রূপকথা, আজকের দিনের। মিতুলের অভিযান। অভি তারার আলো বুকে নিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার। আগে প্রকাশিত। এখানে তুলে আনলাম। ... ...
সিনেমাই হোক বা চিড়িয়াখানা- বরাবরই কুমীরদের আধখোলা চোখ মেলে রোদে শুয়ে থাকতে দেখেছি, কখনও বা গাছের গুঁড়ির মতো জলে ভেসে থাকতে। এই মুহূর্তে টিভির পর্দা জুড়ে বিশাল কুমীরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল, এমনি অবিশ্বাস্য সে দৃশ্য যে মনে হল, দম দেওয়া এক বিশাল খেলনা স্লো মোশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লম্বা মোটা ল্যাজ, ছোটো ছোটো হাত পা ,দাঁত বেরিয়ে আছে- তার চকচকে পিঠে বিকেলের রোদ। এ দরজা থেকে ও বাড়ি সিঁড়ি, উঠানে রাখা লাল নীল সাইকেল, ঝাঁটা বালতি পেরিয়ে সে হাঁটছিল, গৃহস্থের দোরগোড়ায় ঘুরছিল, থামছিল, আবার ঘুরছিল। ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে, বারান্দায় মানুষের ভীড়, সবার হাতে মোবাইল, ভিডিও নেওয়া চলছে; ভিতরকণিকার দিক থেকে কোনোভাবে চলে এসেছে- টিভিতে বলছিল। ... ...
তা এমনই এক শীতের সকালে আমি কোথায় যেন যাচ্ছিলাম। আমাদের ওদিকে তখন অত অটো টোটো চলত না, ট্রেকার বলে এক ধরনের আধা জিপগাড়ি ধরনের গাড়ি শাটল ট্যাক্সির মত চলত। আমি কচি ছেলে, দুইপাশের গাবদা মুষকো দুই লোকের চাপে দলামোচা হয়ে আছি এমন সময় চোখে পড়ল রিয়ার ভিউ মিররে একটা মিষ্টি মত মেয়ের মুখ। বেশ শ্যামলা চেহারা, গরুর মত আয়ত দুখানি চোখ। সাদা শার্ট আর নীল জিনসের প্যান্ট পরেছে, মাথায় হাতে বোনা একটা বৌ টুপি। আমি লাজুক মুখে টুপুস করে মিটমিটিয়ে তাকালুম তার দিকে, দেখি সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ... ...
এক বৃদ্ধ অসুস্থ ছিলেন বলে, কয়েকমাস পরে পেনশন তুলতে গেছেন সরকারি আপিসে। গিয়ে শোনেন আইন বদলে গেছে। এবার শুধু হাজিরা দিলেই হবেনা, কাগজ লাগবে। কী কাগজ? কর্তব্যরত কেরানি বললেন, জ্যান্ত সার্টিফিকেট।- সেটা আবার কী? কেরানি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গীতে বললেন, ডেথ সার্টিফিকেট শোনেননি? শ্মশানে দরকার হয়? সেইরকম জ্যান্ত সার্টিফিকেট লাগবে। নইলে সরকার জানবে কীকরে আপনি জ্যান্ত আছেন? যান কাগজ নিয়ে আসুন। ... ...
বাইরের ঘরের এই সবুজ রঙের সোফাটা এমনিতে দেখলে মনে হয় একবারে কালচে শ্যাওলামাখা একটা পাথরের স্ল্যাব। হাত রাখলেও মনে হয়, ওপরে চাদর পাতা কঠিন কাঠের বেঞ্চ। কিন্তু জিনিসটার ওপর শুলেই কাঠিন্য আর বোঝা যায় না, আচ্ছাদনটা ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। তারপর একসময় নিলয় ডুবে যায় সোফার ভেতর। আর শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করলে এই পুরো ডুবে যাওয়াটা এত তাড়াতাড়ি হয় যে নিলয় ইদানীং আলাদা করে কিছু বুঝতেও পারে না। ... ...
সকালে উঠে মশারি সরিয়ে নামতেই চোখ গেল সামনে রাখা টেবিলের দিকে। আর যেতেই মাথাটা গরম হয়ে গেল অবিনাশবাবুর। কাল একটু রাতের দিকে মাসকাবারি মুদির জিনিসপত্র ডেলিভারি দিয়েছিল। তুলে রাখার ইচ্ছে হয় নি বলে টেবিলের ওপর সব রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সানলাইট সাবান ছিল, মশলা, তেল আর তার সঙ্গে পাঁচ কেজি চাল। বাকি সব ঠিক থাকলেও চালের প্যাকেটের প্লাস্টিক কুটিকুটি করে কাটা, চাল ছড়িয়ে আছে টেবিলের ওপর যার কিছুটা মেঝেতেও গড়িয়ে নেমেছে। ইঁদুর! ... ...
বাইরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামছে। জীবন্ত সম্প্রচারের সময় হয়ে এল। এই গুহাতে কোনো প্রাকৃতিক আলো , হাওয়া আসে না। গুহার নকল সিলিংকে পেঁচিয়ে শুয়ে আছে গোলাপি এলইডি আলোকলতা। তাদের ফুলের আভায় সারা ঘরে এক অদ্ভুত হালকা আলো আঁধারির খেলা। ... ...
ভাষাদিবসের দিনে এক পুরোনো গালগপ্পো ... ...
একজিট নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম শুনশান গলিতে। এফ এম বন্ধ করে দিলে এখন শুধু মেটাল বডি আর জলের ঠোকাঠুকি, ওয়াইপারের সুইশ সোয়াশ, সুইশ সোয়াশ আর রেনওয়াটার পাইপ থেকে গবগব করে জল বেরোনোর ননস্টপ আওয়াজ। লাল, হলুদ, নীল, সবুজ একতলা, দোতলা, তিনতলা বাড়ির দেওয়াল বেয়ে জল নামছিল নিঃশব্দে, গড়ানো ঢালের গলি বেয়ে বড় রাস্তায় পড়ছিল। ওদিকের দেওয়াল ঘেঁষে একটা শেড, তার পাশে আগাগোড়া প্লাস্টিক ঢাকা ঠ্যালাগাড়ি- ট্রেনে কাটা পড়া ডেডবডি যেন। শিউলিদের গলির কথা মনে হ'ল। ... ...
প্রথমে কিছু গগনবিদারি শ্লোগানে গা গরম করে নিয়ে মাইকটা এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল জনপ্রিয় সুরে দল ও নেতার বন্দনাগীতিতে। ইতিমধ্যেই নেতাকর্মীদের ভীড়ে জায়গাটা ভরে গেছে। ওদিকে আরো কিছু মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ কোণাটিতে দাঁড়িয়ে গেছে; অবশ্য নিরাপত্তারক্ষীদের হুংকারে তাদের মাঝেমধ্যে কষ্টকর দিকবদল করতে হচ্ছে! সভার প্রবেশদ্বারটা প্রশস্ত হওয়ায় কোণাগুলি একটু বেশিই বেঁকে গেছে, না হলে সামান্য লম্ফ-ঝম্ফ - এ আর কী এমন কঠিন কাজ! ... ...
জোলো বাতাসে কুয়াশার ঘেরাটোপকে আমার বাপের বাড়ির মশারির মতো লাগছিল, এই পথঘাট ফলত স্বপ্নের এবং অবাস্তব - মানুষজন যেন জোব্বা পরা মরুবাসী অথবা মেরুপ্রদেশের; কুয়াশার সর ক্রমশ এমন ঘন আর রহস্যময় হয়ে উঠছিল যে চেনা পাড়াকে অজানা দ্বীপ বোধ হচ্ছিল - কুয়াশা ফুঁড়ে যে কোনো মুহূর্তেই বেরিয়ে আসতে পারে প্রকাণ্ড কাছিম অথবা ক্ষুদে পেঙ্গুইনের দল, অ্যালবাট্রসের পাখার ঝাপট লাগতে পারে গায়ে। ... ...
ফাঁকা রাস্তার মাথার ওপরে ঘন নীল মেঘ উঠছে, উল্টোদিকের বাড়ির দোতলায় আলো জ্বলল, আর যে পাখি তিনটে এতক্ষণ টেলিফোনের তারে বসেছিল, তারা উড়ে গেল এইমাত্র ; দূর থেকে কিছু শব্দ এগিয়ে আসছিল যেন পথচারীদের সেই সব কথারা মাঝখানের এই ফাঁকা রাস্তাটুকু পেরিয়ে ডানদিকে যাবে কিম্বা উল্টোটা- ফলে এই জনহীন পথের দু’ দিকেই কিছু দৃশ্য ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছিল অথবা তৈরি হচ্ছিল। এখান থেকে যে রাস্তাটুকু দেখা যায় তা এমনই চৌকো আর ফাঁকা যেন এখনই নাটক শুরু পারে সেখানে - ছোটো, একাঙ্ক কোনো নাটক। ... ...
দুইদিন পর রোজিনা আচলের কাপড় ঘঁষতে ঘঁষতে যখন ছেলের জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনা করা শুরু করেছিল, রওশানারা তাকে থামিয়ে দিয়ে কণ্ঠটা চিকুন করে জানতে চেয়েছিলেন, “আগে ক, পোলার কুনো ব্যারাম আছেনি?” এক গাল হেসে দিয়ে রোজিনা মোটা কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিল, “ যেই হারে ব্যায়াম করে, ব্যারাম আইবো কোথ থনে? নিশ্চিন্ত থাহেন ফুবুয়াম্মা, পোলারে একটা কাশ দিতেও হুনে নাই কেউ কহনো। ‘’ ... ...
এই লেখাটির প্রথম পর্বটি না পড়ে - - - দ্বিতীয় পর্বটি পড়া একদমই বাঞ্ছনীয় নয় - - - তাতে ছন্দপতন অনিবার্য ... ...
"কোনো মেসেজ এলে তোমরা যখন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে হাসিহাসি মুখে কিছু টাইপ করো , সেই মুহূর্তের ছবি কেউ তোমাকে তুলে দেখিয়েছে? " প্রশ্ন শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখি নিঃসঙ্গতা বেসিনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখেচোখে রাগের ছাপ। রাগলে নিঃসঙ্গতার সুন্দর গোল মুখ চৌকো হয়ে যায়। নাম না করতেই এসে গেছে , অবশ্য এমনিতেও অনেকদিন বাঁচবে, নিঃসঙ্গতা তো অবিনশ্বর। ... ...
এ্যাঁ! তিনিবাবু! এটা আবার কারুর নাম হয় নাকি? আমি, আপনি, উনি, তিনি এসব তো সর্বসাধারণের যে কেউ হতে পারে, অর্থাৎ সর্বনাম। পরিবর্তনশীলও বটে। যেমন ধরুন, আপনি আমার কাছে আপনি কিন্তু আপনি আপনার কাছে আমি। আমরা তো সেই অর্থে সবাই একই সময়ে আমি, আপনি, উনি, তিনি হয়ে বিরাজ করি। ... ...
মেনকা নিশ্চয় হ্যালুসিনেট করছিল। এইসব ডিজিটাল সহকারীদের মাঝে মাঝে গল্প বলতে বললে একদম বানিয়ে বানিয়ে এসব গাঁজাখুরি গল্প বলে। ... ...