একটা অটোতে আমি। অটো চালক আমাকে দেখেই আর সবার মত বুঝে গেলেন আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তিনি হেসে জিজ্ঞাস করলেন, বাংলাদেশ থেকে আসছেন? আমি বললাম, জি, দেখেই বুঝে ফেলছেন? তিনি উত্তর দিলেন না, হাসলেন। একটু আগানোর পরে, বাংলাদেশ তো খুব দারুণ করছে এখন। হাসিনা তো দেখায় দিচ্ছে! আর এদিকে দেখুন, সব চোর বাটপার! আমি কেন আল্লাই জানে বললাম, ভাল খারাপ সব দিকেই আছে, আমাদের ওদিকে তো আরও বেশিই আছে। লুটপাট চলে রীতিমত। তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন, এরপরে আবার চালাতে লাগলেন। এদিকের থেকে বেশি চোর আর কোথাও আছে? এইটা আপনে বললেই বিশ্বাস করব আমি? আমি বললাম, আরে, কি বলেন, এদিকের খবর আমরা দেখি না? এখানে তো কত পরিষ্কার ব্যবস্থা, জবাবদিহি আছে। কেউ চাইলেই একটা কিছু… তিনি হা হা হা করে হাসা শুরু করে দিলেন। আমি থেমে গেলাম। এবার তিনি আবার শুরু করলেন কোন নেতা কত খাচ্ছে, কোথায় খাচ্ছে, দেশটা যে উজাড় করে নিয়ে নিচ্ছে সব চোরেরা এইটা তিনি নিশ্চিত। কবে মুখ থুবড়ে পড়বে এইটাই এখন দেখার বিষয়। আমিও বলা শুরু করেছিলাম প্রায়। হুট করেই মনে হল অনেক আগে পড়া বেসিক আলীর কমিক স্ট্রিপের একটা পর্বের কথা। ... ...
#একাকী_ভ্রমি_বিস্ময়ে - হাফলং ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৬ - - - তেমাথায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছি। কী খুঁজছেন? কমল মিত্রর মতো রাশভারী গলা শুনে ঘুরে তাকাই। বছর পঞ্চাশের প্রশ্নকর্তার লম্বা চওড়া সুঠাম চেহারা, ব্যক্তিত্বময় মুখ, মর্মভেদী দৃষ্টি। বলি, হনুমান মন্দির। কোত্থেকে আসছেন? নিক্ষিপ্ত হয় দ্বিতীয় প্রশ্নবাণ। কলকাতা। ধেয়ে আসে তৃতীয় মিসাইল, ওখানে কী দরকার? অচেনা কারুর এহেন অবাঞ্ছিত প্রশ্নমালা শুনে ভ্রু কুঁচকে যায়। ভাবি ইনি কেন এতো সওয়াল করছেন? মন্দিরে কেন যায় লোকে? বাজার করতে নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তখনই একটু খটকা লাগে। অজনবীর ভাবিত মুখে পড়েছে অন্য ছায়া - স্বগতোক্তির ঢঙে বিড়বিড় করেন, ক ল কা তা! পরক্ষণেই আবার দারোগার মতো সওয়াল, আপনি কী বাঙ্গালী? ভাবি কলকাতা কী কিরিবাতি আইল্যান্ডের মতো দূরবর্তী না বাঙ্গালী নর্থ সেন্টিনেলীসদের মতো দুর্লভ? কলকাতা শুনে, বাঙ্গালী ভেবে অবাক হওয়ায় কী আছে? সাহারা থেকে সাইবেরিয়া - খুঁজলে দু এক পিস বাঙালি কোথায় নেই। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ি। প্রশ্নকর্তার দৃষ্টি নরম হয়। এগিয়ে আসে একটা বলিষ্ঠ হাত। ... ...
একদিকের সবুজ ঘাসেভরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ভাই অনেকটা উঠে গিয়েছিল, পেছন পেছন আমিও। মা নীচ থেকে আমাদের নাম ধরে পরিত্রাহী চীৎকার শুরু করে নেমে আসার জন্য। সেজমামার হইহই হাসি, ছোট্ট বোনটার একদিকে আমাদের সাথে যাবার ইচ্ছে আরেকদিকে বাবা মা’কে ছেড়ে উপরে ওঠার দ্বিধা, প্রথম বরফ দেখার উচ্ছাসে কলকল করে সবাই মিলে একসাথে কথা বলা। দুপুর পার করে মানালি ফিরে কোথাও ভাত না পেয়ে হোটেলের দোতলার বারান্দার গা লাগোয়া আপেলগাছ থেকে আপেল পেড়ে কচমচিয়ে খেয়ে ফেলা, গোল্ডেন আপেলও সেই প্রথম চেনা ...চৌত্রিশ বছর আগের দিনটা তার তীব্র ঠান্ডা হাওয়া, ঝলমলে রোদ্দুর, সরুমোটা গলার আওয়াজ, হইহই হাসি, সব সঅব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আজ। ... ...
আজ একটা বিচিত্র ভ্রমণের গল্প বলবো আপনাদের। প্ল্যান করে তো সবাই ঘুরতে যায়। দুপুরে খেতে বেরিয়ে কখন ঋষিকেশ চলে গেছেন? আমি গেছি। ... ...
সে ঘাড় দুদিকে নেড়ে নেড়ে বলে ‘তু ডেঞ্জার হ্যায় রে ম্যাডাম নেই নেই ম্যায় আ যাউঙ্গা’। ঠিক আছে বাবা, তাই হবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪.১৫তে আবার বেরোই পায়ে হেঁটে এদিক ওদিক ঘুরতে। চারিদিক একেবারে শুনশান, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে শুধু একটা সেলুনের একপাল্লা খোলা। মিনিট চল্লিশেক এদিক ওদিক হেঁটে ফিরি নশরিঙে আবার। কাল খুব সকালে বেরোন তাই আজকেই টাকাপয়সা মিটিয়ে রাখতে হবে। রাতের খাবারে অর্ডার করি ডিমাসা টাইপ ফ্রায়েড রাইস আর চিকেনের ঝোল। এই ফ্রায়েড রাইসে দেখি বেশ কয়েকরকম শাক দিয়েছে কুচিয়ে, পালং ছাড়া বাকী শাকেদের চিনতে পারলাম না। ... ...
গুগল ম্যাপ অনুযায়ী আমাদের ঘন্টা তিন চারের মধ্যেই পৌঁছানোর কথা। কিন্তু পৌঁছাতে রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেল। মূলত আগস্টে অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ধ্বসের ফলে কুলু মানালি অঞ্চলে যে নির্মম ধ্বংসলীলা চলেছে তাতে চারলেনের হাইওয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নতুন করে তৈরী হওয়া সরু একফালি রাস্তায় দুই লেনে আপ ও ডাউন গাড়ি যাওয়া আসা করছে, ফলে যানবাহনের গতি ধীর। ধ্বংসের চেহারা দেখে হাড়ের ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। মানালির ভলভো বাসের স্ট্যান্ড, শহরের গাড়ি ট্যাক্সি পার্কিং এলাকা ভেঙেচুরে বিপাশা নদী খলখলিয়ে বয়ে যাচ্ছে। হাড় পাঁজরা বের করে কটা নিরূপায় গাড়ি, একটা ভলভোবাস বেঁকেচুরে উল্টেপাল্টে দাঁড়িয়ে আছে অজস্র বড় মাঝারি বোল্ডারের মধ্যে। ... ...
“ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের রাজত্বকালে …” ফ্ল্যাশব্যাক! ক্লাস সিক্স, প্রাচীন যুগের ইতিহাস পড়াচ্ছেন শঙ্করবাবু, তাঁর উদ্যত ডানহাতের তর্জনী আর মধ্যমার সঙ্গে হাই পাওয়ারের চশমার আড়ালে ঘোলাটে চোখ ঘুরে চলেছে ঘরের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত, বাঁহাতে ধরা বই যা তাঁর তেমন কোনো কাজে আসে না সিলেবাস মিলিয়ে নেওয়া ছাড়া, সবই যেন তাঁর কন্ঠস্থ! আমাদের উৎসুক মনের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন সাড়ে চার হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার, মিশর নামের দেশে যার উৎপত্তি। খুফু, সেতি, রামেসিস, নেফারতিতি, হ্যাৎসেপশুট নামগুলোর সঙ্গে পরিচয় ঘটছে, পরিচয় ঘটছে অদ্ভুত এক লিপির, ফুল, পাখি, সূর্য এসব দিয়েই যার অক্ষর, শব্দ, বাক্য গড়ে ওঠে! তার নাম হায়রোগ্লিফ! ক্লাস শেষ হতে লাইব্রেরী তন্ন তন্ন করে রেফারেন্স বই ঘেঁটে চলেছি যদি কোথাও কোনো সূত্র পাওয়া যায় এই লিপি শেখার আর নিজের নাম লিখে ফেলার, সাংকেতিক অক্ষরে! হায় রোসেটা পাথর, তোমার নাম সে বালখিল্যরা তখনও শোনে নাই, শোনে নাই শাম্পোলিয়ন বা থমাস ইয়াং-এর নাম! তার জন্যে অপেক্ষা আরও প্রায় বিশটা বছর! আর সামনে থেকে সত্যিকারের সেই দেওয়াল-ভরা রঙচঙে লিপি দেখা – আরও বছর দশ! ইতিহাস বই-এর পাতা থেকে সারি দিয়ে তিনটে পিরামিডের সামনে মধ্যমণি হয়ে বসে থাকা স্ফিঙ্কস স্বপ্নের জাল ছিঁড়ে কোনোদিন ঘোর বাস্তবে নেমে এসে চোখের সামনে ধরা দেবে, ছুঁয়ে দেখবো তাদের, ভাবিনি তো! ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...
নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ডের কথা বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা তো মাথায় আসেই, তার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায় অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের কথাও। ক্লাস সেভেন বা এইটে কোনোভাবে হাতে এসেছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনবদ্য অনুবাদে ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী’। আমারই বয়সী একটি মেয়ে, যে বয়সে আমরা স্কুলে যাচ্ছি, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছি, কেউ আঁকছি, কেউ গান গাইছি, কেউ বা তবলায় হাত পাকাচ্ছি, সেই বয়সেই, অ্যানা নামের একটি মেয়ে লুকিয়ে পড়েছে অন্ধকার ঘরে, বাইরে বেরনো বন্ধ, স্কুলে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে দেখা করা, খেলাধূলা, এমনকি গান-বাজনা পর্যন্ত বন্ধ, পাছে কেউ দেখে না ফেলে, পাছে কেউ শুনে না ফেলে। বাড়ির বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে ভেতরে কয়েকটা গুপ্ত ঘরে লুকিয়ে রয়েছে আটটা তাজা প্রাণ (ডুসেল, আরেক প্রতিবেশী অবশ্য পরে যোগ দেন)। পড়তে পড়তে আনা-র সঙ্গে যেন আমিও ঢুকে পড়েছিলাম সেই গুপ্ত কক্ষে, ভাগ করে নিচ্ছিলাম অজানা আশঙ্কার মুহূর্তগুলো! ... ...
আগে যদি কোন ফিলিপিনো-র (ফিলিপিন্স দেশের লোকজন) সাথে আলাপ থাকত, তা হলে আর কলেজ বেলায় আমাদের মেদিনীপুরের বন্ধুদের ইয়ার্কির ছলেও তাদের ভাত খাওয়া নিয়ে কিস্যু বলতাম না। আমরা বন্ধুদের বলতাম, তোরা এত ভাত খাস যে পাতের উপর দিয়ে বেড়াল ডিঙোতে পারবে না! তো সেই হিসাবে ফিলিপিনো-দের ভাত খাওয়ার পরিমাণ দেখলে বলতে হয়, পাতের উপর দিয়ে বিড়াল তো কোন ছাড়, ঘোড়া পর্যন্ত ডিঙোতে পারবে না! আমি নিজে বর্ধমানের ছেলে – আমরাও ভাত খেতাম। কিন্তু মেদিনীপুর আমাদের টেক্কা দিত এই ব্যাপারে। বর্ধমান এগিয়ে মুড়ি খাওয়ায়! তবে শুধু ফিলিপিন্স কেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশেরই মূল খাদ্য – ভাত। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া যাই হোক না কেন। এরা অনেকেই দিন রাত ভাত খায় – ব্রেকফাষ্টে ভাত, দুপুরে ভাত, রাতে ভাত – মানে ভাতই ভাত। ... ...
"অমরত্বের প্রত্যাশা নেই , নেই কোনো দাবী-দাওয়া , এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া..." রাস্তায় চলতে চলতে অবচেতনে মনে আসছিল ভ্যান গঘের জীবন, জানি না কেন 'জাতিস্মর' গানটাই ভেসে উঠছিল তার সঙ্গে। ১৮৫৩ থেকে ১৮৯০ - একটা লোকের মাত্র ৩৭ বছরের জীবন,যে হঠাৎ তার ২৭ বছর বয়সে আবিষ্কার করে ফেললো যে সে শিল্পী হতে চায়, চিত্রশিল্পী; আর ঠিক পরের দশটা বছর সেই চিত্রশিল্পই তার নশ্বর জীবনকে এনে দিল অমরত্ব! মিউজিয়ামের চারতলায় ধাপে ধাপে হলঘরের মত স্টুডিও-তে যত্ন করে সাজিয়ে রাখা ছবির সম্ভার, অধিকাংশ-ই ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের, তবে বেশ কিছু ছবি আছে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত মুহুর্তের আর মানুষের যেমন পল গগ্যাঁ, বার্নার্ড, কোনিং প্রমুখের। ... ...
চন্দ্রতাল লেককে ঘিরে একাধিক উপকথা, লোককথা প্রচলিত। পুর্নিমার রাতে নাকি পরীরা নামে স্নান করতে। একটা গল্প চন্দ্রদেবের কন্যা চন্দ্রা আর সূর্যদেবের পুত্র ভাগা একে অপরের প্রেমে পড়ে, কিন্তু অভিভাবকরা নারাজ বিয়েতে। তাদের দেখা হয়েছিল বরলাচা-লায়, সেখান থেকে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে বিস্তর বাধাবিঘ্নের পরে তান্ডিতে গিয়ে মিলন হয়। তো লুকিয়ে থাকার জন্য দুজনে দুটো হ্রদ বানিয়ে নেয়, চন্দ্রতাল আর সুরজতাল। দেবদেবীদের ছেলেপুলেরা কি পরিমাণ প্রিভিলেজড দেখুন, হুট বলতেই দুখানা কাকচক্ষু জলের হিমবাহী হ্রদ(গ্লেসিয়াল লেক) বানিয়ে ফেলল। আরেকটা গল্প প্রচলিত যে একে একে সব ভাই ও দ্রৌপদী মারা যাবার পরে ইন্দ্র তার রথ নিয়ে এসে যুধিষ্ঠিরকে চন্দ্রতাল হ্রদ থেকেই সরাসরি স্বর্গে নিয়ে গেছিল। ... ...
“…এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই।সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য,আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাবো,তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়।একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশের নিচে বিপুলা পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা।…”– সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়নাহ, পাহাড় কিনতে চাই না বটে, তবে বাকিটুকু খাপে খাপ। পাহাড়ী পথে পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল চলে যাওয়া, দুপাশে সবুজ অথবা ধূসর চড়াই-উৎরাই, খাদের গহীনতা অথবা আকাশ ফুঁড়ে উঠে যাওয়া বরফে ঢাকা শৃঙ্গ – সেসব অবশ্য-ই চাই, এবং অতি অবশ্যই নির্জনতা, নৈঃশব্দ্য! তা এতদিন ছোটোখাটো কিছু হাঁটার অভিজ্ঞতা ছিল বটে, তবে সে’সব বড়জোর এক বা দু’দিনের খেল। দেশে ফেরার পর থেকে পায়ে হেঁটে ভ্রমণের ব্যাপারটা মাথায় ... ...
আগের পর্ব ঃ পর্ব - ১ পর্ব - ২ সকাল ৬ টায় উঠে দেখি বাইরে ততক্ষণে রোদ উঠে গেছে বেশ, আলোয় আলোকময় চারদিক! তার সঙ্গে ভয়ানক ঠান্ডা, সুতরাং স্নানের প্রশ্ন-ই নেই। তখন কি আর জানি যে পরের তিন দিন হাতে জল দিলেও ইলেকট্রিক শকের অনুভূতি হবে, স্নান তো দূর অস্ত! ফুলহাতা টিশার্টের উপর একটা হালকা উইন্ড চিটার চাপিয়ে নিলাম, কারণ যতই ঠান্ডা থাক বাইরে, ছোটোখাটো ট্রেকের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে এরপরেই পাহাড়ে ওঠা শুরু হলে গরম হবেই আর রোদ-ও বেরিয়েছে বেশ তেড়ে-ফুঁড়ে। এখানে বলে দিই, আমরা আসার দিন পনেরো আগে থেকে আবহাওয়ার খবর রাখছিলাম সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যানের, তাতে মোটামুট সব দিন-ই দেখাচ্ছিল ... ...
কাংড়া, ধরমশালা, ম্যাকলিওডগঞ্জ সব জায়গা থেকেই সামনে দেখা যায় ধওলাধার পর্বতমালা। যত ওপরের দিকে যাবেন তত আরো সামনে এগিয়ে আসবে। ম্যাকলিওডগঞ্জ অনেকে যায় ত্রিউন্ড বলে একটা জায়গায় ট্রেক করার জন্য। ট্রেক বিশেষজ্ঞদের মতে এটা হিমালয়ের সবথেকে সোজা ট্রেক এবং বাচ্চারাও করতে পারে। ট্রেকিংয়ের জুতো বা অন্যান্য গিয়ার না হলেও চলে। ... ...
আমার মতে ভিয়েতনামের যত উত্তর দিকে যাবেন তার সৌন্দর্য্য তত খুলবে। আর সেই সৌন্দর্য্যের ব্যাপারটা চরমে পৌঁছোবে হ্যালং-বে তে গিয়ে। তো সেই ক্ষেত্রে হ্যালং-বে দিয়েই ভিয়েতনাম ভ্রমণ শেষ করা ভালো। কারণ যদি হ্যালং-বে দিয়ে আপনি ট্রিপ শুরু করেন তা হলে আপনার এক্সপেক্টেশন হয়ত এতো বেড়ে যাবে যে বাকি ভিয়েতনামে সেটা আর আপনি ম্যাচ করতে পারবেন না! বিয়ে বাড়িতে মিষ্টি জিনিস শেষ পাতে দেওয়া হয় তার একটা কারণ আছে! ... ...
গতদিনের মেঘ আর কুয়াশার পর এই দৃশ্য যে দেখব, আমরা কেউ-ই ভাবিনি, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ক্যামেরা বের করতেও ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়! ডানদিক থেকে আলোর একটা সরু রেখা হঠাৎ আকাশকে রাঙিয়ে দিতেই সম্বিৎ ফিরল! তখনো এভারেস্ট দেখার কথা ভাবিনি। তার জন্যে আমাদের আর-ও একটু বাঁদিকে সরে যেতে হবে ফালুটের রাস্তায়। এরপর শুরু হয়ে গেল আশ্চর্য অপার্থিব রঙের খেলা, একেবারে টুকটুকে লাল থেকে কমলা হয়ে উজ্জ্বল স্বর্ণাভ হয়ে ওঠার পালা, ডানদিক থেকে একে একে পান্ডিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা, শিমোভো, গ্যেচা বা গ্যোচা, কাবরু ডোম, কাবরু উত্তর ও দক্ষিণ, রাথোং, আর সবশেষে কুম্ভকর্ণ ১ ও ২ – দিগন্তজোড়া তথাগত-শরীর, শায়িত এবং নিদ্রিত। ‘Sleeping Buddha’। সবচেয়ে আশ্চর্য হল, একটুকরো মেঘ ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘা শিখরের উপরে জমে রয়েছে যেন যুবরাজ সিদ্ধার্থের রাজছত্র হয়ে। আমরা এসে দাঁড়িয়েছি সেই রাজদরবারে, একেবারে যথার্থ রাজদর্শন বটে! ... ...
ফ্রায়েডরাইসে গার্নিশ করেছে কাঁচা বাঁধাকপি দিয়ে! তাজ্জব হয়ে বাঁধাকপির জাল সরিয়ে দেখি তার নীচে একস্তর সরু সরু ঝুড়িভাজা গোছের কিছু একটা। বাই মোটামুটি অন্যতম প্রধান পদ মিজো ক্যুইজিনে, কিছু অপরিচিত মশলা দেওয়া ছিল চিনতে পারিনি, স্বাস্থ্যকর এই খাবারটা খেতেও ভাল বেশ। পাশের দুই ঘরের বাসিন্দারা আজই বিকেলের দিকে এসে পৌঁছেছেন। এঁরা এখন বেরোবেন রাতের আইজল দেখতে। কথায় কথায় জানা যায় একজন কোন্নগরের বাসিন্দা, যদিও এখন কুচবিহারে থাকেন কর্মসুত্রে। আরেকজনের মেয়ে সম্প্রতি করমসূত্রে পুণেবাসিনী হয়েছে। আলাপ জমতে দেরী হয় না। বাকীরা কেউ গৌহাটি কেউ ডিমাপুর থেকে এসেছেন, মোট ৮ জনের দল। এঁরা কেউই সেই হাফলঙের সহযাত্রীদের মত গাঁকগাঁকে নন, বলাই বাহুল্য। আর শুধু কালকের দিনটা আইজলে, দেখা যাক কদ্দুর কী দেখে ওঠা যায়। ... ...
নাচ মেরে বুলবুল কি মৌত মিলেগা ... ...