মেনকা নিশ্চয় হ্যালুসিনেট করছিল। এইসব ডিজিটাল সহকারীদের মাঝে মাঝে গল্প বলতে বললে একদম বানিয়ে বানিয়ে এসব গাঁজাখুরি গল্প বলে। ... ...
“ইস্ কী গরম! কতবার না বলছি, জানালাগুলো খোলা রাখবা! আলো-বাতাস নাই ঘরটাতে, এই জন্যই তো অসুখ-বিসুখ ছাড়ে না’’ বলেই পর্দাটা টানতে শুরু করলো সুহা। ওর মা এভাবে বলতো, এখনো বলে, সংসার থা করে জাঁকিয়ে বসেছে, অথচ এখনো ভাইয়ের উপর শাসনটুকু চালানো চাই। এদিকে পর্দাটা ছিল ভারি, আর সুহার কোমল হাতে তা পুরো মেলতে সময় নিচ্ছিল। ওদিকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন টুকরো জোড়া লেগে লেগে একটি আস্ত বাড়ি গড়ে উঠছিল জানালার ওপারে। যখন পুরো পর্দাটা সরে গেল, একটি অচেনা জগতের দরজা যেন খুলে গেল আমার চোখের সামনে। এই ঘোর অমাবস্যাতেও সেখানে আলোর বন্যা। তার তীব্র প্রদাহ শুষে নিল আমার সব, থেমে গেল ভাবনা, চিন্তা, স্পন্দন। শুধু এইটুকু মনে আছে, মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত পৃথিবী আমার উপর চাপা পড়ল যেন। ... ...
জমে উঠেছে এই রেস ভিডিও গেমসের মত। বিচিত্র ব্যাপার, বাসগুলোতে এই কোন লোক নেই, আবার এই লোকে ভর্তি হয়ে গেছে। যেমন, এই মুহূর্তে বাংলামোটরের মোচড়ে যখন দাঁড়িয়ে, তখন কমে গেছে এদের কারো কারো জনবল আশংকাজনক হারে। সিগনালের জ্যাম অস্বাভাবিক দীর্ঘায়িত হচ্ছিল। পেছনে পড়ে থাকা বাসগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল অনন্তকাল ধরে এই স্থানেই বাস করবে। যখন বাঁয়ের বাসটির ভেতর থেকে গলা বাড়িয়ে ডেকে ডেকে লোক ভরা হচ্ছিল আর এক ফাঁকে হেল্পার নেমে পড়েছিল অদূরে জিহবা বেরিয়ে থাকা ডাস্টবিনটার কোনায়, ঐ মেয়ে দুজনের একজন অগ্নিমূর্তি ধারণ করল, আর নিজেদের বাস ড্রাইভারকেই হুংকার ছাড়ল, “এই ছ্যামড়া, সিগ্নাল দেখলেই কি তোর দাঁড়াইতে মন চায়”, পেছন থেকে উৎসাহ পেয়ে এক যুবক বয়সী বলে উঠে ‘হেল্পার হালায় একটা মাদারচোদ! থামলেই মুত আহে’। ... ...
দিল্লির নয়ন-মনোহর গম্বুজের তলে যুবরাজ বুঘরার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ত! সাপের থেকেও পেঁচানো এর প্রাসাদ, ভয়ংকর কুটিল এর খিলান! এদিকে যে খেয়ালী ও আত্মভোলা যুবরাজকে নিয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না, সে-ই তাকেই তিনি পাঠালেন বাংলায়, যার বিদ্রোহের ঘনঘটায় অষ্টপ্রহর শংকিত থাকতো দিল্লীর দরবার। ফরমানটা জারি হওয়ার পর থেকেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বুঘরা; কী জানি কোন অচেনা মুল্লুকে তার বলী হতে যাচ্ছে! কিন্তু যতই এগিয়ে আসছিল একটি নদীবিধৌত সবুজ আঁচল , মন-প্রাণ জুড়িয়ে আসছিল বুঘরার, আর মনে হচ্ছিল, এতদিন বুঝি এর অপেক্ষাতেই ছিলেন! বাংলার প্রকৃতি ছিল খেয়ালি -এমন ঘনঘোর বর্ষা এমন অঝোর ধারায়, এক টানে, এক সুরে - আর কোথাও দেখেননি বুঘরা! খেয়ালি বাংলা ও বুঘরা হয়ে উঠলেন হরিহর আত্মা! আজ সেই আত্মাকেই ছেড়ে দেয়ার কাতর আহবান উঠে এসেছে পিতার কণ্ঠে! কিন্তু কি করে সম্ভব! কি করে! ... ...
প্রায়ই আমায় নিজের ড্রয়ার থেকে গেঞ্জি বার করে বাবার ড্রয়ারে রেখে দিতে হত; আর প্রতিবারই মনে হত, একটি নতুন স্যান্ডো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে বাবার জন্য। কিন্তু তারপরই স্মৃতি থেকে ধুলোর মত উড়ে যেত সেই স্যান্ডো। ... ...
স্নিগ্ধার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে ননদ রূপা। তার কাছে শোনা হয়ে গেছে কয়েদিদের মধ্যে খুনীদের একটু কম সন্দেহের চোখে দেখা হয়। নিতান্ত পেশাদার খুনী না হলে তারা হয়তো উত্তেজনার মূহুর্তে অপরাধ করে ফেলে কিন্তু স্বভাব অপরাধী হয় না। চোররা সবচেয়ে খারাপ। ডাকাতরা মাঝারি। নিখিল আবার ঠিক চোরডাকাত কিছুই নয়। ফরেস্টে কাঠ চুরির কেসে ফেঁসে গেছে। কোন কাঠমাফিয়ার হয়ে জেল খাটতে রাজি হয়েছিল, অর্থের বিনিময়ে। মায়ের অসুখ। টাকার খুব দরকার। ভেবেছিল কিছুদিন কয়েদ খেটে ছাড়া পেয়ে যাবে। তারপর যা হয়, মামলাই উঠছে না।... ... ...
ভালবাসি, ভালবাসি! সবাই এই মুহূর্তে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বিদেশকে। আর সবার ভালোবাসা-ভরা কথা নিষিক্ত করে চলেছে বিদেশকে। খুবই ভাল, ভাল সব কথা। শুনতে শুনতে বিদেশের নিজেরই নিজেকে কেমন অজানা অচেনা মনে হচ্ছে। বাব্বা এত গুণ তার ছিল তাই তো জানত না সে! ... ... ...
একদিনের গল্প, যা আসলে প্রতিদিনেরও... ... ...
উপরে হচ্ছিল উড়াল রেলপথ, আর তাতে করে রাস্তাটিকে ভাঙা হয়েছিল ইচ্ছেমতন একটুও দয়া বা সন্মান না দেখিয়ে। ফলে জায়গায় জায়গায় খানা খন্দ তৈরী হয়েছিল, গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে দেখতে পাওয়া লিকলিকে খন্দগুলোর সাথে এগুলোর পার্থক্য এইটুকুই যে ওরা প্রাকৃতিক, আর এরা কৃত্রিম। ... ...
একা থাকতে কিছুটা ভয়ই পাই আমি। আকাশপাতাল চিন্তা করতে একেবারে ভালবাসি না, তবু ফাঁকা ফ্ল্যাটে একা থাকলে সেসব কীভাবে যেন এসেই যায়। তাদের থেকে পালাতে চাইলেই আমি বাইকে উঠে বসে এক্সিলারেটর ঘোরাই। গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে গলিতে আসতে না আসতেই বুঝতে পারি আমি পালাতে সক্ষম। কারণ বাইক চালাতে চালাতে অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসে না। আসা সম্ভব নয়। এলে, দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ... ...
মেট্রো স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার পথে অটোটা ঠিক পাঁচবার বাঁক নেয় – অমিত হিসেব করে দেখেছে। সুধীন সমাদ্দারের বাড়ি ঠিক তিন নম্বর বাঁকের মুখে। সুধীন সমাদ্দারকে অমিত চেনে না। কিন্তু রোজই দেখে তাকে তাঁর বাড়ির বারান্দায় বসে লিখতে। সুধীন সমাদ্দার ছোট ছোট কবিতা লেখেন আর লিখে বাড়ির দরজা বা বাইরের দেওয়ালে আটকে দেন। তলায় সই – সুধীন সমাদ্দার। ... ...
আজ সেই রাত।পার্কে গিয়ে তাই করি, বেঞ্চটা খুঁজে বার করে বসি । একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে গেছে কেউ বেঞ্চটার ওপর, সেটা দুমড়ে পাশে সরিয়ে দিলাম। পার্কটা ফাঁকা । ঘড়ির দিকে চোখ রাখি, সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে । এখনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। হেলান দিয়ে বেঞ্চে মাথাটা তুলে ওপরে তাকালাম। ঝিকমিক করছে নানারকম তারা। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ সপ্তষিমণ্ডলকে পিছনে রেখে আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। ... ...
মামা উড়নচন্ডি স্বভাবের জন্য শৈশবে তাকে ‘ঘোড়া’ উপাধি দিয়েছিল, সে খুব ক্ষেপে যেত দুষ্টুমির ছলে কেউ এই নামে ডাকলে…. অথচ সে প্রায়ই দাঁড়িয়ে ঘুমোত এবং তা কেউই জানতো না। ছোট থেকেই সে খুব সোজা হাঁটে, একই রকম করে কদম ফেলে; তার চোখ দেখে, সবই তো সরল পথ, যেখানে পথ বেঁকেছে বলে মনে হয়, সেখানেই তো নতুন পথের খোঁজ পেয়ে যায় সে। বেতার তরঙ্গের মত সে সোজা ছুটে, মাঝে মাঝে মহাকাশের কাছে পৌঁছে যায়, বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ সীমায় বাঁধা খেয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীতে। একদিন সে-ই নানাজানের হাতের বাঁধনে পিষ্ট হতে হতে এক গনজমায়েতের মুখে দাঁড়িয়ে জানলো, ‘এক রত্তি মাংস নাই শরিলে…সাধারন বৃত্তি না…ট্যালেন্টপুল…সবই তাঁর কেরামতি!‘ তীর্যক চোখে তাকিয়েছিল তারা সবাই, সম্মিলিত একটি ফিসফিসানি ঢেউয়ের মত আবর্তিত হয়ে প্রায় পিষে ধরছিল তাকে। ... ...