নারী, পুরুষ, ছেলে, বুড়ো সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে ,কাঁদছে, আর্তনাদ করছে, ছবি তুলছে, শেয়ার করছে, লাইক দিচ্ছে ,কমেন্টস করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করছে না। ... ...
বাজার করাটা নিঃসন্দেহে একটা শিল্প। তাতে বিশেষ কারিগরি দক্ষতা লাগে, ইচ্ছা লাগে, ধৈর্য লাগে, বুদ্ধি, দুষ্টবুদ্ধি লাগে, অতি দ্রুত অঙ্ক-কষার ক্ষমতা লাগে। বাপরে, এত কিছু যদি আমার এই এক দেহতেই থাকে, তাহলে বাজার কেন করব বাপু, অ্যাষ্ট্রনট হব, চাঁদে যাব, মঙ্গলে যাব। কিন্তু তা বললে চলবে কেন? বাজার অতি বিষম বস্তু, না করলে পেটে কিছু পড়বে না, তবে কিনা যাঁরা গৃহিণী নিয়ে ঘর করেন তাঁদের অবশ্য পেটে না পড়লেও পিঠে ঠিক পড়বে। ... ...
বাপের কথা জবার মনে পড়ে অস্পষ্ট, রাতে দেখা স্বপ্ন যেমন সকালে কিছুটা মনে পড়ে, আবার পরক্ষণেই মানস থেকে দ্রুত সরে যায়- তেমনি। গত বছর মা-ও চলে গেল পেটের ব্যথা নিয়ে। প্রথমে গ্রাম ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যথা কমার ওষুধ দেয়। দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে, খাওয়া-দাওয়া আস্তে আস্তে বন্ধ হতে থাকে, একসময় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। জবার চাচা কবিরাজ ডেকে আনে, তিনি শহরের হাসপাতালে নিতে বলেন, হাসপাতালে কে নিয়ে যাবে, চিকিৎসা খরচই-বা কে দিবে; এক সকালে জবার হাউমাউ শুনে চাচা, চাচি, তাদের ছেলেমেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে জানতে পারে জবাকে একা রেখে তার মা-ও পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। ... ...
তিনি বুঝতে পারেন শেষ হাসিটা পর্দা থেকে বেরিয়ে, তাঁর মাথার ওপর দিয়ে গিয়ে ব্যালকনি দিয়ে বেরিয়ে যায়। সুবিনয়ের মনে হয় শহরের সমস্ত বাড়ির জানলা, ব্যালকনি দিয়ে হাসিরা বেরিয়ে আসছে। শেষ হাসি। ... ...
রাঁধুনি মৃদু হাসলেন। গ্রীষ্মের দুপুরের লু-এর মতন সেই হাসি। ডানহাত দিয়ে বাঁ-হাতের ব্লাউজের হাতা কনুই অবধি তুলে দেখালেন। দেখলাম - ব্লাউজের নিচের হাতের চামড়ার রঙ বাকি দেহের, মুখের রঙের চেয়ে একেবারে আলাদা - ফ্যাটফ্যাটে সাদা। ... ...
আজ হঠাৎ কী মনে করে বিলু ঠিক করল আজ সে গণেশ গুহ হয়েই ফোনের উত্তর দেবে। ফোন তুলে বলল, বলুন। উল্টোদিক থেকে সেই চেনা গলা ভেসে আসে, “গণেশ গুহ বলছেন?” “বলছি”, বিলু উত্তর দেয়। মহিলা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলেন, “ গণেশ বাবু, আমার বন্ধু সমরেশের কাছে আপনার কাজের প্রশংসা শুনেছি। ও একবার আপনার সাহায্য নিয়েছিল। আমিও একটা খুন করাতে চাই। আপনার যা রেট তাই দেব”। কথাটা শুনে বিলু খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে ফোন নিয়ে, কী বলবে বুঝতে না পেরে। ফোনের ওদিক থেকে “হ্যালো, গণেশবাবু, হ্যালো…” ভেসে আসতে থাকে। ... ...
কত বছর পর গ্রামে ফেরা! নিরানন্দ, ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। শীতকাল, তায় শেষ কয়েকটা সপ্তাহ হলো বেজায় বরফ পড়ছে। পথরেখা দেখা যায়না। রাস্তার দু'পাশে, দূরের পাহাড়ের গায়ে - মোটা বরফের কম্বল। আকাশে কালো মেঘ, মেঘের ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা বরফের ছিটেফোঁটা। শেষ বিকেলে পড়া শুরু হল যখন, তখন সারারাত আর থামবে না। ... ...
গপ্পো ... ...
সিনেমা হলের আলো যেমন এক এক করে নিভে গিয়ে অন্ধকার হয়, তারপর বিজ্ঞাপন, ফিল্ম ডিভিসনের তথ্যচিত্র শেষ করে সিনেমা, লীলাময়ীর চোখের সামনে তেমনি অল্প অল্প করে বসুশ্রীর স্ক্রীন ফিরে আসছিল - বাড়িওলা ঘর থেকে বেরোতেই সৌমিত্র দিনের বেলা আলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে বারান্দায় - মাথার কাছের জানলার পর্দায় মস্ত ফুটো - বর্ষার জল ঢুকছে, সৌমিত্রর কাটা কাটা নাক মুখ, ট্রামে বসে আছে- জানলার বাইরে কলকাতা, কপালে একগুছি চুল, তারপর জানলার ওপারে ডুম জ্বলা ঘরে একটি মেয়েকে দেখে বাঁশি দিয়ে জানলার পাল্লা বন্ধ করে দিচ্ছে সৌমিত্র, আধশোয়া হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে, হা হা করে অকারণ হাসছে - ঢেউ খেলানো চুল সৌমিত্রর, মোহন অঙ্গুলি, টিকোলো নাক, চিবুকের ভাঁজ, ডান গালের নিচের দিকে একটা তিল- পটে আঁকা ঠাকুর দেবতার মত মুখ- "দীর্ঘজীবী হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও " কে যেন বলছিল। ... ...
সে রাতে বহু লোকেরই ভৌগোলিক অবস্থান গুলিয়ে যেতে থাকে। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ এ ওর ঘাড়ে চড়ে এক রাতে মফস্সলে মহাপৃথিবীর জন্ম হয়। ... ...
গাড়ির আলোয় যতটা দেখা যাচ্ছিল, তার বাইরে কুয়াশা। প্রদীপ আর বিজন টর্চ জ্বেলে আশে পাশে দেখছিল। এদিক ওদিক কুয়াশা ফুঁড়ে ঝোপঝাড় বেরিয়েছে। ফণিমনসার মত কাঁটা গাছ। সেইখানে অন্ধকারের একটা স্তূপ পড়ে আছে যেন। বিজনের বুক কেঁপে উঠল। ... ...
যেদিকে দুচোখ যায় প্রতিভার ছড়াছড়ি। ফাঁকা খাটে তোষক পেতে শুয়ে আছে প্রতিভা, স্যানিটাইজার মেখে স্নান করছে প্রতিভা। পাবজির মাঠে অষ্টপ্রহর গুলি চালানোর বুদ্ধিতে ঠাসা ঘিলুগুলোর গুহার আঁধার তাই গমগম করছে সামান্য মোটিভেশন পাখির আর্তনাদে । কেউ বানাচ্ছে রোবোট, কেউ বানাচ্ছে এক্সটেনশন কর্ড। তবে বুদ্ধি যার যার, ফলাফল সবার। অতএব বিদ্যুতের লাইনের MCB যাচ্ছে নেমে সকলের, গরমে লোকজন যাচ্ছে ঘেমে। এনট্রপি টঙে তুলে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে মই গেছে হারিয়ে..... ... ...
পায়ে শট ছিল না সেরকম। গায়েগতরে খেলা তো দূরের কথা। তবু গোলটা চিনতো। বক্সে বল পেলেই পায়ের ডগা দিয়ে টুক করে গোলে ঢুকিয়ে দিতো। মানস থাকলে বলতেন - সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার। পল্লব থাকলে বলতেন - পরিভাষায় যাকে বলে, ফক্স ইন দ্য বক্স। ... ...
বোম্বের ক্যান্সার-কলোনিতে জীবন-মৃত্যুর মাঝে আটকা পড়েছে শৈশব। মৃত্যুই কি জীবনের শেষ, জীবনের পরিণতি? নাকি, তারপরেও ... ...
বড় শহরগুলোর আর সমুদ্রের অনেক মিল আছে। দু'টোই বোধহয় আস্তে-আস্তে গ্রাস করছে আমাদের। ... ...
ফোনটা হঠাৎ জলে পড়ল। তারপর কীসব কাণ্ড হল! ... ...