এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মথুরার ঘটনা আর আকবরের ঘোষণাপত্র 

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ জুলাই ২০২৪ | ২৫২ বার পঠিত
  • ষোলশো সাতাত্তরের কোন একদিনে মথুরার কাজিসাহেবকে হন্তদন্ত হয়ে সদর আল সুদুর – বিচারক প্রধান শেখ আব্দাল নবীর কাছে আসতে দেখা যাচ্ছে। ধরে নেওয়া যাক সেটা শীতের অপরাহ্ন কারণ গরমে কাজিসাহেবের কষ্ট হবে আর বর্ষায় ছাতা ব্যবহার বাহুল্যমাত্র, ছাতা যখন তখন হারাবে, তাই বর্ষার কথা ভাবাই যাচ্ছে না। কাজিসাহেবের অভিযোগ শুনে নবী সাহেবের রাতের ঘুম চলে যায়। এক রইস ব্রাহ্মণ মসজিদ বানানোর জন্য আনা জিনিষপত্র তুলে নিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় সেসব ব্যবহার হয়েছে মন্দির বানানোর কাজে। এতেই শেষ নয় উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আছে যে ব্রাহ্মণ হজরত মুহম্মদ সম্পর্কে অবজ্ঞা সূচক মন্তব্য় করেছে। শরিয়তে দু রকমের হকের কথা বলা আছে হক আল–আদমিয়া–দেওয়ানি বিষয়ক আধিকার আর হক আল্লাহ – ঐশ্বরিক প্রভাব বিষয়ক অধিকার। দ্বিতীয়টায় বিচারকের থেকে সুলতানের আধিকার বেশি কারণ তিনিই জেহানে আল্লাহর হয়ে ন্যায়বিধান করবেন। এই কেসটা দ্বিতীয়টায় পড়ে, তাই শেখ আব্দাল নবী আকবরের কোর্টে বল ঠেলে দিলেন শাস্তির রায় দিতে। আর যায় কোথায় আকবরের হিন্দু বউ আর শলাহকাররা তদবিরের পর তদবির করতে থাকে ব্রাহ্মণকে লঘু সাজা দিতে। অন্য দিকে উলেমাদের চাপ, একেবারে ধর্ম বিরোধিতা – ব্লাসফেমির অভিযোগ উঠে গেছে। তেনামেনা করে আকবর পুরোটাই সদর আল সুদুরের বিচার বিভাগীয় প্রাজ্ঞতার ওপর ছেড়ে দিলেন। এতে জুডিশিয়াল বায়াস তৈরি হয়েছিল হয়ত তাই মামলাটা আর আকবরের কোর্টে, লেজিসলেটিভ জুরিসডিকশনে আসেনি, ব্রাহ্মণের শর কালাম হল তাঁকে না জানিয়েই ! এই ঘটনা বিবরণ লিখতে গিয়ে বাদায়ুনি তাঁর বই মন্তেখাব উত তেহরিখে কোন সিদ্ধান্ত করছেন না শুধু বললেন এই ঘটনায় আকবর অসন্তুষ্ট হচ্ছেন যখন জানতে পারছেন যে চরম শাস্তিদান সর্বসম্মত ছিল না। এখন কী ছিল বিপরীত মত? এটা জানা জরুরী এ কারণে যে তাহলে আকবরের পরবর্তী পদক্ষেপ বোঝা যাবে। বিপরীত মতটা ছিল এরকমঃ

    হাদিশ উদ্ধৃত করে বাদায়ুনি লিখেছেন হানাফি মতাবলম্বী উলেমারাদের একাংশ বলেছিলেন যে কোন অবিশ্বাসী যে ইসলামী শাসন মেনে নিয়েছে সে হজরত মুহম্মদ সম্পর্কে বিরূপ কথা বললেও মুসলিম পক্ষ চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে না, অবিশ্বাসীকে সুরক্ষার দায় বর্তায় মুসলমানের।

    “ …….the cursing of the Prophet by unbelievers who have submitted to the rule of Islam gives no ground for any breach of agreement by Muslims, and in no way absolves Muslims from their obligation to safeguard infidel subjects .” ( Reconsidering Islam in south Asian context, MR Pirbhai, page 75)

    সদর আল সুদুরের কপালে দুঃখ ছিল। তাঁকে পদ থেকে সারিয়ে একরকম বাধ্য করা হল একদল হজ যাত্রীর মুরুব্বি হিসেবে হজে যেতে, ফিরে এসে তিনি মারা যান। আকবর এতেই ক্ষান্ত দিচ্ছেন না তিনি একটা ডিক্রি জারি করে রাজপুত সহ অমুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির স্বার্থে বিচার বিভাগের ওপর আরো কর্তৃত্ব আরোপ করলেন। উলামারা, কাজিরা বসে তাঁর মনোমত এক ঘোষণাপত্র বানিয়ে ফেলল ষোলোশো উনআশিতেঃ

    এই ঘোষণাপত্রে আকবর হলেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী – মুজতাহিদ যা একমাত্র খালিফারাই হয়েছিলেন ইতিহাসে। এর পরে প্রায়ই আকবরকে খালিফা বলে সম্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে আইন ই আকবরি সহ বিভিন্ন লেখায়  ।অবশ্য এটা কতটা আব্বাসিদ /উম্মায়েদ ধাঁচের সার্বজনীন খালিফা  আর কতটা স্থানীয় স্তরে একজন সুলতানের খালিফাত্ব অর্জন সে নিয়ে ইতিহাসকাররা  এখনো তর্কে লিপ্ত ।  শুধু তাই নয় শরিয়ত ব্যতিরেকে রাষ্ট্রীয় আইন - দাওয়াবিত প্রণয়নের একছত্র আধিকার পেলেন তিনি।
    ঘোষণাপত্রের – ডিক্রির এক অংশঃ

    “Abu al-Fath Jalal al-Din Muhammad Akbar, Badshah Ghazi (whose kingdom may God perpetuate), is a most just, most wise, and a most God-fearing king. Should, therefore, in future, a religious question come up, regarding which the opinions of the mujtahids are at variance, and his majesty, in his penetrating understanding and clear wisdom, be inclined to adopt, for the benefit of the community and as a political expedient, any of the conflicting opinions which exist on that point, and issue a decree to that effect, we do hereby agree that such a decree shall be binding on us and on the whole community. Further, we declare that, should his majesty think it fit to issue a new order, we and the community shall likewise be bound by it, provided always that such order be not only in accordance with some verse of the Qur’an, but also of real benefit to the community; and further, that any opposition on the part of his subjects to such an order passed by his majesty, shall involve damnation in the world to come, and loss of property and religious privileges in this. ” ( Reconsidering Islam in south Asian context, MR Pirbhai, page 76-77)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন