কোলকাতার কলেজে পড়তে যাওয়া আমার মত মফস্বলি ছেলেকে প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন দিগন্তের সন্ধান দিত।লোকাল ট্রেনের ভিড় কামরায় পুরুষের গা ঘষাঘষি, সাময়িক যৌন ভাললাগা, পাবলিক টয়লেটে পুরুষের যৌনতার হাতছানি থেকে শুরু করে আরও আরও নতুন নতুন মুখের পরিচয় । ক্রমশ বুঝতে পারছিলাম আমি একা নই। শিয়ালদহ থেকে এরকম একদিন হাঁটতে হাঁটতে হাতে পেলাম সানন্দা পত্রিকার পুরানো সংখ্যা ‘রূপান্তর’। এই সংখ্যাটা আমাকে পরিচিত করেছিল আর এক দুনিয়ার। আমার মনে হয় সেক্স-রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি নিয়ে উনিশশো আটানব্বই নিরানব্বই সালে সেই প্রথম কলকাতার বাংলা ম্যাগাজিনের আলোচনা। যে ম্যাগাজিন ততদিনে গুটি গুটি ঢুকে পড়েছে মধ্যবিত্তের অন্দরমহলে। আমার সাজগোজ তথাকথিত মেয়েলিপনা রণ কখনও প্রশ্রয় দেয়নি।সকলের কাছে এই সম্পর্কটাকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাত ও । আর বোধহয় সেটাই স্বাভাবিক ছিল অতবছর আগে। আর আমারও কেন জানিনা সবসময় মনে হত, মনে মনে আমি রণর বৌ হলেও আমি তো মেয়ে নই। মনে করতাম যদি রণ বা অন্য পুরুষ মানুষরা আমাকে মেয়েই ভাববে তাহলে তো তারা মেয়েদের কাছেই যাবে। যত বড় হয়েছি তত বুঝেছি সবকিছুই এরকম দু আর দু এ চার হয়না। ... ...
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পার্কসার্কাসের ধাঙড় বাজারের সার্কাস হোটেল। সামনের ফুটপাথে একটা হাইড্রেন, তার থেকে মুখ খুলে হোসপাইপ লাগিয়ে কর্পোরেশনের লোক রোজ ভোরে রাস্তা ধুয়ে দেয়। সময়টা যে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। তোড়ে যে জল বেরিয়ে আসে তা কিন্তু গঙ্গার ঘোলা জল, আর ফুটপাথে থেকে তিন ধাপ সিঁড়ি ভেঙে বারান্দায় উঠলেই খোলা উনুন বসানো। সেখানে ঝকঝকে শিকে গেঁথে পোড়ানো হচ্ছে মশলা মাখা লালচে হলুদ রঙের মাংসের টুকরো। তৈরি হচ্ছে শিককাবাব। তার পাশেই দু'জন ময়দা মেখে লেচি বানিয়ে সেঁকছে রুমালি রুটি আর ভেজে তুলছে পরোটা। ... ...
আস্তে আস্তে আমার নাচের প্রতি ভাললাগা যেন আমি রনজয়ের মধ্যেদিয়ে ফেরত পেতে শুরু করলাম। আর তাই আমার হারিয়ে যাওয়া ভাললাগা ভালবাসায় পরিণত হতে সময় লাগেনি।পরের দিন সকালে হঠাৎ করে অমৃতা আমাকে প্রোপোজ করে। আমি হাসতে হাসতে বলি "সবজানার পরেও... " অমৃতা উত্তর দিয়েছিল," তুই তো সৎভাবে স্বীকার করতে পেরেছিস। কতলোক তো বাইসেক্সুয়াল হয়, অন্যকাউকে যদি কখনও বিয়ে করি আর সে সবটা লুকিয়ে রাখে আমার থেকে।" অদ্ভুত একটা বিষয়ের সম্মুখীন হয়েছিলাম সেদিন। এর আগে পর্যন্ত এভাবে কেউ বলেনি, আর তখনও পর্যন্ত আমিও কোনও বিবাহিত সমকামী পুরুষের সম্মুখীন হইনি। ... ...
ছবি আঁকার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল ছেলে বেলা থেকেই, পুসুমার উতসাহে বাড়ির পাশে আঁকার স্কুলেও যাওয়া শুরু হয়েছিল, প্রায় হাতেখড়ির সঙ্গে সঙ্গেই ।আমাদের বাড়িটা ছিল বাস রাস্তার লাগোয়া। তাই বাড়ির বাইরে যাতে খুব বেশি যেতে না হয়, তারজন্যই হয়তো ছবি আঁকার পাঠ শুরু হয়েছিল আমার। খেলাধুলা আমায় কোনও কালেই টানেনি। পুসুমার দৌলতে খবরের কাগজের সাথে সাথে আসত চাঁদমামা। আর বামপন্থী ছোটকাকুর দৌলতে আসত সোভিয়েত ইউনিয়ন পত্রিকা। ছবিতে রুশ উপকথার গল্প, আর চাঁদমামার উত্তর রামায়ণ আর বিক্রমাদিত্যের ও বেতালের গল্প আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন। ... ...
পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের কোলকাতার ছবির কোলাজ, ব্যক্তিগত স্মৃতির টুকরো। ইতিহাস হওয়ার দায় নেই। ... ...
দেখি দুজন বয়স্ক সুদর্শন সুপোশাক পরিহিত মানুষ এসেছেন এইচ আইভি নিয়ে কথা বলতে, এরকম বয়সের লোকজন সাধারণত আসেন কোনও না কোনও এন জি ও র তরফে এইচআইভি সচেতনতার কাজ কর্ম করতে সাহায্য পাওয়া যাবে কিনা জানতে। কথা বলতে গিয়ে দেখলাম না এনারা দুই বন্ধু এসেছেন এইচ আইভির পরীক্ষা, চিকিৎসা কোথায় হয় সেসব জানতে।মনে মনে ভাবলাম আজকাল তো অনেকেই ছেলে মেয়েদের বিয়ের আগে থ্যালসেমিয়া এইচ আইভি পরীক্ষা করায়, ওনাদের হয়তো তেমন কোনও ব্যাপার। তাও বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে গেলে নিজেকে যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ রাখা উচিত সে ভাবেই আলোচনা শুরু করলাম। জানতেও চাইলাম ওনারা কেন হঠাৎ এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চাইছেন। কথায় কথায় জানলাম ওনাদের কোনও এক আত্মীয় বিদেশ থেকে ফিরেছেন, অনেক দিন যোগাযোগ না থাকায় তার যাপণ সম্পর্কে ওনারা জানেননা, সে হয়তো সেখানে ড্রাগ নিত, তার গায়েও উল্কি আছে অনেক তাই ওনারা তাকে এইচ আইভি পরীক্ষা করাতে চান। আর তাই সরাসরি স্বাস্থ্য দপ্তরে খোঁজ নিতে এসেছেন, বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে রাজ্য সরকারের এডস্ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে আরও জানতে চাইলেন এডস হয়েছে কিনা সেটাও কি করে জানা যায়। দেখলাম এনারা এডস আর এইচ আইভি র তফাতটা জানেন। কথা বলতে উৎসাহ পেলাম। ওনারা এইচ আইভি নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন নিয়েও জানতে চাইলেন। জানালাম বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এইচ আইভি নিয়েও লোকজন দীর্ঘদিন ভাল থাকেন, এবং আমিও ভাল আছি। ওনারা ধাতস্থ হলেন। কিন্তু মানুষের কৌতূহল অসীম, ওনাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করে বসলেন কিভাবে আমার এইচ আইভি হল। আজকাল এটাতে অবাক হই না হাসিমুখে বললাম, "সেটা জানাটা বোধহয় জরুরি না"। ... ...
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিনেই সারা দুনিয়া ববাসীরের বাজি রেখে সারিয়ে তোলার দম্ভের সামনে নতজানু হল।চারদিকে ওই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। রঙ্গনাথ হতভম্ব, একই বিজ্ঞাপন একটি দৈনিক খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে! কাগজটি রোজ সকাল দশটা নাগাদ শিবপালগঞ্জে পৌঁছিয়ে লোককে জানান দেয় যে স্কুটার ও ট্রাকের সংঘর্ষ কোথায় হয়েছে, আব্বাসী নামক তথাকথিত গুন্ডা ইরশাদ নামের কথিত সব্জিওলাকে তথাকথিত ছুরি দিয়ে কথিত রূপে কোথায় আঘাত করেছে। ... ...
তবুও কোথাও যেন একটা খচখচানি। বুঝতে পারতাম না আমি কেন আলাদা! সবাই যখন সিনেমার নায়িকাদের শরীর, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হাতছানিতে ছন্নছাড়া হতে রাজী বুঝতে পারতাম না আমার কেন মনে মনে নায়কের পৌরুষ বা লোমশবুক অনেক বেশি টানে। দ্য গ্রেট আর্টিস্ট পত্রিকার পাতায় পাতায় নগ্ন পুরুষ দেখার লোভ কেন এত বেশি। বলতে দ্বিধা নেই ওইবয়সে ক্লাসের বন্ধুদের সাথে ক্লাসের কোলের ওপর ব্যাগ রেখে গোপন অঙ্গে স্পর্শের হাতছানি অগ্রাহ্য করিনি। ... ...
আমার আপাত মেয়েলি নরমসরম হাবভাবের জন্য মনে করা শুরু হল নাচই কারণ। আমাদের স্কুলের প্রার্থনা সভায় প্রতিদিন বেশ কিছুটা সময় বরাদ্দ থাকত বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেদের থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। ওই সময় তাদের কোনও কোনও অ্যকটিভিটি পরিবেশন করতে হত। এটা সোশাল অ্যাংসাইটি বা জড়তা কাটানোর একরকম পদ্ধতি । ক্লাসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব কাউকে না কাউকে করতে হত। যদি কেউ না থাকত, তাৎক্ষণিক ভাবে কাউকে উঠতে হত। এরকম একদিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই আমায় উঠতে হল, আমি পড়লাম বিড়ম্বনায়। মাস্টার মশায় তখন ভারতীয় নৃত্যের ইতিহাস নিয়ে কিছু বলতে বললেন। কোনওরকমে মান বাঁচালেও বুঝলাম আমার নাচ নিয়ে আরও পড়াশোনা দরকার। এবং যতই মনের আনন্দে নাচ করি না কেন ব্যকরণ গত ভাবে শাস্ত্রীয় নৃত্য অনুশীলন প্রয়োজন।লুকিয়ে লুকিয়ে শুরু করলাম নাচ। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই শরীর দিয়ে চোকাতে হল গুরুদক্ষিণা। লজ্জা আর ঘেন্নায় বন্ধ হয়ে গেল নাচ শেখা। ... ...
আমাদের বাড়িটার একটা অদ্ভুত অবস্থান ছিল। আমাদের কোনও পাড়া ছিলনা সেই অর্থে। সামনে জিটি রোড দুপাশে দুটো বাড়ীর দুপাশ দিয়ে দুটো গলি।ওই গলি ধরে গেলে দুদিকে দুটো পাড়া। বাড়ির পিছনের বাড়িগুলো বা পাড়াগুলো কখনও আমি সেভাবে যেতাম না। আমাদেরকে মিশতেও তেমন দেওয়া হতনা। আমাদের বাড়ির লোকজনকেও পিছন দিকের পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গে খুব বেশি যাতায়াত করতে দেখিনি। তবে বিকেল হলেই এপাড়া ওপাড়ার সবাই পুসুমার কাছে ঘুঁটে কিনতে আসত নয়ত দুধ নিতে আসত। সেইসময়টুকু যতটা এপাড়া ওপাড়ার আলোচনায় আমার জগত দর্শন। ... ...
আমরা সবাই, অর্থাৎ লেখক, শিল্প, স্থাপত্যবিদ, আর্কিটেক্ট এবং প্যারিস শহরের সৌন্দর্য্য ভালোবাসা লোকেরা একযোগে প্রতিবাদ করছি এই সিদ্ধান্তের যা এই শহরের সৌন্দর্য্যের প্রতি এবং তার থেকেও বড় কথা ফরাসীদের সৌন্দর্য বোধের, যা আমাদের অত্যন্ত গর্বের এক বিষয় তার প্রতি এক প্রবল আঘাত হানতে চলেছে। কি ভাবে যে আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় এই শহরের বুকে, একদম মধ্যভাগে বলতে গেলে – এই একদম ফালতু এবং দৈত্যাকার আইফেল টাওয়ার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – তা আমরা অনেক চিন্তা করেও বুঝতে পারছি না। আমার কি আমাদের প্রিয় প্যারিস শহরের শত শত বছরের এলিগ্যান্ট এবং মনোহর স্থাপত্য দিয়ে গর্ব করা ভুলে গেলাম যে এমন এক অদ্ভুত কারখানার কালো চিমনির মত টাওয়ার শহরের মাঝখানে খাড়া করতে হবে? এই কাঠামো শুধু হাস্যকরই নয়, এক বর্বরোচিত প্রচেষ্টা যা আমাদের ফরাসী সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা – এবং এই প্ল্যান কার্যকরী হলে সুন্দরী প্যারিসের বুকে আমরা আগামী কুড়ি বছর ধরে এক কুৎসিত নাট-বল্টু লাগানো ধাতব টাওয়ারের কালো ছায়া দেখতে চলেছি – এ যেন এক সুন্দর ক্যানভাসকে জেনেশুনে কালিমালিপ্ত করা ... ...
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক উপন্যাস ... ...
পুরানো কথা মনে করার একটা নেশা আছে, চোখ বুজলেই তাই আজও কত কথা মনে পরে... যে মেয়ে জন্মের আগেই তার বাবাকে হারায়, যৌবনের শুরুতেই মাকে হারায় তার বিয়ের জন্য তার দাদারা অহেতুক খরচা বাড়াতে চায়নি হয়তো নইলে রবিঠাকুরের লেখায় কৃষ্ণকলির কথা যতই মর্যাদা পাক না কেন, বাস্তবে গায়ের রঙ কালো হওয়ায় বিয়ের বাজারে দাম ওঠে না। ... ...
রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একটি নভেলা ... ...
অনেকের মতই গামছা দিয়ে চুল বাঁধা কিংবা লুকিয়ে লুকিয়ে দুপুরবেলা মা ঘুমোলে মায়ের সিঁদুর কৌটো আর লিপস্টিক নিয়ে সাজগোজ করাটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আজ বুঝি ট্রাকচালকদের দিনের পর দিন ট্রাক নিয়ে এক রাজ্যথেকে আর এক রাজ্য যাতায়াতে ওটাই ছিল ওদের কাছে ঘরবাড়ি , তাই রকমারি রং বেরঙের জিনিসের সাথে ঝকঝকে ঝান্ডী ( সিন্হেটিক কাপড়ের ওপর সোনালী রুপোলী লেস বসানেো পতাকা বা ঝান্ডা যা লরি বা ট্রাকের সামনে ইঞ্জিন বা বনেটের দুপাশে লাগানো হয়) গুলোর ওপর ছিল আমার সবচেয়ে বেশি আকর্ষন। ওগুলো বানানোর জন্য বড়বাজার থেকে থান কাপড় আসত আমাদের বাড়ীতে। আর সে গুলো বানানোর আগে সেই সব লাল নীল সবুজ হলুদ কাপড়ের টুকরো হয়ে উঠত আমার ছেলেবেলার সাজগোজ।কখনও বা শাড়ি কখনও বা ধুতির মত । আমি সেগুলো পড়ে বেশ কয়েকদিন বাড়ীময় ঘুরে বেড়িয়ে তার গুস্টির তুষ্টি হলে সেগুলো চলে যেত দর্জির কাছে ওই ঝান্ডী তৈরী হতে। শাড়ীর ওপর টান টা বোধয় হয় আমার সে সময়েরই গায়েখড়ি। ... ...
শিবপালগঞ্জ গাঁ বটে, কিন্তু বসেছে শহরের কাছালাছি বড় রাস্তার ধারে। অতএব বড় বড় নেতা ও অফিসারকুলের এখানে আসতে কোন নীতিগত আপত্তি হওয়ার কথা নয়। এখানে শুধু কুয়ো নয়, টিউবওয়েলও আছে। বাইরে থেকে দেখতে আসা বড় মানুষেরা তেষ্টা পেলে প্রাণসংশয় না করেই এখানকার জল খেতে পারেন। এইসব ছোটখাট অফিসারের মধ্যে কোন না কোন এমন একজন দেখা দেন যে তাঁর ঠাটবাট দেখে স্থানীয় লোকজন বুঝে যায় যে এ এক্কেবারে পয়লা নম্বরের বেইমান। ... ...
ছেলেবেলার কথা মনে হলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ছেলেবেলাটা অনেক বেশি ভাল ছিল। ঠাকুমার পুনর্জন্মের ইচ্ছা আর কিছু না হোক আমার মেয়েলিপনা বা ঠাকুমাপনায় কোনও অসুবিধা ঘটায় নি।তাই একটা বয়স পর্যন্ত চুড়ি হার টিপ চাইলেই পেতাম। আমার সব কিছুতেই সকলের প্রশ্রয় একটা থাকতই। ... ...
সে সব অনেক বছর আগের কথা। যে সংগঠনে আমার কাজের শুরু,একবার কোলকাতার উপকন্ঠে সেই সংগঠনের সকলকে নিয়ে এক আবাসিক কর্মশালার আয়োজন হয়েছিল। আমার মত অন্য যৌনতায় বিশ্বাসী এতগুলো মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে কয়েকটা দিন কাটানো আমার সেই প্রথম। অতবছর আগেও বিশ্বাস করতাম নারীত্ব একটা অনুভুতি। আজও সেটাই বিশ্বাস করি।আমরা বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক অবস্থানে বসবাসকরা বিভিন্ন মানুষ। এই চারদিনব্যাপী কর্মশালার মাঝে এই যে মনের আদান প্রদান, গ্রাম, শহর, মফস্বল,আধা মফস্বল বিভিন্ন রকম জীবনযাপনে অভ্যস্ত বিভিন্ন বয়সের মানুষ আমাদের এক এক জনের অভিজ্ঞতাও এক এক রকমের ... ...
আমি জয়দীপ, যে মনে করে সেক্সুয়ালিটি তার পরিচয় না, তবুও নিজের যৌনতা ও লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সোচ্চার। বহু বছর ধরে। একই সাথে এইচআইভি নিয়ে যাপন করছি ২০০৬ থেকে এবং এইচআইভি নিয়েও কিভাবে ভালো থাকা যায় তার প্রচার ও এইচআইভি নিয়ে মিথ ও মিস কনসেপ্শন পরিবর্তনের কাজ আজ আমার কর্মজীবনের অঙ্গ। এতগুলো বছরের লিঙ্গ রাজনীতির স্বপক্ষে বিপক্ষে চলতে চলতে কখন নিজের অজান্তেই জড়িয়ে গেছি আন্দোলনের সাথে তা আজ আমার জীবনের সাথে মিলে মিশে গেছে। সেই সঙ্গে নিজের জীবনের ছোটবেলা, বড়বেলা, হোমোবেলার স্মৃতি ভাগ করে নিতেই শুরু করছি পুরোনো কথার ঝাঁপি। ... ...