সংখ্যার ভিতরেও অজস্র সংখ্যারা থাকে যেন বাসাবাড়ি, বৃক্ষকোটরে অরণ্য প্রয়াস দরজা জানলা ডালপালা, ফুলফল পাতায় মানুষ বা কীটের বসবাস, যাতায়াত বারোমাস ... ...
মঞ্চে প্রবিষ্ট অভিনেতার ওপর কবি তো আলো ফেললেন, সে আলো পাঠককে চিনে নিতে সাহায্যও করলো কী সেই অদম্য প্রকাশবাসনার উৎস, কী সে বক্তব্য যা না বলে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে কবির পক্ষে। কিন্তু সেখানেই কি কাজ শেষ হলো? এই জায়গায় এসেই সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় আত্মজিজ্ঞাসা। সাধারণভাবে কবিতা কেন লেখা হচ্ছে এই বিষয়ে আমরা কথা বললেও এখনও পর্যন্ত একটি বিশেষ কবিতা কেন লেখা হচ্ছে সেকথায় আসিনি। "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" সৃষ্টি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন চোখের ওপর থেকে পর্দা সরে যাওয়া, লিখেছিলেন "বিষাদের আচ্ছাদন" ভেদ করে আলোর প্রবেশের কথা (জীবনস্মৃতি)। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই ঘটনার উল্লেখ করে লিখেছিলেন ঐ বিষাদের আবরণ বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া - কবির এই উপলব্ধির কথা মনে রাখলে “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গের” বিস্ফোরণ বহুগুণে স্পষ্ট হয়। এই চমৎকার উদাহরণে আমাদের কাছে দুটো ব্যাপার স্পষ্ট হয়। কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা আমাদের চোখ খুলে দেয় অন্যতর অর্থের দিকে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো আত্মজিজ্ঞাসা ও সততা। যে বিষাদ বা আনন্দের প্রকাশে কবিতা লেখা হচ্ছে, সেই প্রকাশ কতখানি কবির নিজস্ব, কতখানি আরোপিত সেই অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি না হয়ে তাঁর উপায় নেই। উপায় নেই কবিতা যে ব্যাপ্তি দাবি করে তা এড়ানোর। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যে কবিতা নিয়ে উদ্বেল হবে সেই কবিতা লিখতে গেলে নিজের মধ্যে যেমন ডুব দেওয়া চাই, তেমনি নিজের বাইরে বেরোনোরও দরকার আছে। দরকার আছে আবেগের সাথে দূরত্ব তৈরী করে, ধীরভাবে সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশের। আমাদের আশা প্রথম দুই পর্বের মত তৃতীয় পর্বের কবিতা সংকলনেও সেই বহিঃপ্রকাশ পাঠক আবিষ্কার করবেন। লিখেছেন - শৌভ চট্টোপাধ্যায়, মজনু শাহ, বোধিসত্ত্ব সেন, রামিজ আহমেদ, শাকিলা তুবা, তনুজ সরকার, ঈশিতা ভাদুড়ী, অনিকেত মৃণালকান্তি, অর্পিতা আচার্য্য, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম, রুদ্রদীপ চন্দ, মাজুল হাসান, শ্ব, মিঠুন ভৌমিক। ... ...
আমি ভিখারীর মতো হাত পেতে দাঁড়াই। দয়াপরবশ হয়ে একটা দু'টো টুকরো যদি কখনও ভেসে ওঠে! কখনও জাগর চোখে তার অপেক্ষা করি। অপেক্ষা করি। কিন্তু আসে কি! অসম্ভব ঔদাসীন্যভাব তার। হবেই নাই বা কেন! কতটুকু সাধনা করতে পারি আমি? অন্তরের কাছে পৌঁছানোর জন্য কতটুকুই বা চেষ্টা আমার! আর মুক্তি! ছোটবেলা থেকে আমি মৃদুভাষী। বুকের মধ্যে অসংখ্য কথা, শব্দ, অক্ষর কিন্তু প্রকাশ করতেই যত বাধা। ভাইবোনদের বললেই ওরা হেসে কুটিপাটি। মায়ের সংসার। অবসর নেই! একা বারান্দায় এসে দাঁড়াই। রাতের কালপুরুষ কথা বলে, সকালের রোদ কথা বলে, শব্দ দেয় প্রবল নৈঃশব্দ। এরাই একদিন বন্ধু হয়ে ওঠে। ... ...
এখন সরব নয় গাছের পাতারা আর সামান্য বর্ষায় ঝোলে ঝালে অম্বলে দিনযাপনের পর মনে কিছু নেই তার ঠিক কোন কথাগুলি ভেসে গেল জলে? এখন কয়েকদিন ধরে বাসাগুলো সারাবে পাখিরা ফের গুটি গুটি কুটোকাঠি জুড়ে বর্ষার শেষে পিঁপড়েরা অফিসে বেরোবে নতুন পাতারা স্কুলে এল আগমনী সুরে। বর্ষার জলে গাছের অন্তর কেঁপে ওঠে এখন সহজ রস শিরায় শিরায় ছমছমে হয়ত শব্দ পায়, উচ্চারিত অদৃশ্য ঠোঁটে শ্যাওলার কাঁথা পেতে ধরে যত জল জমে। প্রতি বর্ষায় গাছ আয়ু থেকে বেড়েছে বয়েসে যতখানি হারিয়েছে, তত বেশি জল ভালবাসে। পড়তে থাকুন, এই বর্ষার কবিতাগুচ্ছ। ... ...
ইরফানুর রহমানের ‘‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’’ সিরিজ থেকে অনুমতিক্রমে নেওয়া এক গুচ্ছ অনুবাদ কবিতা। ... ...
লক্ষ্মীদেবী নমো নমো মাতা ফ্যান্টাস্টিক। তোমারে স্মরিব মাগো ঘুরি দিগ্বিদ।। ছয়দিন কর্মস্থলে আসি আর যাই। পথে পথে কত লক্ষ্মী দেখিবারে পাই।। ট্রেনে লক্ষ্মী বাসে লক্ষ্মী অফিসে লক্ষ্মী মা। টিভিতে কাগজে দেখি নাই পরিসীমা।। সপ্তম দিবসে মাতঃ রবিবার বলে। বাড়িতে ব্রেকফাস্ট মাগো লুচি আলু ছোলে।। ... ...
মানুষকে কখনো কখনো শার্দূল হয়ে উঠতে হয় / বাড়িতে তখন পোষ মানানো হচ্ছে / কুকুরের বাচ্চা / পোষ্য এবং পোষক দু'জনেই লোভনীয় / খোঁড়া পা নিয়ে আমার বিপ্লবী জেঠু / শার্দূলকে ভেবে বসছে কুকুর / কুকুর নিজেকে জেঠু ভেবে / সেজে উঠছে অযোধ্যায় যাবে বলে / পোষ্যদের খাদ্য প্রয়োজন / প্রয়োজন সঠিক সময়ে / সঠিক সমস্যা বোঝা / একটা হাড়ের লোভে শার্দূল ছুটছে / পেছনে পা খুঁড়িয়ে জেঠু / হাড় এবং / লোভ এবং / খোঁড়া পা / হো হো করে হেসে উঠছেন / আমাদের প্রণম্য / সন্তোষ রাণা ... ...
গল্পের গরুগুলো গাছে উঠে ধান খায় / লেখকেরা নয়তো প্রায়শই খোঁচা দেয় / এরি মাঝে কেয়াবাৎ / প্রকাশক চিৎপাত / ধানগাছও উড়ে গিয়ে চাঁদে চালভাজা দেয়। ... ...
রাতদুপুরে আমার ধুনুচির ’পরে পরি নামছে। অবিকল পাশের বাড়ির ঠিকে ঝি-র কলেজে পড়া মেয়েটির মতো। তার মুখ জ্যোৎস্না রাতের আলোয় দেখা ঝিলের জলে ভাসমান মেঘ। এই আমি, তারই হাতে হাত রেখে খুলে রাখছি আমার মহাজাগতিক বৃষ্টিবাকল। ... ...
বললুম : এরকম মানে ? // এরকম মানে কেমন যেন বাউল বাউল / দেহতত্ব তোমার কবিতা জুড়ে / রসে-রসে টুপটুপে / সেই প্রথম থেকেই লিখছ এই রকম কবিতা / কেন গো ? / জিগ্যেস করল তরুণী ... ...
দোলকবিতা: ২০১১ ... ...
তোমরা ক্ষমা ক'রো আমার যৌনতা, আমার ক্রোমোজোম এতদিন ধরে শোষণ জ্বালিয়ে রেখেছে তোমাদের ত্রস্ত বিস্রস্ত করেছে ছিন্নমূল করেছে, মা। ... ...
যখন তুমি পুরুষমানুষ থেকে দূরে আছ, খাও যত ইচ্ছে পপকর্ণ, নিজের ভয়ংকর গোপন কথাগুলো নিজেকেই আরেকবার শোনাও ফিসফিস করে। একখানা জ্যান্ত কবিতার বই সঙ্গে রেখ, তোমার দিকে এগিয়ে আসা বিচ্ছুগুলো পিটিয়ে মারার জন্য ওটা লাগবে। খবরদার, ভুলেও বেড়াল কোলে নিও না, যা দিনকাল পড়েছে, স্তনে আঁচড় দেবার ঘটনা গত পরশুও ঘটেছে ভূতের গলিতে। এ সময় ইউক্লিডের উপপাদ্যগুলো মনে আছে কিনা, সেটা আঙুল দিয়ে লিখে দেখতে পার বালিতে। ... ...