তেমনই বুদ্ধদেব গুহ, থিম্যাটিকালি না হলেও, বাঙালি শহুরে, উচ্চবিত্ত আর ধনী চরিত্রদের বাংলা মূলধারার সাহিত্যে আনলেন। বুদ্ধদেব গুহর বাইরে মূলধারায় উচ্চবিত্ত চরিত্র সেরকমভাবে এসেছে কি? তার একটা কারণ অবশ্যই আমাদের সাহিত্যিকরা ব্যক্তিগত জীবনে মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরীরা ধনী ঘরের সন্তান ছিলেন। তাঁদের গল্পে উচ্চবিত্ত ও ধনী চরিত্র এসেছে সময়ে সময়ে, কিন্তু শরৎচন্দ্র থেকে হালফিলের যে উপন্যাস পড়ি, সেখানে উচ্চবিত্ত চরিত্র খুব কম ক্ষেত্রেই মূল চরিত্রের স্থান পেয়েছে ওই কারণে। ... ...
‘সন্দীপন পাঠশালা’র আগে তারাশঙ্কর তাঁর ছোটগল্পে শিক্ষক-মহাশয়দের কথা অল্প অল্প তুলে ধরেছেন। ১৯৩৩ সালে বঙ্গশ্রীর অগ্রহায়ণ সংখ্যায় ‘মধু মাস্টার’, ১৯৩৬ সালে দেশ পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় ‘পণ্ডিত মশাই’ এবং ১৯৪১ সালে প্রবাসীর বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’। ‘পণ্ডিত মশাই’এর যতীন চাটুজ্জে এবং ‘হরি পণ্ডিতের কাহিনি’র হরিনাথ চাটুজ্জে যে একই ব্যক্তি তা বুঝতে পাঠকের অসুবিধা হয় না। দুজনেই পল্লীগ্রামের পণ্ডিত। দুজনেরই পাঠশালা বসে জমিদারের কাছারি বাড়িতে। ছেলে পড়ানোর চাকরির অঙ্গ হিসেবে দুজনকেই গ্রাম দেবতার পুজো করতে হয় এবং জমিদারের আগমন হলে রাঁধুনির ভূমিকা পালন করতে হয়। এঁদের দুজনেরই কাজে প্রবল নিষ্ঠা। খেটেখুটে একেকটি ছেলেকে এঁরা তৈরি করেন বৃত্তি পরীক্ষার উপযুক্ত করে। আর পার্শ্ববর্তী পাঠশালা সেই ছাত্রকে লোভ দেখিয়ে ভাঙিয়ে নিয়ে যায় পরীক্ষার আগেই। তাই এঁদের পাঠশালা সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকে। যতীন অথবা হরি পণ্ডিতকে এই কারণে লোকে ‘কাক-পণ্ডিত’ বলে। চিরকাল কাকের মতো তাঁরা অপরের বাচ্চাকে উপযুক্ত করেই যান। ... ...
ইউভাল নোয়াহ হারারির দুটি বিখ্যাত বই 'স্যাপিয়েন্স' এবং 'হোমো দিউস' যথাক্রমে মানবসভ্যতার ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের ওপর আধারিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বই 'টুয়েন্টি ওয়ান লেসন্স টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি'তে তিনি বর্তমান এবং নিকট ভবিষ্যতের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি তাঁর মতামতের একটা সংক্ষিপ্ত রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করব কয়েকটি পর্বে। ... ...
দ্রুত খাচ্ছিল মিঠু, বাটি থেকে চিকেনের শেষ পিস প্লেটে তুলে মনে হল -বড় দ্রুত ফুরিয়ে গেল খাওয়ার সময়টুকু। এই আলো আঁধারি, চিনে খাবারের গন্ধ, লাল রেক্সিনের পুরু গদি- ছাত্রদের কোলাহল নেই, মা'র চিৎকার নেই, সনতের এখানে আসার সম্ভাবনাও নেই - তার আরো খানিকটা সময় থেকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল। হাত তুলে একটা ভ্যানিলা আইস্ক্রীম আর থামস আপ চাইল মিঠু। প্র্যাকটিকাল ক্লাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমর ধরে গিয়েছিল মিঠুর - তার ওপর ঝুঁকে স্লাইড চেক করা। ঢেকুর উঠল বার কয়েক। ফেরার সময় বাসের জন্য দাঁড়াতেও হল অনেকক্ষণ- সি এ এ নিয়ে মিছিল বেরিয়েছে আজ শহরে। ... ...
দুপুরের খাওয়া চল্লিশজন ছেলেমেয়ের জন্যে, ফাইফ সিক্স সেভেন আর এইট। পেট-ভরা ভাত দেওয়া হয় ওদের, সকালের মতো ফ্যানা-ভাত নয়, ফ্যান-গালা ভাত। আর মনে রাখবেন, ওদের পেট-ভরা মানে আপনাদের পেট-ভরা নয়। ভাত ওরা অনেক বেশি খায়, এবং যতটা খায় ততটাই দেওয়া হয়। আমার মনে হয় না পেট-ভরা নিয়ে কোন দুঃখ ওদের আছে। পেট ভরে। রোজই। তবে হ্যাঁ, তরকারির একটা মাপ আছে, সে মাপটা বুঝিয়ে দেওয়া আছে নিমাই আর সুনীলকে। সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা আমরা সবাই জানি, নিমাই আর সুনীলও জানে। ... ...
জুলাই ও নভেম্বর ১৯৩২ পর পর দু বার নির্বাচন হয়। কোন দল সরকার গঠন করতে পারে না। জানুয়ারি ১৯৩৩ আবার নির্বাচন। কোন দল সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে নি (নাৎসিরা পায় ৩৩% ভোট) । ভোট ক্লান্ত জনগণকে রেহাই দেবার জন্য ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিনডেনবুরগ হিটলারকে কোন রকমে একটা জোড়া তালি দিয়ে সরকার গঠনের অনুমতি দিলেন। ক্ষমতা দখল করেই মার্চে আবার নির্বাচন ডাকলেন হিটলার। ক্রুপ থুসেন সহ যাবতীয় শিল্পপতিরা তাদের কোষাগার খুলে দিলেন – প্লেনে চড়ে এই প্রথম কোন রাজনৈতিক নেতা নির্বাচনী প্রচার করলেন। বিপুল অর্থ ব্যয় করেও সংখ্যা গরিষ্ঠ হল না নাৎসি পার্টি -তারা পেলো ৪৩% ভোট। জার্মান জাতীয় দলের সঙ্গে একত্রে হিটলার আবার সরকার গঠন করলেন। দু মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের দরোজা বন্ধ হল। সে দরোজা আবার খুলবে দেড় দশক বাদে। ... ...
তাদেরকে সাদাদের কামরা থেকে নাবিয়ে দিল না কেউ। টিকেট দেখতে এসে লালমুখো গুঁফো লোকটা অনেকক্ষণ চোখ সরু করে সবার চেহারা জরিপ করল। এরা নিজেদের জান পেটের মধ্যে সিঁধিয়ে বসে ছিল। ভাবটা যেন কিছুই হয়নি, কিন্তু বুক গুড়গুড় করছে। শেষ অবধি লোকটা জিগেস করল, হিন্দু? চেকার আসার আগেই পাঁচকড়ি চোখ বুজে হরিনামে ডুবে গেছিল। মোকসাদ মাথা নেড়ে সায় দিল। ফ্রম ক্যালকাট্টা। আর তুমি? লালমুখোর নজর ইরুবার দিকে। ইরুবা দাড়িতে হাত বুলিয়ে দাঁত বের করে বলল, হিন্দু ফ্রম কালকাত্তা। সে লোক ভুরু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইল। কি নাম তোমার? ইরুবা এত কিছু ভেবে রাখেনি। বলল, ইরুবা। কোথায় যাচ্ছো? নিউ অরলিন। সে লোক এবার ইরুবার কাঁধে এক থাবা মেরেছে। কথা বলছো যেন মিসিসিপির নিগার, আর ভেক ধরেছো হিন্দুর? মুহূর্তে ইরুবা দিল এক লাফ, যেন জলজ্যান্ত হনুমান .... ... ...
গ্রামের নাম এদেসমেত্তা, জেলা বিজাপুর, ছত্তিসগড়। জেলাশহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত এই গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। ১৭-১৮ মে, ২০১৩র রাতে গ্রামের ৩০-৪০ জন মানুষ বীজ পান্ডুম উৎসব পালন করার জন্য মিলিত হয়েছে। বীজ পান্ডুম হচ্ছে ফসলের বীজের মাধ্যমে নতুন জীবনের আগমনকে উদযাপিত করা। প্রায় হাজার জনের নিরাপত্তা বাহিনী তাঁদের ঘিরে ধরে, নির্বিচারে গুলি চালায়; ৮ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৪ জন নাবালক। মাওবাদীদের মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কোবরা ইউনিট উল্লসিত, তাঁরা উগ্রপন্থীদের একটি দলকে নিকেশ করে দিয়েছে। এলাকার মানুষ মানতে নারাজ, তাঁরা বলেন যে এঁরা সবাই ছিলেন নিরীহ গ্রামবাসী, কেউ মাওবাদী নন। তুমুল হৈচৈ হয়। তখন রাজ্যে রমন সিংয়ের বিজেপি সরকার যাদের প্রবল দমন-পীড়নে আদিবাসীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ঘটনাটি নিয়ে এতো সাড়া পড়ে যায় যে সেই সরকারও বাধ্য হয় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে। ... ...
তরুণ সাগারারা সুদর্শন তরুণ আফ্রিকান বর্বরের সৌন্দর্যের আদর্শের উদাহরণ। তার মুখের মরা কালো রং হালকা গৈরিক ছোঁয়ায় বাদামীবর্ণের, তার কপালের উপর চার-পাঁচটি উজ্জ্বল তামার মুদ্রার সজ্জা, প্রতিটি কানে কানের লতিগুলোকে টেনে লম্বা করে একটি করে ছোট্ট লাউয়ের গোড়া ঝোলানো, মাথায় সহস্রাধিক তেলচকচকে কেশচূর্ণ পিতল এবং তামার ছোট ছোট টুকরো দিয়ে সাজানো, মাথাটি সুচারুভাবে পিছনে হেলান, চওড়া বুকটি চিতিয়ে রাখা আর সেই সঙ্গে তার পেশীবহুল বাহু এবং সমানুপাতে পা— সৌন্দর্যের প্রতিনিধিই বটে। ... ...
মালয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী সব শহরেরই সমুদ্রের ধারে পেয়ে যাবেন আপনি স্ট্রিট-ফুড বা হকার-ফুড, যা সত্যিকারের প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সন্ধ্যে নামার পর। প্রায় সারি দিয়ে বিচের ধার ঘেঁসে আপনি অসংখ্য ফুড-স্টল পেয়ে যাবেন। অনেকে লাইভ বারবিকিউ করছে দেখতে পাবেন। খুবই সিম্পল ব্যাপার – সাধারণ টেবিল একদম সার দিয়ে বসানো, তাতে প্লাস্টিকের টেবিল ক্লথ দেওয়া। যাতে তাড়াতাড়ি টেবিলের টার্ন-ওভার হয় – আপনার খাওয়া শেষ হল, টেবিল ক্লথ পাল্টাবার কোন চাপ নেই। কেউ এসে প্লেট উঠিয়ে নিয়ে ঝটপট করে মুছে দিল টেবিল – আপনি বসে পড়লেন। প্লেট-ও খুব সিম্পল। আপনাকে একটা প্লেট দিয়ে যাবে – বেশির ভাগ সময়েই এগুলো প্লাস্টিকের – আর সাথে দেবে ন্যাপকিনে জড়ানো একটা চামচ এবং কাঁটাচামচ। ... ...
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি। ... ...
বিশ্বজোড়া অতিমারী এই প্রথম নয়, তবু গত প্রজন্ম ও বিগত মহামারীর থেকে যা কিছু আমরা শিখে থাকি - তা ঠিকমতো প্রয়োগ করার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এমন দ্রুত-বর্ধনশীল মহানগরগুলির ক্ষেত্রে। তবে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু শেখার আছে, এমনকি ধারাভির বাসিন্দাদের আপৎকালীন ব্যবস্থা থেকেও! যেমন, উগান্ডার কাম্পালাতে মূলত অপারগ বা বয়স্কদের জন্য স্থানীয় উৎপাদকরা একটি অ্যাপের সাহায্যে সাইকেলে জরুরী জিনিসগুলি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এমন সব উদ্যোগের ফলে রোগের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো কম হতে পারে, কিন্তু নাগরিকদের জীবিকা হারানো, অনাহার, ভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা-বিভ্রাট ও অন্যান্য দুর্ভোগের কোনও যথাযথ হিসাব বা তথ্য পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার সুদক্ষ ব্যবস্থার অভাব ও অনীহার জন্য। ... ...
আফগানিস্তানে জমানা বদলের পর থেকেই নানা দেশ নানাভাবে তাদের লাভক্ষতির হিসেব নিকেশ করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনের সমস্ত তিক্ততাকে পাশে সরিয়ে রেখে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে। বিরোধীরাও তাতে সমস্বরে সাড়া দিয়েছেন। বৈঠক থেকে আফগান-নীতি প্রসঙ্গে শাসক বিরোধী ঐক্যমত-ও তৈরি হয়েছে। বোঝা কঠিন নয় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সবারই উদ্বেগ আছে এবং এই ক্ষেত্রে অন্তত শাসক বিরোধী রাষ্ট্র স্বার্থে অনেকটা কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। ... ...
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় .... সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ... ... ...
দেবেশ রায়, এডোয়ার্ড সয়িদ-এর কালচার অ্যান্ড ইমপিরিয়ালিজম বই থেকে তুলে এনেছেন ইতিহাসের এক নৈর্ব্যক্তিক সত্য – “সাম্রাজ্য বস্তুত এক প্রলম্বিত নৈতিক কর্তব্য।” সেই কর্তব্য পালনের জন্যেই অধীনস্থ, নীচ, পশ্চাৎপদ জাতিগুলিকে শাসন করতে হবে। আর এই ‘নৈতিক কর্তব্য’ সাধন করতে গিয়েই ব্রিটিশ শাসকেরা উপমহাদেশের ক্ষমতালোভী কতিপয় রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে ঘটিয়ে তুলতে পারল এমন এক অভাবিতপূর্ব ঘটনা – দেশভাগ। ভারত-চেতনার হত্যা ঘটাতে তারা ঠেলে দিল আমাদের গৃহযুদ্ধে, দাঙ্গায়। রক্তপাত, অবিশ্বাস, ঘৃণার লাভাস্রোতে ছাই হয়ে গেল সাধারণ কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর ভবিষ্যৎ। এমন চিরস্থায়ী সেই অভিঘাত যে, সাত দশক পার হয়েও সেদিনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে আমাদের লেখায়, চেতনায়। ... ...
কেন্দ্র রাজ্যের পুনর্বিন্যাসের দাবিতে রাজ্যে গড়ে উঠল আন্দোলন। জ্যোতি বসু প্রমোদ দাশগুপ্ত অশোক মিত্র তাকে অন্য ভাষা দিলেন। জ্যোতি বসু বললেন, খানিকটা যেন মুজিবের স্বরেই, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন আছে। ওদের যখন ইচ্ছে টাকা ছাপিয়ে নেয়। রাজ্য সরকারকে ভাগ দেয় না। আর রাজ্য সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিনও নেই।' স্বর আরেকটু উঁচু পর্দায় যেতে পারত। গেলে দেশের মঙ্গল হতো। গেল না। কারণ সর্বভারতীয় হতে চাওয়ার দায়। অমল সরকার লিখেছেন: কংগ্রেস, বিজেপি যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে, রাজ্যগুলিকে শোষণ করেছে। রাজ্যগুলিকে একদিকে রাজস্বের ভাগ কমিয়ে দিয়ে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা স্থির করে দেওয়ার পাশাপাশি নানা শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে হাজার হাজার কোটি টাকা ( এখন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা; গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ বেড়েছে ৪৯ লাখ কোটি থেকে বেড়ে এক কোটি দুই লাখ কোটি টাকা) ঋণ নিচ্ছে তা নিয়ে জবাবদিহির বালাই নেই। ... ...
লম্বা লম্বা শিক লাগানো পেল্লায় তার কপাট। সেই শিক ধরে ভিতরে চোখ রাখল ফায়জল। সঙ্গে সঙ্গে যেন আলিবাবার গুহার মত এক আজব দুনিয়া চিচিং ফাঁক হয়ে চোখের সামনে হাজির। কি বনবন করে ঘুরছে সবাই। সঙ্গে গান করছে কেউ মিঠে সুরে। ছোট-বড়, রোগা-মোটা, বাচ্চা-বুড়ো সবাই চরকি-ঘোরান ঘুরতে ঘুরতে খলখল করে হাসছে। জীবনটা এত মজার, এসব না দেখলে বোঝাই যায় না। পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে গেছিল ফায়জল, নিজেকে গুটিয়ে কারো সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি না করে। ভিতরে কত রকমের বাতি ঝুলছে। চলতে চলতে এক আয়নার সামনে গিয়ে তার চোখ কপালে। হুবহু তার মত একটা লোক, শুধু কেউ যেন হামান দিস্তা দিয়ে এমন পিষে দিয়েছে লম্বায় এক হাত আর চওড়ায় তিন হাত। পোশাক দেখে শুধু বুঝতে পারল, যে এটা তার নিজের সুরত। এমন সেই সিসার কেরামতি। এমনি অনেক সিসা দিয়ে একটা দেওয়াল মুড়ে রেখেছে। কোনখানে ফায়জল বেঁটে, তো কোথাও হিলহিলে লম্বা, আর এক জায়গায় সে হয়ে গেল বেলুনের মত গোল। যেন এখুনি হাওয়া বেলুন হয়ে উড়ে যাবে। আলেফ ডেকে না নিয়ে এলে সেখানেই বুঝি পুরো দিনমান কাটিয়ে দিত ফায়জল। ... ...
ভারতীয় ভারোত্তোলন তখন ধ্বংসস্তূপে। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারোত্তোলন দলের সাফল্যের জন্য তাদের কোচ বিজয় শর্মাকে লন্ডন অলিম্পিকের জন্য সহকারী কোচ নিযুক্ত করা হয়। বিজয় শর্মা, নিজে ভারোত্তোলক ছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ইউরোপেও কাটিয়েছেন। ২০১৪-য় পাতিয়ালায় ট্রেনিং-এর ভার নেবার পরে, কর্তাদের অনুরোধ করে ভারোত্তোলকদের জন্য আলাদা রান্নাঘরের ব্যবস্থা করেন। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে ভারোত্তোলকদের সরিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিক প্রোটিনের দিকে জোর দেন বেশি। ২০১৪-তেই মীরাবাঈ গ্লাসগোয় ৪৮ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ গেমসে রূপো জেতেন। ওদিকে ২০১৫-য় যখন ডোপিং-এর কাদায় ভারতীয় ভারোত্তোলন আবার ডুবছে, তখন বিজয় শর্মা মীরাবাঈ, সতীশ সহ কয়েকজনকে বটগাছের মতো আগলে রাখছেন। ২০১৪-র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স অনুযায়ী ভারত ২০১৬-র রিও অলিম্পিকে দু’জনের কোটা পায়। সেই অনুযায়ী ট্রায়ালও হয় এবং তামিলনাড়ুর সতীশ কুমার শিভলিঙ্গম এবং মীরাবাঈ যোগ্যতা অনুযায়ী পারফর্ম করে অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মীরাবাঈ চোট এবং ভুল ওজন নির্বাচনের কারণে রিওতে ওজন তোলার খাতাতেই নাম লেখাতে পারেননি। আসলে একবার বেশি ওজন দিয়ে শুরু করলে ফিরে যাওয়া যায় না কম ওজনে। ফলস্বরূপ ব্যর্থতা। ... ...
পালাবে কি ভাবে? কোম্পানি থেকে লোকে ডিউটি দিত। পাহাড় থেকে লাফ-ঝাঁপ মেরে যেই পালাতে গিয়েছে, ঠিক খপ করে ধরে নিয়েছে। ওই যে, রাত্তিরবেলা কোম্পানির লোকগুলো পাহারা দেয় না, ওরাই ধরেছিল। বুড়ো ছিল একটা। সেই ওনার হাঁটু ভেঙে গেল লাফ মেরে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে, টানতে টানতে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আবার। আর দুইজনের কেটে ছড়ে কি অবস্থা! একজন কেবল পালাতে পেরেছিল। খু-উ-ব বুদ্ধি ওর। ঠিক গাড়িতে উঠে পালিয়েছে। ফিক করে হেসে ফেলল সন্টু... ... ...