আলী যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে তখন সে প্রথম বারের মতো কলকাতা যায়। সেবার হুগলী নদীর উপর বিশাল লোহার ব্রীজ হয়েছে। আজব সে ব্রীজ! তার তলায় থাম নেই, উপর দিয়ে বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি চলে, লোকে পায়ে হেঁটে যায়, আর নিচ দিয়ে লঞ্চ-স্টীমার যায়। আলীদের বাড়ির সবাই গোটা ব্রীজ হেঁটে হেঁটে পার হয়। ওপাড়ে গিয়ে আরও হেঁটে ময়দান, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাইকোর্ট সব ঘুরে দেখেছিলো। নিউ এম্পায়ার থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালের ছবি দেখেছিলো। মামীদের খুব ইচ্ছে ছিল থিয়েটার দেখার, কিন্তু এতগুলো মানুষের টিকিট কেনা সম্ভব ছিলো না। এই দিন আলী জীবনে প্রথম বারের মতো দোকানে বসে কাবাব-রুটি আর কুলফি খেয়েছিলো। অমন খুশবুদার আর মাখনের মতো মোলায়েম কুলফি আলী আর কোনদিন খায়নি। দোকানে আরেকটা খাবার দেখেছিল, তার নাম ‘ফালুদা’। নানা রকমের ফল, বাদাম, সিরাপ, ক্ষীর, বরফ দিয়ে বানানো। কি লোভনীয় দেখতে, আর কি তার খুশবাই! ... ...
শুধুমাত্র পরিবারের কথা বলে যাচ্ছি কারণ এদেরকে কাছ থেকে দেখেছি। এরকম কত পরিবার আছে, কত মানুষ আছে যারা ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে আম আদমির কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। এদেরকে আমরা বিদ্বজ্জন বলে মানি না, সম্মান করিনা। কারণ এরা প্রায় বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের কাছে আসেন, আমাদের কথা বলেন, গানে, নাটকে, কবিতায়। নিজের চক্ষে সেদিনগুলো প্রত্যক্ষ করেছি, লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন মঙ্গলকাব্য, গম্ভীরা, মহাভারতের যুদ্ধ, সূর্যশিকার, ক্রীতদাস, গণনাট্যের এক একেকটা প্রযোজনা যখন আছড়ে পড়ছিল, শাসকের বুকে শেলএর মত বিঁধছিল, সেদিন আমি সাক্ষী ছিলাম। সাক্ষী ছিলাম ভোগবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘাড় সোজা করে লড়ে যাওয়া মানুষগুলোর লড়াইয়ের। তাই আজও হুজুগে শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের থেকে ওদেরকেই বেশি আপন মনে হয়। আমার কমরেড। ... ...
কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, শতাব্দী ধরে উন্নয়নের উল্টোপিঠে দুর্ভিক্ষ অশিক্ষা আর অস্থিরতায় ফেলে রাখা 'কোনো এক গাঁয়ের বধূর' নাতনিরাই যে রাজিয়া আমিনা হয়ে বন্দুক তুলে দাঁড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়,সন্ত্রাসবাদ যে আর্থসামাজিক বৈষম্যেরই ফল সেইটা বলার লোক দেখলাম কমে আসছে। দশবছর আগেও অনেকে এগুলো বলতেন। এখন পৃথিবী ক্রমেই একমেরুর দিকে এগিয়ে চলেছে, হয় তুমি আমাদের নাহলে শত্রুপক্ষ- মাদ্রাসা কী ও কেন সেই প্রশ্নে না গিয়েই চলল মাদ্রাসাবিরোধী প্রচার। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকেন্দ্র না বানাতে পারলে কোয়াকদের তুলে দেওয়া যায় না। গ্রামে স্কুল না বসিয়ে মাদ্রাসা তোলা যায় না। বসিয়েও যায় কিনা প্রশ্ন। কিন্তু যে রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করতে পারেনা, সে কী করে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তোলার কথা বলে সেই প্রশ্ন করার লোকও কমে যাচ্ছে দেখলাম। 'স্লোগান পালটে হয়ে যায় ফিসফাস'। ভারত ক্রমশঃ তার ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রটা মেলে ধরছে। অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক আচারগুলোতেও সংখ্যালঘু-দলিতদের সরিয়ে দেওয়ার পর্যায়টা চলছে। বছরখানেক আগে,হায়দারাবাদ গেছিলাম। জামা মসজিদ ঘোরার সময়ে আমি ও আমার বন্ধু একটি করে ফেজ টুপি কিনে মাথায় পরি। তারপর এদিক ওদিক ঘুরে হুসেন সাগরে নৌকোয় উঠলাম, যাওয়ার সময়ে টুপিটা খোলা ছিল, পাশে কিছু সহযাত্রী বসেছিলেন, আইটিতে চাকরি করেন বা ওরকম। নৌকোয় ফেরার সময়ে টুপিটা মাথায় দিতে দেখি পাশে আর কেউ এসে বসছেন না। পরিতাপের বিষয়,আমাদের দেশে এটাই রিয়েলিটি- মার্জিনের ওপারে এক বিশেষ পরিচিতির বাইরের লোককে ঠেলে দেওয়া। ... ...
ব্যাপারটা নিছক ব্যক্তিগত হলে দরকারই ছিল না এত কথার। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে কবিতার নামে কী দেখছি আমরা? স্বকাম-মর্ষকাম কিম্বা ভঙ্গিসর্বস্বতা। একটু অন্যরকম ভাবেন যাঁরা, তাঁদেরও, যোগ থাকলেও আত্মীয়তা নেই জনগণের সাথে। অথচ, সমস্যার কি অন্ত আছে দেশে? কোথায় সেই ক্রোধ ও ফরিয়াদ? কঠিন কঠিন কথায় কীসব নিদান দেন মনীষী কবিরা! আর ক্লীব হলে যা হয়, প্রকৃত প্রেম, নির্মল আনন্দ থেকেও বঞ্চিত আধুনিক কবিকুল। প্রেমের কথা উঠলই যখন – বেশি ফেনিয়ে-গেঁজিয়ে না ভেবে, নরনারীর প্রেমকে যদি স্বাভাবিক চোখে দেখি, গানে-কবিতায় অদ্বিতীয় নজরুল। ... ...
রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল সতী রেগুলেশন অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক। উক্ত আইন বলে কোম্পানির আওতায় থাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির সমস্ত অঞ্চলে সতীদাহ নিষিদ্ধ এবং সতীদাহে সাহায্য করা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষিত হয়। সেই সময় এই প্রেসিডেন্সির আওতায় মূলতঃ বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা, উত্তর ভারতের কিছু অঞ্চল ছিল। উক্ত অঞ্চলগুলিতে বিগত কয়েক বছরে সালপ্রতি প্রায় ৬০০ সতীদাহ হয়েছিল। বেন্টিঙ্ক ১৮২৯-এর এক রিপোর্টে লিখছেন সে বছর নথিভুক্ত ৪৬৩ জন সতীর মধ্যে ৪২০ জন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার এবং তার মধ্যে ২৫০ জনের বেশি কলকাতা-বিভাগের। লক্ষ্যণীয়, বোম্বে এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সতীদাহের সংখ্যা এর থেকে অনেক কম ছিল। এবং এই বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যে শুধুমাত্র কলকাতা-বিভাগে সতীদাহের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, পাটনা বা বেনারসের থেকে দশগুণের বেশি। আরও গুরুত্বপূর্ণ উইলিয়াম কেরির রিপোর্ট, যেখানে তিনি বলছেন ১৮১৫ থেকে ১৮১৮-র মধ্যে এই এলাকায় সতীদাহের সংখ্যা বছরে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল। এবং সাধারণ ধারণার উল্টোদিকে দেখা যায় সতীদের মধ্যে অধিকাংশ মোটেই ব্রাহ্মণ নয় বরং ১৮২৩ সালের রিপোর্টে ৫১% জাতিতে শূদ্র। ... ...
পুলিশকে কিছু কথা বলতে যাচ্ছেন কেউ। তর্কাতর্কি হচ্ছে। পুলিশের দিক থেকে যেহেতু বলার কিছু নেই, তাই তাঁরা কিছুক্ষণ বাদেই তেড়ে এসে তুমুল মারধোর করছেন দু-চারজনকে, এবং টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করছেন, গ্রেপ্তার করা হল। আমার দিকেও তেড়ে এসে ঘুষি চালিয়ে দেন এক পুলিশ মহাবীর। যদিও, আমি শান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু করিনি। স্লোগান-টোগান তো দূরস্থান। হিন্দুত্ববাদী কোনো হামলাকারীর গায়ে বলাবাহুল্য একটুও আঁচড় পড়েনি। পুলিশের তর্জন-্গর্জন, মার-্ধোর শুধু একপক্ষের উপরেই বর্ষিত। এবং পুরোটাই পরিচালিত হয় নীল কোট পরিহিত একজন পুরুষ ও সাদা পোশাকের একজন মহিলা অফিসারের নেতৃত্বে। তাঁরা বস্তুত জনতাকে প্ররোচিত করছিলেন। যে ভঙ্গীতে কান্ডটা করছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই, যে, পুরোটাই ইচ্ছাকৃত। হয় তাঁরা মব কন্ট্রোলের কিছুই জানেন না, কিংবা জানেন, কিন্তু তাঁদের গেরুয়াকরণ সুসম্পন্ন হয়েছে। ... ...
আমি একজন সারভাইভর। আমি আমাকে ধর্ষণ করার জন্য কাউকে অনুরোধ করি নি, আমি ধর্ষণ উপভোগও করি নি। এটা ছিল আমার জীবনে সহ্য করা সবচেয়ে কষ্টকর অত্যাচার। কোনও ধর্ষণ কখনও কোনও মেয়ের দোষে ঘটে না। ধর্ষণকে নিয়ে আমাদের সমাজে পালন করে চলা অদ্ভুত নীরবতা আর অবাস্তব কাল্পনিক মিথকে ছিন্নভিন্ন করে দেবার উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। আমি এই লেখার মাধ্যমে শুধু এইটুকু সবাইকে জানাতে চাই যে মেয়েরা কোনও সহজলভ্য ভোগসামগ্রী নয়, ধর্ষণের মত অপরাধ একজন মেয়েকে, মানুষ হিসেবে, সামাজিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে একা করে দেয়। ... ...
অমৃতসরে তিরিশের দশকের আর পাঁচটা ভাবনা চিন্তা করা যুবকরা যখন ভগত সিং এবং বলশেভিক বিপ্লবের আগুনের আঁচ অগ্রাহ্য করতে পারছেন না, সেখানে মান্টোর তৈরী হয়ে ওঠার গল্পটা আমাদের দেশের অন্যান্য ভাষা সাহিত্যের আধুনিকতার সূচনাপর্বের পর্বের ছবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রচুর পড়ছেন, অসকার ওয়াইল্ড, চেকভ, পুশকিন, মপাসাঁ, হুগো। অমৃতসরেই সমাজবাদী 'মুসাওআত' পত্রিকায় কর্মরত আবদুল বারি আলিগ নামক এক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে হুগো এবং অস্কার ওয়াইল্ড অনুবাদ করছেন, এবং বারি সাহেবের উদ্যোগে অমৃতসরেই এই সব অনুবাদ কিছু প্রকাশিত হচ্ছে ১৯৩৩-১৯৩৪ এর সময়টার মধ্যে। এর পরে টিবিতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং আমাদের সৌভাগ্য যে সেরেও উঠছেন, কিন্তু তার পরে লাহোরে চলে যাচ্ছেন একটা পত্রিকার কাজ নিয়ে। সেখান থেকে নাজির লুধিয়ানভির আমন্ত্রনে 'মুসাবিরা' পত্রিকাটিতে কাজ করার জন্য বম্বে আসছেন ১৯৩৬ নাগাদ। এর পরে কিন্তু আবার ১৯৪২ নাগাদ দিল্লী চলে যাচ্ছেন রেডিওতে নাটক আর নানা স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ নিয়ে, মন পড়ে থাকছে বম্বের বন্ধুদের কাছে। ... ...
ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অনেক দিন ধরেই কমছিল। আয়া সোফিয়ার মসজিদীকরণ সেই ভাবনায় সীলমোহর দিল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে কি এমন ঘটছে যার জন্য মানুষ আবার মধ্যযুগে ফিরে যেতে চাইছে? সাম্য, উদারতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি যে ঝোঁক বিংশ শতকের আধুনিক রাষ্ট্রগঠনে দেখা যাচ্ছিল তার থেকে এত তাড়াতাড়ি মানুষ মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইছে কেন? আধুনিক রাষ্ট্রনির্মানের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ অনুপাত কী হওয়া উচিৎ? রাষ্ট্র এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকে আলাদা করে দেওয়ার গুরুত্ব আধুনিক রাষ্ট্রগুলো বুঝেছে। সুফলও পেয়েছে। কিন্তু বহুত্ববাদে আঘাত না দিয়ে কিভাবে ব্যবহারিক জীবনে ধর্ম বর্জনের চর্চা চলবে সেটা এখনও আয়ত্ত্ব করা যায়নি। ... ...
মেডিকাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া ২০০২ সালে কোড অফ এথিকস-এ বলেছে ডাক্তারদের যথাসম্ভব জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন লেখা উচিত। বিভিন্ন সময় সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকারি ডাক্তারদের ব্র্যান্ড নাম ব্যবহার করতে বারণ করেছে। তাহলে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে কেন? বাজারজাত হচ্ছে কেন? একদিকে সরকার ব্র্যান্ড নামের ওষুধ, অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করতে দেবে আর ডাক্তারদের বলবে এসব লেখা যাবে না — এমনটা হয় নাকি! সরকারের সদিচ্ছা থাকলে তেমনটা করত যেমন করেছিল আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার — অযৌক্তিক নির্দিষ্ট মাত্রার মিশ্রণ (irrational fixed dose combinations), ক্ষতিকর ওষুধ, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নিষিদ্ধ করে। ... ...
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। ... ...
নোটবন্দীকরণের উদ্দেশ্য কী ছিল, দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বা কী ছিল, এসবই এখন ভারতবাসী মাত্রেই তো বটেই, পৃথিবীর প্রায় সকলেরই মোটামুটি জানা। তবু হয়তো আলোচনার কারণে সে সব চর্বিত চর্বণ দু’য়েকবার উঠে আসবে। এটিএমের সামনে সেইসব সুদীর্ঘ লাইন, লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু, নগদ টাকার হাহাকার, ছোট ব্যবসাদারদের আর্তনাদ, আরও অসংখ্য গল্প এখন এদেশের লোকগাথা হয়ে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু আজ আমরা মূলতঃ দেখব, পাঁচ বছর পর, নোটবন্দী আমাদের কী দিল না দিল, সেই ব্যালান্স শিটের হিসেব। ... ...
হইচইয়ের 'মন্দার' নামক এই সিরিজ দেখতে বসে, সমকালীনতা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশই থাকেনা একদম প্রাথমিক কিছু দৃশ্যের পর। দেখা যায় সমুদ্রতীর, দেখা যায় মোটরসাইকেল। দেখা যায় পোলানস্কিসুলভ 'আধুনিক' হিংস্রতা। সিরিজের একদম শুরুতে সমুদ্রতীরে ডাইনি এবং তার চেলা যখন মাছকে গেঁথে ফেলে বর্শায়, সেই দৃশ্যের সঙ্গে পোলানস্কির প্রথম দৃশ্যের অদ্ভুত মিল। আলোর তফাতটুকু বাদ দিলে স্কটল্যান্ড এবং বঙ্গের সমুদ্রতীর একদম এক হয়ে যায় মরা মাছ আর মরা সৈনিকের ছটফটানিতে। ডাইনিদের পদচারণা এবং আচার-অনুষ্ঠানে। পোলানস্কির সিনেমায় ঘোড়সওয়াররা টগবগিয়ে আসে সৈকতে। মন্দারে ঘোড়া নেই, তার জায়গায় আছে মোটর সাইকেল। ধূধূ সমুদ্রসৈকত দিয়ে মন্দার মোটরসাইকেল চালিয়ে যায় পিছনে একজন আরোহীকে নিয়ে। ... ...
বন্দনা মহাকুর, বয়েস ১৫ বছর। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন। হতদরিদ্র বাবা মার ৫ মেয়ে, অথচ গায়ে কাজ নেই। তাই কলকাতায় সব মেয়েকেই কাজে পাঠানো। ছোট মেয়ে বন্দনাকে দমদম শেঠবাগান এর শ্রাবণী সাহা সঞ্জয় সাহার বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার বাচ্চা দেখার কাজে দেয় মাস ছয়েক আগে। মাইনে পাওয়ার কথা ছিল পনেরো’শ। কাজে ঢোকার দেড় মাসের মাথায় একবারই কলকাতার বাসন্তি কলোনিতে মেজোদিদির বাড়ি এসেছিল বন্দনা। দিদির সাড়ে চার বছরের ছেলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে- একদিনের জন্য। মাইনেও মিলেছে মাত্র একমাসের। একটা মেয়ের পেটের চিন্তা করতে হচ্ছে না তাতেই খুশি ছিল গরীব বাবা মা। কিন্তু গত মাসে হঠাত ফোন, বাবা-মা-দিদিকে ডেকে শ্রাবণী সাহা জানায়, তোমাদের মেয়ে দেড় লাখ টাকার সোনার গয়না চুরি করে তোমাদের দিয়ে এসেছে। ... ...
ডিমানিটাইজেশন বা বিমুদ্রাকরণের যে নীতিটি সরকার আম জনতার ওপর চাপিয়ে দিলেন কালো টাকা উদ্ধারের নাম করে, তার নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ বিরোধী দল সংসদ থেকে রাস্তায় প্রতিবাদে সামিল। জনগণ অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি। ব্যাঙ্ক কর্মী থেকে লাইনে দাঁড়ানো বৃদ্ধ মানুষ - শহীদের সংখ্যা আশি পেরিয়ে গিয়েছে। ... ...
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাল্টে দিতে পারে আসন্ন নির্বাচনের গতিপথ। যদি এ সংক্রান্ত সব প্রশ্ন ও তার জবাব দেশের মানুষের কাছে পৌঁছয়, তবেই এমনটা হবে। মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, রাজনীতিতে কালো টাকা দূর করার জন্য নয়, বরং কালো টাকা সাদা করার জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতি পদে কেন সরকার নির্বাচনী বন্ডের পরিসংখ্যান আড়াল করার চেষ্টা করেছে তা জনগণ যদি জানতে পারে। দিবালোকে এই ডাকাতির পুরো সত্য প্রকাশ পেলে এই নির্বাচনী বন্ডের এই ব্যাপক দুর্নীতির তুলনায় বোফর্স বা ২জি-এর মতো দুর্নীতির ঘটনাগুলো ছেলের হাতের মোয়ার মত তুচ্ছ মনে হবে। অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকরা বোফর্সে ৬৪কোটি টাকা ঘুষের অভিযোগ করেছিলেন, যা সরকার কখনওই স্বীকার করেনি এবং আদালতে প্রমাণিত হয়নি। ... ...
মাহুতেরা বলাবলি করছিল এই অরণ্য তো কেবল ট্যুরিস্টদের মনোরঞ্জনের জন্য নয়। এটা পাখি,বাদুড়, বাঁদর,কাঠবেড়ালি এবং অন্য অনেক প্রাণীর বসতি। ডুমুর গাছ খুবই উপকারি, কারণ বছরে অনেকবারই এতে ফল আসে আর যখন অন্য কোনও ফল পাওয়া যায় না, তখন শুধুমাত্র ডুমুর ফলে বেঁচে থাকে এমন প্রাণীও আছে। এই যে যথেচ্ছ এই গাছের ডালপালা ভাঙছি, এক মাহুত আরেক জনকে বলল, এতে কিন্তু বনের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে । আমাদের ভেবে দেখা উচিত এটা আমরা চালিয়ে যাব কিনা। ... ...
এমনকি মহামারী-জনিত সম্পূর্ণ অভূত পূর্ব সংকট পরিস্থিতিতেও পশ্চিমবংগে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এক্তিয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক কুনাট্য ঘটেছে , এবং ঘটে চলেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থক, স্থূল অর্থে আত্মপ্রচার এ আগ্রহী রাজ্যপালের কোন নিন্দাই যথেষ্ট না, এবং রাজ্য সরকার গুলোর ঘাড়ে সমস্ত কাজ ও নিন্দার ভার দেওয়ার পরিচিত কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাটিও নতুন না। একই সংগে রাজ্য সরকারের সং্ক্রমণ এর তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে অযাচিত নিয়ন্ত্রন অবিশ্বাস্য মুর্খামি মাত্র। কিন্তু এই প্রসংগে মেডিয়ার ভূমিকা বা সংবাদ গ্রাহক হিসেবে আমাদের ভূমিকাটিকে কি একটু আয়নার সামনে দাঁড় করানো উচিত? গণতন্ত্রে ক্ষমতার চাপান উতোর এর নাটকীয়তার বিবরণ এবং চর্চা কি আমাদের সত্যিই কোন কাজে লাগছে? ... ...
রিপোর্ট অনুযায়ী ৬৫টি পেমেন্টের ক্ষেত্রে রোগীদের ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল। অডিট করার পরে ৩৮ লাখ টাকা কমে যায়। আরেকটি ক্ষেত্রে ৩১টি ক্ষেত্রে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকার থেকে অডিটের পরে ১২ লাখ ৬ হাজার টাকা কম দিতে হয়। দুটো মিলে ৫০ লাখ টাকা। ব্যাঙ্গালোরের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানা যায় ৭ দিন হাসপাতালে থাকার বিল হয়েছিল ৯৩ লাখ টাকা। বিদেশে, একমাত্র আমেরিকা ছাড়া, ইউরোপের দেশগুলোতে এরকম বিলের কথা ভাবা যায়না। নিউজিল্যান্ড সহ অধিকাংশ দেশেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা সরকারের পরিচালনায়। ফলে এ্ররকম ঘটনা ঘটেনা বললেই চলে। পুণেতে তাও সরকারি একটা অডিট হয়েছে, বিলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। পশ্চিমবঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের মতো সংগঠনের তরফে বারংবার চিঠি দেওয়া এবং হস্তক্ষেপের পরেও অবস্থার খুব কিছু ইতরবিশেষ হয়নি। ... ...
রাজ্য মহিলা কমিশন থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে খোঁজ নিতে। সেই প্রতিনিধি দলও পুলিশের সুরে সুর মিলিয়ে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে গ্রামে ঘুরে ঘুরেও নারী নির্যাতনের কোনো অভিযোগই তারা নাকি পায়নি। আর অন্যদিকে মিডিয়ার সামনে মুখ খোলার অপরাধে এক অভিযোগকারী মহিলার মুখে গরম লোহার ছেঁকা দেওয়া হয়েছে, আক্রমণের মুখে পড়েছে তার শিশুসন্তান, সমাজবিরোধীদের হাতে মার খেয়ে তার স্বামী ঘরছাড়া। সন্দেশখালির নিপীড়িত মহিলারা এতটাই সন্ত্রস্ত যে আগে যারা সরাসরি মিডিয়ার সামনে মুখ খুলেছিলেন, আজ গামছার আড়ালে পরিচয় লুকাতে হচ্ছে পাছে পরিচয় জেনে আবার গুন্ডাবাহিনী বাড়িতে হানা দেয়। অন্যায্য ভাবে পুরো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে, ইন্টারনেট বন্ধ করে সন্দেশখালিকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল, হাইকোর্টের দাবড়ানি খেয়ে সেটা খারিজ করে আবার অঞ্চল ভিত্তিক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। ... ...