এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মৃত ভাষার ডায়রি থেকে

    Subha Roychowdhury লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৮ আগস্ট ২০২৪ | ২০৮ বার পঠিত
  • "আমি তোমাকে বা অন্য কাউকে বোঝাতে পারছি না আমার ভেতরটা কেমন আছে। কীভাবেই বা এর ব্যাখ্যা দেব; এমনকি নিজেকেও ব্যাখ্যা করতে অপারগ।"
    — মিলেনা জেসেন্‌স্কা'কে চিঠি, নভেম্বর ১৯২০, প্রাগ: ফ্রান্‌ৎস কাফকা
     
    রবিবার, জুলাই ১৪, ০০:২৩
    কেন লিখি? এ'সব লেখালিখির আদৌ কি কোনও মানে আছে? ক্ষয়, নিরতিশয় ক্লান্তি আর মৃত্যু-আকাঙ্ক্ষার নিশ্চয়তা শুধুমাত্র... আমার মনে হয়, এগুলো ছাড়া এই জীবনের আর-কোনও উদ্দেশ্য নেই। ধূলিস্যাৎ করে দিতে চাই এই শরীর, যেটা একটু-একটু করে মানব-অবয়ব পেয়েছে, আমি মানুষ হয়েছি, না-বুঝেই মানুষ হয়েছি। এই দুনিয়ায় কেউ-ই নিজের ইচ্ছেমতো কিছু পেয়েছে কি?
         সকালে ঘুম থেকে উঠি, লালায় ভিজে থাকে এক মুখ থোকা-থোকা দাড়ির চোয়ালের অংশ। জিভের আড়ষ্টতা কাটাতে বিড়ি টানি। তামাক-ভেজা ধোঁয়া জিভের ওপর বাদামি আস্তরণ তৈরি করছে ক্রমশ। আঙুলেও। ভূতগ্রস্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে যাই আয়নার সামনে। জানি কী দেখব, তবু মুখের সামনে তুলে ধরি আয়নাটা। মুখটা হা করি আলোর দিকে। চাপ চাপ পচনশীল মাংসদলা দেখতে পাই মুখের ভেতরে। তুমি বলবে ক্যানসার, আমি বলব ঘরে ফেরার ডাক; সব কিছুকে, সবাইকে পেছনে ফেলে।
         ঘর। সেখানে এক অতিপ্রাকৃত অস্তিত্বের বসবাস। তাকে অন্ধকার কোণ থেকে বেরিয়ে আসতে বলি। জানি সে কী করতে চায়, ভালোমতোই জানি। তুমি যদি ওকে ভালো করে দেখো, বুঝতে পারবে ওর ভেতরে, সর্বত্র, প্রতিহিংসা অধিমাংসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। ও রোগমুক্ত হতে চায়। অন্যের ক্ষতি করে, আঘাত করে নিজেকে বাঁচাতে চায়। আমার মধ্যেও প্রবেশ করে, আমার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুড়িয়ে ফেলতে চায়। ওর চোখে কাপুরুষোচিত দৃষ্টি। কে বাজাবে ওর শৈশবের সুর? কোথায় আছে ওর খেলনাগুলো?
         নিজের জন্য আমার যেটুকু যা অবশিষ্ট রয়েছে, ভাঙা টুকরো-টুকরো, সেগুলোকে রক্ষা করতে নিজের একটা পরিসর তৈরি করে নিয়েছি। তুমি জানো, মৃতরা বাঁচতে চায়। চার দিকে যা কিছু ঘটছে, খবরের কাগজে বা সমাজমাধ্যমে প্রতিনিয়ত রাশি রাশি যে-সমস্ত ডেটা আমাদের চার পাশে জমা হচ্ছে, সবে’তে আমার ঘেন্না ধরে গেছে, নতুন কিছু আশা করতে পারছি না। তুমি কি বলবে আমি পেসিমিস্টিক? ভুল। এখন ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে করছে না।
         এই লেখায় যেমন, বাক্যগুলো যেন একটা কথা থেকে আর-একটা কথার মাঝে পিছলে যাচ্ছে। নিজের হাতে পৃষ্ঠাগুলি ছিঁড়ে ফেলছি বার বার, যতক্ষণ না ডায়রিটা রক্তক্ষরণ করবে আর আপনা-আপনি ছিঁড়ে যাবে। এ এক অন্তহীন প্রক্রিয়া, আমার হাত দুটো, আঙুলগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ফাঁকা পাতায় এত এত শব্দ, লিখিত বাক্য সব হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এটা একটা অ্যাবস্ট্রাক্‌ট পেইন্টিং— আঁকছি এবং কেউ সেটা পড়ছে। কিন্তু যা লিখতে পারছি না, সে-কথা যদি কেউ পড়ে ফেলতে সক্ষম হয়, তবে কী হবে? এই সব শব্দ, এই সব বাক্য তবে কার?
    আমার একটি খণ্ড অন্ধ, অন্যটি বধির। বধির অবিরাম কথা বলে যায় এবং অন্ধ মন দিয়ে সব শোনে। ওরা তমিস্রায় বাস করে। আর আমি তোমার মুখ খুঁজি, আঙুলের হালকা স্পর্শে আদর করি, অনুভব করার চেষ্টা করি তোমার মুখটা আমারই... আমাকে তুমি শুনতে পাও না, তুমি শুধুই আমার স্পর্শ দেখো, কিন্তু আমার নৈঃশব্দ তোমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে অনুভব করো না। অন্ধকারে তুমি শুধুই আমার পোশাক আচ্ছাদিত উপরের তলটা পড়তে পারো, সেখানে ভেসে বেড়াও। কেন ডুবতে চাও না আমার অতলে? আমি পাতার রঙ দেখে ঋতুগুলোকে বোঝার চেষ্টা করি, মাটির রঙ দেখে বোঝার চেষ্টা করি আত্মহত্যার অঞ্চল, জলের স্বাদে বোঝার চেষ্টা করি খিদের জ্বালা। তবু এই বোঝা-জানার মাঝে থেকে যায় একটা অপরিমিত দূরত্ব, একটা মুখ থেকে অন্য মুখের ব্যবধান কমাতে পারি না, কিছুতেই। আমি দূরে চলে যাই ক্রমশ, যেভাবে হারিয়ে ফেলি চরিত্রগুলোকে, অথবা নিজেই হয়ে উঠি এক-একটা চরিত্র, তখন কীভাবে লিখব বলো?
     
    শুক্রবার, জুলাই ১৯, ০৩:৪৭
    দু'মিনিটের একটা সিনেমা। কোনও ক্যামেরা নেই। যা ঘটছে, দর্শককে কল্পনার দৃষ্টিতে দেখে নিতে হবে ডায়রির এই পৃষ্ঠাটি পড়তে-পড়তে। একটাই দৃশ্য।
         মিজঁসঁ: টেবিল-চেয়ার। সামনে এক টুকরো খোলা পরিসর। এই অংশ দুটোতে শুধুমাত্র আলো ফেলা হয়েছে। বাকিটা অন্ধকার— অন্ধকারের চার পাশে দেওয়াল থাকতে পারে, বা মহাশূন্য।
         চেয়ারে এক ব্যক্তি বসে আছেন টেবিলের ওপর ছড়ানো কাগজের ওপর মাথা ঝুঁকিয়ে। চরিত্রটি একজন লেখকের। টেবিলের সামনের পরিসরে একজন মহিলা, এবং একটি শিশু। মহিলাটি পাগল। শিশুটি তার সন্তান। সে ছেঁড়া-ফাটা একটা পুতুল নিয়ে খেলছে।
    ফেড ইন:
         (লং শট্)
         পাগলি (চিৎকার করে): জ্বলে যাচ্ছে, জ্বলে যাচ্ছে, আগুন, আগুন, আগুন...
    লেখক খেয়াল করেন তার পাণ্ডুলিপির ছেঁড়া পাতাগুলো দাউদাউ করে জ্বলছে। তিনি কোনওমতে আগুন নিভিয়ে দেন। কিন্তু ছাই উড়তে থাকে।
         লেখক: দেখো, এখন আমি কিছু লিখতে চাই। তুমি শান্ত হও। বাচ্চাটাকে কোথায় পেলে? এটা কি তোমারই পেটের বাচ্চা?
         পাগলি দাঁত বের করল, কালো দাঁত, পায়রিয়ায় মাড়ি ফুলে লাল টকটকে। নিজের পেটে হাত রাখল। তারপর শিশুটির গায়ে হাত বোলালে, শিশুটির মুখ থেকে নিঃসৃত হয়: 'অ-আ-আ...'। শিশুটি কথা শেখেনি।
         পাগলি: যা, যা এখান থেকে বদমাশ লোক... থুঃ থুঃ...
         পাগলি লেখকের উদ্দেশে থুতু ছেটায়।
         লেখক: তুমি আমার উপন্যাসের একটা চরিত্র। যে হাউসের পত্রিকায় দেব, সেটা অনেকে পড়েন। তোমার দুঃখ-যন্ত্রণার কথা ভাব তো কত মানুষ জানবে! শান্ত হও, আমি তোমাকে বুঝতে চাই, জানতে চাই।
    পাগলি হি-হি-হি করে হেসে ওঠে।
         পাগলি: শুয়োরের বাচ্চা। বাঁধবি আমাকে বোকাচোদা, বাঁধবি?
    শিশুটি সুড়ুৎ করে নাকের সর্দি জিভ দিয়ে চেটে নিয়ে, পুতুলটাকে খিমচে ধরে 'ই-ঈ-ঈ' ধ্বনি উচ্চারণ করল।
         লেখক(নিচু স্বরে কাতর কণ্ঠে): আমাকে সাহায্য করো। আমাকে লিখতে হবে। অনেকগুলো টাকা পাব আর... তাছাড়া...
         পাগলি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে, টেবিলের পায়া ধরে ঝাঁকায়। টেবিলটাকে শক্ত করে ধরে রাখেন লেখক।
    পাগলি: সব শালা জানোয়ারের বাচ্চা। জানোয়ারের বাচ্চা। খাবি আমাকে? খাবি?
    পাগলি টেনে খুলে ফেলে তার জীর্ণ শাড়িটা। সে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় লেখকের সামনে। শান্ত দৃষ্টিতে তাকায় লেখকের চোখে।
         পাগলি: ঘিন্ লাগছে লেখক এই শরীর দেখে? ছিঁড়ে খেতে খেতে খেতে ঘা করে মাংস পচিয়ে দিয়েছিস তোরা। লিখবি, এ্যাঁ? আর কত ব্যবহার করবি? দেহ নিয়েছিস, এবার মন, ভেতরের কথাগুলো নিয়েও ব্যবসা ফাঁদবি?
         লেখকের অভিব্যক্তিতে বোঝা যায়, তিনি বুঝতে পারছেন না তার খোলা ঠোঁটে ঝুলে রয়েছে পাপবিদ্ধ ভাষাহীন অপদার্থতা। হি-হি-হি করে হেসে ওঠে পাগলি। শিশুটি 'উ-ঊ-ঊ' শব্দ করে আঙুল দিয়ে ইশারা করে অন্ধকারের দিকে। অন্ধকার থেকে অসংখ্য ছায়া নর-নারীর অবয়ব পায়ে হেঁটে, বুকে হেঁটে, হামাগুড়ি দিয়ে, ডিগবাজি খেতে-খেতে এগিয়ে আসছে লেখকের দিকে।
         পাগলি উন্মাদের মতো চিৎকার করে। শিশুটি মুখে 'এ-ঐ-ও-ঔ'-এর মতো শব্দ তুলে আবছায়া অবয়বগুলোকে কী যেন বলতে বলতে পুতুলটাকে দাঁত দিয়ে কামড়ে আরও আরও ছিঁড়ে ফেলে।
         পাগলি: চরিত্তির... গল্পের চরিত্তির কত চাই তোর?
         ছায়া অবয়বরের দল টেবিল-চেয়ার ভেঙে টুকরো-টুকরো করে খেয়ে ফেলে, যেন তারা ভীষণ ক্ষুধার্ত। লেখক ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠেন। পাণ্ডুলিপির পাতাগুলোও ওই অবয়বরা চিবিয়ে-গিলে পেটে ঢুকিয়ে নেয়। তারপর সবাই একদৃষ্টিতে তাকায় লেখকের দিকে।
    দৃশ্য ফ্রিজ করা হয়।                                                                                                                                               
    ফেড টু ব্ল্যাক:
    শিউরে উঠলাম। গা গুলিয়ে উঠল। তুমি কী বলবে একে? লেখকের মৃত্যু?
     
    শনিবার, জুলাই ২০, ০১:৪৭
    আজ সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত আরণ্যক-চরিত্রগুলোর সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। পড়তে-পড়তে কখন যেন চার দেওয়ালের দখল নিয়েছিল শ্যাওলা, ফার্ন-মস, লতাগাছ এবং মেঝে ফুঁড়ে উঠে এসেছিল বুনো ঝোপঝাড়। তারপর বই বন্ধ করে অনেকক্ষণ সেতার শুনলাম।
    একবার আনমনে চোখ মেলে চেয়েছিলাম, দেখলাম, আমার হাতের ওপর ঘাস জন্মেছে। তাতে ছোট ছোট ঘাসফুল। অনুভব করেছিলাম শরীরটা একেবারে হালকা, ওজনহীন।
    আজ কিছুতেই মরতে পারব না।
     
    রবিবার, জুলাই ২১, (ঘড়ির সময় দেখিনি)
    ভাবছি: এখানে এলাম কীভাবে? আমি কখনও অভিযোগ করতে পারব না এই বলে, আমার রুটিন ক্লান্তিকর, শ্বাস ফেলতে পারি না। কোনও কিছুই আমাকে শারীরিকভাবে ক্লান্ত করে ফেলে না। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, এই মাত্র।
    এমন এমন দিন আসে, যে-দিনগুলোতে আমার সমস্ত অসমাপ্ত কাজ বা লেখালিখি (যেটুকু যা লিখতে চাই) ফেলে রেখে নিজেকে চিন্তার ধ্বংসাবশেষে নিক্ষেপ করি। রোজ সকালে উঠে চা-এ চুমুক দিয়ে পরিকল্পনা করি কীভাবে দিনটা সুন্দরভাবে কাটাব। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক চলতে পারি না। জোর করে শরীরটাকে টেনে নিয়ে চলি। ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমাকে কিছু একটা কাজ খুঁজে পেতেই হবে, বার বার বোঝাই নিজেকে। বাঁচতে গেলে রোজগার করতে হবে। লিখে কিছু হয় না। বেকারত্ব নিয়ে কেউ ভাবে না, বেকারত্বে কেউ মরেছে এরকম খবর কোথাও নেই। তবে কেন ভাববে? মৃত্যু ছাড়া খবর হয় না। এভাবে বেঁচে থাকাটাও যে মৃত্যু! কতবার ভেবেছি ক্যানিং থেকে মাছ এনে বিক্রি করব, বনগাঁ থেকে ফুল এনে বিক্রি করব, বা বর্ধমান থেকে আলু-পেঁয়াজ কিনে এনে শহরের কোনও একটা পথের ধারে বসে বিক্রি করব... পারিনি। জোর করে কিছু হয় না। হিসেবের খাতা আমার জন্য নয়।
    আমার লেখালিখির বেশিটাই বিস্মৃতির বিরুদ্ধে লড়াই। প্রতিভাস ক্ষণস্থায়ী। লেখার প্রতিটি বাক্য নেতিবাচক একটা চেহারা নেয়। হবে না কেন! আমি কী দেখেছি? এখন কী দেখছি? দেখেছি রাষ্ট্র গুলি করে হত্যা করছে তার ভবিষ্যৎ! অন্ধকার ঘরের ভিতর অ্যাসিডের মধ্যে নিমজ্জিত কতগুলো ইমেজ আমার চোখের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে রোজ রোজ। কী ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা!
    কী নিয়ে লিখব? সামনে ঘটে চলা সমস্ত বিস্ময়কর ইমেজগুলোকে প্রত্যক্ষ করছি, কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে যে শব্দগুলো সাজানো প্রয়োজন, তা খুঁজে পাচ্ছি না। হয়তো আমার অক্ষমতা, তাই ইমেজ আর শব্দের মাঝে সবসময় দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এটা আক্ষরিক অর্থে আমার চিন্তার দুর্দশা। নতুন কিছু সৃষ্টির ইচ্ছে মনের মধ্যে খিদে বাড়ায়, তৃপ্তি দেয়; আমার খিদে পায় কিন্তু খেতে পারি না...
    আপাতত ক'টা দিন শুনতে চাই ক্যাকোফোনি, অসংযত অবিরাম সংলাপ; অবলোকন করতে চাই চার পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সে'সব উদ্দীপক ইমেজগুলোকে...
     
    বুধবার, জুলাই ২৪, ০৩:০০
    একটা শূন্য ঘরের দিকে যেন কেউ একজন হেঁটে গেল। বলতে পারব না ওই ব্যক্তিটি আমি কি না, কারণ বিষয়ের গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারলেও, কোনও আকার দেখতে পাই না। ঘরটা ফিসফিস করে সেই ব্যক্তিকে লেখালিখির বয়ান নিয়ে বলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকি, কী অদ্ভুত এই পৃথিবীটা! নিজেকে কীভাবে গুছিয়ে নেব জানি না। আমি কোথায়? যেখানেই চলেছি সবকিছু কেমন ভারি হয়ে উঠছে।
    এখন একটা প্রশ্নের ঘূর্ণিতে পড়েছি: আমি এখানে কেন? কী করছি?
         সব কোলাহল ও সংলাপ নিক্ষিপ্ত হয় নৈঃশব্দে, যেখানে একজনের মৃত্যু হয়, আরেকজন জন্ম নেয়। সুন্দর সহাবস্থান। (আমি উন্মাদের মতো এগুলো বলে চলেছি অগোছালোভাবে, কারণ যা বলতে চাই তা এখনও বলতে পারিনি। এটা শুধুমাত্র একটা প্রস্তাবনা। আমার জীবনের এই অংশে এমন একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে যার গিঁট খুলতে পারছি না। কিন্তু এখানে আমি শুধু লিখছি আর লিখছি... লিখেই চলেছি ঠোঁট খুলে পৃষ্ঠা গুনতে গুনতে এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট...)
     
    বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১, ০৬:৩৬
    গত বৃহস্পতিবার সমুদ্রের পারে গিয়েছিলাম। অনন্ত জলরাশি, ওই দূরে আকাশের সঙ্গে মিশে অসীমের অনুভব। আবার ঝাপটে পড়া ঢেউয়ের একঘেয়েমি, যেন, আ সেন্স অফ দ্য ফাইনাইট ইন দ্য মিডস্ট অফ ইনফাইনাইট। যত দূর দৃষ্টি যায় বাধাহীনভাবে দেখা যায় চোখ মেলে, কিন্তু তবু মনে হয় এর বাইরে আর কিছু নেই। আবার পাহাড়ের অনুভূতি একেবারে বিপরীত, এক পাহাড়ের কোলে বসে সামনে তাকালে অন্য পাহাড়ের গায়ে দৃষ্টি আটকে যায়, একটা থ্রি-ডাইমেনশনাল ক্লোজড ফ্রেম। কিন্তু ওই ফ্রেমের বাইরে কী আছে, সেটা জানার আগ্রহ থেকে জন্ম নেয় অসীমের অনুভূতি।
    সাদা বালি গায়ে মেখে, একটা মরা-গাছের গোড়ায় হেলান দিয়ে বসেছিলাম। লাল কাঁকড়ার দল এদিক-সেদিক ছুটছে। একটা বাচ্চা, ওদের পিছু-পিছু ছুটে খেলছে। বাচ্চাটি কাছে গেলেই বালির নিচে গর্তে ঢুকে পড়ছে কাঁকড়াগুলো।
    এক-একটা ঢেউ হঠাৎ হঠাৎ আমার পা ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এক যুগল হাত ধরাধরি করে সৈকতে হেঁটে চলেছে, যেন পরবর্তী বিপ্লব না-আসা পর্যন্ত ওরা থামবে না কিছুতেই। কেউ কেউ সমুদ্রস্নান মুহূর্তবন্দি করতে ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত।
    এ-দিকে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি। তাই চাইলেও, দু’দণ্ড বসে গল্পগাছা করার জন্য হেমিংওয়ের বৃদ্ধ জেলেকে সেখানে খুঁজে পাইনি। এই সমুদ্রতটেও কাক আছে অনেক। অথচ অন্যান্য সামুদ্রিক পাখিদের দেখা মেলে না। কাকগুলো কাঁকড়া ধরতে ব্যস্ত। ঝাউবন থেকে সাঁ করে উড়ে এসে ছোঁ-মেরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে লাল কাঁকড়া।
    আমি লাল কাঁকড়াদের বালির তলার গোপন পৃথিবীটাকে কল্পনা করছিলাম। কী সুন্দর, তাই না! ওদের দুটো পৃথিবী আছে, একটা বালির ওপর, আর-একটা নিচে। কেন মানুষদের দুটো পৃথিবী থাকে না? দিগন্তের দু'পাশে দুটো পৃথিবী হেলান দিয়ে বসে থাকত, একটা স্মৃতির, আর-একটা বর্তমানের। এমনটা সম্ভব হলে, অবাধে দিগন্ত পেরিয়ে একবার স্মৃতির ম্যাপ ধরে হেঁটে আসতে পারতাম। লাল কাঁকড়াগুলোকে আমার হিংসে হয়েছিল। বিরক্ত লাগছিল ওদের দুই পৃথিবীর কথা ভেবে। হঠাৎ, কার্য-কারণ ছাড়াই, উঠে গিয়ে তাদের কয়েকটিকে পা দিয়ে পিষে মারতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু একটাকেও মারতে পারিনি। ক্ষুদ্র প্রাণী, তবুও আমার ক্ষমতাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য প্রতিপন্ন করে ওদের গোপন পৃথিবীতে চলে গেল। কেন আমার আর-একটা পৃথিবী নেই? এই ভেবে আরও রাগ হয়েছিল। বাচ্চাটা আমার কাণ্ড দেখে হো-হো করে হাসছিল। একসময় ক্লান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে বালির ওপর শুয়ে পড়েছিলাম। ঢেউ এসে পুরো ভিজিয়ে দিয়েছিল। কতটা সময় ও-ভাবে শুয়েছিলাম, সে-খেয়াল ছিল না। সঙ্গে ঘড়ি ছিল না। হয়তো অনন্ত সময়। চোখ মেলে দেখলাম অন্ধকার নেমেছে জাগতিক নিয়মে। আর আছে দু’-একটা তারা। তখন চার দিক জনশূন্য। জলরাশি সরে গিয়েছে অনেকটা দূরে। অন্ধকারেও ঢেউয়ের ফেনিল সাদা, সমুদ্রের গর্জন নৈঃশব্দকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। আমার শরীরের ওপর জল শুকিয়ে আঠা-নুন জমা হয়েছিল, জিভ ঠোঁটে ঠেকাতেই লবণের স্বাদ, যেন পৃথিবীতে আর-কোনও স্বাদ নেই। একসময় অশান্ত বাতাসের শোঁ-শোঁ শব্দে মনে হচ্ছিল অসংখ্য অদৃশ্য মিসাইল পৃথিবীর উপরে নেমে আসছে। বাতাসের সঙ্গে বয়ে আসা বালি, আমার শরীর প্রায় ঢেকে ফেলেছিল। যেন, নির্মাণ হচ্ছিল আমার কবর। আমি শান্ত ছিলাম, তবু। এক অজানা প্রশান্তি আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। কবরের প্রশান্তি! তারপর আবারও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরদিন, চোখ মেলতেই দেখলাম, আগের দিনের সেই বাচ্চাটির মুখ। সম্ভবত বাচ্চাটি আমার মুখের ওপর থেকে জমা বালি সরিয়ে দিয়েছিল। আর তাতেই সূর্যের নরম আলো এসে পড়েছিল চোখের পাতায়। ঘুম ভেঙেই বাচ্চাটির হাসিমাখা মুখ, আহা, এ-ও কি কম প্রশান্তির!
    এরকম পাগলামি সাময়িক ঘটনা মাত্র। হঠাৎই কিছু আবেগ, অনুভূতি নিয়মবিরুদ্ধ হয়ে ওঠে। তখন কে কী ভাবছে, সেটাকে তোয়াক্কা না-করে, শুধুমাত্র ঝরা-পালকের মতো নিজেকে ভাসিয়ে দিতে হয়। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পাগলামি স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন কী করেছি মনে করলে, নিজেকে হাস্যকর মনে হয়। আমি চাইলেও ওখানে ফিরে গিয়ে যা-যা ঘটেছে পালটে দিতে পারব না। তবে কিছু একটা ঘটেছিল আমার ভেতরে, সেটা অস্বীকার করতে পারছি না একেবারে। কোনও কিছু নিঃসংশয়, তা-ও নয়, খানিকটা অসুখের মতো ভেতরে প্রবেশ করেছিল আস্তে-আস্তে, সাধারণ অনিশ্চয়তা যেমন। ভেতরে সেটা চুপটি করে বসেছিল, নড়াচড়া করত না। নিজেকে অদ্ভুত মনে হতো, একটু নিস্তেজ, এটুকুই। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেছি, নিজেকে বুঝিয়েছি— আমার কিচ্ছু হয়নি, আমি ভালো আছি, খুব ভালো। কিন্তু না, ভুল ভেবেছিলাম। একটা সময় সেটা পাগলামির আচরণ হিসেবে ফুটে উঠল। সমুদ্র থেকে ফিরে আসার পর সবকিছু আগের মতোই স্বাভাবিক। রাস্তায় হেঁটেছি স্বাভাবিক ছন্দে। ট্রেনে চড়েছি, ট্রামে চড়েছি। পাগলামির আগের পর্যায় আর পরের, দৈনন্দিন জীবন একই। শুধু আমিই যেন পালটে গিয়েছিলাম। ধরা যাক, একটা সকালের ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের কথা: একজন অফিস-যাত্রী তার প্রতিদিনের নির্দিষ্ট বসার জায়গায়, তার ব্যাগটা একইভাবে ঝোলানো, অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অবিরাম তর্ক চলছে, একজন আগের মতোই সবাইকে গান গেয়ে শোনাচ্ছেন, একটা দল তাস খেলছে। কিছুই পালটায়নি। শিয়ালদা স্টেশনে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামছে, তারপর ভিড় ঠেলে তাদের এগিয়ে চলা, বাইরে বাসস্ট্যান্ডে একটার-পর-একটা বাস এসে দাঁড়াচ্ছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার জন্য। সঙ্গে আরও কিছু ছোট ছোট ইমেজ: হলুদ ট্যাক্সি, হাতে-টানা জং-ধরা ঠেলাগাড়ি, হাঁটার শব্দ, কোলাহল, বিষণ্ণ মুখ, ভিখিরির সামনে অ্যালুমিনিয়ামের বাটি, ফুটপাতের দোকানের সামনে রেলিংয়ে ঝোলানো সিগারেট জ্বালানোর জন্য দড়িতে আগুনের লাল, আবর্জনার স্তূপ, অ্যামোনিয়ার মতো ঝাঁঝালো মূত্রের গন্ধ... রোজকার এই চলমান দৃশ্যমালাতে, এই জৈবিক প্রক্রিয়ায় আমার নিজের ওই পরিবর্তন ছিল একটা সামান্য ব্যাপার। সমীকরণ মেলানোর জন্য কোনও ক্ষুদ্র রাশিকে অগ্রাহ্য করার মতন ঘটনা। যদি আমার মতো অনেকের মধ্যে একসঙ্গে এই পাগলামির চিহ্ন দেখা যেত, তখন কি সব এমন ভাবেই স্বাভাবিক থাকত? হয়তো, সেটাকে নিউ নর্ম্যাল বলা হতো তখন। আর এ-ভাবেই আপাত ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে আমরা পাত্তা দিই না, আমাদের চোখে পড়ে না কিছুই। লক্ষ জনের মাঝে একটা ছেলে কিংবা একটা মেয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে, গোপনে অত্যাচার সহ্য করছে, কে তার খবর রাখে? অথবা, সে কাকে মন খুলে মনের কথা বলবে? তারপর, একদিন হঠাৎ, 'খবর' হয়।
    এই খবরগুলোই কি তবে গল্প?
     
    সোমবার, আগস্ট ৫, ০৭:৫৬
    মাঝের এই তিন দিন আমি হাঁটতে-চলতে ভেবে দেখেছি মস্তিষ্ক ও হাতের সঙ্গে লেখালিখির সম্পর্কের কথা। প্রেম ও বন্ধুত্বের মতোই এই সম্পর্ক উন্মাদনা ও রহস্য আবৃত। মস্তিষ্ক চিন্তা করে, হাত লেখে; তারা আমাদেরকে এই বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তুমি খেয়াল করেছ নিশ্চয়ই, মস্তিষ্ক আর হাতই এই পৃথিবীর সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। মস্তিষ্কই সিদ্ধান্ত নেয় কখন হাতে থাকবে কলম, আর কখন থাকবে বন্দুক। তারপর হাত সুনিপুণভাবে এই দুটি অস্ত্রকে ব্যবহার করে। তাদের ইচ্ছের কাছে আমি নিজেকে সমর্পণ করেছি, কারণ আমাকে নিজের গল্পটা লিখতে হবে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এটাও একরকমের যান্ত্রিকতাবাদ। এই যান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক পথ না দেখালে লেখক অসহায়। লেখকের 'পরিচিতি' ও 'মুখ', তার লেখার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। 'নাম' একটা চিহ্নমাত্র। এসবের গুরুত্ব নেই। একটা মস্তিষ্ক খোঁজে অন্য একটি মস্তিষ্ককে, তাদের মধ্যে তৈরি হয় নতুন নতুন সংলাপ, যুক্তিতর্ক... এই ইন্টার‍্যাকশন'ই জন্ম দেয় একটা পূর্ণ সাহিত্যকর্মের (তুমি সেটাকে যে ফর্মেই দেখো না কেন)। লেখক ও পাঠক দু'জনেই মিডিয়াম মাত্র, অর্থাৎ সৃষ্টির যৌথ আধার। (আট, নয়, দশ, এগারো, বারো, তেরো, চৌদ্দ, পনের, ষোল, সতেরো... এই যেমন, একটার-পর-একটা পৃষ্ঠায় আমি লিখে চলেছি মৃত-ভাষা বুনে, আর শুধুই সৃষ্টি হচ্ছে বাক্যের মাঝে শূন্যতা... তুমি কি বলতে পারবে, তোমাকে ছাড়া কীভাবে একটা গল্প লিখব?)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন