এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৫ জুলাই ২০২২ | ৪৪৮০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • “আমার সকল গেল কালী বলে”

    বড় সংকটে পড়িয়াছি। আমি জানিতাম বাঙালী ঘোর কালীভক্ত। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশে আমরা সাধক রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত এবং অনেকের বিরচিত কালীকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনিয়া আশৈশব লালিত হই। কলিকাতায় এবং তার উপকণ্ঠে ঐতিহ্যশালী মন্দির বলিতে কালীঘাটের কালী মন্দির, বঊবাজারের ফিরিঙ্গি কালী, ঠনঠনিয়ার কালীবাড়ি এবং দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির। কোনটি ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন, কোনটির বয়স ৩০০ বছর।

    বাঙালী প্রাচীন কালে ডাকাইতি করিতে, বর্তমান কালে নির্বাচনের অথবা ফুটবলের ময়দানে নামিতে আগে কালীমাতার প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকায়। বাঙালী কম্যুনিস্ট নেতা কংকালীতলার শ্মশানে পূজা দিয়া সগর্বে ঘোষণা করেন যে তিনি একাধারে বাঙালী,  কালীভক্ত এবং কম্যুনিস্ট। স্বাধীনতার সংগ্রামেও বাঙালী কালীমাতার দানবদলনী রূপ দেখিয়া প্রেরণা পায়। চারণকবি মুকুন্দদাস গাহিয়াছেনঃ

    “দানবদলনী হয়ে উন্মাদিনী, আর কি দানব রাখিবে বঙ্গে?
    সাজ রে সন্তান হিন্দু-মুসলমান,  থাকে থাকুক প্রাণ,
    যায় যাবে রঙ্গে”।

    ইহার পর ঠাকুর রামকৃষ্ণ আসিয়া মা কালীর সহিত কথা কহিতে লাগিলেন। তিনি সর্বত্র নারীর মধ্যে মা কালীর দরশন করিলেন। এমনকি চিৎপুরের পথে সন্ধ্যায় শান্তিপুরী শাড়ি পরা মাথার খোঁপায় জুঁই ফুলের মালা শোভিতা পুরুষের মন ভুলাইতে ব্যস্ত নারীকে নমস্কার করিয়া সারদা মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাইলেন – ‘তোমার দখিণেশ্বরের শাশুড়ি’ বলিয়া। [1]

    কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ নবদ্বীপের রাস্তায় দেয়ালে ঘুঁটে  দেয়ার সময় ঘোমটা খসিয়া পড়া নারীর লজ্জায় জিভ কাটিতে দেখিয়া সেই স্থানে ঐরূপ কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। [2]

    খর্বদেহ পাদুকা পরিহিত কৃশকায় বাঙালী আসলে শক্তি এবং তন্ত্রের সাধক। তাহার দেবী বিশালাক্ষী, নৃমুণ্ডমালিনী, লোলজিহ্বা, এক হস্তে খর্পর, অপর হস্তে ছিন্নমস্তক। তাঁহার ‘নিপতিত পতি শবরূপে পায়। নিগমে তাহার নিগুঢ় না পায়’।

    জনৈকা আফ্রিকান আমেরিকান অধ্যাপিকা কলিকাতায় কালীমূর্তি দর্শনে উল্লসিত হইয়া খল খল হাসিয়াছিলেন। কারণ ইতিপূর্বে তিনি  শায়িত শ্বেতাঙ্গ পুরুষের বুকের উপর পদস্থাপন করিয়া দণ্ডায়মান ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দেবীমূর্তি দেখেন নাই। [3]

    কিন্তু ইদানীং জনৈকা রাজনৈতিক বামা হররমার কালীমূর্তি বিষয়ক মন্তব্যে শুরু হইয়াছে তর্জা ঃ ধূম মচালে! ধূম মচালে!

    আসুন, কিঞ্চিৎ তলাইয়া দেখা যাক – শ্মশানবাসিনী দেবী কালিকার পুজায় আমিষ ও কারণবারির নৈবেদ্য কতদূর ঐতিহ্য সম্মত।

    “মজলো আমার মনভ্রমরা কালীপদ হৃদকমলে”

    বাঙালী বরাবরই কালীতে মজেছে। সারা ভারতের যেখানেই বাঙালীর পা’ পড়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একটি কালী মন্দির, সঙ্গে একটি অতিথিশালা, বাংলা বইয়ের লাইব্রেরি ও ছোটখাট থিয়েটারের স্টেজ। এই হচ্ছে বাঙালীর পরিচয়।

    আমি নিজে কয়েক দশক আগে দিল্লির সবচেয়ে পুরনো কালীবাড়িতে টিকিট কেটে তিনদিন ছিলাম। পনের টাকায় তক্তপোষ, বিছানা, সকালের চা, জলখাবার ও দুবেলা ভাত ডাল মাছের ঝোল। ভাবা যায় !

    হ্যাঁ, কালীবাড়িতে মাছমাংস হয়, সে আপনি যতই নাক সিঁটকান গে’। বরানগর রামকৃষ্ণ মিশনের হোস্টেলে পড়েছি পাঁচবছর। সেখানেও দু’বেলা আমিষ আহার।

    আর এইখানেই শুরু হয়েছে যত ঝামেলা! জনৈক বামা রাজনীতিবিদ এবং সাংসদ কালীমাতার  আহারের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করায় শুরু হয়েছেঃ  হারে রে রে রে রে! কালীমাতার আমিষ ভোজন! এসব বলিস কী রে!

    গণ্ডগোলের মূলে হল  দুটো পুজোকে — কালীপুজো আর মহালক্ষ্মী পুজো - ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলার রাজনীতি।

    বাঙালীর কালীপুজো বনাম উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো

    নিঃসন্দেহে দুটো পুজোই দীপাবলীর রাতে হয়। কিন্তু হিন্দি বলয়ের দেবীর নাম মহালক্ষ্মী, তিনি আমাদের কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দেবীর মত ধনদাত্রী।  

    তিনি আমাদের মা কালীর মত লোলজিহ্বা করালবদনী নন। তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ঝোলে না, তিনি নগ্নিকা নন। তাঁর হাতে রক্তমাখা খাঁড়া, থুড়ি খর্পর,  থাকে না। পাশে  ডাকিনী যোগিনী, শেয়াল কিছুই নেই। তিনি আদৌ শ্মশানচারিণী নন, তাঁর প্রতিমার ধারে কাছে কোন যুদ্ধ বা রক্তারক্তি ব্যাপার নেই। তাঁর আবাস মানুষের গৃহে, সিন্দুকের পাশে।

    উত্তর ভারতের মহালক্ষ্মী পুজো করে দোকানদারেরা হালখাতা করে। অর্থাৎ ওদের গত বছরের দেনাপাওনার হিসেব নিকেশ করে সেই খাতা বন্ধ করে লালশালুতে মোড়া নতুন খাতায় লিখে দেবীর পায়ে ছোঁয়ায়। কিন্তু বাঙালীর হালখাতা যে পয়লা বৈশাখে, বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে, দুটোকে গুলিয়ে ফেললে খর্চা আছে।

    কাজেই হিন্দি বলয়ে দেওয়ালির সময় নিরিমিষ খেতে হয়। আর আপনি যদি ইউটিউব বা ফেসবুক থেকে পুজোর বিধি নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে চান তাহলে দেখবেন বলা হচ্ছে --

    কালীপুজোর সময় বাড়ির রান্নায় রসুন চলবে না। মাছ-মাংস দূর কী বাত! পাড়ায় ওসবের দোকান বন্ধ রাখতে হবে।

    আর একই বিধান দুর্গাপুজোর সময়েও, নবরাত্রির পুরো ন’দিন ধরে।

    আহা রে! বাঙালী অষ্টমীর দিন নবমীর দিন মাছ, কষা মাংস খাবে না, দশমীর দিন জোড়া ইলিশের দিকে তাকাবে না — এমন অলুক্ষুণে কথা কে কবে শুনেছে! আর সারাবছর কালীঘাটে মায়ের কাছে বলিপ্রদত্ত পশুর মাংস যে আমাদের মহাপ্রসাদ — এসব ভুলে যেতে হবে?

    মন ভাল করতে এবার একটি রামপ্রসাদী শুনুন। এই গানটি ঠাকুর রামকৃষ্ণেরও বড় পছন্দ।

    ‘এবার কালী তোমায় খাব।
    ডাকিনী যোগিনী দুটা, তরকারি বানায়ে খাব,
    তোমার মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বলে সম্ভার চড়াব’।

    দেবী কালীর উৎপত্তি ও কালী মন্দির নিয়ে দুটি কথা

    দেবী কালী বৈদিক দেবী নন। বস্তুতঃ ঋগবেদে ইন্দ্র এবং অগ্নি হলেন প্রধান দেবতা। প্রায় ১০০০ শ্লোকের ৭০০ শ্লোকই এদের দুজনের মহিমা নিয়ে। বেদ পুরুষ প্রধান। দেবী বলতে উষা ও সরস্বতীকে নিয়ে দু’টি বা তিনটি শ্লোক।  আজকাল একটা কথা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে যে ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১২৫ তম সূক্তের (৮টি শ্লোক) মধ্যে কালীর উল্লেখ রয়েছে। কথাটি সর্বৈব ভুল। যে কেউ বেদের বই খুলে মিলিয়ে নিতে পারেন — ওই আটটি অনুবাকে দুর্গা বা কালীর কোন উল্লেখ নেই।

    কালীর উৎপত্তি পাওয়া যাবে তন্ত্রে এবং পুরাণকথায়। কালী হলেন দুর্গারই আরেক এবং প্রধান রূপ। দেবীভাগবতে বা আমাদের চণ্ডীপাঠে জানা যাচ্ছে যে শুম্ভ-নিশুম্ভ এবং রক্তবীজের বধের জন্যে দেবী দুর্গার ক্রোধ উৎপন্ন হলে তাঁর ভ্রূকুটি থেকে ভীষণদর্শনা ভীমা কালীর উৎপত্তি।  যাতে রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়ে নতুন অসুর না জন্মায় তাই কালী এবং তাঁর দুই সহচরী ও সঙ্গের শৃগাল রক্ত পান করে নেয়।

    আবার পার্বতী বা সতী যখন নেমতন্ন না পাওয়া স্বামী শিবকে তাঁর শ্বশুরের যজ্ঞে জোর করে যাওয়া থেকে আটকাতে চাইলেন তখন  তিনি দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে স্বামীকে দশদিকে আটকে দিলেন।

    শক্তিরূপা কালীর দশরূপ হল কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।

    কালীর ছিন্নমস্তা রূপের বর্ণনা শুনুন।

    “ষষ্ঠে ছিন্নমস্তারূপ ধারণ করিলে,
    নিজ মুণ্ড ছিন্ন করি করেতে ধরিলে”।

    এবার কল্পনা করুনঃ দেবীর ছিন্নমস্তক  থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত তিনটি ধারায় উপচে পড়ছে, এবং তা পান করছে তাঁর দুই সহচরী এবং তিনি নিজে। কীভাবে? তাঁর বাঁ হাতে ধৃত নিজের ছিন্ন মুণ্ড নিজেরই রক্তধারা পান করছে!

    গড়পড়তা লোক এই দৃশ্যে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কিন্তু বাঙালী যে ভীষণের সাধনা করে।

    নজরুল গান বেঁধেছেন “শ্মশানে জাগিছে শ্যামা, অন্তিমে সন্তানে দিতে কোল”।

    বিবেকানন্দ কবিতা লিখেছেনঃ
    “লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর, দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,
    নাচে তারা উন্মাদ তাণ্ডবে, মৃত্যুরূপা মা আমার আয়”।
    (ইংরেজি থেকে অনুবাদ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।

    “স্বামীর বুকে পা তুলে ওই দাঁড়িয়ে আছে মা কালী”

    সর্বত্র কালী মূর্চ্ছিত শিবের বুকে এক পা তুলে দণ্ডায়মান। ডান পা তুললে দক্ষিণাকালী, বাঁ পা তুললে বামা। তাঁর পুজো হয় তন্ত্রমতে। তাই পুজোয় নৈবেদ্যে লাগে শুধু রক্তজবা নয়, কারণবারি (মদ), মৎস (মাছ), মাংস, মুদ্রা (শস্য, মতান্তরে আরাধনার বিশেষ আসনভঙ্গী)।

    কারণ তন্ত্রসাধনায় আবশ্যক উপকরণ হল পঞ্চ ম’কার। পাঁচটি ম --- মদ্য, মৎস্য, মাংস, মুদ্রা এবং মৈথুন। কালের প্রভাবে কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মৈথুন শুধু তন্ত্রমতে সাধনরত সাধক সাধিকার বা ভৈরব-ভৈরবীর জন্যে। এই শতাব্দীতে পশুবলি প্রথা প্রায় অধিকাংশ জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত শতাব্দীতে বন্ধ হয়েছে কাপালিকদের নরবলি। কিন্তু এসব প্রথা যে ছিল তা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

    মনে করুন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলায় নবকুমারকে বলি দেওয়ার চেষ্টা। কান পেতে শুনুন বিখ্যাত “নেচে নেচে আয় মা শ্যামা” গানটির দ্বিতীয় অন্তরাটি “মা, কোথায় পাব মহিষবলি, কোথায় পাব নরবলি”।

    কিন্তু মা কালীর নিত্যপুজোয় তন্ত্রমতে প্রথম চারটি ম’ আজও লাগে।

    দক্ষিণাকালীর আরাধনার মূল তান্ত্রিক মন্ত্র দেখুনঃ

    ওঁ হ্রীং হ্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং দক্ষিণকালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হীং হীং স্বাহা।।

    মন্দিরগুলোঃ

    অধিকাংশ প্রাচীন কালীমন্দিরের সম্বন্ধ সতীর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছে সেই শক্তিপীঠের সঙ্গে। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে ১৮টি পড়েছে অবিভক্ত  বাংলাদেশে। পশ্চিম এবং পূর্বের ভাগ প্রায় সমান সমান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটিতে দেবীর নৈবেদ্য কী কী দেওয়া হয় দেখুন।

    * তারাপীঠ: একান্নটি পীঠের অন্যতম। আজও দেবীর ভোগে  দেওয়া হয় মাছের মাথা, কৌশিকী অমাবস্যায় মাছ মাংসের ভোগ, শোল পোড়া।

    * কালীঘাটঃ শক্তিপীঠের মাহাত্ম্যের বিচারে গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের পরেই কালীঘাটের কালীমন্দির। এখানে দেবীর ভোগ হয় মাছের কালিয়া  এবং পাঁঠার মাংসে। এছাড়া রয়েছে আঁশ যুক্ত মাছ, কাতলা মাছ, রুই, ইলিশ চুনো মাছের টক।

    * বেহালার সিদ্ধ্বেশ্বরী কালী মন্দির ৩৫০ বছর পুরনো। এখানে বার্ষিক পুজোয় ভোগে দেওয়া হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাবড়া, আলুর দম, মাছ মাংস, চাটনি, পায়েস।

    * হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির দুই শতাব্দী প্রাচীন। এখানে তন্ত্রমতে পুজো হয়, ফলে পঞ্চ মকারের প্রথম চারটি নিত্য ভোগে লাগে।

    * অম্বিকা কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের নিত্যদিনের অন্নভোগে মাছ দেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক পুজোয় চিংড়ি ও ইলিশ।

    * ঘাটশিলার রঙ্কিনী দেবীর মন্দিরে আজও পশুবলি হয়, বলির বেদী ও হাড়িকাঠ প্রকাশ্যে রয়েছে।

    * উত্তরপাড়ার কাছে ভদ্রকালী মন্দির আনুমানিক ১৭৩০ খ্রীষ্টাব্দে শেওড়াফুলির রাজা মনোহর রায়। সেখানেও তন্ত্রমতে মায়ের নৈবেদ্যে আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। মা সারদা ঠাকুরের তিরোধানের পর একটি কালী মন্দির গড়ে তোলেন। তাতে ঠাকুরের প্রিয় জিওল মাছ ভোগ দেওয়া হয়।

    * বর্ধমানের মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামে যোগাদ্যা কালী মন্দিরে পশুবলি হয়, আগে নরবলি হত। আজকাল আঙুল কেটে মায়ের ঠোঁটে রক্ত ছোয়ানো হয়।

    * বোলপুরের কাছে সুরুলের রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোয় বলি দেওয়া হয়; সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো-আখ।

    * বোলপুরের থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর পাড়ে কঙ্কালীতলার মহাশ্মশান। সেখানের কালীমন্দির ও একটি শক্তিপীঠ এবং তন্ত্রসাধনার জন্যে বিখ্যাত। ওখানে সতীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ পড়েছিল। সুতরাং তন্ত্রমতে পুজোর সময় কী কী ভোগ নিবেদন করা হয় তা পাঠকেরাই বুঝে নিন।

    * গুয়াহাটির স্টেশনের কাছে ব্রহ্মপুত্রের তীরে কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রসাধনার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত।  পুরাণকথা অনুসারে এই শক্তিপীঠে সতীর যোনি পড়েছিল। এখানেও দেবীর ভোগে আমিষ দেওয়া হয়। পুজারীরা মনে করেন যে  আষাঢ় মাসে দেবী পার্বতীর মেন্সট্রুয়েশন হয়। তাখন তিন চারদিন ভক্তরা দর্শন করতে পারেন না। ব্রহ্মপুত্রের জল লাল হয়ে যায়।

    * ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।

    * বাংলাদেশের যশোরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। বারো ভুঁইঞার অন্যতম মহারাজ প্রতাপাদিত্য  রায়ের নির্মিত। ওখানে ছাগবলি এখনও হয়। অন্যে পরে কা কথা—আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদীজি স্বয়ং ২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের দু’দিনের সফরে গিয়ে ওই মন্দিরে দেবীদর্শন করে দেবীপ্রতিমার মাথায় মুকুট চড়িয়ে এসেছেন।

    * শেষ করছি রামকৃষ্ণদেবের  সাধনার সঙ্গে যুক্ত বিখ্যাত দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের কথা বলে। ওখানে এখন বলি বহুদিন বন্ধ। তবে ১৯৬৮-তেও আমি মোষ বলি দেখেছিলাম। এখন দেবীর পুজোয় পাঁচ রকমের মাছ দেওয়া হয়, মাংস নয়।

    শেষ কথাঃ

    দেখতেই পাচ্ছেন, বৈদিক মন্ত্র এবং তন্ত্রসাধনার পথ সমান্তরাল। তন্ত্রমতের দার্শনিক ভিত্তি হল সাংখ্য দর্শন।  দেবী বা প্রকৃতি হলেন প্রধান এবং সক্রিয়। পুরুষ হলেন নির্বিকার এবং অচেতন। তাই অচেতন শিব বিনা দ্বিধায় শক্তিস্বরূপা কালীর পায়ের নীচে বুক পেতে পড়ে থাকেন।

    তন্ত্রের কালীমাতা  দিগম্বরী; হিন্দি বলয়ের কোন দেবী এমন নন। কোনও দেবীর হাতের খর্পর থেকে রক্ত ঝরে না। আমাদের মিশনের কালীকীর্তনে আছেঃ

             “বসন নাহিক গায়, পদ্মগন্ধে অলি ধায়,
            বামা চলে যেতে ঢলে পড়ে আসব ভরে”।

    শ্রীশ্রী চণ্ডীতে দেখা যাচ্ছে মহিষাসুর বধের আগে দেবী দুর্গা সুরাপান করছেন এবং মহিষাসুরকে বলছেন “গর্জ গর্জ ক্ষণং মুঢ় মধু  যাবৎ পিবাম্যহং”।

    নে নে, যতক্ষণ মধুপান করছি, ততক্ষণ খুব গর্জন করে নে। তারপর তোর শেষ।
    মধুপানে দেবীর মুখমণ্ডল রক্তাভ হয়ে উঠল। দেবী তারপর অসুরকে বধ করলেন।

    অর্থাৎ খাওয়াদাওয়া, পান করা নিয়ে আমাদের ধর্মে কোন বিরোধ নেই। এমনকি বৈদিক ধর্মের নিয়মবেত্তা মহর্ষি মনু তাঁর সংহিতায় বিধান দিচ্ছেনঃ ভোজনের যোগ্য পশুমাংস আহারে কোন পাপ হয় না। কারণ ব্রহ্মা খাদক এবং খাদ্য উভয়কেই ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছেন। (৫/৩০, মনুসংহিতা)।

    সেই খাদ্যগুলো কী? মাছ, হরিণ, কুক্কুট ভেড়া, খরগোস এবং বলি দিয়ে পবিত্র করা হয় এমন মাংস। (৩/২৬৭ থেকে ৩/২৭২; মনু সংহিতা)।

    আমার বিবেচনায় হিন্দুধর্ম এবং শাস্ত্র বহুমাত্রিক এবং বৈচিত্র্যময়। যাঁরা দেওয়ালির রাতে কেবল ধনপ্রাপ্তির জন্যে নিরামিষ ভোগ দিয়ে মহালক্ষ্মীর পুজো করতে চান, তাই করুন। কিন্তু যে বাঙালীরা বারোয়ারি কালীপুজোয় খিচুড়িভোগ ছাড়াও ঘরে বা কালীমন্দিরে মায়ের পুজোয় মাছ-মাংসের নৈবেদ্য চড়াতে চান তাঁদের বাধা দেওয়া কেন?

    সবাইকেই কি জোর করে বাটা কোম্পানির সাত নম্বর মাপের জুতো পরাতে হবে? আপনারাই বলুন।

    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [1] গবেষক ও সাংবাদিক তরুণ গোস্বামীর প্রবন্ধ, ৪র্থ পিলার্স ডট কম, ৭ম জুলাই, ২০২২
    [2] ঐ
    [3] ঐ
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 42.110.147.218 | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৫738153
  • আপনি রামপ্রসাদ, কমলাকান্তের গানকে শাস্ত্রীয় প্রমাণ রূপে গণ্য করবেন না। ঠিক আছে, তাহলে শাস্ত্র আলোচনাই করা যাক।
     
    চণ্ডী-
    দেবীবাক্য- "একমাত্র আমিই এই জগতে বিরাজিতা। আমি ব্যতীত দ্বিতীয় আর কে আছে?"
     
    দেবী ভাগবত পুরাণ-
    দেবীবাক্য- "আমি ও ব্রহ্ম এক। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ নেই।"
     
    এইরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। স্পষ্টত‌ই এখানে অদ্বৈততত্ত্বের কথাই বলা হয়েছে। এই শক্তিসমন্বিত অদ্বৈতবাদ‌ই শাক্তদর্শনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
     
    সর্বানন্দ, কৃষ্ণানন্দ, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত - সব শক্তিসাধকেরাই এই দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন।
  • দীপ | 42.110.144.122 | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১১:৩৮738224
  • The one original transcendent Shakti, the Mother stands above all the worlds and bears in her eternal consciousness the Supreme Divine. Alone, she harbours the absolute Power and the ineffable Presence; containing or calling the Truths that have to be manifested, she brings them down from the Mystery in which they were hidden into the light of her infinite consciousness and gives them a form of force in her omnipotent power and her boundless life and a body in the universe. 

    The Mother, Sri Aurobindo
  • দীপ | 42.110.144.122 | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১১:৪০738225
  • অরবিন্দের দৃষ্টিতে বিশ্বজননীর রূপ ও ক্রিয়া। 
    দেবীর সর্বস্বাতন্ত্র্য ও পারম্য‌ই প্রকাশিত হয়েছে।
  • দীপ | 42.110.144.122 | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১৬:০৪738226
  • কেউ কেউ বলছেন, গীতাতে শক্তিবাদ আলোচিত হয়নি। অবশ্য‌ই সত্য। গীতাতে বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত - কোনো মত‌ই পৃথকভাবে আলোচিত হয়নি। সেজন্য‌ই বৈষ্ণব দার্শনিক পরবর্তীকালে ভাগবত পুরাণ, নারদীয় ভক্তিসূত্র, নারদীয় পঞ্চরাত্র প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন।‌ ষড়গোস্বামী বৈষ্ণবদর্শনের ভাষ্য রচনা করেন। কৃষ্ণদাস কবিরাজ চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে বৈষ্ণব দর্শন ব্যাখ্যা করেন। শুধু গীতায় কাজ হলে এই গ্রন্থগুলির প্রয়োজন হতো না!
    এক‌ইভাবে শৈব দার্শনিক শৈবাগম শাস্ত্র রচনা করেন। অর্থাৎ গীতার চিন্তা কে গ্রহণ করে তার ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগ সৃষ্টি হয়।
  • দীপ | 42.110.144.122 | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১৬:১৩738227
  • তেমনি শক্তিবাদের ভিত্তিস্থাপনের জন্য চণ্ডী, দেবী বিষয়ক পুরাণ, তন্ত্রসাহিত্য প্রভৃতি গ্রন্থের প্রয়োজন হয়। 
    প্রসঙ্গত গীতা যেমন মহাভারতের অংশ হয়েও স্বতন্ত্র গ্রন্থ রূপে স্বীকৃত, চণ্ডীও তেমনি মার্কণ্ডেয়পুরাণের অংশ হয়েও স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসেবে গৃহীত। এই দুটি গ্রন্থের গুরুত্ব এখান থেকেই বোঝা যায়।‌ তাই ভারতীয় শাস্ত্রের উল্লেখে এই দুটিগ্রন্থ প্রায় একসাথেই উল্লেখিত হয়। অর্থাৎ চণ্ডীকে বাদ দিয়ে ভারতীয় দর্শন আলোচনা করা সম্ভব নয়!
     
  • দীপ | 42.110.144.122 | ১৬ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৯738229
  • চণ্ডীতে দেবীর সর্বস্বাতন্ত্র্য ও পারম্য বর্ণিত হয়েছে। শাক্তের দৃষ্টিতে দেবী/ জগন্মাতাই পরম সত্য, তাঁর থেকেই সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের উদ্ভব ও বিকাশ। তাঁর ব্রাহ্মীশক্তির মাধ্যমে ব্রহ্মা সৃষ্টি করেন, বৈষ্ণবী পালনীশক্তির দ্বারা বিষ্ণু পালন করেন, রৌদ্রীশক্তির দ্বারা শিব প্রলয় করেন। দেবীর এই পারম্য‌ই দেবীসূক্তম, চণ্ডী ও অন্যান্য গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে।
    সেজন্য‌ই পঞ্চম অধ্যায়ে অপরাজিতা স্তূতিতে বারবার বলা হয়, "হে সত্ত্বগুণরূপিণী তোমাকে প্রণাম, হে রজোগুণরূপিণী তোমাকে প্রণাম, হে তমোগুণরূপিণী তোমাকে প্রণাম, এবং সে পরব্রহ্মস্বরূপিণী তোমাকে বারবার প্রণাম।"
    অর্থাৎ দেবী একাধারে সগুণা ও নির্গুণা। সগুণরূপে তিনি নিজেকে জগদাকারে প্রকাশ করেন, নির্গুণস্বরূপে তিনি জগদাতীতা, পরব্রহ্মস্বরূপিণী।
    চণ্ডীতে এই তত্ত্ব‌ই প্রকাশিত হয়েছে।
  • ... | 103.220.209.92 | ১৮ আগস্ট ২০২২ ১৯:০৭738239
  • "Mumbo jumbo"
  • দীপ | 42.110.137.3 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:১৭738463
  • দ্বারেণার্কেনায়ণে ত্বাদ্যকে ত্বাং
    মুক্তিং যান্তি ত্বৎপদধ্যানযোগাৎ।
    চন্দ্রদ্বারেণায়নে তু দ্বিতীয়ে
     
    তোমার চরণারবিন্দধ্যানযোগী জনগণ, উত্তরায়ণে সূর্যদ্বারা মুক্তিরূপিণী তোমাকে প্রাপ্ত হন এবং দক্ষিণায়ণে সূক্ষ্মা মুক্তিরূপিণী তোমাকে চন্দ্রদ্বারা লাভ করেন। উচ্চকে নীচ করতে ও নীচকে উচ্চ করতে আর চন্দ্রকে সূর্য করতে ও সূর্যকে চন্দ্র করতে একমাত্র তুমিই সমর্থা। এইক্ষণে অকালে শক্তিরূপা হও, প্রণত হয়ে আমরা তোমার বোধন করছি, প্রসন্না হও। রামে যে শক্তি ও রাবণে যে শক্তি, সব তুমিই। তুমিই রুদ্র, ইন্দ্রাদি দেবগণের দেহে শক্তি রূপে বিরাজিতা। সেই সর্বশক্তিরূপিণী তুমি এককভাবে রামেই প্রবৃত্ত হও, হে দেবি, তোমার বোধন করি, তুমি প্রসন্না হও।
     
    বৃহদ্ধর্মপুরাণ
     
    দেবীর সর্বস্বাতন্ত্র্য ও পারম্য।
  • দীপ | 42.110.137.3 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৩২738464
  • দীপ | 42.110.137.3 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৪১738465
  • দেবীর আত্মপরিচয় প্রদান। তিনি সর্বব্যাপী, সর্বপ্রাণীতে তাঁর‌ই অধিষ্ঠান। দেবকুল তাঁর শক্তিতেই শক্তিমান। তাঁর শক্তিতেই কেউ ব্রহ্মা হয়, কেউবা ব্রহ্মর্ষি হয়। তিনিই একাধারে জগৎরূপে প্রকাশিত হয়েছেন, আবার জগতের অতীত নির্লিপ্ত সত্তারূপে অবস্থান করছেন।
    দেবীর ত্রিগুণাত্মিকা ও ত্রিগুণাতীতা উভয় স্বরূপ‌ই এই অসামান্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
    প্রসঙ্গত মহালয়ার দিন প্রচারিত অনুষ্ঠানে এই দেবীসূক্তম সমবেত কণ্ঠে গীত হয়।
  • দীপ | 42.110.137.3 | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৪৪738466
  • দীপ | 42.110.144.213 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:১২738497
  • সকল দেবগণ দেবীর সমীপে উপস্থিত হ'য়ে জিজ্ঞাসা করেন, 'হে মহাদেবি, আপনি কে?'

    দেবী বলেন, 'আমি ব্রহ্মস্বরূপিণী। আমার থেকেই উৎপন্ন প্রকৃতি-পুরুষাত্মক এই জগৎ। আমি শূন্য-অশূন্য, আনন্দ-অনানন্দ, বিজ্ঞান-অবিজ্ঞান, ব্রহ্ম-অব্রহ্ম,আমিই পঞ্চভূত, অ-পঞ্চভূত। এই অখিল জগৎ আমিই। আমি বেদ-অবেদ, বিদ্যা-অবিদ্যা, অজা-অনজা। অধঃ, ঊর্ধ্ব, তির্যক, সব আমিই।

    আমিই একাদশ রুদ্র, অষ্টবসু, দ্বাদশ আদিত্য ও বিশ্বদেবতা রূপে বিচরণ করি। আমিই মিত্র ও বরুণ উভয়কে ধারণ করি। ইন্দ্র,অগ্নি ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়কেও আমিই ধারণ করি। 

    আমি শত্রুহন্তা সোম, ত্বষ্টা, পূষা ও ভগকে ধারণ ক'রে থাকি। ত্রিবিক্রম বিষ্ণু, ব্রহ্মা ,ও প্রজাপতিও আমার দ্বারা ধৃত। 

    আমিই উত্তম হবি দ্বারা দেবগণকে তৃপ্তকারী যজমানগণকে যজ্ঞের ফলস্বরূপ ধন প্রদান ক'রে থাকি। আমি  জগতের একমাত্র অধীশ্বরী, উপাসকের ধনদাত্রী, ব্রহ্মজ্ঞানময়ী ও প্রথমপূজ্যা। জগতের সর্বোচ্চ স্থানে পরমপিতা পরমপুরুষকেও আমিই প্রসব করি। আমার প্রকাশস্থল ধীবৃত্তির অন্তরালে অবস্থিত সমুদ্রবৎ ব্রহ্মচৈতন্য। এই তত্ত্ব যিনি অবগত হন তিনি দৈবী সম্পদরূপী পরমজ্ঞান লাভ করেন।'

    -দেবী উপনিষদ
  • দীপ | 42.110.144.213 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১০:৩৮738498
  • দেবী উপনিষদের নির্বাচিত অংশ। এটিকে অথর্ববেদের অংশরূপে গণ্য করা হয়, যদিও অনেক পরে সঙ্কলিত। 
    যে শ্লোকগুলির অনুবাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি ঋগ্বেদীয় দেবীসূক্তমের পুনরাবৃত্তি। অর্থাৎ শক্তিবাদের আদি উৎস দেবীসূক্তম। একে অস্বীকার করে কোনোভাবেই শক্তিবাদ নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয়।
    আর একটি বিষয়‌ও খুব স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করি। শক্তিসাধক বিভিন্ন দর্শনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। তিনি সাংখ্য দর্শনের পুরুষ-প্রকৃতি তত্ত্ব অবশ্য‌ই গ্রহণ করেছেন, কিন্তু সেখানেই না থেমে শেষপর্যন্ত অদ্বৈততত্ত্বে উপনীত হয়েছেন। দেবী ব্রহ্মস্বরূপিণী, তাঁর থেকেই প্রকৃতিপুরুষাত্মক জগতের সৃষ্টি হয়েছে; এটিই তাঁর অভিমত। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাকে মিলিত করেছেন। এটাই ভারতীয় চিন্তার মূল অভিমুখ। 
  • দীপ | 42.110.139.232 | ২২ অক্টোবর ২০২২ ২২:১৮738639
  • দীপ | 42.110.139.232 | ২২ অক্টোবর ২০২২ ২২:২২738640
  • দশমহাবিদ্যার কাহিনী animatation এর মাধ্যমে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তি দেখতে পারেন। দেবীর সর্বব্যাপিত্ব ও পারম্য প্রকাশিত হয়েছে। 
    প্রসঙ্গত মহাভাগবত পুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণে দশমহাবিদ্যা র কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
  • দীপ | 42.110.146.66 | ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৫738649
  • দীপ | 42.110.146.66 | ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৮738650
  • দীপ | 42.110.146.66 | ২৪ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪০738651
  • নজরুল এই দুই গানের মধ্য দিয়ে  শক্তিবাদের মূল তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন। নির্গুণ কূটস্থ ব্রহ্ম‌ই সৃজনানন্দে প্রকাশিত শক্তি, জগন্মাতা। তাঁর সৃজনীশক্তিই ব্রহ্মা, পালনীশক্তি বিষ্ণু, সংহারশক্তি রুদ্র। তাঁর শক্তিতেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব শক্তিমান।
    তিনি নিরাকারা, আবার সাকারা।
    সাধকের কাছে তিনি সাকারা রূপ পরিগ্রহ করেন।
    তুলনীয়, 
    " তিনি অরূপা হয়েও রূপ পরিগ্রহ করেন।
    তুমি নিরাকারা, আবার তুমিই সাকারা। কে তোমাকে সম্পূর্ণভাবে বুঝতে সমর্থ? "
    (মহানির্বাণ তন্ত্র)
    "সাধকের বাঞ্ছাপূর্ণ কর নানা রূপধারিণী।"
    (সাধক কমলাকান্ত)
    সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তাঁর প্রকাশ, বিনাশ‌ও তাঁর‌ই লীলা।
    জীবন-মৃত্যু, সৃষ্টি-বিনাশ, সাফল্য-ব্যর্থতা; সবকিছুর মধ্যে তাঁর‌ই প্রকাশ।
    কবি তাঁর অসামান্য প্রতিভায় এই তত্ত্ব এই দুই গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
     
  • দীপ | 42.110.146.66 | ২৪ অক্টোবর ২০২২ ২২:৪৯738656
  • "আমাদের দেশেও কোনো সম্প্রদায়ের সাধকরা ঈশ্বরকে দুঃখদারুণ ভীষণ মূর্তির মধ্যেই মা বলিয়া ডাকিয়াছেন। সে-মূর্তিকে বাহ্যত কোথাও তাঁহারা মধুর ও কোমল, শোভন ও সুখকর করিবার লেশমাত্র চেষ্টা করেন নাই। সংহার-রূপকেই তাঁহারা জননী বলিয়া অনুভব করিতেছেন। এই সংহারের বিভীষিকার মধ্যেই তাঁহারা শক্তি ও শিবের সম্মিলন প্রত্যক্ষ করিবার সাধনা করেন।
     
    শক্তিতে ও ভক্তিতে যাহারা দুর্বল, তাহারাই কেবল সুখস্বাচ্ছন্দ্য-শোভাসম্পদের মধ্যেই ঈশ্বরের আবির্ভাবকে সত্য বলিয়া অনুভব করিতে চায়। ঈশ্বরের দয়াকে তাহারা বড়োই সকরুণ বড়োই কোমলকান্ত রূপে দেখে। সেইজন্যই এই-সকল দুর্বলচিত্ত সুখের পূজারিগণ ঈশ্বরের দয়াকে নিজের লোভের, মোহের ও ভীরুতার সহায় বলিয়া ক্ষুদ্র ও খণ্ডিত করিয়া জানে।
     
    কিন্তু হে ভীষণ, তোমার দয়াকে তোমার আনন্দকে কোথায় সীমাবদ্ধ করিব? কেবল সুখে, কেবল সম্পদে, কেবল জীবনে, কেবল নিরাপদ নিরাতঙ্কতায়?
     
    হে প্রচন্ড, আমি তোমার কাছে সেই শক্তি প্রার্থনা করি যাহাতে তোমাকে অসম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করিয়া নিজেকে না প্রবঞ্চিত করি। কম্পিত হৃৎপিণ্ড লইয়া অশ্রুসিক্ত নেত্রে তোমাকে দয়াময় বলিয়া নিজেকে ভুলাইব না -- তুমি যে মানুষকে যুগে যুগে অসত্য হইতে সত্যে অন্ধকার হইতে জ্যোতিতে মৃত্যু হইতে অমৃতে উদ্ধার করিতেছ, সেই যে উদ্ধারের পথ সে তো আরামের পথ নহে সে যে পরম দুঃখেরই পথ।"
     
    - দুঃখ, ধর্ম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • দীপ | 42.110.147.39 | ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১২:৪৬738714
  • "মায়ের নাম মহামায়া, এও তাঁহার এক মহা-মায়া। এই মায়াতে অন্ধ হইয়াই অপক্কবুদ্ধি পণ্ডিতগণ ভ্রান্তসিদ্ধান্ত-কূপে পড়িয়া আত্মহারা হয়েন, বুঝিয়া থাকেন মায়া কেবল জড়-জগতের উপাদান বই আর কিছুই নহে এবং যিনি সেই মায়ায় আশ্রয়ভূতা মূলরূপা পূর্ণব্রহ্ম-সনাতনী, তিনিও মায়া। তিনিও যদি মায়া, তবে আর 'মহামায়া' নাম কেন? মায়া আর মায়াবী যদি একই পদার্থ, বীজ আর বৃক্ষ যদি একই বস্তু, তবে আর অবস্থার বৈষম্য কেন? নামের ভেদ কেন? স্বরূপেরই বা পার্থক্য কেন? ফলতঃ সেই মহাশক্তির মায়াংশ লক্ষ্য করিয়া শাস্ত্র যেখানে তাঁহার উল্লেখ করিয়াছেন, সেখানেও 'মহামায়া' নাম দিয়াছেন। আবার যেখানে ব্রহ্মস্বরূপ লক্ষ্য করিয়া উল্লেখ করিয়াছেন, সে স্থানেও 'মহামায়া' বলিয়াই কীর্ত্তন করিয়াছেন। উভয়স্থলেই মহৎ শব্দ মায়ার বিশেষণ। তবে বিশেষ এই যে, মায়াংশে কর্ম্মধারয় সমাস অর্থাৎ যিনি মহতী মায়া তাঁহারই নাম মহামায়া, আর ব্রহ্মাংশে বহুব্রীহি সমাস অর্থাৎ মহতী মায়া যাঁহার তিনিই মহামায়া। লূতা (গুটি পোকা) যেমন তন্তুবয়ন কার্য্যের প্রতি নিজেই নিমিত্ত কারণ এবং নিজেই উপাদান কারণ অর্থাৎ তাঁহার সূত্রজাল বিস্তাররূপ কার্য্য তাহারই ইচ্ছাক্রমে ঘটিতেছে, এইস্থানে সে নিমিত্ত কারণ। আবার সে সূত্রসৃষ্টি তাহারই শরীর হইতে উৎপন্ন হইতেছে, এইস্থানে সে উপাদান কারণ। তদ্রূপ এই জগৎ-কার্য্যের প্রতি সেই মহাশক্তি নিজেই নিমিত্ত কারণ এবং নিজেই উপাদান কারণ অর্থাৎ যখন সেই ইচ্ছাময়ী নিজ আনন্দময় সত্য সঙ্কল্পে ব্রহ্মাণ্ডসৃষ্টির ইচ্ছা করিয়াছেন তখনই তিনি নিমিত্ত-কারণ। আবার যখন আত্মবিভূতিরূপিণী মায়ার বিস্তার করিয়া তাহা হইতে এই প্রপঞ্চ চরাচর বিরচিত করিয়াছেন তখনই তিনি উপাদান-কারণ। এই নিমিত্ত-রূপ অংশ শক্তি বা ব্রহ্ম, উপাদান-রূপ অংশ মায়া। সৃষ্টি-প্রক্রিয়াতেও জীবদেহে ব্রহ্মাংশ আত্মা, মায়াংশ অন্তঃকরণ। গুটিপোকার দৃষ্টান্তেই মায়ার আর একটি অবস্থা আছে- নিজসূত্ররচিত জালে নিজে বদ্ধ হইয়া আবার সমস্ত সূত্র আত্মসাৎ করিয়া কিছুকাল সেই সূত্র মধ্যে বেষ্টিত অথচ সমাহিত হইয়া থাকে, কালক্রমে সেই সূত্রাবরণ মধ্যেই তাহার স্বরূপের পরিবর্ত্তন ঘটিতে থাকে। কিছুদিন পরে সেই গুটিপোকাই আবার প্রজাপতি-রূপ ধারণ করিয়া নিজ সূত্র-গর্ভকোষ বিদীর্ণ করিয়া সেই সুন্দরাদপি-সুন্দরতম বিচিত্র দেহটি লইয়া স্বচ্ছ সূক্ষ্ম পক্ষপুট বিস্তারপূর্ব্বক নির্ম্মুক্ত-জীবনে স্বচ্ছন্দ হৃদয়ে পরমানন্দে অনন্ত আকাশকক্ষে উড্ডীন হইয়া যায়, পৃথিবীতে কেবল সেই বিদীর্ণ সূত্রকোষটি মাত্র পড়িয়া থাকে। মায়াংশ মনও তদ্রূপ নিজ-রচিত সংসারসূত্রে নিজে বদ্ধ হইয়া সেই সংসারেই আকৃষ্ট এবং পিষ্টপেষিত হইয়া আত্মসংযমপূর্ব্বক সংসারের সমস্ত স্নেহ মায়া মমতা নিজবশে আনিয়া সংসারগর্ভে বদ্ধ থাকিয়াই সেই বিশ্বগর্ভধারিণী বিশ্বেশ্বর-হৃদিচারিণীর চারুচরণাম্বুজ চিন্তায় সমাহিত হইলে ত্রৈলোক্যের অজ্ঞাতসারে অন্তরে অন্তরেই তাহার রূপান্তর ঘটিতে থাকে। তখন কাল পূর্ণ হইয়া আসিলে নিজবলে সংসার মায়াকোষ বিদীর্ণ করিয়া সেই কালভয়হারিণী মহাকালমোহিনীর কৃপাকটাক্ষ-লাভে বিবেক বৈরাগ্য দুইটি পক্ষ বিস্তার করিয়া নিজদেহরূপ সমুজ্জ্বল জ্যোতির্ম্ময় আত্মাটি লইয়া মনোরূপিণী শুদ্ধ সাত্ত্বিকী নির্ম্মলা মায়া তখন প্রজাপতি (শক্তি বলে ব্রহ্মাণ্ডপতি) সাজিয়া বিদ্যারূপে ব্রহ্মাণ্ড অতিক্রম পূর্ব্বক মহাবিদ্যার সচ্চিদানন্দধাম লক্ষ্যে অনন্ত আকাশকক্ষে অসীম উর্ধ্বে ধাবিত হয়, দাবানলের সূক্ষ্ম শিখা সূর্য্য-মণ্ডলে মিশিয়া যায়, কক্ষচ্যুত সৌদামিনী তখন সেই জ্যোতির্ম্ময়ী আনন্দঘন-কাদম্বিনীর অঙ্গে বিলীন হয়। মনের এই ভগ্ন পিঞ্জর পাঞ্চ-ভৌতিক দেহটি মাত্র সংসারে পড়িয়া থাকে, মায়ার এই তত্ত্বজ্ঞানাত্মক অবস্থার নামই বিদ্যা। এই বিদ্যাবলে যাঁহাকে লাভ করা যায় তিনিই সেই ভবারাধ্যা সাধক-সাধ্যা মহাবিদ্যা। সাধক! তিনিই সংসারে সার্থক বিদ্যা উপার্জ্জন করিয়াছেন, যাঁহার বিদ্যা লৌকিক অর্থ ধনের জন্য বিড়ম্বিত না হইয়া পরমার্থ-ধন মহাবিদ্যার জন্য নিরন্তর ব্যাকুল। অকুল সমুদ্র সংসারে পড়িয়া যিনি কুলকুন্ডলিনীর ঘাটে নৌকা বাঁধিতে পারিয়াছেন, ভবপারান্তর-যাত্রার বিদ্যায় তিনিই পণ্ডিতকুল -চূড়ামণি। তাই বলি সাধক! মা ত তোমার, আমি কি তবে মা-হারা? ত্রিজগতের মা থাকিতেও আমার কি মা নাই? তবে বল মা! তুমি ত সাধকেরই মা। আমি যে মুর্খাদপি মূর্খতম সিদ্ধিসাধন-বিবর্জ্জিত, আমার উপায় কি হইবে? মহাবিদ্যার সন্তান হইয়াও অবিদ্যাঘোরে অন্ধ হইয়া মা! আমি ঘোর মূর্খ, আমার গতি কি হইবে? সংসারের প্রবৃত্তি-ভাটায় এ নৌকা ভাসিয়া যায়, কিছুতেই আর রাখিতে পারিলাম না, নিবৃত্তির-উজানে টানিবার সাধ্য নাই- না মা। ভাসিতেও আর পারিল না! একে এই ক্ষুদ্র নৌকা, তায় আবার নয়টি ছিদ্র, অবিরল সমুদ্রের জল উঠিয়া ভরিয়া গেল, আর দাঁড়াইবার স্থান নাই, এইবার ডুবিলাম, জন্মের মত ডুবিলাম, ধরাধর-কুমারী! মা! আমায় ধর-ধর, এ ক্ষীণ দুর্ব্বল হস্তে আর বল নাই! মা! তুমি একবার ঐ বরাভয়ের উভয় হস্ত বাড়াইয়া দাও, দয়াময়ি! একবার ফিরিয়া চাও! অজ্ঞান অনাথ শিশুর এ অকুল সমুদ্রে মা আমার 'আমার' বলিতে আর কেহ নাই! মা! কুলকুন্ডলিনি মাগো! মা হইয়া একবার কোলে তুলিয়া লও! এ নৌকা জন্মের মত ডুবিয়া যাক্। শাস্ত্র বলে, বিদ্যাবলে তোমায় লাভ করা যায়, তাই তুমি মহাবিদ্যা। আমি বলি, অবিদ্য সন্তানকে যদি উদ্ধার করিতে না পার তবে তুমি কিসের মহাবিদ্যা? আমার বিদ্যায় আমি ত ডুবিলাম, এইবার তোমার বিদ্যায় উদ্ধার করিয়া মহাবিদ্যা নামের পরিচয় দাও, এ পাপাত্মার অধঃপাতের বিদ্যার অভিমান ঘুচিয়া যাক্। জয় জননি মহাবিদ্যে! আমার সাধ্য থাক বা না থাক তুমিই জগতের সাধনার সাধ্য ধন।
     
    সাধক! মায়ামূর্ত্তি মনঃশক্তি যখন সংসারপাশ মুক্ত হইয়া সেই মুক্তকেশী মহাশক্তির তত্ত্বলক্ষ্যে ধাবিত হয় তখন তাহার নাম যেমন বিদ্যা, আবার সে তত্ত্ব ভুলিয়া যখন সাংসারিক স্ত্রীপুত্রাদি বিষয়রসে উন্মত্ত হয় তখন তাহার নাম তেমনই অবিদ্যা। এই স্থানেই শাস্ত্র বলিয়াছেন-  
     
    মার্কণ্ডেয় পুরাণে-
     
    জ্ঞানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হি সা।
    বলাদাকৃষ্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি॥
    তয়া বিসৃজ্যতে বিশ্বং জগদেতচ্চরাচরম্‌।
    সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে॥
    সা বিদ্যা পরমা মুক্তে র্হেতুভূতা সনাতনী।
    সংসারবন্ধহেতুশ্চ সৈব সর্ব্বেশ্বরেশ্বরী॥
     
                         অপিচ।
     
    এবং ভগবতী দেবী সা নিত্যাপি পুনঃ পুনঃ।
    সম্ভূয় কুরুতে ভূপ! জগতঃ পরিপালনম্॥
    তয়ৈতন্মোহ্যতে বিশ্বং সৈব বিশ্বং প্রসূয়তে।
    সা যাচিতা চ বিজ্ঞানং তুষ্টা ঋদ্ধিং প্রযচ্ছতি॥
    ব্যাপ্তং তয়ৈতৎ সকলং ব্রহ্মান্ডং মনুজেশ্বর।
    মহাকাল্যা মহাকালে মহামারী-স্বরূপয়া॥
    সৈব কালে মহামারী সৈব সৃষ্টি র্ভবত্যজা।
    স্থিতিং করোতি ভূতানাং সৈব কালে সনাতনী॥
    ভবকালে নৃণাং সৈব লক্ষ্মী র্বৃদ্ধিপ্রদা গৃহে।
    সৈবাভাবে তথাঽলক্ষ্মী র্বিনাশায়োপজায়তে॥
    স্তুতা সংপূজিতা পুষ্পৈ র্ধূপগন্ধাদিভিস্তথা।
    দদাতি বিত্তং পুত্ত্রাংশ্চ মতিং ধর্ম্মে তথা শুভাম্॥
     
                          কিঞ্চ-
     
    এতত্তে কথিতং ভূপ দেবীমহাত্ম্যমুত্তমং।
    এবংপ্রভাবা সা দেবী যয়েদং ধার্য্যতে জগৎ॥
    বিদ্যা তথৈব ক্রিয়তে ভগবদ্বিষ্ণুমায়য়া॥
    তয়া ত্বমেষ বৈশ্যশ্চ তথৈবান্যে বিবেকিনঃ।
    মোহ্যন্তে মোহিতাশ্চৈব মোহমেষ্যন্তি চাপরে॥
    তামুপৈহি মহারাজ শরণং পরমেশ্বরীং।
    আরাধিতা সৈব নৃণাং ভোগস্বর্গাপবর্গদা॥
     
    রাজন্! সেই দেবী ভগবতী নিত্যা হইয়াও এই (পূর্ব্বোক্ত) রূপে পুনঃ পুনঃ অবির্ভূতা হইয়া জগতের পরিপালন করিতেছেন। তৎকর্ত্তৃক এই বিশ্ব মোহিত হইতেছে এবং তিনিই বিশ্ব প্রসব করিতেছেন। তিনিই প্রার্থিতা এবং তুষ্টা হইয়া ত্রি-জগতের ঋদ্ধি এবং বিজ্ঞান প্রদান করিতেছেন। হে মনুজেশ্বর! মহাপ্রলয়কালে মহামারী স্বরূপা সেই মহাকালী কর্ত্তৃক এই নিখিল ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপ্ত হইয়াছে। কালে তিনিই মহামারী, কালে তিনিই সৃষ্টিস্বরূপিণী, আবার কালে সেই অনাদি সনাতনীই সর্ব্বভূতের স্থিতিকারিণী। অভ্যুদয়কালে তিনিই মানবের গৃহে বৃদ্ধিপ্রদায়িনী লক্ষ্মীরূপিণী, আবার অভাবকালে তিনিই মানবের বিনাশের নিমিত্ত অলক্ষ্মীরূপিণী। (এ স্থলে আশঙ্কা হইতে পারে যে, জীবের নিয়তি অনুসারেই যদি তিনি অভ্যুদয় এবং অভাবকালে লক্ষ্মী এবং অলক্ষ্মীরূপে মঙ্গল এবং অমঙ্গলের বিধান করেন, তবে আর উপাসনা কেন? সেই আশঙ্কা নিরসনের জন্যই আবার বলিতেছেন) তিনি স্তুতা এবং পুষ্প ধূপ গন্ধাদির দ্বারা পূজিতা হইলে সকাম সাধকের পক্ষে বিত্ত ও পুত্রাদি এবং নিষ্কাম সাধকের পক্ষে মঙ্গলময়ী ধর্ম্মবুদ্ধি প্রদান করেন।
     
    পরবর্ত্তী অধ্যায়ে আবার বলিয়াছেন, রাজন্! কীর্ত্তনীয় বস্তুত্তম দেবীমাহাত্ম্য এই তোমার নিকটে কীর্ত্তন করিলাম, যৎকর্ত্তৃক এই জগৎ ধৃত হইতেছে, সেই দেবী এইরূপ অলৌকিক-প্রভাবা। তৎকর্ত্তৃক মায়া মোহ বিস্তার দ্বারা যেমন জগৎ ধৃত হইতেছে, আবার সেই ভগবতী বিষ্ণুমায়া কর্ত্তৃক বিদ্যাও (তত্ত্বজ্ঞানও) তদ্রূপই সম্পাদিত হইতেছে। মহারাজ! সেই ভুবনমোহিনী মায়ার প্রভাবেই তুমি এবং এই বৈশ্য ও অন্যান্য বিবেকিগণ মোহিত হইয়াছেন, হইতেছেন এবং ভবিষ্যদ্বিবেকিগণও মোহিত হইবেন। সেই পরমেশ্বরীর শরণাপন্ন হও, তিনিই আরাধিতা হইলে মানবের ভোগ স্বর্গ এবং অপবর্গ (মুক্তি) প্রদান করেন। এ স্থানেও ঋষি শক্তিতত্ত্বের দুইটি অংশই লক্ষ্য করিয়াছেন। সংসার-বন্ধন সময়ে মায়ারূপ কীর্ত্তন করিয়াছেন, আবার সংসারবন্ধন মোচনের জন্য আরাধনার সময়ে তাঁহার ব্রহ্ম স্বরূপেরই নির্দ্দেশ করিয়া বলিয়াছেন, শরণং পরমেশ্বরীং, সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে, সম্মোহিতং দেবি! সমস্তমেতত্ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তিহেতুঃ।"
     
    (মহামায়া-তত্ত্ব প্রসঙ্গে তন্ত্রাচার্য্য শ্রীযুক্ত শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব ভট্টাচার্য্য মহোদয়)
  • দীপ | 42.110.147.39 | ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১৩:০৫738715
  • তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণবের দৃষ্টিতে মহামায়া তত্ত্ব। বেদান্তের মায়া আর তন্ত্রের মহামায়া কখনোই এক নয়। বেদান্তের মায়ার কোনো নিজস্ব অস্তিত্ব নেই, ব্রহ্মেই আবরক রূপে তার অধিষ্ঠান। তাই মায়া মিথ্যা।
    অন্যদিকে মহামায়ার তাৎপর্য মায়াসমন্বিত ব্রহ্ম। ব্রহ্ম/ শক্তিরূপে তিনি নিমিত্ত কারণ, অন্যদিকে মায়ারূপে জগতের উপাদান কারণ। মহতী মায়া যাঁর, তিনিই মায়া। মায়ার দ্বারা তিনি সমগ্র জগৎকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখেন, আবার তিনিই সাধকের মায়া অপনোদন করে সাধককে মুক্ত করেন। সাধক দেবীর কৃপাতেই দেবীর ব্রহ্মস্বরূপ উপলব্ধি করেন। 
    এই শক্তিসমন্বিত অদ্বৈততত্ত্ব‌ই শক্তিবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
  • দীপ | 2402:3a80:196c:4f91:31c2:29c4:65ae:2c67 | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৮:২৮738952
  • ঋগ্বেদ উবাচ।
    যদন্তঃস্থানি ভূতানি যতঃ সর্বং প্রবর্ত্ততে।
    যদাহুস্তৎ পরং তত্ত্বং সাদ্যা ভগবতী স্বয়ং।।
     
    যজুরুবাচ।
    যা যজ্ঞৈরখিলৈরীশা যোগেন চ সমীজ্যতে।
    যতঃ প্রমাণং হি বয়ং সৈকা ভগবতী স্বয়ং।।
     
    সামোবাচ।
    যয়েদং ভ্রাম্যতে বিশ্বং যোগিভির্যা বিচিন্ত্যতে।
    যদ্ভাসা ভাসতে বিশ্বং সৈকা দুর্গা জগন্ময়ী।।
     
    অথর্ব উবাচ।
    যাং প্রপশ্যন্তি দেবেশীং ভক্ত্যানুগ্রাহিণো জনাঃ।
    তামাহুঃ পরমং ব্রহ্ম দুর্গাং ভগবতীং মুনে।।
     
    ঋগ্বেদ বলিলেন,
    'যাঁর মধ্যে নিখিল প্রাণী বিদ্যমান, যাঁহা হইতে সমস্ত জগতের উদ্ভব, তত্ত্বদর্শীগণ যাঁহাকে পরমতত্ত্ব বলিয়া অভিহিত করিয়া থাকেন, সেই আদ্যাই স্বয়ম্ভগবতী।
     
    যজুর্বেদ বলিলেন,
    'সকল ঈশ্বরগণ যজ্ঞ দ্বারা যাঁহার অর্চনা করিয়া থাকেন, আমরা স্বয়ং যাঁহার প্রভাবে প্রমাণীভূত, তিনিই একমাত্র স্বয়ম্ভগবতী।
     
    সামবেদ বলিলেন,
    'যাঁহার দ্বারা এই বিশ্ব ভ্রামিত হইতেছে, যোগিগণ যাঁহাকে সতত ধ্যান করিয়া থাকেন, যেই স্বয়ম্প্রকাশ চৈতন্যে বিশ্ব ভাসিত, তিনিই সেই এক জগন্ময়ী দুর্গা। 
     
    অথর্ববেদ বলিলেন,
    'ভক্তির দ্বারা তদীয় অনুগ্রহপ্রাপ্তগণ যেই দেবেশ্বরীকে দর্শন করিয়া থাকেন, সেই ভগবতী দুর্গাকেই ব্রহ্মজ্ঞানী ঋষিগণ পরমব্রহ্ম বলিয়া থাকেন।
     
    শ্রীমহাভাগবতম্ , প্রথমোহধ্যায়ঃ, শ্লোক ২৩-২৬
  • দীপ | 2402:3a80:196c:4f91:31c2:29c4:65ae:2c67 | ১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৮:৩৭738953
  • এই ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নতা প্রতিপন্ন হয়েছে। নির্গুণ কূটস্থ ব্রহ্ম‌ই শক্তিরূপে প্রকাশিত হন। ব্রহ্ম‌ই শক্তি, শক্তিই ব্রহ্ম।
    প্রসঙ্গত এই মহাভাগবতপুরাণেই আমরা দশমহাবিদ্যার কাহিনী পাই। শিবের সামনে ক্রুদ্ধা সতী  দশমহাবিদ্যা রূপ প্রকাশ করেন। ভীত শিবকে আত্মপরিচয় প্রদানকালে তিনি বলেন- "বেদ ও আগম(তন্ত্র) আমার দুই বাহু। " অর্থাৎ বেদান্ত ও তন্ত্র কোনো আমূল ভিন্ন চিন্তা নয়, আচারে কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল উদ্দেশ্য অভিন্ন।
  • দীপ | 42.110.144.20 | ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:১০739092
  • মার দয়া চেয়ে আসছি—মা দয়া করে আসছে—আজ একদিনে কত কথাই যে স্পষ্ট হয়ে গেল । হাজার বার চান করে দেহ ধুয়ে মাকে প্রণাম করলেই হয় না —মনটা সাফ করা দরকার। দেহ সাফ রাখা ভাল রাখা বাদ নয় — নোংরা রুগ্ন দেহে সাফ মন থাকে না। শরীর মন দুটোই একসঙ্গে ঠিক রাখা চাই। 
     
    অনেক ঘটা করে মাকে প্রণাম ঠুকে ঠুকে (ঘুষ দিয়ে) চলার মানে হয় না। অণু পরমাণু পোকামাকড় মাছি থেকে পৃথিবীর জীবজন্তু পৃথিবীর বাৎসরিক ঘুরপাক খাওয়া থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব কিছু নিয়মে চলার মূলাধার নিয়মতান্ত্রিক মা। মার জগতে অনিয়ম নেই। মা নিয়মে ক্ষমা করে। নিয়মে দয়া করে।
     
    সমগ্র নিয়ম আমরা যারা বুঝতে পারি না তারা এটাও বুঝতে পারি না যে ক্ষমা এবং দয়াও মায়েরই নিয়ম। বস্তু এবং চেতনার গতি প্রকৃতির মধ্যে এটা খুঁজে পাওয়া যায়।
     
    সচেতনভাবে যে মাকে এই বস্তু আর চেতনার মূলাধার বলে জেনে মার কাছে ক্ষমা আর দয়া চাইবে—মার নিয়মে তার বাস্তব বুদ্ধি আর চেতনার পরিবর্তনের মধ্যেই পাবে মার ক্ষমা আর দয়া।
     
    - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় / ডায়েরি, ১৯৫৪
     
    শ্রদ্ধেয় লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টিতে মাতৃকল্পনা।
  • দীপ | 42.110.145.219 | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫২739288
  • অদ্বৈতবাদী শঙ্করকেও শক্তিবাদ মেনে নিতে হয়েছে। চার পীঠেই তিনি তিনি অধিষ্ঠাত্রী দেবীমূর্তি স্থাপন করেছেন। শৃঙ্গেরী মঠে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন দেবী শ্রীবিদ্যা কামাক্ষ্যা সারদা,  যিনি দক্ষিণভারতীয় শক্তিসাধকদের ইষ্টদেবী। এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠাকালে শঙ্কর দেবীর কাছে প্রার্থনা করে বলেছেন-
     
    সাকারশ্রুতিমুল্লঙ্ঘ্য নিরাকার প্রবাদতঃ। 
    যদঘং মে কৃতং দেবি তদ্দোষং ক্ষন্তমর্হসি॥ 
    ত্বমেব জগতাং ধাত্রী সারদে স্বস্বরূপিনী। 
    তব প্রাসাদাদ্দেবেশি মূকো বাচালতাং ব্রজেৎ॥ 
    বিচারার্থে কৃতং যচ্চ বেদার্থস্য বিপর্য্যয়ং। 
    দেবানাং জপযজ্ঞাদি খণ্ডিতং দেবতার্চ্চনং॥ 
    স্বমতং স্থাপনার্থায় কৃতং মে ভূরি দুষ্কৃতং। 
    তৎক্ষমস্ব মহামায়ে পরমাত্মস্বরূপিণি॥ 
    কৃতাঘং পরিহারায় তবার্চ্চা স্থাপিতা ময়া। 
    অত্র তিষ্ঠ মহেশানি যাবদাহত সংপ্লব॥
    (শঙ্করবিলাস)
     
    অর্থাৎ- হে দেবি, সাকার-প্রতিপাদক-শ্রুতিকে নিন্দা করিয়া নিরাকার-প্রতিপাদক শব্দার্থ প্রতিপন্ন করাতে যে পাতক করিয়াছি, তাহা ক্ষমা কর। তুমি জগন্মাতা, তোমার প্রসাদে মূক-ব্যক্তিও বাক্পটুতা লাভ করে। বিরুদ্ধ-ধর্ম্মীদিগের সহিত বিচারজন্য বেদার্থকে বিপরীত করিয়াছি এবং দেবতাদিগের মন্ত্র, জপ, যজ্ঞ ও অর্চ্চনাদি যাহা খণ্ডন করিয়াছি, স্বীয় মত-স্থাপনার জন্য যে যে দুষ্কার্য্য করিয়াছি, হে সারদে, সেই সমুদয় অপরাধ আমার ক্ষমা কর। আমার কৃত পাতকের পরিহারার্থ তোমার জাগ্রত প্রতিমা মৎকর্ত্তৃক স্থাপিতা হইয়াছে। হে মাতঃ, এই প্রতিমায় আপনি কল্পকাল পৰ্য্যস্ত অবস্থিতি করুন।
  • দীপ | 42.110.145.219 | ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ২৩:৫৮739289
  • অর্থাৎ অদ্বৈতবাদী শঙ্করকেও শক্তিবাদ মেনে নিতে হয়েছে। বলতে হয়েছে নির্গুণ ব্রহ্ম‌ই জগদ্ব্যাপিনী শক্তি, ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন। দেবী সগুণরূপে বিশ্বাত্মিকা, নির্গুণস্বরূপে বিশ্বাতীতা পরব্রহ্মস্বরূপিণী।
    অর্থাৎ শঙ্কর বৈদান্তিক বটে, শাক্ত‌ও বটে। অবশ্য এর মধ্যে কোনো ভেদ নেই; শক্তিকে অস্বীকার করা কোনো দার্শনিকের পক্ষেই সম্ভব নয়!
  • নির্গুণ ব্রহ্ম‌ই জগদ্ব্যাপিনী শক্তি, ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন | 165.225.8.112 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০১:৪৩739290
  • আপনার বক্তব্যটা কি দীপ? বঙ্গভূমির কোন লোকায়ত আধ্যাত্মিক ধ্যানবিন্দু কোনকালেই ছিল না, সবই উত্তর ভারত থেকে এনে শেখান হয়েছে? 
  • র২হ | 2607:fb90:1bdc:3be6:39d4:4616:e2be:cf7c | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:১০739291
  • "ত্রিপুরার উদয়পুরের ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের কালীমাতা আরেক বিখ্যাত শক্তিপীঠের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এখানের বলিপ্রথায় বিষণ্ণ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে দেখেন একটি বাচ্চা মেয়ে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে – এত রক্ত কেন? সেই নিয়েই রবীন্দ্রনাথের “বিসর্জন” নাটক। কিন্তু তাতে পশুবলি বন্ধ হয় নি। তবে ৫১৮ বছরের পুরনো রীতি বন্ধ হয়ে যায় অক্টোবর ২০১৯ থেকে হাইকোর্টের আদেশে।"
     
    বিসর্জনের কন্টেক্সট ভুবনেশ্বরী মন্দির। উদয়পুরের কাছে, আজকাল বোধহয় রাজনগর বলে, আগে পুরনো রাজবাড়ি বলতো সবাই।
    স্বপ্ন ও রাজর্ষির (বিসর্জন পরে) সঙ্গে ভুবনেশ্বরী মন্দিরে ওয়ান টু ওয়ান ম্যাপিং নেই - মানে নির্দিষ্ট ভাবে এখানকার বলিপ্রথা নিয়ে বিষন্ন হওয়ার তেমন কোন কারন ছিল না। খুব সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের জন্মের আগেই ভুবনেশ্বরী মন্দির পরিত্যক্ত - কারন উনিশ শতকের শুরুতে রাজধানী খয়েরপুরে ও তারপর আগরতলায় শিফট হয় নানান ঝামেলায়। আর তৎকালীন উদয়পুর ভয়ানক দুর্গম। রবীন্দ্রনাথ কোনওদিনই উদয়পুর গেছেন কি?
     
     
    "... মনে করিলাম ঘুম যখন হইবে না তখন এই সুযোগে বালকের জন্য একটা গল্প ভাবিয়া রাখি । গল্প ভাবিবার ব্যর্থ চেষ্টার টানে গল্প আসিল না , ঘুম আসিয়া পড়িল । স্বপ্ন দেখিলাম , কোন এক মন্দিরের সিঁড়ির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুন ব্যাকুলতায় তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে - বাবা,একি ! এ যে রক্ত! বালিকার এই কাতরতায় বাপ অত্যন্ত ব্যথিত হইয়া অথচ বাহিরে রাগের ভান করিয়া কোনমতে তার প্রশ্নটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করিতেছে। জাগিয়া উঠিয়ায় মনে হইল এটি আমার স্বপনলব্ধ গল্প। এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্য এর পুরাবৃত্ত মিশায়ে রাজর্ষি গল্প মাসে মাসে লিখিতে লিখিতে বালকে বাহির করিতে লাগিলাম ..."
     
    আর ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে বলি এখনো হয়।
     
    এগুলো কিন্তু সহজলভ্য তথ্য।  
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৮739293
  • "বক্তব্যটা কি দীপ? বঙ্গভূমির কোন লোকায়ত আধ্যাত্মিক ধ্যানবিন্দু কোনকালেই ছিল না, সবই উত্তর ভারত থেকে এনে শেখান হয়েছে?"
     
    শঙ্কর কি উত্তরভারতের লোক নাকি? আশ্চর্য মাথা! 
    গুরুশিষ্য পরম্পরা অনুযায়ী গৌড়পাদের শিষ্য গোবিন্দপাদ, গোবিন্দপাদের শিষ্য শঙ্কর। গৌড়পাদ শব্দে মনে হয় ইনি গৌড়ভূমির লোক ছিলেন। সুতরাং এখানে উত্তর ভারতের কোনো কথা আসছে বলে মনে হয়না! 
     
    আর ব্রহ্ম ও শক্তির অভিন্নতা বর্ণনা করেছেন সর্বানন্দ, কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ, রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, রামকৃষ্ণ, বামাক্ষ্যাপা প্রমুখ সাধক। এঁরা কেউ উত্তর ভারতের লোক বলে মনে হয়না!
     
     
  • দীপ | 42.110.139.102 | ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৪739294
  • কালী ব্রহ্ম জেনে মর্ম ধর্মাধর্ম সব ছেড়েছি।
    (রামপ্রসাদ)
    যিনি কালী, তিনিই ব্রহ্ম। ব্রহ্ম ও শক্তি অভেদ।
    (রামকৃষ্ণ)
    তোমরা যাঁকে ব্রহ্ম বল, আমি তাঁকেই মা বলি।
    (কেশব সেনকে রামকৃষ্ণ। মূল বিস্তারিত আলোচনা কথামৃতে আছে, আগ্রহী ব্যক্তি পড়ে নেবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন