কালীপূজোর সময় ছাত থেকে বোতলের সাহায্যে ছাড়া হত হাউইবাজি, পরের প্রজন্মে রকেট বোম। তারাও ফিরে আসত প্যারাবোলার পথেই। কিন্তু প্যারাবোলার গঠন তো রেললাইনের মত সমান্তরাল নয়, বরং খানিকটা চুলের কাঁটার মত; ফলে শুরুর বিন্দু আর শেষের বিন্দু একজায়গায় মেলে না। ভূমি একই, কিন্তু দুটোর মধ্যে বেশ কিছু তফাৎ থেকে যায় । ... ...
সেটা বোধহয় ১৯৫৭ সাল। শিশু বিদ্যাপীঠস্কুলে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম দশক পূর্ণ হওয়া নিয়ে বড় দিদিমণি অনেক কিছু বললেন। আর কমিউনিস্ট পার্টি তখন ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ শ্লোগান ছেড়ে দিয়ে বেশ কোমরবেঁধে ইলেকশনে নেমেছে। ... ...
অনেক রাত্রে ঘুম ভেঙে গেল। ঘরের মধ্যে আলো জ্বলছে। কাকামণির বুক পিঠ জুড়ে ব্যান্ডেজ; ভালরকম লাঠির ঘা খেয়েছে। ঘরে ডেটলের গন্ধ। ছোটকারা নাকি পার্কাসার্কাস বাজারের এক কোনে ফার্স্ট এইডের ক্যাম্প খুলে অনেক আহত চাষির শুশ্রুষা করেছে। তাঁদের ফুল সার্ভিস দিয়েছেন আসাদ মেডিকেল হলের ডাক্তার গণি। ছোটকা ঠাকুমাকে বলছিল – পুলিশ ভিড় ছত্রভঙ্গ করার জন্যে লাঠিচার্জ করেনি, পিটিয়ে মেরে ফেলার জন্যে করেছে। একেবারে রাস্তায় ফেলে থেঁতো হওয়া অব্দি মেরেছে। ... ...
আমার নতুন কাজের জায়গায় এসে একসময় অনুভব করলাম আরও অনেক বেশি করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা দরকার। শুধু ক্যুইয়ার নয় সাধারণ মানুষেরও এইচ আই ভি নিয়ে ভুল ভাঙা দরকার। এইচ আই ভি নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক থাকা যায় সেটা লোকে যত জানবে তত এইচ আই ভি পরীক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। এই ভাবনা থেকেই সিদ্ধান্ত নিলাম নতুন একটা পোস্টার ডিজাইনের।এই পোস্টারটা সমস্ত সরকারী হাসপাতালে এইচ আই ভি নির্ণয় কেন্দ্র বা আই সি টি সি বিভাগে আছে। যখন দেখি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ফোনে কেউ বলে "দাদা আপনি সত্যি সত্যি এইচ আই ভি পজিটিভ!এইচ আই ভি নিয়ে সত্যিই ভাল থাকা যায়? একটু আগেই জানতে পারলাম আমিও এইচ আই ভি পজিটিভ।" আর তখন আমাকেই কাউন্সেলিং করতে হয়। এইচ আই ভি নিয়েও সুস্থ স্বাভাবিক থাকা যায় অ্যন্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপির মাধ্যমে। শুধু নিয়মিত ওষুধ আর চিকিৎসকের পরামর্শ মত চলতে হয়। তখন বুঝতে পারি পোস্টারে সেদিন আমার মুখ দেখানোর সিদ্ধান্তটা একদম সঠিক ছিল। ... ...
সুবীর কুমার বসুকে কেউই চিনবেন না। সুবীর বসু কখনো কখনো আমার সঙ্গে বিকেলে হাঁটতে বেরোতেন। শেষ বয়সের কুঁচকে যাওয়া, চকচকে চামড়া, টলোমলো পা। হাত ধরে ধরে কিছুটা নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে আনতাম আবার। যাওয়াতেও যে তাঁর খুব আপত্তি ছিল, এমন নয়; আবার ফিরেও আসতেন লক্ষ্মী হয়ে, কিচ্ছুটি না বলে। ... ...
ছাদের পাঁচিল টপকে পাশের ছাদে গিয়ে খেলার সময় কখনও টের পাই নি যে দু’একটা কুচোকে বাদ দিলে বেশিরভাগই আমাদের দু’ভাইয়ের থেকে বয়সে বড়। ক্রমশঃ ওদের মুখের ভাষা বদলাতে লাগল। আমরা নতুন নতুন শব্দ শুনে ভোকাবুলারি বাড়াতে লাগলাম। যেমন, তিনক্লাস উঁচুতে পড়া নন্টে হয়ত ঝগড়া হলে ফন্টেকে বলল — যা না , এখানে টাইম পাস না করে নিজের মালের পেছনে ছোট্ ! ... ...
সমকামী পুরুষ ও লিঙ্গান্তরকামী পুরুষের মধ্যেকার এমন টানাপোড়েন আজও হয়ে চলে। অথচ পুরুষালি হওয়ার কারনে নিজের মধ্যে গুমরে মরা মানুষগুলো নিজের কথা প্রাণ খুলে বলতে পারেনা অনেকসময়ই। সামাজিক রাজনীতির চাপে তথাকথিত পুরুষালি-পুরুষের পৌরুষের আড়ালে জোর করে ঢাকা পড়ে যায় তাদের ভালো লাগা খারাপ লাগা যৌনতার উদযাপন। পারিবারিক, সামাজিক চাপ তো বটেই কখনো বা নিজের মধ্যেও চলা দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করতে না পেরে বিয়ের পিঁড়িতে বসে অনেকেই। উভকামী হলে না হয় এক রকম, কিন্তু আজন্মলালিত ফ্রেম অফ রেফারেন্স থেকে নারী পুরুষের বিয়ের সেলিব্রেশনের বাইরে যেতে পারেন না অনেক সমকামী পুরুষ। আবার অনেকেই নিজেদের বিবাহিত সম্পর্কে নিজেকে পুরুষ হয়েও নারী রূপে কল্পনা করে নিজেদের সম্পর্কটাকে লেসবিয়ান সম্পর্কের উদযাপনে খুশি হওয়ার চেষ্টাও করেন। আসলে এই পৃথিবীতে সাদা-কালো, আলো -অন্ধকার এর মতো কেমন যেন দুইয়ের প্রভাব বেশি। এই দুইয়ের পৃথিবী নারী-পুরুষের বাইনারিতে আটকে থাকতেই অভ্যস্ত। আর তাই অন্যরকম মানুষ যাদের মনটা একরকম আর দেহটা একরকম তাদের নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে। আজও তো লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরা বা পাবলিক বাসে মহিলা সিটের বিরোধিতা করে চলেন একদল মানুষ। আসলে আগুনের আঁচ তাদের গায়ে লাগেনা তাই তারা হয়তো বোঝেন না। আজও যেখানে মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয় সেখানে এই লিঙ্গ রাজনীতির লড়াইয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকেরা খুব সহজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জায়গা ছেড়ে দেন না। আর তারপরেও তাঁরা রাস্তার মোড়ে বা ট্রাফিক সিগনালে ভিক্ষা করতে দেখলে নাক কুঁচকে তাকাতে একবারও দ্বিধা বোধ করেন না। অন্য যৌনতার অন্য যাপনের নানা দিক নিয়ে খোঁজ রাখার মতো সময় সমাজের বাকি অংশের নেই। শুধুই ব্যঙ্গ আর বিদ্রূপ দিয়ে বিচার করতে ব্যস্ত তারা। ... ...
কেন এরকম জড়িয়ে যায় সব স্বাদ, রঙ, গন্ধ, আলো, সাজ আমার স্মৃতিতে? কেন স্মৃতির চেয়েও বেশি ভাস্বর হয়ে ওঠে গ্রন্থি ছুঁয়ে থাকা এক-একটি সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়া সুতো? ... ...
যখন দেখলাম আমার এইচ আই ভির পুরো গোপন ব্যাপারটা হাট হয়ে গেল, তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এসব নিয়েই চলব। যত বেশি আমি আপসেট হব ততবেশি সমাজ আমার ঘাড়ে চেপে বসবে। যতই জানি একই সুঁচ- সিরিঞ্জের ব্যবহারে, সংক্রমিত রক্ত বা রক্তজাত দ্রব্যের সংবাহনে, এমনকি গর্ভবতী মা যদি এইচ আই ভি আক্রান্ত হন তাহলে তার ভবিষ্যৎ শিশুর এইচ আই ভি সংক্রমণ হয়। তবুও অসুরক্ষিত বা বিনা কন্ডোমে যৌনমিলনে এইচ আই ভি ছড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কেননা খিদে ঘুমের মত সেক্সটাও যে মানুষের জীবনে অপরিহার্য। আর সেক্স নিয়ে আমাদের অনেকরকম ট্যাবু, অনেকরকম ঢাকঢাক গুড়গুড়। আর তাছাড়া তথাকথিত যৌনতার বাইরের যৌনতা তো এই সেদিনও আইনস্বীকৃত ছিল না। এর ওপর ছিল আমার চূড়ান্ত নীতিবাগীশ দায়িত্ব। তাই যত বেশি আমাকে কোনও সম্পর্কে যেতে দেখলে লোকে আমার এইচ আই ভি নিয়ে বাকীদের সাবধান করত, তার থেকেও বেশি আগেভাগে কোনও ক্যাজুয়াল সম্পর্কে যেতে হলে আমার এইচ আই ভি নিয়ে আমিই সোচ্চার হয়ে বলতে শুরু করলাম। তাতে করে আমার যৌনজীবনটা অনেকটা কম্প্রোমাইজড হলেও মনে হত সুখের থেকে স্বস্তি ভাল। যদিও আজ আমার অনেক বন্ধুই সম্পর্কে আছেন যাদের একজন এইচ আই ভি আক্রান্ত আর অন্য জন এই আই ভি আক্রান্ত নন। ... ...
আমরা বাচ্চারা ফুটপাথ আর গলির মুখে চার আনার রবারের বল নিয়ে ক্রিকেট খেলায় মশুগুল। ব্যাট করছে নীচের তলার আখতারদা -- নিলোফারের ছোড়দা -- ক্লাস এইটে পড়ে। বল করছি আমি, ক্লাস টু। লোপ্পা বলটায় আখতারদা এমন মারলো যে রাস্তা পেরিয়ে সার্কাস হোটেলের বারান্দায় শিককাবাব তৈরির উনুনের পাশে গিয়ে পড়লো। ওরা গেল খেপে, বল আটকে রেখে দিল। আখতারদা গিয়ে কীসব বলে নিয়ে এল বটে, কিন্তু তারপর ব্যাটটা অভিজিতের হাতে দিয়ে নিজে বল তুলে নিল। ... ...
কাজ করতে গিয়ে বুঝেছিলাম কুয়্যার-কমিউনিটির মানুষজনের এই ঝুঁকিপুর্ণ আচরণের মুল জায়গা আত্মপ্রত্যয়ের অভাব। তার অনেক কারণ, নিজেকে দিয়ে যেটুকু জানতাম তা যথেষ্ট ছিল না। আসলে যৌনস্বাস্থ্য বা মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক স্বাস্থ্য অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ। যে মানুষগুলো ছোট থেকে বড় হতে হতে পরিবার সমাজ সকলের কাছে অবাঞ্ছিত জানতে জানতে বড় হয়েছে তাদের হেলথ সিকিং বিহেভিয়ার তৈরী হওয়া অত সহজ না। তার ওপর সম্পর্কের টানাপোড়েন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা, সামাজিক স্বীকৃতির অভাব তখনও পর্যন্ত আইনি স্বীকৃতির অভাব এ সব গুলো ছিলই। আর একটা দিকের মুখোমুখি হলাম তা হল অর্থনৈতিক সমস্যা। আমার বড় হওয়া, পড়াশোনা, স্কুলিং, শহুরে প্রিভিলেজড জীবনের সঙ্গে এখানকার মানুষজনের বিস্তর ফারাক। এখানে এসে দেখলাম দিনের বেলা খেত খামারে কাজ করা তথাকথিত মেয়েলি পুরুষের অনেকেই বৌ বাচ্চা সংসার সামলাতে দুটো টাকার জন্য রাতের বেলা হিজড়া পেশার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ট্রেনে ট্রেনে ছল্লা মেঙ্গে (ভিক্ষা করা) বেড়ায়। রেলপুলিশের তাড়া খেয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে নামার ঝুঁকি নিতে হয়। আবার কখনও কখনও শারিরীক ভাবে খুশি করতে হয় রেল পুলিশকে। কখনও রাতের বেলা গুড শেডের লরীর ড্রাইভার বা খালাসীর সাথে টাকার বিনিময়ে শারীরিক মেলামেশা তো আকছার ঘটে। এদের যৌনরোগ বা এইচ আই ভি নিয়ে বোঝানো বা কন্ডোমের ব্যবহার নিয়ে বলতে গেলে প্রয়ই শুনতে হত, "কি লাভ এভাবে বেঁচে থেকে। এমনিই তো মরে আছি, এর চেয়ে এডস হলে তো তাড়াতাড়ি মরে যাব।" তারপরেও কেউ যদিও বা এইচ এই ভি পরীক্ষা করতো, চিকিৎসার আওতায় আনা ছিল আরও কঠিন। ... ...
কাউন্সেলিং নিয়ে ভাবনা আমার ছিলই নিজের সেক্সুয়্যালিটি নিয়ে বুঝতে পারার সময় থেকেই, আমার প্রথম সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর সেটা কতটা প্রয়োজন হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম, কেননা অন্য যৌনতা যাপন তখন আজকের মত সবাইকে বলা যেতনা , আজও অনেকেই বলতে পারেনা। এর সঙ্গে যোগ হল এইচ আই ভি যাপন। বুঝলাম আমাদের মত মানুষের পাশে পজিটিভ ভাবে থাকাটা আমার মত পজিটিভ লোকের ভীষণ জরুরি। আর তাই তো মনখারাপ, বিচিং বা কোনও নেগেটিভ ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে সবসময় ভাল থাকার অভিনয় করতে করতে কখন যেন ভালো থাকাটাই অভ্যেস হয়ে গেছে আমার । ভাল থাকা একটা আর্ট। ওটা রপ্ত করলেই হয়। আমি জানি জাতকের গল্পের মত একমুঠো সর্ষে কারও কাছে পাবনা যার খারাপ থাকা নেই। নিজেকে বোঝাই আমার মাথার ওপর বর্ষায় ছাদ আছে, দু'বেলা পেটপুরে খেতে পাই, শীতে গায়ে গরম পোষাক দিতে পারি, তাই বাকী দুঃখ নিয়ে ভাবনাটা বিলাসিতা! ... ...
এখন হয়তো কাউন্সেলিং ব্যবস্থা অনেক পাল্টেছে। আসলে এইচ আই ভি কাউন্সেলিং এর ভাবনা চিন্তা এখনকার মত তখন ছিল না। এইচ আই ভি প্রোগ্রামের খোলনলচে বদলেছে অনেক পরে। তখন অনেকেই মনে করত এইচ আই ভি আক্রান্তের যৌনজীবন থাকা উচিত না, আজও অনেকে করে। কাউন্সেলিং ব্যবস্থায় কন্ডোমের ব্যবহার করতে বলা হত নীতি পুলিশি দেখিয়ে, বলা হত, "কন্ডোম ব্যবহার না করলে, তোমার থেকে অন্যের এইচ আইভি ছড়াতে পারে" বিষয়টা যতটা সত্যি ততটাই এইচ আই ভি আক্রান্ত ব্যক্তির পুনঃসংক্রমণ বা অন্যান্য যৌনসংক্রমনের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা সব পরিসরে হত না। আজও অনেক কম হয়। দুজন এইচ আই ভি আক্রান্তেরও যে যৌনমিলনে কন্ডোম ব্যবহার প্রয়োজন তা নিয়েও কথা কমই হয়। আরও একটা অদ্ভুত বিষয় লোকজন মনে করে কারও এইচ আই ভি আছে তা বাকীদের জানালে বোধহয় বাকীরা সুরক্ষিত থাকবে। আসলে অনেকেই নিজের রক্তপরীক্ষা করায় না, নিজের অজান্তেই তারাও এইচ আই ভি-র বাহক হতে পারে তাদের থেকেও এইচ আই ভি ছড়াতে পারে এ সত্যটা মেনে নিতে মানুষজন কিছুতেই পারেনা। সকলেরই নিজেকে এইচ আই ভি বা যৌনরোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে কন্ডোমের ব্যবহার জরুরি এই সহজ তথ্যটা সকলের বোধগম্য আজও নয়।আসলে যৌনতা বিষয়টা নিয়েই তো খোলাখুলি আলোচনা আমাদের সমাজে আজও কম হয়। ... ...
আসলে তখনও পর্যন্ত সকলেই মনে করত একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকেদেরই এইচ আই ভি হয়। আজও বহু মানুষ মনে করে এইচ আই ভি থাকে যাদের তারা তথাকথিত সুস্থদের দলে নয়। কিছু না কিছু রোগলক্ষণ দেখা দেবেই। যা সবচেয়ে ভুল। আমাদের জীবনযাত্রা আমরাই জানি। আর কেবল মাত্র একজন যৌনসঙ্গী থাকলেও এইচ আইভি হতে পারে। যদি সেই সঙ্গীর কোনও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে থাকে। আজকাল যদিও কাউন্সেলর বা চিকিৎসকরা কারও এইচ আইভি ধরা পড়লে তাকে নিয়ে বসে আলোচনা করেন। কিন্তু সেদিন সেই মুহুর্তে আমার করনীয় কি আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ... ...
কিশোর কবি সুকান্ত এসব ছড়া লিখেছিলেন সম্ভবতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিনগুলিতে বেলেঘাটায় বসে। আমাদের বাড়িতে রেডিও এল ১৯৫৭ সালে, তখন ক্লাস টু’তে পড়ি। এর আগে কাকারা রেডিও ভাড়া করে আনতেন মহালয়ার একদিন আগে, বাড়ির সবাই ভোর চারটেয় উঠে ‘শ্রীমহিষাসুরমর্দিনী’ শুনবে যে! সেটা আসলে কালীবাবুর ইলেক্ট্রিকের দোকানে তৈরি লোক্যাল সেট, খালি কোলকাতা ক’ স্টেশন শোনা যায়। ... ...
বিতান মনে করত ওর জায়গায় আমাকে বসিয়ে দিয়ে ও দূর থেকে নিজের মত করে সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করবে। আসলে সংগঠন যতই নেটওয়ার্কের অংশ হোক না কেন, প্রজেক্ট আর সংগঠন দুটো যে আলাদা বিষয় ও কিছুতেই মানতে চাইত না। এর জন্য শুধু মাত্র ওকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। এই নেটওয়ার্কটার শুরুতেই তো গলদ ছিল। নামেই নেটওয়ার্ক, আর্থিক অনুদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে আসলে তো কয়েকটা সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরী আর একটা সংগঠনমাত্র। যে যে সংগঠনের প্রতিনিধিরা মিলে এই নেটওয়ার্ক করেছিল তারা স্ব-স্ব এলাকায় প্রজেক্টের ড্রপ ইন সেন্টার কেই নিজের নিজের সংগঠনের অফিস মনে করত।সেখান থেকেই কেউ কেউ নিজেদের সংগঠনের কাজ চালাতো। কোনও একটি সংগঠনের রেজিষ্ট্রার্ড অফিস অ্যাড্রেস এবং এই তথাকথিত নেটওয়ার্কের রেজিষ্ট্রার্ড অফিস অ্যাড্রেসও তো এক ছিল। এমন কি অনেক এলাকার সংগঠন নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে প্রজেক্টের কাজকেই নিজের সংগঠনের কাজ বলে দাবি করে অন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার কাছে রিপোর্ট দাখিল করে আর্থিক সহায়তা নিত। সে এক আজব চিড়িয়াখানা। সাধে কি আর লোকে এন জি ও বললেই বাঁকা চোখে তাকায়। তবে এটাও সত্যি আমার দেখা বহু সংগঠন প্রথমদিন থেকেই আর্থিক সততার সাথে কাজ করে আসছে আজও। ওই জন্যেই বলে হাতের পাঁচটা আঙ্গুল সমান নয়, তাই মুড়ি মুড়কি এক করে দেখতে নেই। ... ...
বিভিন্ন সময়ে শুরু থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এল জি বি টি সংগঠনগুলোর মধ্যে আর্থিক অনুদান পাওয়া নিয়ে রেষারেষি ছিলই। তখনও ভারতবর্ষে ৩৭৭ বিদ্যমান।এল জি বি টি ইস্যুতে আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাও তো তখন অনেক কম ছিল। এমনকি যে সংগঠন তথা নেটওয়ার্কটায় আমার কর্মজীবনের শুরু, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে রাতারাতি তা তৈরির ইতিহাসেও একে অন্যকে বঞ্চিত করার মতো অনেক “কালিমাযুক্ত ঢাকঢাক গুড়গুড়” ছিল যে পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গে এল জি বি টি সংগঠনগুলোর মধ্যে আর কখনো সদ্ভাব তৈরী হলো না। এমনকি আজ যে এল জি বি টি কমিউনিটির মানুষ একে অন্যকে বিশ্বাস করেননা তার কারণও এর পিছনেই নিহিত আছে বলে আমি মনে করি। আর তাই " না আঁচালে বিশ্বাস নেই" এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী ছিলাম সকলেই কমবেশি। অথচ এইচ আই ভি এডসের বাইরে গিয়ে, সংগঠনের জন্য সরাসরি আর্থিক সহায়তা আসুক এটা আমরা সকলেই চাইতাম। ... ...
আমার তখন এসব গা সওয়া হয়ে গেছে। মোটামুটি জামাকাপড় পাল্টানোর মত করে সকলে শরীর পাল্টায়, আমিও ততদিনে বুঝতে শিখেছি জোর করে আটকানো যায়না কিছুই। এ জগতে শরীরের ছড়াছড়ি, আর যে যত নষ্ট সে তত ভাল। পুরুষমানুষ আবার নষ্ট হয় নাকি। বস্তাপচা সতীত্ব আসলে ন্যাকামি। বিপ্রদাসকে এসব বলতে গেলে সে তো আর এক কাঠি ওপরে, পারলে আমাকেও বেচে টেচে দেয়। এ বৃন্দাবনে সবাই সতী। নিজেকেও বোঝাই ভালবাসা তো মনে মনে, মনটাই সব। কোলাকুলি হাত মেলানো সেটাও তো শরীর আর, গোপন অঙ্গ সেটাও শরীর। তবুও মন মানে না। এ সমাজে যেমন কেউ সম্পর্কে আছে জানার পরেও তার সঙ্গে লোকে কিছু করে বেড়ায় তেমনই তার সঙ্গীর কান ভাঙাতেও ছাড়েনা এই বলে যে "তোমার ভালবাসার মানুষটা মোটেও লয়াল নয়।" অন্যের মুখ থেকে কিছু শুনে অপ্রস্তুত হয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে আমি চাই নি কোনওদিন। ... ...