিজে। কীভাবে? তাঁর বাঁ হাতে ধৃত নিজের ছিন্ন মুণ্ড নিজেরই রক্তধারা পান করছে!

    গড়পড়তা লোক এই দৃশ্যে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালী যে ভীষণের সাধনা করে।

    নজরুল গান বেঁধেছেন “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে দিতে কোল”।

    বিবেকানন্দ কবিতা লিখেছেনঃ
    “লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর, দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
    নাচে তারা উন্মাদ তাণ্ডবে, মৃত্যুরূপা মা আমার আয়”।
    (ইংরেজি থেকে অনুবাদ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

    “স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী”

    সর্বত্র কালী মূর্চ্ছিত শিবের বুকে এক পা তুলে দণ্ডায়মান। ডান পা তুললে দক্ষিণাকালী, বাঁ পা তুললে বামা। তাঁর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাই পুজোয় নৈবেদ্যে লাগে শুধু রক্তজবা নয়, কারণবারি (মদ), মৎস (মাছ), মাংস, মুদ্রা (শস্য, মতান্তরে আরাধনার বিশেষ আসনভঙ্গী)।

    কারণ তন্ত্রসাধনায় আবশ্যক উপকরণ হল পঞ্চ ম’কার। পাঁচটি ম --- মদ্য, মৎস্য, মাংস, মুদ্রা এবং মৈথুন। কালের প্রভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মৈথুন শুধু তন্ত্রমতে সাধনরত সাধক সাধিকার বা ভৈরব-ভৈরবীর জন্যে। এই শতাব্দীতে পশুবলি প্রথা প্রায় অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে কাপালিকদের নরবলি। কিন্তু এসব প্রথা যে ছিল তা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    মনে করুন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় নবকুমারকে বলি দেওয়ার চেষ্টা। কান পেতে শুনুন বিখ্যাত “নেচে নেচে আয় মা শ্যামা” গানটির দ্বিতীয় অন্তরাটি “মা, কোথায় পাব মহিষবলি, কোথায় পাব নরবলি”।

    কিন্তু মা কালীর নিত্যপুজোয় তন্ত্রমতে প্রথম চারটি ম’ আজও লাগে।

    দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র দেখুনঃ

    ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং দক্ষিণকালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং স্বাহা।।

    মন্দিরগুলোঃ

    অধিকাংশ প্রাচীন কালীমন্দিরের সম্বন্ধ সতীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই শক্তিপীঠের সঙ্গে। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে ১৮টি পড়েছে অবিভক্ত  বাংলাদেশে। পশ্চিম এবং পূর্বের ভাগ প্রায় সমান সমান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটিতে দেবীর নৈবেদ্য কী কী দেওয়া হয় দেখুন।

    * তারাপীঠ: একান্নটি পীঠের অন্যতম। আজও দেবীর ভোগে  দেওয়া হয় মাছের মাথা, কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংসের ভোগ, শোল পোড়া।

    * কালীঘাটঃ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যের বিচারে গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের পরেই কালীঘাটের কালীমন্দির। এখানে দেবীর ভোগ হয় মাছের কালিয়া  এবং পাঁঠার মাংসে। এছাড়া রয়েছে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই, ইলিশ চুনো মাছের টক।

    * বেহালার সিদ্ধ্বেশ্বরী কালী মন্দির ৩৫০ বছর পুরনো। এখানে বার্ষিক পুজোয় ভোগে দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, মাছ মাংস, চাটনি, পায়েস।

    * হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দুই শতাব্দী প্রাচীন। এখানে তন্ত্রমতে পুজো হয়, ফলে পঞ্চ মকারের প্রথম চারটি নিত্য ভোগে লাগে।

    * অম্বিকা কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের নিত্যদিনের অন্নভোগে মাছ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি ও ইলিশ।

    * ঘাটশিলার রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে আজও পশুবলি হয়, বলির বেদী ও হাড়িকাঠ প্রকাশ্যে রয়েছে।

    * উত্তরপাড়ার কাছে ভদ্রকালী মন্দির আনুমানিক ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়। সেখানেও তন্ত্রমতে মায়ের নৈবেদ্যে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। মা সারদা ঠাকুরের তিরোধানের পর একটি কালী মন্দির গড়ে তোলেন। তাতে ঠাকুরের প্রিয় জিওল মাছ ভোগ দেওয়া হয়।

    * বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা কালী মন্দিরে পশুবলি হয়, আগে নরবলি হত। আজকাল আঙুল কেটে মায়ের ঠোঁটে রক্ত ছোয়ানো হয়।

    * বোলপুরের কাছে সুরুলের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় বলি দেওয়া হয়; সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো-আখ।

    * বোলপুরের থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলার মহাশ্মশান। সেখানের কালীমন্দির ও একটি শক্তিপীঠ এবং তন্ত্রসাধনার জন্যে বিখ্যাত। ওখানে সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল। সুতরাং তন্ত্রমতে পুজোর সময় কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় তা পাঠকেরাই বুঝে নিন।

    * গুয়াহাটির স্টেশনের কাছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রসাধনার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।  পুরাণকথা অনুসারে এই শক্তিপীঠে সতীর যোনি পড়েছিল। এখানেও দেবীর ভোগে আমিষ দেওয়া হয়। পুজারীরা মনে করেন যে  আষাঢ় মাসে দেবী পার্বতীর মেন্সট্রুয়েশন হয়। তাখন তিন চারদিন ভক্তরা দর্শন করতে পারেন না। ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হয়ে যায়।

    * ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।

    * বাংলাদেশের যশোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বারো ভুঁইঞার অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্য  রায়ের নির্মিত। ওখানে ছাগবলি এখনও হয়। অন্যে পরে কা কথা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্বয়ং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের দু’দিনের সফরে গিয়ে ওই মন্দিরে দেবীদর্শন করে দেবীপ্রতিমার মাথায় মুকুট চড়িয়ে এসেছেন।

    * শেষ করছি রামকৃষ্ণদেবের  সাধনার সঙ্গে যুক্ত বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা বলে। ওখানে এখন বলি বহুদিন বন্ধ। তবে ১৯৬৮-তেও আমি মোষ বলি দেখেছিলাম। এখন দেবীর পুজোয় পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়, মাংস নয়।

    শেষ কথাঃ

    দেখতেই পাচ্ছেন, বৈদিক মন্ত্র এবং তন্ত্রসাধনার পথ সমান্তরাল। তন্ত্রমতের দার্শনিক ভিত্তি হল সাংখ্য দর্শন।  দেবী বা প্রকৃতি হলেন প্রধান এবং সক্রিয়। পুরুষ হলেন নির্বিকার এবং অচেতন। তাই অচেতন শিব বিনা দ্বিধায় শক্তিস্বরূপা কালীর পায়ের নীচে বুক পেতে পড়ে থাকেন।

    তন্ত্রের কালীমাতা  দিগম্বরী; হিন্দি বলয়ের কোন দেবী এমন নন। কোনও দেবীর হাতের খর্পর থেকে রক্ত ঝরে না। আমাদের মিশনের কালীকীর্তনে আছেঃ

             “বসন নাহিক গায়, পদ্মগন্ধে অলি ধায়,
            বামা চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে”।

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেখা যাচ্ছে মহিষাসুর বধের আগে দেবী দুর্গা সুরাপান করছেন এবং মহিষাসুরকে বলছেন “গর্জ গর্জ ক্ষণং মুঢ় মধু  যাবৎ পিবাম্যহং”।

    নে নে, যতক্ষণ মধুপান করছি, ততক্ষণ খুব গর্জন করে নে। তারপর তোর শেষ।
    মধুপানে দেবীর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠল। দেবী তারপর অসুরকে বধ করলেন।

    অর্থাৎ খাওয়াদাওয়া, পান করা নিয়ে আমাদের ধর্মে কোন বিরোধ নেই। এমনকি বৈদিক ধর্মের নিয়মবেত্তা মহর্ষি মনু তাঁর সংহিতায় বিধান দিচ্ছেনঃ ভোজনের যোগ্য পশুমাংস আহারে কোন পাপ হয় না। কারণ ব্রহ্মা খাদক এবং খাদ্য উভয়কেই ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছেন। (৫/৩০, মনুসংহিতা)।

    সেই খাদ্যগুলো কী? মাছ, হরিণ, কুক্কুট ভেড়া, খরগোস এবং বলি দিয়ে পবিত্র করা হয় এমন মাংস। (৩/২৬৭ থেকে ৩/২৭২; মনু সংহিতা)।

    আমার বিবেচনায় হিন্দুধর্ম এবং শাস্ত্র বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্র্যময়। যাঁরা দেওয়ালির রাতে কেবল ধনপ্রাপ্তির জন্যে নিরামিষ ভোগ দিয়ে মহালক্ষ্মীর পুজো করতে চান, তাই করুন। কিন্তু যে বাঙালীরা বারোয়ারি কালীপুজোয় খিচুড়িভোগ ছাড়াও ঘরে বা কালীমন্দিরে মায়ের পুজোয় মাছ-মাংসের নৈবেদ্য চড়াতে চান তাঁদের বাধা দেওয়া কেন?

    সবাইকেই কি জোর করে বাটা কোম্পানির সাত নম্বর মাপের জুতো পরাতে হবে? আপনারাই বলুন।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [1] গবেষক ও সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর প্রবন্ধ, ৪র্থ পিলার্স ডট কম, ৭ম জুলাই, ২০২২
    [2] ঐ
    [3] ঐ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:২২739295
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩২739296
  • রামকৃষ্ণ ও কেশব সেনের কথোপকথনের কিছু অংশ তুলে দিলাম। আগ্রহী ব্যক্তি মূল গ্রন্থ পড়ে নেবেন।
     
    আর রামকৃষ্ণ ভৈরবী ব্রাহ্মণীর কাছে তন্ত্র ও বৈষ্ণব মতের সাধনা করেছেন, আর তোতাপুরীর কাছে অদ্বৈতমতের সাধনা করেছেন। অর্থাৎ রামকৃষ্ণের জীবনে অদ্বৈতমত ও শক্তিবাদের সমন্বয় ঘটেছে। অর্থাৎ এগুলি কোনো বিচ্ছিন্ন চিন্তা নয়, একে অন্যের সঙ্গে  গভীরভাবে সম্পৃক্ত।
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:২৩739297
  • আর শক্তিবাদ শুধু পূর্বভারতের, এই অসামান্য তথ্য‌ই বা কোথায় পেলেন? শক্তিবাদ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে বিস্তৃত। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়, বহির্ভারতেও এই চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়। অন্য একটি লেখায় এনিয়ে আলোচনা করাও হয়েছে।
    মরুতীর্থ হিংলাজ থেকে কামরূপ কামাখ্যা, ক্ষীরভবানী থেকে কন্যাকুমারী- সর্বত্র শক্তিবাদের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়! 
    প্রসঙ্গত দক্ষিণভারতে মীনাক্ষী মন্দির ভারতের সবচেয়ে বড় মন্দির! 
    আসলে শক্তিতত্ত্ব ও তার প্রকাশ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে পরিব্যাপ্ত! 
     
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪২739298
  • সেজন্য‌ই ব্যাসের মহাভারতে ভীষ্মপর্বে যুদ্ধারম্ভের আগে কৃষ্ণার্জুন দুর্গাস্তব পড়েন, পুরাণে রামোপাখ্যানে রামকে দিয়ে অকালবোধন করানো হয়! এই প্রত্যেকটি কাহিনী ভারতীয় দর্শনে শক্তিবাদের গুরুত্ব সূচিত করে!
    মহাপণ্ডিতেরা অবশ্য এবিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব!
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:২৭739299
  • ভারতীয় দর্শন যে বৈচিত্র্যময় ও অসংখ্য শাখায় বিভক্ত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বৈচিত্র্য কিছু খাপছাড়া চিন্তার সমষ্টি নয়; এই বৈচিত্র্যের মধ্যে এক অসামান্য সামঞ্জস্যবোধ আমরা পাই। 
    সেজন্য‌ মহাকবির কণ্ঠে উচ্চারিত হয়-
    "তপস্যাবলে একের অনলে বহুরে আহুতি দিয়া
    বিভেদ ভুলিল, জাগায়ে তুলিল একটি বিরাট হিয়া।"
     
    "ভারতবর্ষের ইতিহাস" বলে রবীন্দ্রনাথের একটি অসামান্য প্রবন্ধ আছে। আগ্রহী ব্যক্তি পড়ে নিতে পারেন। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের অন্বেষণ‌ই ভারতীয় দর্শনের সাধনা ; এই সত্য‌ই রবীন্দ্রনাথের অসামান্য প্রতিভার প্রকাশে মূর্ত হয়েছে।
     
    এক‌ই কথা শিকাগোতে বিবেকানন্দ বলেছেন। ভারতীয় দর্শন exclusion বলে কোনো কথা গ্রহণ করেনা; সে সমস্ত পথকে গ্রহণ করে, সকল পথকে সত্যরূপে স্বীকার করে। তাই সাকারোপাসনা থেকে শুরু করে অদ্বৈতবাদ, অজ্ঞেয়বাদ, নিরীশ্বরবাদ- সব পথকেই সে গ্রহণ করতে পারে।
     
    তাই নিরীশ্বরবাদী কপিল ,অজ্ঞেয়বাদী বুদ্ধকে সে বিষ্ণুর অবতার রূপে গ্রহণ করে। এভাবেই ভারতীয় দর্শন বিভিন্ন চিন্তার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছে।
     
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৩৬739300
  • আবার রবীন্দ্রনাথেই ফিরে যাচ্ছি। বাংলাভাষা পরিচয় প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশ অধিকাংশ সময়েই রাজনৈতিক ভাবে খণ্ড খণ্ড প্রদেশে বিভক্ত ছিল। কিন্তু তাসত্ত্বেও এই উপমহাদেশে এক অদ্ভুত সাংস্কৃতিক ঐক্য ছিল; যা এই ভূখণ্ডকে সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। আর এই ঐক্যের অন্যতম মাধ্যম ছিল সংস্কৃত ভাষা।
     
    হিন্দুত্ববাদী রবীন্দ্রনাথ!
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৭739301
  • সমস্যা হল, আমাদের দেশে আমাদের দেশে রামের পাঁঠা যেমন আছে; তেমনি আছেন মহাবিপ্লবীবৃন্দ! এঁদের চোথা অনুযায়ী ভারতের কোনো ইতিহাস নেই, ভারতের কোনো ঐক্য নেই! ভারত মানে এঁদের কাছে কিছু ভিন্ন প্রদেশের জোড়াতালি মাত্র! ভারত মানে এঁদের কাছে বৈপরীত্য! কিন্তু এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব! 
    ভারতীয় দর্শন নিয়ে আলোচনা শুরু হলে এঁরা মনুসংহিতা নিয়ে নৃত্য করতে থাকেন! 
    অত‌এব মহাবিপ্লবীর চোথা অনুযায়ী শক্তিবাদের সঙ্গে বেদের কোনো যোগ নেই!  
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:২৫739302
  • গোবলয়ের গোশাবকদের চিন্তাভাবনা ও প্রোপাগান্ডার সঙ্গে এই মহাবিপ্লবীদের কথাবার্তার বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। 
    এক‌ই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ মাত্র!
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:২২739304
  • অর্জ্জুনের দুর্গাস্তব 
    যুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ব্বে কুরুক্ষেত্র-সমরাঙ্গনে দুর্য্যোধনের বিপুল সৈন্যসমাবেশ দর্শন করিয়া শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনের হিতের নিমিত্ত (হিতার্থায়) বলিলেন—‘‘পরাজয়ার শত্রুণাং দুর্গাস্তোত্রমুদীরয়’’ (‘মহাভারত’, ভীষ্মপর্ব)—শক্রগণের পরাজয়ের জন্য দুর্গাস্তব কর। রথ হইতে অবতরণ করিয়া অর্জ্জুন কৃতাঞ্জলিপুটে নতজানু হইয়া শ্রীশ্রীদুর্গাস্তুতি আরম্ভ করিলেন—
    অর্জ্জুন বলিলেন।
    ‘‘সিদ্ধসেনানি! হে আর্য্যে! মন্দরবাসিনি! কুমারি! কালি! কাপালি! কপিলে! কৃষ্ণপিঙ্গলে! আপনাকে নমস্কার করি।।’’
    ‘‘হে ভদ্রকালি! আপনাকে নমস্কার, মহাকালি! আপনাকে নমস্কার, চণ্ডি! চণ্ডে! তারিণি! বরাবর্ণিনি! আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘কাত্যায়নি! মহাভাগে! করালি! বিজয়ে! জয়ে! ময়ুরপুচ্ছের ধ্বজধারিণি! নানাভরণভূষিতে! আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘মহাশূলাস্ত্রে! খড়গ ও মুদগরধারিণি! কৃষ্ণানুজে! জগত্‌প্রাচীনে! নন্দগোপকুলোদ্ভবে! আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘সর্বদা মহিষরক্তপ্রিয়ে! কৌশিকি! পীতবসনে! অট্টহাসে! করণপ্রিয়ে! আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘উমে! শাকম্ভরি! শ্বেতে! কৃষ্ণে! কৈটভনাশিনি! পীতনয়নে! বিরূপাক্ষি! অতিধূম্রনয়নে। আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘বেদশ্রুতিমহাপুণ্যে! দেবহিতে! প্রাচীনজ্ঞানে! সর্বদা জম্বুদ্বীপস্থ দুর্গদেবতালয়বাসিনি! আপনাকে নমস্কার।।’’
    ‘‘কার্তিকেয়জননি! ভগবতি! দুর্গে! মহারণ্যবাসিনি! আপনি বিদ্যার মধ্যে ব্রহ্মবিদ্যা এবং প্রাণিগণের মহানিদ্রা।।’’
    ‘‘জ্ঞানীরা আপনাকে স্বাহা স্বধা কলা কাষ্ঠা সরস্বতী বেদমাতা গায়ত্রী এবং উপনিষদ্‌ বলিয়া থাকেন।।’’
    ‘‘মহাদেবি! আমি পবিত্র-চিত্তে আপনার স্তব করিলাম। আপনার অনুগ্রহে সমরাঙ্গনে সর্ব্বদাই যেন আমার জয় হয়।।’’
    ‘‘আপনি সর্ব্বদাই মহারণ্যে, ভয়স্থানে, দুর্গমদেশে, ভক্তগণের গৃহে এবং পাতালে বাস করেন, আর যুদ্ধে দানবদিগকে জয় করিয়া থাকেন।।’’
    ‘‘আপনি রতি, মোহিনী, মায়া, লজ্জা, লক্ষ্মী, সন্ধ্যা, দীপ্তি, সাবিত্রী ও জগতের জননীস্বরূপা।।’’
    ‘‘দেবি! আপনি তুষ্টি, পুষ্টি, ধৃতি, চন্দ্র ও সূর্য্যের উজ্জ্বলতাকারিণী দীপ্তি এবং সম্পন্নদিগের সম্পৎ। যোগিগণ ও পরিব্রাজকগণ ধ্যানে আপনাকেই দেখিয়া থাকেন।।’’
    অর্জ্জুনের স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া দেবী ‘‘অন্তরিক্ষগতোবাচ’’—আকাশমার্গে অবস্থান করিয়া বলিলেন—
    —হে পাণ্ডব! অচিরেই তুমি শত্রুগণকে জয় করিবে। এই কথা বলিয়া বরপ্রদা দেবী সেই স্থানেই অন্তর্হিতা হইলেন।
     
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৩০739305
  • অবশ্য‌ই এই স্তবটি পরবর্তীকালে সংযোজিত, কিন্তু এই সংযোজন খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতকের মধ্যেই হয়েছে।
    এই স্তব ভারতীয় চিন্তায় শক্তিবাদের গুরুত্ব নির্দেশ করে। তাই শক্তিবাদ শুধুমাত্র পূর্ব ভারতেই সীমাবদ্ধ; বেদের সঙ্গে শক্তিবাদের কোনো যোগাযোগ নেই, কালী শুধুমাত্র তান্ত্রিকদের উপাস্য- এই কথাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই!
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৪৩739306
  • আর এর আগেও বলেছি বেদান্ত ও তন্ত্র কোনো পৃথক চিন্তাধারা নয়; আচারগত পার্থক্য থাকলেও মূল চিন্তা অভিন্ন। 
    আর আজকে ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুধর্ম মূলত পৌরাণিক ও তান্ত্রিক। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর, গাণপত্য- সকলেই তান্ত্রিক মতেই উপাসনা করে থাকেন। বৈদিক যজ্ঞাদি এখন আর কেউ আলাদা করে পালন করেনা, তান্ত্রিক উপাসনার অঙ্গ হিসাবেই করে। 
    বেদান্ত দর্শনের সাকারোপাসনা আর তান্ত্রিক পূজাপদ্ধতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! 
    এই সমন্বয়ী প্রতিভাই ভারতীয় দর্শনের মূল বৈশিষ্ট্য!
  • দীপ | 42.110.138.102 | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৭739870
  • শ্রীসদাশিবকৃত আদ্যা কালিকা স্তুতি:
     
    সদাশিব বলিলেন -
     
    হে দেবী! তুমি পরাপ্রকৃতি, সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম, পরমাত্মা। সমুদয় জগৎ তোমা হতেই উৎপন্ন হয়েছে। হে শিবে! তুমিই সমুদয় জগতের জননী। তুমি গুণাতীত, তত্ত্বাতীত, তোমার থেকেই মহতত্ত্ব অবধি পরমাণু পর্যন্ত এবং স্থুল, সুক্ষ সমুদয় স্থাবর জঙ্ঘম স্বরূপ সমগ্ৰ জগৎ উৎপাদিত হয়েছে। এই সমুদয় জগৎ তোমারই অধীন। তুমিই সকলের আদ্যা বা আদিভূতা আদ্যা পরব্রহ্ম মহাশক্তি । সকল বিদ্যা ও ব্রহ্মা, মহাবিষ্ণু ও আমি(সদাশিব) তোমা হতেই উৎপন্ন হয়েছি। জগতের সকল বিষয় তোমার জ্ঞাত কিন্তু তোমায় কেহই জানিতে পারে না।  
    তুমিই কালী, তারা, দুর্গা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ধূমাবতী, তুমি বগলা, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, তুমি অন্নপূর্ণা, তুমিই বাগদেবী ও কমলা। 
    তুমিই সর্বশক্তিস্বরূপা ও সর্বদেবময়ী। তুমি সুক্ষা, স্থুলা, ব্যক্ত ও অব্যক্ত স্বরূপা। তুমি নিরাকারা হয়েও সাকারা ও সকলের অগম্যা।
    উপাসকদিগের কার্যের নিমিত্তে, জগতের মঙ্গলের হেতু এবং দানবদিগের সংহারের হেতু তুমি সময়ে সময়ে নানাবিধ দেহ ধারণ করিয়া থাক। বিশ্বরক্ষার্থে তুমি কখন চতুর্ভুজা, দ্বিভুজা, ষড়ভুজা ও অষ্টভুজা হয়ে নানা রকম আয়ুধ সমূহ ধারণ করিয়া থাক। সমুদয় তন্ত্রশাস্ত্রে সেই নানাবিধ রূপভেদ, মন্ত্র, সাধন, যন্ত্রাদি বর্ণিত হয়েছে। 
    পশু, দিব্য ও বীর এই তিন প্রকার ভাব কথিত আছে। কলিতে পশুভাব নাই, দিব্যভাব দুর্লভ। কলিতে বীরসাধনই প্রত্যক্ষ ফলদায়ক। কলিতে কুলাচার ব্যাতিত সিদ্ধি নাই। ইহার দ্বারা ব্রহ্মজ্ঞান জন্মায়ে। যাঁর ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে সে নিঃসন্দেহে জীবন্মুক্ত। শাস্ত্রসম্ভুত জ্ঞান দ্বারা পবিত্র ও অপবিত্র বস্তুর ভেদ জন্মে। কিন্তু ব্রহ্মজ্ঞান হলে এই ভেদভাব আর থাকে না। সমুদয় জগৎকেই সে ব্রহ্মময় দেখে। সনাতনী ব্রহ্মময়ী সর্ব্বব্যাপী, কোন বস্তুই তার কাছে অপবিত্র নয়। তুমি সর্বস্বরূপিনী ও সংসার চক্র দ্বারা ক্রীড়া কর্ত্রী সকলের পরম জননী। তুমি পরিতুষ্টা হইলে সকলের পরিতোষ জন্মে। সৃষ্টির আদিতে একমাত্র তুমিই ছিলে। তোমার সেই রূপ বাক্য ও মনের অগোচর। তুমিই নির্গুণ পরব্রহ্ম তোমার সৃষ্টির ইচ্ছা হেতু তোমা হতেই সমগ্ৰ সৃষ্টির উৎপত্তি। মহৎতত্ত্ব অবধি মহাভূত পৃথিবী পর্যন্ত তোমা হতেই সৃষ্ট। তোমার নির্গুণ ব্রহ্মস্থিতি কারণস্বরূপ নিমিত্ত মাত্র। তুমি নির্গুণ পরব্রহ্ম রূপে সদা বাহ্যিক ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়েও কিন্তু অন্তরে স্পন্দনশীল, তুমি আদি অন্ত রহিত, অনাদিরও আদি, সত্যস্বরূপ, নির্লিপ্ত, সকল কার্যরহিত, অবস্থান রহিত ও বাক্য মনের অগোচর। তুমিই পরাৎপরা মহাযোগিনী। তুমি তাঁর ইচ্ছাকে নিমিত্ত করে জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহার কর। 
     
    জগৎ সংহারক পরশিব মহাকাল তোমারই স্বরূপ। এই মহাকাল মহাসংহার সময়ে সমুদয় সৃষ্টিকে গ্ৰাস করবে। সকল প্রাণীকে কলন করেন বলেই তিনি মহাকাল নামে প্রকীর্ত্তিত। তুমি মহাকালকেও কলন বা গ্ৰাস করিয়া থাক, তাই তুমিই পরাৎপরা আদ্যা কালিকা। মহামৃত্যুরূপ কালকে গ্ৰাস কর, তাই তুমি কালী। তুমি সকলের এবং মহাকালেরও কাল স্বরূপা, এই হেতু জগৎ তোমায় আদ্যা কালী বলিয়া কীর্ত্তন করে। সর্ব্বসংহার প্রলয়কালে তুমি বাক্যের অতীত, মনের অগম্য, তুরীয়াবস্থায় আকৃতি বিহীন স্বরূপে অবস্থান কর। তুমি সাকারা হয়েও নিরাকারা। তুমিই নিজ মায়াশক্তি দ্বারা বহুরূপ অবলম্বন কর। তুমিই সকলের আদি, অনাদি, একমাত্র কর্ত্রী, হর্ত্রী ও পালিকা।
     
     
  • দীপ | 42.110.138.102 | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৩739871
  • দীপ | 42.110.138.102 | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৫:৪৯739872
  • স্বাগতালক্ষ্মীর কণ্ঠে মহানির্বাণতন্ত্রের কালিকাস্তব। বঙ্গানুবাদ পূর্বেই দেওয়া হয়েছে।
    স্পষ্ট‌ই বোঝা যাচ্ছে, দার্শনিক দৃষ্টিতে বেদান্ত ও তন্ত্রের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। নির্গুণ ব্রহ্মের মধ্যে যখন সৃজনেক্ষা জাগ্রত হয়, তখন তিনি সগুণ রূপে প্রকাশিত হন। ইনিই শক্তি, জগন্মাতা। সগুণ রূপে ইনি ত্রিগুণাত্মিকারূপে প্রকাশিত হন, এঁর থেকেই প্রকৃতিপুরুষাত্মক জগৎ সৃষ্ট হয়। নির্গুণস্বরূপে ইনিই বিশ্বাতীতা পরব্রহ্মস্বরূপিণী।
    ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নতাই শক্তিবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ঋগ্বেদীয় দেবীসূক্তমে এই সত্য‌ই বর্ণিত হয়েছে।
  • দীপ | 42.110.136.247 | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:২০739873
  • অদ্বৈতবাদের সঙ্গে শাক্তদর্শনের শুধু এইটুকু পার্থক্য যে অদ্বৈতবাদে ব্রহ্ম ও মায়াকে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে দেখা হয়। শাক্ত সেভাবে দেখেন না। শাক্ত মহামায়ার উপাসক, এই মহামায়া মায়াসমন্বিত ব্রহ্ম। ব্রহ্মরূপে তিনি নিমিত্ত কারণ, মায়ারূপে তিনি উপাদান কারণ। তাই শক্তিসাধকের দৃষ্টিতে জগৎ পুরোপুরি মিথ্যা নয়, এই জগৎ জগন্মাতার অসীম লীলাবৈচিত্রের প্রকাশ। তিনি কোনোকিছুই নন, আবার তিনিই সবকিছু হয়েছেন।
    এটিই শক্তিসমন্বিত অদ্বৈতবাদ‌ বা শাক্তাদ্বৈতবাদ শাক্তদর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
  • দীপ | 2401:4900:72ab:9f3b:7aa5:719e:ce78:9ea9 | ১৯ জুলাই ২০২৩ ২৩:৪১740342
  • ঋগ্বেদের নাসদীয় সূক্ত প্রশ্ন তুলিয়াছেন- যখন কিছু ছিল না, তখন কী ছিল? যখন পৃথিবী ছিল না, আকাশ ছিল না, রাত্রি দিনের প্রভেদ ছিল না, যাহা আছে, তাহাও ছিল না "নাসদাসীন্নো সদাসীৎ", তখন কী ছিল?
     
    বৈদিক ঋষির এই অনন্তজিজ্ঞাসার উত্তর দিয়াছেন বেদ নিজেই পুরুষসূক্তে। যখন কিছু ছিল না, তখন "পুরুষ" ছিলেন "পুরুষেবেদং সর্বম্"। যাহা কিছু ছিল বা থাকিবে, সকলই সে পুরুষ হইতে - "যদ্ভূতং যচ্চ ভাব্যং।" তন্ত্রশাস্ত্র এই উত্তরে তৃপ্ত নয়। তান্ত্রিক আচার্য জিজ্ঞাসা করেন, যখন পুরুষ ছিল‌ না, তখন কে ছিল? নিগমশাস্ত্র বেদ বলেন, পুরুষ ছিল না, এমন কখনও হয় না। আগমশাস্ত্র তন্ত্র তাহা মানিয়াও মানিতেছেন না। বলেন, পুরুষ যখন থাকিয়াও নাই, তখন কে আছেন? 
     
    থাকিয়াও নাই কথাটির তাৎপর্য বুঝিতে হইবে। বাড়ীর দরজায় "In" দেখিয়া আপনি আছেন জানিয়া প্রবেশ করিলাম। পরে নিদ্রিত আছেন দেখিয়া আলাপ না করিয়া ফিরিয়া আসিলাম। আপনি বাড়ীতে থাকিয়াও নাই। পুরুষ যখন নিদ্রিত আছেন তখন কে আছেন, আগম তাহা জানিতে চায়। নিগম উত্তর দিতে পারে না। আগমশাস্ত্রের নির্যাস চণ্ডী উত্তর দিতেছেন। কল্পান্তে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড কারণসমুদ্রে পরিণত হইয়াছে, "জগত্যেকার্ণবীকৃতে।" অনন্তশয়নে ব্রহ্মপুরুষ মহাবিষ্ণু নিদ্রিত। পুরুষের সহিত অনন্ত জগৎ সুপ্ত। তখন জাগিয়া আছেন একমাত্র যোগনিদ্রা। ইনিই মহানিদ্রা, মোহনিদ্রা, মহারাত্রি, মহাদেবী, মহাকালিকা। ইনিই শ্রীহরির নেত্রে অধিষ্ঠান করিয়া আছেন, "হরিনেত্রকৃতালয়াম্।" নেত্র শব্দ সকল ইন্দ্রিয়ের উপলক্ষণ। হরির সর্ব ইন্দ্রিয় অভিভূত করিয়া রাখিয়াছেন সেই মহাতামসী মহাশক্তি দেবী।
     
    ---সপ্তশতী সমন্বিত চণ্ডীচিন্তা, ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী
  • দীপ | 2401:4900:72ab:9f3b:7aa5:719e:ce78:9ea9 | ১৯ জুলাই ২০২৩ ২৩:৪২740343
  • শ্রদ্ধেয় বৈষ্ণবাচার্য মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর চিন্তায় শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
  • দীপ | 42.110.145.43 | ২৭ জুলাই ২০২৩ ০১:১৭740389
  • কার্ত্তিকে কৃষ্ণপক্ষে তু পঞ্চাদশ্যাং মহানিশি। 
    আবির্ভূতা মহাকালী যোগিণী কোটিভিঃ সহ।।
    অতোহত্র পূজনীয়া সা তস্মিন্নহনি মানবৈঃ।
    বলিপূজাদিকং সর্ব্বং নিশায়াং ক্রিয়তে তু যৎ।।
    তত্তদক্ষায়তাং যাতি কালীবিদ্যা প্রসীদতি।।
     
    যথা বিশ্বসার তন্ত্রে - কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশী(অমাবস্যা) তিথির মহানিশায় কোটি কোটি যোগিণীকুল পরিবেষ্টিত হয়ে নির্গুণপরব্রহ্মস্বরূপা শ্রীশ্রী সর্ববিদ্যাসম্রাজ্ঞী মা দক্ষিণকালিকা প্রকাশিত হন । এই তিথির মহানিশাতে পরাপরমেশ্বরী সর্ববিদ্যাসম্রাজ্ঞী মা দক্ষিণকালীর উদ্দেশ্যে পশুবলি ও পূজা যা কিছু করা হয় তা চির অক্ষয় হয়, যে ব্যক্তি  পূজা অনুষ্ঠান করে মহাদেবী মহেশ্বরীর প্রীতি উৎপাদনে স্বচেষ্ট থাকেন, তার ওপর মহাদেবী সত্যই অত্যন্ত প্রসন্না হন।
     
    সৈব জ্ঞেয়া বরারোহে স্বয়ং নির্গুণপরব্রহ্মরূপিণী।
    জগৎ সর্বং বশো তস্যা বশ্যা কস্যাপি সা ন চ।।
     
    -শিব বলিলেন "হে বরারোহে! সেই ঘোরদক্ষিণা সর্ববিদ্যেশ্বরী পরমেশ্বরী কালিকাকেই সাক্ষাৎ নির্গুণপরব্রহ্মরূপিণী বলে জানিবে । তাঁর অধিক কেহ নাই। অনন্ত কোটি কোটি জগৎ তাহার বশে রহিয়াছে কিন্তু তিনি কাহারো বশে হয়েন না, প্রপঞ্চ তাহার বশে কিন্তু তিনি প্রপঞ্চাতীতা। তিনি কাহারো অধীনা হন না, তিনি সকলের নাথ, আর বাকি সকলেই তাঁহার আশ্রিত, তাঁহার বশীভূত।
  • দীপ | 42.110.145.43 | ২৭ জুলাই ২০২৩ ০১:১৮740390
  • ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নত্ব। এই অভেদদর্শন তন্ত্রশাস্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:94ed:6b21:81d6:80ed | ২৭ জুলাই ২০২৩ ২০:১৫740399
  • কেউ পুজো বন্ধ করতে চাইলে অন্য কথা। সমস্ত পশুহত্যা বন্ধ করতে চাইলে তাও অন্য তর্ক। কিন্তু পুজো করি, মাংস খাই অথচ বলি বন্ধ হোক, এর পেছনে ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ ছাড়া অন্য যুক্তি কিছু থাকলে জানতে চাই।
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ২৮ জুলাই ২০২৩ ০০:৫৩740401
  • বাঃ, এইত্তো কাজের কথা উঠেছে! 
     
    বলি---বলি, কুরবানি এইসব প্রথার বিষয়ে  আপত্তির জায়গা অনেকগুলো- 
    ১. Public display of violence and under the pretense of divine glorification, যার অনেকগুলো ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে-শিশুমনে প্রভাব, জীবহত্যাকে divine justification দেবার চেষ্টা, রক্তপাত ও হিংসাকে exhibition of devotion and courage বলে চালিয়ে দেবার প্রয়াস ও আরো অনেক কিছু। নিজেদের উদরপূর্তির জন্য জীবহত্যা যথেষ্ট justified, যতোই "বৃথা মাংস" বলা হোক না, তা প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলের জীবজগতের অবিচ্ছিন্ন নিয়মের ধারার প্রকাশ মাত্র। কিন্তু ঈশ্বরের নামে, "পরমকরুণাময় আনন্দময় মঙ্গলময়" ঈশ্বরের নামে জীবহত্যা, রক্তপাত করা( তা অবলা অ-মানুষ জীব(non-human being) ই হোক বা মানুষ পশু(human animal)-র রক্তপাত) , আখেরে নিজেদের উদরপূর্তির উদ্দেশ্যেই, "ঘোমটার তলায় খ্যামটা নাচ" এর নামান্তর- কারণ শেষপর্যন্ত মন্ত্র পড়ে, হাঁড়িকাঠে বা বলি বেদিতে নিবেদিত ছাগ, কুক্কুট, পায়রা, ভেড়া, দুম্বা -মাংস কালী, দুর্গা, বৈদিক ইন্দ্র, ত্বষ্টা সবিতৃ , উপজাতীয় দেবতা মারাংবুরু বা আল্লা-খোদা খেতে আসেন না, মানুষের ভোজ হয় সেটা।
     
    ২. দ্বিচারিতা, যেটা আগের পয়েন্টে বললাম তার‌ই জের টেনে বলি- এতোই যদি বলি দিয়ে পুণ্যার্জনের ব্যগ্রতা, "মদ্যমাংসবলিরূধিরপ্রিয়া ভগবতী" বা আল্লাকে প্রীত করার ইচ্ছা, তবে সেটা নরবলি দিয়েই হোক না কেন, যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলি বলা হয়েছে শাস্ত্রে, নাকি সেটা আইনে আটকায় বলে সম্ভব নয়? সেক্ষেত্রে আত্মবলিদানের উদ্যোগ নেওয়া যায়, কে জানে হয়তো রামকৃষ্ণ পরমহংসের মতো "শুদ্ধা ভক্তি" থাকলে  গলার কাছে খড়গ আনার আগেই, তীর দিয়ে চোখ উপড়োনোর আগে রামকে যেমন থামিয়েছিলেন মহামায়া, তেমনি কলিযুগে আবার "ভক্তের ভক্তির" টানে তুষ্ট হয়ে স্বয়ং আবির্ভূত হয়ে দর্শন দেবেন ঈশ্বর, বাধা দিয়ে বরদান করবেন? সেখানেই তো "বীরাচারী ভক্ত" এর ভক্তির পরীক্ষা, বীর্যের পরীক্ষা।  আবার কুরবানি দেবার ইচ্ছা থাকলে নিজের সন্তানকে বলি দেওয়াই তো উচিত , নবী তো তাই করতে গেছিলেন দৈবাদেশে, পরে তাঁর ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও অন্ধভক্তিতে পরিতুষ্ট খোদা দুম্বা বলি দিতে বলেন ইব্রাহিমের পরিবর্তে, কিন্তু বাকি মুসলিমদের জন্য তো প্রথম আদেশ কিছুমাত্র রদ হয়নি, তারা বরং একবার নিজের নিজের ছেলেদের কুরবানি দেওয়ার চেষ্টা করুক, যদি আল্লাকে তারা খুশি করতে পারে, তবে হয়তো আসমান থেকে তারাও আল্লার বা ফেরেস্তাদের স্বকন্ঠে দিব্যবার্তা শুনতে পাবে, কে জানে!!
     
  • দীপ | 2401:4900:3bdb:d071:f34e:f878:d7b3:2d39 | ২৮ জুলাই ২০২৩ ০১:১৬740402
  • “কালী মহাকালের শক্তি- মূর্তি । যাহা কিছু কালে ছিল, আছে এবং থাকিবে- সকলেই মহাকালীতে চিরবিদ্যমান । অনন্ত অতীত, অনন্ত ভবিষ্যৎ একটি নিত্য মূর্তির মধ্যে শাশ্বতভাবে বিরাজিত।
     
     সৃষ্টি ও ধ্বংস, প্রকাশ ও বিনাশ, একই মহাশক্তির পরস্পর সাপেক্ষ বিবিধ প্রকাশ। বীজ- ধ্বংসে বৃক্ষের জন্ম, বাল্যের ধ্বংসে যৌবনের উদয়, মৃত্যুর মধ্য দিয়া অমৃতত্বের আস্বাদন । ভারতীয় ঋষিদের ইহা অপরোক্ষ অনুভূতির বিষয় । ধ্বংসের মধ্যে তাঁহারা অনুপম সৌন্দর্য দেখিয়াছেন, অপার করুণা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন ।
     
    সেই করুণাময়ী সৌন্দর্য্যময়ী ধ্বংসের মহাশক্তির বিগ্রহমূর্তিই কালিকা । কেবল ধ্বংসের নহে, বিশ্বের সৃজন , পালন, বিনাশকারী যাবতীয় শক্তিই কালিকাতে বিরাজিত । বিশ্ব- প্রকৃতির মধ্যে যতগুলি ভাব অভিব্যক্ত হয় মানুষের কাছে, শ্রীকালিকাতে সে সকলই বিরাজমান। মহাপ্রকৃতির পরিপূর্ণ চিত্র কালিকা ।” 
     
    ( চণ্ডী চিন্তা... ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী )
  • দীপ | 2401:4900:3bdb:d071:f34e:f878:d7b3:2d39 | ২৮ জুলাই ২০২৩ ০১:১৭740403
  • শ্রদ্ধেয় বৈষ্ণবাচার্য মহানামব্রত ব্রহ্মচারীর চিন্তায় শক্তিতত্ত্ব।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:4e06:3ae5:2b2:772d | ২৮ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৫740404
  • পাবলিক ডিসপ্লে অফ ভায়োলেন্স খুব ভাল যুক্তি না। এক তো মন্দির প্রায়ই পাবলিক প্লেস নয়। কারো বলি দেখতে আপত্তি থাকলে সে না গেলেও পারে। দুই বাজারের কসাইয়ের দোকান, সে পাঁঠা মুরগী যাই কাটুক, খুবই গ্রস নিত্যকার পাবলিক ডিসপ্লে অফ ভায়োলেন্স। সেগুলো তাহলে আগে বন্ধ করতে হয়। বাজারে বসে জ্যান্ত মাছ কাটা, তাই বা কম কিসে? 
     
    দুই, সমস্ত দ্বিচারিতা বন্ধ করাটা খুব কাজের কথা নয়। লোকে রোজই মিথ্যা বলে। অথচ নীতিবাক্য বলতে ইতস্ততঃ করেনা। বসের স্তুতি করে অন্যায় সুযোগ বাগাতে আপত্তি করেনা। সেসব চালু রেখে রামকৃষ্ণদেবের উদাহরণ দিয়ে বলি বন্ধ করাটা হাস্যকর।
  • দীপ | 2402:3a80:1968:76b9:578:5634:1232:5476 | ০৪ আগস্ট ২০২৩ ০০:৩৮740473
  •  
    বিষ্ণুর অধিকৃত শক্তি বলিয়া তাঁহার বৈষ্ণবী নাম নহে, বিষ্ণুর প্রসবিত্রী বলিয়াই তাঁহার নাম বৈষ্ণবী। ভগীরথের আরাধিতা ও আনীতা বলিয়াই গঙ্গার নাম ভাগীরথী, ভগীরথের নামে তাঁহার নাম হইয়াছে বলিয়াই ব্রহ্মাদির দুরারাধ্যা গঙ্গা ভগীরথের আশ্রিতা নহেন, কিন্তু ভক্তচূড়ামণি ভগীরথের অপার কীর্তি-প্রবাহ ত্রিজগতে অব্যাহত রাখিবার নিমিত্তই শঙ্কর-শিরোবিহারিণী সংহারতাপহারিণী বিশ্বজননী 'ভগীরথের জননী হইবেন' - এই সাধের আদরে ভাগীরথী নাম ধারণ করিয়া ভক্তবৎসলা নিজ ভক্তির মহিমা ত্রিজগতে বিঘোষিত করিয়াছেন। তদ্রূপ ব্রহ্মাদি-প্রসবিত্রী ব্রহ্মাণ্ডজননী হইয়াও তিনিই আবার ব্রহ্মাণী বৈষ্ণবী মাহেশ্বরী নাম ধারণ করিয়া নিজ সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার শক্তির পরিচয় দিয়াছেন। ব্রহ্মাবিষ্ণুমহেশ্বর রূপে আপনি প্রসূত হইয়া আবার আপনিই প্রসূতি হইয়াছেন। তাঁহাকে আশ্রিত বল, তাহাতেও তিনি তাঁহারই আশ্রিত; আর আশ্রয় বল, তাহাতেও তিনি তাঁহারই আশ্রয়।
     
    তন্ত্রতত্ত্ব: মহামহোপাধ্যায় শ্রীশিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব
  • দীপ | 2402:3a80:1968:76b9:578:5634:1232:5476 | ০৪ আগস্ট ২০২৩ ০০:৩৯740474
  • তন্ত্রাচার্যের দৃষ্টিতে শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
  • দীপ | 42.110.145.148 | ০৪ আগস্ট ২০২৩ ০০:৫০740475
  • তুলনীয়-
     
    মহাবিদ্যা আদ্যাশক্তি পরমেশ্বরী কালিকা।
    পরমা প্রকৃতি জগদম্বিকা, ভবানী ত্রিলোক-পালিকা।।
     মহাকালী মহাসরস্বতী,
     মহালক্ষ্মী তুমি ভগবতী
    তুমি বেদমাতা, তুমি গায়ত্রী, ষোড়শী কুমারী বালিকা।।
    কোটি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, মা মহামায়া তব মায়ায়,
    সৃষ্টি করিয়া করিতেছ লয় সমুদ্রে জলবিম্ব-প্রায়।
     অচিন্ত্য পরমাত্মারূপিণী,
     সুর-নর চরাচর-প্রসবিনী।
    নমস্তে শিরে অশুভ নাশিনী, তারা মঙ্গল সাধিকা।।
    - নজরুল 
  • দীপ | 42.110.136.235 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৭740489
  • "দ্যাখ্, তোরা যে দোকান থেকে পাঁঠার মাংস কিনে আনবি, দেখবি -- সেখানে কষাই-কালীমূর্তি যদি না থাকে তাহলে মাংস কিনিস্ নি। যে দোকানে কষাই-কালীর প্রতিমা থাকবে সেই দোকান থেকে মাংস আনবি।"
    • শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব
    আমার জীবন কথা (প্রথম ভাগ), স্বামী অভেদানন্দ, শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্তমঠ, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৯৬৪, ষষ্ঠ সংস্করণ ২০১৫, পৃষ্ঠা ৭৭
  • দীপ | 42.110.136.235 | ০৭ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০১740490
  • এখানে রামকৃষ্ণও তো বলিপ্রথা মেনে নিচ্ছেন। রামকৃষ্ণকে কুমীরছানার মতো দেখিয়ে কদ্দিন চলবে?
  • দীপ | 2402:3a80:196c:2f33:778:5634:1232:5476 | ১০ আগস্ট ২০২৩ ১১:১৭740494
  • আদি পরাশক্তি পার্বতী নিজের আত্মপরিচয় দিলেন সদাশিব এর কাছে।
    দেবী বললেন-
    আমার থেকেই সৃষ্টি সমুৎপন্ন এবং আমাতেই তা লয় পেয়ে থাকে ।
    আমিই এই অখিল ব্রহ্মান্ড পালন করে থাকি। এই জগৎ আমারই মায়া।
    আমি ভিন্ন অন্য কিছুই নেই, আমিই সনাতন পরব্রহ্ম।
    দুষ্টভাবেই হোক আর শিষ্টভাবেই হোক আমাকে যে যেভাবে ভজনা করে আমি তার সে কামনা পূর্ণ করে থাকি ।।   (যোগিনীতন্ত্র)
     
     
    শক্তিতত্ত্ব ও শক্তিপারম্য।
    ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নত্ব।

     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন