কিন্তু গপ্পো না হলেও, মোটা দাগের ঘটনাবলীও কম রোমাঞ্চকর নয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ৫৪ সালেই ঘটে আরও এক কান্ড। সিনেমা নিয়ে নেহরুর ধারণা এবং তাতে সোভিয়েত মদতের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর আগে থেকেই সেই ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিনেমা হবে, কিন্তু তাতে শ্রমিক-কৃষক সংক্রান্ত 'বাম' ধারণা গুঁজে দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে এই ঘরানার প্রথম দিকের একটা ছবি রিলিজ করেছিল, যার নাম আওয়ারা। এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন, খাজা আহমেদ আব্বাস, যিনি একাধারে আইপিটিএর লোক, নেহরুর খুবই ঘনিষ্ঠ, ক্রুশ্চেভের সঙ্গে ভুল রাশিয়ানে আড্ডা দেন, গ্যাগ্যারিনে মহাকাশ থেকে ফিরলে যেকজন প্রথম দেখা করেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং সর্বোপরি ৪৮ সালের পার্টি-লাইনে বিরক্ত - এই প্রকল্পের পক্ষে আদর্শ। তিনি এবং রাজকাপুর দুজনেই "আওয়ারা" সিনেমাটাকে "প্রগতিশীল" বা "ভবঘুরে জন্মায়না, তৈরি করা হয়" জাতীয় আখ্যা দিয়েছিলেন সে সময়। এবং বস্তুত চিনে এক ঝটিকা-সফর সেরে এসে আব্বাস এই সিনেমায় হাত দেন। এর পরের বছরই তিনি বানান রাহি। আওয়ারা ছিল হিট এবং রাহি ফ্লপ। ... ...
অনেকদিন ইউরোপে বসবাস হয়ে গেল—কোম্পানির চাকরির দৌলতে এবার ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি—ছোট্ট দেশ, আগে কোনওদিন যাইনি, তাই হালকা এক উদ্বেগ থেকেই যায় তা সে যতই ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করি। মানুষ অভ্যাসের দাস—এই কথাটা আমাদের কেন, প্রায় সবারই শোনা। কিন্তু এর মর্মার্থ অনুভূত হয় এই এমনই পরিবর্তনের সময়। ভারতবর্ষের মানুষ এবং জীবনের বেশিরভাগ সময়টা এখানে কাটাবার পর নিশ্চই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আমাকে ‘কালচারাল শক’ দিতে পারবে না। তবে কিনা দীর্ঘদিন ইউরোপবাসের পর একটা অভ্যাস, একটা ... ...
আমরা এখনো যারা ধর্মের মালা জপতে জপতে, জানোয়ার কমিউনাল রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনায় পা দিয়ে ওপাড়ায় গিয়ে ওদের ঘরে আগুন লাগিয় দিচ্ছি, বারবার কথায় কথায় ধর্মের কথা তুলে এনে ওদের গায়ে ভিনধর্মের ট্যাগ চাপিয়ে দিচ্ছি, ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষিতের মত বলে চলেছি যে ওদের জন্যই আরও বেশি করে এই অতিমারি ছড়িয়ে পড়ছে তারা আসলে নিজেদের ধ্বজাধরা উগ্র জাতীয়তাবাদী মতকে প্রশয় দিয়ে ধর্মের মালা জপছি। আর মহম্মদরা রামেদের জন্য নিজেদের জীবনকেও বাজি রেখে দিচ্ছে। আর সুপ্রিম কোর্ট বলছে কারা রাস্তায় হাঁটবে সেটা তাদের দেখার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী কুম্ভিরাশ্রু ঝড়িয়ে বলছে তার ভুল হয়ে গেছে তিনি আগে শ্রমিকদের কথা ভাবেননি। এদিকে এখনও হাজার হাজার শ্রমিক হেঁটে বা ট্রাকের মাচায় ভেড়ার পালের মত ঘরে ফিরছে। ... ...
চাইলেই গেরুয়া পরা যায় না। রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ার সুবাদে দেখেছি প্রথম স্তরে ব্রহ্মচারীরা সাদা পরতেন। সেখান থেকে গেরুয়ায় উত্তরণের জন্য পরিশ্রম করতে হত। ঐতিহাসিকভাবে গেরুয়া বসনের উৎস যেটুকু শুনেছি তা হল- সংসারত্যাগী সন্ন্যাসী বা ভিক্ষুরা কোনো মূল্যবান বস্তু এমনকি সাধারণ বস্ত্রও উপহার নিতে পারতেন না গৃহীদের কাছ থেকে। পরিত্যক্ত বস্ত্র সংগ্রহ করে মাটি দিয়ে রঙ করে পরতে হত। সেখান থেকেই গৈরিক রঙের জন্ম। গিরিমাটির রঙকে গৈরিক বলা হত। ... ...
জঙ্গলের মধ্যে দুঃসাহসিক বন্দুক যুদ্ধে আমার ধরা পড়া, ইউরেনিয়াম প্ল্যান্ট উড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত, বিস্ফোরক দিয়ে পুলিশ থানা উড়িয়ে দেওয়া - এইসব খবর বেরুচ্ছে হৈহৈ করে। অবশেষে তদন্তকারীরা সব ফিরে গেল - দিল্লি, পাটনা, কলকাতা, পাঞ্জাবে, আমার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লেখা মোটা মোটা সব ফাইল নিয়ে - আমাকে আমার খুপরি সলিটারি সেলে ফেলে রেখে। বাইরের পৃথিবী, এমনকি জেলখানারও অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন আমার সেলে। তখনই মনে হয় আমি ঠিকঠাক বুঝতে পারলাম - গত কদিন, কয়েক সপ্তাহ ঠিক কী হচ্ছিল। এর আগে পর্যন্ত আমি বোধহয় ঠিক বুঝতেই পারিনি, কী চলছে, কী হতে পারে, কী হবে। আমার মস্তিষ্ক বোধয় এই ভয়ানক চাপ থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার চিন্তা পদ্ধতিকেই কিছুটা অকেজো করে দিয়েছিল - অন্তত শুরুর কিছুদিনের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে আমাকে মানিয়ে নেওয়ানোর জন্য। ... ...
ঠাকুরের কথা, "মানবগুরু মন্ত্র দেন কানে, জগৎগুরু মন্ত্র দেন প্রাণে।" সেই সকল মানুষ – যাঁদের মধ্য দিয়ে কথায়, লেখায়, সুরে, কাজে জগৎগুরু, পরম আমাদের প্রাণে সৃষ্টির বার্তা পাঠিয়ে চলেছেন – সব্বাইকে আমার শ্রদ্ধা জানাই আজকের দিনে। ... ...
ঝড়ে ভেঙে পড়া মহীরূহর মতই - নেমে আসে কোন কোন মৃত্যু... ... ...
“আপনারা আমার নাম ছেপে দিন, আমার ছবি প্রকাশ করুন। গণধর্ষিত বলে আমি এসবে ভয় পাই না। আমার সঙ্গে তাবত্ উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ আদিবাসী ভাই-বোন আছে। আমার স্বামী, ছেলেমেয়ে, পরিবার-পরিজন — সবাই আমার সঙ্গে আছে। লোকলজ্জার ভয়ে আমি নাম-পরিচয় গোপন করলে আসামীরা সকলেই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। ওরা সরকারি দল আওয়ামী লীগ করে। সকলেই চলে যাবে পর্দার আড়ালে।…”চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা সদর হাসপাতালের বিছানায় আধশোয়া হয়ে কথাগুলো আমাদের বলছিলেন সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের মারপিটে গুরুতর আহত, সম্ভ্রম হারানো ওঁরাও আদিবাসী ... ...
সিনে নস্টাল ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...
বলে লাভ নেই, ভদ্দোরলোকের কুঞ্জ দোষ ছিল। কথায় কথায় জোকার দিয়েছেন, কুঞ্জবন অযথা শিহরিত বা ফালতু হম্বি তম্বি কুঞ্জ সাজাও গো, কুঞ্জের মাঝে কে গো রাধে, কে গো রাধে/ ললিতায় বলে রাধার বন্ধু আসিয়াছে। তাই আমাদের কল্পনায় এই কুঞ্জ খুব নম নম ভাব করে করে ফেললে হবে না, লতা পাতা, ফুল, ফল, পাখি, ছোট্ট ছোট জীব ঘুরছে, উড়ছে এমনই এক দেশ তৈরি করা হবে, শ্রীরাধিকার বাড়ির গায়ে। এ যেন সঙ্গীত সাবানের বুদবুদে রং উড়িয়ে সুরের গায়ে চিনির দানার মত কথা সাজাচ্ছেন, খাঁটি জহুরি। সখি গো একা কুঞ্জে বসে আমি পথ পানে চাইয়া/ নড়িলে ... ...
দুধসাগর জলপ্রপাত, তারকরলি সমুদ্রসৈকত -- দু’চারমাস বাদে বাদে একবারটি এদিক সেদিক ঘুরে না এলে তো বদ্দিবুড়ির হাড় মুড়মুড়ি, কান কটকট শুরু হয়ে যায়। জীবন এদিকে তার কালো সাদা ধুসর মাটিপাথর রক্তপুঁজ ফুলফুলুরি উপুড় করে দিয়েই যায় --- বদ্দিবুড়ি একবার ভাবে জীবন বড় রঙীন আরেকবার ভাবে জীবন কেমন পাঁশুটে কুচ্ছিত। হাত পা ছটফটায় পালাতে চায় তো বদ্দিবুড়ি না বেরিয়ে করেটা কি? ... ...
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাণিজ্যমেলার ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, মোটামুটি ১৪৭৮ সাল থেকে নিজস্ব বইয়ের সম্ভার নিয়ে শরতের সময় ১সপ্তাহের জন্য এই মেলায় আসতে শুরু করেন বই ব্যবসায়ীরা। ছাপানো বইয়ের সেই আদ্যিকালে অবশ্য বই ছাপানো থেকে বিক্রি পর্যন্ত সমস্ত ধাপগুলোর কোন আলাদা কেন্দ্র বা ভাগ বিভাজন হয়নি। তাই নিজস্ব কর্মচারী আর শ্রমিকদের সাহায্যে গোটা প্রক্রিয়াটিকে সামলাতেন ১জন বই মুদ্রকই। অর্থাৎ সেকালে বইয়ের মুদ্রকই হতেন বইয়ের প্রকাশক আর বই বিক্রেতাও। ... ...
অনেক রাতে, দেওয়ালের ওপর দিয়ে চেঁচিয়ে কল্পনার সঙ্গে কথা বলে ক্লান্ত হয়ে, সেলের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে দেখতাম - জেলের দেওয়ালের বাইরের অশ্বত্থ গাছের মাথার ওপর ঝকঝকে পরিস্কার আকাশে চাঁদ উঠেছে, একটা সাদা প্যাঁচা স্থির হয়ে বসে পুরুষ ফাটকের ছাতে, উঠোনের অন্য প্রান্তে হাজার হাজার ঘুমন্ত পাখিকে বুকে নিয়ে শান্ত নিমগাছের নিচে নর্দমা থেকে বেরিয়ে ব্যাং গুলো লাফঝাঁপ করছে। ... ...
দার্জিলিং জেলার মিরিকের কাছে চা বাগান ঘেরা একটা ছোট্ট গ্রাম তাবাকোশি। যে চা বাগানের মাঝে আমাদের হোমস্টে তার নাম মাগারজাং টি গার্ডেন। প্রচুর কমলালেবু পাওয়া যায় বলে জায়গাটিকে অরেঞ্জ ভ্যালিও বলে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। অন্য সব পাহাড়ি গ্রামের মতোই এখানে সুস্থ, কর্মঠ মানুষের বাস। গোটা গ্রামে তাই একটিও ওষুধের দোকান নেই। নেই কোনো মিষ্টির দোকানও। ... ...
আমার রোমানিয়া চলে আসায় জ্যোতি একটু ফাপরে পড়েছে। তবে জ্যোতি তো জ্যোতি, ও নিজেই একশ। আমি আসার আগে পেজের জন্য একটা এজেন্সি ঠিক করে দিয়েছে। আপাতত পেজ নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলছে। আমার আর জ্যোতির যাত্রা বিরতি মনে হলেও আসলে আমরা এক সাথেই চলছি। ... ...
পথ চলতে গিয়ে যে সকল মানুষের সান্নিধ্যে এসেছি তেমন একজন কে মনে রেখে ... ...
অপরাজিত মুক্তিপ্রাপ্তির সময় চলে নি। পরবর্তীতে ভেনিসে গোল্ডেন লিও জেতার পর আবার একবার মুক্তি পায় যতদূর শোনা যায়, তাও চলে নি। ... ...