(আমার এ রচনা বিভিন্ন সিঁড়ি নিয়েই। হঠাৎ করেই একদিন অন্যমনায় ছিলাম। সে সময়ে মাথার মধ্যে ছোটবেলার আমাদের বাড়ির এক প্রাচীন আমলের সিঁড়ির নানান ঘটনা ভেসে উঠল অতর্কিতেই। ভাবলাম লিখেই ফেলি। এই নিয়ে গুগুল মামার শরণাপন্ন হতেই দেখলাম - ওরে বাবা, এই সিঁড়ি নিয়েই হয়তো একটা বিরাট রচনা নামিয়ে ফেলা যায়। সারা বিশ্বের নানান সিঁড়ি, সেগুলোর ইতিহাস, সবচেয়ে বড় কথা সেই আদিম যুগ থেকে কতই না পরিবর্তন হয়ে আজকের গতিমান লিফট থেকে এস্ক্যালেটর। আমারই চোখে দেখা কত কিছুই। স্মৃতির মননে ছোট বেলা থেকে কলেজ জীবন পেরিয়ে চাকরি জীবন। সব কিছুর সাথেই জড়িয়ে আছে এই সিঁড়ি।) ... ...
গল্প পরে। আগে পটভূমি। সমুদ্র দিয়ে ঘেরা এক ভূখণ্ড ছিল—উর্বর, শ্যামল। বহু কাল আগে, বাইরের দেশ থেকে আরবি ঘোড়ায় চড়ে আসা মুসলিম ঘোড়সওয়াররা সেই দেশ দখল করেছিল। তারা খাওয়ার আগে হাত ধোয়; শুয়োর খায় না, অন্য প্রাণীর মাংসও—বিশেষ কায়দায় না মারলে খায় না; জন্মের পরে খৎনা আর মৃত্যুর পরে গোর দেওয়ার নিয়ম পালন করে; তাদের পুরুষরাও হাতে-পায়ে রঙিন হেনা পরে—যার ফলে অন্যের চোখে তাদের ‘মেয়েলি’ মনে হয়। সব মিলিয়ে—এক অদ্ভুত, বিজাতীয় সংস্কৃতি। ... ...
আমরা যখন ভারতের কোন রাজ্যে কত ধান চাষ হয় আর কোন অঞ্চলে কোন আকরিক পাওয়া যায় তাই মুখস্থ করছি, তখন সিলেটি কাকু ঠোঙা ভর্তি মুড়ি আর আলুর চপ নিয়ে মাটিতে আয়েশ করে বসে বলতেন - বল তো রবিন হুড কোন জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিলো? আমাদের যখন মুঘল সাম্রাজ্য পতনের সতেরোটি কারণ গলাধঃকরণ করতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত তখন কাকু কানে কানে ফিস ফিস করে বলতেন রামায়ণের বিভীষণ কিন্তু অমর ছিল, মনে আছে তো? বিভীষণ এখন বি বি সেন নামে পরিচয় দেয়, বৌবাজারের ওদিকে থাকে। বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর ফোকাস করার জন্য বড়োরা যখন গম্ভীর উচ্চস্বরে বলতেন - "না না ওসব ভূত টুত সব বাজে কথা ভূত বলে কিছু নেই" তখন সিলেটি কাকু গলা নামিয়ে বলতেন - কে বলে ভূত নেই? আলবাত ভূত আছে। এই তো আমার বাড়ির পাশের কবরখানার ভূত মেরি তো রোজ আমার সাথে কথা বলে.... আর জানো না ভুলভুলাইয়ার গোলক ধাঁধা থেকে কে বার করে নিয়ে এসেছিলো হাসিনা খাতুন আর ক্যাপ্টেন আওকে? হাসিনা খাতুন আর ক্যাপ্টেন আও কারা কাকু?" "ক্যাপ্টেন আও একজন নাগা সৈনিক আর হাসিনা খাতুন ট্রেনে ট্রেনে গান গায় ... ... ...
বাবা গাছগুলোকে নিয়ে পড়ে থাকলো। দিন নেই, রাত নেই - ওগুলোকে জলখাবার খাওয়াল, রোদে গোসল করিয়ে আনলো, দোকান থেকে মালমশলা কিনে নিজের হাতে বেঁটে আর পিষে স্প্রে করলো। বাবার মত অবসর থাকলে আমিও তো করতুম! চাকরি খোঁজা, ট্যুইশানির পাশাপাশি ক্লাব চালানো দুটো! পাড়ার কতগুলি ছেলেপুলে আমার দিকে তাকিয়ে, তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আসে, শলা-পরামর্শ, আপোস-রফা; মাঝে মাঝে ট্যুর থাকে, ট্রেকিং চলে। আমি আনমনে গাছগুলি আর বাবাকে দেখতে থাকি। বাবা গাছগুলির সাথে এমনি মিশে থাকে যে, কোনটা গাছ, আর কোনটা বাবা -আলাদা করে চিনতে পারি না, প্রবল এক দৃষ্টি বিভ্রমে ভুগতে থাকি। ... ...
প্রতিটা জায়গায় বিভিন্ন তথ্য রোমানিয়ান, ইংরেজি আর হিব্রু ভাষায় দেওয়া আছে। একটা বিষয় আমার কাছে খুব ভাল লাগল যে রোমানিয়ানরা গণহত্যার জন্য কোন দলকে, মতাদর্শকে দায়ী করেনি। স্পট লেখা আছে, সারা ইউরোপ জুড়ে যখন ইহুদি নিধন শুরু হয় তখন রোমানিয়ান সরকারও ইহুদি নিধনে যোগ দেয়। ওরা ইচ্ছা করলে নাৎসিদের উপরে কিংবা কোন দলের কথা লিখতে পারত। আমরা জানি সে সময়ের সরকার নাৎসি সমর্থক ধরণের কিছু ছিল বলেই এমন একটা কাজে উৎসাহী হয়েছিল। কিন্তু তা না লিখে সরাসরি লেখটা আমাকে অবাক করেছে এবং মুগ্ধও করেছে। সত্যকে আড়াল করে লাভ নাই। ওরা এভাবে লিখেছে এবং পরবর্তী প্রজন্ম যেন জানে সে কথাও লিখেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান আজ পর্যন্ত সত্যটা লিখতে পারেনি। পাঠ্যবইয়ে লেখা ভারত ষড়যন্ত্র করে দুই পাকিস্তান আলদা করেছে! আর পশ্চিম পাকিস্তান দুধে ধোয়া তুলসী পাতা! ... ...
ঝুম্পা লাহিড়ীর লেখা 'ইন আদার ওয়ার্ডস' খুব ইন্টারেস্টিং একটা বই। কারণ একটা না, বরং বেশ কয়েকটা। যেমন, এই বইটি ঝুম্পা লিখেছেন ইটালিয়ানে। ইংরেজিতে নয়। আমি যে বইটি পড়েছি, সেটা ইটালিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন অ্যান গোল্ডস্টাইন। বইয়ের ভূমিকায় ঝুম্পা বলেছেন, অনুবাদের কাজটা তিনি নিজে না করে ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। কারণ নিজেই অনুবাদ করলে তাঁর হয়ত মনে হতো, মূল ইটালিয়ানের সীমাবদ্ধতাকে ইংরেজি অনুবাদে শুধরে ফেলা যাক। কিন্তু তিনি সেটা করতে চাননি। ... ...
আজ সেই রাত।পার্কে গিয়ে তাই করি, বেঞ্চটা খুঁজে বার করে বসি । একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে গেছে কেউ বেঞ্চটার ওপর, সেটা দুমড়ে পাশে সরিয়ে দিলাম। পার্কটা ফাঁকা । ঘড়ির দিকে চোখ রাখি, সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে । এখনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। হেলান দিয়ে বেঞ্চে মাথাটা তুলে ওপরে তাকালাম। ঝিকমিক করছে নানারকম তারা। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ সপ্তষিমণ্ডলকে পিছনে রেখে আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। ... ...
কখনো কখনো মাতৃত্বের শিক্ষা নিতে হয় জননীকেও... ... ...
গুরুর লোকেরা তো ভয় দেখাচ্ছেই ... ...
ইউরোপ এদেরকে খুব বেশি বেতন দিবে এমনও না। ভাল বেতন পাওয়ার যে উপায় এরা প্রত্যেকেই তার থেকে শত শত মাইল দূর দিয়ে হাঁটছে। কেন কিসের টানে, কিসের নেশায় পঙ্গপালের মত সবাই রোমানিয়া আসছে তা আসলেই রহস্য আমার কাছে। বুঝার চেষ্টা করছি, যা বুঝছি তা এক ভয়ংকর সত্য। সবাই জায়গা চায় এখানে। ইউরোপ কাওকে ফেরায় না, কষ্ট করলে, কেউ যদি রাষ্ট্র ভেদে চার পাঁচ ছয় আট বছর কাটায় তাহলে এখানকার নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে, সত্য মিথ্যা জানি না, তবে সবাই তাই বিশ্বাস করে। ইউরোপ সবাইকে আশ্রয় দেয়! এখানে থাকলে এক সময় নাগরিকত্ব পাওয়া যায়, এখানকার একটা পাসপোর্ট কোটি টাকার চেয়েও দামি বলে মনে করে অনেকে। তো? সব যুক্তিতর্ক শেষ! এরা সবাই ইউরোপ নিবাসি হয়ে যাবে। ১৭ বছর যে সৌদি থেকে এসেছে সে জানে আরও ১৭ বছর থাকলেও কোনদিন সৌদি সরকার তাকে নাগরিকত্ব দিবে না। মালয়েশিয়া দিবে না, সিংগাপুর দিবে না, কাতার দিবে না, কুয়েত দিবে না, কেউ দিবে না। দিবে ইউরোপ। আর এই কারণেই হুমড়ি খেয়ে হাজির সবাই। যেহেতু মূল ইউরোপে ঢোকা কষ্টকর, প্রায় অসম্ভব তাই সহজে ইউরোপের রাস্তা হিসেবে রোমানিয়া ব্যবহৃত হচ্ছে। ... ...
সম্প্রতি 'পানি' ও 'দাওয়াত' শব্দদুটির ব্যবহার নিয়ে এপার বাংলায় অনাবশ্যক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই শব্দগুলি নিয়ে বর্ণহিন্দুর আপত্তি বা অস্বস্তি যে আজকের নয়, এর যে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে- তার বিশ্লেষণ করাই এই লেখার মূল উপজীব্য। ... ...
আমার জীবন যেরকম....................... ... ...
কর্ণাটক বিশেষ করে এর পশ্চিম অংশকে হিন্দুত্বের ল্যাবরোটরি বলা হয়। হিজাব এবং হালালের পর এই ল্যাবের নূতন পরীক্ষার বিষয় কাস্ট ও সংরক্ষণ। ... ...
সবাই জানে, বাংলাদেশের মানুষ ভাষার জন্য লড়াই করেছিল। অনেকেই জানে না যে, বাংলাদেশের মানুষ একজন কবির জন্যও লড়াই করেছিল। গেল বছর মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পাড়ি দিচ্ছিল যখন বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী লড়াইগুলোর ইতিহাস আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল সে আন্দোলনও। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন আর রবীন্দ্রনাথ- জাতীয় ইতিহাসের এই পালকগুলোর কোন একটিকে বিচ্ছিন্ন করলে যেন খসে যাবে অন্য পালকগুলোও, কংকালসার এক বাংলাদেশ পড়ে থাকবে চোখের সামনে। কিন্তু কেন তিনি নাড়ি ছেঁড়া ধন আমাদের? কেনই বা তার ‘সোনার বাঙলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত? বাংলাদেশের একটি নদীর উপর একটি নৌকোয় চড়ে বসুন আর ক্ষণিক ছিন্নপত্র ও ক্ষণিক চারপাশের জীবন ও প্রকৃতির মাঝে ডুবে থাকুন। আস্তে আস্তে একটি ছবি ভেসে উঠবে আপনার অক্ষিপটে; অবাক বিষ্ময়ে আবিষ্কার করবেন, পুরো বাংলাদেশটাই রাবীন্দ্রিক! ... ...
দূতাবাস আমাদেরকে খুব দারুণ করে সমাদর করল। মেহেদি হাসান নামে একজন সচিব বেশ মনোযোগ দিয়ে আমাদের সমস্ত অভিযোগ শুনলেন। এরপরে অভিযোগ গুলো নিয়ে আমাদের ভিতর থেকে কয়েকজনকে নিয়ে গেলেন রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলার জন্য। আমরা বাকিরা নিচে বসে রইলাম, ছবি তুললাম। রাষ্ট্রদূত দ্রুত অ্যাকশন নিলেন। ফোন দিয়ে গরম করে ফেললেন মুহূর্তে। যারা কথা বলে আসলেন তাদের পরে আমি কথা বলার জন্য গেলাম। আমি যখন উনার রুমে ঢুকি তখন তিনি মোবাইলে আমাদের কোম্পানির কর্তা কোন ব্যক্তির সাথে লাউড স্পিকারে কথা বলছেন। বাকিটা আমার গর্বের হয়ে রইল। ওই পাশ থেকে একজন খুব কর্কশ স্বরে কথা বলছিলেন। আমাদের রাষ্ট্রদূত ( নামটা দেখেছি কিন্তু ভুলে গেছি, কি জানি হুদা!) উনাকে ফোনে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “আপনি জানেন কার সাথে কথা বলছেন? আমি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলছি, আপনে এমন শব্দ ব্যবহার করতে পারেন না আমার সাথে কথা বলার সময়। এরা আসছে নির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে। আপনারা কোন আইনে, কোন অধিকারে আমার দেশের লোকজনের পাসপোর্ট নিয়েছেন?” ওই পাশে নীরব হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য। বলল ওরা আসলেই সবাইকে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে, আজকে এখনই দিয়ে দেওয়া হবে। ... ...