এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্লোগান

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭৮ বার পঠিত
  • রাত তিনটে, সেকেন্ড ফ্লোর।

    ঘুম আর আসবে না ধরে নিয়েই ধীমান বাথরুমের দিকে এগোয়। সুলেখা বেঁচে থাকার সময় খিটখিট করতো বেশ। মশারী তুলে বাথরুমে যাওয়ার সময় নাকি মশা ঢোকে বেশি। সে নিয়ে রোজ অশান্তি ছিল একসময়। এ শহর মানুষের চেয়ে বেশি মশাদের এ নিয়ে তর্কও হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে ওই যে, নামেই স্ত্রী, পুরুষদের সাধ্য কোথায় জিতবে। এমনকি করোনার সময়কালেও ইহ জগৎ ছাড়ের কম্পিটিশনেও সুলেখা হারিয়ে দিয়েছে তাঁকে। থাক সে সব। ইদানিং বড্ড খেই হারিয়ে ফেলছে ধীমান। চোখের সামনে সবসময় ভাসতে দেখছে অতীত। গুগল পড়ে দেখেছে ধীমান বয়সকালে এ সব হয়। যে সব অতীত অবচেতন হয়ে নিজেকে এককালে পুরুষ করে তুলেছিল, সে সব অতীত বড্ড নিঃসঙ্গ করে আজকাল। সে প্রায় বিয়াল্লিশ বছর আগে সুলেখার বাবার হাত থেকে রাজদূত নেবার সময় সুলেখার চোখ এর চাউনি হোক, কিংবা আট মাসের মেয়ে মহুয়ার জন্মদিনের দিনেই বংশ রক্ষায় রাহুল কে আমার পরিকল্পনা, কোনটাতেই কেন যে সুলেখা বাধা দেয়নি সে নিয়ে আজও মাঝে মাঝে অনমনা হয়ে পড়ে ধীমান। ছেলে মেয়ের ভরা সংসারে রাহুলকে চার বছর বয়সে রামকৃষ্ণ মিশনে, চোদ্দপুরুষের উঠোনবাড়ির তুলসী গাছের মায়া ছেড়ে থ্রি বি এইচ কে কিংবা মহুয়ার পছন্দের ছেলেকে না করে একটু বেশি বয়সের স্কুল মাস্টারের সঙ্গে মহুয়ার বিয়ে, কোনটাতেই সুলেখা বাধা দেয়নি। শুধু তাকিয়েছে এক বার। সেই তাকানো গুলো বড্ড মনে পড়ে ইদানিং ধীমানের। অথচ ধীমানের দোষ নেই, ধীমান সারাজীবন সংসারের কথাই ভেবেছে।

    বাথরুম থেকে এসে জানলার সামনে দাঁড়ায় ধীমান। দূরে কোথাও স্লোগান ভেসে আসছে। রাত বাঁচানোর লড়াই এর স্লোগান। মেয়ে বাঁচানোর স্লোগান। রাত দখল করার স্লোগান। কোন স্লোগানই স্পষ্ট নয় ধীমানের কাছে। তাও স্লোগান গুলোর আবছা স্বরে ধীমানের কষ্ট হচ্ছে খুব। জানলা গুলো টাইট করে বন্ধ করে ধীমান চিৎকার করে উঠবে নাকি !

    চিৎকার করে বলবে নাকি?

    সুলেখা ক্ষমা করে দিও ...কেন? কে জানে?

    স্লোগান এখনো চলছে।

    *********

    ভোর চারটে, ফার্স্ট ফ্লোর।

    ধড়পড় করে উঠে বসে বিহান। লজ্জায় নাকি অভ্যেসে নিজের উলঙ্গ শরীরটাকে ঝটপট করে ঢাকতে গিয়েও মিসেস রয় এর শরীরটা দেখে সামলে নেয় খানিক। একটা উলঙ্গ থলথলে পঁয়তাল্লিশ এর মেয়ে শরীর, কত নিশ্চিত ঘুমিয়ে। অথচ এই শরীরটাই রাতভর কতই না বিকৃত লালসা মিটিয়েছে বিহানের ওপর। বিহান অবশ্য এ সবে অভ্যস্থ। এ শহরের সব ময়লা মেখেও নিজেকে পলিসড করার প্রসেস বিহান জানে। কতই বা বয়স তখন, মেরে কেটে বাইশ। ওর মা বলতো ছেলেই আমার দুধে আলতা, বউমা খুঁজে আনা খুব কঠিন। লজ্জায় লাল হত বিহান। মৈত্রী কাছে আসার পর লজ্জাটা বেড়ে আরো লাল হচ্ছিল। গালিবের সায়েরি আর অরিজিৎ এর স্লো মোশন। মৈত্রীর চুমু খাওয়ার ব্যস্ততায় বিহান বুঝিয়েছিল মৈত্রীকে সিঁথির সিঁদুর আর রোম্যান্সের কম্বিনেশন।

    তারপর লক ডাউন। শহর, পেটের ভাত কাড়লো বিহানের বাবার আর ভাইরাস কাড়লো ছাদ আর মায়ের আঁচল। রূপ আর লাল লজ্জা যে মৈত্রীর মাথার সিঁদুরের যোগ্যতা হতে পারে না সে অভিজ্ঞতা বিহানকে কখন আজকের এই ' দেশী বয়েস ' মার্কা বিহান করলো সে নিজেও গুছিয়ে উঠতে পারে নি আজ অব্দি। স্বপ্নের যে রাতগুলো সিঁদুর আর ফুলশয্যার শায়েরিতে সাজিয়েছিল, প্রতিরাতে ধারালো নখের আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়েও বোবা হয়ে ফুলশয্যা ভোগ করে বিহান। রোজ। কাস্টমার দের বলেও দেয় ওর ট্যাবুর কথা, ফ্যান্টাসির আগে একটু সিঁদুর, ব্যাস।

    শাওয়ার শেষে নিজেকে পরিপাটি করে ফার্স্ট ফ্লোরের ফ্লোরের দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্লোগান শুনলো বিহান। এ শহরের নারী পুরুষের সমান সমান হওয়ার স্লোগান। রাত গুলো সবার জন্য সমান হোক স্লোগান। সিঁড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্লোগান শুনে বড্ড হাসি পেল বিহানের। পকেটে হাত ভরে হদিস পেল সিঁদুর কোটটার। কৌট ছুঁয়ে

    বিহান হাসছে বড্ড ...

    হাসতে হাসতে চোখে জল এলো বলে,

    স্লোগান তখনো চলছে।

    ***********

    ভোর পাঁচটা, গ্রাউন্ড ফ্লোর।

    ফুলমতি বাচ্চাটাকে আর এক রাউন্ড ঘুম পাড়িয়ে, জগজিৎ কে পাঠায় মিউনিসিপ্যাল এর কল থেকে জল আনতে। ভোর বেলায় ভিড় কম থাকে বলে জগজিৎ সারাদিনের পানি ভরে নেয় এ সময় জ্যারিকেনে। ফুলমতিও এ সময় ওর থাকা পছন্দ করে না। ফ্ল্যাটের লিফ্ট ম্যান টু সিকিউরিটি, সব এক হতেই সামলাতে হয় জগজিৎ কে। ফুলমতি ঝাড়ু পোছা সামলায়। গ্রাউন্ড ফ্লোরে লিফট্ এর পাশের এক কামরার জায়গাটা এখন সংসার ওদের।

    ফুলমতির ঝাড়ু পোছা সদ্য শুরু,

    পায়ের আওয়াজ শুনে ফুলমতির মনে হয় সেকেন্ড ফ্লোরের বুড়া বাবু নামছে, মর্নিং ওয়াকে। বুকের ওড়নাটা একটু এলোমেলো করে রাখে ফুলমতি, পুরুষের নজর ছোট থেকেই চিনে মনে হয়। রোজ দশ টাকা পায় ফুলমতি বাবুর কাছে। বুড়া বাবু ভালো মানুষ না কি ওড়নার দাম দশ টাকা কে জানে। ফুলমতি শুধু জানে গেল মাস থেকে আমূল দুধের দাম দশ টাকা হয়েছে।

    তবে আজ বুঝতে ভুল করলো মনে হয়। বাবুর বদলে ফার্স্ট ফ্লোরের মালকিন নামছে কাকে যেন খুঁজে।

    না পেয়ে ফেরার আগে শাসিয়ে গেল ফুলমতির দিকে চেয়ে,কাপড় ঠিক করে পরার জন্য, না হলে জগজিৎ সমেত তাড়াবে।

    ফুলমতির মন খারাপ। নিজের জন্য নাকি মালকিনের বকা খাওয়ায় কে জানে?

    দূরে স্লোগানটা এখনো বাজছে...

    কাকে বাঁচাতে কে জানে ...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন