কয়েকটা নিঃসঙ্গ রেখা, যারা তার অবয়বটুকুকে ফুটিয়ে তুলেছে, তাদের সাথে সংলগ্ন হয়ে একমনে সেলাই করছিল জানলার পাশে বসে; হাতের বইটা মুড়ে আমি বললাম — এত কম আলোয় চোখ ঠেরে ঠেরে সেলাই কোরোনা অনু, চোখ খারাপ হয়ে যাবে। সে তাকাল না আমার দিকে, যেন শুনতে পায়নি, এত বেশি দূরত্বে রয়েছে; তারপর চোখ তুলে হাসল। বলল — বিকেল ফুরিয়ে এল, তুমি হাঁটতে গেলে না? ... ...
পাঁচটি চেনা গল্প, বিভিন্ন জনের রচনা, রঙ-রসও তাদের আলাদা। মিল একটাই, অন্তিম পংক্তিগুলি যেন কবিতার মত ডানা মেলে, গল্পের আওতায় আটকে থাকতে চায় না। আর সেই শেষ শব্দগুলির মধ্যে দিয়েই তাদের অন্তরে পৌঁছনোর চেষ্টা। ... ...
আবার সব খুলতে শুরু করেছে ... ...
কবি চন্দ্রাবতী প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলার প্রথম নারী কবি। প্রবাদ ও বচনের ক্ষেত্রে আমরা খনার নাম জানি। কবি হিসেবে চন্ডীদাসের দয়িতা রামীর নাম শোনা গেলেও তার সাহিত্যকীর্তির পরিচয় অপ্রতুল। এসব বিবেচনায় বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগের বিস্তৃত সময়ে ‘একমাত্র নারী কবি’ হিসেবে চন্দ্রাবতীই স্বীকৃত। ... ...
সেদিন ক্রিস আমাকে ওয়ার্ডেন অফিসে ডেকে পাঠালে ঢুকে দেখলাম বাকি কথাবার্তা প্রায় শেষ, ক্রিস এবার ফেঁদেছে তার সেই বিখ্যাত প্রশ্ন নতুন বোর্ডারের সামনে – “ক্লজ নাম্বার ৮টা ঠিক বুঝে নিয়েছো তো?” বলাই বাহুল্য আমাদের প্রত্যেককে, মানে যারা এই বাড়িতে থাকতে এসেছিলাম, তাদের সকলকেই এই প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছিল প্রথম দিন। সেই ক্লজ্টা ছিল এই মর্মে যে ওই বাড়িতে থাকাকালীন বিবাহ সম্পর্কহীন শারীরিক ইন্টু-মিন্টুতে জড়ানো যাবে না! এবার প্রশ্ন উঠতে পারে যে ক্রিস আমাকে ডেকে পাঠাতো কেন আর এমন অদ্ভূত ক্লজেই সই করতে হত কেন সেই বাড়িতে থাকতে হলে! এটা জানতে গেলে একটু হালকা ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিতে হবে বাড়িটির সম্পর্কে। ... ...
মনোবিদরা বলেন, ধর্ষণে আর যাই হোক যৌন পরিতৃপ্তি ঘটে না। অর্থাৎ sexual pleasure ধর্ষণে পাওয়া যায় না। তাহলে ধর্ষণ কেন হয়। ... ...
হারান যেন এল হড়পা বানের মত। আগল ছিঁড়ে। বাঁধন উপড়ে। রসিক ভেসে গেল সে বানের জলে! বিজলিকে হারান কেশবতী নাচনির গল্প বলে। অত যে বিখ্যাত রসিক বাউরীবন্ধু মাহাত, তাকে ছেড়ে, তার দলকে ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল না কেশবতী। তবে? বার বার শুনে শুনে মনে বল আসে। তারপর একদিন দুজন মিলে বাসে চেপে কাশীপুর টাউন। পিছনে পড়ে রইল রসিকের পুঁজি হারানোর হাহাকার, আঙ্গুল মটকানি, অভিশাপ। ... ...
আমি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম পৃথিবীর কোন দেশের টুরিষ্টদের সবচেয়ে বদনাম – কিন্তু সমস্যা হল এই র্যাঙ্কিং এর তো কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আর তা ছাড়া নিজের দেশকে কে আর খারাপ বলতে চায়! তবুও দেখেছিলাম যে শিষ্টাচার বিহীন টুরিষ্ট কিছু কিছু দেশের নামের পুনরাবৃত্তি হয়েছে – যেমন ইংল্যান্ডের ছেলে ছোকরাদের। যারা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরা জানেন যে সেই ফুটবল ফলো করতে গিয়ে নানা দেশে ঘুরে এই ভাবে এরা হুজ্জুত বাধিয়ে বেড়ায়! এদের তো ‘ফুটবল হুলিগান’ ও বলা হয়। এছাড়া আছে রাশিয়ান টুরুষ্ট – এদের ব্যবহার নাকি খুব খারাপ – জার্মান টুরিষ্টদের নাম আছে, অষ্ট্রেলিয়ানদের নাম আছে তালিকায় – চাইনীজ টুরিষ্টরা তো আছেই - এবং বেশ কিছু তালিকায় ভারতীয় টুরিষ্টদের নামও আছে শিষ্টাচার মেনে চলে না বলে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। ... ...
আমি এক ঝটকায় সব ছেড়ে দিলাম। সোজা আব্বার পাশে। শুরু হল আমার সংগ্রাম। আমার মনে হয়েছে আমি লোক রেখে আমার মন মত সেবা আমার বাবাকে দিতে পারব না। আমার মনে হয়েছে এখন আমার বাবা উনার পাশে উনার কাছের একজনকে খুঁজবে। এখানে বলে রাখা ভাল যে আমার মা মারা গেছেন ২০১২ সালে। এবং তখন থেকেই আমি বুঝতেছিলাম যে আমাদের এই বিশাল ভাই বোনের পরিবারে আমি আর আমার বাবা এখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দুইজনই ব্যাচেলর। সবাই যার যার সংসারের নানান সমস্যায় জর্জরিত। তাদের চিন্তার, তাদের কাজের সেন্টার অফ গ্রেভেটি পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাদের বৃত্তের কেন্দ্র এখন আমার বাবা না। সন্তান, স্বামী তারপরে হয়ত শ্বশুরবাড়ি তারপরে আব্বা। কাজেই চাইলেও তারা পারবে না পুরোপুরি সময় দিতে। কাজেই এ কাজ যে আমার তা আমি পরিষ্কার বুঝতে পারেছিলাম। ... ...
কলকাতা শহর এথেন্স বিশেষ। বুদ্ধিজীবীর সন্ধান মিলত দেশপ্রিয় পার্ক তথা রাসবেহারীর ফুটপাতে নিয়ত। দু দশক আগেও। বুলেভার্ডে সবুজ গাছে লাল থোকা ফুল, শরত এসে গেল! বস্তুত, উনিশ শতক যদি উত্তরের মননে ধরা দেয়, বিশ শতক দক্ষিণের। তো, এ হেন কলকাতায় পথচলতে প্রায় ধাক্কা-মেরে-চলে-যাওয়া অটোর মতোই চলে গেছেন বুদ্ধিজীবীরা। কানা ঘেঁষে। বার্লিনে মেঘ করলে, জল ঝড়েছে ফার্ন রোডে..দিনরাত্তির.. দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নতুন কলামে এবারে ধরে রাখবেন, সেসব স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ। যা দু দশক পেরিয়েও, পুরোনো বই দোকান ও প্রবীণ নাগরিকের স্মৃতি হাতড়ে তিনি খুঁজে পান; হরপ্পা সভ্যতা। বলবেন, যে সব বিচিত্র মানুষদের দেখেছেন তিনি, তাঁদের নিয়ে। যারা যতটা পাড়ার ততটাই দুনিয়ার..এই মাত্র ফুটপাতের বই তুলে নিয়ে ঘাটছিলেন, একটু পরেই তাঁকে দেখা যাবে কন্সতানতিনোপলের সদর রাস্তায়..এ বাঙালির ভবানীপুর ছিল। রাজারহাট ছিল না। স্বপ্ন ছিল। টাকা ছিল না। সত্তরকে নব্বইয়ের প্রজন্মর এই আকুল খোঁড়ার পিছনে কি রয়েছে? ফ্যাসিবাদের হাওয়ার হিউমিলেয়াশান? নাকি পোস্ট-ট্রুথ ডিস্টোপিয়া? চল্লিশ বছরের অন্ধকারের ব্যবধানে ক্রাইসিস কি মেলাচ্ছে আবার দুটো প্রজন্মকে? ... ...
এক একদিন আমি করি কি, একটা খাপলা জাল নিয়ে কবি ধরতে বেরোই। ভালো ভালো কবি ধরি। আমার একটি বিকাশবাবু আছে, সে শুধু বাড়িগুলো চিনিয়ে দেয়। বাকি কাজ মনোহর করে। আর তাতে আমার পয়সাও লাগে না। ... ...