ধরিত্রী শব্দটির মধ্যে ছিল বেঁচে থাকার মন্ত্রণা।সমুদ্র দিয়েছিল তার সন্ধা ... ...
সেই বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম তা আমার মনেও নেই-- গান গাইছি-তো-গাইছি-তো-গাইছি। কোনো ওস্তাদ অথবা শিক্ষকের কাছে নাড়া বেঁধে বা রীতিমতো লেখাপড়া শেখার মতো করে গান আমি কখনও শিখিনি। ছোটবেলার দিনগুলি থেকে শুরু করে, বড় হয়েও শুধু গান শুনেছি আর গেয়েছি। কোনো সঙ্গীত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান শিখবার সৌভাগ্য আমার অদৃষ্টে কখনও জোটেনি।'' ১৯১১ সালে 'রবিবাবুর গান' শোনার সুযোগ যাঁরা পেতেন, তাঁরা আলো ... ...
১৯৮৩ র শীতে লয়েডের ওয়েস্টইন্ডিজ ভারতে সফর করতে এলো। সেই সময়কার আমাদের মফস্বলের সেই শীতঋতু, তাজা খেজুর রস ও রকমারি টোপা কুলে আয়োজিত, রঙিন কমলালেবু-সুরভিত, কিছু অন্যরকম ছিলো। এত শীত, এত শীত সেই অধুনাবিস্মৃত কালে, কুয়াশাআচ্ছন্ন পুকুরের লেগে থাকা হিমে মাছ অবধি ঘাই মারতে ভুলে যেত। মাইরি! বললাম বটে লয়েডের ওয়েস্টইন্ডিজ, আসলে সেই শীতের মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলো ম্যালকম মার্শাল নামের এক তরুণ ফাস্ট বোলার। কোণাকুনি দৌড়ে এসে বাঁহাত টা সামনে তুলে দ্রুত ডেলিভারি করতেন। হৃৎকম্পন শুরু হতো আপামর ভারতীয় দর্শক ... ...
'আচ্ছা, সারা দেশে মোট কতজন ক্যান্ডিডেট এই পরীক্ষাটা দেয়?', লোকটা সিগারেটে একটা টান দিয়ে প্রশ্ন করলো।-'জানা নেই। তবে লাখ দশেক তো হবেই।', আমি বললাম।- 'বাব্বা! এতজন! সিট কতো ?'-'বলতে পারব না। ভাল কলেজ পেতে গেলে মেরিট লিস্টে যথেষ্ট ওপরে নাম থাকতে হবে।'-' তার মানে একটা লম্বা মেরিট লিস্ট হবে নিশ্চয়। তা, সবাই সবার নাম দেখতে পাবে ?'এই প্রশ্নে একটু অবাক হলাম। একটু বিরক্তিও বোধ হলো। ... ...
রোজকার মতোই আজকেও একটা প্রচন্ড মন খারাপ চুপচাপ বসে আছে। ঠিক গায়ে সাঁটা ব্রায়ের হুক এর মত। বাকি সবটাই বয়ে যায়। বয়ে যাওয়া সব কালেই ছিল। এখনো রয়েছে। গতি টা বেড়েছে কেবল। আরো বাড়বে বলেই বোধ হয়। বোধ? বোধ কি আর হয় আজকাল?! যাকগে!! বলছিলাম মন খারাপের কথা। বরের সাথে ঝগড়া থেকে বোনের সঙ্গে মন কষাকষি, ধুন্ধুমার চলতে থাকা মব লিঞ্চিং বা সামান্য একটু অন্য কথায় হাজার চোখের লাল টুকটুকে টমেটো হয়ে ওঠা এসব আগে জ্বালা ধরাত। মাথা তরতরিয়ে ভাবতো হ্যান করেঙ্গা ... ...
আজকে কেন জানিনা ঊনকোটি পাহাড়ের কথা খুব মনে পড়ছে। নিজেদের পুরোনো জীবনের কথাও। ১৯৬৯ কি ৭০সাল। সদ্য শিক্ষকতায় ঢুকেছি। কোথায় আমার বাড়ী কোথায় ভদ্রার বাড়ী। ছোট্ট শহর কৈলাশহর। সংস্কৃতিমনষ্ক রক্ষণশীল সমাজ। আমাদের বয়স তখন কম, দেখায় আরো কম। সহকর্মীরা ভালবাসেন, হেডমিস্ট্রেসের আমরা প্রিয়পাত্রী ছিলাম। স্কুলের সব কটি ক্লাসের মেয়েরা পিকনিকে আমাদের নিয়ে যেতে চায় আমরাও সাগ্রহে যাই। ঊনকোটিতে নিরামিষ খাওয়াই প্রথা; আমরা একদিন সর্ষেবাটা দিয়ে রান্না করা ডিম নিয়ে গেছিলাম, কেউ বাধা দেয়নি। তখন পাহাড়ে কেউ থাকতোও না; ক ... ...
"যে দেশে এক্কেবারে চলতি ভাষাতেই টুরিস্টকে বলা হয় ‘মুসাফির’ তার রোদ্দুর তো আলাদা হবেই।" - আর যে বইয়ের শুরু এমন আশ্চর্য বাক্য দিয়ে, তার কাছে পাঠকের প্রত্যাশা ভিন্ন হতে বাধ্য। এই বাক্য অতিক্রম করে, ফয়েজ-এর অসামান্য কটি পংক্তি পার হয়ে আমরা পৌঁছোই এক তরুণী কবির মৃত্যুতে - দুর্ঘটনায় মৃত্যু - যে কবির কবিতা লেখক আবিষ্কার করেন খাস ওয়াশিংটন ডিসি-তে বসে - মার্কিন দেশ ও ইরান!!! ... ...
চিঁড়ের টিআরপি হাই! বেচারা সাতেপাঁচে না থাকা চিঁড়ে কস্মিনকালেও ভাবেনি যে তাকে একদিন অনুপ্রবেশকারীর খাবারস্বরূপ চিহ্নিত হতে হবে। যে চিঁড়ে কিনা বাঙালির মধ্যপ্রদেশ ঠান্ডা রাখার জন্য বিখ্যাত তাকে নিয়েই আজ বাজার গরম এক মধ্যপ্রদেশীয় বিজেপি-বর্গীর কৃপায়। বর্গীটির সম্ভবত জানা নাই যে বাঙালির সঙ্গে চিঁড়ের সম্পর্ক আজকের নয়। ... ...
যাঁর নাম কৈলাস তিনি যে এমন কেলেঙ্কারি করে ছাড়বেন সে কি রীনাদির মানিকমামা জানত? বাঘামামা, এ যে এক্কেরে ডিটেকটিভ কেস!! অতএব এনকোয়ারি বলছে, কেলে মানেই কেলেঘাই নদী। যেথায় অবলীলায় ঘাই মারে কেলে কেলে কালবোস, মানিকদার বাবার কবিতার ফর্সা বিষ্টু বোস, মাঝারি উজ্জ্বল সন্তু ট্যাংরা ও শ্যামলা পুঁটি রায়। ... ...
সেই জানার ভিত্তিতে আজ বোধ হয় বলতে পারি, স্বাধীনতা উত্তরকালে সমস্ত দেশ জুড়ে এত বৃহদাকার ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন আর হয়নি। ১৯৭৪ সালের ২২ দিনের রেল ধর্মঘট মাথায় রেখেও বলছি। দেশ ব্যাপী রেল সংযোগের কারণেই সেই সংযোগ হারিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল। রেল কলোনিগুলিতে এক দিকে চলেছিল জিআরপি সিআরপিএফ প্যারামিলিটারি পুলিশের দাপাদাপি, রেলের কর্মচারীদের ঘর থেকে টেনে তুলে নিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা। অপরদিকে ঘর ছাড়া পলাতক রেল কর্মীদের সঙ্গে আমাদের রাতের অন্ধকারে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে গোপন ডেরায় গিয়ে গিয়ে যোগাযোগ স্থাপন, খবরের লেনদেন, অভুক্তদের খাদ্য পানীয় বিতরণ। সেই সব দিনের সেই গরম রক্তের চাষ উঠতি যৌবনে আমাদের অনেককেই স-মগজ মেরুদণ্ডী করে তুলেছিল। ... ...
এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসটা আমাদের সামনে একটু অন্য রকম। এই যে উত্তমপুরুষ বহুবচনটা দিব্যি ব্যবহার করে ফেললাম, স্পষ্টই বুঝতে পারবেন, এ আমরা-র আবরণ ঢাকা আজকের জাতীয়তাবাদের জমিতে। বেশ কিছু বছর পর এমন এক ২৬ জানুয়ারির সামনে আমরা উপনীত, যা ক্যালেন্ডারের স্থাণুবৎ লাল দাগের দিনের থেকে অনেক বেশি গুরুত্ববহ। ... ...
হিলবার্টের হোটেল ব্যাপারটা কী জানো? - এলিভেটর থেকে বেরিয়ে লোকটা আমায় জিগ্যেস করল - যেসমস্ত জিনিস মানুষ কেবল তার স্বপ্নে কল্পনা করতে পারে, তার প্রত্যেকটা এই মস্তি সেন্টারে পাওয়া যায়। প্রতিটা ফ্লোর ভর্তি হয়ে আছে হরেকরকম জিনিসে। ... ...
রাজনীতি আসলে ঢপের কেত্তন! সেখানে সবাই সবার চেয়ে বেশিমাত্রায় মানুষের পক্ষে বলে প্রমান করতে চায় নিজেদের। আসলে যে যার নিজের পক্ষে; কয়েকটা বেশি ভোট টানার মাধ্যমে ক্ষমতাদখল করে সদলবলে পাঁচ বছর ক্ষীর চাটার পক্ষে। ফলত এর টিকি তার হাতে, তার টিকি আবার অন্য একজনের হাতে অবস্থা হয়ে বসে থাকে প্রায়শই। আপাতত যা বোঝা যাচ্ছে, সকল টিকিই দিল্লি গিয়াছে, ফলে পুতুল নাচের আসর জমেছে ভালো। এবং টিকি বেয়ে বেয়ে যেহেতু যাতায়াত করা যায় তাই দিল্লিকে রোম বললেও ভুল বলা হয় না। এরই মধ্যে সবে মিলে আবার কে কখন কার পাতলুনের দড়ি ধরে টেনে দেওয়া যায় সেই ফন্দি ফাঁদছে। প্রতিপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা খানিক কমিয়ে দেওয়া গেলে খানকয়েক বেশি ভোট জুটতে পারে, এই আর কি! এর মধ্যে অন্য কোনো অভিসন্ধি, ওই জনগণ-টনগণ, ওইসব নেই। ... ...
কাকভোরে এক ঝটকায় বলাইয়ের ঘুম ভেঙে গেল। কী যেন একটা স্বপ্ন দেখছিল সে। প্রতি রাতে নিয়মত বলাই স্বপ্ন দেখে। কোনোদিন শিশুর। কোনোদিন মরা মায়ের সঙ্গে ছোটোবেলার স্মৃতির স্বপ্নিল ভার্সান। কখনও সখনও প্রথম প্রেমিকা রুগ্ন কিশোরী লক্ষ্মীর। আজ সে কী দেখছিল মনে করার জন্য প্রথাগতভাবে ফের চোখ বুজে রইল কিছুক্ষণ। বিলীয়মান স্বপ্নের রেশ জোনাকির মতো দপ দপ জ্বলে জ্বলে ধরা দিল ধীরে ধীরে। ... ...
কার্যত সিংহের সাহস সঞ্চয় করে লিখছি, মানে অনেক জড়তা কাটিয়ে ঠিক করলাম শেষমেশ, কথাগুলো লেখাই যায়। বিরোধে, চ্যুতিতে, এবং বিসংবাদে রাজনীতির তো বস্তুত কোনও ক্ষতি হয় না, উত্তরপক্ষের অবস্থিতি পূর্বপক্ষকেই আরও জোরালো করে তোলে। বিষয়: হালফিল, ভারত, আন্দোলন। ... ...
গত কয়েক দশকে বারবার বদলে যাচ্ছে অতিপ্রচলিত কিছু শব্দের সংজ্ঞা। মধ্যবিত্ত কে, মফস্বল কোথায়, গরীব আদমিই বা আসলে কি চিজ --- এসব নিয়ে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কনফিউশন আর অপরাধবোধের সীমা নেই। ফল হয়েছে এই -- যে উচ্চবিত্ত/উচ্চমধ্যবিত্ত বলে কেউ নেই। যাপনে প্রোমোশন না পেলে কি হবে, লেবেলে চমৎকার প্রোমোশন পেয়ে গেছে অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের বিভিন্ন স্পেকট্রামে পড়ে থাকা মানুষ। যাদের কাজে অকাজে কাজের অভাবে মল যেতে হয়, আর যাদের সেই মল সর্বার্থেই বহন করতে হয় তারা সবাই একই ছকের ভিন্ন পিঠে অবস্থান করেন - কেউ বাস্তবে তো কেউ ... ...
একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অজয় রায় (৮৪) আর নেই। সোমবার ( ৯ ডিসেম্বর) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অধ্যাপক অজয় দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে মুক্তমনা ব্লগার-বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জঙ্গিরা কুপিয়ে খুন করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অভিজিতের স্ত্রী, আরেক মুক্তমনা ব্লগার বন্যা আহমেদও জঙ্গি হামলায় আহত হন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এই ব্লগ ... ...
মিছিল শুরুর তাড়া ছিল, কিন্তু কাজ সারতে বেলা গেল দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম যাদবপুরে গিয়ে মিছিল ধরব। চায়ের দোকানে প্রায় একঘন্টা উসখুস করার পর দূর থেকে দেখি শীত এলে বসন্ত কী কাছে না এসে পারে, এই কবিবাক্য মনে করিয়ে দিয়ে, এগিয়ে আসছে কলকাতা পুলিশের গাড়ি আর পুলিশ। পেছনে ম্যাটাডোরে মুহুর্মুহু শ্লোগান, গান। দুরন্ত ঝড়ের মতো রাজপথের দখল নিয়ে নিলো এনার্সি বিরোধী, সিএএ বিরোধী মিছিল। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সামিল অজস্র মুখ। মাথার ওপর আন্দোলিত জাতীয় পতাকা।থেকে থেকে তরুণরা ছুটে যাচ্ছে ... ...
“আপনি কি স্বাধীনতা কী বুঝেন?” ভদ্রলোক আমার চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি করলেন। আমি বললাম, “বুঝব না কেন? স্বাধীনতা হচ্ছে নিজের মত থাকার বা কিছু করতে পারার সুযোগ।” ভদ্রলোক সামান্য হেসে ফেললেন। তিনি তার মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা কাঁচাপাকা দাড়ি হালকা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, “আপনার স্বাধীনতা সম্পর্কে প্রাইমারী লেভেলের জ্ঞাণও নাই। কিন্তু আমি এতে অবাক হই নাই। এখনকার মানুষদের স্বাধীনতা নিয়ে জ্ঞাণ থাকবে না এটা স্বাভাবিক। খুব স্বাভাবিক। আপনারা হাজার হাজার মেকী স্বাধীনতা দেখে বড় হয়েছেন। হাজার ... ...
বয়স মারে ঝাপটা মুখে, বয়স মারে চড়, দেখার চোখ ও ঝাপসা হয়, বয়স নির্ভর!মন তো আজও ছুটতে রাজী সবুজ খোলা মাঠে,স্মৃতির পাতা হাতড়ে তার এখনো দিন কাটে।শরীর তাকে সাথ না দিয়ে ইশারা করে, ‘থামো!এই বয়সে ছেলেমানুষী মানেই তো ভাঁড়ামো!’সরল মন প্রশ্ন করে ‘ছেলেমানুষ নই?’ ... ...