কয়লা পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে তারা সেমিনারে সেমিনারে গলা ফাটায়। জঙ্গল সাফ করে তৈরি উৎকৃষ্ট কাগজের হাজার হাজার পাতায় তারা রিসার্চ রিপোর্ট তৈরি করে। কিন্তু সেমিনার হলে দৈবাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ কিছুক্ষণের জন্যেও বন্ধ হয়ে গেলে, বিক্ষোভে সবাই হাহাকার করে ওঠে। কয়লা পোড়ানো বিদ্যুতে এসি না চললে, আলো না জ্বললে, পরিবেশ সচেতন বিজ্ঞানের যে দম বন্ধ হয়ে আসে। ... ...
যে কোনও কিছুর শুরু আর শেষের মধ্যে একটা বর্ণময় আলো-আঁধারি থাকে। থাকে এক অনন্য প্রাপ্তি। অসীম নীলাকাশ। আর সীমাহীন বারিধি। যেখানে জীবন ঢ্যালা মাটির সাথে মণিমাণিক্যও কুড়িয়ে নেয়। রোদের কস্তূরী ভেঙে ভেঙে ঐরাবত মেঘগুলো ধেয়ে আসে বাঁধনের শিকল কেটে। মুক্তি। উল্লাস। চাওয়া পাওয়ার বাষ্প জমলেই ক্লান্তি নামবে বুকের পাঁজর ঘেঁষে। রোমকূপে বাসা বাঁধে তখন মন খারাপের ঢেউ। মহাবিশ্ব জুড়ে জমতে থাকে চাপ চাপ রক্তের মতো আলকাতরা অন্ধকার। হয়তো বা এটাই সেই উলঙ্গ সত্য। নির্মম বাস্তব। ... ...
বিলাসপুর সেন্ট্রাল জেল। দুটো রাত কেটে গেছে। ঘুম হয় নি। দেয়ালে পিঠ দিয়ে বসে ছিলাম। দিদি আমার কাঁধে মাথা রেখে একটু ঝিম মেরে রয়েছিল। আমরা খুনি নই, নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখেছি -- এটা সত্যি না ব্যাড ড্রিম। আনফরচুনেটলি সত্যি। একেবারে কাফকা মার্কা। পিজি ক্লাসে কাফকার ‘দি ট্রায়াল’ পড়াই। কখনও ভেবেছি এইরকম কাফকেস্ক অভিজ্ঞতা আমাদের দু’বোনের কপালে জুটবে? আমরা দুই বোন, সংস্কৃত সাহিত্য ও ইংলিশ লিটারেচারে ডক্টরেট, তাও শান্তিনিকেতন থেকে — আমরা আজ ছত্তিশগড়ের জেলে আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারদের সেকশনে বন্দী! খুনের দায়ে, ভাবা যায়? আমাদের মোবাইল পর্য্যন্ত চালাকি করে বুড়ারে সেই মোটা মত লোকটা পরীক্ষা করার অজুহাতে সীজ করে নিয়েছে। ... ...
ইতিহাস ও ধর্মচর্চা করতে করতে খুব ক্লান্ত? তাহলে ছোটদের গল্প (ছো-গ) পড়ুন। ছুটির সময় স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়ানো বিহারি বিষুণদাদাকে মনে আছে? বাঁশের সরু কাঠি দিয়ে বানানো বিশাল ডুগডুগির মতো স্ট্যাণ্ডের ওপর সাজিয়ে বন-কুল, বিলিতি আমড়া, তেঁতুল বা কুলের আচার বেচতেন? আমাদের পছন্দ ছিল, বিট-নুন, কারেন্ট-নুন, আর মিঠে-গুঁড়ি ছেটানো বন-কুল। তার প্রধান কারণ ছিল বৃদ্ধ বিষুণদাদা - আমাদের ছোট্ট হাতের তালুতে একটুস খানি কারেন্ট-নুন ফাউ দিতেন। অবিশ্যি বনকুলের বীজ "ফুঃ" করে বন্ধুর কান টিপ করে ছোঁড়াতে আমি তেমন নাম করতে পারিনি কোনদিন। সেই বনকুল আর সেই ফাউ কারেন্ট-নুনের আমেজ পেতে পড়তে থাকুন "ছো-গ" ... ...
শুধু প্রতিরক্ষাই নয়, নন্দরাজারা সেচ ব্যবস্থার জন্যেও বহু ক্যানাল এবং জলাধার নির্মাণ করিয়েছিলেন। রাজ্যের সমস্ত ভূমি এবং ভূসম্পদ ও জলসম্পদের অধিকারী যে রাষ্ট্র এবং সেই যাবতীয় সম্পদই যে করযোগ্য ভারতবর্ষে সে ধারণারও প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন নন্দরাজারাই। ... ...
রাজসভায় সম্রাট ষোড়শ লুই (১৭৫৪-১৭৯৩)-এর বসার জায়গাটা আসলে ছিল টু-ইন-ওয়ান – একাধারে সিংহাসন এবং কমোড। হ্যাঁ, যা পড়লেন ঠিক তাই। এই তথ্য সরবরাহ করেছিল সুলভ ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ টয়লেটস, দিল্লির পালাম এলাকায়। সেখানকার গাইড মহোদয় আমায় আর তথাকে জানিয়েছিলেন মহারাজ আহার করিতেন নিভৃতে, কিন্তু ইয়ে মানে পেট খালি করতেন প্রকাশ্যে – প্রমাণ হিসেবে রয়েছে তাঁর সিংহাসন যার রেপ্লিকা রাখা আছে ওই মিউজিয়ামে। ... ...
আগে যাঁরা ভাগাড়পাড়া স্কুলের গল্প পড়েছেন তাঁদের অনেক জায়গাই রিপীটেশান মনে হবে। বস্তুত ঐটা আর এদিক ওদিক লেখা আরো কিছু কুড়িয়ে বাড়িয়েই এটা চলবে। আরেকবার ফিরেদেখা। কেউ যদি পড়ে মন্তব্য করেন সম্ভবতঃ উত্তর দেব না, কারণ এটা আমার নিজের জন্যই নিজের সাথে কথা বলা। আগাম মাপ চেয়ে রাখলাম। ... ...
“এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে” - কবিগুরু যখন এই কথাগুলি লিখেছিলেন, তখন কী তিনি ভারতের এই ইতিহাস জানতেন না? আমি নিশ্চিত, অন্ততঃ আমার থেকে সহস্রগুণ ভালোভাবে জানতেন। তবুও তিনি লিখেছিলেন, হতে পারে, তার একটিই কারণ – ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে সাধারণ ভারতীয়দের ঐক্য দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছিলেন এবং স্বপ্ন দেখেছিলেন, স্বাধীন ভারত বুঝি বা এমনই থাকবে। কিন্তু কই, আমরা তেমন তো রইলাম না? কিন্তু কেন থাকতে পারলাম না? এই সাড়ে ছশ’ বছরের রাজতন্ত্র এবং প্রশাসনিক উচ্চমহলের আত্মক্ষয়ী নির্বোধ অহংকার আমাদের জীবন এবং ভাবনা- চিন্তায় যে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল, সেই অভিশাপই যে আমরা আজও বহন করে চলেছি। ... ...
পৌরাণিক উপাখ্যান আছে, মহামুনি অগস্ত্যের শিষ্য ছিলেন বিন্ধ্যপর্বত। একবার সূর্যের ওপর রাগ করে বিন্ধ্যপর্বত সূর্যের গতিরোধ করার জন্যে খুব বেড়ে উঠছিলেন। সে সময় বিন্ধ্যের বৃদ্ধি কমাতে অগস্ত্যমুনি বিন্ধ্য পার হয়ে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার মনস্থ করলেন। মহামুনি অগস্ত্য বিন্ধ্যপর্বতের সামনে দাঁড়াতেই, মহামুনিকে প্রণাম করতে বিন্ধ্য যখন মাথা নত করলেন, মহামুনি বললেন, আমি যতদিন না ফিরে আসি, এভাবেই মাথা নত করে থাকো। অগস্ত্য তারপরে দক্ষিণভারত থেকে আর ফেরেননি, বিন্ধ্যপর্বত আজও মাথা নত করে আছে এবং সূর্যেরও প্রদক্ষিণ পথ আজও রুদ্ধ হয়নি। কাহিনী যাই হোক, এর সার কথা হল মহামুনি অগস্ত্য দুর্গম বিন্ধ্যপর্বত পার হয়ে দক্ষিণ ভারতে যেতে পেরেছিলেন এবং তাঁর দেখানো পথে, পরবর্তী উত্তরভারতের রাজা, ঋষি এবং উপনিবেশ-স্থাপনকারী মানুষেরা, উত্তরের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি নিয়ে দক্ষিণে যাওয়া আসা শুরু করেছিলেন। ... ...
একমাস আগের কথা।তারিখটা স্পষ্ট মনে আছে - মার্চের ২৬। সেদিন ঠিক বেলা একটার সময় আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল।- ওয়াচ অ্যান্ড সিকিউরিটিজ? বিলাসপুর, লিংক রোড?-জী হ্যাঁ, বোল রহা হুঁ। - মিঃ কোসলে? ডায়রেক্টর?- না, আমি ওঁর অ্যাসিসট্যান্ট বিশ্বাস বলছি।উনি একটা কাজে একটু বাইরে গেহেন। কাল রাত্তিরে ফিরবেন।-- সৌরভ? সৌরভ বিশ্বাস? বাবুমোশায়? জাস্ট দ্য ম্যান আই ওয়ান্ট!--জী হ্যাঁ, আপ কৌন?-- কাজের কথাটা আগে শুনে নিন। আগামীকাল আপনাকে ইন্দোর এক্সপ্রেসে বুড়ার যেতে হবে। বুড়ার হোল জবলপুর লাইনে শাহডোলের আগের স্টেশন। পরশুদিন বিকেলে একই ট্রেনে করে ফেরতের ব্যবস্থা। টিকিট, অন্য খরচা এবং কিছু অ্যাডভান্স একটু পরে আজ রাত্তির আটটার মধ্যে আপনাদের ... ...
এপার বাংলায় পশ্চিম প্রান্তের তিন জেলা মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে বেড়ে উঠেছিল এক রাজনৈতিক আন্দোলন। কিন্তু এই মাওবাদী আন্দোলন হঠাৎ একদিন আকাশ থেকে পড়েনি। কোন পরিস্থিতিতে, কোন প্রেক্ষাপটে জঙ্গলমহলের রুক্ষ মাটিতে এই আন্দোলনের বীজ বপন হয়েছিল, তা নিয়েই রাজনৈতিক উপন্যাস ময়ূরঝর্ণা। ময়ূরঝর্ণা শুধুমাত্র একটা গ্রামের নাম নয়, এক স্বপ্নেরও নাম! ... ...
বাবা একদিন বললেন পনের-কুড়ি দিন তো হয়ে গেল, আর ফোন নয়; একবার ওই অফিসে গিয়ে খোঁজ নাও। আর এক বন্ধুও সেখানে চাকরি পেয়েছিল আর আমারই মত হাপিত্যেস করে বসে ছিল। দুজনে মিলে গেলাম ডালহৌসি পাড়ার সেই অফিসে যেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আর গিয়ে বুঝলাম মহামতি নিৎসে কেন ওই কথাটা বলেছিলেন। কথাটা হল, “যাবতীয় খারাপ জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বাজে হল আশা, কারণ মানুষের যন্ত্রণাকে সে ব্যাটা দীর্ঘায়িত করে।” ... ...
তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার শুরু হয় সপ্তম শতাব্দীতে রাজা স্রোংচান গামপোর পৃষ্ঠপোষকতায়। তারপর রাজা ত্রিসোং দেচেনের রাজত্ব কালে আচার্য শান্তরক্ষিত এবং গুরু পদ্মসম্ভবের সাহায্যে স্থাপিত হয় প্রথম মঠ - সাময়ে। তিব্বতের ইতিহাস তার আগে রহস্যাবৃত, উপকথায় ভরপুর। তিব্বতের সেই ধূসর ইতিহাস নিয়েই এই লেখা। ... ...
হাইস্কুলের মণীষাদি খুবই মারকুটে ছিলেন, তিনিও আর বেত মারেন না, তবে অদ্ভুত অপমানজক শাস্তি উদ্ভাবনে এঁর দক্ষতা ছিল অপরিসীম। ক্লাসে কথা বলায় দুজনকে দোতলার বারান্দায় নিয়ে একে অপরের কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া ও পাশে মিনুদিকে পাহারাদার হিসাবে বসিয়ে রাখা, অঙ্ক না পারলে জুতো হাতে নিয়ে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া, দুজন ছাত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মারামারির অভিযোগ পেয়ে নিজের নিজের জুতো দিয়ে একে অপরের গালে মারতে বাধ্য করা ইত্যাদি ছিল তাঁর উদ্ভাবন। ... ...
বৌদ্ধধর্ম তিব্বতে পৌঁছেছিল সপ্তম শতাব্দীতে। কিন্তু তার আগে ভারতবর্ষে কীরকম ছিল তার চেহারা? হীনযান, মহাযান কী? নির্বাণই বা কী? ... ...
কৈশোর থেকে যৌবনের উড়াল। বদলে যায় পরিবেশ। বদলে যায় স্বজন-বান্ধব-পরিচিতি। বদলে যায় সময়। বদলে যায় জীবন, পুর্ব-লালিত ধ্যান ধারণা। সবার নয়, কারোর কারোর। এ বদলের ছাপ আবার সবসময় বাইরে পড়ে না। তাই আশেপাশের অজান্তেই ঘটে যায় অদল-বদল। আর কখনো কখনো এই বদলের কেন্দ্রে থাকে একটি জড়বস্তু। একটি শিক্ষাস্থান। খিড়কী থেকে সিংহদুয়ারের জীবনে খোলা হাওয়া। বদলের ক্যাটালিস্টও। জীবনে বদলই ধ্রুব। জ্ঞানীরা তাই বলেন। তবু কতটা সহজ হয় এই অন্তর-যাত্রা? কতটা মূল্য দিতে হয়? ... ...
মেহতা সাব কেমন যেন চুপসে গেছেন, থ্যালিয়াম সালফেটের ভিসেরা রিপোর্ট দেখার পর কি? কুমড়োপটাশ পরিহারজি আঙুলের নখ খুঁটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কোসলে স্যার ফাইলে কোন কাগজ দেখছেন, এবং নিজের কিছু নোটস। এবার সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। ... ...