'ফাল্গুনী'তে চন্দ্রহাস আর তার দল হইহই করে বেরিয়ে পড়েছিল; 'ছেলেধরা' বুড়োকে ধরে আনবে বসন্তোৎসবে। কিন্তু বুড়োর টিকিটি কেউ কোনোদিন দৈবাৎ দেখে থাকলেও, তাকে পাওয়া কী আর অত সহজ! ... ...
রাজ্যের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ'র প্রয়োজনে স্কুল খোলা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু তাহলে সংক্রমণের ভয় থাকছেই। আমাদের টিকা করণ পরিকল্পনা কিছু বদল আনলে অনেকটা সহজেই কম সময়ে সুরক্ষা পাওয়া যাবে।... ... ...
শিক্ষাচার্য বিদ্যুৎকুমার মধ্যাহ্নের দিবাস্বপ্ন দেখছিলেন। এমন সময় প্রধানসেবক এসে কাঁচুমাচু মুখে জানালেন -- চারদিকে কি লেখা হচ্ছে জানেন স্যার? বিদ্যুতের বড্ড তেজ করে দেব লো ভোল্টেজ। শুনে বিদ্যুৎকুমারের স্থির ভ্রূ কিঞ্চিৎ কুঞ্চিত হল। তিনি দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, লো-ভোল্টেজ? দেখাচ্ছি তোদের। যন্ত্রবিদ, ইধার আও। আজ থেকে গোটা বিশ্বভারতীতে সারা রাত গনগন করে আলো জ্বলবে। কোথাও কোনো আলো নিভলেই, তোমার চাকরি নট। ... ...
জীবনে চলার পথে কত কি না হারিয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া জোনাকি খুঁজতে বেরিয়েছে আনন্দ। ... ...
কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে মিডিয়া আর বেশি কিছু কথা বলেনা। মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার খেলা, দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়ার খেলা চলেছে নিরন্তর। এ এক নতুন ধরনের "জার্নালিজম অফ এক্সক্লুশন" -- সুকৌশলে বর্জন করার সাংবাদিকতা। আমার নতুন বই "আপনি কি দেশদ্রোহী?" (RBE, কলকাতা, ২০২১) থেকে এই বিষয়ে একটা ক্ষুদ্র অংশ এখানে পোস্ট করলাম। ... ...
মানুষটির গানের কোনও ঠিকঠিকানা নেই -- কখনও শিবের স্তোত্র, কখনও মীরার ভজন, গঙ্গাকে নিয়ে একটা ছোট্ট গান, কখনও আচার্য শঙ্করের 'ভজ গোবিন্দম', এমনকি রামপ্রসাদী সুরে একটা হিন্দি গানও শুনলাম তাঁর কণ্ঠে। তিনি সম্ভবত বিশেষ কোথাও ডাক না পাওয়া গায়ক; কিন্তু ডাক পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে তিনি খুব বিচলিত, এমনও মনে হলো না। নিজের গান নিজেকে শুনিয়েই মানুষটি কী খুশি! ... ...
অস্তমিত সূর্যদেব তখন আকাশ - বাটি ভরে পায়েস খাচ্ছেন, লাল, নীল, কমলা, হলুদ, গোলাপি, ফিরোজা.. তাতে হরেক রকমের সর। আজ 'তার' জন্মদিন। রাধারাণীর ঘরে 'ম' 'ম' করছে পরমান্নের গন্ধ। বাতাস আজ ক্ষীরের মতো নিগূঢ়। গাছেরা উথলে ওঠা ঘন। ... ...
বাবু বিলাসের মধ্যমণি রায় দিলেন : দোয়াতদানি বরফ জলে চুবিয়ে আনা হোক... তারপর সেই বিকচ স্ফটিক-সম দ্রাক্ষারিষ্ট ঢেলে দেওয়া হলো তাতে। যেন বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ জল-বারান্দায় বসা মানুষ জনের শহুরে বোধের মরম ছুঁয়ে গেল ! এলো ইলিশ-কেভিয়ার ! নাহ, সেই Royal Mother Of Pearl এর চামচ দিয়ে নয় -- দু আঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে তাকে চেখে দেখার নিদান দিলেন সেই ঋজু-পুরুষ । স্বাদ কোরক গুলি বুঝি এক অজ্ঞাতপূর্ব আশ্লেষে... আবেশে অশেষ হয়ে উঠেছিল সেই প্রথম পরশনে... দরশনেও বটে ! ইলশে গুঁড়ির আনন্দে ততক্ষণে বারান্দার মেহগিনি কাঠের রেলিং সেজে উঠেছে - "রোদ্দুরে রিমঝিম"। সেই মাটির পাত্র যখন স্বাদে -আনন্দে - সুরে আর সুরায় উচ্ছল, লালাদা কেন জানি গেয়ে উঠেছিলেন -- : বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা -- পিয়ো হে পিয়ো। : গান শেষে চোখ মুছে বললেন : : এটা কেন গাইলাম ? ইলিশ মাছের "এলিজি " ! এই মানুষ "কোয়েলের কাছে" লিখবেন না তো কে লিখবে ? ... ...
ঘটনা এখন এক্সপ্রেস নয়, রাজধানীর স্পীডে দৌড়ুচ্ছে। দু’দিনের পর আজ ফুরসৎ পেলাম, তাই লিখে রাখছি। আগেই বলেছি, গতকাল আমাদের বুড়ার যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে বোম্বাগড়ের যুবরাজের শ্রাদ্ধ। ... ...
সেখানে কামাল পাশার সঙ্গে আনোয়ার পাশার নামও উল্লেখ করেছেন। এই আনোয়ার পাশা কামাল পাশার আগে তুরস্ক জয় করতে গিয়ে হেরে গিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারান, তাঁর সংগ্রামের রাস্তা কামাল পাশার থেকে আলাদা ছিল। তবু তিনি আনোয়ার এর নাম রেখেছিলেন তাঁর কারণ তিনি দেশের জন্য লড়াই করেছেন যে বীরেরা, তাঁদের বন্দনা করেছেন, শুধু জয়ীদের নয়। এ কথাও সত্যি কবিতাটি তিনি যখন লেখেন তখনও কামাল পাশা জয়ী হয়ে উঠতে পারেন নি। জয়লাভ করেছিলেন পরে। তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে শুধু জয়ীকেই বন্দনা নয়, সংগ্রামীকে বন্দনা করা হবে। সংগ্রামী মানেই সম্ভাবনা। ... ...
সর্বজয়া ভৈরবী সুরের সেদিন যে কি সর্বগতা রূপ দেখেছিলাম -- আজ সকালে কেন জানি মনে পড়ে গেল। 'ফেড আউট' হতে চলা স্মৃতিকে অজস্র ধন্যবাদ তার জন্য। ... ...
ঝড় বয়ে গেল। এ’বছরের প্রথম কালবোশেখি। আঁধি মানে ধুলোর ঘূর্ণি, কিন্তু এটা ছিল অন্যরকম। এতে আমগাছের বৌর বা মুকুল ঝরে যায়, কাঁচা ঘরের চাল ওড়ে আর বৃষ্টির সঙ্গে ‘ওলে’ বা শিল পড়ে। তারপর কয়েকদিনের জন্য টেম্পারেচার নামে, লোকের মুখে হাসি ফোটে। ক’দিনের জন্য লু’ বা গরম হাওয়ার হলকার থেকে নিস্তার পাওয়া। সে সবই হোল। ... ...
এই ন্যারেটিভের প্রথম লক্ষণ হল, আফগানিস্তানকে আফগানিস্তান বানানোর জন্য পাকিস্তান, চিন এবং কখনও সখনও দুষ্টু রাশিয়াকে দায়ী করা। আর আমেরিকাকে স্রেফ একটু ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করা। আমেরিকা আফগানিস্তানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লাট করেছে, সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু উদ্দেশ্য তো ভালোই ছিল, গণতন্ত্রই তো গড়তে গিয়েছিল। মানুষকে ধর্মান্ধতা থেকে স্বাধীনতা দিয়েছিল, মেয়েদের দিয়েছিল ওড়ার আকাশ। কাইট রানার সেই পশ্চিমী স্বাধীনতার প্রতীক, মালালা হল মুখ। এখন আমেরিকার পিছিয়ে আসায় সে আকাশ ভেঙে পড়ে যাচ্ছে, এবার অ্যাসিড বৃষ্টি আসন্ন -- এরকম একটা ভাব। তো, এ ন্যারেটিভ এতই মোটাদাগের, এবং এতটাই অলীক, যে, আলাদা করে সমালোচনা করার এমনি কোনো কারণই নেই। তবু লেখা যখন হচ্ছে, তখন সংক্ষেপে, স্পষ্ট করেই বলা যাক, বাস্তবতা থেকে এসব অনেক দূরে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে আরব পর্যন্ত মৌলবাদীদের উত্থানে সক্রিয় ভূমিকা, মদৎ ছিল কাদের তা কোনো গোপন তথ্য নয়। আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের প্রশিক্ষণ, সৌদি আরবের অগাধ কনট্র্যাক্ট, এবং তালিবানদের সঙ্গে চলমান আলোচনা, এসব নিশ্চয়ই গণতন্ত্র এবং নারীর অধিকারের স্বার্থে করা হয়নি। বস্তুত জঙ্গী ইসলাম, মূলত প্রত্যক্ষভাবে পশ্চিমের তৈরি। ... ...
আমি আগ্রহ আরও হারিয়ে ফেললাম কারণ তিনি তখন মরিয়া হয়ে প্রথা ভাঙতে চাচ্ছেন। মৌলবাদের প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ তৈরি হয়েছে, ফলে ধর্মকে নানান ভাবে আঘাত করছেন, আঘাতের অস্ত্র সব সময় সুবিধার না। গাছে মাছে আক্রমণ চলছে তখন। এবং তখনই সম্ভবত দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ধর্মকে আক্রমণ করে এর আগেও অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। তাদের প্রতি মানুষ এই রকম বিরক্ত হয়নি। তাদের কথা পছন্দ হয়নি, হয়নি, চুপ করে থেকেছে। কারণ তাদের বলার ধরন অন্য রকম ছিল, তাতে সম্ভবত সাহিত্যের গুণাগুণ বেশি ছিল। তসলিমা নাসরিন কোনমতেই আহমেদ শরীফের চেয়ে বড় নাস্তিক ছিলেন না, হুমায়ুন আজাদের চেয়ে কঠোর কথা তিনি বলেন নাই তাও হয়ত বলা চলে। এরপরেও তাঁকে এঁদের চেয়ে বেশি গালাগালি শুনতে হয়েছে। এর কারণ এক যা বললাম, বলার ধরন অনেকের পছন্দ হয়নি আর দ্বিতীয়ত তিনি নারী! নারীর মুখে এই সব শুনতে আমরা রাজি না। ... ...
সেটা বোধহয় ১৯৫৭ সাল। শিশু বিদ্যাপীঠস্কুলে দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম দশক পূর্ণ হওয়া নিয়ে বড় দিদিমণি অনেক কিছু বললেন। আর কমিউনিস্ট পার্টি তখন ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’ শ্লোগান ছেড়ে দিয়ে বেশ কোমরবেঁধে ইলেকশনে নেমেছে। ... ...
এই সমস্ত, সবই আসলে পাঠ্য। বাতাস তাদের সবার মলাট সরিয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন, শনশন শব্দে আমাদের কানে এসে বলছে, “পড়ো, পড়ো”। ... ...
সম্প্রতি WHO জানিয়েছেন যে ভারত এবং উগান্ডায় নকল কোভিশিল্ড টিকার সন্ধান পাওয়া গেছে। একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এক খবর প্রকাশিত হয়েছে। ... ...
আঁধার ছাতে চুল এলোমেলো করা হাওয়া দেয়। এখানে আকাশে আজ মেঘ কম। কৃষ্ণপক্ষের মৃদু চাঁদ আর অজস্র তারার মেলা। কন্যা হঠাৎ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমায়, ওপরে আঙ্গুল দেখিয়ে নতুন শেখা কবিতা বলে - দেখো মা - হাওয়া বয় শনশন তারারা কাঁপে হৃদয়ে কি জং ধরে পুরোনো খাপে কি বললি বাবু! মনে হঠাৎ একটা ফুলঝুরি জ্বলে ওঠে। মেয়েকে আঁকড়ে ধরে ওর কাঁধে চিবুক রেখে আকাশে চোখ পেতে দিই। ওগো প্রেমেন বাবু আজ নতুন করে তোমার কথার মানে বুঝেছি আমি। হাসিখেলা দুখমেলা স্মৃতির বাঁকে, আঁখিতারা তারা জুড়ে মাকেই আঁকে। হৃদপাতে সরোবর - হোথা মায়েরা থাকে। ... ...
তারপর দুজোড়া লবকুশকে নিয়ে সীতা নয় লাবণ্য এগিয়ে যায় অশোক বন নয় তপোবন মানে অশোক নগরের দিকে। পায়ে পায়ে চলতে চলতে মাধ্যমিক পরীক্ষা এসে গেল আমার - ১৯৮৭ সাল। ফলও বেরোল। মাধ্যমিকে যে ইস্কুল থেকে ফার্স্ট হয়, সে একটা চ্যালেঞ্জ কাপ পায়। কুড়ি বছর আগে ওটা মঞ্চে উঠে মায়ের নেওয়ার কথা ছিল। বিধির বিধানে হয়নি। কুড়ি বছর পরে কাপটা আমি পেলাম।নিবেদিতা ইস্কুলের যেসব দিদিরা মাকে আর আমাকে, দুজনকেই পড়িয়েছেন, তাঁরা আমাকে উপলক্ষ করে ওটা মাকেই দিলেন। অন্তত তাঁদের শরীরী ভাষায় সে কথাটা প্রকাশ পাচ্ছিল। ... ...
দিনগুলি কুড়োতে কত কি তো হারালো। সেই রবিবার বি টি রোড ধরে, ডানলপ ফেলে, সুখচর গীর্জার পাশ দিয়ে গেলাম বড়মামার বাড়ি। মা হারমোনিয়ামটা দেখে উচ্ছল হয়ে ওঠে। নিজের মনে নানা স্কেলে হরেক রকম সারেগামা বাজাতে থাকে। দেখে অবাক হয়ে যাই। মা শিখল কোথায়? আমাদের বাড়িতে তো হারমোনিয়াম নেই। - মা, তুমি গান জানো, আমাকে তো কোনদিন বলোনি। - গান জানিনা তো। - তাহলে বাজাচ্ছো কি করে? - আমার মায়ের কাছে শিখেছি। শুরু করেছিলাম। তারপর আর হলনা। ... ...