আমড়াগাছের নীচে একটি সভা বসেছে। এখন মাঝ রাত্তির। সভায় উপস্থিত বকচ্ছপ, বিছাগল, হাঁসজারু, গিরগিটিয়া, হাতিমি, মোরগরু, সিংহরিণ। একটু উঁচু জায়গায় বসে আছে প্যাঁচানি, সে এই সভার সভাপতি। সকলেরই চোখে জল, সমবেত চাপা কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন সময় হাত তুলে প্যাঁচানি উপস্থিত সবাইকে শান্ত হবার ইঙ্গিত দেয়, এক মুহূর্তে কান্নার শব্দ থেমে যায়, প্যাঁচানি হুট হুট শব্দে সকলের আচরণ অনুমোদন করে। এমন সময় ঘুম-ভেঙে-উঠে-আসা হরু চোখ কচলাতে কচলাতে প্রবেশ করে। ... ...
এদের মধ্যেকার সম্পর্কের এতো অবনতির কারণটা কি? জাতিগত এই ঘৃণা, হানাহানি এটা কি রাজ্যে বরাবরই ছিল? এরা কি কখনই একত্রে বসবাস করতে পারেনি? এদের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করা কি একেবারেই সম্ভব নয়? এই প্রশ্নগুলির ওপরেই কিন্তু রাজ্যের ভৌগলিক ঐক্য অটুট থাকবে কি না তা নির্ভর করছে। এটা ঘটনা যে এই গোষ্ঠীগুলির মধ্যেকার আন্তসম্পর্ক জটিল। এই প্রতিবেদনে আমরা নিজেদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে সমস্যাগুলো বুঝবার চেষ্টা করবো এবং সামনে এগোনোর কিছু সূত্র সন্ধানের চেষ্টা করব। ... ...
কফির কাপ হাতে নিয়ে রিচারড গোল্ডস্টোনের সামনে হাজির হয়ে সুপ্রভাত জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যাচ্ছেন? বললেন কেপ টাউন। ইতিমধ্যে রোদিকা যোগ দিয়েছে বলতে শুরু করলো সে তাঁর রিপোর্ট পড়েছে, তার মনে হয়েছে অনেক স্পষ্ট কথা সেখানে বলে হয়েছে। বাকি সময়টুকু তিনি আমাদের কথা নিয়ে কাটিয়ে দিলেন, আমরা কে, কোথাকার, কখনো দক্ষিণ আফ্রিকা গেছি কিনা। এই সুযোগে জানালাম কাজে কর্মে তো বটেই, এমনকি ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে জোহানেসবুরগ গেছি। বিনীত অনুরোধ জানালাম, আপনার সঙ্গে আমার স্ত্রীর ছবি তুলতে পারি কি? তখুনি রাজি হলেন। তারপর আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট, তিনি কেপ টাউনের পথে। রোদিকা বললে কিছু জিজ্ঞেস করাই হলো না! বললাম দুঃখ পাবার কারণ নেই। আমাদের সঙ্গে কথা বললেন এই ঢের। অমন ডাকসাইটে আইনজ্ঞ বলে কথা। ... ...
১৪৩০ এর শারদপ্রাতে এই সব হ্যান্ডবিলে লেখা থাকছে- কুমুদি পুরস্কার - নবীনদের বাংলা গল্প লেখার আহ্বান। ... ...
সারাদিন অপেক্ষা করে নওশাদ, কিন্তু কোনো উত্তর আসে না। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে নওশাদের মনে পড়ে তার কী করা উচিত, সে রেডিওর ডায়াল ঘুরিয়ে ১২০ কিলোহার্টজ বেছে নেয়। তারপর কয়েকবার “নওশাদ বলছি” বলে। ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে রেডিও প্রাণ পায়। বেলার কন্ঠ, “আপনি সেন্ট্রাল রোডের পেছনের বাড়িগুলির মধ্য দিয়ে কাঁটাবন পার হবেন। আজিমপুর দিয়ে লালবাগে ঢুকবেন। নদী আপনাকে সাঁতরে পার হতে হবে রাতে।” নওশাদ রুদ্ধশ্বাসে বলে, “তারপর?” আবার সারাদিন নিস্তব্ধতা। সন্ধ্যায় নওশাদ ৮০ কিলোহার্টজে বার্তা পাঠায়, “নদীর ওপাড়ে কি প্রতিরোধ কমিটির কেউ থাকবে?” ভোরে বেলার কন্ঠ ভেসে আসে, “না আপনাকে ধলেশ্বরী পর্যন্ত হেঁটে আসতে হবে, আমি সেখানেই আছি।” ... ...
শোভাবাজার রাজবাড়ির পিছনের গেটের কাছে ইন্দুর চেহারা, অবয়ব একটু একটু করে পরিস্ফুট হচ্ছিল শৌভিকের। যেন কিছুটা উৎকণ্ঠা, কিছুটা সতর্কতা নিয়ে জোরকদমে হাঁটছে সে। কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগ। বোঝাই যাচ্ছে সে পিছুটান ফেলে রেখে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে আজ। উল্টোদিকে শৌভিকের সঙ্গে কিন্তু কোনও ব্যাগ নেই। এমনকী পকেটে পার্সও নেই। আসলে শৌভিকের এমনিতেও কোনও পিছুটান নেই। মাঝেমধ্যেই সে রাতেরবেলা পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়ে কলকাতার রাস্তায়, রাতের জীবন দেখবে বলে। একাধিকবার ফুটপাতে শুয়ে থেকেছে সারারাত। ভিখারি-চোর-মাতাল-কাগজকুড়ুনিদের সঙ্গে। এরকমই এক রাতে, তার মনে আছে, এক স্বল্পবয়সি ভিখারিনি, যার মরদ একসপ্তাহ অন্য মেয়ের ডেরায় কাটিয়ে ফিরে এসেছে, লোকটাকে চ্যালাকাঠ হাতে শাসিয়েছিল—“আর কোনওখানে নয়। তোর ঠিকি ওইখানটায় মারব। মর্দানি জন্মের মতো ঘুচে যাবে, বাঞ্চোত”। ... ...
শহরে ঢুকে বিজয়ী জেনেরাল দেখেন একটা এলাকা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। জানতে চাইলেন, এটা কি? এর পিছনে কি আছে? তাঁকে বলা হলো ‘ঘেটো*। এখানে শহরের দশ হাজার ইহুদি বাস করে। ভেনিসের নাগরিকদের পাশাপাশি তাদের বাস করা মানা’। তিনি বললেন ‘তারা ভেনিসে বাস করে কিন্তু নাগরিক নয়? কামান দিয়ে উড়িয়ে দাও এই দেওয়াল, এখুনি’। দু মাসের মধ্যে ইহুদিদের একঘরে বা আলাদা করার রীতি বর্জিত হলো চিরতরে। ১৭৯১ সালের ফরাসি সংবিধানে ইহুদিদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল, ইউরোপে সেই প্রথম। ... ...
হপ্তা দুয়েক আগে বাজারে নিতাইয়ের দোকানে বেলাবেলি বসে গঙ্গাপদ এক কাপ চা আয়েস করে খাচ্ছিল। হোক শালপাতা ফোটানো জলে এক চিমটে চা-পাতার চা। শীতটা যেরকম জমিয়ে পড়েছে তাতে নিতাইয়ের ওই যমের অরুচি চাও ভাল লাগছে। ত্যারচা করে রোদ এসে পড়েছে গায়ে। কতকগুলো শালিক তুরুক-তুরুক করে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। গঙ্গাপদর মনে হল দিনটা বড় ভাল। মনে হতে হতেই দেখে বাজারের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা ধরে একটা টেম্পো ঢুকছে। টেম্পোর আগমন তাদের বাজারে সুলভ নয়। সবাই হাঁ করে চেয়ে রইলে টেম্পোর দিকে। টেম্পোর পেছনে দুটো আলিসান আর পেল্লায় সিন্দুক নাচতে নাচতে বাজার পেরিয়ে ঢুকে পড়ল মধু পালের বাড়িতে। নিতাই বলল, "মধু পালের টাকা রাখার আর জায়গা হচ্ছে না গো। নতুন সিন্দুক কিনতে হল।" গঙ্গাপদ মনে মনে বলল, "ভাল, ভাল। দিনটা বড় ভাল।" ... ...
আমি খুব ধীরে মনের মধ্যে তাকাই। কেউ একটা ছবি আঁকছে সেখানে। জলরঙের মত ব্লেন্ডেড, কিনারা-বিহীণ ছবি। প্লেটের মধ্যিখানে মোটা একটা লাল রঙের ব্রাশ স্ট্রোক। টমেটো, রেড ওয়াইন, রসুন -- মারিনারা স্যস? সরু ফিতের মত সবুজ তাজা গন্ধ। বেসিল নিশ্চয়ই। আর ঐ গোল বলের মত জিনিষটা? ভাজা একটা পরত পেলাম সবার ওপরে, ভেতরটা ক্রীমি, মুখে মিলিয়ে গেলো। তোমার নাম 'আরাঞ্চিনি' না? ইতালিয়ান, ভাজা ভাতের চপের মত? অভিজ্ঞতা এবার আমার দিকে তাকিয়ে হাসে। শেকলহীণ নিশ্চিন্ততার হাসি। ... ...
"কারও জন্য কোনো উপদেশ বা পরামর্শ দেবার নেই আমার। তবু যদি একান্তই জোর করেন এইটুকু বলব যে একটা বড় বোধের জায়গা থেকে সরে এসে কিন্তু কবিতা লেখা যায় না। সেই বড় বোধ কী, সেটাও একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রকৃত অবস্থান এক অন্তহীন সময়, কালোত্তীর্ণ স্থান-কালের মধ্যে, এই বৃহৎ প্রেক্ষাপটটিকে বোধের মধ্যে রাখতে হবে। সেখান থেকে সরে গিয়ে কেবল চমকপ্রদের দিকে ঝুঁকে পড়লে সে চমক টেঁকে না।” ... ...
উনিশশ আটচল্লিশে প্যালেস্টাইনের তিন ভাগ করে দিয়ে ইংরেজ বীরদর্পে পশ্চাদপসরণ করে – ভাগ ঠিক সমান হয় নি, খানিকটা পেলো ইসরায়েল, খানিক প্যালেস্টাইন এবং ইস্ট জেরুসালেম সহ বাকিটা জর্ডান। তারপরে যে আরব ইসরায়েলি লড়াই হলো (ইসরায়েল যাকে বলে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ) তার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নতুন করে এক সীমারেখা টানা হয় – আরমিসটিস লাইন অফ ১৯৪৯। সাতষট্টির যুদ্ধে জর্ডান হারাল তার অংশ, প্যালেস্টাইন পরিণত হলো ইসরায়েলের অঙ্গরাজ্যে। রাষ্ট্রসংঘের আধ ডজন রেসোলিউশন সত্ত্বেও ইসরায়েল সাতষট্টি সালের স্ট্যাটাস কো বজায় রেখেছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক কথাটা বারবার শোনেন - সেটা ওই জর্ডান নদীর পশ্চিম কুল বলে, পূর্বে জর্ডান দেশ। ... ...
মুশকিল হলো ঈশ্বর কাকে কোন কথা দিয়েছেন তার তোয়াক্কা না করে সিদন, টায়ার থেকে (আজকের সাইদা, টায়ার- লেবানন) গাজা অবধি সাড়ে ছশো মাইল ব্যাপী সমুদ্রতীর বরাবর বহু মানুষ বাসা বেঁধেছেন কয়েকশ বছর আগেই। তাঁরা ব্যবসা বাণিজ্যে অত্যন্ত তুখোড়, তাঁদের নৌকো, জাহাজ পাড়ি দেয় বন্দরে বন্দরে। ফিলিস্তিনরা (যা থেকে প্যালেসটাইন শব্দটা এসেছে) সমুদ্র বাণিজ্যে অত্যন্ত সফল, উন্নত জাতি। গাজা ফিলিস্তিনদের বৃহত্তম বন্দর।হঠাৎ দক্ষিণ পশ্চিমের মরুভূমি থেকে হাজির হলেন অজস্র ইহুদি – এটা নাকি তাঁদের প্রতিশ্রুত দেশ। এখানে তাঁরা ডেরা বসাবেন। কে দিয়েছে এই প্রতিশ্রুতি? কোন ঈশ্বর? এ কোন আবদার? বললেই ছেড়ে চলে যাবেন তাঁদের বাপ পিতেমোর ভিটে? ... ...
আমার চোখে তখনো আলকাতরার বোঝা ভারী ওজন নিয়ে চেপে বসে আছে। কেমন যেন মনে হয় ফুসফুসের ওপরেও যেন অন্ধকার চেপে আছে। আমি জোরেজোরে শ্বাস নিতে নিতে আন্দাজে হাতড়ে চেয়ারে বসলাম। কিন্তু মাথাটা তখনও টলমল করছে। হেড ইনজুরির পর থেকেই আমার ব্যালান্সের অসুবিধা হয়। চোখে দেখতে না পেলে আরো বেশি। আমি বন্ধুদের গলা শুনতে পাচ্ছি । "এই তো চামচ পেয়ে গেছি", "হ্যাঁ হ্যাঁ, এই তো আমার জলের গ্লাস।" শুনতে শুনতে আমার মনে আরো ভয় ঘনিয়ে আসে -- সবাই সব পেয়ে যাচ্ছে। আমি যে অতলে সেই অতলে। আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি? ... ...
বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস আনন্দ মঠ পুস্তকাকারে প্রথম প্রকাশের (১৮৮২ সাল) প্রায় ১৫০ বছর পরে আজ নতুন করে একথা বলার প্রয়োজন নেই যে যে সামান্য কয়েকটি পুস্তক সময়ের সীমাকে অতিক্রম করে আসমুদ্র হিমাচলকে প্রভাবিত করেছে – বিশেষ করে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সংগীত বন্দেমারতম্ – শুধু ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বেই এর তুলনা মেলা ভার। James Campbell Ker-এর কথায় – “The greeting “Bande Mataram became the war-cry of the extremist party in Bengal; it was raised at political meetings to welcome the popular leaders and ... also occasionally as a shout of defiance of Eropeans in the street.” ... ...
ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিলেন কিনা তা এই কাহিনীর উপজীব্য নয়। ট্যাঙ্কশংকরের ভর হয়েছিলো, এমন একটা কথা এসেছে। এখন, রেট্রোস্পেক্টিভ বিশ্লেষণে মনে হয়, যেটাকে ভর বলা হচ্ছে সেটা আসলে বাইপোলারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কিম্বা রোদ লেগে বায়ু চড়ে গিয়েছিলো, পিত্ত প্রকুপিত হয়েছিলো, এসবও হতে পারে। মোদ্দা, ট্যাঙ্কশংকর শংকর ভগমান রূপে আবির্ভুত হয়ে লুঙ্গি কোমরে তুলে অর্থাৎ নিচের যন্ত্রপাতি বার করে কতক্ষণ নেচেছিলেন সে সব উদলা প্রসঙ্গে এ কহানি বিলকুল ঢুকবে না। হতে পারে, তিনি এখনো নাচিতেছেন। ... ...
একটা ঢিল ছোড়া যাক। ঢিলটা কাক-ওড়া সরলরেখা ধরে যেতে থাক। যদিও কাকেরা সরলরেখায় ওড়ে, বিষয়টা এমন, মানে, প্রামাণ্য নয়। বিষয়টা কাক নয় ঢিল, ঢিলটা মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে সাঁই সাঁই ধাবমান, সরলরেখা কিম্বা প্যারাবোলায়। সরলরেখা, প্যারাবোলা বা নেহায়েৎ ছাপোষা বক্ররেখা ধরে যেতে যেতে ঢিল টাল খেতে বা লড়খড়াতে পারে, নাও পারে। বিষয়টা সেটা নয়। মানে, ঢিলটা কি আদৌ আছে? থাকলেও সেটা কি দৌড়োচ্ছে? আরো মোদ্দা কথা যেটা, সেটা কি ছোড়া হয়েছে? এ সব প্রশ্নের মীমাংসা ধীরে ধীরে হবে, কিম্বা আদৌ, কখনোই হবে না। ... ...
সমুদ্রের দিক থেকে প্রবল হাওয়া উড়ে আসছিল। ঋষির মাথায় অবিন্যস্ত চুলগুলো এলোমেলো উড়ছিল সেই হাওয়ায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে একবার ভাল মতো চোখ বুলিয়ে নিয়ে ও বলল ‘এক্সেলেন্ট।’ মাঝারি মাপের একটা জমির ওপর হোমস্টে-টা। তিনদিকে ছোট ছোট ঘর। মাঝখানে একটুকরো ঘাসে ঢাকা লনমতো। বসে বিশ্রাম নেবার জন্য বা সময় কাটানোর জন্য গোল খড়ের চালায় ছাওয়া জায়গা। হোমস্টের পেছনে বড় বড় কেওড়া গাছের জঙ্গল। গড়ান গাছও আছে। এই হোম স্টে থেকে বিশ/পঁচিশ মিটারের মধ্যেই সমুদ্র। সবসময়ই সামুদ্রিক হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এই হোমস্টে-এর গা ছুঁয়ে। এমন হাওয়ায় অবিন্যস্ত এলোমেলো হয়ে যেতে খুব ভাল লাগে। চতুর্দিকে সবুজের পাহারাও খুব সুন্দর। ... ...
ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে বরানগরের স্কুল থেকে বীণা সিনেমায় টেন কমান্ডমেনটস সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ইংরেজি প্রায় কিছুই বুঝিনি ; দুর্দান্ত সব সিনারি মনে থেকে গেছে। বাইবেলের সঙ্গে সেই আমার প্রথম পরিচয়। সে কথা দাভিদকে বলার মানে হয় না। এই গ্রন্থের যে নতুন পুরনো দুটো আলাদা খণ্ড আছে জানি কিন্তু কিছু মানুষ কেবল প্রথমটা পড়েন,দ্বিতীয়টা পড়া মানা আর কিছু মানুষ দুটোই পড়েন সেটা জানতে বহু বছর লেগে গেছে। জ্ঞানোদয় হলো এক ইনটার ব্যাঙ্ক কুইজ কনটেস্টে। আমার দলে গুরকান এন্সারি, তুর্কি এবং জশুয়া কোহেন। একটা প্রশ্ন এলো – যিশুর ভাইয়ের নাম কি? জশের সাহায্য খুঁজলাম। সে বললে বস, আমি তো কেবল আমাদের বাইবেলটা পড়েছি! অন্যটা নয়! ... ...
আমি সপ্তাহে দু-দিন উপোস রাখি—মঙ্গলবার বজরংবলির উপোস, শনিবার শংকর ভগবানের। তবে এই সব উপোসে চা এবং ফল খাওয়া যায়; অন্ন, মানে ভাত-রুটি-তরকারি, না খেলেই হল। সাধারণতঃ আমি কাঠগোড়া বাসস্ট্যান্ডে সিন্ধি ভদ্রলোকের একটা বড় ফলের দোকান থেকেই কিছু কলা, আপেল, সফেদা ও মুসম্বি কিনে নেই। আজ সেটা হতে পারে নি। ওখানে বিলাসপুর কোরবার বাস অন্ততঃ দশ মিনিট দাঁড়ায়। ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, খালাসিরা চা-জলখাবার খায়। কিছু যাত্রীও বাদ যায় না। ফলের দোকানের পাশেই গুপ্তা হোটেল। সেখানে চা খেয়ে সবাই পাশের গলিতে যায় তলপেটের চাপ হালকা করতে। ... ...