অশান্তি তাঁকে ক্রমাগত আঘাত করে যায়। সবাই শান্তিতে, স্বস্তিতে দিনযাপন করে যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তার স্বাদ পাচ্ছেন না। তাঁর জাগতিক কোনও কিছুর অভাব তো ছিলোনা। ঊনত্রিশ বছর বয়স হয়েছে। একজন যাবতীয় ক্ষাত্রবিদ্যায় নিপুণ নৃপতিপুত্র। বধূ শুয়ে ছিলো ঘরে, শিশুটিও ছিলো। তবু অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়, কোন বিপন্নতা তাঁকে ঘরছাড়া করেছে, তিনি নিজেও বুঝে উঠতে পারেন না। জরা, ব্যধি, মৃত্যু'হীন এক মানবসমাজ তো নিতান্ত অসম্ভব সন্ধান। যদি রক্তমাংসের মানুষ এই প্রাকৃত পরিণতি'কে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, তবে তার জন্য দুঃখ ... ...
এগারোই সেপ্টেম্বর, দুহাজার এক সাল। যাঁরা এখনো মনে রেখেছেন, তাঁদের জন্যে। আমরা কখনো ভুলতে পারিনি, কারণ বড্ড বেশি রিয়েল, র আর রাফ ছিল সেই দিনটা। এখানে এই নিউ ইয়র্কে। ... ...
লতা মঙ্গেশকর -- বিশাল মাপের এক শিল্পী চলে গেলেন। তাঁকে শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানালাম। এবং তার পরে কয়েকটা "শাস্তিযোগ্য" কথা লিখলাম। ... ...
বিরিয়ানি মৃত্যুর মতো'ই, গ্রেট লেভেলার। রাজাগজা থেকে হেলেচাষা, বিরিয়ানিতে সবার রুচি রয়েছে। প্রথমযুগে একটি ধর্মবিশেষের সঙ্গে একে যুক্ত করা হতো, এখন সে বালাই'টি বেশ কমেছে। কিন্তু বিদায় হয়নি। খোদ লখনউ বা হায়দরাবাদে বহু জনতা আছেন যাঁরা এই পদার্থটিকে যথেষ্ট 'গ্রহণযোগ্য' মনে করেন না। মানে ঐ ম্লেচ্ছ সংযোগগত মাত্রাটির জন্য। যাকগে চিত্রগুপ্ত মহাশয় তাঁদের পুনর্জন্ম বরাত করবেন। আমিন।-----------------------------------বিরিয়ানি নিয়ে লিখতে গেলে একটা মহাভারত না হলেও, শ্রীশ্রীচন্ডী নামিয়ে ফেলা যায়। সার ... ...
দিল্লি থেকে ব্যান্ডেল যাত্রাটা, সময়বিশেষে, ঠিক রাজধানী এক্সপ্রেসে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবার মতন সাধারণ থাকে না। দুটো জায়গা এতটাই দু'রকম, মনে হয়, টাইম ট্র্যাভেল করছি। একটা যুগ থেকে আরেকটা যুগে। একটা শতাব্দী থেকে আরেকটা শতাব্দীতে চলেছি। সেই যেখানে সময় এগোয় না, থেমে থাকে, কখনও ক্কচিৎ দুটো একটা পরিবর্তন চোখে পড়ে কি পড়ে না। জীবন গিয়াছে চলে কুড়ি কুড়ি বছরের পার। সেই পঁচানব্বই সালে ছেড়ে যাওয়া, আর ফিরে আসা হয় নি, হবেও না নিকট ভবিষ্যতে, তবু যেভাবে ছেড়ে গেছিলাম, জায়গাটা সেভাবেই রয়ে গেছে। রয়ে যায়। ... ...
প্রশ্নটা খুব সোজা হতে পারত – “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পুজো করা কি ঠিক?” নেহাতই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন। হ্যাঁ বা না বলে কাটিয়ে দেওয়া যেত, যদি না আরও নানা রঙের প্রশ্ন এসে পড়ত সামনে – ... ...
আলিমুদ্দিন, আলিমুদ্দিন, বিপ্লব কবে পাবো?আলিমুদ্দিন, তুমি কি আর মানুষের কথা ভাবো?আলিমুদ্দিন, বিপ্লব বাঁশি তমাল তরুমূলেবাজিয়েছিলে, আমি তখন মাধ্যমিক ইস্কুলে। ছোট থেকেই এসএফআই করি, শ্রেণী সংগ্রাম,ভোটে তখন রিগিং করো, আগুনের নন্দীগ্রাম।আমি তখন অবাক হই, লজ্জায় হই লাল,আনলে কুমির আলিমুদ্দিন, কাটলে তুমি খাল।আলিমুদ্দিন, আলিমুদ্দিন, আদর্শ তো ভালো,ভাবনা জুড়ে জ্বলেছিল সমাজতন্ত্রের আলো।তোমার জন্য এক দৌড়ে ব্রিগেড ময়দানে,আলিমুদ্দিন, আমার বাবা কাজ করে ... ...
ভণিতা করার বিশেষ সময় নেই আজ্ঞে। যা হওয়ার ছিল, হয়ে গেছে আর তারপর যা হওয়ার ছিল সেটাও শুরু হয়ে গেছে। কাজেই সোজা আসল কথায় ঢুকে যাওয়াই ভালো। ভোটের রেজাল্টের দিন সকালে একজন আমাকে বললো "আজ একটু সাবধানে থেকো"। আমি বললাম, "কেন? কেউ আমায় ক্যালাবে বলেছে নাকি"? সে বললো, " না, বলা তো যায় না আজ কে কাকে ক্যালাবে... তাই..." এইবার কথা হচ্ছে, ফাটা দু'রকমের হয়। এক হলো ভয়ে ফেটে যাওয়া, আর দুই, প্রকৃত অর্থেই ফাটা, অর্থাৎ যখন কিনা চচ্চড় করে শব্দ বেরোয়। প্রথমে আমরা দ্বিতীয় রকমের ফাটার কথা ... ...
বেশ নেশায় পড়ে গেছি। কেবল পাখির কথা মনে হচ্ছে। চেম্বারে রোগী বলছে বুক ধুপধাপ করছে-আমার মাথায় ঘুরছে অ্যাশি প্রিনিয়া। রেড স্কেলড মুনিয়া। ইকো করতে করতে মনে পড়ছে ওরিয়েন্টাল হোয়াইট আই। যদি আর একটু সময় নিয়ে ছবি নিতাম। যদি আর একটু কেয়ারফুল থাকতাম! অত হন্তদন্ত ভাব কোনো পাখিই পছন্দ করে না।সার্কল অফ ফিয়ার বলে একটা ব্যাপার আছে না ! আহা, যদি সেন্টার ওয়েটেড মিটারিং রাখতাম! কেন যে ম্যাট্রিক্স মিটারিং ব্যাভার করতে গেলাম! আহা, যদি ৮০-৪০০ থাকতো ! আর একটু সময় পেলে পাইড কিংফিশারের ছবি হত। ওটা কী ঈগল-লং লেগড না কমন ... ...
এমন বেশ কিছু জায়গা ছিল যা আমাকে স্পর্শ করে গেছে। আমি আরও বেশি কিছু চাইছিলাম। ছবির নাম যখন ডাংকি তখন আমার চাওয়া তো অপরাধ না, তাই না? এই ছবির নাম অনায়াসে 'হার্ডি সিং কী প্রেম' কথা রাখা যাইত, রাখলেই পারতেন, আমিও কোন আগ্রহ দেখাইতাম না। কিন্তু নাম রাখলেন ডাংকি আর ডাংকিই আড়ালে থেকে গেল, এইটা কেমন কথা! ... ...
'ভালো লাগছে না রে তোপসে' বা 'ডিলাগ্রান্ডি' বললে বাঙালি মননে এক ধরনের রিফ্লেক্স অ্যাকশন কাজ করে যেন। ফেলুদা/তোপসে, টেনিদা, ঘনাদা ইত্যাকার নামগুলি বাঙালির আড্ডার স্বাভাবিক উপাদান। এই অনুষঙ্গগুলি দিয়ে বাঙালি তার হিউমারের অভ্যাস ঝালিয়ে নেয়, কিছুটা আক্রান্ত হয় নস্টালজিয়াতেও।তবে, এইসবের মধ্যে বাল্যবেলায় পড়া কিছু কিশোরচরিত্ররা হারিয়ে গেছে, কিছুটা উপেক্ষিতই যেন তারা। ক'জন আর নগণ্য সাধু কালাচাঁদকে মনে রেখেছে? ট্যাঁপা-মদনা বললে আমরা ক'জনই বা সহসা আবার ক্লাস ফোরের পূজাপ্রাক্কালে চলে যাই? এইসব চরি ... ...
[আজ বের্টোল্ট ব্রেশট-এর মৃত্যুদিন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে যিনি সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ব্রেশটিয় আঙ্গিক, সেই মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি সামান্য লেখা।] ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কীভাবে যেন পরিচালক ত্রয়ী সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল এক বিন্দুতে এসে মিলিত হন। ১৯৫৫-তে মুক্তি পাচ্ছে ‘পথের পাঁচালী’; একই বছরে মৃণাল করছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’; আর ভারতীয় সিনেমার প্রকৃত পথপ্রদর্শক হিসাবে যাঁর সম্মানিত হওয়ার কথা সেই ঋত্বিকের ১৯৫২ সালে তৈরি ‘নাগরিক’-এ অভিনয় করছেন গীতা সোম যিনি পরের বছরে ঘরনি হবেন মৃণালের। ... ...
কবিতা কৃষ্ণন নাকি টুইটে লিখেছেন, "সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল একনায়কতান্ত্রিক, সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে ঢের খারাপ"। আমি টুইটার দেখিনা। হিন্দু তে দেখলাম ( **লিংক লেখার নিচে) । টুইটারের আড়াই লাইনে এইসব তত্ত্ব লেখার কী মানে জানিনা, অবশ্য গোটা পৃথিবীতেই রাজনীতি এখন রেটোরিক সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব কিছু দেখিওনা, উত্তরও দিইনা। কিন্তু এইটা কবিতা কৃষ্ণন বলেই লিখতে হচ্ছে, কারণ, "প্রগতিশীল"রা একরকম করে আদর্শ পতাকাবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই কবিতাকে উপস্থাপন করছেন। ফলে তাঁর বক্তব্যের কিছু ওজন আছে। এবং এটা ঠিক প্রেক্ষিতহীনভাবে একটা টুইট তুলে আনা নয়। হিন্দুতে দেখলাম, একই লাইনে কিছু কথাও বলেছেন। যেমন সোভিয়েত মডেলকে বিশ্বের খারাপতম একনায়কতান্ত্রিক মডেল হিসেবে দেখতে হবে। ... ...
কার্যকারণ সম্পর্ক জিনিসটা বেশ মজার। ধোঁয়া দেখলেই আমরা আগুনের অস্তিত্ব বুঝি, ভোরে উঠে রাস্তাঘাট ভিজে দেখলে আমরা আগের রাতের বৃষ্টি হয়েছিল কিনা মনে করার চেষ্টা করি, এ সবই কার্যকারণ সম্পর্কেরই খেলা। এবারে হয়েছে কি যে এই কার্যকারণ সম্পর্কের আইডিয়াটাকে আরেকটু বিস্তৃত করে যদি পদার্থবিদ্যার আঙ্গিনায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে কি হবে? লাপ্লাস (যাঁর আবিষ্কৃত নানান সুত্র ও আঙ্কিক পদ্ধতি ছাত্রজীবনে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি করেছে) ঠিক এই কাজটাই করলেন, মোদ্যা কথায় তিনি যা বললেন, তা হল এই, সকল বস্তু ও জীব আদতে পরমা ... ...
যে কোনো শিক্ষকের ক্ষেত্রেই একথাগুলো প্রযোজ্য, বিশেষ করে প্রযোজ্য শ্রমজীবীর শিক্ষাব্রতীদের (আমার নিজের তো বটেই) সম্পর্কে।এই প্রশ্নগুলো/কথাগুলো মাথায় এল বলে লিখে ফেললাম। আপনাদের কী মনে হয় জানতে পারলে একটা আলোচনা করা যেতে পারে।১) আপনি কি বাচ্চাদের অপছন্দ করেন? যে বয়সের বাচ্চাদের আপনি পড়ান তাদের মধ্যে থাকার সময় আপনি কি আনন্দ পান? না কি বিরক্ত বোধ করেন?২) যে বিষয়টি আপনি পড়ান তা কি আপনার ভালো লাগে, না কি, ক্লান্তিকর মনে হয়? ‘বিষয়টি কেন পড়ান’, জিগ্যেস করলে আপনি এই উত্তরগুল ... ...
সময়টা ছিল ২০০৩-এর ডিসেম্বর অথবা ২০০৪-এর জানুয়ারি। আমি তখন একুশ এবং কলেজের ফাইনাল ইয়ার। কলেজ থেকে পিকনিকে গেলাম আমরা ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা দল বেঁধে। জায়গাটা ছিল বাটানগর ছাড়িয়ে গংগার ধারে এক মরে যাওয়া টাউনশিপ, যেখানে কোনো এক সময়ে একটা কারখানা ছিল এবং তাকে ঘিরে লোকালয়। এখন শীতকাল, এখানে সন্ধ্যে নেমে যায় সকাল হতে না হতেই, এবং সারা অঞ্চল জুড়ে একটা কালচে কুয়াশার চাদর।সেই মৃত জনপদ আসলে গোটা কারখানা জুড়েই। তার বড় রাস্তার পাশে বন্ধ কোয়ার্টারের সারি, তার ভাংগা দেওয়াল জুড়ে বর্ষার ড্যাম্প, নিঃঝুম পানে ... ...
(সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে।) ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল ... ...
ছেলেবেলার কোন ইচ্ছে বড়বেলায় পূর্ণ হলে অনেক সময়েই তার স্বাদ খুব মুখরোচক হয়না। ছেলেবেলা থেকে ক্যাভিয়ারের নাম শুনে বড়বেলায় বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে যখন খেতে পেলাম, তখন মনে হল, "এ বাবা, এই ক্যাভিয়ার!" সবারই বোধহয় এরকম কোন-না-কোন অভিজ্ঞতা আছে। আকাঙ্খা আর পরিপূর্ণতার তফাত যোজনখানেক। এর উল্টো অভিজ্ঞতা বরং কম হয়। মানে যেখানে অভিজ্ঞতা আকাঙ্খাকে শুধু মিটিয়েছে তাইই নয়, তার ওপরে কিছু ফাউও দিয়েছে। এরকম একটা উল্টো অভিজ্ঞতা আমার জিম করবেট পড়া।ছেলেবেলায় বাড়িতে সত্যজিতের বহু-আলোচিত প্রচ্ছদওলা 'কু ... ...
এটা মূলত শাক্যর লেখাটির একটি প্রত্যুত্তর। ওখানে লিখলেও হত, কিন্তু একটা আলাদা লেখা হিসেবেই থাক। লেখাটির শিরোনাম এইভাবে দেওয়া যেত, 'কেন মুসলিম মৌলবাদকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত', কিন্তু সেটা ঠিক পছন্দ হলনা। মুসলিম মৌলবাদকে হঠাৎ আলাদা করে বেশি গুরুত্ব দিতে যাব কেন? তার যতটুকু পাওনা গুরুত্ব, সেটাই সে পাক। বেশিও না কমও না। তাই শিরোনামটা অন্যরকমই থাক। যদিও, আগেই বলেছি, এটা শাক্যর লেখারই উত্তর। শাক্যর লেখা, বস্তুত এর অনেকদিন আগে ... ...