এই আটক-হওয়া মানুষদের অবস্থা বন্দীদের থেকেও খারাপ। তিনি ক্যাম্পের একটি দুঃখজনক বিবরণ দিয়েছেন, যেখানে দেখিয়েছেন যে এঁরা অন্যান্য "নাগরিক বন্দীদের" তুলনায় কেমন অনেক বেশি বিধি নিষেধের মধ্যে থাকেন। কোকড়াঝাড় কারাগারের নারী বন্দীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মহিলাদের প্রায় এক দশকের মধ্যে একটি মোটামুটি ৫০০ বর্গ মিটারের ঢাকা জায়গার বাইরে বেরোতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই আটক-হওয়া মানুষদের অধিকার সম্পর্কে কেন্দ্র বা রাজ্যের থেকে কোন নির্দেশিকা বা নির্দেশ নেই। আসাম জেল ম্যানুয়ালের দ্বারা এই আটককেন্দ্রগুলি পরিচালনা করা হয়। রাজ্য আটক-কেন্দ্র ও কারাগারের মধ্যে বস্তুতঃ কোন তফাত করে না , এবং জেল কর্তৃপক্ষ আটক-হওয়া-মানুষ আর কোন অপরাধের-দায়ে-অভিযুক্ত বা দোষী-প্রমাণিত-হওয়া কারাবন্দীদের মধ্যে বেছে বেছে আসাম জেল ম্যানুয়ালের বিধিগুলোর প্রয়োগ করেন। জেল-নিয়মের আওতায় থাকা বন্দীরা প্যারোল বা কাজ-করে-মাইনে পাওয়ার মত যে সব সুবিধাগুলি পান, সেগুলোর থেকে এই আটক-হওয়া মানুষেরা বঞ্চিত। পুরুষ, নারী ও ছয় বছরের উপরের ছেলেদের তাদের পরিবার থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি বলে যে কীভাবে এই নির্বিচারে, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দীদের মত অবস্থায় আটক করে রাখা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। প্রতিবেদনটি আরও জানায় যে আসন্ন NRC র ( যা কিনা সম্ভবতঃ লাখ লাখ মানুষকে রাজ্যহারা করবে) প্রেক্ষিতে কিভাবে মানুষের মৌলিক অধিকার, বিশেষতঃ সব থেকে পবিত্র সংবিধানের আর্টিকল ২১ দ্বারা সুনিশ্চিত করা যে অধিকার, বিপন্ন। এই সব রাজ্যহারা মানুষদের নিয়ে কী করা হবে, সে বাবদে ভারতের কোন নীতি নেই। সুতরাং, আটক শিবির সম্পর্কে সত্যিগুলো বাইরে বেরিয়ে এসেছে। রিপোর্টে অনেককিছু আছে এবং পরিস্থিতির গভীরতা বোঝার জন্য, আমি আন্তরিকভাবে চাই যে সবাই এই নিবন্ধ এবং পূর্ণ রিপোর্টটি পড়ুন ... ...
ফেরো, আমার দেশ, ঘরে ফেরো। আর যেওনা রাক্ষসের নরভুক পুরীর উন্নয়ন-পুজোয় বলি হতে। নিজের ঘরে থাকো। নিজের জোরে থাকো। ও মা আমার, তোমার লক্ষ মুখ যখন কাতরাচ্ছিল, যখন মায়ের কোলেও ঘুমোচ্ছিল না খিদেয় কাঁদা শিশুরা, যখন সতেরো দিনের বাচ্চা কোলে বাড়ি যাবে বলে হাঁটছিলে তুমি, তখনও তোমার মাথার ওপর জেগে ছিল নীল আকাশ। মেঘ। গাছপালারা তাকিয়েছিল দূর থেকে। পাশের সরু ঘোলাটে জলধারাটি যে তোমার ফেটে যাওয়া বুকে ওই কাদাজলের অঞ্জলি জোগাচ্ছিল- এরা সবাই তাকিয়েছিল তোমার দিকে। তোমার অপেক্ষায়। ওরাও আশ্রয়হারা। তুমি ওদেরও বাঁচাও। আমাদের বাঁচাও, শিক্ষিত করো আমাদের। তুমি নিজের ঘরে থাকো। ... ...
আমরা আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাস, ইউরোপের কলোনি ও যুদ্ধ-বাণিজ্য বিস্তারের ইতিহাস, সমস্ত কিছুতেই এই রাষ্ট্রধারণার প্রাবল্য দেখি। এমন কী ধর্মকেও রাষ্ট্রব্যবস্থার সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হয়। কিন্তু, ভারতীয় দেশগুলিতে যেহেতু এই রাষ্ট্রচেতনা গণমানসে খুবই ক্ষীণ, তাই রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিসমূহ নিয়ে আলোচনা-আন্দোলনে জনতার উৎসাহও কম। সম্ভবতঃ, আজকের ভারতেও আমরা দেখতে পাই, এই চেহারাটা। রাজনৈতিক দলগুলির ভাগাভাগি, একই এজেন্ডা নিয়ে একাধিক নামে দল তৈরি হওয়া, ব্যক্তিগত প্রভাবের প্রাচুর্য সবই পলিটিকালাইজেশোনের অভাবকে একভাবে সূচিত করে। এমন কী, রাজনৈতিক দলগুলিও সেখানেই সফল যেখানে তারা রাষ্ট্রনীতির পরিসর, পার্লামেন্টারি ডিবেটের বাইরে সামাজিক সংযোগ করেছে। যাই হোক, রবীন্দ্রনাথ এইদেশে পলিটিক্স-এর অচলতার কারণ বুঝেছিলেন, এই প্রবন্ধগুলিতে বেশ বিশদে তা আলোচনা করেছে। ... ...
সত্যিই টিভি সিরিয়ালের এক একটি কেস মহিলা কমিশনে দাখিল হওয়া এক একটি আবেদন। ব্যক্তি আর সমাজ জীবনের জলছবি। মেয়েরা মাথা নীচু করে আর সবকিছু মেনে নিচ্ছেন না। কিন্তু সংসারের কর্ত্রী হয়ে থাকবো এই বাসনা থেকে এখনো বেরোতে পারেননি। স্বামী নিজের বোনকে নিয়ে চলে গেছে, এগারো মাস বাদে ফিরে এসেছে, তবু স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে আবার সংসারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। ছেলে ডিপিএসেই পড়ুক চায়। টাকা দেবে কে, একথার উত্তরে একুশ বাইশের মেয়েটি জানায়, ----ওকে রাজারহাট নিউটাউনে সবাই চেনে। সিন্ডিকেট করে ও। এখানকার কাউন্সিলরের ঘর থেকে বেরিয়ে আমায় সেদিন বলছে, কত টাকা পেলে আমায় ছাড়বি ? কুড়ি লাখ, ত্রিশ লাখ ? আপনারা সিসিটিভি দেখুন। বলেছে কিনা। ও ইচ্ছে করলেই আমার ছেলেকে পড়াতে পারে। ... ...
মৃত্যুর ওপার নিয়ে মানুষের জিজ্ঞাসা আজকের নয় । এই প্রশ্নের সর্বজনগ্রাহ্য মীমাংসা হওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয় । সংবেদনশীল এবং কৌতূহলী মানুষেরা এই প্রশ্ন উথথাপন করবেন এবং নিজেদের মত করে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা চালাবেন – এটা তাই প্রত্যাশিত বলেই ধরে নেওয়া যায় । প্ল্যানচেটের মাধ্যমে এপারের সঙ্গে ওপারের সেতুবন্ধনের প্রয়াস তারই একটা অংশ । বিভিন্ন যুগের কিছু বিশিষ্ট মন এ পথে আকৃষ্ট হয়েছে । এখানে তেমন কয়েকটি উদাহরণ রইল মাত্র । অতীত বর্তমান মিলিয়ে এই তালিকা আসলে দীর্ঘ । এবং পুনরাবৃত্তি যদি ইতিহাসের ধর্ম হয়, সম্ভবতঃ ভবিষ্যতেও এই পথে সন্ধানী পথিকের অভাব হবে না । ... ...
১৯৪৬ সালে জাঁ পল সার্ত্র L'Engrenage নামে একটি চিত্রনাট্য লেখেন। প্রথমে নাম দেওয়া হয়েছিল --'নোংরা হাত'। তখনো একই নামের সার্ত্রের অতিবিখ্যাত নাটকটি প্রকাশিত হয়নি। যাই হোক, সিনেমাটা আর হয়নি। এবং সার্ত্রের অন্যান্য রচনার তুলনায় এই রচনাটা একদম-ই জনপ্রিয় হয়নি। ফ্রান্স এবং জার্মানীতে এটার নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করা হয়, এবং খুব তাড়াতাড়ি-ই বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনায় ফালাফালা করে ছাড়েন নাটকটাকে। তার কারণ-ও ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার মুখে সার্ত্র এমন একটা চিত্রনাট্য লিখলেন যা গোটা বিপ্লব-প্রক্রিয়াটাকেই প্রশ্ন করে বসেছিল। তখন সোভিয়েতের আকাশচুম্বী সাফল্য এবং বিপ্লব স্টালিন সাম্যবাদ এসবের লোককথা প্রায় অতিকথায় পরিণত হয়েছে। ফ্রান্সের বামপন্থী হেজিমনিতে (সার্ত্র নিজেও যার অঙ্গ ছিলেন) স্বভাবতই তখন এমন একটি শিল্পপ্রয়াস বেশ অস্বস্তিকর যা ইঙ্গিত করেছিল যে বিপ্লব তার সন্তানদের গিলে খাচ্ছে। বর্তমান নাটকটি L'Engrenage থেকে বহুলাংশে অনুপ্রাণিত। নাটকটা লেখার জন্য মার্ভিন সেভিলের করা মুল রচনার ইংরেজি অনুবাদ 'In the Mesh'-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। ... ...
দিবাকর ব্যানার্জি ইতিপূর্বে প্রমাণ করেছেন যে তাঁর আন্তর্জাতিক সিনেমার সঙ্গে মোটের ওপর পরিচিতি রয়েছে। কখনো আলেহান্দ্রো গনজালেজ ইনারিতু প্রতিম নেটওয়ার্ক ন্যারেটিভের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি (‘লাভ, সেক্স আউর ধোঁকা’), কখনো ভারতীয়করণ ঘটিয়েছেন কোস্তা গাভরাসের ‘জেড’ এর মত ক্লাসিক ছবির (‘সাংহাই’)। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ব্যোমকেশের জন্যে তাঁর দর্শকের মানসিক প্রস্তুতির অভাব ছিল বলেই মনে হচ্ছে চারপাশের প্রতিক্রিয়া দেখে। বাংলায় এ ছবি করলে তাঁর এমনকি প্রাণ সংশয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এমনটাই আমার অন্তত মনে হচ্ছে। একটা ওয়েল-ডিফাইনড লিটারারি টেক্সটকে চলচ্চিত্রের বয়ানের অন্তর্ভুক্ত করলে তার নানা ইন্টারপ্রিটেশন উঠে আসে স্বাভাবিক নিয়মেই, এবং দর্শকের কাছে সেটা সবসময় রুচিকর নাও ঠেকতে পারে। এজন্যেই অনেকে নিজের ছবি-করিয়ে হিসেবে স্বাধীনতাটা বজায় রাখার জন্য স্বল্পপরিচিত বা অপরিচিত টেক্সট বেছে নেন, ফলে তার পাঠের ধরন নিয়ে আর প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু দিবাকর যে কাজটি করেছেন তার নজির অন্তত ভারতীয় মূলধারার ছবিতে খুঁজে পাচ্ছি না। ব্যোমকেশের এমন (অ)বিনির্মাণ, গোটা ক্যাননকেই কার্যত হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া অথচ তাকে নিপুণভাবে ন্যারেটিভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা, ইতিপূর্বে দেখেছি বলে মনে করতে পারিনা। ... ...
ত্রানের অপ্রতুলতার প্রথম কারণটি নিয়ে নাড়াচাড়া করলে আবার কেন্দ্রীয় নীতির কথাতেই ফিরে যেতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে গণ বন্টন ব্যবস্থায় নাম নথিভুক্ত আছে এমন প্রত্যেকজন তিনমাস ধরে ৫ কেজি বাড়তি খাদ্যশস্য এবং ১ কেজি বাড়তি দানাশস্য বিনামূল্যে পাবে। কিন্তু ১০ কোটির বেশি মানুষের নাম গণবন্টন ব্যবস্থায় নথিভুক্ত নেই, কারণ সরকার ২০১১ সালের জনগণনাকেই ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি এক্টের ভিত্তিবর্ষ ধরবে ঠিক করে ফেলেছে। ... ...
২০০০ সালে পৃথিবীতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের শেষেও উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই জায়্গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আসল উৎপাদন কমেছে কারণ জাপানের ৫৪ টি পরমাণু চুল্লি বন্ধ রয়েছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে মিলিয়ে একটি নতুন চুল্লিও চালু হয় নি। বরং চুল্লি বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। ঐ সময়কালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ২০১১ সালে মার্চ মাসে জাপানের ফুকুশিমায় ঘটলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রায় একই সময়ে তিনটি চুল্লির জ্বালানি দন্ড পুরোপুরি গলে বহুদূর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াল। শুধু তসি নয়, আজও সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় জল ভূগর্ভে এবং সমুদ্রে মিশে চলেছে। দুর্ঘটনার পর জার্মানি, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড তাদের চুল্লি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ইতালি, অস্ট্রিয়া পরমাণু কর্মসূচী বাতিল করে। ফ্রান্স ২০২৪ সালের মধ্যে অর্ধেক চুল্লি বন্ধ করে দেবে বলে জানায়। ... ...
এখানে আসতে থাকুক সব আপডেট। কোথায় কী হবে, কী হল। ... ...
কারা নগদে কেনাবেচা করেন? একটা অংশ অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ীরা, কেননা বৈদ্যুতিন কেনাবেচাতে রেকর্ড থেকে যায়। তবে অনুমান করা শক্ত নয় দুর্বল আর্থিক সামর্থের ক্রেতা বিক্রেতাদের “ক্যাশলেস ইকনমিতে” উত্তরণ হয় নি। তাঁরা ওই ৮৬%-এ আছেন। কেন এতো লোক নগদে কেনাবেচা করেন? কারণ খুব কম লোক ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৪%-এর ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট আছে। আবার মোট এ্যাকাউন্টের ৪৩ % সুপ্ত (ডরম্যান্ট) অবস্থায় পড়ে আছে। অর্থাৎ, মাত্র ৩০% লোক ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে একটা ছোট ভগ্নাংশের কাছে আছে প্লাস্টিক টাকা কিম্বা নেট ব্যাঙ্কিং। অর্থাৎ এক বিশাল সংখ্যাগুরু জনতা নগদ দিয়ে কাজকারবার চালাচ্ছে। যাদের কার্ড আছে তারাও অনেক কেনাবেচা নগদে করতে বাধ্য থাকেন। ক্রেডিট কার্ড থাকলেও খুব কম লোকই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পাড়ার বাজার থেকে তিন মুঠো পালং শাক কেনেন, বা রিক্সাওয়ালার ভাড়া চোকান। ... ...
তত্ত্বগতভাবে ভারতের সংবিধান অনুযায়ী সমস্ত নাগরিক আইনের চোখে এক হলেও মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই তাত্বিক অবস্থান বাস্তব অর্থে যে ভিন্ন ছিল তা প্রমাণিত হয় সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে । মুসলমানদের যেন ধরেই নেওয়া হয়েছে যে তারা এদেশীয় নন । তাদের আনুগত্য বিষয়ে সদা সন্দিহান মনোবৃত্তির ফলে ভারতের ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস মুসলমানদের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ ***(পাদটীকা ) । ভারতের এবং পশ্চিমবঙ্গের সরকারী অ্যাডমিনস্ট্রেসানের উচ্চ পদে মুসলমান সংখ্যা অতি নগণ্য । শিক্ষা ক্ষেত্রের উচ্চ পদে মুসলমান অবর্তমান । ভারতীয় রেলে যত সংখ্যক মুসলমান কর্মরত তার ৯৭ % চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানেরা ঐতিহাসিক সময় থেকে হিন্দুদের তুলনায় সম্পদে, রাজনৈতিক ক্ষমতায় এবং শিক্ষায় পিছিয়ে থেকেছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে হিন্দুরা ছিল জমিদার আর মুসলমানেরা রায়ত এবং ভাগচাষী । কেবলমাত্র ১৯২০ থেকে ১৯৪৭ এর সময়ে অবিভক্ত বাঙলায় মুসলমান মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী হিন্দুদের কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে দাঁড় করাতে পেরেছিল । মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র এবং ব্রিটিশ প্রবর্তিত কিছু সংরক্ষণের সুবিধা ,সাথে মুসলিম লীগের রাজনীতি তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতার কিছুটা পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হয়েছিল , কিন্তু দেশ ভাগের পরে সমস্ত প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃত্বের এবং শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায়ের দেশত্যাগের সাথে সাথে স্বাধীন সেকুলার ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের পরিবর্তে চলে আসে জাতির ভিত্তিতে সংরক্ষণ । ... ...
নিজস্ব আলোভাবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় না গিয়েও সাধারণভাবে বলা যায় ভাসন্ত ধূলিকণায় বিচ্ছুরিত সূর্যাস্তের আভা ,দূরান্তরের তারা ও ছায়াপথ থেকে আসা আলোর রেশ রাতের আকাশকে পুরোপুরি অন্ধকার হতে দেয় না কখনোই। এই আলো উন্নয়নের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে । এখন পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ খালি চোখে ছায়াপথ দেখতে পায়না। সেটা বিষম ক্ষতি বলে যদি নাও মনে হয় , পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্রের যে ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু অপূরণীয় । ওই আলোর রেখা ধরে পথ চলে ( navigate ) এমন পশুপাখীর সংখ্যা খুব বেশি । চাঁদের আলোয় রাস্তা চেনে এমন প্রাণীও কম নেই । তীব্র আলো তাদের চোখ ধাঁধিয়ে রাস্তা ভুলিয়ে দিচ্ছে এমনটি ঘটছে আকছার । ... ...
যুদ্ধের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের অভিজ্ঞতা, সংযম ও পারদর্শিতা অন্যান্যদের চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের কারণে থ্রি নট থ্রি বুলেটের দাম ১২০ থেকে ১৮০ হয়ে গিয়েছিল, চাহিদা বাড়ার কারণে। তালপাটি খালের ওপার থেকে একবার বন্দুক ফুটলে আন্দোলনের স্থানীয় যোদ্ধারা দশ রাউন্ড ফায়ার করে দিচ্ছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, এই ছিল পরিস্থিতি। এই নৈরাজ্যবাদী অপচয় আটকাতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বুলেটের রাজনৈতিক মাহাত্ম্য ও খরচ বোঝাতে হয়েছিল কমরেড বাতাস আর গৌরাঙ্গকে। ... ...
তিনি এইখানে বলেছিলেন ঘুড়ি ওড়ানোর খেলার কথা। ঘুড়ির চল এলো এই বাংলাতে। যে ঘুড়ি আসলে এক অপদেবতা। সেই অপদেবতাকে সুতোয় বেঁধে ওড়ানোর উৎসব হল বৌদ্ধদের। প্রথমে প্রকাশ্যে, তারপরে গোপনে। ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বৈষ্ণবভাবধারার সঙ্গে তখন তুমুল বিবাদ। যে কারণে চর্যার উদ্ভব সান্ধ্য ভাষায়, সেই একই কারণে বৌদ্ধদের ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ। কিন্তু এ ঘুড়ি ওড়ানোর যে মজা তা তো ছাড়া যাবে না! অতএব ঘুড়ির কারিগরী মাথায় রেখে বিশ্বকর্ম্মার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হল তাকে। মাটিতে তুমি অনেক কিছুই করতে পার। কিন্তু আকাশে না পারলে আর পারলে কি? ওটাই তো আসল কেদ্দানি! সে কেদ্দানির জন্যই বাছা হল স্থপতিগুরুর পূজোর দিনকে। বৌদ্ধদের ঘুড়ি ওড়া এদেশে থেমে গেলেও, বিশ্বকর্ম্মার শ্রমশীল ভক্তদের ঘুড়ি উড়তেই থাকলো।। ... ...
ম্যাম, আই হ্যাভ ভেরি গুড নিউজ। - মাত্র কদিন হল কাজে লেগেছো মা, বলে বলে হয়রান হয়ে যাই, ঠিক করে লিটারেচার রিভিউ অব্দি শুরু করলে না, গুড নিউজ কিসের? অনুজা যা বলে তার মর্মার্থ এই রকম-তার স্বামী পুনে (বা বরোদা বা নাগপুরে) বিশাল চাকরি পেয়েছে, বিশাল বাংলো, বিশাল গাড়ি, আয়া, বাবুর্চি ইত্যাদি, ইত্যাদি। অনুজা কাল থেকে আসবে না। - তা কী করে হয়, নিয়মানুযায়ী নোটিস দিতে হবে।রুলস পড়ে দেখো। - ওসব নিয়মটিয়ম আপনি দেখুন ম্যাডাম। আমি আমার স্বামীর সঙ্গে যাব, এখানে আবার নিয়ম কিসের? আর, আমার তিন মাসের স্যালারিটা দিয়ে দিন। স্পর্ধা দেখে হিড়িম্বা অবাক হতে ভুলে যান। - যতটা লিটারেচার জোগাড় করেছো,গুছিয়ে লিখে দাও আগে, তারপর স্যালারির কথা ভাবা যাবে। - কী বলছেন? আমাকে এখন প্যাকিং শুরু করতে হবে, যাওয়ার আগে কত কাজ, এখন আমি লিখতে বসব? পিসিতে আছে, দেখে নেবেন। - কাজটার প্রতি কোন আগ্রহই নেই বোঝা যাচ্ছে,এসেছিলে কেন? - ওহ, এমএসসি করে কি ঘরে বসে থাকব? একটু টাইম পাস, হাতখরচ এসবও তো লাগে। টাকাটা কখন পাব? - এখনও তো ঘরে বসতেই যাচ্ছ। - নিজের সংসারে বসা আর বাপের বাড়িতে বসা এক হল? ... ...
পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকতম কোনো বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ে উঠবে, সেরকম আশা নেই। কিন্তু মূল বিষয়গুলো, যেমন লকডাউনের অভিজ্ঞতা, অর্থনীতির মন্দা, রোজগারের সমস্যা, কৃষকের সমস্যা এই ব্যাপারটা পশ্চিমবঙ্গেও মোটামুটি একই রকম। একইভাবে কৃষি বিলের প্রভাবও খুব আলাদা কিছু নয়। এইসব গুলোরই একটা সর্বভারতীয় চরিত্র আছে, যেমন সর্বভারতীয় শ্রমিক ধর্মঘটের আছে। এইসবগুলোকে যদি আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও একই রকম আলোড়ন তোলা সম্ভব। কেন্দ্রে বা রাজ্যে আলাদা সরকার থাকাটা এক্ষেত্রে সমস্যা নয়। সমস্যা হল, ২১শে রাম এবং ২৬শে বাম, এরকম একটা কথা ফিসফিস করে ছড়ানো হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই কোনো বামের মাথা থেকে বেরোয়নি, বুদ্ধিটা আরএসএস এর। কিন্তু কথাটা ছড়িয়ে গেছে। বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা বিভাজন তৈরির জন্যই ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, কৃষকদের নিয়ে, শ্রমিকদের নিয়ে, শিক্ষানীতি নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে আশা আছে। ... ...
আস্তে আস্তে পিতৃতান্ত্রিকতা শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হল। বুঝলাম, রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে কবি সাহিত্যিকরা যতই মিলনের রোম্যান্টিকতার ছবি আঁকুন না কেন, বিয়ে নামক মিলনের সমাজ-স্বীকৃত পথটি আদতে পিতৃতন্ত্রের মেয়েদের তাঁবে নিয়ে আসার অন্যতম রাস্তা। আর সেই বিয়েতে পাওয়া সম্পত্তিটিকে চিহ্নিত করে দেওয়ার ইচ্ছে থেকেই আদতে শাঁখা-সিঁদুরের জন্ম। এই বোঝার ঢেউ এসেছিল আমাদের আগের প্রজন্মেই, আমাদের প্রজন্মে বোঝাটা একটু বেশি জোরদার হল। অনেকেই বর্জন করলেন বিবাহের চিহ্ন। অনেকে নিলেন মধ্য পন্থা – কিছু বর্জন, কিছু রেখে দেওয়া, নিজের ইচ্ছা মত। একের দেখাদেখি আরও অনেকে। ... ...
ফুচকার জন্মরহস্য কেউ জানে না। এমনকি তা জানতে কারুর সেরকম আগ্রহও দেখিনা। সাবেকি ফুচকার তিনটি বাসস্থান। বম্বে, থুড়ি মুম্বাইতে তার নাম পানিপুরি, দিল্লিতে গোলগাপ্পা আর কলকাতায় ফুচকা। পানিপুরি নামটি সমগ্রতই ব্যাকরণসম্মত। যে পুরির ভেতর পানি থাকে - এরকম ব্যাসবাক্য করলে স্বয়ং পাণিনিও বোধহয় রুষ্ট হতেন না। গোলগাপ্পা অন্ততঃ আধা ব্যাকরণসম্মত। আকারে এটি গোলই বটে। গাপ্পার ব্যাকরণগত ব্যুৎপত্তির হদিশ আমার কাছে নেই। কিন্তু ফুচকা? কোন মানেই হয়না। ব্যাকরণপরীক্ষায় ফুচকা ডাহা ফেল। এমনকি মার্কেটিঙেও। গুগুল বাজার গরম করার আগে জ্ঞানসমুদ্রে যার কদর ছিল রাশভারী জ্যাঠামশাইয়ে, সেই এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার অনলাইনে চাটের এন্ট্রিতে গোলগাপ্পা ও পানিপুরির উল্লখ থাকলেও ফুচকার নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জি থেকে আমরা বাঙালি - সবাইকার যে গর্জে ওঠা উচিত, সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করি। ... ...
কোটিল্য এরপর নানান মদের লিস্টি দিয়েছেন, যেমন মেদক, প্রসন্ন, আসভ, অরিষ্ট, মৈরেয় আর মধু। মধু মানে কিন্তু হানি নয়, আঙুরের থেকে তৈরি ওয়াইন। উনি রেসিপিও দিয়েছেন। একটা শুনুন। মৈরেয় বানাতে কী কী অ্যাডিটিভ লাগে। মেষশৃংগী গাছের ছাল গুড়ের সাথে মিশিয়ে বাটতে হবে। তার সাথে দিন গোলমরিচ ও ত্রিফলা চুর্ণ। ব্যাস,এটাই সিক্রেট রেসিপি। আমের রস থেকেও মদ হোতো। কতো রকমের মদ ছিলো? আয়ুর্বেদে বলে ষাটটি। কোটিল্য উল্লেখ করেছেন প্রায় দশ-বারোটির কথা। অগ্নিপুরাণেও আছে সাত-আটটির নাম। তন্ত্র ঘাঁটলেও গোটা দশেক জেনেরিক মদের নাম পাওয়া যায়। ... ...