জনমত সম্পূর্ণ রূপে কংগ্রেসের পক্ষে গেছে, তবে কয়েকটা বিষয় নিয়ে তাদের সতর্ক হতে হবে। কারণ কিছু অঞ্চলে বিজেপির সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপের প্রতি মানুষের সমর্থন ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হয়েছে। ... ...
১০ ক্লাসের ইতিহাস বইয়ের ৩ নম্বর অধ্যায়ের প্রথমভাগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ১৮-১৯ শতকে আদিবাসী জনগোষ্ঠীগুলির প্রতিরোধের ইতিহাসে মাত্র সাড়ে পাঁচ লাইন ব্যয়িত হয়েছে 'ভীল' বিদ্রোহের জন্যে। 'ভীল' বলে সেই একদল প্রাচীন উপজাতি গোষ্ঠী, যাঁরা কিনা সেই সুদূর খান্দেশ-আরাবল্লীর রুখাসুখা পাথুরে জঙ্গলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে একটানা বিদ্রোহ করে এসেছিল প্রায় দু'শো বছর ধরে, তাঁদের কথা আমরা বাঙালিরা স্কুলের সিলেবাস নির্বাচনজনিত বাস্তবিক নানা সীমাবদ্ধতার কারণে না জানলেও আরাবল্লীর গাঁও দেহাতের ভীল-মীণা-ডামোর আদিবাসীরা চির গৌরবের সঙ্গে মনে ধরে রেখেছেন তাঁদের প্রিয় দুই শিক্ষক এবং বীর বালিকা কালী বাঈয়ের স্মৃতিকে। একটু সময় খরচা কর পড়ে নেবেন কি কালীবাঈয়ের অজানা ইতিহাস? ... ...
আজ শালপ্রাংশু, অনতিমন্দ্র কণ্ঠস্বরের বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটির ১০৩ তম জন্মদিবস। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দুঃসময়ে ওঁর তিনটি ছবির কথা আজ বেশি করে মনে পড়ছে যেগুলিকে ওর নাগরিক ট্রিলজি বলেন অনেকে। এই তিনটি ছবির মধ্যে অন্তত দুটির বিষয় বিপুল কর্মহীনতা আর অন্তত দুটি ছবিতে মধ্যবিত্তের আদর্শচ্যুতি। কিন্তু সেটা নিছক ঈশপ ফেবলসের নীতিকথা নয়, এই আদর্শচ্যুতির পেছনে যে সামাজিক পটভূমিকার চাপ যা মনুষ্যত্বকে বিকিকিনির হাটে চাপিয়েছে তা সত্যজিত বড় নিষ্ঠুরভাবে উপস্থাপিত করার সাহস দেখিয়েছিলেন। ... ...
সবাই জানে, বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য লড়াই করেছিল। অনেকেই জানে না যে, বাংলাদেশের মানুষ একজন কবির জন্যও লড়াই করেছিল। গেল বছর মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিচ্ছিল যখন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী লড়াইগুলোর ইতিহাস আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে আন্দোলনও। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন আর রবীন্দ্রনাথ- জাতীয় ইতিহাসের এই পালকগুলোর কোন একটিকে বিচ্ছিন্ন করলে যেন খসে যাবে অন্য পালকগুলোও, কংকালসার এক বাংলাদেশ পড়ে থাকবে চোখের সামনে। কিন্তু কেন তিনি নাড়ি ছেঁড়া ধন আমাদের? কেনই বা তার ‘সোনার বাঙলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? বাংলাদেশের একটি নদীর উপর একটি নৌকোয় চড়ে বসুন আর ক্ষণিক ছিন্নপত্র ও ক্ষণিক চারপাশের জীবন ও প্রকৃতির মাঝে ডুবে থাকুন। আস্তে আস্তে একটি ছবি ভেসে উঠবে আপনার অক্ষিপটে; অবাক বিষ্ময়ে আবিষ্কার করবেন, পুরো বাংলাদেশটাই রাবীন্দ্রিক! ... ...
যুদ্ধ বা সামাজিক পরিবর্তন কি শিল্পকে পালটায়, না শিল্পীকে পালটায়? নাকি কোনো কিছুই পালটায় না, সবই সাময়িক? ... ...
বেশি ভ্যান্তারা করে লাভ নেই। মহারাষ্ট্র থেকে দিল্লি, বিহার থেকে বাংলা, উহাদের ছক একটাই, এবং সেটা খুব পরিষ্কার। সিবিআই-ইডি-গ্রেপ্তার দিয়ে আঞ্চলিক বিরোধী সরকারগুলোকে নড়বড়ে করে দাও। চাপে রাখো। সত্যিই দুর্নীতি থাকলে তো সোনায় সোহাগা, নইলে বানিয়ে নাও। তারপর, চাপে থাকতে-থাকতেই খেলে দাও দাঙ্গার তাস। একে হিটলারি মতে বলা হত ব্লিৎসক্রিগ। ঝটিকা আক্রমণ। নানা জায়গায় ঝড়ের গতিতে শত্রুর সামনের লাইনে ফুটো করে দাও। তারপর সামনে চলো। দেখবে শত্রু নালে-ঝোলে হয়ে পিছনে পড়ে আছে। ... ...
কর্ণাটক বিশেষ করে এর পশ্চিম অংশকে হিন্দুত্বের ল্যাবরোটরি বলা হয়। হিজাব এবং হালালের পর এই ল্যাবের নূতন পরীক্ষার বিষয় কাস্ট ও সংরক্ষণ। ... ...
" সম্ভবত আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে টালমাটাল সময়ে, ১০ আগস্ট ১৯৪৭-এর সকালে আমি দিল্লি পৌঁছলাম। ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের শেষে হিন্দোস্তান আর পাকিস্তান নামের দুটি স্বশাসিত ডোমিনিয়নে চিরতরে ভেঙে যাওয়া ভারত ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্ট নিজের প্রথমতম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য অস্থির উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আমিও অবশ্য ভাঙছিলাম...।আমি ভাঙছিলাম আমার সুরক্ষিত আর গতানুগতিক জীবনের সমস্ত শিকলগুলোকে। ... পরিবারের তামাম তির্যক কানাঘুষো, সমাজের সব নিষ্ঠুর নিন্দামন্দ আর লখনৌয়ের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের যাবতীয় অভ্যেসের বন্ধন ভেঙেছিলাম আমি আর পুরুষের কোনরকম সহায়তা আর অনুমোদন বিনে আমার জীবনটাকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য বেরিয়ে এসেছিলাম একদম একলা। আশ্চর্য ধৈর্য্য আর সহিষ্ণুতা দিয়ে আমার ঘটানো এমন অভূতপূর্ব কান্ডকে পারিবারিক আর সামাজিকভাবে সামলানোর জন্য আমি আমার মা আর শাশুড়ি মায়ের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব...।" কেবল এই দেশই নয়, পৃথিবীর প্রথম পেশাদার মহিলা সংবাদপাঠক সাঈদা বানোর আত্মজীবনী 'ডগর সে হঠ কর'-বইটির কয়েক লাইন দিয়েই না'হয় শুরু হোক এই লেখা...। ... ...
এক রাজা। বোম্বাগড়ের। যিনি একাই ছাপ্পান্ন। সর্বত্র বিরাজমান, কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে। ছবির ফ্রেমে আমসত্ত্বভাজা হয়ে নিজেই ঝুলে থাকেন। বলিউডে তাঁর ছবি দেখা যায়, উত্তরাখণ্ডের গুহাতেও। মোনাকো থেকে রোমানিয়া, ইন্টারনেট থেকে টিভিতে সর্বত্র তাঁর ছবি আছে, কিন্তু সামনাসামনি কোনো সাংবাদিক তাঁকে চোখে দেখেননি। তিনি এমন স্টেশনে চা বেচেছেন, যা আর খুঁজে পাওয়া যায়না, এমন ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি পেয়েছেন, যার খোঁজ করতে গেলে আদালত জরিমানা করে। তাঁকে নিয়ে কটু কথা বললে বিবিসিকেও ঠুসে দেওয়া হয়, তাঁর বিরুদ্ধে পোস্টার মারলে পুলিশ ধরে। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই দেশদ্রোহ। কারণ তিনিই দেশ। তিনিই পরমাত্মা। তিনিই পরমেশ্বর। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নিয়েই লিখেছিলেন, "আমরা বেগুনভাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে"। আজ রাজা আছেন, নিরবধিকাল থাকবেন, রোজ সকালে উঠে নমন করবেন। ... ...
কেন ক্রেদি সুইস বিক্রি হল তার সম্যক তথ্য খবরের কাগজ, ইন্টারনেট , টেলিভিশনের ডিবেট (যাকে নাকি বলে নুক্কড় বহস বা নেশন ওয়ানটস টু নো) এবং লোকমুখে চেনা শোনা জানা যায়। সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। আগের পর্বে বলেছি ক্রেদি সুইসের চারটে মূল কর্মধারা – আপনার আমার চির পরিচিত কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কিঙ্গে তারা কখনো লোকসান করে নি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও প্রাইভেট ব্যাঙ্কিং লাভ জনক - দুনিয়ার ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের টাকা ভরা সুটকেস ৭০ নম্বর পারাদেপ্লাতসে গচ্ছিত রেখেছেন। সুদ পেয়েছেন দবাকে। তাহলে সমস্যাটা কোথা হতে এলো? ব্যাঙ্কের অলিখিত মূলধনের নাম বিশ্বাস – সেটি যদি হারায়, দুনিয়ার কোন ব্যাঙ্ক নিরাপদ নয়। এক সময় রান অন দি ব্যাঙ্ক হতো মুখের কথায়, গুজবে, কথা হয়েছে কানে কানে। আজ সামাজিক মাধ্যমের দ্বারা সেই ব্যাঙ্ক রানের কাজ সুচারু রূপে সাধিত হয় - সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের পঞ্চত্ব প্রাপ্তির কাহিনি সকলে অবগত আছেন। ক্রেদি সুইস তার খদ্দেরের বিশ্বাস কবে হারাল? ব্যাঙ্কের প্রতি আস্থা একদিনে বিনষ্ট হয় না, একটি ঘটনায় হয়তো নয়। ঠিক কি কারণে ক্রেদি সুইস একদিন তার কাছে গচ্ছিত ধন হারাতে শুরু করল তার তালিকা শিগগির কোথাও দেখা যাবে। একদিন তা নিয়ে নিশ্চিত পুস্তক রচনা, এমবিএ ক্লাসে পড়ানো হবে। ইউটিউবে দেখা যাবে ঘণ্টা ব্যাপী ক্লিপ। সে বহু মনিষীর কাজ। ... ...
সব মিলিয়ে এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। শাসকের বিরুদ্ধে লিখলে, শাসক ক্ষেপে যায়, কখনও উপেক্ষা করে, এ দেখা জিনিস। অনেকবার দেখেছি। শাসক প্রতিবাদের প্রকরণও নির্ধারণ করে দিতে চায়, সেও দেখেছি। কিন্তু বিরোধী, প্রতিবাদ যাদের পক্ষে যাবার কথা, আঙুল উঁচিয়ে, "এইভাবে লিখুন বলছি, চোপ!" বলে চোখ রাঙাচ্ছে, এ জিনিস দেখা একেবারে নতুন। হয় কায়েমী কোনো স্বার্থ, কিংবা নিছক নির্বুদ্ধিতা, কিংবা দুটোই না থাকলে, এ জিনিস হওয়া কঠিন। এর মধ্যে কোনটা ছিল, বলতে পারবনা। কিন্তু এইসবের চক্করে ফাঁকতালে যেটা হল, সেটা হল, বগটুই কান্ডটাই কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। বছর খানেক পরে, সে নিয়ে আর কোনো আলোচনা নেই। সিবিআই 'মূল অভিযুক্ত'কে গ্রেপ্তার করেছিল, তিনি হেফাজতেই রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। সে নিয়েও বিশেষ কথাবার্তা দেখিনা। শাসক-বিরোধী কোনো দিকেই। ... ...
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটা মানবিক, কতটা যান্ত্রিক? ... ...
মৌসুমি ব্যবসা এক নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানিতে জন্মলাভ করে। অথচ ইতিহাসের সব থেকে যন্ত্রণাদায়ক সত্যগুলোর একটি হল, ভবিষ্যৎ সবসময়ই আমাদের বিষ্মিত করবে, সবসময় অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটবে। বাজার সব থেকে নিষ্ঠুরভাবে তাদেরকেই চমকে দেয়, যারা সব থেকে বেশী নিশ্চিত থাকে যে, তাদের ভবিষ্যৎ অনুমানটি সঠিক হবে। ব্রিটিশ প্রাবন্ধিক জি কে চেস্টারটন একদা বলেছিলেন, "সেই লোকই আশির্বাদপুষ্ট যে কোন কিছুই প্রত্যাশা করে না, কারণ সে তাহলে আর হতাশ হবে না।" ... ...
হেনকালে একজন ব্যবসায়ী ,রাজনীতিক এবং আইনজ্ঞ মানুষ মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন – জুরিখের নিকটবর্তী এঙ্গে গ্রামে তাঁর জন্ম, জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়েছেন ( বন ও বার্লিনে কিছু সেমেস্তার সহ ) : তাঁর সকল বিদ্যা বুদ্ধি জানাশুনো এবং লবির জোরে সুইস কনফেডারেশনের কাছে আবেদন জানালেন- রেল ব্যবস্থাকে দ্রুত উন্নত করতে গেলে সে কাজটি দেওয়া হোক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে , ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা শেখানোর স্কুল খোলা হোক ( যা আজকের ফেডারাল পলিটেকনিক ইনসটিটুট ; আইদগেনোশিসে টেখনিশে হখশুলে – ETH)। সে সব না হয় হলো, কিন্তু টাকা ? সে মানুষটি বললেন , ভাবনা করো না, রেল পত্তন এবং বিস্তারের জন্য আমরা একটি ব্যাঙ্ক স্থাপন করব । লাগে টাকা দেবে সে ব্যাঙ্ক ! তিরিশ লক্ষ ফ্রাঙ্কের শেয়ার ছেড়ে তার দশগুণ অর্থ পেলেন – সবাই উন্মুখ । প্রতিষ্ঠা করলেন প্রথম সুইস ব্যাঙ্ক – ১৮৫৬ ।( দু বছর বাদে ইকনমিসট পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার জেমস উইলসনের চার্টার্ড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া অস্ট্রেলিয়া এন্ড চায়না তার প্রথম শাখা খুলবে কলকাতায়, আজকের এন এস রোডে , দশ বছর বাদে হংকং সাংহাই ব্যাঙ্ক – যথাক্রমে হংকং এবং সাংহাইতে ) । ... ...