গরম লাগছিল প্রচন্ড। কিভাবে এই জ্বালা থেকে মুক্তি পাই, সাজেশন চাওয়ায় বিল্লি তৎক্ষণাৎ বললো, তিব্বত গেলেই পারো। আমরা হাঁ হাঁ করে উঠলাম, "বলে কী! তিব্বত? যাওয়ার জোগাড় করতে করতেই তো ঘেমে নেয়ে মরে যাব!" বিল্লি একটুও না দমে বললো, "সে মরতে পারো, কিন্তু একবার চেষ্টা চরিত্তির করে যদি পৌঁছে যাও তিব্বতে, দেখবে এ জীবনের মতো গরম উধাও হয়ে গেছে! তাপ্পর যতই যাও বীরভূম বা আফ্রিকা, গরম আর লাগবে না। এমনকি বরাত থাকলে পরের জন্মে গ্রিনল্যান্ডেও জন্ম হতে পারে।" ... ...
সুজিত ডাক্তার চোঁয়া ঢেঁকুরের রুগী দেখতে এসে আধঘন্টার মধ্যে লিভার ক্যান্সার প্রেডিক্ট করে "খুবই ভয়ের ব্যাপার" বলে শেষ করেছেন। সেই থেকে ভিড় জমে গেছে সান্যালের আঙিনায়; গুমরে-ডুকরে বিলাপ উঠছে -- ডাক্তারবুড়োর সহজ কালমেঘের অঙ্কে যে সমস্যা মিটতে পারতো, এখন মনে হচ্ছে অঙ্কলজিস্ট ছাড়া গতি নেই। মুড়িমাসিও নাকিসুরে কেঁদে বললো, তার মুড়ির ধুলো চোখে ঢুকে করকর করছিল, সুজিত ডাক্তার দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক ঝলক দেখে নাকি বলেছে, রেটিনা ফেটে গেছে। ... ...
গল্প ... ...
কফিহাউসের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই মনটা ভাল হয়ে গেল ধীমানের। কফিহাউস বলতে যাদবপুর কফিহাউস। কলকাতায় কফিহাউস মোট তিনটে, অন্তত ধীমান তাই জানে। কিন্তু অন্য দুটো কফিহাউস ধীমানের তেমন পছন্দ নয়। কলেজ স্ট্রীটের কফিহাউসটা একটা প্রাগৈতিহাসিক, অন্ধকার গুহার মত মনে হয় আর সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ-এরটায় ঢুকলেই মনে হয় কোন অফিসের ক্যান্টিন। যাদবপুর কফিহাউস সে তুলনায় অনেক বেশী খোলামেলা, এখানে অনেক বেশী আলো হাওয়া। ... ...
ফুলবানু বাস-টারমিনাল এলাকাতে থাকতেই পছন্দ করে। বাস-টারমিনালে ঢুকতে দশ টাকা দিতে হয় বটে, তবে এখানে আয় ভালো। কল্যাণপুর থেকে শত শত বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু ওখানকার মানুষগুলো দান-খয়রাতে তেমন পটু না। হাতটা বড়িয়ে দিলেই রেগে যায়। গাবতলী বাস-টারমিনালই তার পছন্দ। এখানকার মানুষগুলোর বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায় এরা কল্যাণপুরের মানুষগুলোর চেয়ে অর্থবিত্তে কমা। তবুও এরাই বাসে ওঠার আগে না হলেও দু’ টাকা দেয়। জ্ঞান হওয়া অবধি সে এখানেই। ... ...
বাজার করাটা নিঃসন্দেহে একটা শিল্প। তাতে বিশেষ কারিগরি দক্ষতা লাগে, ইচ্ছা লাগে, ধৈর্য লাগে, বুদ্ধি, দুষ্টবুদ্ধি লাগে, অতি দ্রুত অঙ্ক-কষার ক্ষমতা লাগে। বাপরে, এত কিছু যদি আমার এই এক দেহতেই থাকে, তাহলে বাজার কেন করব বাপু, অ্যাষ্ট্রনট হব, চাঁদে যাব, মঙ্গলে যাব। কিন্তু তা বললে চলবে কেন? বাজার অতি বিষম বস্তু, না করলে পেটে কিছু পড়বে না, তবে কিনা যাঁরা গৃহিণী নিয়ে ঘর করেন তাঁদের অবশ্য পেটে না পড়লেও পিঠে ঠিক পড়বে। ... ...
তিনি বুঝতে পারেন শেষ হাসিটা পর্দা থেকে বেরিয়ে, তাঁর মাথার ওপর দিয়ে গিয়ে ব্যালকনি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সুবিনয়ের মনে হয় শহরের সমস্ত বাড়ির জানলা, ব্যালকনি দিয়ে হাসিরা বেরিয়ে আসছে। শেষ হাসি। ... ...
আজ হঠাৎ কী মনে করে বিলু ঠিক করল আজ সে গণেশ গুহ হয়েই ফোনের উত্তর দেবে। ফোন তুলে বলল, বলুন। উল্টোদিক থেকে সেই চেনা গলা ভেসে আসে, “গণেশ গুহ বলছেন?” “বলছি”, বিলু উত্তর দেয়। মহিলা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেন, “ গণেশ বাবু, আমার বন্ধু সমরেশের কাছে আপনার কাজের প্রশংসা শুনেছি। ও একবার আপনার সাহায্য নিয়েছিল। আমিও একটা খুন করাতে চাই। আপনার যা রেট তাই দেব”। কথাটা শুনে বিলু খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ফোন নিয়ে, কী বলবে বুঝতে না পেরে। ফোনের ওদিক থেকে “হ্যালো, গণেশবাবু, হ্যালো…” ভেসে আসতে থাকে। ... ...
কত বছর পর গ্রামে ফেরা! নিরানন্দ, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। শীতকাল, তায় শেষ কয়েকটা সপ্তাহ হলো বেজায় বরফ পড়ছে। পথরেখা দেখা যায়না। রাস্তার দু'পাশে, দূরের পাহাড়ের গায়ে - মোটা বরফের কম্বল। আকাশে কালো মেঘ, মেঘের ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা বরফের ছিটেফোঁটা। শেষ বিকেলে পড়া শুরু হল যখন, তখন সারারাত আর থামবে না। ... ...
বাপের কথা জবার মনে পড়ে অস্পষ্ট, রাতে দেখা স্বপ্ন যেমন সকালে কিছুটা মনে পড়ে, আবার পরক্ষণেই মানস থেকে দ্রুত সরে যায়- তেমনি। গত বছর মা-ও চলে গেল পেটের ব্যথা নিয়ে। প্রথমে গ্রাম ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথা কমার ওষুধ দেয়। দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, খাওয়া-দাওয়া আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে, একসময় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। জবার চাচা কবিরাজ ডেকে আনে, তিনি শহরের হাসপাতালে নিতে বলেন, হাসপাতালে কে নিয়ে যাবে, চিকিৎসা খরচই-বা কে দিবে; এক সকালে জবার হাউমাউ শুনে চাচা, চাচি, তাদের ছেলেমেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারে জবাকে একা রেখে তার মা-ও পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। ... ...
গপ্পো ... ...
লরার সাথে আমার আলাপ হয়েছিল নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে এক শীতকালীন সেমেস্টারে; আমরা দুজনেই কনভেক্স অপ্টিমাইজেশনের একটা কোর্স নিয়েছিলাম আর কোর্স প্রজেক্টে আমি ছিলাম ওর পার্টনার। লরা এসেছিল এল.এ. থেকে। নিউইয়র্কের শীত আমি পছন্দ করিনা, সে প্রায়ই বলত। ... ...
সতেরো বছর বয়সে তার ভারী ওজনের শরীরটা ও একটা ভুলভাল মেকআপ সেন্স সঙ্গে করে মনিকা ম্যাকন প্রথম টরন্টো আসে ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে। টিনএজকালে তাকে বেশ সাধারণ দেখতে ছিল আর তখনও তার কোনো বয়ফ্রেন্ড জোটেনি। একমাত্র হাসলে তাকে কিছুটা সুন্দর দেখাত, কিন্তু সে প্রায় সবসময়ই মুখ গম্ভীর করে থাকত। ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো সে মন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করত, যদিও মাঝারিমানের ছাত্রী হওয়ায় অনেককিছুই তার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যেত। ... ...
গাড়ির আলোয় যতটা দেখা যাচ্ছিল, তার বাইরে কুয়াশা। প্রদীপ আর বিজন টর্চ জ্বেলে আশে পাশে দেখছিল। এদিক ওদিক কুয়াশা ফুঁড়ে ঝোপঝাড় বেরিয়েছে। ফণিমনসার মত কাঁটা গাছ। সেইখানে অন্ধকারের একটা স্তূপ পড়ে আছে যেন। বিজনের বুক কেঁপে উঠল। ... ...
সে রাতে বহু লোকেরই ভৌগোলিক অবস্থান গুলিয়ে যেতে থাকে। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ এ ওর ঘাড়ে চড়ে এক রাতে মফস্সলে মহাপৃথিবীর জন্ম হয়। ... ...
রাঁধুনি মৃদু হাসলেন। গ্রীষ্মের দুপুরের লু-এর মতন সেই হাসি। ডানহাত দিয়ে বাঁ-হাতের ব্লাউজের হাতা কনুই অবধি তুলে দেখালেন। দেখলাম - ব্লাউজের নিচের হাতের চামড়ার রঙ বাকি দেহের, মুখের রঙের চেয়ে একেবারে আলাদা - ফ্যাটফ্যাটে সাদা। ... ...