এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ অরুণাচলের দিকে

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৮৬৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • r2h | 232312.172.8912.125 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৪381106
  • কর্পোরেট চাকরি নিয়ে দুচার কথা মনে হয় কিন্তু এখানে লিখলে তাল কাটবে ভাটে লিখি।
  • avi | 7845.11.012323.220 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:২৫381107
  • অরুণাচল যাব। সিকিবাবু ফেরার সময় শিলিতে দাঁড়িও। পড়ে চলেছি।
  • স্বাতী রায় | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:০১381108
  • পড়ছি, একটা মাছি হয়ে সিকির ক্যারিয়ারে চেপে বসতে পারলে কি যে ভাল হত!
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৪০381109
  • সব্বোনাশ! তা হলে কি আর ক্যারিয়ারটা ভাঙত না? নাকি ওয়েল্ডিং করার আর দক্কার পড়ত না?
  • dc | 232312.164.781223.40 | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৫৫381110
  • লাস্ট কয়েকদিন পড়তে পারিনি, আজ একবারে অনেকটা পড়ে ফেল্লাম। দারুন লাগছে। আর সিকির মতো আমারও রাত্তিরে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে যায়, মনে হয় উঠে কিছু কাজ করি।
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:০১381111
  • পড়ছি। টু গুড
  • গবু | 2345.110.9004512.14 | ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:১২381112
  • উইকেন্ডে আসিতেছে তো?
  • I | 785612.40.670112.7 | ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:২৬381113
  • আমি গেছিলাম।ইয়েস।এই সমস্ত জাগায়।তবে বাইকবাহনে নয়।দিরাং ভারি মনোহর।কিন্তু একধরনের পোকা আছে, মিজের মত, তীব্র কামড়ায়।নুরানাং অপূর্ব।

    ব্যাস! এই ত সামারি করে দিলাম।
  • সিকি | ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৪৩381114
  • হ্যাঁ, মোটামুটি এই। দিরাং সত্যি চোখ মেলে দেখি নি। সুন্দর তো অবশ্যই, তবে কিনা ইস্ট সিকিমের কাছে ...

    গবু, আসিতেছে। কাল রাতেই। এখন লিখছি।
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২২381116
  • অরুণাচলের জঙ্গল নিয়ে লেখা চাই। ইন্দো কি লিখেছ কোথাও?
  • অপেক্ষা | 4512.139.016712.246 | ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:৪১381117
  • বসে আছি পথ চেয়ে .......
  • সিকি | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:২৬381118
  • খচরমচর শব্দে ঘুম ভাঙল। লেপের তলা থেকে মুণ্ডু বের করে দেখি, সতীশ তার ব্যাগ গোছাচ্ছে। রুম হীটার এখনও বীরবিক্রমে তার দিকে তাক করে চলেই যাচ্ছে। কটা বাজে? … সাড়ে ছটা। উঠি, তৈরি হই। সতীশ এত সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিচ্ছে কেন, ও কি আমার আগে বুমলা পাসে পৌঁছতে চায়? জিজ্ঞেস করতে বলল, না ব্রো, আয়্যাম গোয়িং ব্যাক টু দিরাং টুডে, নট ফীলিং টু গো টু বুমলা।

    সেকী? কাল যে অত লড়ে এসে বললে, পাস পেয়ে গ্যাছো?

    না ব্রো, কাল সেলা পাসে এত বরফ দেখেছি, আর দেখার ইচ্ছে নেই, আজও তো আবার দেখবই, আর বুমলা যাবো না। এই নাও ব্রো, ছশো টাকা, আমার ঘরভাড়ার শেয়ার, আমি বেরোই।

    এত বরফ দেখেছে! হাসি চেপে, হাই তুলে বেরোলাম, বাইরে সে মোটরসাইকেল স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে যাওয়া পর্যন্ত হাসিহাসি মুখে হাত নাড়লাম। সতীশ হারিয়ে গেল সামনের মোড়ে, আর আমি টের পেলাম – এমন কিছু অসহনীয় ঠাণ্ডা নয়, চটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়া যেতেই পারে।

    গীজার চলছে, তাতে জলও গরম হচ্ছে, অতএব, সুন্দর করে চান সেরে নিলাম। ফিটফাট হয়ে সাড়ে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম, আজ আর লাগেজ বাঁধাছাঁদা করার কিছু নেই, সন্ধেবেলা এখানেই ফিরে আসব, জেমিথাং যাব না, জেমিথাং এবারের মত বাদ দিলাম। সামনে আরও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে ইটিনেরারিতে, একটা জেমিথাং বাদ গেলে কিছু এসে যায় না।

    তাওয়াং শহরের মধ্যে খানিক ঘুরপাক খেয়ে উত্তরদিকের রাস্তাটা ধরলাম। যাচ্ছি বটে সাঙ্গেতসর লেক দেখতে, তবে এই রাস্তায় আরও বেশ কিছু লেক পড়বে। প্রথম হল, পাংকাং টেং সো (Pangkang Teng Tso) বা পিটি সো। তাওয়াং থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরত্বে।



    বেশ ভালোই রাস্তা, সুন্দর। চারপাশে নীলচে পাহাড়। বিভিন্ন শেডের নীল। আট কিলোমিটার মত যাবার পরে একটা আর্মি ক্যান্টনমেন্ট মত পড়ল, রাস্তার ওপর চেকপোস্ট, সেইখানে বুমলার জন্য পাসটি দেখাতে হল। দেখানো তো নয়, হাত থেকে গ্লাভস খোলো, হেলমেট খোলো – না হলে পিঠ থেকে ব্যাগ নামবে না, তারপরে ব্যাগ থেকে পাস বের করে দেখাও, তারপর পুরো ব্যাপারটা আবার রিভার্স অর্ডারে। বেশ খানিকটা সময় লাগে, ততক্ষণে আর্মি জওয়ানটির সাথে আলাপ করে ফেললাম। হিন্দির টান দেখেই বুঝেছি, হরিয়ানভি। হিসারে বাড়ি।

    আবার এগনো গেল, সাত কিলোমিটারের মাথায় দেখা গেল পিটি সো লেক। খুব আহামরি কিছু না, তবু নীল আকাশের ছায়ায় টলটলে নীল জল, দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। এগিয়ে গেলাম।



    গলায় ঝোলানো ক্যামেরাটা বের করেছি, তার ঢাকনা এখনও ইউভি ফিল্টারের সাথে আটকে আছে – প্যাঁচ ঘুরিয়ে ঢাকনা খুলতে হয়, প্যাঁচ ঘোরাতে যাবো – হেলমেটের ব্লুটুথে ফোন বাজল।

    অফিস।

    অনসাইটের আর্কিটেক্ট। বলচিলাম কি, তুমি যে জাভার প্যাকেজটা বানিয়ে দিয়েচো, সেটা নতুন সার্ভারে চালাতে চাইচি, চলচে না, তুমি যেভাবে বলেচিলে, সেইভাবেই কমপাইল করিচি, কিন্তু কী সব জার ফাইল বলে এরর দিচ্চে। কী করে করব একটু বলে দাও না!

    লোকটা হাতের কাছে থাকলে, সত্যি বলছি, ঐখানেই একটা পাথর তুলে ওর মাথায় ধাঁই করে বসিয়ে দিতাম, কর্পোরেট এথিক্স ফেথিক্সের তোয়াক্কা না করে। হতচ্ছাড়াটা জাভার জ বোঝে না, অন্য টেকনোলজির লোক, পুরো সল্যুশনের জাভার পার্টটা আমি সামলাই, পইপই করে আসার আগে বলে এসেছিলাম ডিসেম্বরের ছাব্বিশ তারিখের আগে ওতে হাত দিও না, আমি ফিরে এসে নতুন সার্ভারে ডিপ্লয় করে দেব, ইনস্টল করে দেব, রান করে দেব, তোমার ও নিয়ে মাথা ঘামাবারই দরকার নেই, ইনি সেই হাত লাগিয়েছেন, যেহেতু অনসাইটে আছেন, অতএব “আর্কিটেক্ট” হিসেবে নিজের কেরদানি দেখাতে গিয়ে ছড়িয়ে ছত্তিরিশ করে বসে আছেন। এখন আমি পিটি সো লেকের সামনে দাঁড়িয়ে কী করে ওকে বোঝাই কোন ফাইল কোন সার্ভারের কোন ফোল্ডারে রাখলে জাভা অ্যাপ্লিকেশন কমপাইল করা যাবে, এ কি মুখে মুখে বলে বুঝিয়ে দেবার জিনিস?

    ছেলেটি গাঁট, ধানাই পানাই করার পরেও বুঝল না যে আমি ওকে অ্যাপ্লিকেশনে হাত লাগাতে বারণ করছি। বাইশে নভেম্বরের বদলে ছাব্বিশে ডিসেম্বর ও অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল হলে দুনিয়ায় কারুর কিছু আসবে যাবে না, ক্লায়েন্টেরও না। অতএব ওকে বললাম, ভাই, মোটরসাইকেলের ওপর বসে আছি, একটু পরেই নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাব, সন্ধেবেলায় হোটেলে ফিরে দেখব বরং, ও তুমি বলে দিলে করতে পারবে না, তুমি জাভার লোক নও, তুমি এখন ঘুমোতে যাও, তোমার রাত হয়েছে।

    টানা পনেরো মিনিট বকবক করার পর অবশেষে সে ক্ষান্ত দিল। আমি খানিকক্ষণ কী রকম শূন্য দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নিষ্কৃতি কি নেই? কেন এইসব জায়গাতেও মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকে? কেন?



    মাত্রই এক ঘণ্টা হল জার্নি শুরু করেছি, কী রকম মনে হচ্ছে অবসন্ন হয়ে আসছি। ধুর, ও সব মনের ভুল, বলে আবার মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম। খানিক বাদেই ভালো রাস্তা গায়েব হয়ে গেল, শুরু হল পাথুরে রাস্তা। প্রথম ছোটমেজো সাইজের, তারপরে বড় বড় পাথরের ওপর দিয়ে চলা। খানিক এগিয়ে যেতে আরেকটা মোটরসাইকেলের দেখা পেলাম, কেরালার নাম্বারপ্লেট। একটি ছেলে আর একটি মেয়ে বসে। পাঁচশো সিসির বুলেট, অনায়াসে উঠে যাচ্ছে খাড়া রাস্তা বেয়ে, আমাকে দুশো সিসির পালসার নিয়ে একটু কসরৎ করতেই হচ্ছে। বেশ খানিকটা এগোবার পরে দেখলাম, একটা প্রচণ্ড খাড়া চড়াই এবং বাঁক, সেখানে মেয়েটিকে নামিয়ে ছেলেটি একা একা ওঠার চেষ্টা করল। জায়গাটাতে বিশাল বিশাল পাথরের চাঁই ভর্তি, মানে যার ওপর দিয়ে মোটরসাইকেলের চাকা গড়াতে হবে। খানিকটা জায়গা এরকম, তারপরে আবার খাড়াই কমে গেছে, সেইখানে গিয়ে আবার মেয়েটি মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে বসল। আমি পেছনেই ছিলাম, এইবারে আমার পালা, এই অংশটা ক্রস করার, মোটরসাইকেল ফার্স্ট গিয়ারে নামিয়ে আনলাম, নিয়ে চলবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু একটা পাথরের সামনে এসে গাড়ি গেল বন্ধ হয়ে, সেই পাথরের ওপর চাকা উঠতে পারছে না। এই ঠাণ্ডাতেও শুধু ঝাঁকুনির চোটে আমার হার্টবীট বেড়ে গেছে, এমনিতেই অনেকটা ওপরে উঠে এসেছি, অক্সিজেন এখানে পাতলা, মোটরসাইকেলে বসে হাঁফাচ্ছি। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম, এইবারে একটু পুশ করতেই পাথরের ওপর গড়য়ে উঠে পড়ল চাকা, গতি পেয়ে গিয়ে আরও কয়েকটা পাথর পেরিয়ে কম খাড়াই এলাকায় গিয়ে পৌঁছলাম। সামনের মোটরসাইকেলটা ততক্ষণে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেছে। টের পেলাম, হেলমেটের ভেতর দিয়েই, বাঁ কানের পাশ দিয়ে একটা ঘামের রেখা নেমে এল মাথা থেকে কানের নিচের দিকে।

    একটু পরেই একটা তিনমাথার মোড় চলে এল, ম্যাপে এই জায়গাটার নাম ওয়াই জংশন। এখান থেকে ডানদিকের রাস্তা চলে যাচ্ছে বুমলা পাসের দিকে, আর সোজা রাস্তা যাচ্ছে সাঙ্গেতসার লেক হয়ে জেমিথাংএর দিকে।

    ঘড়ির দিকে তাকালাম, সওয়া নটা বাজে। ওয়াই জংশনে একটা মিলিটারি পোস্ট, সেখানে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ে ডানদিকের রাস্তায় এগোলাম। রাস্তা বলে তো কিছুই নেই, পাথর, ধুলো এইসবের ওপর গাড়ি চলে চলে একটা রাস্তার মত ব্যাপার তৈরি হয়ে আছে। প্রচণ্ড লাফাচ্ছে আমার মোটরসাইকেল। খানিক এগোবার পরে আরও একটা চেকপোস্ট, এইখানে পাস দেখাতে হচ্ছে আবার। সামনে চলা মোটরসাইকেল এবং ছেলেমেয়েদুটির আবার দেখা পেলাম এখানে। আলাপ হল, কেরালা থেকে এসেছে, গাড়ি ট্রেনে করে নিয়ে এসেছে গৌহাটি। জিজ্ঞেস করলাম, বুমলা দেখে কোথায় যাবে, সাঙ্গেতসার? ওরা বলল, না না, আমরা এটা দেখেই তাওয়াং ফিরে যাবো।

    চেকপোস্টে পাস দেখিয়ে এন্ট্রি করিয়ে আবার এগনো গেল। রাস্তা একই রকম। তবে পাথরের সংখ্যা কম, চলা যায় কোনও রকমে। ঝাঁকুনির চোটে হার্টবীট বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই অক্সিজেন কম এখানে। তবে সাঙ্ঘাতিক কিছু নয়, অন্তত গুরুদোংমার বা খারদুংলা-র যে অভিজ্ঞতা, তার তুলনায় এটা প্রায় কিছু নয়।

    এ রাস্তায় লেক একটা দুটো নয়, অনেকগুলো। বুমলা যাবার পথেই অন্তত আরও কয়েকটা লেক দেখে ফেললাম। টলটলে জল, আকাশের সাথে রঙ মেলানো নীল, চোখ ধাঁধিয়ে যায় নীলের ঔজ্জ্বল্যে।





    চেকপোস্ট থেকে আট ন কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ ধরে কখনও নিচের দিকে, কখনও ওপর দিকে চলবার পর সামনে দেখা গেল গাড়ির মেলা। বেশ অনেক টুরিস্ট এসেছে। বুমলা পাস, অবশেষে পৌঁছলাম।


    (বুমলা পাসের শেষমাথা। গার্ড রেলিংএর ওপ্রান্ত থেকে চীন শুরু।)

    প্রাচীন কালে এই পথ চীনা ব্যবসায়ীদের আসাযাওয়ার পথ ছিল, উনিশশো বাষট্টির যুদ্ধে চীন এই রাস্তা দিয়েই ঢুকে পড়ে অরুণাচলের মধ্যে। দীর্ঘকাল এই পাস সাধারণের জন্য বন্ধ ছিল, ২০০৬ সালে এটা আবার খুলে দেওয়া হয়, মূলত দুই দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য, আর টুরিস্টদের জন্য। শেষ দেড়শো মিটার খুব তরিবত করে সাজানো, প্রথমে আর্মির একটা হলঘর মত, সেখানে ফ্রি-তে চা দেওয়া হয়, সুভেনির বেচা হয়, এর পরে একটা ছোট একশো মিটারের পথ সোজা চলে গিয়ে হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে একটা গার্ড রেল ব্যারিকেডের সামনে, তাতে লেখা ওয়েলকাম টু বুমলা। ব্যস, এই রেলের ওপারেই চীন। ভারতের দিকে রাস্তার দুধারে ছোট ছোট হোর্ডিং, একেকটাতে ভারতের একেকটা রাজ্য সম্বন্ধে গুণগান, আর ইতস্তত এদিক ওদিক ইংরেজি, হিন্দি আর চীনা ভাষায় লেখা ভারত আর চীন কেবলমাত্র একে অপরের সাথে বন্ধুত্বের জন্যই বেঁচে আছে; হিন্দি চিনি ভাই ভাই; ভারত চীন মৈত্রী দীর্ঘজীবি হোক; ইত্যাদি।

    ভারতের দিকে যত সেনার রমরমা, উঁকিঝুঁকি মেরে চীনের দিকে কাউকেই দেখা গেল না। ফাঁকা রাস্তা চীনের দিকে দূর পর্যন্ত চলে গেছে, দৃষ্টিসীমার মধ্যে একটি মানুষও নেই।

    বরফও নেই। তাওয়াং থেকে এতটা রাস্তা এলাম, কোথাও বরফের চিহ্নমাত্র নেই।

    বাংলায় কিচিরমিচির শুনে পেছন ফিরে তাকালাম – একদল মাসিমাজেঠুজেঠিমার দল বেড়াতে এসেছেন। আর গুঁতোগুঁতি করছেন কে কার ছবি তুলবে ঐ ওয়েললাম টু বুমলা লেখা ব্যারিকেডের সামনে। গুঁতোগুঁতি থামলে একজন জেঠিমাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করলাম আমার মোবাইলটা বাড়িয়ে দিয়ে, একটা ছবি …

    জেঠিমা তো একগাল হেসে “ও মা তুমি বাঙালি? হেহেহে … এই শুনচো, এই দ্যাখো এ-ও বাঙালি … অ্যাঁ? না না, আমরা কলকাতা থেকে নয়, আমরা এসিচি শিলিগুড়ি থেকে, ঐ যে ও, ওরা এসচে হাওড়া থেকে, আমার ননদ হয় … ও মা, তুমি দিল্লিতে থাকো, দিল্লি থেকে এসচো? একা একা? এই শুনচো, এই দ্যাখো, এ দিল্লি থেকে এসচে, এই ওর একটা ফটো তুলে দাও না গো …”



    ছবি তুলিয়ে নিয়ে, দঙ্গল থেকে পালিয়ে এলাম। বুমলা দেখা হল। আশ্চর্য ব্যাপার, মনে কোনও দাগ কাটল না। সেই একই মানসিকতা খুঁচিয়ে তুলছে, কেন এলাম? কী হল এটা দেখে? মনে আনন্দও এল না – কেন ঘুরছি এইভাবে? কেন?

    ফিরে গিয়ে হেলমেট পরে গ্লাভস পরে মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম, এইবারে ফিরে যেতে হবে সেই ওয়াই জংশনে, সেখান থেকে সাঙ্গেতসার লেক। না, জেমিথাং যাবো না, মন থেকে যাবার ইচ্ছে হচ্ছে না, সাঙ্গেতসার দেখে একই রাস্তা ধরে তাওয়াংই ফিরে যাবো।

    খিদে পেয়েছে সাঙ্ঘাতিক, সকালে কিছু না খেয়েই বেরিয়েছি, এখন বাজে সাড়ে দশটা। হলঘরে উঁকি মেরে চা খাবার তেমন কোনও ব্যবস্থা দেখলাম না, এখানে আর কোথাও কোনও খাবার জায়গা নেই, সে হোক, আমার না খেয়ে থাকা অভ্যেস আছে, ধীরেসুস্থে ফেরার পথ ধরলাম। সেই একই পাথুরে রাস্তা ধরে একই নাম-না-জানা লেকের পাশ দিয়ে এসে আবার ফিরলাম ওয়াই জংশনের চেকপোস্টে। এবার ডানদিক যেতে হবে। ডানদিক মুড়তেই দেখতে পেলাম একটা আর্মি পরিচালিত ক্যাফেটেরিয়া। ঝটপট ঢুকে গেলাম, গরম গরম মোমো আর কফি খেয়ে শরীরে বল এল। এইবারে যেতে হবে সাঙ্গেতসার। মাত্রই বারো কিলোমিটার, কিন্তু যেতে সময় লাগবে অনেকখানি। পাথরে ভরা রাস্তা।

    ঝাঁকুনি খেতে খেতে, লাফাতে লাফাতে এগোতে থাকলাম, দূরত্ব কমতে থাকল, ঘড়ির দিকে একটা চোখ রেখে যেতেই হচ্ছে, কারণ ভারতের এই অংশে চারটে বাজার পরেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। তাওয়াং সাড়ে চারটের মধ্যে পৌঁছতেই হবে, অন্ধকারে এই রাস্তায় চলার রিস্ক কোনওমতেই নেওয়া যায় না।

    মোবাইল সিগন্যাল যদিও সেই পিটি সো ছাড়ার পর থেকেই নেই, তবে জিপিএস চলছে। জিপিএস যখন বলছে সাঙ্গেতসার লেক আর মাত্র দেড় কিলোমিটার, হঠাৎই রাস্তার রূপ গেল বদলে।



    বরফ, বরফ! স্নো-ফল হয়েছে এখানে। একটু দূরেই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তার সামনে এক যুবক লামা দুটি মেয়ের সাথে খুব খুনসুটি করছে আর ছবি তুলছে। আমি একটু দূরত্ব রেখে মোটরসাইকেল থামালাম। দুতিনটে ছবি নিলাম। এবার প্রায় ওপর থেকেই মনে হচ্ছে যেন দেখা যাচ্ছে লেক।



    লেকের আশেপাশে কোথাও বরফের চিহ্নমাত্র নেই, শেষ এক কিলোমিটার একদম খাড়া উতরাই। সামনে রাজকীয় ভঙ্গীতে অজস্র পাইন গাছের কাণ্ড বুকে গেঁথে উপস্থিত সাঙ্গেতসার লেক।







    এই লেকটা আসলে ছিল এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, একটু ওপর দিকে। এই জায়গাটায় ছিল পাইন গাছের জঙ্গল। অনেকদিন আগে এক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয়, তার ফলে এদিক সেদিক থেকে কিছু পাথর সরে যায়, আর ওপর থেকে সম্পূর্ণ লেকের জল এসে আছড়ে পড়ে এই পাইন গাছের জঙ্গলে। সেই থেকে এই লেক এইখানেই অবস্থান করছে, পাইন গাছের কাণ্ডগুলো এখনও সেই পুরনো জঙ্গলের অস্তিত্ব জানান দেয়, আর আগে যেখানে লেক ছিল, সেখানে লেকের বা জলের আর কোনও অস্তিত্ব নেই।

    আমরা যখন কলেজে পড়ি, তখন শাহরুক খান আর মাধুরী দীক্ষিতের একটা অখাদ্যতম সিনেমা হয়েছিল, কোয়লা। সে সিনেমা আবার বসুশ্রী হলএ গিয়ে কোন এক বন্ধুর সাথে পুরোটা দেখেওছিলাম। সেই কোয়লা সিনেমাতে একটা গানের নাচ মাধুরী এইখানে এসে নেচেছিলেন, গোটা গানের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে বোধ হয় ছিল লেকটা, তাইতে এই লেকের দ্বিতীয় নাম হয় মাধুরী লেক বা মাধুরী ঝিল।

    নব্বইয়ের দশকে অনেকদিন ধরে বোধ হয় মাধুরী অনেকেরই অবসেশন ছিলেন (আমার কোনওকালেই হন নি, আমার মাধুরী দীক্ষিত পোষায় নি কস্মিনকালেও), উত্তর এবং উত্তর পূর্ব ভারত জুড়ে একটা নয়, একাধিক লেকের নাম মাধুরীর নামে আছে। জানি না, সবকটার সামনে গিয়েই উনি টাইম টু টাইম নেচে এসেছিলেন কিনা।

    লেকের সামনে একটা আখাম্বা জাতীয় পতাকা। ঠিক কী কারণে এখানে দেশপ্রেম দেখানোর দরকার পড়ল, জানি না – হয় তো খুব কাছেই চীন বর্ডার। এই লেকের জল ভারতীয় এবং তিব্বতি বৌদ্ধদের কাছে খুব পূতপবিত্র। খানিকক্ষণ দাঁড়ালাম লেকের সামনে। টুরিস্টের ভিড়। একটু দূরে ঘাসে ঢাকা জমির ওপর একজন বসে তারস্বরে একটি রেডিও বা ওয়াকম্যান চালিয়েছেন, মানে চারদিকে এক হট্টমেলার পরিবেশ।

    না, এই শোরগোল শুনতে আমি আসি নি। আমার সামনে সাঙ্গেতসার, হাওয়ার ধাক্কায় অল্প অল্প ঢেউ উঠছে তার জলে, আমি একদৃষ্টে খানিক চেয়ে রইলাম সেদিকে। ভালো লাগছে না। উত্তর পাচ্ছি না – অনেকগুলো ‘কেন’র। অনেক মাস ধরে, অনেক দিন রাত ধরে আমি প্ল্যান করেছি এই জার্নির, একটা একটা দিনের পরিকল্পনা বানিয়েছি কাজের ফাঁকে ফাঁকে, সব, সব মিথ্যে মনে হচ্ছে। কেমন একটা বিশাল হলোনেস জেঁকে বসছে মনের মধ্যে। কী হচ্ছে কিছুতেই বুঝতে পারছি না, কিছুতেই অ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারছি না এই সৌন্দর্য। কিচ্ছু ভালো লাগছে না, এই প্রথম মনে হচ্ছে একা একা এত বড় একটা জার্নি, বড় ক্লান্তিকর ঠেকছে, সঙ্গে একটা কেউ থাকলে বোধ হয় … একজন সঙ্গী থাকলে একটু কি এনজয়েবল হত? কিন্তু আমার কমপ্যাটিবিলিটিও যে বড্ড কম!

    আমি একলা চুপচাপ থাকা মানুষ, লোকজনের সান্নিধ্য বড় একটা পছন্দ করি না, অথচ এইবারে কেমন মনে হচ্ছে একা একা হাঁফিয়ে উঠছি, দম আটকে আসছে। এখনও তো চার সপ্তাহ বাকি, মাত্র ছ দিন হয়েছে! কেন? মোটরসাইকেল রাইডার হিসেবে আমার প্রথম আত্মপ্রকাশ দুহাজার পনেরোতে। চরম এনজয় করেছিলাম লাদাখের সেই রাইড, হাজার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, চমৎকার দুজন বন্ধু পেয়েছিলাম, আজও তাদের সাথে যোগাযোগ আছে, বন্ধুত্বের উষ্ণতা বজায় আছে একেবারে একই রকম। তার পরে দু হাজার ষোলতে স্পিতি, সতেরোতে সিকিম আর ভুটান … পথে সঙ্গী পেয়েছি, কখনও তা মনমত হয়েছে, কখনও হয় নি, কিন্তু নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর দিনগুলো তো কম এনজয়েবল হয় নি! তা হলে কি সঙ্গী পাওয়াটা ফ্যাক্টর নয়, আসলে রাইডার হিসেবে আমি ফুরিয়ে আসছি? ফুরিয়ে গেছি, জাস্ট একটা ইমেজকে টেনে নিয়ে যাচ্ছি?

    প্যাশন বনাম পারপাস। হৃদয় বনাম মস্তিষ্ক। মোটরসাইকেল চালানোটা আমার প্যাশন, নিজেকে খুঁজে পাবার একটা উপায় – সেভাবেই উপলব্ধি করেছি আমি। কিন্তু কী এর পারপাস? কী চেয়েছি আমি জীবনের কাছ থেকে? একটা চাকরি করি, মন্দ রোজগার হয় না, কিন্তু সেটা না আমার প্যাশন, না পারপাস, রোজগার করি জীবনের নৈমিত্তিক চাহিদা মেটাবার জন্য, আর চাহিদা মিটিয়ে, সঞ্চয়ের পরেও সামান্য কিছু খুদকুঁড়ো জমিয়ে রাখি এই প্যাশন মেটাবার জন্য। কী হত যদি না করতাম এসব? যদি না আসতাম, অনেক হাজার টাকা বেঁচে যেত, নৈমিত্তিক প্রয়োজনের তালিকার কিছু আইটেম হয় তো কমে যেত, প্যাশন মেটাবার থেকেও আপাতদৃষ্টিতে যা জরুরি? জরুরি কোনটা? মস্তিষ্কের দাবি মেনে জাগতিক প্রয়োজন মেটানো, নাকি কোনওসময়ে প্রয়োজনকে পাশ কাটিয়ে, বুকের কাছে কান পেতে মনের চাহিদা মেটানো?

    মিটছে চাহিদা? বুকের মাঝে কান পেতে যা শুনেছি, তাই করতেই তো পথে নেমেছিলাম। তা হলে বার বার মনে হচ্ছে কেন, আমি চাহিদা বুঝতে ভুল করেছি এইবারে? কী সেই ভুল? কোনটা ঠিক? কোন পথে শান্তি মিলবে? পারপাসের সন্ধান পাবো?





    ফিরে চললাম তাওয়াংএর দিকে। নিচে নামার রাস্তা – সময় কম লাগে, পাথর ডিঙিয়ে সাবধানে নেমে এলাম ভালো রাস্তার কাছাকাছি, তার খানিক পরেই তাওয়াং। মার্কেটের সামনে এসে মোটরসাইকেল পার্ক করলাম। চারটে দশ। সারাদিনে ছটা মোমো আর এক কাপ কফি ছাড়া আর কিছু পেটে ঢোকে নি, পেটপুরে খেতে হবে এইবারে।

    মার্কেটের মধ্যে রাস্তা ওয়ান ওয়ে, একধারে ট্রাফিক পুলিশ থামালেন, বললেন, এইখানে মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখতে। যেখানে পার্ক করলাম, সেখান থেকে একটু এগিয়েই দেখতে পেলাম একটা খাবার জায়গা – পরিষ্কার বাংলায় লেখা আছে ভাত তরকারি মাছ মাংস সব পাওয়া যায়। টক করে ঢুকে পড়লাম। হ্যাঁ, সোয়া চারটে বাজলেও খাবার সবই পাওয়া যাচ্ছে। মাছ মাংস দুটোই অর্ডার করে দিলাম, সঙ্গে চমৎকার আলুভাজা এল, বেগুনভাজা এল, আর একটা বেশ উপাদেয় তরকারি। ভাতটা একটু ঠাণ্ডা ছিল, তো তাতে কিছু অসুবিধে হয় না খিদের মুখে। গোগ্রাসে খেতে খেতেই আবার কল এল। তাওয়াং শহরে এখন মোবাইল নেটওয়ার্কে ঢুকে গেছি, অতএব অফিস আবার পিছু নিয়েছে। মুখে মাছ, কানে ফোন – থাক, সে বিবরণ আর আপনাদের দেব না, বেকার নিজের খারাপ লাগাটাকে অন্যের মধ্যে চারিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আর নেই।

    খেয়ে উঠলাম যখন – তখন অন্ধকার হয়ে গেছে। সওয়া পাঁচটা বাজে। খাবারের দাম খুবই কম নিল, মাত্র একশো কুড়ি টাকা। মনে হয় এতেই রাতের খাবারও হয়ে যাবে, রাতে আর খাবার দরকার নেই। হোটেলে ফিরি, জিনিসপত্র গোছাতে হবে।

    মনাস্ট্রির কাছে এসে দেখলাম, আকাশ আলো করে বিশাল বড় চাঁদ উঠেছে, পূর্ণিমার চাঁদ। রূপোলী আলোয় ঝলমল করছে তাওয়াং শহর। এখান থেকে সমস্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, দূরে একটা বিশাল বুদ্ধমূর্তি, পুরো তাওয়াং শহরকে নজরে রাখছেন বুদ্ধদেব, এদিকে এটা কি হেলিপ্যাড না স্টেডিয়াম? একটা বেশ বড়সড় ফাঁকা জায়গা। বেশ সুন্দর মায়াবী পরিবেশ, ভালো লাগার মতই জায়গা।



    তাওয়াং মনাস্ট্রি দেখা হল না। শুনেছি এটা নাকি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মনাস্ট্রি, লাসার পোটালা প্যালেসের পরেই। ১৬৮০ সালে এই মনাস্ট্রি স্থাপিত হয়েছিল মেরাক লামা লোদ্রে গিয়াৎসোর তত্ত্বাবধানে। তিব্বতী ভাষায় “তা” মানে ঘোড়া, “ওয়াং” মানে চোজেন, পছন্দ করা। তাওয়াং মানে ঘোড়ার পছন্দ করা জায়গা। কথিত আছে পঞ্চম দালাই লামা এই মেরাক লামাকে একটি ঘোড়া সমেত পাঠিয়েছিলেন মনাস্ট্রি বানাবার আদর্শ জায়গা খুঁজতে। মেরাক লামা প্রচুর খুঁজেও পছন্দসই জায়গা বের করতে পারলেন না, তখন তিনি এক নিকটস্থ গুহায় ঢুকে তথাগতর উদ্দেশ্যে প্রার্থনায় বসেন, যাতে তথাগত তাঁকে সাহায্য করেন জায়গা খুঁজে বের করতে। প্রার্থনা সেরে বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন, ঘোড়া মিসিং। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে তিনি দেখতে পান ঘোড়া সামনের পাহাড়ে আরও উঁচুতে এক ঘাসে ঢাকা জমিতে ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। মেরাক লামার মনে হয় এই বোধ হয় তথাগতর ইশারা। এই এলাকাটির নাম ছিল তানা মানদেখাং, খুব কাছেই রাজা কালা ওয়াংপোর প্রাসাদ। মেরাক লামা এইখানেই মনাস্ট্রি স্থাপিত করা মনস্থ করেন। ঘোড়া এই জায়গা পছন্দ করে, তাই মনাস্ট্রির নাম তাওয়াং, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম তাওয়াং, শহরের নাম এবং পুরো জেলার নাম আজ তাওয়াং। তাওয়াংএর এই মনাস্ট্রি মহাযান বৌদ্ধ দর্শনের পীঠস্থান, প্রচুর প্রচুর দুষ্প্রাপ্য পুঁথি এখানে রক্ষিত আছে।

    মাত্র একশো মিটার দূরত্বে সেই মনাস্ট্রির গেট, দুদিনে দেখা হল না।

    থেকে যাব আর এক দিন? কাল তাওয়াং ছেড়ে সেপ্পা যাবার দিন, প্রায় পৌনে চারশো কিলোমিটার দূরত্ব। গেছোদাদা বলেছিল বটে খুব ভোর ভোর বেরোলে সন্ধে নাগাদ সেপ্পা পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু এই কদিনে রাস্তার অবস্থা দেখে তেমন মনে হচ্ছে না। সেলা পাসের আগে পাঁচ কিলোমিটার খারাপ রাস্তা আছে, তার পরেও টুকটাক খারাপ প্যাচ আছে কিছু, রূপার পরে রাস্তা কেমন, আমি জানি না। রূপা দুশো কিলোমিটার। হিসেবমত আজ আমার জেমিথাংএ থাকার কথা ছিল, কাল তাওয়াংএ ফিরে এসে পরশু দিন তাওয়াং থেকে সেপ্পা যাবার কথা ছিল। তো, আজ যখন তাওয়াংএ ফিরে এসেইছি, কাল তা হলে রূপা পর্যন্ত যাই, পরশু সেপ্পা পৌঁছনো যাবে, প্ল্যানমাফিক। জার্নিও খুব বেশি হবে না।

    সেপ্পা ইটানগরের খুব কাছেই জেলা সদর, এখান থেকে জিরো ভ্যালি যাওয়ার রাস্তা। আমার পরের ট্রিপ জিরো ভ্যালির দিকে, কিন্তু সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতেই যদি এনার্জি শেষ হয়ে যায়, তা হলে একেবারেই কিছু এনজয় করতে পারব না। তার চেয়ে কাল সক্কাল সক্কাল তাওয়াং মনাস্ট্রি দেখে রূপার উদ্দেশ্যেই যাত্রা শুরু করি।

    আর … আর …

    হোটেলের ঘরে ফিরে ল্যাপটপ খুললাম। না, অফিস থেকে আর কোনও ফলো আপ নেই। জাভার কমপাইলেশন হোক বা এসক্যালেশনের ঝড়, তারা আমার অনুপস্থিতিতেই দিব্যি সামলে নিচ্ছে আস্তে আস্তে। অফিসের নেটওয়ার্ক থেকে লগআউট করে আমার ইটিনেরারির এক্সেল খুলে বসলাম। পরের দিকে কয়েকটা জায়গা বাদ দিলাম – থাক, সব একবারে দেখার চেষ্টা না করাই ভালো। সাত আটদিন কমিয়ে নিলাম পরের দিকের জার্নি থেকে, উনচল্লিশ দিন থেকে কমে গিয়ে দাঁড়াল বত্রিশ দিনে।

    গোছগাছ শেষ। বাড়িতে দু জায়গায় ফোন করে আপডেট দিয়ে ঘুমোতে গেলাম।

    ঘুম আসছে না। ধুত্তেরি! গল্প শোনাই একটা? স্বপ্নপূরণের গল্প? এভারেস্ট ছোঁয়ার গল্প? সত্যিকারের এভারেস্ট।

    ছন্দা গায়েনের নাম শুনেছেন আপনারা? শুনেছেন, সব্বাই। রাহা মোহারাকের নাম শুনেছেন?



    রাহা মোহারাক। ২০১৩ সালে, মাত্র সাতাশ বছর বয়েসে মেয়েটি ছুঁয়ে এসেছে এভারেস্টের চূড়া। … তাতে কী? আজ পর্যন্ত, বচেন্দ্রী পাল থেকে শুরু করে কত মেয়েই তো উঠেছে, জয় করেছে এভারেস্ট। এখন তো আর এটা নতুন কিছু খবর নয়!

    না, এভারেস্টে ওঠাটা নতুন কোনও খবর নয়, সত্যিই, কিন্তু মেয়েটি যদি হয় প্রথম সৌদি মহিলা এবং কনিষ্ঠতম আরব, তা হলে খবরটা একটু ঘুরে পড়তে হয় বৈকি।

    জেড্ডাতে জন্ম রাহার, সৌদি আরবে, সেই সৌদি, যেখানে মেয়েদের খেলাধুলো করা তো বটেই, স্টেডিয়ামে যাওয়া, এমনকি বিনা আত্মীয় পুরুষসঙ্গী ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরনোও বারণ। প্রাক-মধ্যযুগীয় কিছু অর্থহীন পুরুষতান্ত্রিক নিয়মকে ইসলামের নাম দিয়ে সেখানে বেঁধে রাখা হয় দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে। সেই দেশের মেয়ে রাহা। রাহার নিজের কথায় – মাউন্টেনিয়ারিং শিখতে যাবার জন্য নিজের প্রাচীনপন্থী পরিবারকে, নিজের বাবা-মা-কে কনভিন্স করাতে যে স্ট্রাগল করতে হয়েছিল তাঁকে, এভারেস্টের চূড়ায় ওঠা তার থেকে অনেক সহজ ছিল।

    ট্রেনিংএর সুবিধের জন্য রাহা সৌদি থেকে চলে আসেন ইউএই-তে, শারজায়, সেখানে ট্রেনিংএর পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশুনোও। ভিজুয়াল কমিউনিকেশনসে এমবিএ করেন। এভারেস্ট জয়ের আগে উনি ৮টি শৃঙ্গ জয় করেন একে একে, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে – সবকটা সামিট তিনি সম্পূর্ণ করেন এক বছরের মধ্যে। তার একটা ছিল কিলিমাঞ্জারো। মরতে বসেছিলেন বেখেয়ালে ভুল স্টেপ নিতে গিয়ে। তবু ছেড়ে আসার কথা ভাবেন নি। গিভিং আপ – হাল ছেড়ে দেওয়া শব্দটাই তাঁর কাছে অপরিচিত। নিজের পরিবারের সাথে, নিজের পরিবেশের সাথে, নিজের কমিউনিটির সাথে নিরন্তর লড়াই করে নিজের স্বপ্ন অর্জন করে নেবার সামিটও অবশ্য কম উত্তেজনাপূর্ণ নয়, তার সাথে সাথেই চলতে থাকে প্রস্তুতি, পাখির চোখে মাউন্ট এভারেস্ট। ২০১৩ সালে, নেপালের দিক থেকে আরও বত্রিশ জন মাউন্টেনিয়ারের সঙ্গে গিয়ে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন।

    রাহা এখন দুবাইতে থাকেন।

    প্যাশন আর পারপাস যখন মিলে যায় একসাথে, মানুষ তখন আকাশে বিচরণ করে।
  • গবু | 342323.176.1256.60 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৭381119
  • অল্প হইলো!

    চলুক, পরশ্ব খ্রীস্ট দিবসে আরো কিছুর আশা রাখিতে পারি কি?
  • aranya | 890112.5.9004512.112 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৯381120
  • 'কেন ঘুরছি এইভাবে? কেন?' - কঠিন প্রশ্ন, উত্তর মেলা চাপ
  • aranya | 890112.5.9004512.112 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৪১381121
  • রাহা মোহারাকের নাম সত্যিই আগে শুনি নি । ভাল লাগল এই মেয়েটির কথা জেনে
  • aranya | 890112.5.9004512.112 | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:৪৭381122
  • ছবিগুলো অপূর্ব। দেখলেই যেতে ইচ্ছে করে
  • সিকি | ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:০০381123
  • পরের পর্বে টুইস্ট আসতা হ্যায় কহানী মে।
  • শঙ্খ | 2345.110.894512.255 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:২৫381124
  • পড়ছি পড়ছি, সঙ্গে চলেছি
  • সিকি | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৫381125
  • আসার দিন দিরাং থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় স্টার্ট করে বেলা দেড়টা পৌনে দুটো নাগাদ তাওয়াং এসে পৌঁছেছিলাম। রাস্তা ছিল বেশিরভাগটাই চড়াই। আজ বেশির ভাগটাই উতরাই, সময় কম লাগবে, যদিও আজ যাব দিরাং থেকে আরও খানিক এগিয়ে। কাল গেছোদাদার সাথে কথা হয়েছিল, বমডিলা, না রূপা – কোথায় থাকলে হোমস্টে বা হোটেল পাবার চান্স বেশি। দিরাং থেকে মোটামুটি চল্লিশ কিলোমিটার দূরে বমডিলা। আর বমডিলা থেকে আরও আঠেরো কিলোমিটার রূপা – মানে মোটামুটি ষাট কিলোমিটার। এখান থেকে সকাল সাড়ে আটটায় শুরু করলেও আরামসে বিকেল চারটের মধ্যে পৌঁছে যাব। গেছোদাদা বলেছিল, রূপাতে গিয়ে থাকাই বেটার, পরের দিনের জার্নির জন্য যতটা বেশি এগিয়ে থাকা যায় – থাকার জায়গার অভাব হবে না, যদি দরকার হয় বোলো, ওখানে আমাদের ফিল্ড হসপিটাল আছে, আমি ব্যবস্থা করে দেব।

    ছটায় উঠেছি। তৈরি হয়ে নিয়ে, পৌনে সাতটা নাগাদ বেরোলাম তাওয়াং মনাস্ট্রির দিকে। হোটেলের লামাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছি, যে কোনও সময়ে মনাস্ট্রিতে যাওয়া যেতে পারে, আলাদা করে কোনও ভিজিটিং আওয়ার নেই।

    সত্যিই নেই, সকালের দিকে স্থানীয় কিছু মানুষজন দৈনিক পুজো দিতে এসেছেন, এদিক ওদিক লামারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেউ তেলের টিন কেউ বিশাল বড় প্রদীপদানি ইত্যাদি নিয়ে। কচি লামার দল ছুটতে ছুটতে যাচ্ছে কোথাও – ক্যামেরার লেন্সের ঢাকনার প্যাঁচ খুলতে খুলতেই তারা হারিয়ে গেল সামনের বাঁকে। আমি আস্তে আস্তে এগোলাম। চাতালের সামনে তাওয়াং মনাস্ট্রির লাইব্রেরি। সকাল বেলায় বন্ধ। ভেতরে দেখা যাবে না কিছুই এখন। চাতাল থেকে চমৎকার ভিউ আসছে সকালবেলার তাওয়াং শহরের। প্রথম সূর্যের আলো নরম সোনালী রঙের, ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ উপত্যকার ওপর, বিভিন্ন শেডের নীল রঙের পাহাড়ের সারি, একটার পেছনে আরেকটা।



    বাচ্চা লামাদের ফলো করতে গিয়ে একটু এগিয়ে দেখলাম, মনাস্ট্রির ভেতরেই একটা স্কুল, লামাদের স্কুল। সেখানে সমবেত কচি গলায় প্রার্থনা চলছে। বিশাল ফাঁকা চাতাল, চারদিকে ঘর, লাইব্রেরি, মিউজিয়াম, গেস্টহাউস, প্রতিটা বিল্ডিং থেকে ঠিকরে পড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সকালবেলার প্রার্থনা।



    সবই বন্ধ, তাই বাইরে থেকেই যেটুকু দেখা যায়, সেটুকু দেখে আবার ফিরে এলাম হোটেলে। দুদিনের ভাড়া মিটিয়ে, জিনিসপত্র বাঁধাছাঁদা করে রেডি হচ্ছি, এক বাচ্চা লামা এসে হাজির। সে আমার মোটরসাইকেল দেখে খুব কৌতূহলী। হ্যান্ডেলবারের লাইট, জিপিএস মাউন্ট, বানজি কর্ড – কচি কচি হাত দিয়ে প্রত্যেকটা ধরে ধরে “কেয়া হ্যায়, কেয়া হ্যায়” টাইপের আকুল জিজ্ঞাসা। মনাস্ট্রির পাঁচিলের সামনে চমৎকার চপের দোকান বসেছে একটা, তার পাশে আঙ্কল চিপসের স্টল, পাঁচিলের ওপার থেকে লামাদের ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে দশ টাকার নোট এসে পৌঁছচ্ছে পাঁচিলের এপারে, আর এপার থেকে একটা একটা করে চিপসের প্যাকেট পৌঁছে যাচ্ছে লামাদের হাতে।

    ছোট্ট লামা ভালো হিন্দিও বলতে পারে না, অনেক কষ্টে আমাকে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছি। আমি বললাম, দিল্লি। দিল্লি জানতা হ্যায়? লামা খুব স্মার্টলি বলল, হাঁ। দিল্লি-কলকাতা-ম্যাড্রাস জানতা হ্যায়।



    স্টার্ট করতে করতে আটটা বাজল। তাওয়াং শহরকে পেছনে রেখে আমি ফিরে চললাম রূপার দিকে।

    শহরের চৌহদ্দি পেরিয়ে ফিরছি, আর একটু পরেই এসে যাবে জাং গ্রাম, যেখানে আসার সময়েই দেখে এসেছি নুরানাং ওয়াটারফলস। ফোন বাজল, কিন্তু হেলমেটের ব্লুটুথ বাজছে না কেন? ও হো, আজ তো তাওয়াং থেকে স্টার্ট করার সময়ে হেলমেটের ব্লুটুথ অন করতেই ভুলে গেছি!

    গেছোদাদা ফোন করছে, এখন বাঁ হাত দিয়ে চেপে ধরে ব্লুটুথ অন করতে গেলেও, সে ফোনের সাথে কানেক্ট হতে হতে ফোন বেজে শেষ হয়ে যাবে। মোটরসাইকেল থামিয়েই বরং ধরি।

    কিন্তু তাতেও টাইম তো লাগেই – গাড়ি থামাও, হাত থেকে গ্লাভস খোলো, তারপরে ফোন রিসিভ করো – করতে করতে সত্যিই ফোন বেজে শেষ হয়ে গেল। ঝটপট কলব্যাক করতে গেলাম, গেছোদাদার ফোন ততক্ষণে নট রিচেবল। ধুর, দরকার থাকলে অবশ্যই আবার ফোন করবে। ফোনের সাথে ব্লুটুথ কানেক্ট করে আবার গ্লাভস পরলাম, মোটরসাইকেলে স্টার্ট দিলাম। একটু পরে এসে গেল জাং। প্রায় নটা বাজে। কিছু খেয়ে নিলে ভালো হয়। রাস্তার ধারে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে থামলাম। কী পাওয়া যাবে? পুরি-ভাজি-অমলেট-মোমো-চা-কফি-আলুপরোটা … গাড়ি থামিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। পুরি-ভাজি অর্ডার করলাম। খানিক বাদে এসে গেল একদম গরমাগরম ধোঁয়া-ওঠা লুচি আর ছোলার ডাল। একদম বাঙালি স্টাইলের জিনিস। আর আমায় পায় কে! লুচিগুলোর অবশ্য বিশাল সাইজ ছিল। একসাথে সাতখানা খেয়ে তবে থামলাম। এর পর এক কাপ কফি খেয়ে, আবার পথ চলা। আহা, কী সোয়াদ! দুপুরে আর কিছু না খেলেও চলবে।

    আর খানিকক্ষণ বাদেই এসে গেল জশবন্তগড়। মেমোরিয়ালটা আসার সময় দেখা হয় নি, থামব কিনা চিন্তা করলাম একবার, এমনিতে দেখার খুব একটা ইচ্ছে নেই, সেই সময়ে আবার ফোন বাজল। গেছোদাদা। এইবারে ব্লুটুথেই রিসিভ করে ফেললাম – শুভ সংবাদ। রূপার কাছেই ডাহুং বলে একট গ্রামে একটা মিলিটারি হসপিটাল আছে, সেখানকার কম্যান্ডিং অফিসার কর্ণেল আগরওয়ালকে বলে সেখানকার গেস্টহাউসে আমার রাতে থাকার বন্দোবস্ত হয়ে গেছে, আমি চাইলে সেখানেই থেকে যেতে পারি।

    খুব ভালো প্রস্তাব। আহা, একদিনের জন্য থাকার চিন্তা নেই, এর চেয়ে আর ভালো কী হতে পারে? সঙ্গে সঙ্গে ফোনেই বলে দিলাম, আমি দিব্যি চাই। ঠিক আছে, তুমি আমাকে হোয়াটস্যাপে লোকেশন পাঠিয়ে দাও, আমি পৌঁছে যাব।

    কী মনে করে আর জশবন্তগড় মেমোরিয়াল দেখার জন্য থামলাম না। আর্মির মেমোরিয়াল কমবেশি একই রকমের লাগে, আমার খুব একটা ভালো লাগে না যুদ্ধসংক্রান্ত বীরত্বের প্রদর্শনী। যদিও জানি না জশবন্তগড় মেমোরিয়াল কী ধরণের, ওর ভেতর কী আছে, তবু, জাস্ট লেট ইট গো বলে এগিয়ে গেলাম।

    আর ঘটনাটা ঘটল তার ঠিক পরেই, এক মিনিটের মাথায়।

    রাস্তা হালকা ঢালু ছিল, কিন্তু সুন্দর মসৃণ রাস্তা, স্টার্ট করামাত্র চল্লিশে উঠে গেছিল গাড়ির স্পিড, হঠাৎই, কীরকম মনে হল, গাড়ির পেছনের চাকাটা যেন কেউ ঝট করে তুলে ধরে ডানদিকে ঠেলে দিল, গাড়ি স্পিডের মাথায় হেলে পড়ল বাঁদিকে, পড়লাম আমি, এবং টের পেলাম গাড়ি গড়িয়ে যাচ্ছে, তার সাথে গড়িয়ে যাচ্ছি আমিও, আমার বাঁ পা মোটরসাইকেলের বাঁদিকে গীয়ার শিফটারের মধ্যে আটকে গেছে, ফলে নিজের ইনারশিয়ায় মোটরসাইকেল টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে।

    পুরো ঘটনাটা ঘটে গেল এক থেকে দেড় সেকেন্ডের মাথায়, অন্তত পাঁচ ছ ফুট মোটরসাইকেলের সাথে ঘষটানোর পর কোনওরকমে নিজের পা ছাড়িয়ে আনতে পারলাম, আমি রাস্তার ওপর শুয়ে, একটু সামনেই মোটরসাইকেল, তারও গড়ানো থেমেছে।

    আপৎকালে মাথায় সবার আগে নিজের নিরাপত্তার কথাটা মাথায় আসে। আমাদের ব্রেনের তিনটে মূল লেয়ার আছে, তার একদম নিচের দিকে, শিরদাঁড়ার একদম ডগায় লাগানো অংশটাকে বলা হয় লিজার্ড ব্রেন, বা রেপটিলিয়ান ব্রেন, যেটা প্রাণীর বেসিক ভাইটাল কাজকর্ম এবং ইনস্টিংক্ট নিয়ন্ত্রণ করে, একদম প্রিমিটিভ কাজকর্ম, যেমন, বিপদ দেখলে আক্রমণ করা বা পালানো, নিজের সেফটির চেষ্টা সারভাইভালের চেষ্টা সবার আগে করা, ইত্যাদি ইনস্টিংক্ট নিয়ন্ত্রণ করে। সেই লিজার্ড ব্রেন আমাকে বলল, সবার আগে দ্যাখো, তুমি নিজে ঠিক আছো কিনা।

    স্প্রিংএর মত লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। না, বাঁ-পা ঠিক আছে। অ্যাঙ্কলের থেকে পায়ের পাতা ঘুরিয়ে মুড়িয়ে দেখলাম, সব ঠিক আছে, জুতোটা একটু কুঁচকে গেছে ডগার দিকে, আর কিছু হয় নি। এখন পরের প্রায়োরিটি হচ্ছে, মোটরসাইকেল ঠিক আছে কিনা দেখা।

    আসার আগেই মোটরসাইকেলের দুদিকে স্লাইডার লাগিয়ে নিয়েছিলাম, ফলে মোটরসাইকেলে এতটুকুও আঁচড় পড়ে নি, ঝটিতি হ্যান্ডেলে আর পেছনের দিকের শিংয়ে হাত লাগিয়ে মোটরসাইকেলটাকে চাগিয়ে তুললাম। … পা-টা কি একটু হড়কে গেল? মচকে গেছে বাঁ পা? … দু হাতে মোটরসাইকেলটাকে ব্যালেন্স করে পায়ের দিকে তাকালাম, আর তখন রহস্যটা পরিষ্কার হল।

    ব্ল্যাক আইস! রাস্তার এই অংশটায় দিনের বেশির ভাগ সময়ে সূর্যের আলো পড়ে না, কোথা থেকে জল এসে জমে একেবারে কাচের মত মসৃণ আর শক্ত একটা বরফের লেয়ার তৈরি করেছে, আর তাতেই পিছলেছে আমার গাড়ি, প্রায় ফুলস্পিডে। বোঝামাত্র আমার পা-টা আরেকটু হড়কে গেল, আমি ব্যালেন্স রাখতে গিয়েও রাখতে পারলাম না, মোটরসাইকেল আবার শুয়ে পড়ল রাস্তার ওপর। ওজন তো কম নয়, দুদিকে ভর্তি লাগেজ সমেত দেড়শো কিলো তো হবেই।

    কী করা যায়? সাহায্য দরকার – তা এমন কিছু জনমানবশূন্য এলাকা এটা নয়, একটু দূরেই একটা ট্যাক্সি দেখা যাচ্ছে, এদিকেই আসছে, জশবন্তগড়ের দিক থেকে। হাত দেখিয়ে থামালাম। ড্রাইভার নেমে এলেন, এবং আমার সাথে হাতে হাতে ধরে মোটরসাইকেলটাকে খাড়া করে রাস্তার ধারে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আমিও দেখালাম, এখানে বরফ জমে আছে, প্রায় দশ ফুটের মত স্প্যান, খালি চোখে দেখে একেবারে বোঝা যাচ্ছে না, স্রেফ, মোটরসাইকেলটা ঘষটে গেছে বরফের ওপর দিয়ে, সাদা রঙের কটা আঁচড় পড়েছে মাত্র বরফের ওপর, এতটাই হার্ড আইস।

    ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কোথাও লাগে নি তো?

    নাঃ, লাগে নি বলেই তো মনে হচ্ছে, বাঁ পায়ের পাতাটা একটু টনটন করছে বটে, কিন্তু মনে হয় না তেমন কিছু। ড্রাইভারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাঁ পায়েই ভর দিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে বসলাম, সুইচ টিপতেই একবারে স্টার্ট হয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম, না, ক্ষয়ক্ষতি প্রায় কিছুই হয় নি, মোটরসাইকেল স্লাইড্রের দৌলতে একেবারে অক্ষত, লাগেজ একচুলও নড়ে নি, আমার ব্যাগে লাগানো অ্যাকশন ক্যাম, গলায় ঝোলানো ডিএসএলআর, সমস্ত ঠিকঠাক, কেবল জ্যাকেটের বাঁদিকের হাতা ওপর থেকে নিচ অবশি ফেটেফুটে গেছে। বাঁদিকে পড়ে ঘষটে গেছিলাম পাঁচ-ছ ফুট।

    এগোলাম, আরও বেশ খানিকটা উতরাই আছে, দূরে দেখা যাচ্ছে, একটু পরেই চড়াই শুরু রাস্তায়। গীয়ার চেঞ্জ করতে গিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলটা টনটন করে উঠল। হতেই পারে, বুড়ো আঙুলটার ওপরেই মূল চাপটা পড়েছে। পরের গীয়ার, আবার ব্যথা। পরের গীয়ার, আবার।

    সাবধানে চালাচ্ছি, খুব ভালো করে নজর করছি, সামনে আর কোথাও ব্ল্যাক আইস তো নেই? এখনও প্রায় সতেরো কিলোমিটার দূরে সেলা পাস, আর পাসে পৌঁছবার পাঁচ কিলোমিটার আগে রাস্তা ভীষণ খারাপ, মানে বারবার গীয়ার নামাতে ওঠাতে হবেই। নামানোটা তেমন কোনও চাপের ব্যাপার নয়, ওঠাতে গেলেই ক্রমশ যন্ত্রণাটা বেড়ে যাচ্ছে।

    ক্রমশ উচ্চতা বাড়তে লাগল, সেই সঙ্গে যন্ত্রণাও, প্রতিবার গীয়ার বদলানোর সময়ে মনে হচ্ছে পা যেন ছিঁড়ে যাবে। ক্রমশ ব্যথার দিকে আরও কনসেনট্রেট করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, যন্ত্রণার উৎস হচ্ছে বুড়ো আঙুলের হাড় যেখানে পায়ের পাতা থেকে আলাদা হয়ে বেরোয়, মানে মাংসচামড়ার ভেতরে, সেইখান থেকে হচ্ছে। চোট সেইখানে লেগেছে। ভেঙেছে? … জুতোর মধ্যেই আঙুল নাড়াবার চেষ্টা করলাম, এমন কিছু টাইট জুতো নয়, আঙুল নড়ল, হাল্কা ব্যথা, কিন্তু মনে হচ্ছে না অসাড় হয়ে গেছে বা ফুলেছে, বা ভেঙেছে। শুধু পায়ের পাতায় চাপ দিয়ে গীয়ার তুলতে গেলেই চোখে অন্ধকার দেখছি।

    সেলা পাস আর সাত কিলোমিটার। ক্রমশ বুঝলাম, এইভাবে চালানো চাপ, গীয়ার না বদলে, বরং চেষ্টা করি গীয়ারটাকে একটা ফিক্সড পজিশনে রেখে, থার্ড গীয়ারে রেখে, ক্লাচে চাপ বাড়িয়ে কমিয়ে এগোবার। স্পিড খুব কমে গেলে ক্লাচ বেশি টিপে, আস্তে আস্তে স্পিড বাড়িয়ে ক্লাচ ছেড়ে চড়াই। সাধারণত পাহাড়ী রাস্তায় এটা স্ট্রিক্টলি নো-নো, সবসময়ে বলা হয়, পাহাড়ে ক্লাচে নয়, গীয়ারে চালাও, কিন্তু আমার কাছে তখন আর কোনও অপশন নেই, সত্যিই।

    খারাপ রাস্তা এসে গেল, এখন আমি জানি, সেলা লেক পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা বলে কিছু নেই, থার্ড গীয়ারে রেখে একটা সাধারণ স্পিড মেনটেন করে উঠতে থাকলাম। একটা সুবিধে, চড়াইটা এখানে খুব খাড়াই নয়, ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে, ফলে স্পিড মেনটেন করতে অসুবিধে হচ্ছে না।

    রাস্তা খারাপ, গাড়ি লাফাচ্ছে, ঝাঁকাচ্ছে আমাকে, বাঁ পায়ের বাঁদিকেও একটা যন্ত্রণা বাড়ছে, চলতে চলতে এক সময়ে সেলা লেকের সামনে এসে পৌঁছলাম, এইখানে সেলা পাসের গেট পর্যন্ত রাস্তা সমতল, গাড়িকে নিজের গতিতে গড়াতে দিয়ে অ্যাঙ্কল থেকে বাঁপাটা একবার ঘুরিয়ে দেখতে গেলাম, বিদ্যুতের শক লাগার মত একটা তীব্র যন্ত্রণা ছড়িয়ে গেল সারা শরীরে, একা একাই হাল্কা চিৎকার করে উঠলাম।

    ভেঙেছে? নাঃ, নিশ্চয়ই ভাঙে নি। হতেই পারে না, অত জোরে পড়ি নি, আর ভাঙলে আমি এইভাবে গাড়ি চালাতেও পারতাম না। জুতোটা একবার খুলে দেখব পা ফুলছে কিনা?

    নাঃ থাক। দিনের শেষে আজ একটা মিলিটারি হাসপাতালে থাকার জায়গা জুটেছে, অদ্ভূত সমাপতন বলা যেতেই পারে, একদম সেইখানে গিয়ে দেখতে হবে।

    সেলা পাসের পর রাস্তা বেশ ভালো, ক্লাচ আর ব্রেকের ভরসায় গাড়ি ফোর্থ, তারপরে ফিফথ গীয়ারে তুলে দিলাম অসীম যন্ত্রণা সহ্য করে। প্রতিবারে প্রায় চীৎকার করে ফেলছিলাম, ব্যথার চোটে তখন হাঁফাচ্ছি।

    আমার আজ পর্যন্ত জীবনে কখনও হাড় ভাঙে নি, প্লাস্টার হয় নি, প্রত্যক্ষ সে যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা নেই। মায়ের হাত ভেঙে যাবার পর দেখেছি, সিকিনীরও পড়ে গিয়ে ফ্র্যাকচার হবার পরে ফুলে যাওয়া পা দেখেছি, আমার পা-ও কি সেই রকম ফুলেছে? … আচ্ছা, লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলেও কি পা ফুলে যায়? প্লাস্টার হয়?

    উচ্চতা কমছে, নামছি, নামছি, দিরাং এসে যাবে আর খানিক পরেই – মাথার মধ্যে একরাশ চিন্তা ঘুরছে, যদি মাইনর চোট হয়, তাতেও কি আমি আর এই পা নিয়ে আরও পঁচিশ দিন ঘুরতে পারব? আর যদি ফ্র্যাকচার হয়? কী করব? আমার তো কাল সকালেই সেপ্পা যাবার আছে, পরশু জিরো যাবার আছে। যাবো না? দুদিন রেস্ট নিয়ে পা সারিয়ে নিয়ে বেরোব? তা হলে তো প্ল্যানে আবার বদল আনতে হবে! … মোটরসাইকেলের কী হবে? যা-ই হোক, ক্রমশ বুঝতে পারছি, পায়ের যা অবস্থা, হয় লিগামেন্ট, নয় হাড় – কিছু একটা ড্যামেজ হয়েছে। হয় চিড় ধরেছে, নয় ভেঙেছে। একেবারে কিছু হয় নি, এমনটা নয়। কোনওরকমে চলছি, পৌঁছতেই হবে আরও পঁচাত্তর কিলোমিটার। এই রকমের ডাউনহিল হলে ব্যাপারটা খুব কষ্টকর কিছু নয়। কিন্তু তার পরে কী? কী করব? অন্তত গৌহাটি না পৌঁছলে তো মোটরসাইকেলের কোনও গতি করা যাবে না!

    দিরাং তখন আর বারো কিলোমিটার, হেলমেটের মধ্যে আবার ফোন বাজল, গেছোদাদা। “কতদূর পৌঁছলে? সব ঠিকঠাক?” বলতেই হল যে, না, সব বোধ হয় ঠিকঠাক নেই, গাড়ি-লাগেজ-ক্যামেরা-হেলমেট সব অক্ষত থাকলেও বাঁ পায়ের পাতায় বেজায় চোট লেগেছে, এক একবার গীয়ার বদলাতে গেলেই মনে হচ্ছে পৃথিবী উলটে পড়ছে আমার ঘাড়ে, কোনওরকমে ক্লাচ-ব্রেকে সামলে চলছি, দিরাং আর বারো কিলোমিটার দূরে।

    গেছোদাদা, অ্যাজ এক্সপেক্টেড, শুনে পুরো চমকে চ। বাকি পথটাও আমি টেনে দিতে পারব জেনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, তুমি পৌঁছও, আমি ঐ হাসপাতালেই বলে রাখছি, পৌঁছনোমাত্র তোমার পায়ের যত্ন নেওয়া হবে – এক্সরে ইত্যাদি করে যা দরকার, ওখানেই করে দেওয়া হবে। ওখানে অর্থোপেডিক সার্জন আছেন, আমি চিনি, আমি খবর দিয়ে রাখছি। তুমি শুধু ওখানে গিয়ে আমাকে একবার ফোন করে জানাবে।

    কথা বলতে বলতেই আরও কিলোমিটারদুয়েক পেরিয়ে এলাম। দিরাং গ্রাম চলে এল একটু পরেই, সেই হোমস্টে-ও পেরিয়ে গেলাম যেখানে আসার দিন থেকেছিলাম, পরের স্টপেজ বমডিলা।

    রাস্তা নিচের দিকেই নামছে – ডিসেন্ড, কিন্তু মাঝেমধ্যে একটু অ্যাসেন্ডও আছে বৈকি। দূর থেকে দেখতে পেলে ক্লাচ ব্রেকের সহায়তায় ফিফথ গীয়ার দিয়েই ধীরে ধীরে উঠতে উঠতে স্পিড বাড়িয়ে নিচ্ছি, কিন্তু একটা জায়গায় গিয়ে আর পারলাম না। সামান্য একটা স্ট্রেচ, সেখানে রাস্তাটা একটু খাড়াই উঠে গেছে একটা বাঁকের মুখ থেকে, ক্লাচ আর সামলাতে পারল না, গাড়ি গেল বন্ধ হয়ে।

    কিচ্ছু করার নেই, আবার সেই অমানুষিক যন্ত্রণা সইতে হবে। সময় নিয়ে, একটা একটা করে গীয়ার নামালাম, ফার্স্ট গীয়ার পর্যন্ত। গীয়ার ডাউন করা তাও সহজ। আবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একটু একটু করে এগোলাম, আবার একটা একটা করে গীয়ার আপ, পায়ের পাতা মনে হচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে, ঘাম জমে গেছে সারা শরীরে।

    রূপা পৌঁছলাম বিকেল প্রায় সাড়ে তিনটে নাগাদ, এর মাঝে গাড়ি আরও দুবার এরকম বন্ধ হয়ে গেছে চড়াইয়ের মুখে, আর প্রত্যেকবারই আমাকে এই রকম যন্ত্রণা সহ্য করে একটা একটা করে গীয়ার আপ করতে হয়েছে।

    রূপা পৌঁছে ম্যাপ ফলো করতে করতে পৌঁছলাম একটা নদীর ওপর ছোট্ট ব্রিজের ধারে, ফোর্থ গীয়ারে আছি, থামা যাবে না, গীয়ার নামানো ওঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে, অন দ্য মুভ বুঝতে পারছি না, ব্রিজ পেরিয়ে অন্য দিকের রাস্তা নিতে হবে, না নদী বরাবর এদিকের রাস্তা ধরেই যাব। যা থাকে কপালে, ভেবে নদী পেরিয়েই গেলাম, খানিক এগোতেই দেখলাম জিপিএস ঘেঁটে গেল, এবং আগের “বারো কিলোমিটার বাকি” বদলে গিয়ে দেখাতে থাকল “চোদ্দ কিলোমিটার বাকি”।

    গেলাম প্রায় দুই কিলোমিটার – মাঝে এক জায়গায় বাঁদিকে টার্ন দেখাচ্ছে, কিন্তু সেখানে কোনও বাঁদিকের রাস্তাই নেই, ঝোপজঙ্গল। পৌনে চারটে বেজে গেছে, দিনের আলো কমে আসছে দ্রুত। কী করা যায়? … একটু পেছনেই একটা মিলিটারি এসট্যাবলিশমেন্ট পেরিয়ে এসেছি, মাত্র দুশো মিটার পেছনে, ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করব?

    মোটরসাইকেল ঘোরালাম, বাঁ পা মাটিতে রাখলেই অল্প যন্ত্রণা হচ্ছে, যতটা সম্ভব ডানপায়ের ওপর ভর রেখে ঘোরালাম। সমস্যাটা জন্মগত। আমি লেফটি, বাঁ-হাতি। যদিও ছোটবেলায় “মা-সরস্বতী নাগ কব্বেন” এই অজুহাতে আমাকে জোর করেই ডানহাতে লেখা শেখানো হয়েছে, তাই লেখা বাদে বাকি সমস্ত কাজই আমি বাঁ-হাতে এবং বাঁ-পায়ে সামলে থাকি, ফলে আমার ডান হাত এবং ডান পা বাঁ-দিকের তুলনায় একটু কমজোরি। যাই হোক, ফিরে গেলাম সেই মিলিটারি এসট্যাবলিশমেন্টের সামনে। রাজপুতানা রাইফেলস, নাকি রাজস্থান রয়্যালস, কিছু একটা নাম লেখা ছিল গেটে। সামনে সেন্ট্রিকে জিজ্ঞেস করাতে সে ডাহুং মিলিটারি হসপিটাল চিনতে পারল না, বলল, এদিকে তো কিছু নেই, সে তো নদীর ওপাড়ে।

    গেছোদাদাকে ফোন করলাম, বললাম, একটু কথা বলে বুঝিয়ে দাও কোথায় আছি, আর এখান থেকে কীভাবে যেতে হবে। গেছোদাদার বোধ হয় সেদিনকার কাজকর্ম আমি একাই চৌপাট করে দিয়েছিলাম। সে ধৈর্য ধরে সেন্ট্রির সাথে কথা বলল, বুঝল অবস্থানটা। প্রতিটা মিলিটারি হাসপাতালেরই একটা নম্বর আছে, সেই নম্বরই মূলত রেফার করে আর্মির লোকজন, নম্বর বলতেই সেন্ট্রি বুঝে গেল, হাঁজি হাঁজি, ম্যায় ইনকো সমঝা দেতা হুঁ, জয়হিন্দ সার, বলে ফোন আমাকে ফেরত দিয়ে বলল, যে রাস্তায় এসেছেন, সেই রাস্তায় ফিরে যান, নদী পেরিয়ে ডানদিকের রাস্তা নেবেন (মানে এদিক থেকে দেখলে, আমি নদীর ওপাড়ে বাঁদিকের রাস্তা ধরে এসেছি, আমার উচিত ছিল ব্রিজ না পেরিয়ে সোজা এগিয়ে যাওয়া নদী বরাবর)।

    সেন্ট্রিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার ফেরার রাস্তা ধরলাম। শেষবারের মত দাঁতে দাঁত চেপে একটা একটা করে গীয়ার তুলতে হল, কিচ্ছু করার নেই। আমার জার্নি মনে হচ্ছে এখানেই শেষ হল, মনকে তৈরি করছি ডাক্তারের মুখ থেকে সেই কথাটা ফাইনালি শোনার জন্য। ভেবেছিলাম জিরোতে পৌঁছলে হয় তো ভালো না-লাগার ব্যামোটা কাটবে, জিরো ভ্যালি শুনেছি খুব, খুব সুন্দর, যাওয়া হবে না তা হলে?

    জিপিএস আর ভুল করল না, নদী পেরিয়ে ডানদিক নিতেই আবার সোজা রাস্তা দেখাতে থাকল, আর এই রাস্তা পুরোটাই ডিসেন্ডিং, ফলে চালাতে তেমন কোনও অসুবিধে হল না, একদম সোজা সেই মিলিটারি হাসপাতালের গেটে এসে দাঁড়ালাম, সামনের তোরণে বড় বড় করে লেখা হাসপাতালের নাম আর নম্বর। সেন্ট্রিকে বললাম, আমার আজ এখানে থাকার কথা আছে, সিও কর্ণেল আগরওয়ালের গেস্ট …

    সেন্ট্রি শুধু জিজ্ঞেস করল, আপ কা নাম? নাম বলতেই বলল, সিধা চলা যাইয়ে, অফিসার্স ক্লাব আছে সামনে, ওর পাশেই গেস্ট হাউস। আড়চোখে দেখলাম, সেন্ট্রির হাতে একটা চিরকুট, তাতে আমার নাম আর গাড়ির নম্বর লেখা।

    দিনের আলো তখন শেষবারের মত দেখা যাচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি অন্ধকার জাঁকিয়ে বসছে চারদিকে, মোটরসাইকেল ফার্স্ট গীয়ারে রেখেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম সামনে। একটা তিনমাথার জংশন, সেখানে একটা বোর্ডে লেখা – অনেককিছুর সঙ্গে – অফিসার্স মেস। ক্লাব তো কিছু দেখলাম না।

    জশবন্ততগড়ের পর এই প্রথম, একশো পঞ্চান্ন কিলোমিটার চালাবার পর, মোটরসাইকেলের সাইড স্ট্যান্ড নামালাম। মোটরসাইকেল থেকে নামতে সাহস করলাম। নামতে হবে সেই বাঁদিক দিয়েই – কারণ সাইড স্ট্যান্ডটা বাঁ দিকেই। কোনও রকমে তো নামলাম, দাঁড়াতে গিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম, বাঁপায়ের পাতায় জোর পাচ্ছি না। যদিও জুতোর ভেতরে আঙুল বাঁকাতে পারছি, কিন্তু পায়ের পাতা বাঁদিকে মুড়তে গেলেই প্রচণ্ড ব্যথা লাগছে। এখনও শিওর নই, হাড় ভেঙেছে, নাকি লিগামেন্ট ছিঁড়েছে।

    কিন্তু, কাউকেই তো দেখছি না কোথাও – কীভাবে মিস্টার আগরওয়ালের সাথে দেখা করব?

    গেছোদাদাকে আবার ফোন লাগালাম – গেছোদাদা আরেকজনের নাম নিয়ে বলল, ঠিক আছে, আমি গুরলীনকে ফোন করছি, সে এসে তোমাকে গেস্টহাউসে বা ডাক্তার দেখাবার জন্য নিয়ে যাবে। তুমি ওখানেই দাঁড়াও।

    একটা লোক সেই সময়ে ওখান দিয়ে যাচ্ছিল, অল্পবয়েসী ছেলে, সম্ভবত এই হাসপাতালেরই কেউ, ডাক্তার বা অন্য কোনও আর্মির লোক। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, আগরওয়ালজির গেস্ট হয়ে এসেছি, পায়ে চোট লেগেছে রাস্তায়, এখানে কোথায় গেস্টরুম, কোথায় ডাক্তার বসেন, কিছুই জানি না – একটু কোনও ভাবে হেল্প করতে পারবেন?

    লোকটার, শুনেই কেমন থমথমে মুখ হয়ে গেল। উনকো পতা হ্যায় আপ আ গয়ে হো?

    বললাম, না, তাও জানেন না, আমি আসব, এটুকুই উনি জানেন শুধু।

    – তা হলে এইখানেই ওয়েট করুন, যতক্ষণ না উনি কাউকে পাঠান, গেস্টরুম এইদিকে, … বলে একটুখানি পজ দিয়ে …, আগরওয়ালজি নেহি, উনকো কর্ণেল আগরওয়াল বুলাতে হ্যায় হম। কর্ণেল আগরওয়াল বোলা কিজিয়ে।

    উফ্‌ফ্‌ এই আর্মির ব্যাগেজ! কর্ণেল বলি নি বলে গোঁসা হয়েছে। কিন্তু কিছু করার নেই, এক ঠ্যাং খোঁড়া এখন। চুপ করে হজম করলাম, লোকটা ট্র্যাকসুট পরে ছিল, সান্ধ্য জগিংয়ে বেরিয়েছিল হয় তো, সে চলে গেল আমাকে ফেলে, আমি তখন হুব্বা হয়ে ভাবছি এইবারে কাকে ডাকা যায় – ঠিক তক্ষুনি দুটি লোক সমেত একজন পরমাসুন্দরী মহিলা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আপনিই কি সিকি?

    হাতে চাঁদ পেলাম। সঙ্গের দুজন লোকের একজন একটা চেয়ার নিয়ে এল, বসলাম, বৃত্তান্ত বললাম, মহিলাটির নামই গুরলীন, সে বলল – অ্যাম্বুলেন্স আসছে, আপনি বসুন, এরা আপনাকে এক্সরের জন্য লেখাতে নিয়ে যাবে। জুতো খুলতে পারবেন?

    জুতো খুলতে তেমন সমস্যা হল না, বাঁ পায়ের জুতো খুললাম, মোজা খুলতে চোখে দেখে বুঝলাম, পায়ের পাতা পুরো ফুলে গেছে, সামনে থেকে পেছনে গোড়ালি পর্যন্ত। লোকদুটোই বলল, আপনার বাইকের চাবি দিন, আমরা লাগেজ খুলে সব আপনার ঘরে রেখে দিচ্ছি, আপনি এক্সরে করিয়ে এসে ঘরে রেস্ট করুন।

    অলিভ সবুজ রঙের একটা প্রকাণ্ড ট্রাক এসে দাঁড়াল। ওটাই অ্যাম্বুলেন্স, তাতে ওঠার খাড়াই খাড়াই তিনটে সিঁড়ি। আমি ওঠার মত অবস্থায় নেই – অতএব, সঙ্গের লোকদুজন আমার সহায় হল। জীবনে প্রথম কারুর কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করছি, চূড়ান্ত অস্বস্তি লাগছে, কিন্তু আপাতত আমি নিরুপায়। হাঁচোড় পাঁচোড় করে উঠলাম অ্যাম্বুলেন্সরুপী ট্রাকে। ট্রাক হাসপাতাল কম্পাউন্ড থেকে বেরিয়ে বাইরের রাস্তায় পড়েই সামনের আরেকটা বিল্ডিংয়ে ঢুকল। এইখানে অর্থোপেডিক ডাক্তার বসেন। সঙ্গের লোকদুটির একজন আমার জন্য ফাইল বানিয়ে দিল, খানিকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাক্তারের কাছে গেলাম, ডাক্তার খুবই সদাশয় টাইপের ব্যক্তি, কীভাবে দিল্লি থেকে কতদিনে এসেছি, কোথায় কোথায় গেছি, কোথায় কোথায় যাবার প্ল্যান ছিল – সবই জানলেন, জেনে এক্সরে-র জন্য লিখে দিলেন।

    এক্স-রে হবে মিলিটারি হাসপাতালে, যেখান থেকে আমি এলাম। অতএব, বাইরে এসে আবার ট্রাকে চড়ে বসা, ফিরে এসে আবার নামা, এইবারে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এক্স-রে রুম অবধি পৌঁছনো। সেখানে পায়ের পাতা বেঁকিয়ে মুড়িয়ে চার রকম পজিশনে ছবি তোলা হল। প্লেট দেখে বলল, হ্যাঁ, সামান্য ভেঙেছে তো বটেই।



    ট্যালাস নামে যে হাড়টা, পায়ের গোছের দুদিকে গোল গোল শেপে বোঝা যায় – বাঁ পায়ের বাঁদিকে সেইটা হাল্কা করে একটা চাকলা ভেঙে আলাদা হয়ে গেছে।

    বুঝলাম, আমার এবারের জার্নির লজিকাল এন্ড। এক্স রে নিয়ে আবার গিয়ে বসলাম অ্যাম্বুলেন্সে, অন্য বিল্ডিংয়ে সেই ডাক্তার আবার দেখলেন, বললেন, ফ্র্যাকচার একটা নয়, দুটো, বুড়ো আঙুলের যে হাড়টা, মেটাটারসাল বোন, সেটা দ্বিতীয় আঙুলের হাড়ের সাথে যেখানটায় জুড়ছে, সেইখানেও একটা চিড় ধরেছে। খানিকক্ষণ চিন্তা করে ডাক্তার বললেন, দুটো হাড়ই সেই অর্থে মুভমেন্ট হয় না, আর খুব, খুবই মাইনর ফ্র্যাকচার, ওভার দা টাইম ঠিক হয়ে যাবে, তো আমরা প্লাস্টার করছি না – একটা স্ল্যাব লাগিয়ে দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবে ওতেই।

    আবার অ্যাম্বুলেন্সে বসা, আবার ফিরে আসা মিলিটারি হাসপাতালের বিল্ডিংএ। খানিকটা প্লাস্টারের মতই দেখতে, একটা স্ল্যাব লাগিয়ে দেওয়া হল, মূলত আমার পা-টাকে জ্যাম করে দেওয়া হল, যাতে মুভমেন্ট না হয়।

    এইবারে হুইলচেয়ার। গুরলীন আবার ফিরে এসেছে, সাহায্যকারী লোকদুজনের একজনই তখন ছিল, সে হেঁইয়ো হেঁইয়ো করে ঠেলতে ঠেলতে আমাকে নিয়ে চলল গেস্টরুমের দিকে। পথটা খাড়াই, ঠেলতে একটু কষ্টই হচ্ছিল লোকটার, আর আমি অপরাধবোধে একেবারে মরে যাচ্ছিলাম। এঃ, কারুর সাহায্যে চলবার অভ্যেস যে আমার একেবারে নেই। মাঝে একটা জায়গায় – ঠেলা যাচ্ছিল না বলে আমি এক পায়ে উঠেই পড়লাম হুইলচেয়ার থেকে, তুমি ভাই এগিয়ে নাও, আমি তারপরে বসছি। সে লোকটা হাঁইহাঁই করে আবার আমাকে রিকোয়েস্ট করে বসিয়ে দিল চেয়ারে।

    যাই হোক, পৌঁছলাম গেস্টরুমে। পোর্টাকেবিন স্টাইলে বানানো সুবিশাল একটা রুম। তাতে বিশাল বিছানা, একপাশে সোফাসেট, টিভি, বাথরুম। আমার মোটরসাইকেল থেকে সমস্ত লাগেজ আর প্রথমে খোলা বাঁ-পায়ের একপাটি জুতোমোজা পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা ঘরের এককোণে। টেবিলের ওপর চাবিটা রাখা। গেস্টরুমের সামনেই পার্ক করা মোটরসাইকেল।

    আপাতত এক রাত নয়, অন্তত দু-তিন রাত তো থেকে যেতেই হবে। জীবনে প্রথম পায়ের প্লাস্টার জাতীয় কিছু লাগবার অভিজ্ঞতা। অবশ্য এটা “কাস্ট” নয়, “স্ল্যাব”।

    সিকিনীকে মেসেজ করে বললাম, রূপা পৌঁছে গেছি, এখানে নেটওয়ার্ক খুব খুব খারাপ। কাল সকালে আবার মেসেজ করে জানাব।

    গেছোদাদা প্রথম দিনের জন্য এলাহি ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছে। খানিক বাদেই এসে গেল একথালা পকোড়া আর চা। ডিনার আসবে একটু পরে। তবে খাবারের দিকে মন নেই … জানি না, এর পর কী হবে। অনেক, অনেক চিন্তা মাথার মধ্যে তখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
  • bikebaahone | 566712.225.8934.73 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৫381127
  • ঘটনার ঘনঘটা
  • i | 452312.169.90023.66 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৪৬381128
  • এ তো সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার।তারপর কি হোলো?

    প্যাশন আর পারপাস- জাস্ট কালই এই নিয়ে আত্মজার সঙ্গে প্রচুর আলোচনা হল। লেখাটা ওকে পড়াবো।
  • dd | 90045.207.5656.8 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৪381129
  • এ বাব্বা।

    আগের পর্বে সিকি লিখেছিলো "পরের পর্বে টুইস্ট আছে"। আমি ভাবলাম অরুনাচলের কোনো প্রত্যন্ত গ্রামে সিকির কোনো সুন্দরী পাঠিকার সাথে মূলাকাৎ আর তৎসহ মিডলাইব ক্রাইসিসেরও সবেগে পলায়ন - এরম কিছু হবে।

    ওম্মা। এ টুইস্ট তো দেখি ঠ্যাঙে।

    তাও, ভালো হাতে কিছু হয় নি। তাইলে এখন টাইপ করতো কে ?
  • সিকি | 122312.241.782312.12 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:০৭381130
  • ডিডিদা :)))

    আমার সুন্দরী পাঠিকারা কেউ অরুণাচলের প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে না, সব বইমেলায় থাকে।

    পরের কদিন ধরে শুধু সেটাই ভেবেছি, বাঁ পায়ের বদলে ডান পা ভাঙলে কী হত! বাড়ি এসে গাড়িও চালাতে পারতাম না, পুরো ঘরে বসে থাকতে হত। ভাগ্যিস বাঁ পা।

    আই-দিদি,
    সম্মানিত বোধ করছি। এটাই আমার পরম পাওয়া।

    লেখা কিন্তু এখনও শেষ হয় নি, আরও খানিক এগোবে।
  • dc | 7823.62.45900.172 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:১৭381131
  • বাপরে, এই ব্ল্যাক আইস পড়ে বেশ ভয় লাগলো! আমার সাথে বোধায় এক দুবার এমন হয়েছে যে রাস্তায় অনেকটা তেল পড়েছিল, আর না দেখে সেই অয়েল স্লিকের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দিয়েছি আর চাকা সামান্য স্কিড করেছে। তবে সে তো পিচ রাস্তা, সামলে নেওয়া যায়। এরকম ব্ল্যাক আইসের ওপর দিয়ে বাইক চালাতে গেলে কি হতে পারে বুঝতে পারছি।
  • aranya | 3478.160.342312.238 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:৪৭381132
  • ওঃফ, পড়তে পড়তে আমি-ই ঘেমে গেলাম, এই শীতের মধ্যেও। যন্ত্রণার সাথে লড়াই - হ্যাটস অফ।
    এ লেখা পড়লে বইমেলায় সুন্দরী পাঠিকার বান ডাকবে :-)
  • সুকি | 230123.142.5667.138 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:১২381133
  • দারুণ হছে লেখা, পা আশা করি ঠিক আছে এখন
  • সিকি | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:০২381134
  • এইমাত্র প্লাস্টার কাটিয়ে এলাম। :)
  • সুকি | 230123.142.5667.138 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:২৩381135
  • এদিকে আমি আজ ব্যান্ডেল চার্চ আর ইমামবাড়া ঘুরে এলুম
  • শঙ্খ | 2345.110.564512.188 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৪২381136
  • আশিকি সিকির পতন ও মূর্চ্ছা: একটি সার্জিক্যাল ওডিসি

    অথবা

    ব্ল্যাক আইস ও বইমেলা সুন্দরী একটি সানি কাঁবা ওডিসি

    ইলাস্ট্রেশনে থাকবে বাইকের চাকায় প্লাস্টার বাঁধা।

    ন্যান, সিকির পরবর্তী বইয়ের মলাট রেডি।
  • dc | 7823.62.230112.32 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:১৯381138
  • এরকম নামও দেওয়া যায়ঃ হাউ টু কাট ব্ল্যাক আইস উইথ কুয়াং গ্রেড মার্ক ইলেভেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন