এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  সমাজ

  • পুলিশি তৎপরতার নমুনা!

    দীপ
    আলোচনা | সমাজ | ২৭ আগস্ট ২০২৪ | ২৬০ বার পঠিত
  • (এই লেখাটি লিখেছেন দেবাশিস সেনগুপ্ত। পাঠকের উদ্দেশ্যে লেখাটি প্রকাশ করা হলো।)

    আসুন একটা ভয়ের গল্প শুনি! এখন তো ভয়ের গল্প খুব খায় মানুষ! তাই হয়ত চারপাশে সবার অজান্তেই এক হাড়হিম করা ভয়ের আবহ তৈরি হয়ে গেছে! গল্পে ফেরা যাক বরং।

    ১৮ই জুলাই ২০২৪। দেড়মাসও হয়নি।

    সল্টলেকের স্কুল থেকে বাড়ির পথে যাচ্ছিল ১৬ বছরের অঙ্গীকার দাশগুপ্ত। হলদিরামে নিজের স্টপেজ এসে যাওয়ায় সে বাসের গেটের কাছে চলে আসে। কন্ডাক্টর তাকে জোর করেই বাধ্য করে একেবারে নীচের পাদানিতে নেমে দাঁড়াতে। ছোটবেলা থেকেই পায়ের গঠনসমস্যার কারণে অঙ্গীকার আর পাঁচজনের মত স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। L238 রুটের সেই বাসের কন্ডাক্টর তাকে বোঝায় নীচে নেমে দাঁড়ালে, বাস স্লো হলেই টুক করে নেমে যেতে পারবে।
    ছেলেটা ঐ তাড়নাতেই নামে এবং বাস স্লো হতেই সেই কন্ডাক্টর ধাক্কা দেয়। টাল সামলাতে না পেরে সে লাফ দেয়। উল্টোদিকে! হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মাথা বাড়ি খায় ফুটপাতে। আর গুটোনো শরীরটাকে থেঁতলে দিয়ে নির্বিকারে বেরিয়ে যায় বাস।
    রাস্তায় লোক জমে যায়। ভিড় যখন প্রতিবাদ, চেঁচামেচি শুরু করেছে তখনই এসে যায় পুলিশ। চটপট ছেলেটাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিক্ষোভ চলতে থাকে।

    গল্পের পরের পর্যায়ে পুলিশ আহত ছেলেটাকে নিয়ে চার্ণক হাসপাতালের ইমার্জেন্সীতে পৌঁছয়। অঙ্গীকারের মা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী ঐ তরতাজা ছেলেকে রিক্সার পাদানিতে নিজের বুটের উপর শুইয়ে এক বীরপুঙ্গব সিভিক ভলান্টিয়ার হাসপাতালে এনেছিল! তো ইমার্জেন্সীর ডাক্তার দেখে বলেন প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখুনি ভর্তি করতে হবে। ততক্ষণে এক পরিচিত রিকশাচালকের মাধ্যমে বাবামায়ের কাছে খবর পৌঁছে গেছে।
    পুলিশ কোনও এক অজ্ঞাত কারণে অঙ্গীকারকে নিয়ে চার্ণক হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। বাবা-মা উদভ্রান্তের মত চার্ণক হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন পুলিশ তাঁদের আহত ছেলেকে নিয়ে চলে গেছে। ছেলে বেঁচে আছে কিন্তু কোথায় নিয়ে গেছে কেউ জানে না।
    উন্মাদপ্রায় দম্পতি তখন ছুটে রাস্তায় নেমে এসে চিৎকার কান্নাকাটি জুড়ে দেন। লোক জড়ো হয়। সবাই মিলে ছুটে যায় সামনের ট্রাফিক পুলিশপোস্টে। সেখানে দলবদ্ধ বিক্ষোভের সামনে পড়ে ডিউটিরত সার্জেন্ট ফোনাফুনি করে খোঁজ নিয়ে জানান ছেলেকে পুলিশ নিয়ে গেছে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরের বারাসাত হাসপাতালে!

    বাবা-মা ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে গিয়ে শোনেন তাঁদের ছেলেকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল (brought dead) এবং বডি মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
    অঙ্গীকারের বাবা-মা, দাদু প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে জানতে চান কাদের অনুমতিতে চারঘন্টা অপেক্ষা না করে দেহ মর্গে পাঠানো হল? মা ডাক্তার-নার্সদের পায়ে ধরে মিনতি করেন একবার তাঁর সন্তানকে চোখের দেখা দেখতে দেওয়ার জন্য। ততক্ষণে অন্য আত্মীয়স্বজনরাও এসে ভিড় করেছেন। বারাসাত হাসপাতাল কারোর কোনও কথায় কর্ণপাত না করে পুলিশে খবর দেয়।
    পুলিশ এলে অঙ্গীকারের দাদু চিৎকার করে কৈফিয়ত তলব করেন। পুলিশ তাকে প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। জামা টেনে ছিঁড়ে তাঁকে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। অঙ্গীকারের বাবা, অঞ্জন, চন্দননগর কলেজের অধ্যাপক, পুলিশকে বাধা দিতে গেলে তাঁকে বেধড়ক মেরে মুখ ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তারপর সদ্য সন্তানহারা বাবা-মাকে জোর করে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দু'ঘন্টা বসিয়ে রেখে তুলে দেওয়া হয় আত্মীয়স্বজনের হাতে। অঙ্গীকার তখনও অদেখা। ঠান্ডাঘরে লাশ।

    গল্পের শেষ পর্যায়ে, সন্তানহারানো অঞ্জন ও কস্তুরীর কথা। দীর্ঘ একমাস পাগলের মত ছোটাছুটি করে তবে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের কপি পেয়েছেন।
    তাঁদের করা এফআইআরে যে জামিন অযোগ্য ধারা ছিল, পুলিশ পরে পেন দিয়ে কেটে সেই ধারা জামিনযোগ্য করে দেয়। ফলতঃ ঠিক তিনদিনের মাথায় গ্রেফতার হওয়া ড্রাইভার, কন্ডাক্টর জামিন পেয়ে যায়। সেই খুনে বাসটাও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা যথেচ্ছভাবে আবার রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
    এ গল্পে কোনও মোচড় নেই। হয়ত বা পুরোটাই মোচড়। যে মোচড়ে অসহায় এক শিক্ষক দম্পতির চোখের জল, বুকের যন্ত্রণা আর নিঃসঙ্গ বিচারপ্রার্থনাটুকু ছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই।

    তবু শেষে একটা মোচড় না থাকলে কী আর গল্প জমে?
    কোর্টে কেস উঠেছে। শুনানির দিন পড়েছে চারমাস পর!

    কতজনের বিচার চাইবো? বলতে পারো মানুষ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debu | 2603:8001:3300:691b:1c2b:2f0a:7233:fb29 | ২৯ আগস্ট ২০২৪ ০৩:৪৭743621
  • বাহ্! ভালো লিখেছেন মিডিয়া তে কি এসেছিলো এই খবর টা ?একটু তথ্য দেবেন ?
  • দীপ | 2402:3a80:1968:be2:578:5634:1232:5476 | ২৯ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৪৪743623
  • লেখাটি ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত। লিংক দেওয়া হয়েছে। কোনো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে কিনা বলতে পারছি না।
  • দীপ | 42.110.164.6 | ২৯ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৫৪743626
  • লিংক পেলাম। দিয়েছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন