এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  সমাজ

  • প্রসঙ্গ রাজনীতি 

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৬১ বার পঠিত
  • রাজনীতি সচেতনতা আর প্রত্যক্ষ রাজনীতি কখনোই এক নয়! একজন নাগরিককে অবশ্য‌ই রাজনীতি সচেতন হতে হবে, রাষ্ট্রশক্তির অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে; কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তিনি যুক্ত নাও হতে পারেন!

    আচার্য জগদীশচন্দ্র নিজের বিজ্ঞানচর্চা ছেড়ে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হননি! বিজ্ঞানচর্চাই তাঁর সাধনা, আচার্যদেব সেখানেই সাধনায় নিমগ্ন ছিলেন। সশস্ত্র রাজনীতি ও নিবেদিতার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েও তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন।

    উত্তমকুমার অভিনয় ছেড়ে রাজনীতিতে আসেননি! কংগ্রেসের ডাকসাইটে নেতা অতুল্য ঘোষ উত্তমকুমারের বাড়িতে গিয়ে উত্তমকুমারকে কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনে দাঁড়াতে অথবা কংগ্রেসের হয়ে প্রচারে অনু্রোধ করেছিলেন। উত্তমকুমার প্রত্যুত্তরে শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, "আমি একজন অভিনেতা, অভিনয় আমার কর্মক্ষেত্র। সেটাই আমি মন দিয়ে করতে চাই।"
    তপন রায় চৌধুরী '৪২ এর আগস্ট আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন। জেলে জন্ডিস হলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেসময় তাঁদের পারিবারিক বন্ধু ফজলুল হক তাঁকে দেখতে আসেন। তিনি তপন রায়চৌধুরীকে বলেন, "রাজনীতি করার জন্য অনেক লোক আছে। তুমি তোমার কাজ মন দিয়ে করো।"

    স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবদ্দশায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিবিযুক্ত রেখেছিলেন। এবিষয়ে তিনি ছিলেন কঠোর, আপোষহীন। জালিয়ান‌ওয়ালাবাগের ঘৃণ্য কাণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁর প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আমাদের অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু তাঁর সাধনাক্ষেত্রে তিনি কখনোই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেননি! মহাকবি ছাত্রস্বরাজের কথা বলেছিলেন, যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্য‌ই ছাত্রদের সক্রিয় নেতৃত্বে পরিচালিত হবে; কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের কোনো স্থূল হস্তাবলেপ সেখানে ক্রিয়াশীল হবেনা! ছাত্রদের শক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন। এই দুরভিসন্ধিকে কখনো তিনি প্রশ্রয় দেননি। সচিব অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা চিঠিতে রাজনৈতিক নেতাদের অসদুদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁর তীব্র বিতৃষ্ণা প্রকাশিত হয়েছে।

    রবীন্দ্রপরবর্তীকালে আর্থিক কারণে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আসে। তখন থেকেই বিশ্বভারতীর ধ্বংস আরম্ভ শুরু হয়! আজ রবীন্দ্রনাথের স্বপ্ন ধ্বংসস্তূপে পরিণত!

    গত শতাব্দীর ছয়-সাতের দশকে কংগ্রেসের নেতারা সর্বত্র ছড়ি ঘোরাতেন। কলেজগুলোতে ছাত্রপরিষদের নেতাদের দাদাগিরি চলতো। তৎকালীন সংবাদপত্র, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে ঐ সময়ের কথা জানা যায়। এরপর বামেরা রাজ্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তাঁরাও রাজনীতিসচেতনতার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে থাকেন। যোগ্যতার পরিবর্তে সেখানে দলীয় আনুগত্য‌ই প্রাধান্য পায়। ফলে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ক্রমশ নিম্নগামী হতে থাকে। এই সুযোগে একের পর এক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে!

    বর্তমান রাজ্যসরকার আরো নির্লজ্জভাবে এইকাজ করে চলেছে! কিছু ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ শাসকদলের পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে! সর্বক্ষেত্রে নির্বোধ, স্তাবকপরিবৃত, আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের অনুপ্রবেশের কুফল আমরা প্রত্যক্ষ ভাবেই উপলব্ধি করেছি।

    ছাত্রদের আবেগ ও আদর্শবাদকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতারা সর্বত্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায়। উপমহাদেশ এই অভিজ্ঞতা বারবার প্রত্যক্ষ করেছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি তার অন্যতম উদাহরণ। ছাত্রদের সামনে রেখে ইসলামী মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতা দখল করেছে! শেখ হাসিনার স্বৈরাচার পরাজিত হয়েছে সত্য, কিন্তু আরো ভয়ঙ্কর শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়েছে।

    তবে একটা মজার জিনিস লক্ষ্য করেছি। পশ্চিমবঙ্গের মহাবিপ্লবীকুল কথায় কথায় ছাত্রছাত্রীদের রাজনীতি করতে বলেন, কিন্তু নিজেদের ছেলেমেয়েদের কলকাতার নামীদামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেন। সেখানে অবশ্য ছাত্র ইউনিয়ন নেই, রাজনৈতিক দাদাদের মাতব্বরি নেই! সেসময় অবশ্য তাঁদের রাজনীতিচর্চা'র কথা মাথায় থাকেনা! অবশ্য তাঁরা ভালোমতন জানেন ঐসব অভিজাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিপ্লব করতে গেলে যথেষ্ট বিপদের সম্ভাবনা আছে। পিঠের চামড়া তো আস্ত থাকবেই না, তারসাথে জেলের ভাত খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা!

    সবশেষে একটু স্পষ্টভাবে কিছু কথা বলে যাই। যেদেশে নির্বোধ রাজনৈতিক নেতা ও তাদের অশিক্ষিত সাঙ্গোপাঙ্গরা শিক্ষাজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে; সেদেশে শিক্ষাব্যবস্থার অধোগতি কেউ রোধ করতে পারেনা। ছাত্রদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও আদর্শবাদ অবশ্য‌ই কাম্য, কিন্তু অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতাদের শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো স্থান নেই। সব রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাদের উদ্দেশ্যে এই সত্য প্রযোজ্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন