তারপর এখানে আর ভালবাসা হবার নয, নয বলেই যেন ইনফিনিটিতে প্রাণ বল্লম গুটিয়ে ফিরছেন জাদুকর তার দীর্ঘ ছায়া পড়ছে মাঠে। ক্রমে গাছে গাছে কমে আসছে সালোক সংশ্লেষ, বাতাসে শ্বাস বাযু কমছে কি? সে বড় করে শ্বাস নেয় ,ঠিক বুঝতে পারে না। ... ...
লোকটা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। চাকরি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে মৃত মানুষ নিয়ে কারবার। চাকরি দরকার, আমি রাজি হয়ে গেছি। কিন্তু আমাকে নদীর পাড়ে, ঠিক শ্মশানের পিছনে নিয়ে আসল কেন বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে অন্ধকার থাকে সব সময়। শ্মশানে আগে আসলেও পিছনে আসা হয়নি। কিন্তু আমার সুপারভাইজারের কোন দিকে কোন খেয়াল নেই, তিনি হনহন করে হাঁটছেন আর বলছেন, "আসেন, জলদি আসেন। কাজ ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সময়ের এদিক সেদিক হয়ে মহা কেলেঙ্কারি!" আমি তার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি, আর ভাবছি, সমস্ত ব্যস্ততা শেষ করেই তো মানুষ শ্মশানে আসে, এখানে এত কিসের তাড়াহুড়া? আমার সুপারভাইজার, যার নাম মোহাব্বত, তাকে যে জিজ্ঞাস করব, তার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন না। বিড়ি টানতে টানতে দ্রুত হাঁটছেন তিনি, পারলে দৌড় দেন! ... ...
গ্রাম। কিন্তু তা বলে গন্ডগ্রাম নয়। গ্রামে স্কুল আছে। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। তারে করে ঘরে ঘরে কেবল কোম্পানির পৌঁছে দেওয়া আনন্দ স্ফূর্তি আছে। তবে সবাইকার পাকা বাড়ি নেই। সবাইকার জন্য পাকা শৌচাগার নেই। কিন্তু উদ্যোগ আছে। দেয়াল লিখন আছে। ঘরেতে একটি পায়খানা বানান, মা -বোনেদের ইজ্জত বাঁচান এমন দেয়াল লিখনের পাশেই গোলাভরা ধান আছে, আবার আলুচাষির আত্মহত্যা-ও আছে। আর আছে একজন ডাক্তার বাবু। ৮৪ বছর তার বয়েস। ... ...
“চিঠি” - সাদা পাতায় লেখা এক মনকেমনের কাহিনী, “চিঠি” - সেই দূরবর্তী মানুষটিকে জানান দেওয়া, যে “ভালো আছি” ও জানতে চাওয়াও তাঁর ভালো থাকার কথা। যারা নিয়মিত চিঠি লিখতে ও পড়তে ভালোবাসেন তাদের সাথে এই “পত্র দিও” ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। একখানি চিঠি যে কি পরিমান ভালো থাকা দিতে পারে তা যারা পেয়েছেন একমাত্র তাঁরাই বুঝবেন। এমন অনেক সময় হয়, মানুষটি যখন কাছাকাছি, তখন সব কথা বলা হয়ে ওঠে না। কিন্তু দূরত্ত্ব বাড়ার সাথে সাথে সেই কথাই একটি চিঠির আকার নেয়...আর কি থাকে না সেই চিঠিতে!...প্রাত্যহিক জীবনের গল্প থেকে শুরু করে সমস্তটা উঠে আসে তাতে, আর যিনি পান সেই সময় তাঁর উপলব্ধিটাও অসামান্য। চিঠির মধ্যে ঐ মানুষটার প্রতিচ্ছ্ববি অজান্তে তৈরী হয়ে যায় আমাদের মনের ভেতরে...চিঠিকে তখন আরো বেশি আপণ মনে হয়। তাই হয়তো প্রিয় মানুষটির একটি চিঠির জন্য আমাদের এত অপেক্ষা, আর তেমনই তা না পেলে মনখারাপ-মনখারাপ। ... ...
গোরেস্তানে মধ্যরাত্রে পঙ্খিরাজ টানা গাড়ি নামে! গাড়ি ভরা লাশ! গোরেস্তানের নীরবতায় ঝিঁঝিঁর ঝিমঝিম টানা সুরের মধ্যে ঝুমঝুমি বাজিয়ে পঙ্খিরাজ গাড়িটা নাজেল হয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আর ঘোড়ার ক্ষুরের ক্লান্ত শব্দ চারদিকের মৌনতার মধ্যে রহস্য ঢেলে দেয়! ... ...
হেমন্তের সকালে ফুলেশ্বরী গ্রামের এ বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া একটু দেরিতেই হয়। মৌসুমী বন্যার জন্য এবারে ধান বুনতে দেরি হয়েছে, তাই মাঠে এখনও ধান কাটা শুরু হয়নি। সূর্যের দেখা মেলে বেশ দেরিতেই। বউ-ঝিও ঘর থেকে একটু দেরিতেই বের হয় সকালে। রান্নাঘর বলতে যা বোঝায় তা এ বাড়িতে নেই। উঠোনে কাদা দিয়ে কোমর সমান উঁচু দুইপাশি দেয়াল করে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা, মাথার ওপরে খড়ের সামান্য ছাউনি; বরষার দিনে কাজে দেয়। ... ...
গল্পে যেমন ... ...
রাহেলার শরীর ভালো যাচ্ছে না কামাল সেটা আগে থেকেই জানতো। গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার পরও বউটাকে গ্রামে নিয়ে যাবার ব্যাপারে তার কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। এরকম সময়ে গর্ভবতী মেয়েদের নিরাপদ জায়গায় সরে থাকা উচিত। সেসব নিয়ে কোনো চিন্তা না করে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা রাহেলাকে ফেলে ছুটির আমেজে বাইরে বাইরে আড্ডা মেরে বেড়াচ্ছিল কামাল। ... ...
ঘরবন্দী স্মৃতিকথন -- ছোটবেলায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেটি ছিল টালির ছাউনির দু'কামরার ঘর। বারান্দা প্লাস্টারের। তার ওপর সিমেন্টের সর নেই। এবড়ো খেবড়ো হেতনেয় বসে চলত হুটোপুটি। খানিক পা ঘষলেই চামড়ায় সরু সরু দাগ পড়ত...সমান্তরাল; যেন স্কেল দিয়ে মাপজোখ করে কেউ বুঝি খোলস থেকে কয়েক পরত রং তুলে নিয়েছে। তিন হাত উঁচু সেই বারান্দার পাশেই ছিল ঘেঁটু ফুলের জঙ্গল। ... ...
জানিস পেখম রাস্তা,বিদ্যুৎ, জল,যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুই আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু আমরা এক গভীর অসুখে ভুগছি রে, কবে যে নোংরা রাজনীতির ভাইরাস আমাদের প্রত্যেকের মনকে সংক্রমণ করেছে। এ রোগও মরশুমে প্রকট হয়। মরশুম বলতে ভোটের সময়। ফুটবল মাঠের মত ভোটের মাঠেও নিজের দলের খেলোয়াড় ছাড়া সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী।আর কোন পরিচয় থাকেনা। সারা বছর ভুলাভালা সাদাসিদা ছেলেটাও তখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার । হাসিখুশি মিশুকে বৌদিটাও তখন গুপ্তচর। যত পৌরুষ,যত বীরত্ব, যত বুদ্ধিমত্তা আশ্বিনমাসে ধানের শিষের মত ফুলে বেরোয়। ... ...
তার পক্ষ হইতে এক লোক আইসা খাবার দিয়া যাইত ও সন্ধ্যার দিকে আইসা বাক্সগুলি নিয়া যাইত। সেই লোকও অদ্ভুত, চোখে সব সময় কালা চশমা পইরা থাকত, আর কথা বলার সময় এর গলা থেকে চি চি শব্দ বের হইত। অনেকটা পাখির মত। ... ...
আজ ই-ম্যাগ দাপিয়ে বেড়ানো সুপ্রিয় পাখি সেন -এর ইন্টারভিউ নিতে হবে তাই রোব্বার হলেও চটপট উঠে গেল জয়ন্ত। গত ক বছরে যার চেহারা কেউ দেখেনি, সে কেমনটি হতে পারে ভেবে জল্পনা চলত প্রচুর। উনি ফর্সা না কালো, লম্বা না বেঁটে আর বয়সটা! বেট লাগালেও শিওর হওয়া হত না। উনি তো একেবারে হাওয়া, কোনও ফটো-টটোও নেই। তাই ছেলেরা আন্তাবরি বকত ... ...
সামাজিক ওলোট-পালোট ... ...
খালিশপুরে হাউজিং বাজারের বিহারী পট্টির এক চিমসার মধ্যে সে সাইন্দা থাকে! চায়ের কাঁপে চুমুক দেয় আর চিনচিন করে বিড়িতে টান মারে! ফলে আমরা রত্ন আবিষ্কারের মতন ঝকমকি উল্লাসে উজ্জ্বল হয়ে যাই তারে নজরে পেয়ে! আমরা নাড়াই তারে! আমরা জিজ্ঞাস করি, কাকা দেশের অবস্থা দেখছেন? করোনার মধ্যে সারা দেশে কি টাল্টুবাল্টু কারবার? ... ...
দ্বিতীয় গল্প। প্রথমটা ছিল নুরুন্নাহার বানুর ঘটনাটি। এখন তার বান্ধবী জোলেখা বানুর ঘটনা। ... ...
দুপুর থেকেই শরীরে একটা অস্বস্তি ছিল কুমার বাবুর। একবার ভাবলেন আজ আর হাঁটতে যাবেন না। কিন্তু যতই সময় এগিয়ে আসতে থাকলো মনের ভেতরটা কেমন যেন আনচান করে উঠল। আসলে চা খাওয়া, খবর শোনার মত এটাও একটা নেশাতে দাঁড়িয়েছে আজকাল। না হাঁটলেই কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। খাবার যেন হজম হতে চায় না। ঘুমের সমস্যা হয়। তবে তার কতটা সত্যিই শারীরিক আর কতটা মানসিক তা নিয়ে অবশ্য নিজেরও একটু ধন্দ আছে ওনার।পার্কে পৌঁছেই মনটা ভালো হয়ে যায়। কাল সন্ধেবেলা খবরটা শোনার পর থেকে এমনিতেই খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছেন। নিউজ দেখছিলেন, তখনই ভেসে ওঠে খবরটা। ভোটযুদ্ধের রাজনৈতিক ঝগড়ায় কারা যেন বিদ্যাসাগরের মুর্তি ভেঙ্গে ফেলেছে। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল নিশ্চয় কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। তারপর যখন বুঝলেন ঘটনাটা নিদারুণ ভাবে সত্যি, মনটা একদম খারাপ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত এরা বিদ্যাসাগরকেও ছাড়ল না। ... ...
কিছু শোনা, কিছু কল্পনা ... ...
একটা অদ্ভুত মাথা ধরা নিয়ে ঘুম ভাঙ্গল গোপাল বাবুর। মাঝে মাঝে এমনটা হয়। আগে কম হত। আজকাল একটু বেশিই যেন হচ্ছে। ভাবেন এর পর শহরে ছেলের কাছে গেলে একটা ভাল ডাক্তার দেখাতে হবে। এখানে, মানে এই মফস্বল শহর শালদুয়ারির পাঁচ কিলোমিটার দূরের গ্রামে তার উপায় নেই। তবে দিন বাড়লে এটা নিজেই কমে যাবে জানেন উনি। তাছাড়া শরীরকে বেশী পাত্তাও দিতে চান না। গোপালবাবুর বাবা বলতেন “শরীরের নাম মহাশয়, যা সওয়াবে তাই সয়”, তাই উনি আজ অবধি সেটাই মেনে চলেন। ... ...
আগে মানে এই সত্তর আশির দশকে এরকম বেশ কিছু জ্যেঠু বা পিসীদের আমরা অনেকেই চিনতাম। এঁদের কেউ বলত ছিটেল, কেউ বলত বাতিকগ্রস্ত, কেউ কেউ বিরক্ত হত, বেশিরভাগই এঁদের নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে কোথাও একটা প্রশ্রয়ও ছিল সমাজে এঁদের প্রতি। এঁরা এঁদের বিশ্বাসমত সকলের যাতে ভাল হয় সেরকম চেষ্টা করতেন, ব্যক্তিগত অধিকার অনধিকারের তোয়াক্কা খুব একটা করতেন না। সেটা যে সবসময় ভাল হত তাও না, তবু এঁদের আন্তরিকতায় খাদ ছিল না। আরোপিত স্বাতন্ত্র্যে ঘরবন্দী থাকার সময় এঁদের কথা হঠাৎই বড্ড মনে পড়ছে। ... ...
বালাসাহেব মারা যাবার বছরখানেক পরে বোম্বে এসেছি। সন্ধ্যের ঝোঁকে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে; আলো ফেটে রঙ নাবছে, রঙ থেকে ঝিনচ্যাক রঙ। ... ...