সন্ধ্যায় কতগুলো লোক জোর করে বাড়িতে ঢুকলো । কেউ চেনা, কেউ অচেনা। ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে লোকগুলো চিৎকার করে বললো, এগুলো গরুর মাংস। রান্নাঘরের দরজার আড়ালে ভয়ে তখন কাঁপছিল আঞ্জুমান। ... ...
রংমিলান্তি রাজ্যে কারা বাস করে জানো? রঙপেন্সিলরা মানে ক্রেয়নরা। বেগনে গাঁয়ে থাকে বেগুনি ক্রেয়নরা, নীল গাঁয়ে নীল, লাল গাঁয়ে লাল... বুঝতেই পারছ ক্রেয়নদের রঙেই তাদের গাঁয়েরও নাম। যখন আকাশের নীল রঙ ফিকে হয়ে আশে তখন রাজামশাই খবর পাঠান নীল গাঁয়ে। লাল গোলাপ ফোটার সময় হলে খবর যায় লাল গাঁয়ে। গাছের পাতা গজায় যখন সবুজ গাঁয়ে দৌড়য় রাজামশাইয়ের পেয়াদা। ... ...
আমাদের আজকের গপ্পো এক বাদামি কাঠবেড়ালির ছানাকে নিয়ে। সে এক ভারি দুষ্টু কাঠবেড়ালি। পাইন গাছের কোটরে থাকে মা বাবার সঙ্গে। দুপুরবেলায় যেই না মা একটু দুই চোখের পাতা এক করেছে ওমনি দুষ্টু কাঠবেড়ালি কোটর থেকে এক লাফে বেরিয়ে ভোঁকাট্টা। কোথায় পালায় কাঠবেড়ালি? কোথায় আবার! এই কাছেপিঠে হেথাহোথা। কখনও যায় এ পাশের কোটরে লুকনো বাদাম খেতে, কখনও ও পাশের গাছের ঢুলঢুলুনি প্যাঁচাকে জ্বালাতন করতে, কখনও আবার গাছের গোড়ার ঝোপে লুকনো খরগোশছানাদের ডেকে ডেকে ঘুম থেকে তোলে। ... ...
নৌকা বানিয়েছিল বাবা। ডিঙি একটা। খুদে খুদে নাম লিখেছিল- ল্যাজারাস। বাড়ির সামনে উল্টে রাখা ছিল -বারান্দার থামের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা। সাদা রং করে চোখ এঁকেছিল। মা বিড়বিড় করে বলেছিল -'কবে খোঁটা ওপড়ায় কে জানে!' ... ...
রাতের বেলা ছেলেরা খেতে বসলে কথাটা ওঠে ফের। অতু, পুতু আর নান্টু। বড় বৌমার কানে কলতলার কথাটা উঠেছে। সে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, "মায়ের যেমন কান্ড! ছেলেপিলে নিয়ে ঘর, ওই মানুষ মারা গুণ্ডাদের কাছে আবার জানতে গেছেন, কই লইয়া যাও।" অতু-পুতু দুই ছেলেই একটু বিরক্ত মুখে বড় বৌ এর দিকে চায়। মায়ের মুখে মুখে ঝাঁঝানো এ বাড়িতে এখনো চালু হয় নি। বুড়িও একটু লজ্জিত হয়। বিড়বিড় করে বলে, "নারানরে তো জন্মাইতে দ্যখছি , তাই ভাবি নাই আগুপিছু।" ... ...
গল্প। ... ...
“Chocolate can only be made with love.” বলেছিল বেলজিয়ামের চকোলেটিয়ার লুকাস পেটার্স| কোকা বিনের জাদুকর সে| ভেনেজুয়েলা থেকে এসে সেরা কোকা বিন তার হাতের জাদুতে তুলতুলে চকোলেট হয়| বংশপরম্পরায় চকোলেটিয়ার তারা| লুকাসের বাড়ি কম ফ্যাক্টরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল গতবছর, ব্রাসেলসে| ভালোবাসার নৌকোয় পাড়ি দিয়ে কেমন করে সে পার হলো করোনা-সাগর, আজ তারই গল্প| ... ...
আলাদা বলেই এর একটা নাম রেখেছিলেন বিপ্লব - সানাই। ছোটবেলায় বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় যে পাড়াতে ওঁরা থাকতেন সেখানে একটা রাস্তার কুকুরের ওই নাম ছিল। কুকুরটা ডাকতো একটা অদ্ভুত গলায়, কেউ একজন ওই নাম দিয়েছিল, সেটা চালু হয়ে যায়। নামের কথা ভাবতে গিয়ে ওইটাই মনে এসেছিল তাঁর। এতদিন কোথায় ছিলে? ফিস ফিস একটা বনলতা সেনীয় প্রশ্ন করলেন বিপ্লব। ... ...
বাবা-মা চায় না আমি এইসব গল্প শুনি। কিভাবে তারা সব হারিয়ে এখানে এসে আবার গোড়া থেকে জীবন শুরু করেছে, রিফিউজীর জীবন, সেটা মা-বাবা-ঠাকুমা কেউ বেশী বলতে চায় না। কিন্তু বীণা পিসী আমায় চুপি চুপি তার গল্প বলে, আমি চুপি চুপি শুনি। আমি ভেবে পাই না লোকে কেন বর্ডার দেয়। কেন বর্ডার পার হতে হয়। এমন হয় না, পৃথিবীতে কোথাও কোন বর্ডার থাকবে না? ... ...
সে সময় পুরুলিয়া মানে কিষেণজি। আমাদের যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বাঘমুন্ডির দু'জন স্কুল শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় তখন সারা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। ... ...
“কারণ এলিয়েনেশন এই পৃথিবীতেই হয়!” এবার নিজের জায়গা ছেড়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় অপরাজিতা, “আপনি যেমন করেছেন আপনার গপ্পে…”“আমি এলিয়েনেশন করেছি?”“করেননি? রাজপুত্র থেকে কেরাণীপুত্রের বৃত্তের বাইরে সবাইকে?” ... ...
পাশের টেবিলে তিনজন বসে গল্প করছিল। আমি আড়ি পেতে শুনছিলাম। আড়ি পেতে ঠিক নয়, কানে আসছিল। অসমবয়েসী তিনজন। একজন বছর পঁচিশেকের, একজন বছর পঁয়তিরিশের, আর অন্যজন আমার বয়েসী হবে। বছর পঞ্চাশেক। পানভোজনের মাঝারি মানের রেস্তোঁরা। আমি অনেকদিন থেকে এখানে আসি। পান আর আহার দুইই ভাল। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম যেমন বদলেছে, আমার রুচিও। এদেরও দেখলাম রুচির তফাত। ছোটজন নিয়েছে বিয়ার। মেজোজন রেড ওয়াইন। বড়জন শুনলাম সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি অর্ডার দিল। খাবারেও তিনজন ভিন্নপন্থী। ছোটজন অর্ডার করল ঝাল চিকেন উইংস। দ্বিতীয়জন চাইল নিউজিল্যান্ডের আমদানী ল্যাম্ব শ্যাংক। বুড়োজন নিল রেয়ার-মিডিয়াম ফিলে মিনিয়ন। আট আউন্সের। মানে খুবই ছোট। ... ...
এরপর একটা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে রেণু নামবে; পিয়ানো যেখানে বাজছে সেদিকেই যাবে রেণু- নামতেই থাকবে -তাকে আর আটকাতে পারবে না সুবর্ণ- আস্তে আস্তে রেণু কুহেলির সন্ধ্যা রায় হয়ে যাবে। ... ...
-ওই বেজান বেড়াটার জন্য কত চোখের পানি, কত ঘৃণা, কত যন্ত্রণা, কত যুদ্ধ। যার জান নাই তার লাগি কত জান যায়, আমি রাতের আন্ধারে বেড়াটারে খুইলা লই। যেহানে বেড়া নাই সেহানে দেশভাগ নাই। সব এক, কে কইবে কোনটা দেশ আর কোনটা বিদেশ? ... ...
ওপরের তাক থেকে তিন চারটে বই টেনে নামাতেই একটা খাম মেঝের ওপর পড়ে গেল। টুলের ওপর থেকে রঞ্জন সাহা তাকিয়ে দেখলেন একটা বড়সড় ব্রাউন রঙের খাম। কিসের খাম বুঝতে পারলেন না। এই তাকটা খুব একটা ব্যবহার হয় না। মাসখানেক ধরে গৃহিনী তাগাদা দিচ্ছেন বই-এর আলমারির ওপরের তাকটা পরিষ্কার করার জন্য। আজ টুলে উঠে সবে কাজটা শুরু করেছেন, তার পরেই এই ঘটনা। ... ...
পথ চলতে গিয়ে যে সকল মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি তেমন একজন কে মনে রেখে ... ...
সেদিন কী সাংঘাতিক কাণ্ডটাই না ঘটেছে জানো কি তোমরা? রানি ঝিলিমিলির রাজমুকুটখানি হারিয়ে গেছে। রানি ঝিলিমিলি তো লাল রেশমি উড়ুনিটা পেয়ারা গাছের ডালে ঝুলিয়ে আর মুকুটটি খুলে গোলাপগাছের তলায় রেখে সইদের সঙ্গে একটু কুমিরডাঙ্গা খেলতে গেছেন। খেলছেন তো খেলছেন, বেলা গড়িয়ে গেল, বিকেল ফুরিয়ে গেল, জলে সূয্যিমামার লাল লম্বা ছায়া পড়ল, তবু খেলা শেষ আর হয় না। শেষমেষ বহুদিনের পুরনো বুড়ো রাজপেয়াদা রামদয়াল ডাকতে এল.. ... ...
ঘড়িটা কি স্লো যাচ্ছে? নাকি অপেক্ষা চিরকালই ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়? নইলে, কোন সকাল থেকে তৈরি হয়ে বসে আছি, তার দেখা নেই। অথচ নিশ্চিত আসবে বলে জানিয়েছিল। কতদিন যেন আসে নি। মাঝে কাটল কত মাস? নাকি অনেক অনেক বছর? ... ...
আজকাল দেখছি পাখিদের লাফালাফি বেড়ে গেছে চতুর্গুণ। সক্কাল সক্কাল, পাশবালিশটা চেপে ধরে তৃতীয় দফার ঘুম দেবার চেষ্টা করছি প্রাণপন, দেখি জানলায় ঠক্ ঠক্ করে টোকা দিচ্ছে কে যেন। এই লক করে দেওয়া জীবনে কার এত অনুপ্রবেশের উৎসাহ? বাধ্য হয়ে বাঁ চোখটা কোনরকমে খুলে দেখি এক ব্যাটা ছাতার পাখি দিব্যি গা ফুলিয়ে মোটাসোটা হয়ে ঠোঁট দিয়ে ঠুকে চলেছে কাঁচের জানলায়। ... ...