ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। ... ...
সারা দেশ জুড়ে ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরির অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই রাজনৈতিক দলটি এবং এদের শাখা প্রশাখা নানা সংগঠন একই সঙ্গে অসহিষ্ণুতার জয়গান করে এবং নিজেদের রাম ভক্ত বলে দাবি করে। অনেকেই মেনে নিয়েছেন, রামায়ণের ইজারা এখন এদেরই হাতে। কিন্তু সত্যিই কি রামায়ণ এমনই অসহিষ্ণুতার কথা বলে! ... ...
কোরোনা ভাইরাস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে চীনের লেভেল - ৪ (সর্বোচ্চ সুরক্ষা স্তর) ভাইরাস গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। যেহেতু নিশ্চিত করে উৎপত্তির কারণ চিহ্নিত করা যায় নি, বাদুড়, সাপ বা প্যাঙ্গোলিন থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে আশংকা করা হচ্ছে তাই এর উৎপত্তির পেছনে ষড়যন্ত্রের একাধিক জোরালো তত্ত্ব খাড়া করা হচ্ছে। ... ...
কিন্ত ইতিমধ্যেই বাঙলায় মুসলমান এবং হিন্দু উৎখাত শুরু হয়ে গিয়েছে । দেশভাগের অনতিপূর্বে এবং পরে কুখ্যাত কোলকাতা কিলিং এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিজগৃহ এবং নিজভূমী থেকে উৎখাত করা শুরু করে । তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি সরকার মুসলমানদের জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তারক্ষায় পূর্ণ রূপে ব্যর্থ প্রমাণিত হন । ঘন ঘন মুসলমান বস্তিতে আগুণ , হত্যার ঘটনা এই ব্যর্থতা এবং উদাসীনতার অন্যতম উদাহরণ । প্রকৃত অর্থে এ কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিলোনা বরং মুসলমানদের ওপর একতরফা আক্রমণ এবংসরকারী নিস্ক্রিয়তার ইতিহাস । এই ক্রমাগত দাঙ্গার ফলে এবং ভয়ঙ্কর ভয়ের পরিবেশে পশ্চিমবঙ্গের বিপুল পরিমাণ মুসলমান প্রাণ বাচাতে গৃহত্যাগী , দেশত্যাগী হতে বাধ্য হতে থাকে ।দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধিষ্ণু মুসলমান সম্প্রদায় নিরাপত্তার খাতিরে হয় শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে অথবা সদ্য গঠিত পূর্ব পাকিস্তানে দলে দলে চলে যেতে থাকেন । ... ...
ভাঙড় চুক্তিতে খুব পরিষ্কার করে লেখা আছে ওখানে পাওয়ার গ্রিডের বদলে একটি আঞ্চলিক সাবস্টেশন হবে। এই বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে আন্দোলনকারীরা বলছেন তাঁরা কথা রেখেছেন। আন্দোলনের শুরু থেকে তাঁরা বলে আসছিলেন পাওয়ার গ্রিড হতে দেবেন না এবং তাঁরা সেটা দেন নি। অর্থাৎ দাবীদাওয়ার প্রশ্নে কোনও সমঝোতা তাঁরা করেন নি। লিখিত চুক্তিকে 'ফেস ভ্যালু'তে নিলে এই বক্তব্য ভুল নয়। যদিও এর মধ্যে একটু ফাঁক আছে। প্রযুক্তির চালু পরিভাষায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহণ এবং বিতরণের পুরো ব্যবস্থাকে একযোগে 'পাওয়ার গ্রিড' বলা হয়। যদিও এই সংজ্ঞা খুব কঠোর ভাবে মেনে চলা সংজ্ঞা - এমন নয়। অনেক সময় অনেকটা অঞ্চল জুড়ে অনেকগুলো সাবস্টেশন ও ট্রান্সমিশন লাইনকে মিলে আলগা ভাবে একটা 'ট্রান্সমিশন গ্রিড' বলা হয়ে থাকে। ... ...
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ। ... ...
এই বাধ্যতামূলক বিমা প্রকল্প নিয়ে আপত্তি উঠেছে অন্যান্য অংশ থেকেও, তবে সেটি সম্পূর্ণ অন্য কারণে। রিপাব্লিকান দলের আপত্তির উলটো কারণেও বলা চলে। বেসরকারিকরণ আরো বেশি করে হোক, এমনটিই চান রিপাব্লিকানরা। সরকারি মেডিকেইড, মেডিকেয়ার নিয়েও তাঁদের বিস্তর আপত্তি, কেননা রিপাব্লিকান দলের মতে এসব ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ কমানো দরকার, ওবামা-সরকার সেটাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। রিপাব্লিকান পথের ঠিক উল্টোমুখের যাত্রী, আমেরিকা দেশের কিছু র্যামডিকাল অংশও বাধ্যতামূলক বিমা প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছে, কেননা তা বেসরকারি বিমাকোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়াবে। PNHP, মানে Physicians for a National Health Program, আমেরিকার প্রায় ১৮০০০ ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন এর ঘোর বিরোধী। এঁরা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, এই অ্যাক্ট আমেরিকান স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসুখের চিকিৎসার সঠিক প্রেসক্রিপশন নয়। বা, বড়জোর, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মরফিন গোত্রীয়। কেন? এক তো এটা দিয়ে এর পরেও সমস্ত মানুষকে চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না। র্যাডিকল-রা হিসেব করে দেখিয়েছেন, আড়াই-তিন কোটি মানুষ এর পরেও স্বাস্থ্যবিমার আওতার বাইরে থেকে যাবেন। আর এতে করে আমেরিকান স্বাস্থ্যব্যবস্থার অন্য যে মুখ্য সমস্যা, ক্রমবর্ধমান খরচ, তারও বিশেষ সুরাহা হবেনা। কেউ কেউ এও বলছেন, শুধু সুরাহা হবে না, তাই নয়, এতে করে কিছু ক্ষেত্রে আরো বিপদকেই ডেকে আনা হল। ... ...
নেহাতই চক্ষুলজ্জা বশে নেহাম্যাডাম একটি প্ল্যান বানিয়ে আনলেন, যার মাথামুন্ডু, এবিসিডি, শুরু বা শেষ কিসুই নাই, যেটি অনায়াসে যেকোন সুস্থবুদ্ধি লোকের সেরিব্রাল অ্যাটাক ঘটানোর উপযুক্ত। হাতে সময় একেবারেই নাই, চাগরির দায় বড় বিষম, হিড়িম্বা রাত জেগে এক্ষপির প্ল্যান বানালেন, প্রত্যেকের দায়িত্ব আলাদা শীটে লিখে দিলেন। অন সেকেন্ড থট, যত সলিউশন বানাতে হবে, প্রতিটি তৈরি করার মেথডও লিখে হাতে হাতে ধরিয়ে দিলেন। (আগে একবার নেহা স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসিড সল্যুশন বানানোর জন্য “একটু হেল্প” চেয়েছিল।) ... ...
এখন, প্রশ্ন উঠতেই পারে, এফআইআরে যদি নাম আছেই, তা হলে আর তাদের উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য সিবিআইকে ১৭৯জন সাক্ষীর ব্যবস্থা কেন করতে হল! সিবিআইয়ের বর্তমান চার্জশীটে এই এনকাউন্টারকে আইবি আর গুজরাত পুলিশের যৌথ অপারেশন বলে বিবৃত করা হয়েছে, এবং এতে রাজিন্দর কুমার সমেত চারজন আইবি অফিসারের নামও দেওয়া রয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবেই কোনও আইবি অফিসারকেই হত্যার ষড়যন্ত্র, অপহরণ ইত্যাদি সম্ভাব্য কোনও ধারাতেই অভিযুক্ত করা হয় নি। এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডটি ঘটাবার পেছনে এতগুলো পুলিশ অফিসার এবং আইবি অফিসারদের আসল উদ্দেশ্য, বা মোটিভ কী ছিল, এই সম্বন্ধে কোনও কথাই বলা হয় নি। এটাও ব্যাখ্যা করা হয় নি কেন এই চারজনকে তিনটে আলাদা আলাদা জায়গা থেকে তুলে আনা হল আর কেনই বা তাদের আমেদাবাদের একটা রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলা হল। চার্জশীটে যা লেখা আছে, তার থেকে অনেক বেশি কিছু লেখা নেই। ... ...
সমস্যার বিপদসংকেত শোনা যাচ্ছে পাহাড়েও। পুরো হিমালয় অঞ্চল আজ বিপদের মুখে। ধ্বস, ভূমিকম্প হয়ে উঠেছে নিয়মিত ঘটনা। অথচ তার মধ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে আরো পর্যটনকেন্দ্র যার অর্থ আরো বিলাস ব্যসন আর দেদার ফুর্তির মোচ্ছব। সম্প্রতি উত্তরাখণ্ডের সাততালে এমনই এক পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করার প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। সাততাল একটি অতি নিরিবিলি জায়গা, পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ। প্রতিবাদ হচ্ছে, যদিও জানা নেই শেষ পর্যন্ত এই পাখিরালয়টিকে পর্যটকের ভিড় থেকে বাঁচানো যাবে কিনা। সম্প্রতি লাক্ষাদ্বীপে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাবটি অন্যান্য রাজনৈতিক কারণগুলির সংগে যুক্ত হয়ে একটা বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছে। ... ...
সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক-অর্থনীতি বা পোলিটিক্যাল সায়ান্সের সামান্য পাঠও আমাদের অবহিত করে যে সামাজিক অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা বা চাকরির সম্ভাবনাহীনতা যখন প্রাধান্যকারী জায়গায় থাকে তখন একদিকে জনমোহিনী রাজনীতির সামান্য অনুদানও জনসমাজ খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চায়, আবার অন্যদিকে শূণ্যদিশা জনসমাজের প্রবল ক্ষোভ এবং অপূর্ণতা mob violence বা গণহিংসার চেহারা নিয়ে আছড়ে পড়ে। স্মরণ করতে পারি সত্যজিতের “জনঅরণ্য”, মৃণালের একাধিক ছবি, শ্যাম বেনেগাল বা গোবিন্দ নিহালনি-র বিভিন্ন চলচ্চিত্রের কথা। আমরা দেখেছি নিস্ফলা ক্রোধ এবং আক্রোশ কিভাবে জনসমাজে প্রতিবিম্বিত হয়। এখানে ডাক্তারকে স্থাপন করলে দেখবো সে একজন সফল, ঈর্ষণীয়ভাবে স্বচ্ছল এবং ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। এর বিপরীতে রোগীটি আর্ত, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সম্বলহীন এবং ক্ষমতাকেন্দ্র থেকে দূরে থাকা একজন ব্যক্তি মানুষ। একদিক থেকে দেখলে এ দ্বন্দ্ব ক্ষমতা এবং ক্ষমতাহীনতার মধ্যেকার দ্বন্দ্বও বটে। কিন্তু ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও একজন আমলা বা পুলিস বা শিল্পপতি বা রাজনৈতিক নেতার সাথে ডাক্তারের পার্থক্য হল একজন আমলা বা পুলিস বা রাজনৈতিক নেতা সরাসরি ক্ষমতাকেন্দ্রের অংশীদার, এর উপাদান। একজন শিল্পপতি বহুলাংশে এদের নিয়ন্ত্রক। কিন্তু একজন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী ক্ষমতাকেন্দ্রের সাথে যুক্ত নয়। এবং এ অর্থে “ক্ষমতাচ্যূত”, ফলে এরা জনরোষের ক্ষেত্রে একটি soft target যাকে সহজেই আক্রমণ করা যায়, নিজেদের প্রবল ক্ষোভকে সহজে উগড়ে দেওয়া যায় এদের ওপরে। ... ...
আমাদের দেশে এবং সমগ্র বিশ্ব জুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো করোনা-কাহিনী স্বাস্থ্য নাগরিকত্বের এই দ্বিত্বতা প্রকট করেছে। ইউরোপ আমেরিকায় একভাবে প্রকটিত, ভারতবর্ষে আরেকভাবে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর মতো বিশ্ববন্দিত মেডিসিনের জার্নালে আমেরিকায় কালো এবং অন্যান্য গোত্রভুক্ত মানুষের স্বাস্থ্যের সাথে সাদা মানুষদের প্রকট স্বাস্থ্য বৈষম্যকে বলা হয়েছে “স্ট্রাকচারাল রেসিজম” বা সমাজের কাঠামোগত বর্ণবিদ্বেষ। ... ...
১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে বাংলা একাডেমী আয়োজিত বইমেলায় ঘুরতে ঘুরতে দুটো ব্যানার হোর্ডিং-এর লেখা শ্লোগান পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম—“শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলুন”, “শুদ্ধ বানানে বাংলা লিখুন”। তখনই মনে কয়েকটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। শুদ্ধ ইংরেজি বলা বা লেখার জন্য আমরা যতটা আগ্রহ বোধ করি এবং যত্ন নিই, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে তার অভাব কেন? আমরা সকলেই কি বেশিরভাগ সময় শুদ্ধ বাংলা বলি বা লিখি? অথবা ব্যাপারটা কি এরকম যে বাংলা ভাষায় সব রকম বানানই চলে, এবং, শুদ্ধতার কথা বলা এক রকম স্পর্শকাতরতা বা ছুতমার্গ? নাকি, আমরা যে অনেক সময়ই ভুল বলি বা লিখি তা নিজেরাও জানি না বলেই এই সব ভাবি? ... ...
পুজোয় ছুটি বেশি, ঈদে দুদিন ছুটি দিলেই তোষণ থিওরি চলে আসে। সরকার প্রতিমা বিসর্জন সংক্রান্ত দূষণ নিয়ে যতটা চিন্তিত, কুরবানিতে তেমন ব্যবস্থা নিলে অনেক অভিযোগের অবকাশ থাকে না। এইসব বহুকালের ব্যক্তিগত অভিযোগ স্বজাতি বাঙালীর কাছে, বাঙালী হিসেবে খানিক আত্মসমালোচনার। ঈদ নিয়ে মিডিয়ার হইচই নেই, বিজ্ঞাপনদাতাদের দাপাদাপি নেই, এমনকি জরুরী খবর ছেড়ে উৎসব কভার হয় না। যদিও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে ভাইচারার জায়গাটা থাকে। মুসলমানরা পুজোয় অঞ্জলি দেন না ঠিকই, মুসলিমদের সহযোগিতাপূর্ণ অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়। অথচ দুঃখের বিষয় সেটিকে উপপাদ্য আকারে প্রমাণ করতে হয়। কখনো মন্ডপে টুপিওয়ালা কিশোরের ছবি, কিংবা মন্ডপের সামনে কর্মরত দাড়িওয়ালা মুসলমান বৃদ্ধের ছবি সহকারে বর্ণনা দিয়ে। নতুন করে প্রমান করার কিছু নেই! পশ্চিমবঙ্গের অনেক পুজোর কমিটিতে মুসলমানদের অংশগ্রহণ বহুকাল থেকেই। সারা পশ্চিমবাংলার পাশাপাশি মুসলিম প্রধান এলাকা গাডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় মুসলমানরাই পুজোর দায়িত্ব নেন। ... ...
ফাইনম্যান নাসার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত একটি রিপোর্ট লিখে মতামত দেন, যে এই ভেঙে-পড়া ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া অবধি মহাকাশযাত্রা স্থগিত থাকুক। বলেন, “For a successful technology, reality must take precedence over public relations, for nature cannot be fooled”। রজার’স কমিশনের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও সে রিপোর্ট শেষমেশ প্রকাশ পায়, তবে একেবারে শেষে অ্যাপেন্ডিক্স-এফ হিসেবে। অথচ, থিওকল, বইসজলি আর তাদের সঙ্গীদের সমস্ত সাবধানবাণী ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, নাসার ম্যানেজমেন্ট উৎক্ষেপণের আগে যে প্রি-লঞ্চ এস্টিমেটটি কষেছিলেন, তাতে বলা ছিল, লঞ্চে শাটল ফেল করার সম্ভাবনা ১০০,০০০এ মাত্র ১ – প্রায় নেই বললেই চলে। তাহলে? ... ...
অনভ্যস্ত ফার্স্ট ইয়ার আমাদের পক্ষে বুঝে ওঠা সত্যিই কষ্টকর যে ইউনিয়ন না থাকা মানে দিন দিন আমাদের কথা বলার ন্যূনতম অধিকার চলে যাওয়া । প্রেসিডেন্সির ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য সাতচল্লিশ থেকে সত্তর পেরিয়ে আজও প্রাসঙ্গিক, তাকে রক্ষার দায় যদি নাও বোধ করি, তাও, নিজেরা হেসেখেলে নিজেদের ক্যাম্পাসটায় বেঁচে থাকার জন্যই বোধয় একটা সুস্থ স্টুডেন্ট’স বডি প্রয়োজন । যা হচ্ছে হোক যদি চলতে থাকে , তেমন হাল হবে নাতো , নীম্যোলার যেমন বলে গেছিলেন , ওরা যখন ধরতে আসবে তখন কেউই থাকবে না যে প্রতিবাদ করবে . . ... ...
এখানেই এই উপাখ্যান শেষ হতে পারত। কিন্তু মানুষের মৃত্যর পরও তার ছায়া থেকে যায়, আর উপসংহারের পরেও থেকে যায় পরিশিষ্ট। ২০১৩ সালে শঙ্কর কিষ্ণরাও খাড়ে বনাম স্টেট অফ মহারাষ্ট্র মামলায় রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট তার পূর্বতন মৃত্যুদন্ডের সিদ্ধান্তগুলি খতিয়ে দেখে। ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সেই মামলার রায়ের কিয়দংশ উদ্ধৃত করা হয়। এটা কোনো আপতিক ঘটনা নয়, যে, আমরা আগের পরিচ্ছেদে ওই মামলার যেদুটি অনুচ্ছেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছি, সুপ্রিম কোর্টও উদ্ধৃত করে সেই দুটি অনুচ্ছেদ থেকেই। এবং তারপর এক লাইনে মন্তব্য করা হয়, “Prima facie, it is seen that criminal test has not been satisfied, since there was not much discussion on the mitigating circumstances to satisfy the ‘criminal test’.” খুব ছোটো করে এর মানে এইরকম, যে, ধনঞ্জয়ের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেই পারিপার্শ্বিকতাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা দন্ডদানের পরিমাপ বাড়ায় (অ্যাগ্রাভেটিং সারকমস্ট্যানসেস)। যাতে দন্ডদানের পরিমাপ কমে, সেই পারিপার্শ্বিকতা (মিটিগেটিং সারকমস্ট্যানসেস) কে দেখা হয়নি। দার্শনিকভাবে দেখলে, এও এক পূর্বনির্ধারিত আখ্যানের একরকম স্বীকৃতি, যার চাপে কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে উপেক্ষা করা হয়, আর কিছু পারিপার্শ্বিকতাকে দেওয়া হয় অধিকতর গুরুত্ব। ... ...
অষ্টমঙ্গলার ঠিক কুড়ি বছরের মাথায় ক্যান্সার ধরা পড়েছিল লতিকার। বহুদিনই একটা লাম্প পুষেছিল বুকে। যখন বোঝা গেল, অনেকটাই ছড়িয়ে গেছে রোগ। ডাক্তার খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন লতিকাকে, অশোককে। বলেছিলেন, ভ্গবানকে ডাকুন। মির্যাকল তো হয়ও। বাড়ি ফিরে খিলখিল করে হেসেছিল লতিকা- 'একদম মিলি । পুরো মিলি। জয়া ভাদুড়ির সেই সীনটা মনে আছে?' অশোক পাগল হয়ে গিয়েছিল যেন- লতিকার ওপর রাগ করেছিল, খ্যাপার মত বলেছিল, 'শুধু সিনেমা , না? শুধু সিনেমা? তুমি মিলি হতে চেয়েছিলে , তাই বলো নি। আমি জানি। সিনেমাই সব তোমার। আমি, বাবলু -কেউ না?' লতিকা শান্ত চোখে তাকিয়েছিল। বলেছিল-'কেঁদো না।' ওকে নন্দিনী মালিয়ার মত লাগছিল অশোকের । যেন ওরা দুজনে ভ্রমর আর অমল। যেন ওদের জোর করে কেউ সিনেমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে-অভেদ্য এক পর্দায় আটকে গিয়েছে লতিকা আর ও- দম আটকে যাচ্ছে, কিছুতেই বেরোনো যাচ্ছে না - 'ছুটি'র লাস্ট সীন চলছে। সিনেমার থেকে বেরোতে না পেরে অশোক ভাবল, তবে সিনেমাই দেখা যাক। ... ...
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে। ... ...
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলতেন 'দেবশিল্পী'। সলিল চৌধুরী বলতেন, 'হেমন্তদা বা লতা যখন আমার গানের শিল্পী, তখন কল্পনা আমার দিগন্ত ছাড়িয়ে যায়। Sky is my limit.' আকাশই তাঁর সীমা হতে পারে। আকাশ পেরিয়ে ঐ পারেও রয়েছে তাঁর রাজপাট। বাঙালি হয়ে জন্মাবার সুবাদে যেসব ওয়রিশন ফাঁকতালে পেয়ে গেছি, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে একটি সেরা অহংকার। নীল ধ্রুবতারা। সব প্রশ্ন থেমে যায় সেদিকে তাকিয়ে। তাকিয়ে থাকাটাই আমাদের প্রাপ্তি । অমলিন উজ্জ্বল উদ্ধার। ... ...