হরিদাস পাল নামক পাতাটি কি?এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। ... ...
অন্য দিকে মুসলিমদের অবস্থা চিন্তা করে দেখেন। মুসলিম ব্রাদারহুড মুসলিম উম্মাহ এগুলা আমার কাছে ভুয়া কথা মনে হয়। কোন কার্যকর ব্যবস্থা এদের দ্বারা আজ পর্যন্ত নেওয়া হয় নাই। মুসলিমরা বর্তমান সময়ে ভাগ্য বিতাড়িত জাতি বলে মনে হয়। কেন? ইয়েমেনে মানুষ মেরে ফিনিশ করে দিচ্ছে অথচ কোথাও কোন টু শব্দ হয়নি। না মুসলিম বিশ্বে না মানবতার, মানবধিকারের আঁতুড়ঘর ইউরোপের কোথাও কেউ কোন প্রতিবাদ করছে, কেউ বলতে পারবে না এই মানুষ মারার জন্য কোন একটা উন্নত দেশে রোড মার্চ হইছে, মানুষ জমায়েত হয়েছে, বিক্ষোভ হয়েছে। এর থেকে সামান্য ঘটনায় সিডনি থেকে বার্লিন নিউ ইয়র্ক থেকে প্যারিসে মিছিল শুরু হয় যেতে দেখছি আমরা। শুধু ইয়েমেন না, সিরিয়ায় যা হয়েছে তার প্রতিবাদই কয় জায়গায় কে করেছে? কেউ না। মুসলিমরাও যখন দেখে ঘাতক এখানে মুসলিম তখন তারাও চুপ! পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, ডাবল স্টান্ডার্ড দেখাইতে মুসলিমরাও পিছিয়ে নেই। মুসলিমরা যখন এক সাথে একমাত্র ইহুদিদের আকামের সময় চিৎকার করে তখন কেউ কেউ এর ভিতরে অন্য কিছু খুঁজে পায়। কেউ কেউ বলে মুসলিমদের রক্তের ভিতরে জিনের ভিতরে ইহুদি বিদ্বেষ ঢুকে আছে, তখন আসলে কিছু বলার থাকে না। এই বলার অধিকার সম্ভবত মুসলিমরাই দিচ্ছে। ... ...
আজকাল জেন্ডার ইকুয়ালিটি সব আলোচনার শীর্ষে কিন্তু সেদিন , সেই ইউরোপে এটা কোন বিবেচ্য বিষয় ছিলো না । তবে এটা মানতেই হয় সেই নয়ের দশকেই অ্যাংলো সাক্সন জগতে বিশেষ করে আমেরিকায় মহিলারা সম্মানের স্থান পেয়েছেন সবার আগে , তার পরেই যুক্তরাজ্যর স্থান। ট্যাক্সি ধরার জন্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি । দরাদরিতে পরাস্ত হয়ে আমরা দুজনেই কিঞ্চিৎ বিমর্ষ । হঠাৎ মার্ক বললে, একটা জিনিস মানতে হবে তোমাদের দেশে মহিলারা কর্পোরেট জগতে যেখানে পৌঁছেছেন, জুরিখ জেনিভাতে হয়তো কোনদিন তা সম্ভব হবে না! বন্ডের দর কমে যাওয়ার মর্মবেদনা ভুলে গিয়ে ভারতীয় হিসেবে সেদিন খুব গর্ব হয়েছিল ... ...
এটা, ওই এলাকায় চালু পদ্ধতি। অর্থাৎ টাকা ধার নিয়ে শোধ দিতে না পারলে সেক্ষেত্রে মেয়েদের নিলামে চড়ানো হয়। তাতে যা দাম উঠবে উঠবে। অন্তত আধডজন জেলায়, এএনআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিনিসটা চালু। রীতিমতো স্ট্যাম্প পেপার দিয়ে সইসাবুদ করে কর্মটা সমাধা করা হয়, স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহযোগিতায়। এটাই একমাত্র পদ্ধতি তা নয়। ঋণ পরিশোধের যেমন নানা উপায় থাকে, এক্ষেত্রেও তাই। কেউ যদি নিজের মেয়েকে বেচতে রাজি না হন, সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের নির্দেশে মেয়ের মাকে ধর্ষণ করা হয়। কতজন করে, সেটা খবরের কাগজের প্রতিবেদনে লেখা নেই। কন্যাসন্তান না থাকলে কি কিস্তি পরিশোধের একমাত্র উপায় ধর্ষণ? সেটাও লেখা নেই। তবে, আন্দাজ করা যায়, তাইই হবে। ... ...
"সাদাকো মাত্র বারো বছর বয়সে মারা গেছিল। নিশ্চয়ই ও আরেকটু খেলতে চেয়েছিল, আরেকটু পড়তে, আরেকটু খেতে, ওর বন্ধুদের সঙ্গে আরেকটু গল্প করতে চেয়েছিল...আরও কত্তো কিছু করতে চেয়েছিল ও! কিন্তু সে সব কিছুর স্বাদ নেওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছিল ওর জীবন। ইচ্ছেগুলো, স্বপ্নগুলো সত্যি করার সুযোগ পাবে না বলে কত যে কষ্ট হতো সাদাকোর...!" সাদাকো সাসাকির দাদা মাশাহিরো যখন লেখেন এমন কথা লেখেন, তখন তাঁর শব্দের ভাঁজে ভাঁজে দেশকালসময়সীমানা সব পেরিয়ে আবারও কেমন যেন একাকার হয়ে যায় বড়োদের বাঁধিয়ে দেওয়া প্রতিটা অনর্থক যুদ্ধ আর অনন্ত হিংসায় বলি হতে থাকা অগুনতি অগুনতি শৈশব-কৈশোর! আজ ক'ঘন্টা পর আমাদের অনেকেই যখন উৎসবের রাজপথে হাঁটব, সেসময় আগুনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে কিছু দূর এক দেশে বেবাক থেঁতলে যাবে আরও কিছু অমলিন প্রাণ! আজকের এই লেখা অসময়ে ঝরে যাওয়া বা যেতে থাকা পৃথিবীর এমন প্রতিটি প্রাণের জন্য... ... ...
ছবিটি শুরু হয়েছিল কিন্তু বেশ সুন্দর করে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই সময়, ইতিহাসের সেই সন্ধিক্ষণের সেই উত্তাপ ভালমতই ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। এরপর ছোট্র রেনুকে যখন গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাও খুব হৃদয়গ্রাহী হয়েছিল, বিশ্বাসযোগ্যতার কোন ঘাটতি ছিল না চিত্রগ্রহণ ও অভিনয় শৈলিতে। কিন্তু এরপর যতই এগুতে থাকে ছবিটা, পাঠকের মনে আক্ষেপের কণা সঞ্চিত হতে হতে এমন স্ফীত আকার ধারণ করে যে, মুক্তিযুদ্ধের সিনে এসে দর্শক মুভিটা থেকে চোখ সরিয়ে নিজের স্মৃতিতে জমা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ভাবতে থাকে। ... ...
তাই তো ক্লডিয়ার নোবেল জিতে নেওয়া আমাদের মতো মহিলাদের কাছে বড় খবর। আমরা যারা একসাথে রাঁধতে আর চুল বাঁধতে গিয়ে হিমশিম খাই, যাদের খোঁপাও খুলে যায়, ফোড়নটুকুও পুড়ে যায়, ক্লডিয়ার গবেষণা তাদের কাছে নতুন উদ্যম এনে দিল। ... ...
দেবীপক্ষে দেবীর কেবল পুজো হয়। দেবীরা বেয়াড়াপনা কেউ সয় না। দেবীর ইচ্ছে অনিচ্ছের তোয়াক্কা করে না। প্রয়োজন হলে বোধনের আগেই বিসর্জন দিয়ে দিতে কসুর করে না। ... ...
সেই কোন মহাকাব্যের যুগের যশোমতী হয়ে রানি সুগন্ধা, দিদ্দা কিংবা কোটার প্রশ্নাতীত ঔজ্জ্বল্যের সামনে কিছুটা আবছা হয়ে থাকা সেই সকল সফল নারীদের কাহিনীও সংক্ষেপে ধরা রইল এই লেখাটির মধ্যে….।মহাকাব্যের যুগের রানি যশোবতী থেকে সুগন্ধা, দিদ্দা, কোটা রানির প্রশ্নাতীত ঔজ্জ্বল্যের সমুখে বিস্মৃতা মধ্যযুগের গুল খাতুন আর বিবি হাউরাদের মতো একের পর এক দাপুটে মেয়ে কখনও নিজেরাই সিংহাসনে বসে, কখনও বা কোন রাজার সহযোগিনী হিসেবে এক সুদীর্ঘ সময়কাল জুড়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরের রাজনীতিকে। পড়তে গিয়ে দেখেছি, এঁরা প্রত্যেকে একেক জন মূর্তিমতী আনকোরা আবিষ্কার। সব দিক থেকেই বড্ড আকর্ষণীয় এই মেয়েদের কথা সবার জন্য লেখার ইচ্ছেও ছিল অনেকদিন। যতটুকু খোঁজ পেয়েছি, তার বাবদে বলতে পারি মহারানি দিদ্দা সম্পর্কে খবরের কাগজে লিখিত ফিচার আর ইংরেজি উইকিপিডিয়ার ভয়ানক বাংলা অনুবাদ ব্যতিরেকে আমাদের মাতৃভাষায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের কাশ্মীরি রাজনীতির অবিস্মরণীয় মেয়েদের বিষয়ে সম্ভবত এই প্রথম লেখা হল। ... ...
যশোবতীর পরে কাশ্মীরের সিংহাসনে বসেছিলেন রানি সুগন্ধা, রানি দিদ্দা, রানি কোটা। এর পাশাপাশি নাবালক রাজাদের অভিভাবিকা হিসেবে স্বাধীনভাবে রাজ্যচালনা করেছিলেন আরও অনেক হিন্দু এবং মুসলমান নারীও। তবে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের স্বীকৃতি সত্ত্বেও বিতস্তা তীরের জটিল রাজনীতিতে নারীদের এগোনোর পথ সুগম হয়নি কোনদিন। তবু তাঁরা দৃপ্তপদে এগিয়েছেন আর সকল প্রতিস্পর্ধার মুখোমুখি নির্ভীক দাঁড়িয়ে বুঝে নিয়েছেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার। যশোবতীর বহু শতাব্দী পরেকার হলেও উৎপল বংশের রানি সুগন্ধার কাহিনীও বলে যায় সেই একই কথা…। ... ...
কিন্তু গপ্পো না হলেও, মোটা দাগের ঘটনাবলীও কম রোমাঞ্চকর নয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ৫৪ সালেই ঘটে আরও এক কান্ড। সিনেমা নিয়ে নেহরুর ধারণা এবং তাতে সোভিয়েত মদতের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর আগে থেকেই সেই ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। অর্থাৎ জনপ্রিয় সিনেমা হবে, কিন্তু তাতে শ্রমিক-কৃষক সংক্রান্ত 'বাম' ধারণা গুঁজে দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালে এই ঘরানার প্রথম দিকের একটা ছবি রিলিজ করেছিল, যার নাম আওয়ারা। এর চিত্রনাট্যকার ছিলেন, খাজা আহমেদ আব্বাস, যিনি একাধারে আইপিটিএর লোক, নেহরুর খুবই ঘনিষ্ঠ, ক্রুশ্চেভের সঙ্গে ভুল রাশিয়ানে আড্ডা দেন, গ্যাগ্যারিনে মহাকাশ থেকে ফিরলে যেকজন প্রথম দেখা করেন তাঁদের মধ্যে একজন, এবং সর্বোপরি ৪৮ সালের পার্টি-লাইনে বিরক্ত - এই প্রকল্পের পক্ষে আদর্শ। তিনি এবং রাজকাপুর দুজনেই "আওয়ারা" সিনেমাটাকে "প্রগতিশীল" বা "ভবঘুরে জন্মায়না, তৈরি করা হয়" জাতীয় আখ্যা দিয়েছিলেন সে সময়। এবং বস্তুত চিনে এক ঝটিকা-সফর সেরে এসে আব্বাস এই সিনেমায় হাত দেন। এর পরের বছরই তিনি বানান রাহি। আওয়ারা ছিল হিট এবং রাহি ফ্লপ। ... ...
কেশকর তো রেডিও থেকে হিন্দি সিনেমাকে বহিষ্কার করলেন, কিন্তু গ্ল্যামার-শিল্পপতিরা কি ছেড়ে দেবার লোক? খোদ কংগ্রেসেই উল্টোদিকের জোরালো মত ছিল। তার পুরোধা ছিলেন সদাশিব পাতিল। তিনিও মারাঠি, খাস বোম্বের লোক, এবং আমেরিকা-ঘনিষ্ঠ। পাতিলকে নিয়ে গুচ্ছের কথা শোনা যায়, যেমন, ভারতে 'ব্রিফকেস রাজনীতি'র জনক, বা সিআইএর সরাসরি এজেন্ট। কিছু পরোক্ষ সাক্ষ্যও আছে, কিন্তু প্রমাণিত সত্য বলা কঠিন। সত্য হলেও ব্রিফকেসওয়ালারা তো লিখে রেখে যাবেনা, বা সিআইএ সেইসব নথি খুলেও দেবেনা। যেগুলো মোটামুটি সর্বজনগ্রাহ্য, তা হল, তিনি বোম্বের উচ্চকোটি মহল এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন। এবং তৎকালীন বোম্বে কংগ্রেসের সর্বেসর্বা। খোদ সিআইএর খুলে দেওয়া নথিতেই একাধিকবার পাতিলকে বোম্বে কংগ্রেসের বস, বা বোম্বের পার্টি বস, বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোলা অর্থনীতি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতের মিল ছিল, এও কার্যপ্রণালী থেকে দেখতেই পাওয়া যায়। ... ...
বর্ধমানের বাইরে ‘সরুচাকলি’ জিনিসটা কতটা পরিচিত আমার জানা নেই। কিন্তু বড়ই উপাদেয় সেই জিনিস, বিশেষ করে শীতের দিনে। গরম তাওয়ায় তেল বুলিয়ে তাতে বাঁটা চাল আর বাঁটা কলাই একসঙ্গে গুলে তালপাতার টুকরো দিয়ে গোলাকার করে দিতে হয়। তারপর একদিকটা রান্না হয়ে গেলে, খুন্তি করে উলটে দেওয়া। আমরা শীতের দিনে খেজুর গুড়ের সাথে খেতাম এই জিনিস – বিশেষ করে ছোটরা। আর বড়রা দেখেছি সরুচাকলি-র সাথে বাঁধাকপির তরকারির কম্বিনেশন দিয়ে রাতের খাবার বলে চালিয়ে দেয় শীতের সিজনে। ... ...
মিসেস হুইলার হয়ত একটা নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাস করতেন। ধর্মের কারণে তাঁকে হিন্দু সমাজ আপন করে নেয়নি। কৃষ্ণমোহন নিজের প্রতিভায় নিজেকে বাইরের জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে সাধারণ দেশী পাদ্রীরা কিন্তু সে আমলে বেশ ডিসক্রিমিনেশনের মুখোমুখি হতেন। অর্থ খুবই কম হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা চিঠি চাপাটিও লিখতেন, এই চার্চ ছেড়ে অন্য চার্চেও চলে যেতেন। সেটা একটা দিক। কিন্তু তাঁদের বাড়ির মেয়েদের জীবনের খোঁজ কেউ রেখেছিল কি? কতটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতেন তাঁরা? পরিণত বয়সের ধর্ম ত্যাগের আর সেই সঙ্গে জুড়ে যাওয়া চেনা পরিবেশ-সংস্কৃতি ত্যাগের বাধ্যতার ফল তাঁদের স্ত্রীদের জীবনে কিভাবে আসত? বা তাঁদের পুত্র-কন্যাদের জীবনে একজন পিতার সিদ্ধান্তের ঠিক কি প্রভাব পড়ত? জানা নেই, কারণ দেশি খ্রিস্টানদের স্ত্রীদের বা প্রথম প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কোন গভীর বিশদ আত্মজীবনী আমি হাতে পাইনি। যাই হোক মনোমোহিনীতে ফিরি । ... ...
কী লিখছিল পোস্টে? আমি দেখলাম এক জায়গায় লিখেছে নারী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়, নারী চাকরি করলে পরিবার নষ্ট হয়, সন্তানের হক আদায় হয় না! আরেকটা দেখলাম লিখেছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা মেয়েরা নির্লজ্জ হয়, তাদের বিয়ে করে লজ্জাশীল স্ত্রী পাওয়া যাবে না এমন একটা কথা! কোন জানি বক্তা মূর্তি ভাঙার ব্যাপারে কী লেখছে সে ওইটাই শেয়ার করছে! দারুণ না? এই ছেলের বয়স কত? হয়ত বিশ একুশ, এই বয়সে এর মনের মধ্যে এই যে এই ধরনের কথাবার্তা বাসা বাঁধছে তার প্রতিকার না করলে কোন লাভ হবে না। কোন ওষুধেই কাজ হবে না যদি না এদেরকে এখনই না ফেরানো যায়। অন্ধ জনগোষ্ঠী যারা অন্ধ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের বক্তব্য হচ্ছে হাসিম আমলা, মইন আলীরা ক্রিকেট খেলছে তাদেরকে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাহলে তানজিব হাসনের বেলায় কেন মানুষ এমন করছে! আসলে সমস্যা যে ধর্ম পালনে না তা তারা বুঝতে রাজি না। কেউ সারাদিন ধর্ম পালন করুক না, কে ফেরাচ্ছে? কিন্তু এখানে হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ, যার সাথে ধর্ম পালনের কোন সম্পর্ক নাই। হাসিম আমলা নারীর চাকরি নিয়ে চিন্তিত এমন কোন নজির পাওয়া যায় নাই। ... ...
ফলে মন্নুকে, যার গেঞ্জিতে কাপড়ের চেয়ে ছেঁড়া ছিদ্রের সংখ্যা বেশী, কচি শীর্ণ মুখে বসন্তের ছিট্, সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়, এমনকি নেশাখোর বাপের হাতে নেশার টাকাও তুলে দিতে হয়। খুব চেনা গল্প, এখনো প্রযোজ্য আমাদের সমাজের জন্য, মন্নুর ‘হেই মোড়ে’ সংলাপটা থেকে পাঠক তার পূর্ববঙ্গীয় ভাষার সাথেও একাত্মতা অনুভব করে, গল্পটার এত বছর পরেও। কিন্তু এই চেনা গল্পের মধ্য দিয়েই জ্যোতিরিন্দ্র ঘুরিয়ে আনেন আমাদের অনেক অচেনা শহর, বন্দর, ঘাট। গল্পটির শুরুতেই তার লক্ষণ টের পাওয়া যায়, যখন গল্পের উত্তম পুরুষ মন্নুকে প্রশ্ন করে, “ এত রাতে পালিশ কি রে?”, আর মন্নু উত্তর করে, “আচ্ছা ক’রে করে দেব, একদম আয়না মাফিক”, পাঠক টের পেতে শুরু করে, এক অদেখা আয়নার মুখোমুখি হতে চলেছে সে, সে আয়নায় জীবন ধরা দেবে বহুবিচিত্র রঙে, রূপে, রসে। ... ...
রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকের একটি জায়গায় আছে, 'নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না, নরকবাসীর সবচেয়ে বড় সাজা তাই।’ ‘জ্যোস্নায় সূর্যজ্বালা’ উপন্যাসে যে অসাধারণ মানবিক চরিত্র এঁকেছেন লেখিকা রসিদা আর দবিরের মধ্য দিয়ে, মাঝে মাঝে সংশয় জাগে, এমন কি বাস্তবে পাওয়া যায়? কিন্তু লেখিকা তো শুধু এমন এক ছবি নির্মাণ করবেন না, যা শুধুই যা ঘটে চলেছে তার প্রতিচ্ছবি, লেখিকা তো তার স্বপ্নের সৌন্দর্যের জগতকেও আহবান করবেন। রসিদা ও দবিরকে বিবেক চরিত্রে রূপদান করাতে যাওয়া নিশ্চিত চ্যালেঞ্জের, বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্টের শংকা প্রতি পদে পদে। কিন্তু লেখিকা এক নিপুন দক্ষতায় চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন, যে একটুও অস্বাভাবিক ঠেকেনি কোথাও। খুব সচেতন ছিলেন তা বোঝা যায় চরিত্রদুটোর হঠাৎ হঠাৎ বাঁক বদলে, তাদের অনুভূতির সূক্ষ্ম আলোড়নে, যা উচ্চকিত নয়, কিন্তু যার সুতীব্র ঢেউয়ে ভিজেছে পাঠক প্রথম থেকে শেষ অবধি। ... ...
সেখানে কামাল পাশার সঙ্গে আনোয়ার পাশার নামও উল্লেখ করেছেন। এই আনোয়ার পাশা কামাল পাশার আগে তুরস্ক জয় করতে গিয়ে হেরে গিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান, তাঁর সংগ্রামের রাস্তা কামাল পাশার থেকে আলাদা ছিল। তবু তিনি আনোয়ার এর নাম রেখেছিলেন তাঁর কারণ তিনি দেশের জন্য লড়াই করেছেন যে বীরেরা, তাঁদের বন্দনা করেছেন, শুধু জয়ীদের নয়। এ কথাও সত্যি কবিতাটি তিনি যখন লেখেন তখনও কামাল পাশা জয়ী হয়ে উঠতে পারেন নি। জয়লাভ করেছিলেন পরে। তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে শুধু জয়ীকেই বন্দনা নয়, সংগ্রামীকে বন্দনা করা হবে। সংগ্রামী মানেই সম্ভাবনা। ... ...
এক এক সময় প্রবীর ঘোষ-কে আমার ওই রিচার্ড ডকিন্স টাইপের মনে হয়। বড় বেশী র্যাডিকাল কথাবার্তা বলে ফেলে কখনও কখনও – ফলে হয় কি, প্রচলিত অর্থে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলতে বা লিখতে গিয়ে এরা নিজেরাই অপ্রচলিত অর্থের মৌলবাদী হয়ে ওঠেন। সেই জন্যই বলাই বাহুল্য সব কথার সাথে একমত হওয়া যায় না। কিন্তু আজকাল যা শুরু হয়েছে – মনে হচ্ছে এর থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সেই প্রবীর ঘোষের দাওয়াই-টাই ঠিক। সেই যে কি বলে না ইংরাজীতে – “ডেসপারেট টাইমস্ নীডস ডেসপারেট মেজারস্”, আমাদের দেশের সেই অবস্থা এসে গেছে মনে হয়। ... ...