এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ অরুণাচলের দিকে

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৮৬৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:০২381073
  • অনন্ত নয়, আনন্দ বিহার। হ্যাঁ মনে আছে, এক সুটকেস তেল নিয়ে ট্রেনে চেপেছিলে। :)
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:০৪381074
  • এই যে, আমার সেলপি। সেভক ব্রিজ পেরিয়ে কালিম্পংয়ে।

  • I | 7845.15.451223.59 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৩০381075
  • দিব্য সেলফি।গুয়াহাটি আই আই টি তে আমার বন্দুক শুভ্রদীপ এর সাথে দেখা হয়েছিল না?
  • Tim | 89900.253.8956.205 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৫০381076
  • ইন্দোদা মন দিয়ে পড়ছেনা ঃ)
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৪381077
  • দারুণ হচ্ছে। সিকি-র চাগ্রি-বাগ্রি ছেড়ে শুধু ভ্রমণ আর ট্রাভেলগ - এই নিয়েই থাকা উচিত
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:২৮381078
  • আইআইটি গৌহাটি ক্যাম্পাসটা বেশ সুন্দর। ছবি নাই কেন? সেখানে লেপার্ডও বেরোয় মাঝে মাঝে।
  • সিকি | 562312.19.4534.88 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৬381079
  • হেঁইও, ডুবে যাবার আগে তুলে রাখি। দেখি আজ এগোতে পারি কিনা।
  • গবু | 2345.110.674512.16 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৪381080
  • বেশ বেশ! শীঘ্রস্য শুভম!
  • dc | 127812.49.787812.223 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:০৫381081
  • "আমি তো এমনিতে জল টল খাই না, খাই শুধু কিছু খাবার স্স্ময়ে, এই ধরো ভাত খেতে বসে দেড় বোতল জল খেয়ে ফেলি। বাকি সব খেয়েই জল খাই - চানাচুর, চপ, কাটলেট, পরোটা, ভাত, দুধ, ফল।"

    আমার মেয়ের এক্কেবারে সেম অভ্যাস। জল ছাড়া কিছু খেতে পারে না, এমনকি দুধ মুড়ি মেখে দিলে তার সাথেও জল চাইবে। বাকি সময়ে একফোঁটা খাবে না।
  • তারপর | 785612.51.234523.224 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৩০381083
  • পড়বো বলে বসে আছি।
  • সিকি | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৭381084
  • আজ রাতে। প্রমিস।
  • সুকি | 90045.205.012323.215 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫৭381085
  • কবে আসবে লেখা? রাতে আসবে তো ঠিক?
  • সিকি | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৮381086
  • তিন দিনে চলে এসেছি প্রায় দু হাজার কিলোমিটার। আজ একটু বিশ্রাম নিলে ভালোই হত, কিন্তু প্ল্যান বলছে আজ আমাকে দিরাং পৌঁছতে হবে। দূরত্বটা কম – তিনশো চার কিলোমিটার, কিন্তু রাস্তাটা পাহাড়ী। তবে একটু্ দেরি করে বেরোলেও চলবে। তাই চোখ খুললাম সকাল সাড়ে ছটায়।

    মোবাইল অন করে দেখি শুভ্রদীপের মেসেজ – তুমি কি গৌহাটি এসেছো?

    শুভ্রদীপ আমার ফেসবুক বন্ধু – কীভাবে যোগাযোগ হয়েছিল জানি না, আমাদের কমন ফ্রেন্ড ইন্দো, এইটুকু জানতাম। বাকি তিনি কে, কী কোথায় থাকেন, কিছুই জানি না, খোঁজ নেবার দরকারও মনে করি নি কোনওদিন। প্রথমে তাই লিখলাম, হ্যাঁ, কাল রাতেই এসেছি, আজ চলে যাবো – তারপরে কী মনে হল, শুভ্রদীপ নিশ্চয়ই গৌহাটিতেই থাকে, না হলে “এসেছো” লিখবে কেন? ঝট করে শুভ্রদীপের প্রোফাইলে গিয়ে দেখি, পরিষ্কার লেখা আছে, আইআইটি গৌহাটি। যাব্বাবা! আমরা তো একই জায়গায় আছি তার মানে।

    সঙ্গে সঙ্গে লিখলাম, ইন ফ্যাক্ট, তোমার খুব কাছেই আছি। b-এর বাড়িতে। কিন্তু আমি তো একটু বাদেই বেরোব। তুমি এখানেই থাকো জানলে তো কাল রাতেই ডেকে নিতাম, কত আড্ডা হল।

    শুভ্রদীপ লিখল, কটায় বেরোবে তুমি?

    আমি লিখলাম, সাড়ে সাতটা অ্যাপ্রক্সিমেটলি।

    – তুমি তৈরি হও। আমি মেয়েকে স্কুলবাসে তুলে দিয়েই আসছি সাতটা নাগাদ। bকে বলো, আমার জন্যে এককাপ ভালো করে চা বানাতে।

    সাতটা চার নাগাদ দরজায় দর্শন দিল শুভ্রদীপ, এই প্রথম সামনাসামনি দেখা, কিন্তু যেন কতদিনের আলাপ। ফেসবুক আর গুরুচণ্ডা৯র ভার্চুয়াল আলাপ পরিচিতি শুধুই ভার্চুয়াল থাকে না সামনাসামনি মানুষগুলো এসে দাঁড়ালে। সেই অর্থে b, দেবর্ষি, শুভ্রদীপ – তিনজনকেই আমার এই প্রথম চাক্ষুষ দেখা। অতএব, আবার একপ্রস্থ আড্ডা, চটজলদি চায়ের সাথে। আমি ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম, তিনজনে মিলে হাতে হাতে ধরে ব্যাগ নামিয়ে নিচে পার্কিংয়ে আসতে আসতে আটটা প্রায় বাজে বাজে। ঝটপট আমার দৈনিক ইড়িমিড়িকিড়ি বাঁধন বেঁধে দুজনকে টা টা বাই বাই করলাম। শুভ্রদীপ বলল, দাঁড়াও, কালকে তো তুমি পেছনের গেট দিয়ে ঢুকেছো, সামনের গেটে তো এন্ট্রি নেই, হয় তো আটকাতে পারে, আমি যাচ্ছি গাড়ি নিয়ে তোমার আগে আগে।

    তাইই হল। একেবারে রাজকীয় এক্সিট হল ভোর ভোর – সামনে শুভ্রদীপ গাড়ি চালিয়ে চলেছে, পেছনে মোটরসাইকেলে বোঁচকাবুঁচকি নিয়ে আমি। একদম মেনগেটের সামনে এসে ফাইনালি শুভ্রদীপকে বিদায় জানিয়ে আমি এগোলাম। শেষবেলায় মনে পড়ল, কারুর কোনও ছবি তোলা হয় নি।

    সকালবেলার গৌহাটি আইআইটি ক্যাম্পাসের চারপাশটা বেশ নির্জন। একটা হালকা ফ্যাকাশে কুয়াশার আস্তরণ জড়িয়ে আছে চারপাশে। একটু এগোতেই বড়রাস্তা পেয়ে গেলাম। পেট্রল পাম্পে তেল ভরে নিয়ে এবার এগনো অরুণাচলের রাস্তায়। দূরে হাতছানি দিচ্ছে নীল পাহাড়ের শিল্যুয়েট।

    গৌহাটি থেকে দিরাং হয়ে তাওয়াং যাবার দুটো রাস্তা। একটা সাধারণ প্রচলিত রাস্তা – যেটা যায় অল্প করে তেজপুর ছুঁয়ে ভালুকপং হয়ে বমডিলা দিয়ে। আরেকটা রাস্তা খুলেছে কয়েক বছর হল, সেটা যায় ভুটান সীমান্ত ছুঁয়ে, কালাকটাং বলে একটা জায়গা পেরিয়ে। বাইহাটা পর্যন্ত রাস্তা আগের দিনের মতই, এখান থেকে ডানদিকে বাঁক নিয়ে যেতে হয় – সিপাঝাড় পেরিয়ে মঙ্গলদই, সেখান থেকে আরেকটু এগিয়ে খারুপেটিয়া। পুরোটাই লোকালয়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া, রাস্তাও খুব একটা চওড়া নয়, ভালোও নয়, অল্পবিস্তর খানাখন্দে ভর্তি।

    খারুপেটিয়ার পরেই বাঁদিকে একটা সরু মতন রাস্তা আছে ম্যাপে, জিপিএস যদিও সে রাস্তা রেকমেন্ড করে না – কিন্তু গেছোদাদা বলেছিল এই রাস্তাটা একটা স্টেট হাইওয়ে, সোজা নিয়ে গিয়ে ফেলে ভুটান সীমান্তের কাছে, দূরত্ব খানিকটা কমিয়ে দেয়। তো, ঢুকে পড়লাম। খানিক ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে দেখি দিব্যি ভালো রাস্তা। একেবারে গ্রাম-আসামের (গ্রামবাংলার অনুকরণে) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দু পাশে ছোট ছোট গ্রাম, গোলাভরা ধান, ক্ষেতভরা ফসল, গোয়ালভরা গরু এবং রাস্তাভরা গোবর – এইসব দেখতে দেখতে দু তিন কিলোমিটার চলতে না চলতেই ভালো রাস্তা ফিনিশ, এবং নেই-রাস্তার শুরু। মাটি, কাদা, ইঁট, খোয়া ইত্যাদি দিয়ে বানানো মেকশিফট রাস্তা – কোথাও বাঁকাবাঁকি নেই, সোজা বাইশ কিলোমিটার চলতে হবে এই রাস্তায়। … এই রাস্তায়?

    একেকটা ঝাঁকুনির সাথে সাথে চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে, এক তো ক্যারিয়ারের দুদিকেই লোহার রড ভেঙে আলাদা হয়ে গেছে, যদিও আশু পুরো ব্যাপারটা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা নেই, কিন্তু রাস্তার এই অবস্থা হলে দুর্ঘটনা ঘটতে কতক্ষণ? আর দ্বিতীয়ত, এই স্পিডে যদি এতখানি রাস্তা চলতে হয়, তা হলে আবারও দিরাং পৌঁছতে পৌঁছতে রাত হবে। রাত বলতে, ভারতের এই উত্তরপূর্বদিকে এখন বিকের চারটের পরেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসছে। সাড়ে চারটেয় ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। যেখানেই যাই, বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে জার্নি শেষ করতেই হবে, না হলে অন্ধকারে এই ধরণের রাস্তায় চলা খুবই কষ্টকর।

    এইসব ভাবতে ভাবতেই আবার দেখি রাস্তা বেশ ভালো হয়ে গেল। দশ এগারো কিলোমিটার সুন্দর রাস্তা পাবার পরে আবার কয়েক কিলোমিটার খারাপ রাস্তা, তারপরে আবার ভালো রাস্তা ছাড়িয়ে গিয়ে পৌঁছলাম উদলগুড়ি বলে একটা জায়গায়। এখান থেকে একটু এগোলেই ভৈরবকুণ্ড, ভুটানের সীমান্ত। রাস্তায় ভুটানের লাল রঙের নাম্বারপ্লেটওলা গাড়ির সংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে দেখতে পাচ্ছি। আমি চলেছি এইসবের মধ্যে দিয়েই, কিন্তু কেমন যেন একটা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার অনুভূতি, সমানে আমাকে ঘিরে রেখেই চলেছে। …

    … ডিভাইন ডিসকনটেন্ট। আসার আগে, অফিসের একটা লিডারশিপ প্রোগ্রামে এই বিষয়ের ওপর একটা সেশন অ্যাটেন্ড করে এসেছিলাম। শব্দবন্ধটা বেশ একটু অক্সিমোরন শুনতে। ডিসকনটেন্ট, বিচ্ছিন্নতাবোধ, সে আবার ডিভাইন হয় কেমন করে? ফেসিলিটেটর বোঝাচ্ছিলেন, এ হল সেই ডিসকনটেন্ট, যা তোমাকে স্থির থাকতে দেয় না, যা তোমার স্থিতাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে, যা তোমাকে জাগিয়ে রাখে রাতে, যা তোমাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলে পরের পর মাইলস্টোন ছুঁয়ে চলার নেশায়।

    স্থিতাবস্থা। কাকে বলে, স্থিতাবস্থা? চল্লিশ পেরিয়ে গেছি প্রায় কত যেন বছর হতে চলল, শোবার ঘরে এসি আছে, গরমকালে চলে, অফিস সেন্ট্রালি এসি, সুন্দর গদি-আঁটা চেয়ার, সেখানে একটা মাঝারি গোছের পদ আছে, প্রোজেক্ট ম্যানেজার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার। জুনিয়র কিছু ছেলেপুলে আমাকে সম্মান করে, কেউ কেউ আমাকে স্যার বলে, বার বার বলেও তাদের কর্পোরেট কালচারে অভ্যস্ত করাতে পারি নি এখনও। একটা গাড়িও আছে, চার চাকার। এসি চলে। মাস গেলে খুব খারাপ মাইনে পাই টাই না। আমি তো তথাকথিত সুখী মানুষদের দলে পড়ি। স্থিতাবস্থায় তো আমারও অভ্যস্ত হয়ে যাবার কথা এতদিনে। তবু হতে পারি না কেন? কেন রাতের পর রাত ঘুম ভেঙে যায়? ঘুম আসে না? এতোল বেতোল চিন্তা আসে? কেন শেষরাতের ঝোঁকে শেষবারের মত ঘুম আসার আগে, প্রত্যেকদিন মনে হয়, সব মিথ্যে, সবকিছু মিথ্যে, মিথ্যে একটা জীবন কাটাচ্ছি? … মিডলাইফ ক্রাইসিস?

    মোটরসাইকেল নিয়ে যেদিন প্রথম নেমেছিলাম লাদাখের রাস্তায়, তখন আমার বয়েস ছিল চল্লিশের সামান্য কম। অফিস একটা বিশাল বড় ভয়েড, একটা ব্ল্যাকহোল হয়ে আমাকে গিলে খেতে আসছিল। প্রফেশনাল লাইফে চূড়ান্ত অন্ধকার সময় দেখে দেখে তখন আমি ক্লান্ত, সেই সময়ে রাতের স্বপ্নে আসত বেড়িয়ে পড়ার ইচ্ছে। শেষরাতের নির্জন রাস্তা, হ্যালোজেনের আলো, আর আমি চলেছি একলা। লাদাখ ঘুরে আসার পরও সেই স্বপ্ন ছাড়ে নি, আরও জোরে ঝাঁকিয়ে বসেছিল আমার মনে। এর পর টুকটাক এদিক ওদিক গেলাম, স্পিতি গেলাম, আমার বই বেরোল, লোকে ভিড় করে এল, বই কিনল, সুন্দরী সুন্দরী বান্ধবীরা বলল, বাব্বা, সিকি, তুমি তো সুপারম্যান – একদিনে এত লম্বা চালাও? তুমি ক্লান্ত হও না? পারো কী করে?

    আমি মুখে হেসেছি, বলেছি, এ আর এমন কী ব্যাপার। মনে মনে গর্বিত হয়েছি, ওঃ, আমার ফ্যানবেস বাড়ছে, আমার একটা “ইমেজ” তৈরি হচ্ছে। লোকে আমার বই কিনে নিয়ে যাচ্ছে গুরুচণ্ডা৯র স্টল থেকে, সেইখানে আমি সই দিচ্ছি, গর্ব হবে না?

    কালাচাঁদ দরবেশের গল্প মনে পড়ে তখন। কল্লোলদা শুনিয়েছিল, একাধিকবার।

    এইচএমভি কালাচাঁদ দরবেশের ক্যাসেট বের করতে চায়, কিন্তু দরবেশ ধরা দেন না। এদিক সেদিক বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর তাঁর খোঁজ পাওয়া যায় এক গাছতলায়। মাধুকরী করে দিন গুজরান করেন। ততদিনে কালাচাঁদের দেশ পেরিয়ে বিদেশেও খ্যাতি ছড়িয়েছে, আমেরিকায় গিয়ে গান করে এসেছেন। ভক্তরা বলে, তোমার এত নামডাক – ইচ্ছে করলেই দুটো ক্যাসেট বের করে তার টাকায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে খেতে পারো, তুমি ভিক্ষে করো কেন?

    কালাচাঁদ মিষ্টি হেসে বলেন, কেন ভিক্ষে করি, শুনবি? বোস।

    ভক্ত বসে, সেই ধূলোটমূলে। কালাচাঁদের পায়ের কাছটিতে। কালাচাঁদ তাকে জিগান, বল তো, এই পৃথিবীতে কত লোক আছে?

    – ধুর, তা আবার বলা যায় নাকি? সে তো অনেক!

    – তাও, বল না।

    – তা হবে, কোটি কোটি কোটি।

    – হ্যাঁ রে, কোটি কোটি কোটি। তো এই কোটি কোটি কোটি লোকের মধ্যে কত লোক গান গাইতে পারে?

    – তা কয়েক কোটি হবে।

    – আর সেই কয়েক কোটির মধ্যে কত লোক এস্টেজে উঠে গান গাইবার সুযোগ পায়? এই ধর তোর আমার মতন লোক? যার গান লোকে পয়সা দিয়ে টিকিট কেটে দেখতে আসে?

    – তা তো হবেই কয়েক লাখ, কি কয়েক হাজার!

    – এইবারে তুই একবারটি ভেবে দ্যাখ, এই যে দুনিয়া জোড়া কোটি কোটি কোটি মানুষ, তাদের মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ, যাদের গান লোকে খচ্চা করে শুনতে আসে, তাদের একজন হচ্ছিস তুই, আর আরেকজন হচ্ছি আমি।

    – তা, সে তো বটেই।

    – গব্বো হয় না?

    – তা, একটু হয় বৈকি।

    – অ্যায়, ওইখানটিতেই তোর পতন। যেই তোর গব্বো হয়ে গেল মনের মধ্যে, তুই গেলি। তোর সাধনা, তোর সাফল্য, সব ধূলোমাটি হয়ে উড়েপুড়ে গেল। ঐ গব্বোটি আমি হতে দিই না কিছুতেই, বুঝলি? যখনই লোকে এসে বলে – আপনার তো কত নামডাক, দেশে-বিদেশে যান, আপনে তো বিখ্যাত মানুষ, মনে গব্বো আসে, তখনই আমি ভিক্ষে করতে বেরোই। মাথা নিচু করে ভিক্ষে চাই। লোকে দয়া করে ভিক্ষে দেয়, আমি সেই দয়ার দানে পেট ভরাই। গব্বো আমায় খেতে পারে না।

    ……………………………………………………….

    আমি তো কর্পোরেটের চাকুরে। আমি তো কালাচাঁদ দরবেশ হতে পারি না। আমি সে মেটেরিয়ালই নই। টের পাই, গর্ব হচ্ছে। গর্ব আমাকে খেয়ে নিচ্ছে। মাটির থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তাই কি আমি রাস্তায় নেমেছি, একলা? সাতরাজ্যের ধূলো মাখছি, ব্যথা দিচ্ছি শরীরকে, এসির আরাম ছেড়ে রুক্ষ আবহাওয়ার মধ্যে হাওয়া কেটে বেড়াচ্ছি? এইজন্যেই কি? নাকি সেই যে আমার অনুরাগীরা বলে, বাব্বা সিকি, কী করে পারো, সেই কথাটুকু শোনার জন্য জোর করে আবার বেরোই, পরের বইয়ের, পরের লেখার প্লট বানাবো বলে বেরোই, সেই মুগ্ধতার খোলসটাকে গায়ে চড়িয়ে, সেটাকেই আসল আমি মনে করে অন্য একটা আমি বেরোই। আসলে কি মনের মধ্যে আমার সেই স্বপ্নটা আজও আছে? নাকি, নেই আর?

    মন তো বলছে, না, নেই। এক বছর আগের আমি আর আজকের আমি অনেকটা বদলে গেছি। সেই থ্রিল, সেই আনন্দ আর পাচ্ছি না। নিজেকে কেমন যেন, জোর করে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি এইবারে মনে হচ্ছে। ডিসকনটেন্ট তৈরি হচ্ছে আবার, কিন্তু সেই ডিসকনটেন্টের মধ্যে ডিভাইনিটি নেই, কেমন যেন অভিমুখবিহীন লাগছে নিজেকে, কী করলে, কীভাবে বাঁচলে এই ডিসকনটেন্টের হাত থেকে মুক্তি পাবো, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন যেন দিনের পর দিন মনে হচ্ছে জাস্ট লোকে আমার এই বাইকার রাইডার ইমেজটা জানে, সেই ইমেজটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি চলেছি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার, এটা আর ঠিক সেই রকমের প্যাশন নেই, এমনটা ছিল গত বছর পর্যন্ত।

    কেন করছি এই অভিনয়? কীসের দায় লোকের কাছে ইমেজ বজায় রাখার? আমি তো চাইলেই কালকে জার্নি ক্যানসেল করে ফিরে চলে যেতে পারি। চলে যাবো? মাত্র চারদিনের রাস্তা এসেছি। চাইলে আরামসে চারদিন কি ছদিনে আমি ফিরে যেতে পারি আবার দিল্লিতে, আমার চেনাপরিচিতির ঘেরাটোপে।

    … এই ধরণের চিন্তা আমার মাথায় কখনও আগে আসে নি, এইবারে আসছে। ফিরে যাওয়া, জার্নি অ্যাবর্ট করা। সবাই জানে সিকি বেড়াতে যাচ্ছে, আমি জানি, আমি বেড়াতে যাই না, আমি নিজেকে খুঁজতে যাই, খুঁজে পাই হয় তো কিছুটা – কিন্তু এইবারে আর পাচ্ছি না। নিজের কাছে আমার সত্যিকারের আমি-টা কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। এ আমার কী হয়ে গেল? …


    (অরুণাচলে ঢোকার মুখে। বাঁদিকটা ভুটান। সোজা রাস্তা চলে যাচ্ছে কালাকটাংএর দিকে।)

    ভুটান বর্ডারের গা ঘেঁষেই শুরু হচ্ছে অরুণাচলের সীমা। হিসেবমত এখানে আইএলপি দেখানো উচিত, কিন্তু কেউ দেখতেই চাইল না, একটা চেকপোস্ট মত ছিল, সেখানে একবার দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেসও করলাম, কালাকটাং হয়ে দিরাং যাবার পথ এটাই কিনা, মিলিটারি ছেলেটি হাসিমুখে হ্যাঁ বলল, কিন্তু আইএলপি তো দেখতে চাইল না!

    বেলা প্রায় দেড়টা নাগাদ কালাকটাং পৌঁছে গেলাম, রাস্তা মোটের ওপর ভালোই, অল্প কিছু খারাপ স্ট্রেচ বাদে। এখান থেকে আরেকটু এগোলেই শেরগাঁও বলে একটা জায়গা। সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতেই প্রায় তিনটে বেজে গেল। দিনের আলো আর খুব বেশি হলে দেড় ঘণ্টা থাকবে, এদিকে দিরাং তখনও আরও একশো কিলোমিটার দূরে।

    পাহাড়ি রাস্তায় একশো কিলোমিটার পার হতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগতে পারে, রাস্তা কেমন তার ওপর নির্ভর করছে। কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। ছোট্ট একটা দোকানে ঢুকে চা আর ম্যাগি খেয়ে খিদে মেটালাম। বাকি খাওয়াদাওয়া দিরাং পৌঁছেই করা যাবে বরং। দিরাংয়ে আমার কোনও বুকিং নেই, গিয়ে একটা হোমস্টে খুঁজতে হবে।



    শেরগাঁও থেকে দিরাং যাবার একটা শর্টকাট আছে। মোরসিং হয়ে যায়। আর লম্বা রাস্তাটা যায় রূপা, বমডিলা হয়ে। দোকানের ছেলেটা জানাল শর্ট রাস্তাটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যায়, যেহেতু আর একটু পরেই অন্ধকার হয়ে যাবে, তাই জঙ্গলের রাস্তা না নেওয়াই ভালো, আমি যেন রূপার রাস্তা নিই, ভালো রাস্তা আছে আগে দিরাং পর্যন্ত, আরামসে চলে যাব।


    মা-মুরগী ও তার ছানাপোনারা। শেরগাঁওয়ের পথে।

    শেরগাঁও ছাড়ার একটু পরেই রাস্তা সত্যি সত্যি ভালো হয়ে গেল, একদম রানওয়ের মত মসৃণ। গতি বাড়ালাম। ধীরে ধীরে দূরত্ব কমছে, আশি, সত্তর, ষাট – বমডিলা যখন ঢুকলাম, তখনই নিকষ অন্ধকার, ছটা বাজতে তখন আর দশ মিনিট বাকি। এখান থেকে দিরাং আর মাত্র পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। কী করা উচিত? বমডিলাতেও থাকার জন্য হোমস্টে পাবো। থেকে যাবো, নাকি দিরাং যাবো? পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার এমন কিছু লম্বা দূরত্ব নয় – এটুকু এগিয়ে গেলে কালকের রাস্তাতেও খানিকটা এগিয়ে থাকা হবে। আমি ক্লান্ত, দুই উরুতে রক্ত জমে যাওয়ার মত অনুভূতি হচ্ছে, তবুও আর চালাতে পারব না, এমন অবস্থায় নেই। না, কাল পেনকিলার খাই নি, তাতে ব্যথা বাড়েও নি, কমেও নি। পিঠে ঘাড়ে হাতে কোথাও কোনও অস্বস্তি নেই, কেবল পা ধরে যাচ্ছে, উরুর কাছে।



    এগিয়েই গেলাম। প্রায় সাড়ে ছটা বাজল দিরাং পৌঁছতে। বাঁ হাতে প্রথম যে হোমস্টে দেখলাম, সেখানেই নক করতে এক বয়স্কা মহিলা বেরিয়ে এলেন। হ্যাঁ, রুম আছে।

    মেন গেটে তালা পড়ে গেছিল, উনি তালা খুলে দিলেন, ভেতরে একটা ছোট্ট কম্পাউন্ড মতন, তার দুদিক ঘিরে ঘর। ঘাসে ঢাকা কম্পাউন্ডে দেখতে পেলাম, একটা বুলেট রাখা আছে, মেরুন রঙের, তাতে দিল্লির নাম্বারপ্লেট। দিল্লি থেকে আরও কেউ এসেছে?

    ঠাণ্ডা আছে, তবে অসহনীয় কিছু নয়। পাঁচ ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস মত হবে। বেশ আরামদায়ক ঠাণ্ডা। হোমস্টে-র হোস্টেসকে বললাম, কাল সকালেই তো বেরিয়ে যাবো, সমস্ত লাগেজ তা হলে আর মোটরসাইকেল থেকে খুলছি না, আমি কভার করে দিচ্ছি পুরোটা। একটা ব্যাগ, যাতে আমার রাতের জামাকাপড় আর জরুরি জিনিস ছিল, সেটুকু নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। ঢোকার মুহূর্তেই হোস্টেস বললেন, দো ফরেনার লোগ আয়া হ্যায়। ও ভি দিল্লি সে। বাত করো।

    দিল্লি থেকে ফরেনার এসেছে? সে আবার কী কেস? এই দিল্লির নাম্বারওলা বুলেটটা কি তাদেরই?

    হ্যাঁ, তাদেরই। কিচেনে বসে আছে।

    বেশ। ধরাচুড়ো ছেড়ে পায়ে পায়ে কিচেনে গেলাম, একটি বিদেশি দম্পতি বসে আছেন জল গরম হওয়া একটি জাম্বো সাইজের সামোভারের সামনে। সামনে আরও দুটো চেয়ার রাখা, ওটা ওম পোয়ানোর জায়গা। সামোভারে জল ফুটছে, তাতেই রান্নাবান্নার কাজ চলবে। দুজনেরই গায়ের রঙ লালের শেড পেরিয়ে একটু তামাটের দিকে, মানে অনেকদিন ধরে ঘুরছেন, মহিলাটির কোলে একটি মোটাসোটা লোমশ বেড়াল।

    গিয়ে বসলাম, আলাপ হল। ফ্রান্স থেকে এসেছেন। মহিলাটি ইংরেজি বলতে ও বুঝতে পারেন, তাঁর স্বামী একেবারেই ফ্রেঞ্চের বাইরে কিস্যু জানেন না। শুনলাম, প্রায় এক মাস ধরে ঘুরছেন। দিল্লি থেকেই মোটরসাইকেল রেন্ট নিয়ে এসেছেন। আজই তাওয়াং থেকে ফিরেছেন। এর আগে নাগাল্যান্ড, মেচুকা, রোয়িং ইত্যাদি জায়গা ঘুরে এসেছেন। তাওয়াংয়ে তিনদিন ছিলেন, এখানে দুদিন কাটিয়ে এখান থেকে নেমে এর পরে মেঘালয় ঘুরতে যাবেন।

    গল্পগুজব হল, একপ্রস্থ চা আর বাটার টোস্টের সাথে। বলার মত ঘটনা বলতে, এর মাঝে বেড়ালটি কী কারণে কে জানে, আমাকে পছন্দ করে বিনা নেমন্তন্নেই এক লাফে আমার কোলে চলে এল। আমি কুকুর বেড়াল এমনিতে অপছন্দ করি টরি না, কাছে এলে হাত বুলিয়েও দিই টিই, কিন্তু গায়ে নিয়ে ঘষাঘষি আমার একদম পোষায় না। তবে কিনা ইনি হোমস্টে মালকিনের বেড়াল, সম্ভবত গেস্টদের কোলে উঠে আদর খাওয়া এঁর অভ্যেস, এতক্ষণ ফরাসী আদর খেয়ে এখন বাঙালি দেখে হয় তো স্বাদবদল করতে এসেছেন, কী আর করা, খানিক গায়েমাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, তিনি ঘ্রুর্‌র্‌ ঘ্রুরুৎ টাইপের আওয়াজ করে আদর খেয়ে খানিক বাদে নিজে থেকেই নেমে ভেতরঘরে চলে গেলেন।

    যে সব জায়গায় তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়, সেখানে সময় আস্তে ধীরে চলে। অনেকক্ষণ গল্পগুজব করার পরে দেখলাম মাত্র পৌনে আটটা বাজে। ফরাসী দম্পতি বারান্দায় চলে গেলেন ফুঁকতে। আমি মালকিনের সাথেই গল্প জুড়লাম।

    এঁরা মোনপা উপজাতির লোক। সম্পূর্ণ অরুণাচল প্রদেশে ছাব্বিশ রকমের উপজাতি আছে। উপজাতির ইংরেজি হচ্ছে ট্রাইব। সেই হিসেবে সাব-ট্রাইবের বাংলা কী হবে? উপ-উপজাতি? সমগ্র অরুণাচলে একশোরও ওপর সাব-ট্রাইব আছে। এঁরা মোনপা ট্রাইব, আর সাব-ট্রাইবের হিসেবে এঁরা হলেন দিরাং মোনপা। সেলা পাসের অন্যপারে তাওয়াংয়ে আছে তাওয়াং মোনপা।

    জিজ্ঞেস করলাম, দিরাং মোনপা আর তাওয়াং মোনপার মধ্যে কতটা তফাত? আপনারা কি তিব্বতিদেরই বংশধর উপজাতি? মালকিন বললেন, না, তিব্বতি নই। আমরা খানিকটা ভোট (মানে ভুটানিজ), খানিকটা বার্মিজ, বাকিটা অরুণাচলীই। তাওয়াং মোনপাদের থেকে আমাদের ভাষা একটু আলাদা, কালচারও সামান্য আলাদা।

    সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি দুঃসংবাদটি দিলেন। রাতের খাবার হবে, কিন্তু নন-ভেজ নেই। পুরো লে হালুয়ে কেস। আমাকে আগে বললে আমি হারগিজ এই হোমস্টে-তে আসতাম না! বাইরে এখন কোনও দোকানপাটও বোধ হয় খোলা নেই।

    আমার মুখ দেখে মালকিনের করুণা হল, উনি বললেন, একটা ডাবল ডিমের অমলেট করে দেব।

    ভাগ্যিস দিয়েছিলেন, তাই দিয়েই গোটা তিনেক রুটি খেলাম, কারণ সঙ্গের যে তরকারিটা ছিল, সেটা ঠিক কীসের তরকারি ছিল – বহু চেষ্টা করেও বুঝতে পারি নি, কারণ না তাতে আলু ছিল, না মটরশুঁটি বা গাজরের মত চেনাশোনা কোনও পদার্থ ছিল।

    খাবার টেবিলে আরও খানিক তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করলাম ফরাসী দম্পতির থেকে, ওঁরা আজকেই তাওয়াং থেকে ফিরেছেন কিনা। না, রাস্তা পরিষ্কার, তেমন বরফ টরফ নেই, তবে খুব কুয়াশা ছিল, খুব, সেলা লেকের সামনে দাঁড়িয়ে নাকি সেলা লেক দেখা যাচ্ছিল না এতটাই ঘন কুয়াশা। তবে এখন তো আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে, কাল আমি সুন্দর রোদ ঝলমলে সেলা দেখতে পেলেও পেতে পারি।

    শুভরাত্রি জানিয়ে কম্পাউন্ডে নেমে এলাম, মোটরসাইকেলের কভার ছিল, সেইটা দিয়ে বেশ ভালো করে মুড়ে দিলাম মোটরসাইকেলটাকে। বাইরের গেটে তালা দেওয়া, বেরনোর উপায় নেই, চারদিক নিঝঝুম, খানিক ওখানেই গেটের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কাল তাওয়াং পৌঁছনো।

    তাওয়াং আমার ইটিনেরারি থেকে ছেঁটে দিয়েছিলাম, যাবার কথা ছিল না, শেষ মুহূর্তে ঢুকিয়েছি, হতে পারে সেটার জন্য মন থেকে তেমন ইচ্ছে হচ্ছে না, তবে মূল কারণ হচ্ছে পর পর লাগাতার চলা, একেবারে বিশ্রাম হচ্ছে না, এইটাও ফ্যাটিগের একটা কারণ হতে পারে।

    না, আপাতত ফিরব না। কাম হোয়াট মে, দ্য শো মাস্ট গো অন।

    যাই, শুয়ে পড়ি।
  • dd | 670112.51.2323.240 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:১২381087
  • বাঃ, বাঃ।

    বেশ লাগছে পড়তে। চারিদিকে অ্যাতো থোর বড়ি খাড়া গোছের লোক দেখি আর আমি নিজেই চিরোকালই অ্যাতো ঘরকুনো যে এরকম অ্যাডভেঞ্চারের গপ্পো শুনতে ভারী ভালো লাগে।

    কিন্তু সিকির, অ্যাতো অহৈতূকী ভাবনা কিসের? আমার সেই টিন এজেই যা একবার মিডলাইপ ক্রাইসিস হয়েছিলো, তারপরে বাকী জীবনে সত্যিকারের ক্রাইসিস অ্যাতো হয়েছিলো , তারপরে কেমন অভ্যেস হয়ে গ্যালো।

    কিন্তু সে কথা থাক। সিকি তুমি গাড়ী চালাও, আমরা তোমরা সংগে আছি।
  • সিকি | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:১৫381088
  • :)

    অজ্জিত আর ইন্দোদাদা অশা করি উত্তর পেয়েছে।
  • r2h | 232312.172.8912.125 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:০৯381089
  • আমার মাঝেমধ্যে কৌতুহল হয়, ঘরকুনো লোকেরাই কি এইরকম বেড়ানোর গল্পে বেশি আপ্লুত হয়? এই যেমন আমি বা ডিডিদা, আর 'এইরকম' শব্দটাতে আন্ডারলাইন।
  • সিকি | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৫০381090
  • মামু আপ্লুত হলেই হাইপোথিসিসটি প্রমাণিত হয়।
  • সুকি | 90045.205.012323.215 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:২৭381091
  • খুব ভালো. " এক বছর আগের আমি আর আজকের আমি অনেকটা বদলে গেছি। সেই থ্রিল, সেই আনন্দ আর পাচ্ছি না। নিজেকে কেমন যেন, জোর করে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি এইবারে মনে হচ্ছে। ডিসকনটেন্ট তৈরি হচ্ছে আবার, কিন্তু সেই ডিসকনটেন্টের মধ্যে ডিভাইনিটি নেই, কেমন যেন অভিমুখবিহীন লাগছে নিজেকে, কী করলে, কীভাবে বাঁচলে এই ডিসকনটেন্টের হাত থেকে মুক্তি পাবো, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। কেমন যেন দিনের পর দিন মনে হচ্ছে জাস্ট লোকে আমার এই বাইকার রাইডার ইমেজটা জানে, সেই ইমেজটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমি চলেছি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার, এটা আর ঠিক সেই রকমের প্যাশন নেই, এমনটা ছিল গত বছর পর্যন্ত". এই জায়গাটি নিয়ে ভাবছিলাম. জানি না কেন, ইদানিং আমি চারপাশের অনেক লোকজনকে এমন কথা বলতে শুনেছি, একটা কমন ব্যাপার আছে, তারা সবাই কর্পোরেট চাকুরীজীবি
  • Izhikevich | 781212.194.893423.178 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৬381092
  • কর্পোরেট কথাটাই কীওয়ার্ড। এইসব বেড়ানোর ক্ষেত্রে, বা অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে। ইচ্ছে, শখ এই নিজস্ব জিনিসগুলোকে খেয়ে নেয় ওই শব্দটা। প্রফেশনাল ইচ্ছেও বাদ যায় না, যদি না কর্পোরেটের গোল আর আপনার গোল এক না হয়।
  • সিকি | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:২১381094
  • একদম। ক্ষইয়ে দেয় ভেতর থেকে।
  • I | 785612.35.121212.230 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৩৯381095
  • ক্ষইয়ে গেলে হবে না গুরু। আগে বাড়ো। মন দিয়ে পড়ছি।
  • শঙ্খ | 2345.110.784512.119 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৩৮381096
  • চলুক। চলছি পাশাপাশি।
  • সিকি | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৮381097
  • আজ পঞ্চম দিন। একটা দিন বসে গেলে সত্যিই ভালো হত। কিন্তু দিরাং ঠিক থেকে যাবার মত কোনও জায়গা নয়। একটা দিন টেনে দিই, আজ তো তাওয়াং পৌঁছবই – তাওয়াং পৌঁছে বরং ডিসিশন নেব। খুব বেশি দূরত্ব নয় আজ, এখান থেকে তাওয়াং মাত্র একশো পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। সহজেই পৌঁছে যাওয়া যাবে, বেশি পরিশ্রমও হবে না।

    তাওয়াং যখন আবার আমার প্ল্যানে ঢোকাই, তখন থাকার জায়গা এবং ডিউরেশন নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব ছিল। যে হেতু এ তল্লাটে আগে কখনও যাই নি, তাই কেমনভাবে কোথায় থাকলে কীভাবে প্ল্যান করা সম্ভব, সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভ্রমণ পত্রিকার সম্পাদক মহাশ্বেতা একটা ভালো হোমস্টে-র সন্ধান দিয়েছিলেন, তাওয়াং পৌঁছবার তিরিশ কিলোমিটার আগে একটা দারুণ জলপ্রপাত আছে, নুরানাং ফলস, বা, স্থানীয় গ্রামের নামে, জাং ফলস – সেই ফলসের ধারে। ফোন করে কথাও বলে রেখেছিলাম, কিন্তু তাওয়াং থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে থাকতে গেলে পরবর্তী জায়গাগুলোতে যাবার আসবার সমস্যা বেড়ে যাবে। তাওয়াং থেকে আমার যাবার প্ল্যান আছে বুমলা পাস। এমনিতে গুগল ম্যাপে বুমলা পাস দিয়ে সার্চ মারলে রুট ডিরেকশন পাবেন না, তবে সাঙ্গেতসর লেক দিয়ে সার্চ মারলে দেখা যাবে তাওয়াং থেকে সোজা ওপরদিকে একটা রাস্তা উঠে গেছে। ঐ রাস্তাতেই একটা ডাইভার্সন আছে, যেটা দিয়ে বুমলা পাস যাওয়া যায়। এর পর সাঙ্গেতসর থেকেই রাস্তা আরও এগিয়ে বাঁদিকে বেঁকে গিয়ে পৌঁছয় জেমিথাং বলে একটা ছোট্ট গ্রামে। এবং জেমিথাং থেকে রাস্তা আরও বাঁদিক বেঁকে নিচের দিকে নেমে এসে পৌঁছয় তাওয়াং শহরে। পুরোটা একটা গোল পথ, মোটামুটি দেড়শো কিলোমিটার লম্বা এই সার্কিট।



    অনেক পড়াশোনা করেছি – কেউ বলে ডানদিকের রাস্তাটা নাকি বিশেষ অ্যাকসেসিবল নয়, বাঁদিক দিয়ে জেমিথাং হয়েই সাঙ্গেতসর এবং বুমলা পৌঁছতে হয়, এবং সেখান দিয়ে নেমে আসতে হয়। গেছোদাদা বলেছিল, চোখ বুজে ডানদিকের রাস্তা নিয়ে নেবে, এবং তুমি যে ভাবে চলো, তাতে করে এক দিনে ফুল সার্কিট করে ফেলা কোনও বড় ব্যাপার নয় তোমার কাছে। যদি মনে হয় পারবে না, হাতে একটা বাফার ডে রেখো, জেমিথাং গ্রামে কোণও হোমস্টে-তে একরাত থেকে যেও, পরের দিন সকালে নেমে এসো তাওয়াং-এ। আরামসে হয়ে যাবে।

    বাফার ডে। এইটাই এই মুহূর্তে আমার কাছে সবচেয়ে দামী। আমার প্রথম বাফার ডে রাখা আছে তাওয়াং সার্কিট শেষ করে জিরো-তে। সেইখানে আড়াইদিন থাকার প্ল্যান আছে, তার আগে থামার যে উপায় নেই। দেখি, কী করা যায়! খুব কম বিশ্রামের দিন রেখেই প্ল্যান তৈরি হয়েছে ৩৫ দিনের, এর সাথে জায়গায় জায়গায় বাফার ডে রাখতে গেলে … নাঃ, চাকরি বজায় রাখা যাবে না।

    বুমলা পাস হল একদম চীন সীমান্ত। বাষট্টি সালের চীন যুদ্ধের সময়ে চীনা সৈন্য এই রাস্তা ধরে ঢুকে পড়েছিল অরুণাচলে। এই রাস্তায় ঢুকতে গেলে আরেকটা পাস লাগে, সেটা তাওয়াংএর ডিসি অফিস থেকে বানাতে হয়, এই কারণেই তাওয়াংএ পৌঁছে একদিন থেকে যাওয়া প্রেফারেবল। যে রকম গ্যাংটকে পৌঁছে একদিন থাকতে হয় পারমিট বানাবার জন্য। তবে এই রুটে আমার প্রধান সহায় হচ্ছে গেছোদাদা, তাই দিল্লিতে থাকাকালীনই আমার বুমলা পাসের পারমিটের ব্যবস্থা হয়ে গেছিল, আমাকে শুধু তাওয়াং পৌঁছে জনৈক কর্নেলের অফিস থেকে পারমিটটি তুলে নিতে হবে। এবং সেই পারমিটে আমার বুমলা পাসে যাবার তারিখ পরের দিনই – মানে, বিশ্রাম নেবার সময় নেই। … বুঝতে পারছি, সবকিছু একটা ট্রিপেই দেখে নেবার লোভে আমি প্ল্যানটি খুব একটা এফেক্টিভ বানাই নি। শরীরে ধকলটা একটু বেশিই পড়ছে। যাই, দেখি আজ যদি তাওয়াংএ তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারি, তা হলে কষে একটা ঘুম দেব।

    ঘুম ভেঙে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি ফরাসী মহিলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোদ পোয়াচ্ছেন। প্রাথমিক গুডমন্নিং ইত্যাদি অভিবাদন শেষ হবার পরে তিনি খুব কিন্তু কিন্তু করে বললেন, আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না এই হোস্টেসকে, তুমি কি একটু আমাদের হয়ে তাঁকে একটা কথা বলে দিতে পারবে?

    আমি বললাম, নিশ্চয়ই বলব, বলো কী বলতে হবে।

    খুব গোপন কথা শেয়ার করার ভঙ্গীতে গলা নামিয়ে উনি বললেন, হোস্টেসকে বলবে, আমরা এখানে ওনার আতিথ্যে থেকে খুব খুশি। আমাদের দিরাং খুব ভালো লেগেছে। ওঁর রুমের অ্যারেঞ্জমেন্ট, খাবারের স্টাইল, আমাদের সবকিছুই ভালো লেগেছে। আমরা আবার কখনও এলে, এখানেই থাকব।

    হেসে বললাম, আচ্ছা, বলে দেব।

    সকাল পৌনে সাতটা। হোস্টেস, অথবা মালকিন আমার জন্য চমৎকার ডিমের পোচ, ব্রেড-বাটার আর কফি বানিয়ে দিয়েছেন। খেতে খেতে ফরাসী পর্যটক দম্পতির মিষ্টি বার্তা ওনাকে কনভে করে দিলাম, শুনে উনি কেমন গালে হাত দিয়ে উদাস হয়ে গেলেন, কেয়া পতা, হাম তো ইতনা হি করতে হ্যায়, দিল লাগাকে করতে হ্যায়, কেয়া পতা উনকো ইতনা আচ্ছা লাগেগা।

    মোটরসাইকেলের কাছে গিয়ে কভার সরিয়ে দেখলাম, ক্যারিয়ারের দুদিকের ভাঙা রড আরও একটু যেন দূরে সরে গেছে, মানে ভাঙা জায়গাটার প্রস্থ বেড়ে গেছে। কিছু করার নেই, দেখতে হবে, তাওয়াংএ গিয়ে যদি কিছু করা যায়। ফরাসী পুরুষটি একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এইবারে কাছে এসে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে। আমি বুঝলাম না, শুধু ‘ফিক্স’ শব্দটা ধরতে পারলাম। আমি হেসে বললাম, ইয়া, উইল ট্রাই টু ফিক্স ইট ইন তাওয়াং, উনি শুনে চলে গেলেন ঘরের ভেতর, এবং ফিরে এলেন হাতে কিছু একটা নিয়ে। দেখি, প্লাস্টিকের যে লক স্ট্রিপগুলো হয়, যা দিয়ে এয়ারপোর্টে বা শপিং মলের ক্লোক রুমে ব্যাগের চেন আটকে দেয় – সেই জিনিস চারখানা তাঁর হাতে। আমার দেখে হাসি পেয়ে গেল, এই দিয়ে ইনি ভাঙা রড জুড়তে চাইছেন? কিন্তু মনে হল তাঁর মনোভাবটা সেই রকমই – আমি একটু তফাতে সরে গেলাম, উনি হেঁইও হেঁইও করে দুদিকে দুখানা প্লাস্টিকের লক স্ট্রিপ এদিক ওদিক রডের ফাঁক দিয়ে গলিয়ে লাগিয়ে চ্যাঁ করে টেনে টাইট করে দিলেন, যেন এই জিনিস লাগালে রড আর বেশি ভাঙবে না। হায় রে পাগল, তথাকথিত ভালো রাস্তায় ঝাঁকুনি খেয়ে এই রড ভেঙেছে, এ কি আর প্লাস্টিকের স্ট্রিপে আটকায়?

    কে আর ভুল ভাঙাবে, উনি যত্ন করে দুদিকে দুটো করে স্ট্রিপ লাগিয়ে ক্ষান্ত হলেন, আমি সবাইকে টা টা করে সাড়ে সাতটা নাগাদ গেট পেরিয়ে রাস্তায় নামলাম।

    কাল ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে এসে ঢুকেছিলাম এই হোমস্টে-তে, আজ সকালের আলোয় মোটরসাইকেলের চাকা একটু গড়াতেই সামনে দেখলাম একটা মাইলস্টোনে লেখা আছে – দিরাং এখনও তিন কিলোমিটার। মানে, কাল দিরাং ঢোকার আগেই হোমস্টে পেয়ে গেছি।

    একটু এগোতে দিরাং টাউন এল, বেশ চওড়া একটা উপত্যকা মত, তাতে অনেক অনেক বেশি বাড়ি ঘর, হোমস্টে, দু একটা হোটেল, বাজার, খাবার জায়গা – এইখানটায় থাকলে কাল আমাকে অমলেট দিয়ে রুটি খেতে হত না – ধুর!

    দিরাং থেকে সেলা পাস একষট্টি কিলোমিটার মত, রাস্তা এমনিতে ভালোই, তবে মাঝেমধ্যে দু একটা খারাপ প্যাচ তো আছেই, পাহাড়ী রাস্তা যেমন হয়। আস্তে আস্তে ওপরে উঠছি, ঠাণ্ডা সামান্য হলেও বাড়ছে, তবে খুব কষ্টকর কিছু নয়, তীব্র নীল রঙের আকাশ, ঝকমক করছে রোদ, তাতে ঠাণ্ডাটা ব্যালান্স হচ্ছে।

    মোটামুটি তিরিশ পঁয়তিরিশ কিলোমিটার আসার পরে হেলমেটের ব্লুটুথে কুড়কুড় করে ফোন বাজল। ফোন যেহেতু সামনের জিপিএস মাউন্টে লাগানো রয়েছে, আর তাতে ম্যাপ খোলা রয়েছে, প্রাথমিকভাবে কার ফোন বোঝা যায় না। ব্লুটুথের বাটনে চাপ দিয়ে ফোন রিসিভ করতেই অফিস ঢুকে গেল আমার ফোনে, দো মিনিট বাত কর সকতে হ্যায়?

    আমার রিপোর্টিং ম্যানেজার। বললাম, হ্যাঁ, বলুন। মোটরসাইকেল সাইডে দাঁড় করালাম।

    – অনিন্দিতা কাল জিজ্ঞেস করছিলেন (তাঁর রিপোর্টিং ম্যানেজার, মুম্বাইতে বসেন, আমার বসের বস), সিকি কী করে চার সপ্তাহের ছুটি পায়? কম্পানির তো এ রকমের রুল নেই! এদিকে তোমার প্রোজেক্টে তাগড়া “এসক্যালেশন” হয়েছে, কাস্টমার কমপ্লেইন এসেছে – এখন আমি কার কাছ থেকে কী ইনপুট নেব?

    মাথা আমার সহজে গরম হয় না, কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও এই মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রাখা চাপ। অন্য একটা শব্দ মুখে এসে গেছিল, কিন্তু লোকটি আমার ম্যানেজার, তাকে খিস্তি মারা যায় না, তাই প্রচণ্ড চেষ্টা করে মাথা ঠাণ্ডা রেখেই বললাম – পরেশ, আমি তো লুকিয়ে ছুটি না-নিয়ে আসি নি, ছুটি অ্যাপ্লাই করে এসেছি, এবং সেই ছুটি আপনি সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাপ্রুভ করেছেন। কম্পানির পলিসি কী আমি এখন তো খুঁজে বের করতে পারব না, আমি রাস্তায় আছি, তবে ছুটি অ্যাপ্লাই আর তার অ্যাপ্রুভাল – দুটোই অনলাইন হয়, যদি পলিসিতে আটকাতো, তো না আমি অ্যাপ্লাই করতে পারতাম, না আপনি অ্যাপ্রুভ করতে পারতেন। আশা করি আপনি অনিন্দিতাকে এই কথাগুলো বুঝিয়ে বলেছেন। …

    … আর এসক্যালেশন হবে, এ রকমটা তো আমি জেনে বেরোই নি, আমি ছুটিতে আছি, আমার অনসাইটের যে কাউন্টারপার্ট, সে এই মুহূর্তে দিল্লিতেই আছে, হয় তো আরেকটু বাদেই সে অফিস এসে যাবে, ও জানে সমস্যা কোথায় কী, ও অনসাইটে ছিল, ক্লায়েন্টকে ইন পার্সন চেনে, ও আমার থেকে বেটার হ্যান্ডল করতে পারবে – এটা কোনও বড় এসক্যালেশনই নয়, আমার কথা যদি মানেন, প্রোজেক্ট হোল্ডে চলে গেছে – ক্লায়েন্টের মনে হয়েছে রিসোর্সগুলো খালি বসে বসে হাড়ে বাতাস লাগাচ্ছে, প্রজেক্ট শুরু হবার আগে যাই আবার ওদের একটু গা-গরম করিয়ে দিই। স্রেফ এই ইনটেনশনে এই এসক্যালেশন করেছে, নইলে যে বিষয়ে ওদের কনসার্ন, সেই বিষয়টা ওদের খুব ভালো করে জানা, অন্তত গত ন মাস ধরে জানা যে, থার্ড পার্টি ভেন্ডরের ডিলে-র কারণে আমরা অ্যাকচুয়েল ডেটা নিয়ে টেস্ট করতে পারি নি, আমাদের ডামি ডেটা বানিয়ে টেস্ট করতে হয়েছে, ফলে সে টেস্ট ফুলপ্রুফ হবার ছিল না, হয়ও নি, ওরা আজও ডেটা দিতে পারে নি, সেই কারণেই প্রজেক্ট আপাতত অন-হোল্ড আছে – এটা আপনিও জানেন, আমিও জানি। আয়ুষ এসে যাবে অফিসে, আমি ওকেও ফোন করে নিচ্ছি, ও সামলে নেবে, আপনি একদম চিন্তা করবেন না।

    উনি আশ্বস্ত হলেন কিনা আমি জানি না, তবে ‘ঠিক হ্যায় সিকি’ বলে ফোন ছাড়লেন। কল শেষ হল, কিন্তু বিরক্তিতে মন ভরে গেল। এই অনিন্দিতা মহিলাটি (অবশ্যই আসল নাম নয়) একটি টিপিকাল স্পিসিস। একেক ধরণের মানুষ হয় না, যেখানে যে অবস্থায় থাকুক, সর্বদা নিজের চারপাশে নেগেটিভ ভাইব ছড়ায় – অনিন্দিতা হচ্ছেন টিপিকাল সেই ধরণের লোক। অত্যন্ত রুড ভঙ্গীতে কথা বলেন, কেবলই নেগেটিভ ক্রিটিসিজম করেন, পজিটিভ একটা মুহূর্তেও তাঁর কোনও মেল বা ফোন পাওয়া যায় না। এবারের দুর্গাপুজোর দশমীর দিনেও তাঁর ফোন এসেছিল – আমার টিমের এক রিসোর্সকে তক্ষুনি অনলাইন করিয়ে একটা এরর ফিক্স করাতে হবে, না হলে সোমবার ইউজার টেস্টিংয়ে কোড যেতে পারবে না, তাতে আমি বলেছিলাম, অনিন্দিতা, সে রিসোর্স তো ছুটিতে গেছে, আউটস্টেশন, এটা লং উইকেন্ড (দশমী/দশেরা শুক্রবার ছিল), এখন আমি ফোন করতে পারি ওকে, তবে করাটা মনে হয় উচিত হবে না, আর ফোন তুললেও সে ল্যাপটপ নিয়ে গেছে কিনা, যেখানে গেছে সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন আছে কিনা, সে লগিন করে কাজ করতে পারবে কিনা – এগুলো আমি এনশিওর করতে পারব না। ‘অ’ – তাতে উনি চিবিয়ে চিবিয়ে তীব্র শ্লেষ মাখিয়ে আমাকে কথা শুনিয়েছিলেন, ‘তা হলে তুমি চাও যে আমি ক্লায়েন্টকে গিয়ে বলি যে রিসোর্স ছুটিতে আছে, তাই আপনার কাজ আজকে হবে না, সোমবারের বদলে মঙ্গলবারে আপনারা আপনাদের কাজ শুরু করুন কারণ আমার রিসোর্স আজকে ছুটিতে আছে? তুমি এটাই চাইছো তার মানে?’

    আমি পুরো হাঁ – মানে, হ্যাঁ এটাই বলবেন, লুকোছাপা করার তো কিছু নেই, আজ তো হলিডে ইন্ডিয়াতে, কাল পরশু উইকেন্ড, সমস্যা কী, একদিন দেরি হলে? আজকের ডেডলাইন কেন এগ্রি করেছিলেন আপনারা? জানতেন না আজকে দশেরা থাকবে, লোকে ছুটিতে থাকবে? ক্লায়েন্টকে জানান নি, আজ হলিডে?

    তাতে তিনি ট্যাঁকটেঁকিয়ে আরও দশটি কথা শুনিয়েছিলেন, এবং আমার বসের বস হবার সুবাদে আমি তাঁকে বিশেষ কিছু বলতে পারি নি। এইটা একটামাত্র ঘটনা, গত দেড় বছরে এ রকমের অজস্র নমুনা ইনি পেশ করে গেছেন আমার সাথে এবং অন্যান্যদের সাথে।

    পরেশের সাথে কথা হবার পর আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আয়ুষকে ফোন লাগালাম। আয়ুষ আমার ব্যাকআপ ম্যানেজার, সে আমারই প্রজেক্টের অনসাইট ম্যানেজার ছিল সেপ্টেম্বর অবধি, সদ্য দিল্লি ফিরে এসেছে ভিসা এক্সটেন্ড না হওয়ায়। তার সাথে কথা বলে তাকে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বললাম, পারলে সন্ধ্যেবেলায় কল কোরো, ডিটেলে কথা বলা যাবে।

    তখনকার মত কল ফুরলো বটে, কিন্তু মনটা তেঁতো হয়ে গেল। কী বলব, রাগ দেখিয়েই বা কী হবে। এই তো জীবন। কর্পোরেট। মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম আবার।

    সেলা পাস আসার দশ কিলোমিটার আগে থেকে পাহাড়ের গায়ে ছিটে ছিটে বরফ দেখা গেল। রাস্তা অবশ্য পরিষ্কার, মসৃণ। খুব তাড়াতাড়ি এবার উচ্চতা বাড়ছে, দেখতে দেখতে সেলা টপ পৌঁছে গেলাম বেলা প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ। পরিষ্কার রাস্তা, কোথাও কোনও বরফ নেই, একটা বড় তোরণে লেখা আছে ওয়েলকাম টু তাওয়াং, পাশে একটা কাফেটেরিয়া।



    দুজন জওয়ান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে, গিয়ে আলাপ করলাম, দুজনেই তাওয়াংএর স্থানীয় বাসিন্দা, বললেন, বরফ জমতে জমতে ডিসেম্বরের শেষ হয়ে যাবে। বরফ থাকবে এপ্রিলের গোড়া পর্যন্ত। নভেম্বর মাসে বরফ জমে না এখানে।

    কাফেটেরিয়াতে গিয়ে এক কাপ কফি চাইলাম, কাউন্টারের লোকটি, সে-ও আর্মিরই লোক, এটা আর্মি-পরিচালিত কাফেটেরিয়া, দায়সারাভাবে বলল, কফি পাওয়া যায় না, চা হবে।

    আমি সাধারণত বাড়ির বাইরে চা খাই না, কারণ টিপিকাল ভারতীয় পদ্ধতিতে চা-পাতা দিয়ে ফোটানো-জল পদার্থটা আমি খাই না, তবে ঠাণ্ডাটা বেশ আরামদায়ক, আর সকালের খাবার হজমও হয়ে গেছে, তাই চা বলেই দিলাম এক কাপ, একটু গরম কিছু তো পেটে যাক।

    ক্ষুদ্র একটা কাগজের কাপে স্বাদহীন চা, তিরিশ টাকা দিয়ে খেতে হল। বাইরে বেরিয়ে একজন জওয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, সেলা লেক এখান থেকে কতদূর। সে হাত দেখিয়ে বলল, এই তো, সামনের মোড় ঘুরলেই দেখতে পাবেন সেলা লেক। এখনও জমে নি।

    আরও দশ মিনিট দাঁড়িয়ে হাত পায়ের বিশ্রাম নেওয়া হল, এর মধ্যে জওয়ানদ্বয় আমি দিল্লি থেকে এসেছি শুনে আমার মোটরসাইকেলের সাথে ছবি তুলে দেবার অনুরোধ জানালেন, আমিও তাদের দিয়ে আমার একটা ছবি তুলিয়ে নিলাম, তারপরেই দেখলাম ধড়ফড় করে তারা তোরণের দিকে দৌড়ে গেল, নাকি কোন বড় আর্মি অফিসারের এখন পাস করার কথা।



    আমি ধীরেসুস্থে গ্লাভস পরে আবার মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম, এবং সত্যিই, মোড় ঘুরতেই সামনে দেখা দিল সেলা লেক।





    বাষট্টির যুদ্ধের আগে এই পাসের, এই লেকের বিশেষ কোনও নাম ছিল না। সেই সময়ে ভারতীয় সেনার এক ক্যাপ্টেন ছিলেন জসবন্ত সিং। সেলা নামের স্থানীয় এক মেয়ে তাঁর প্রেমে পড়েছিল, তিনিও প্রেমে পড়েছিলেন মেয়েটির। সেলা ছিল স্থানীয় গ্রামের মোড়লের মেয়ে। তিনি সেনা ক্যাপ্টেনের সাথে মেয়ের প্রেম ভালো চোখে দেখেন নি। যুদ্ধের সময়ে এই পাস থেকে একটু দূরেই একটা পাহাড়ের মাথায় নিজেকে অস্ত্রসমেত পজিশনড রেখে ক্যাপ্টেন জশবন্ত মোকাবিলা করছিলেন চীনা সৈন্যদের। সেলা লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর কাছে খাবার, জল ও অন্যান্য রসদ পৌঁছে দিয়ে আসত। একদিন টের পেয়ে সেলার বাবা বিশ্বাসঘাতকতা করে চীনা সৈন্যকে জানিয়ে দেন জশবন্তের পজিশন। চীনা সৈন্য লুকিয়ে পৌঁছয় সেই পাহাড়ের মাথায়, জশবন্তকে ধরে এবং এক কোপে মুণ্ডু কেটে হত্যা করে ক্যাপ্টেন জশবন্তের।

    জশবন্তের মৃত্যুর খবর পেয়ে, রাগে দুঃখে সেলা এর পরে এই পাহাড়ের মাথা থেকে খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। সেই মেয়ের নামে এই পাস আর লেকের নাম হয় সেলা, আর এখান থেকে একটু দূরে সেই পাহাড়ের কোলে এখন রয়েছে জশবন্তগড় মেমোরিয়াল।

    সেলা লেককে ঘিরে রাস্তা ঘুরে এবার নিচের দিকে নেমে গেছে। যে মুহূর্তে সেলা লেক অদৃশ্য হল, সেই মুহূর্তে রাস্তাও অদৃশ্য হল। শুরু হল পাথর, নুড়ি আর কাদায় ভর্তি রাস্তা। খুবই বিরক্তিকর লাগে, এদিকে ঢালু, নিচের দিকে নামছে রাস্তা, কিন্তু স্পিড বাড়াবার কোনও উপায় নেই, ধীরে ধীরে, সাবধানে নামতে হচ্ছে।



    সে খারাপ রাস্তা আর শেষ হয় না, চলেছি তো চলেইছি, এ কী রে বাবা, সেলা পাসের এদিকটায় রাস্তাই নেই নাকি?

    পাঁচ কিলোমিটার এইভাবে চলার পর রাস্তা দেখা দিল আবার। অনেকটা সময় চলে গেছে, পা ধরে গেছে আবার। চট করে একটা পাঁচ মিনিটের বিরতি নিয়ে আবার শুরু করলাম চলা।



    খানিক পরেই এসে গেল জশবন্তগড় মেমোরিয়াল, কিন্তু ওটা ফেরার পথেই দেখব, এই ভেবে আর থামলাম না, এগিয়ে গেলাম। আপাতত প্রায়োরিটি হচ্ছে দিনের আলো থাকতে থাকতে বুমলার পারমিট কালেক্ট করা।

    বেলা প্রায় পৌনে বারোটা নাগাদ এসে পৌঁছলাম জাং গ্রামে, এইখানেই আছে নুরানাং ওয়াটারফলস বা জাং ফলস। গ্রামের মধ্যে দিয়ে রাস্তা একটু সরু, কিন্তু মোটামুটি ভালো অবস্থাতেই আছে, ধীরে ধীরে চলতে থাকলাম, একটা মোড়ের মাথায় দেখি রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে, সেখানে একজন লোক, আসামের নাম্বারপ্লেটওলা মোটরসাইকেলে দাঁড়িয়ে কেমন ভেবলে যাওয়া ভঙ্গীতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে সে-ও পাজলড, কোনদিকের রাস্তা নেবে বুঝতে পারছে না।

    আমার মোটরসাইকেলে জিপিএস চলছে, তাতে দেখতে পাচ্ছি ডানদিকের রাস্তা নিতে হবে, ছেলেটিকে ওভারটেক করতে যেতেই সে আমায় থামাল এক্সকিউজ মি বলে।

    সে-ও তাওয়াং যাচ্ছে, আমাকে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করল সে আমাকে ফলো করতে পারে কিনা। আমি একটু হুব্বা হয়ে গেলাম, আসামের ছেলে তাওয়াংএর রাস্তা জানে না, আর অচেনা লোককে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করছে ফলো করতে পারে কিনা? মুখে বললাম, করো, তবে আমি কিন্তু মাঝে একটা স্টপ দেব, জাং ফলস আছে সামনেই। তুমি চাইলে তাওয়াং চলে যেতে পারো, আমি ওখানে একটু সময় কাটিয়ে যাবো।

    সে মনে হল জাং ফলসের নাম প্রথম শুনছে, ফলস? হিয়ার? ইজ দ্যাট গুড টু সী?

    রাস্তা দিয়ে স্থানীয় একজন পাস করছিলেন, তাঁকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, জাং ফলস কীভাবে যাবো। উনি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন, এখান থেকে আর তিন কিলোমিটার এগোলেই রাস্তার ওপরে বড় সাইনবোর্ড দেখতে পাবে লেখা আছে, জাং ফলস। ডানদিকে এক কিলোমিটার ঢুকলেই দেখতে পাবে ফলস।

    মোটরসাইকেল চলে যাবে?

    একদম, ফলসের সামনে পর্যন্ত চলে যাবে।

    এগোলাম, খানিক দূর এগোতেই সেই কাঙ্খিত বোর্ডটি দেখতে পেয়ে গেলাম, ডানদিকে তিরচিহ্ন মারা।

    ডানদিকে রাস্তা নেই, মানে পাকা রাস্তা নেই, পাথর বোল্ডার ফেলা পথ একটা, সেইখান দিয়েই খানিক এগোতে, প্রথমে শব্দ, তারপরে দূর থেকে জলপ্রপাতটা দেখতে পেলাম। সামান্যই দূরে। তারপরেই সাঙ্ঘাতিক ঢালু হয়ে রাস্তা নেমে গেছে একটা কংক্রিট চাতালের দিকে। সেই চাতাল পেরিয়ে মোটরসাইকেল থামল একটা সিঁড়ির সামনে। আর রাস্তা নেই। এবার সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে।

    অসমীয়া ছেলেটি আমার সাথ ছাড়ে নি। সে-ও আমার সাথেই মোটরসাইকেল পার্ক করল, তখন খেয়াল করে দেখলাম, ওর মোটরসাইকেলের দুদিকের হ্যান্ডেলে লম্বা লম্বা দুখানা সিমেন্টের বস্তার টুকরো কেটে লাগানো আছে। সেটা কী জিজ্ঞেস করবার আগেই দেখলাম সে ছেলে বাঁহাত থেকে গ্লাভস খুলল, আর সেই হাতের তেলো জুড়ে মোটা ব্যান্ডেজ লাগানো। আমি সশঙ্কে জিজ্ঞেস করলাম, মেট উইথ অ্যাক্সিডেন্ট? হোয়াট হ্যাপেনড?

    সে ছেলে একগাল হেসে বলল, নো ম্যান, সো চিলিং উইন্ড, আই কুড নট বিয়ার, কুড নট হোল্ড দা হ্যান্ডল।

    ক্রমশ জানলাম, ছেলেটি তেলুগু। আসামে এসে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে এসেছে, এবং দিরাং থেকে সে ঠাণ্ডায় অত্যন্ত ব্যতিব্যস্ত। তার নাকি হাত এমন জমে যাচ্ছিল, সে ভয় পাচ্ছিল ফ্রস্টবাইট না হয়ে যায়, ফলে সে ওষুধের দোকান থেকে ব্যান্ডেজ কিনে তাই দিয়ে হাত জড়িয়ে তার ওপর গ্লাভস পরে, এবং যাতে হাতে সরাসরি হাওয়ার ঝাপটা এসে না লাগে, তাই হ্যান্ডেল থেকে দুফালি সিমেন্টের বস্তার টুকরো আটকে ঝুলিয়ে দিয়েছে। হেলমেট খুলল যখন, সত্যি বলছি, অত মোটা বালাক্লাভা আমি কখনও দেখি নি, মানে হনুমান টুপি ওর থেকে পাতলা হয়।

    কপাল চাপড়ালাম, এই ঠাণ্ডা-সহ্য-করতে-না-পারা জনতা কেন আসে এইসব জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার করতে! আর তাদের সাথে আমারই কেন দেখা হয়! আদৌ তেমন কিছু ঠাণ্ডা নেই, মানে পাঁচ ছ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠাণ্ডাকে যদি ‘চিলিং’ ঠাণ্ডা বলা যায়, তা হলে আর কী বলব।

    সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলাম, আর আমাদের সামনে, একদম সামনে এসে আছড়ে পড়ল জাং ফলস বা নুরানাং ফলস। খুব উঁচু নয়, কিন্তু অসাধারণ তার সৌন্দর্য, আর একেবারে আমাদের চোখের সামনে।



    মাটিতে পড়ে সেই জলের রাশি কণার মত ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে, তাতে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে একটা চমৎকার রামধনু তৈরি করেছে, সে এক অপূর্ব দৃশ্য।





    খানিক সময় কাটিয়ে, কিছু ছবি, কিছু ভিডিও তুলে, এবার ফেরার পথ ধরলাম, প্রায় একটা বাজে। খাওয়া হয় নি কিছু, তাওয়াং গিয়ে খেতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়েই দম আটকে গেল।

    মাত্র তিরিশ বত্রিশটা সিঁড়ি। এমন কিছু খাড়াইও নয়। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে গত দু মাস ধরে আমি নিয়মিত আমার হাউজিং আর অফিসের সিঁড়ি ভেঙে ন তলায় ওঠানামা করেছি, শেষদিকে আমি না থেমেই একবারে ন তলায় উঠে পড়তে পারছিলাম, ভেবেছিলাম দম বেড়েছে, কিন্তু এখানে, আজ, জাং ফলসের সামনে, মাত্র নটা সিঁড়ি ভাঙার পরেই মনে হচ্ছে আর পারছি না। হা-হা করে হাঁফাচ্ছি। সামান্য অলটিট্যুড বেড়ে যেতেই আমি আবারও অসহায়। … এই ফুসফুস নিয়ে বোধ হয় এর বেশি আমি কিছুতেই করে উঠতে পারব না।

    তিনবার থেমে বিশ্রাম নিয়ে ঐ বত্রিশটা সিঁড়ি ভেঙে উঠলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বাঁ পা বোধ হয় একটু মচকেও গেছে। মোদ্দা কথা, একেবারে কেলিয়ে গেছি এই কটা সিঁড়ি ভাঙতে গিয়ে।

    তেলুগু ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি তাওয়াংএ হোটেল বুকিং আছে? তোমার কি বুমলা যাবার প্ল্যান আছে?

    না, তার কিসুই প্ল্যান নেই, কাল দিরাংএ সে মনাস্ট্রির গেস্টহাউসে ছিল, আজও তাওয়াং মনাস্ট্রির গেস্টহাউসেই থাকবে বলে ঠিক করেছে। বুমলা কী, কোথা দিয়ে যায়, সে কিছুই জানে না। সে শুধু তাওয়াং জানে, তাওয়াং এসেছে। মনাস্ট্রি দেখে ফেরত যাবে।

    আমি বললাম, দ্যাখো, সেক্ষেত্রে তুমি তা হলে তাওয়াংএ গিয়ে জায়গা খুঁজে থেকে যেও, আমাকে যেতে হবে ডিস্ট্রিক্ট আর্মি হেডকোয়ার্টারে, সেখান থেকে পারমিট নিতে হবে বুমলার, নিয়ে আমি আমার মত কিছু একটা খুঁজে নেব।

    তার নাম সতীশ, সতীশ বলল, টেল মি ব্রো, বুমলাতে কি খুব ঠাণ্ডা হবে?

    আমি বললাম, তা একটু ঠাণ্ডা তো হবেই, অতটা উঁচু। সেলা পাস ১৩,৭০০ ফুট, আর বুমলা পাস ১৫,২০০ ফুট। দেড় হাজার ফুটের মত বেশি উঁচু। তবে এইখানে যেতে গেলে তো তোমাকে পারমিট করাতে হবে। আর তাওয়াংএ পৌঁছে আজ পারমিট করাতে পারবে কিনা দ্যাখো। আমার তো ব্যবস্থা করা আছে, আমার পারমিট রেডি, তুমি মনে হয় না আমার সাথে যেতে পারবে।

    প্রসেসের দিকে তার বিশেষ মন গেল বলে মনে হল না, কারণ তার পরের প্রশ্ন ছিল, ওখানে গেলে কি ফ্রস্ট বাইট হবার চান্স আছে, ব্রো?

    এ কী ছেলে রে বাবা! এ সেলা পাস বুমলা পাসেই ফ্রস্ট বাইটের আশঙ্কা করছে, এ কি ভাবছে এভারেস্টে চড়তে এসেছে? ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বললাম, শোনো, তোমার যদি ঠাণ্ডায় খুব কষ্ট হয়, তা হলে বেটার তুমি চেষ্টা কোরো না। তবে এটুকু বলতে পারি, ফ্রস্ট বাইট হবে না। নিতান্তই যদি যেতে চাও, তাওয়াংএ গিয়ে প্রথমে পারমিটের ব্যবস্থা করো, তারপরে ওষুধের দোকানে গিয়ে ডায়ামক্স কিনে খাও। আজ রাতে একটা, কাল সকালে বেরোবার আগে একটা। তার পরেও বলছি, যেও না, তোমার খুউব ঠাণ্ডা লাগবে।

    তাতে দমে যাবার বদলে সে ছেলে আরও চাঙ্গা হয়ে গেল। চ্যালেঞ্জ, ইয়েস! খুব ঠাণ্ডায় যাবো, কিন্তু ফ্রস্ট বাইট হবে না, ইয়ো, ব্রো।

    আমি এবারে ডায়ামক্স নিই নি। খারদুং লা তিনবার পেরনোর অভিজ্ঞতা আছে, গত বছর গুরুদোংমার লেকও পেরিয়ে এসেছি, এইটুকু বুঝেছি, এএমএস আমাকে অ্যাটাক করে না। আর ঐসব জায়গার তুলনায় সেলা বা বুমলা তো নেহাতই নিচু জায়গা। সেলা পেরিয়েও এসেছি, কোনও রকমের সমস্যা হয় নি, বুমলাও আরামসে পৌঁছে যাবো ডায়ামক্স ছাড়াই।

    নুরানাং ফলসের অসীম সৌন্দর্য পেছনে রেখে আমরা আবার ফিরে এলাম মূল রাস্তায়। তাওয়াং পৌঁছে পারমিট নিতে হবে সবার আগে, আর দেরি করা সম্ভব নয়।

    দেড়টা নাগাদ তাওয়াং শহরে ঢুকলাম, আর জিজ্ঞেস টিজ্ঞেস করে আর্মি হেডকোয়ার্টারে সেই কর্ণেলের অফিসে পৌঁছতে লাগল আরও কুড়ি পঁচিশ মিনিট। কর্ণেলের সাথে দেখা হল না, তবে পারমিট পেয়ে গেলাম হাতে হাতে। সতীশ আমার সাথেই ছিল, সে অল্প ঘ্যানঘ্যান করল, আমারও পারমিট করিয়ে দাও বলে, কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, পারমিট মূলত ইস্যু হয় তাওয়াংএর ডিসি অফিস থেকে। আমি গেছোদাদার মাধ্যমে এই কর্ণেলের সাহায্য পেয়েছি, তাই আমাকে এটা হেডকোয়ার্টার থেকে কালেক্ট করতে হয়েছে। ওখানকার লোকটাও তাইই বলল, তুমি ডিসি অফিসে যাও, দ্যাখো, এখনও পারমিট দিচ্ছে কিনা।

    পারমিটের পালা শেষ, এবার জায়গা খোঁজার পালা। সতীশ আবারও বলল, ব্রো, মনাস্ট্রির গেস্টহাউস থাকে, ভালো অ্যারেঞ্জমেন্ট থাকে, চলো, সোজা তাওয়াং মনাস্ট্রিতে যাই, ওখানেই জায়গা পেয়ে যাবো। আমার এমনিতে ধর্মস্থানের অতিথিশালা ব্যাপারটাতে সঙ্গত কারণেই আপত্তি আছে, সব অতিথিশালা তো আর চিত্তরঞ্জন পার্ক কালীবাড়ির ধর্মশালা হয় না যে গেলেই মাছমাংস পাওয়া যাবে শস্তায়। মৃদু আপত্তি করলাম, কিন্তু সতীশ বলল, নো প্রবলেম ব্রো, ভালো না লাগলে মনাস্ট্রিটা দেখে চলে আসব, ওখানেই কোথাও লাঞ্চও করে নেব।

    আমিও ভেবে দেখলাম, বৌদ্ধরা আফটার অল ভেজ ননভেজ নিয়ে ফালতু নাচানাচি করে না, গিয়ে দেখাই যাক।

    তাওয়াং শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে মোটামুটি চার কিলোমিটার দূরে এই তাওয়াং মনাস্ট্রি। আমরা মনাস্ট্রিতে ঢুকলাম না, গেট পেরিয়ে সোজা চলে এলাম একটা গেস্টহাউসের সামনে, যেটা তাওয়াং মনাস্ট্রি পরিচালিত। মোটরসাইকেল রেখে এদিক ওদিক তাকাতেই এক বয়স্ক লামা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এলেন। রুমের দর হাঁকলেন পার নাইট দেড় হাজার টাকা।

    উরেব্বাস। এত দামের জায়গায় আমি কী করে থাকব? আমার সামনে এখনও বহু বহু দিনের হোটেলবাস বাকি রয়েছে।

    তো, আমাকে কিছু করতে হল না। সতীশ ব্রো-ই খুব উৎসাহ নিয়ে বার্গেন টার্গেন করে ব্যাপারটাকে বারোশো টাকায় নামাল। আমরা দুদিনের জন্য বুক করলাম। ঠিক করলাম, যদি কাল তাড়াতাড়ি বুমলা আর সাঙ্গেতসর লেক দেখা হয়ে যায়, সোজা জেমিথাং চলে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে তাওয়াংএই নেমে আসব, জেমিথাংএ স্টে করব না।

    কাল কটায় বেরনো যায়? সাতটা? সাড়ে সাতটা? কতটা ঠাণ্ডা থাকবে অত সকালে? রিসেপশনে লামা বাদে আরেকটি লোক ছিল, বেশ হাসিখুশি টাইপের। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, রাস্তা খুব খারাপ, চার পাঁচ ঘণ্টা লেগে যাবে বুমলা যেতে, তবে রাস্তা খোলা আছে। জেমিথাং গেলে আর তাওয়াং ফেরা যাবে না, এতটাই খারাপ রাস্তা।

    লাগেজ খুলে রুমে ঢোকালাম এক এক করে। কাল যেহেতু সন্ধেবেলা তাওয়াংএই ফিরব, তাই লাগেজ নিয়ে বেরোবার মানে হয় না। আর ক্যারিয়ার যেহেতু খালি থাকবে, এবং রাস্তা যেহেতু খুবই খারাপ, সাঙ্ঘাতিক ঝাঁকুনি লাগবে মোটরসাইকেলে, ক্যারিয়ার পুরোটাই ভেঙে দুটুকরো হয়ে যেতে পারে। বেলা আড়াইটে বাজে, তাওয়াং ঢোকার সময়ে দেখে এসেছি মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপ, আগে সেখানে গিয়ে দেখি এটা ওয়েল্ডিং করে জোড়া যায় কিনা। সকাল থেকে খাওয়া হয় নি কিছু, কিন্তু মাথায় শুধু তখন এটা কাজ করছে, চারটে পেরোলেই অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে, ঠাণ্ডা বাড়বে, দোকানপাট খোলা না-ও থাকতে পারে। খাওয়া পরে হবে, আগে ক্যারিয়ারের হিল্লে করি।

    সতীশ তার মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেল ডিসি অফিসের দিকে, বুমলা পাসের পারমিটের ব্যবস্থা করতে – আর আমি মোটরসাইকেল নিয়ে আবার পিছিয়ে গেলাম তাওয়াং শহরের অন্যপ্রান্তে। কিন্তু সেই দোকানটা তো স্পট করতে পারছি না – কোথায় দেখেছিলাম যেন?

    ভাবতে ভাবতেই আবার কল, কুড়কুড়কুড়। আয়ুষ, আমার ব্যাকআপ ম্যানেজার। সে কোনও এক্সেলে প্রয়োজনীয় ডেটা খুঁজে পাচ্ছে না, কোনও ডিফেক্টের এক্সপ্ল্যানেশন বুঝতে পারছে না। আমি যে এইখানে বসে কীভাবে তাকে সাহায্য করব, জানি না। কুড়িটা মিনিট চলে গেল রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বলতে। কল শেষ হতেই আবার মোটরসাইকেলে স্টার্ট, এবং পরের বাঁক ঘুরতেই দেখলাম পাশাপাশি মোটরসাইকেলের ওয়ার্কশপ আর ওয়েল্ডিংএর দোকান। সোজা গিয়ে মোটরসাইকেল লাগিয়ে দিলাম।

    ওয়েল্ডিং শপের লোকটা খুব যত্ন নিয়ে ওয়েল্ডিং করে দিলেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় নিয়ে এক এক করে ক্যারিয়ার খুললেন, ওয়েল্ড করলেন, আবার লাগিয়ে দিলেন। ভালো করে চেক করে দেখে নিলাম, নিখুঁত জুড়ে গেছে, এখন আবার ভাঙতে এর ওপর দিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা বওয়াতে হবে। সহজে আর ভাঙবে না। বাকি জোড়গুলোও চেক করে নিলাম, আশু আর কারুরই ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

    কাজ যখন শেষ হল, তখন বাজে পৌনে পাঁচটা, খিদের চোটে মাথা ঝিমঝিম করছে। কী করব, এখন খাবার জায়গা খুঁজব, নাকি সোজা সেই গেস্টহাউসে ফিরে যাবো, ওখানেই একদম পেটপুরে খেয়েদেয়ে নেব?

    গেস্টহাউসেই ফিরে গেলাম। মেনু কার্ড দেখলাম, নতুন কিছুই নেই, টিপিকাল আর পাঁচটা উত্তর ভারতীয় রেস্টুরেন্টে যা পাওয়া যায়, তাইই। এখন আর তাওয়াং শহরে ফিরে গিয়ে রেস্টুরেন্ট খোঁজার মত এন্থু নেই। চিকেন নুডল অর্ডার করে ঘরে ঢুকলাম।

    আধ ঘণ্টা বাদে সতীশও ঢুকল। – কী ব্যাপার, পারমিট পেলে?

    ইয়েস ব্রো, পেয়েছি। নিষ্পৃহ স্বরে বলেই ফোনে কারুর সাথে তেলুগুতে কথা বলতে শুরু করল। মনে হল না, পারমিট পেয়েছে। হয় তো বলতে চাইছে না।

    খানিক বাদে দেখলাম, সতীশ বাইরে গিয়ে আরেকটা ব্ল্যাঙ্কেট নিয়ে এল, আর রুম হীটার পৌঁছে দিল আরেকজন। রুম হীটার চালিয়ে, সেটা নিজের দিকে তাক করে, দুখানা ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে নিজেকে সেঁধিয়ে নিয়ে সতীশ আমার সাথে গল্প করতে শুরু করল, আমি কতদিন ধরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছি, কোথায় কোথায় গেছি। কিন্তু সবকিছুর শেষে ওর কৌতূহল একটা জায়গাতেই। স্পিতিতে মাইনাস কুড়ি ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে মোটরসাইকেল চালিয়েছি জানার পরেই তার প্রশ্ন, ব্রো, তোমার ফ্রস্ট বাইট হয় নি?

    সাড়ে সাতটা নাগাদ খাবার এল, খেতে খেতে ল্যাপটপ খুলে লগিন করলাম অফিসের নেটওয়ার্কে। এখানে ওয়াইফাই ফ্রি-তে দিচ্ছে, স্পিডও খুব খারাপ নয়। কিছু কাজ সেরে নিতেই হবে ঘুমোতে যাবার আগে, নইলে আমাকে তিষ্ঠোতে দেবে না।

    এ জিনিস গত বছরেও হয় নি। দু সপ্তাহের জন্য সিকিম ভুটান বেড়িয়েছিলাম, অফিস থেকে একটাও ফোন আসে নি, আর এবারে একদিনেই পাগল করে দিচ্ছে।

    দশটার মধ্যে ঘুমোতেই হবে। শরীর আর সঙ্গ দিচ্ছে না।
  • Tim | 013412.126.562323.237 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:২০381098
  • পড়ছি, ভালো লাগছে। চলুক।
  • গবু | 2345.110.454512.227 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:০২381099
  • কমরেড সতীশ আর সিকি ব্রোর যুগলবন্দী জমেছে। পড়ছি!
  • সিকি | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১০381100
  • দম আটকে ছিলাম। কাল থেকে কোনো কমেন্টই পড়ছিল না :)
  • শঙ্খ | 2345.110.454512.94 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১৩381101
  • আমার এক পুরোনো মারাঠি ম্যানেজার ইয়োগেশ এর কথা মনে পড়ে গেল।
  • Tim | 013412.126.562323.237 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:১৫381102
  • বোঝো! ঃ-))

    সিকির এইযে আন্তরিক জিজ্ঞাসা, যে কেন ট্রিপটা করছে, এবং সেটা লেখায় শেয়ার করা, এইটা আমার ভালো লাগছে।সব প্রশ্নের যে উত্তর থাকবে তার কোন মানে নেই, কিন্তু প্রশ্নগুলো দরকারি।
  • pi | 2345.110.564512.183 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:২০381103
  • আরে দারুণ লাগছে!!

    কাছে থেকেও এসব জায়গা কোনোদিন হবে কিনা কে জানে! শরীরের জন্য এবার মেচুকা প্ল্যান করেও কাটিয়ে দিলাম।!
  • দম | 450112.129.4590012.108 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০৩381105
  • আরে পাঠকরাও তো দম আটকে আছে তাই কমেন্ট আসে না
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন