এক যে ছিল পাখি। সে ছিল মূর্খ ও স্বাধীন। গান গাহিত, শাস্ত্র পড়িত না। লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দাকানুন কাকে বলে, কাকে বলে গণতন্ত্র। রাজা বলিলেন, 'এমন পাখি তো কাজে লাগে না, অথচ বনের ফল খাইয়া রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।' গুজরাতি মহামন্ত্রীকে ডাকিয়া বলিলেন, 'কখন পাকিস্তানিরা আসিয়া কী মন্ত্র দেবে ঠিক নাই। তার আগেই পাখিটাকে গণতন্ত্র শিক্ষা দাও'। রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়িল পাখিটাকে শিক্ষা দিবার। ... ...
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাঝারি মাপের কারখানার মালিক জানান, 'ভারতের সরকার যে শুধু তার শ্রমিকদের দেখভাল করে তা নয়, বিদেশী শ্রমিকদের প্রতিও দয়ালু। সে কারণেই আমরা ভারতপন্থী'। তিনি আরও জানান, যে, চিনা সরকার স্থানীয় শিল্পকে রক্ষা করতে উদ্যোগী না হলেও ভারত থেকেই এসেছে এক কোটি ফেস্টুনের অর্ডার। যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে ছাপা হচ্ছে। কলকারখানা আবার জেগে উঠেছে। শ্রমিকরা পাচ্ছেন ওভারটাইম। এখনকার মতো সংকট মিটল বলেই আশা করা যাচ্ছে। ... ...
সেই কোনকালে ২০১১ সালে নরওয়েতে ঘটা ঘটনাটা অনবরত টুকরো হতে থাকা সারা পৃথিবীকে যে এভাবে এক করে দেবে কেউই তা ভাবতে পারেন নি। তেইশ শতকের সেই প্রথম শিশুবিপ্লবের পর থেকেই বিশেষ কানুনের বলে নানা ভাষা নানা মত ওয়ালা সারা বিশ্বে শিশু সংক্রান্ত আইন তার ধারা উপধারা অবধি এক হয়ে গেল। আর সেই নিয়ম কানুন অনবরত আরও বেশি শিশুবান্ধব করে তোলা হচ্ছে দিন কে দিন। এখন সবকটা দেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা বিরাট অংশ পরিচালনা করেন দশ বছরের অনুর্ধরা। আর সেই ক্রমবর্ধমান শিশু সংবিধান এর প্রথম ধারাই বলছে এই বইয়ের কোনো ধারাই লোপ করা যাবে না - শুধু বাড়িয়ে নেওয়া যাবে। আর এখান থেকেই যত সমস্যার সুত্রপাত। এই বাবা মায়েরাই যখন শিশু ছিলেন তারা কিন্তু অন্য কথা বলতেন - কিন্তু আঠেরো বছর হতেই তাদের ভোটাধিকার শেষ হয়ে যেতেই তারা আছড়ে পড়লেন বাস্তব সমুদ্রে - শুরু হল পড়াশোনা আর তার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে পেট চালানো। আঠেরো বছর হয়ে গেলে রাষ্ট্র আর তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে না যে। সেই কুড়ি-একুশ শতক থেকেই বাবা মায়েরা বুঝতে পারছিলেন কীভাবে বাড়ির শিশুটি প্রভাবিত করে তাদের জীবনযাত্রা। ব্যবসায়িকরাও বুঝতে শুরু করেছিলেন সংসারের কেনাকাটায় শিশুর পছন্দ গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। বিজ্ঞাপনের ভাষা বদলে যাচ্ছিল দ্রুত। ... ...
পপুলার ছবি, তার জন্মলগ্ন থেকেই, দায় নিয়েছে ভারতের অতি-জটিল রাজনীতির মুখ্য প্রবক্তা হবার, আবার সে রাজনীতির বিনোদনের যোগান দেবারও বটে।ভারতীয় রাজনীতি-- এবং তার বিনোদনের চাহিদা-- পালটায় প্রতি দশকে, পালটায় তার জননীতি, জনসমর্থন এবং অনুভাগগুলি। সংস্কৃতির এক বিচিত্র নিয়মে অন্তত পঞ্চাশের দশক থেকেই হিন্দি ছবি তাল মিলিয়ে চলছে এই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে। একে শুধু রাষ্ট্রীয় রাজনীতির অনুগমন বললে ভুল হবে, বরং হিন্দি ছবির রূপান্তর অনেকসময়েই তার সহোদরা-- দেশীয় রাজনীতির সাথে সম্পূর্ণ সমান্তরাল, কখনও কখনও মাসেরও বিলম্ব হয় না, উনিশশো পঁচাত্তরের জরুরী অবস্থার (জুন) বজ্রনির্ঘোষের ক’মাস আগে পরের মধ্যে রিলিজ করে যায় ‘দিওয়ার’ (জানুয়ারী) এবং ‘শোলে’ (অগস্ট)। দুটি ছবিই প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী এবং ভিজিল্যান্টিজমের সমর্থক; একপাশে দস্যুরূপী অসুরদলনের রূপকথা, অন্যদিকে সমসাময়িক ধূমায়িত গণ-অসন্তোষের আগুনে হাত সেঁকা। গব্বর সিং আপাত-অরাজনৈতিক, কিন্তু সে কী সত্তরের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রশক্তির প্রতিভূ নয়? ... ...
খল (নায়িকা)- সাধারণত নায়কের বড় পিসেমশাইয়ের ছেলের বা আপন জামাইবাবুর বা ভালোমানুষ ভাইয়ের খারাপ মানুষ বউ বা নায়কের প্রাক্তন প্রেমিকা যিনি ওই বড়লোকবাড়িতেই থাকেন বা সকালে উঠেই দাঁত মাজতে মাজতে চলে আসেন। বৌদির রান্নায় বেশি নুন ঢেলে দেওয়া থেকে শুরু করে সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার মত জিনিয়াস আইডিয়াগুলো যাদের মাথা থেকে বেরোয় কিন্তু স্ত্রৈণ স্বামীরা এক্সিকিউট করতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে ধরা পড়ে যান তারপর এনাদের নির্দেশেই পায়ে হাত দিয়ে ক্ষমা চান। হাপুশ কেঁদে স্বামীকে জেলের লপসি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচান। এরপর কয়েকদিন চুপচাপ থেকে আবার উক্ত কাজগুলো শুরু করেন। ... ...
পড়াশুনা যারা টুকটাক করেছেন, তারা অনুভব করেছেন যে ইহা মূলতঃ দুই প্রকার - ডিরেক্ট রিডিং এবং ইনডিরেক্ট রিডিং। ডিরেক্ট রিডিং অর্থাৎ যে বই আমি নিজে পড়েছি এবং তা থেকে জ্ঞান আহরণ করেছি। যেমন শার্লক হোমস অমনিবাস, দা ভিঞ্চি কোড ইত্যাদি। ইনডিরেক্ট রিডিং অর্থাৎ যা আমি নিজে পড়িনি কিন্তু আমার বন্ধুরা পড়েছে বা পড়েছেন, তা থেকে জ্ঞান আহরণ করেছেন এবং সেই লব্ধ জ্ঞান ইতিউতি বিতরণ করেছেন এবং আমি সেই বিতরিত জ্ঞান আহরণ করে বইটির মূল বিষয়বস্তু এবং বিভিন্ন খুঁটিনাটি সম্বন্ধে জেনেছি। যেমন বোদলেয়ারের দর্শন, দান্তের কাব্য ইত্যাদি। জ্ঞান আহরণের এই দুটি সর্বজনমান্য পদ্ধতিকে আদি যুগে স্মৃতি ও শ্রুতি নামে অভিহিত করা হত। ... ...
ব্রিজভূষণ উত্তর প্রদেশের গোন্ডা জেলার কাইজারগঞ্জ থেকে শাসকদলের সাংসদ। কুস্তি নিয়ে বরাবরের একটা আগ্রহ ছিল, তাই বিভিন্ন আখড়ায় স্থানীয় কুস্তির প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে করতে সর্বভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে গেছেন সে প্রায় এক দশক হল। তবে তাঁর বায়োডেটার দুটি উল্লেখযোগ্য অঙ্গ হল, ১৯৯২তে দায়ুদ ইব্রাহিমকে সাহায্য করার অভিযোগে টাডায় গ্রেফতার হন, ছাড়া পান ১৯৯৯তে। আর অবশ্যই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অভিযোগে সিবিআই দ্বারা অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। যদিও ২০২০তে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ক্লিন চিট পেয়ে গেছেন। তবুও অভিযোগগুলো ছিল। ... ...
আর সেসব কী দণ্ড রে মশায়, পড়লে আপনার দাঁতকপাটি লেগে যাবে। পাপ করে ভেবেছেন মনুর পৃথিবীতে রেহাই পাবেন, সেটি হবার নয়। তা রাজাই দণ্ড দিন বা নিজে নিজেই প্রায়শ্চিত্ত করুন। একটা শুনুন। গুরুপত্নীর সঙ্গে ইয়ার্কি দিয়েছেন, এখন লোহার তৈরী জ্বলন্ত এক নারীমূর্তি আলিঙ্গন করে আগুন গরম লোহার খাটে শুয়ে থাকুন, যতক্ষণ না প্রাণবিয়োগ হচ্ছে। আগুনে এলার্জি আছে বলছেন। তাহলে জাপানী স্টাইলে হারাকিরি (ওই তার কাছাকাছি আর কি) করতে পারেন, হাঁটতে হবে কিন্তু নৈঋতদিকে (ন য়ে ঐ, ঋ তে রেফ, ত)দিকে। অবশ্য আপনি যদি কোমলমতি হন, এইসব কাটাকুটি পছন্দ না করেন তাহলে তিনমাস যাউ (রেসিপি নেই) খেয়ে চান্দ্রায়ণ ব্রতও করতে পারেন। ... ...
বইয়ের বাজারে মন্দা লেগেছে কিছুদিন, এবারের হিসেবে তো সারা বাজার যোগ করলে বইয়ের দোকান পুরো একটাও হবে না, বারোআনা হতে পারে। তার মধ্যে নজরে পড়ার ব্যাপার হচ্ছে অনেক ইংরেজী বই-- অবশ্যই প্রায় সবই বাংলা বইয়ের অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ তো আছেই, "শ্রাদ্ধবার্ষিকীতে" দাড়ি মুচড়ে যতোটা উপায় করে নেওয়া যায়, কিন্তু সুনীল গাঙুলী বা শীর্ষেন্দু মুখুজ্জের উপন্যাস, এমন কী "পদিপিসির বর্মিবাক্স"? বাংলা সাহিত্যের এসব অমূল্য সম্পদ কি আমরা আমাদের বাংলাভাষা-অভাষী ছেলেপুলেদের হাতে পৌঁছে দিতে চাইছি? মধ্যে আমরা, আমাদের অভিবাসী সমাজের বেবী বুমাররা (সত্তরের বা তার আগের দশকে যাঁরা এসেছেন) যখন অবসর নেবার কাছাকাছি আসছি তখন কোলকাতার বহুতল বাড়ীর দালালেরা সদলে এসে অনেক ঝাঁপ খুলতেন আর চেঁচামেচি করে খদ্দের ডাকতেন। তা এখন অনেকেই কেনার থেকে বেচার কথা ভাবছেন, কাজেই সে বাজারটি মন্দা, দোকানীরাও অদৃশ্য। দুটি দোকান টিম্টিম্ করছে। তবে নজরে না পড়েই পারে না যেটি সেটি হোলো এক জ্যোতিষীর দোকান, সেখানে জ্যোতিষসম্রাট স্বয়ং দোকান আলো করে বসে আছেন। ইনি বেশ যশস্বী মনে হোলো, এঁর সচিত্র বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায় কাগজপত্রে, যাঁরা পরশুরামের সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড মনে করতে পারেন, তাঁরা শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারীর মূর্তিটি ভেবে নিন। গোড়ায় লোকজন হচ্ছিলো না, বোধ্হয় লোকে ভয়ে দূরে ছিলো, মেলা শেষের কালে দেখি বেশ ভীড়। এইটি যোগ হতেই মেলা একেবার খাঁটি মেলায় দাঁড়ালো। কেন, এদেশী কার্নিভালে স্ফটিক গোলক্ধারিণীদের দেখেননি? যাক, জ্যোতিষী আবার আসুন, বাতের ব্যথাটা চাগাড় দিচ্ছে, একটা পাথর-টাথর ধারণ করার দরকার হয়ে পড়ছে। ... ...
অথবা ধরুন, কালী ব্যানার্জি, প্রায় সমস্ত সিনেমাতেই হাংগাল সাহেবের ন্যায় চিররুগ্ন, অসহায়, রোগজরাগ্রস্ত (বা অন্ধ) এবং মূলত: মেয়ের বাপ। তিনি জীবনের শেষ শক্তিটুকু নিয়ে খাট থেকে কাঁপতে কাঁপতে উঠে অ্যাঁ: অ্যাঁ: শব্দ করত: পুনরায় মূর্চ্ছিত হয়ে গেলেন - হয় হার্টফেল, নয় পক্ষাঘাত। এইরকম করুণ রস ছায়াছবিতে না দেখিয়ে বই থেকে পড়ার চেষ্টা করলে কেমন অবিশ্বাস্য ঠেকে। ... ...
কিন্তু ঘটা করে এই একটা দিন কীসের উদযাপন? কেন উদযাপন? গত এক বছরে প্রায় প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সকালটা তেতো হয়েছে এক বা একাধিক ধর্ষণের খবরে। চার থেকে আশি - কেউ তো বাদ নেই 'ধর্ষিতা' পরিচয়ে শিরোনাম হতে। হিসেব বলছে নাকি এক দিল্লিতেই গড়ে দিনে পাঁচটা ধর্ষণের 'কেস' পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়। তাহলে 'কিন্তু-তবু-যদি-লোকে কী বলবে'র গেরোয় হাঁসফাঁস করা বাকি 'কেস'গুলোর খতিয়ান কেমন, ভাবুন তো! ধর্ষণ- শারীরিক নিগ্রহ আর ভারতীয় উপমহাদেশের যা বিয়ের কনসেপ্ট অর্থাৎ সম্পূর্ণ অচেনা (হালে অবিশ্যি ফোনে দু'দন্ড বাক্য বিনিময়ের পর বাপ-মায়ের দ্বারা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক এর একখান গালভরা নাম দেওয়া গেছে : 'অ্যারেন্জ্ঞড কাম লাভ ম্যারেজ', এক্কেরে আচ্ছেদিন মার্কা ব্যাপারস্যাপার আর কী। রাজা বলেছেন দিন এসছে, উহাকে তোমরা, নালায়ক প্রজাগণ, সোচ্চারে বল 'আচ্ছে দিন' এবং ভাব, ভাবা প্র্যাকটিস কর যে এর থেকে আচ্ছেদিন তুমি জীবনেও দেখনি, দেখবে ঠিক love হবে, লাভ এই লাভ তো এটাও সেরকমই একখান ব্যাপার) একজনের গলায় সোনা-দানা-খাট-পালঙ্ক (ইহাদের পণ বলে না, ইহারা হল গিয়ে 'আপনার মেয়েকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেবেন' এর কড়ি আঙুলে ফেলা ক্যারিকেচার)নিয়ে ঝুলে পড়ার পর শারীরিক-মানসিক ট্রমার রুটিনে এই একদিন আলতো শো-পিস পরানোর নামই কি উদযাপন?প্রথম মহিলা মহাকাশচারী, মহিলা রাষ্ট্রপতি, মহিলা পর্বতারোহী...এসব সাধারণ জ্ঞানের অসাধারণ মেয়েদের কথা তো সবার অল্পবিস্তর জানা অতএব অজানা কয়েকজন অতি সাধারণ মেয়ের কথাই না'হয় এখন বললাম। ... ...
চেতন ভগৎ তাহলে ফিরেই এলেন! সমালোচকের মুখে নুড়ো জ্বেলে কোটি কোটি ভক্তের প্রত্যাশা মেটাতে নিজের নতুন উপন্যাস নিয়ে শ্রীভগৎ স্বয়ং ধরাধামে পুনরাবির্ভূত হয়েছেন। আমরা জানতাম, ভগৎসাহিত্যগণিতের নিয়ম মেনে শ্রীভগতের নতুন বইয়ের নামে কোনও সংখ্যার উপস্থিতি অনিবার্য, কিন্তু এবারে শ্রীভগৎ আমাদের সবার ওপরে টেক্কা দিয়েছেন। তাঁর নতুন নামে সংখ্যা আছে ঠিকই, কিন্তু তা নেহাৎই ভগ্নাংশ: আধ। ভাবতে বসলাম। একুশ শতকের শেক্স্পীয়রের নামে সংখ্যা থাকবে – এটা এতদিনে বুঝে গেছি। কিন্তু পরের বইয়ে কোন্ সংখ্যাটা থাকবে, তা আগে থেকে বলা সম্ভব? হাজার হোক্ আমি স্ট্যাটিস্টিক্স পড়েছি – একটা মান-ইজ্জত আছে – ... ...
এই বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকেদের আব্বাস বিরোধিতার আসল কারণ তার লুঙ্গি ও টুপি হলেও, তারা কখনো সে কথা প্রকাশ্যে লেখেন না। এই যে আব্বাস ও তাঁর মত মেহনতী জনতার পোষাক লুঙ্গি নিয়ে না লেখা, সেই প্রসঙ্গ না তোলা, কথা না বলা, এই স্নবারিই এঁদের সুপ্ত ইসলামোফোবিয়াকে প্রমাণ করে। ... ...
অনেক বই একসাথে পড়ার মূল সুবিধা হল - অনেক বই একসাথে পড়া যায়। আর প্রধান অসুবিধা খুব মন দিয়ে পড়তে হয় - তা না হলে গুলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা। উপরের বইয়ের নামগুলি দেবার একটা কারণ আছে যেটা পরে বলব, কিন্তু আদতে যেটা চাইছি সেটা হল একটা বিভ্রান্তিমূলক বা সূচক পরিবেশের সৃষ্টি করতে। এটা সহজ কাজ নয়, আমি শত চেষ্টাতেও আপাতত পারছিনা কারণ যেদিন পারব সেদিন আমি বিখ্যাত লেখক হবার প্রথম সোপানে পা দিয়ে ফেলব। বিখ্যাত লেখক বা কবি হবার প্রাথমিক শর্তই হল বিভ্রান্তি তৈরী করার ক্ষমতা অর্জন করা। এখন প্রশ্ন হল বিখ্যাত কি জিনিস এবং কারাই বা লেখক আর কারাই বা কবি। হুমায়ুন আহমেদকে নাকি একবার একুশে বই মেলায় একজন ধরেছিল এবং নাছোড়বান্দা হয়ে স্বীকার করিয়েছিল, তিনি কবিতা লাইনে দাগ না কাটতে পেরে গদ্য লাইনে শিফট করে গ্যাছেন! বেশীর ভাগ কবিই নাকি এই লাইন শিফটের ফসল। খুবই সত্যি কথা, শুধু তাই নয় – বড় বড় (বিখ্যাত) গদ্য সাহিত্যিকও এই শিফটের ফসল বলেই আমার মনে হয়। তবে অনেকে আছেন শিফট না করেও কোনদিকেই দাগ কাটতে পারেননা এবং vice versa। ... ...
সমস্যা শুরু হয় এর পরে। সচিবালয়ের ওই কর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনাও যথেষ্ট সুন্দর মেজাজে শুরু হয়েছিল। প্রথামতো আলিঙ্গন করার পর, গরুরা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী গো-রক্ষায় তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা বলেন। হিন্দি বলয়ের প্রায় সর্বত্র গো-হত্যা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গরুদের আধার কার্ড দেবার তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন বহুজাতিকের সঙ্গে কথা চলছে দুধের মতো গোমূত্রও ঠান্ডা পানীয়ের বোতলে ভরে বিক্রি করার, এবং গোমূত্রের উপর জিএসটির সম্পূর্ণ ছাড়ের কথা ভাবা হচ্ছে। বিশুদ্ধ গোমূত্র আহরণের জন্য বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে বিশেষ ক্যাথিটারও। এ পর্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিস্থিতিই বজায় ছিল। সমস্যা শুরু হয়, এইসব সুখবরে গরুরা আনন্দ পাবার পরিবর্তে বিচলিত হয়ে পড়লে। ... ...
দিল্লির সচিবালয় 'অসংসদীয়' শব্দের একটি নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকায় থাকা শব্দগুলিকেই এই লেখায় কেটে দেওয়া হয়েছে। শুধু এই কটি শব্দই তালিকায় আছে, তা অবশ্যই নয়। পূর্ণাঙ্গ বিবরণের জন্য সচিবালয়ের নির্দেশনামাটি দেখে নিন। ... ...
ছোটবেলায় আমরা সাহিত্যিকদের নামের তালিকা বানাতাম। দেখতাম সব বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়তে ভর্তি। মানে ভট্টাচার্য, চক্রবর্তীর সংখ্যাও কম।শিবরাম অবশ্য একাই একশো। কৌলিন্যের এমন দাপট। "ঢোঁড়াই চরিত মানস" টাও ভাদুড়িতে চলে গেল।ঐ একজন বুদ্ধদেব বসু বা বিমল কর বা রমাপদ চৌধুরি পেলে "ঐ তো রে আছে" মার্কা এক্সপ্রেশন। এটি সংগীত শিল্পীদের ক্ষেত্রেও তাই। এ তো গেল মজার কথা।কিন্তু তত মজা নয়। ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি যে সাহিত্য বহন করে আমরা শুধু তাই জেনেছি সিস্টেমের চাপে। আমরা ঢোঁড়াই দের আসল গান শুনিনি।চাপা পড়ে গেছে।শেষ হয়ে গেছে।এথনিক বলে মিউজিয়ামে সাজিয়ে রাখলে আহা বাহা পাওয়া যায়। ক্ষমতা কে ছাড়তে চায়? এখন যে ট্রোলিং হচ্ছে, তা ঐ ক্ষমতা চলে যাবার আশংকায়। ... ...
বাংলার ভাগ্যাকাশে এখন ব্যোমকেশের দুই সত্ত্বাধিকারী, ঈশেন আর সত্যবাহন, ইয়ে মানে দত্তবাবু আর শীলবাবু। দত্তবাবু ল্যাপ শুরু করেছিলেন আগে, অন্যজন সদ্য যোগ দিয়েছেন। ওনার আগের ফিল্মটা দেখে মনে হয়েছিল, বজরা টজরা এনে ট্রিবিউট দিয়ে ফাটিয়ে দিতে চাইলেও, জ্ঞানের বহর প্রথমজনের চেয়ে একটু কম হওয়ায় হয়তো একটু বেশি সহনীয় হবে। কিন্তু এই পর্ব দেখে উপলব্ধি: এটা বাস্তবে দত্ত vs দত্ত। আসলে ট্রিবিউটের মধ্যেই কেলোটা লুকিয়ে ছিল। এতে উনি ট্রিবিউট দিয়েছেন স্বয়ং অঞ্জন দত্তকেই, একটু আদিবাসী নাচে আগন্তুক, রেসকোর্সের বাইরে সীমাবদ্ধ ইত্যাকার কিছু হালকা সত্যজিৎ বাদ দিলে। লোকেশন সেই এক ডুয়ার্স, ভিলেন সেই এক কৌশিক, গ্রেফতারির আগের সেই এক ধাঁচের বক্তৃতা, এবং জ্ঞানের বাটখারা। ফিরে এসে মনে হল ন্যাশনাল এনথেম ও ন্যাশনাল সং দিয়ে মোড়া এই সিনেমাটিতে কী কী চমক লাগলো, তারও লিস্টি করা দরকার। শুরুতে ড্রোন ক্যামেরায় রেল লাইনের বিহঙ্গদৃষ্টি অতি চমৎকার, কিন্তু তারপরেই চমক। রাইটার্সে বসে আছেন স্বয়ং অরিন্দম শীল, টেবিলে লেখা 'মুখ্য সচিব'। এবং তার পর থেকেই সত্যবতী, অজিত, বড় দারোগা সবাই বিন্দাস বলে যাচ্ছে মুখ্য সচিব অমুক, মুখ্য সচিব তসুক। ১৯৪৮এর আগস্টের আগেই 'মুখ্য সচিব' শব্দের এরূপ প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা দেখে তাক লাগার শুরু। আমার সহদ্রষ্টাকে বললাম, ইয়ে তখনও মাউন্টব্যাটেন আছেন, সংবিধান আসতে বহু দেরি তো, তিনি বললেন, চুপ করে দ্যাখ। দেখলাম। এবং এটা হজম করার পর আর কষ্ট হল না যখন দেখলাম সেই মুখ্য সচিবের ঘরের দেওয়ালে অখণ্ড বাংলার ম্যাপ, তিনি নিজেই সান্তালগোলার তদন্তের দায়িত্ব দিতে তো এসেইছেন সরকারের তরফ থেকে, সেই সান্তালগোলার সম্ভাব্য কোন কোন ব্যবসায়ী আসামী হতে পারেন তার লিস্টিও তিনিই পকেটে নিয়ে ঘোরেন, দারোগা নন, এসপি নন, এমনকি সিপিও নন। তা সেই তথাকথিত নগণ্য জায়গার ওসিকে সরাসরি নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব, এবং তার পরেও সেই সচিবের পাঠানো খাস গোয়েন্দার সামনে সরাসরি তাচ্ছিল্য, হুমকি ইত্যাদি দেখাতে সাহস করেন আংরেজ জমানার সেই দারোগা। চুপ করে দেখা ছাড়া উপায় নেই। আমি তো কোন ছার, ব্যোমকেশ-ই চুপ। ... ...
ডঃ পাত্র এর একটা বিহিত বা হেস্তনেস্ত করার দায়িত্ব নিলেন। অবশ্য এতে ওনার একটা অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টও ছিল। সময়সুযোগ থাকলে একদিন তিনিও পুরোদস্তুর গবেষণা করতে পারতেন, শুধু ছাত্র ঠেঙিয়েই চাকরির জীবনটি চলে গেল। সে যাই হোক, উনি অনেক আঁকজোঁক করে কিচ্ছু বের করে উঠতে পারলেন না। এই অবস্থায় উনি একদিন কাকভোরে উঠে লেকের মাঠে গাছপালার ঝোপে বান্ধবগড় থেকে কেনা ক্যামোফ্লাজ জ্যাকেট পরে ঘাপটি মেরে কী হয় দেখার জন্য বসে রইলেন। প্রথম দু দিন কিচ্ছু দেখতে পাওয়া গেল না। সুস্থ শরীর ব্যস্ত করে রাতের ঘুম নষ্ট হল। কিন্তু তাতে ডঃ পাত্র দমলেন না। এক সময় তিনি ডক্টরেট করেছিলেন, তাই অকিঞ্চিৎকর জিনিস নিয়ে খামোখা লড়ে যাবার ক্ষমতা তাঁর পুরনো। ... ...
যাত্রা, চলচ্চিত্র সব ধ্বংস করে দিয়ে আমরা পরীমণির কাছে আশা রাখছি সে ছ্যাঁচোরের মতো দু চার পয়সা রোজগার করে কোনরকমে চেয়ে চিন্তে জীবন কাটিয়ে সতীত্বের পরকাষ্ঠা দেখাবে। সব দায় পরীমণির। যখন তার সামান্য চোখের ইশারায় সে বুভুক্ষু পুরুষকে বাগে নিতে পারে ,তুড়ি মেরে আয় করে নিতে পারে অঢেল অর্থ, বিলাসী জীবন। শরীরের বিনিময়ে যে অর্থ বিত্ত সহজলভ্য, তা গ্রহন না করে নিজেকে সতী সাধ্বী রাখার দায় কেবল পরীমণির। এর সব দোষও হয়তো পরীমণির। ... ...