প্রশ্নটা হল, কিভাবে নিকেশ করবে আমায় ? গলা টিপে শ্বাসরোধের সাবেকি পন্থায়? আমার কুতকুতে চোখগুলো কি তখন বল্লমে গাঁথা শুয়োরের মতো ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে ? মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিস্ফারিত দৃষ্টি প্রাণপণে ধরে রাখতে চাইবে আততায়ীর শেষ ছবি? নাকি মরবো খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো দীর্ঘ যন্ত্রণাময় কদর্য কায়দায়? কাটা পাঁঠার মতো জগঝম্প জুড়ে, শ্বেত পাথরের তেলা মেঝেয় বমি -পায়খানায় একাকার হয়ে ? আর নাকি প্রকাশ্য রাস্তায় পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জের গরম বুলেট ফুঁড়ে দিয়ে যাবে মগজ? কিছু রক্তমাখা ঘিলু ছিটকে গিয়ে লাগবে কি কোন বেনামী ল্যাম্পপোস্টের গায়ে? কে জানে হয়তো দু একটা অশ্লীল স্মৃতিও তখন গড়িয়ে নামলো পোস্টের গা থেকে। আমার পড়ে থাকা নিথর লাশের দিকে চেয়ে রাস্তার লোক কি চমকাবে খুব? খুব ? বোধহয় পুরনো প্রফেসিকে সমর্থন জানিয়ে বলে উঠবে, – এ তো জানাই ছিল! আজ নয়তো কাল এটা হওয়ারই কথা! বেশ হয়েছে শালা! ... ...
চন্দ্রাবতী মায়ের প্রসঙ্গ তুলে খোঁটা দেয়, ‘বাবা তুমি কাপুরুষ’। এ শব্দটা মেয়ে শিখলো কোত্থেকে? মা ছাড়া বড় হওয়া গাঁও-গেরামের মেয়ে, কৈশোর না-পেরোনো বয়সেই অনেকখানি পরিণত। প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা হয় না চন্দ্রাবতীকে, বরং আত্ম-আবিস্কারে মগ্ন হয় অঘোর গায়েন, সত্যি কি কাপুরুষ সে? দোষতো তার নিজের। কেনো নিজের অবস্থা বিবেচনা না করে সে আত্মসমর্পণ করেছিল প্রেম আর মোহের কাছে? তার বান্ধা পালা শুনে সুলেখা পাগল হয়েছিল বলেই কি নিজের অভাবী-আধপেটা জীবনে ওকে জড়ানো কোনো বিবেচনাসম্পন্ন কাজ ছিল? কিন্তু কীই বা করার ছিল? বয়সটা মোহাচ্ছন্নতার, অবাধ্য যৌবনের। কাপুরুষের মতো তখনো সুলেখার বারবার বিয়ে করার তাগিদকে অগ্রাহ্য করেছে সে, কালক্ষেপণ করেছে, ভৎর্সনা করেছে সুলেখাকে, ‘পাগলরে যদি বল নিজের ঘরে আগুন লাগাইয়া দিতে সে কি লাগাইবো?’ সুলেখাকে নিজের দুর্বহ জীবনের সাথে জড়াতে ঠিক বিবেক থেকে সায় পেতো না অঘোর -হয়তো এটা কাপুরুষতা। তবু সুলেখার সুখের কথা ভেবে কাপুরুষই থাকতে চেয়েছে সে, কিন্তু পারলো কই? ভালোবাসার ক্রমাগত আহবানের কাছে কত সময় কাপুরুষ থাকা যায়? ... ...
জলের মধ্যে গোলা নীল রংটা নিজের গালে ঘষছে সুদাম।ঘষতে ঘষতে একটা মুখ মনে পড়ছে। সিনেমার মত। তারপর হঠাৎ নিজের আয়না দেখা মুখটা মনে পড়েছে। শুষ্ক, খড়খড়ে। একটা যন্ত্রণা ঠেলে উঠে আসছে। রংটা জোরেই ঘষে দিচ্ছে ও। হঠাৎ ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে। ওঠারই কথা। তবে গালের ব্যথায় নয়, মনের ব্যথায়। গৌরী যদিও ইচ্ছে করে মারেনি। সুদাম এক বুক কাদার মধ্যে একেবারে পা ডুবিয়ে সিনেমার হিরোদের কায়দায় গৌরীকে কথাটা বলতে চেয়েছিল। "এখুনি আন্ধার নামবে, তুই পাড়ার ওই ম্যাদামারা ছেলেটা না! কথা বলার মুরোদ নেই, এমন গায়ের কাছে এসেছিস কেন? দেখছিস লা কাজ করতিছি ক্ষেতে! যা এখান থেকে!" কথাগুলো বলেই কোদালটা হাতে তুলে নিয়েছিল গৌরী। কাজ করার জন্যে। সুদাম এত কাছে এসে পড়েছিল যে কোদালের বাঁটের আঘাত লাগতে একটুও দেরী হয়নি। ... ...
অরূপ প্রথমে ভেবেছিল কম্পিউটারে বেশিক্ষণ কাজ করার জন্য চোখে ব্যথা হচ্ছে। সবাই যেমন বলে, টানা কিছুক্ষণ কাজ করার পর একটু বিশ্রাম, সবুজ গাছপালার দিকে তাকিয়ে থাকা – সে রকম করতে শুরু করেছিল। তারপর একদিন দোল-পূর্ণিমার রাতে ছাদে বসে নীপার সঙ্গে গলা মিলিয়েছিল – ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান। হঠাৎ আকাশে তাকিয়ে সে দেখতে পেয়েছিল চাঁদের চারপাশে রামধনুর সাত রং নিয়ে একটা বৃত্ত। সে কথা শুনে নীপা খুব অবাক হয়ে বলেছিল – কই, না তো। তারপর একদিন বাসের হেডলাইটের চারপাশে সে রকম রঙিন বৃত্ত দেখল। কিন্তু অরূপ খুব অবাক হয় যে, এই রামধনু নীপা দেখতে পায় না। ... ...
- মা যখন আমাকে মনে করে কাঁদেন, সেই নি:শব্দ তরঙ্গরাশি থৈ থৈ করে খুঁজে ফিরে আমাকে-সুধীজন পাঠাগার, শ্রমকল্যাণ, সায়াম প্লাজা, গলাচিপা, কলেজ রোড।তারপর চারারগোপ পার হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুমুদিনীর পাড় ঘেসে শীতলক্ষ্যা নদীর খালে। তখন আমি যদি শীতলক্ষ্যার জলে না থাকি, তবে যে মায়ের বুকের হাহাকার সারা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরে আমায়।শহরের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। গাছের পাতারা বিষন্ন হয়ে নড়তে ভুলে যায়। রাস্তা গুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে যায়, কে কোথায়! সমস্ত হাইরাইজ ভবন, ভবনের দরজা-জানালা, জানালার কাঁচ ও পর্দা, পর্দার রং ও সেলাই সব মলিন হয়ে থরথর কাঁপতে থাকে ভীষণ।লোকে ভাবে ভূমিকম্প। আমি জানি, মায়ের বুক যখন কান্নায় ভেঙে ভেঙে যায়, তখন এমন কম্পন উঠে শহর জুড়ে। শীতলক্ষ্যার তলে আমাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না। আর এই পথ এখন মায়ের কান্নার খুব চেনা পথ। কতো কান্না যে জমে আছে নদীর পলিতে! দেখতে পাচ্ছোনোতো! দেখবে কি করে! লোভী ব্যবসায়ীরাতো নদীর জল কেমিক্যাল আবর্জনায় নোংরা-কালো করে আড়াল করে ফেলেছে সব।এখন নদীর তল ডুবুরিরাও দেখতে পাবেনা। ... ...
আজকের পর্বটা ভালোই জমে উঠেছে। বিজ্ঞাপনসহ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের শো। প্রথম দুই পর্ব এরই মধ্যে শেষ। সুবহান আর লতা পাল্লা দিয়ে হেসেছে। সুবহান এমনিতেই খুব হাসতে পারে। এটা ওদের পারিবারিক রোগ। সুবহানের বাবা মাটিকাটার কাজ করত। অভাব অনটনের মধ্যেও লোকটা এত হাসত যে পাগলের মতো দেখাত। যেদিন ওর মা ইটভাটায় জ্বালানির সঙ্গে জ্বলেপুড়ে কয়লা হলো, সেদিন বিকালেও হেসেছে। তাও খুব সামান্য কারণে, একটা ছাগলের ছা লাফাতে গিয়ে দড়িতে বেঁধে উপুড় হয়ে পড়ে গেছে, তাতেই সে কী হাসি! শেষ পর্যন্ত পাগল বলে সকলে এক প্রকার মেনে নেয়। সুবহানের বাবারও মানতে অসুবিধা হয়নি। আশেপাশে কেউ পাগল বলে ডাকলেই দাঁত কেলিয়ে উত্তর নিত। আর পাগল বলেই কিনা দুজনের কাজ করে অর্ধেক মজুরি পেত। সেই থেকে সুবহানের ধারণা হাসাটা ওদের অসুখ। মেয়েকেও সেই অসুখে পেয়েছে দেখে সুবহানের কষ্ট হয়। ... ...
হঠাৎ শুনলাম আমাকে কেউ ডাকছে – তার গলার আওয়াজ খুবই মিষ্টি৷ “কে কথা বলছেরে বাবা? আমি ভয পেয়ে ওই ঘর থেকে দৌড়ে চলে গেলাম৷ কেউ যেন আমাকে তাও ডাকছিল মিষ্টি আওয়াজে৷ “ভয় পেও না আমি তোমায় সাহায্য করতে এসেছি...। ... ...
মণিকা চোখ খুলল। কোন এক কারণে তার ঘুম ভেঙে গেছে, ঘড়িতে সময় দেখলো সকাল সাড়ে সাতটা। মণিকা জানে তার একবার ঘুম ভেঙে গেলে সে ঘুম আর আসবে না। ... ...
নেতাজী খাচ্ছেন লুচি আলুর দম, জলখাবার। কিশোরী ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে ঘেমে যাচ্ছে, লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে -- না জানি কী অখাদ্য হল আজ এই দেবতার ভোগ! ... ...
সমুদ্রের দিক থেকে প্রবল হাওয়া উড়ে আসছিল। ঋষির মাথায় অবিন্যস্ত চুলগুলো এলোমেলো উড়ছিল সেই হাওয়ায়। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে চারপাশে একবার ভাল মতো চোখ বুলিয়ে নিয়ে ও বলল ‘এক্সেলেন্ট।’ মাঝারি মাপের একটা জমির ওপর হোমস্টে-টা। তিনদিকে ছোট ছোট ঘর। মাঝখানে একটুকরো ঘাসে ঢাকা লনমতো। বসে বিশ্রাম নেবার জন্য বা সময় কাটানোর জন্য গোল খড়ের চালায় ছাওয়া জায়গা। হোমস্টের পেছনে বড় বড় কেওড়া গাছের জঙ্গল। গড়ান গাছও আছে। এই হোম স্টে থেকে বিশ/পঁচিশ মিটারের মধ্যেই সমুদ্র। সবসময়ই সামুদ্রিক হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এই হোমস্টে-এর গা ছুঁয়ে। এমন হাওয়ায় অবিন্যস্ত এলোমেলো হয়ে যেতে খুব ভাল লাগে। চতুর্দিকে সবুজের পাহারাও খুব সুন্দর। ... ...
শোভাবাজার রাজবাড়ির পিছনের গেটের কাছে ইন্দুর চেহারা, অবয়ব একটু একটু করে পরিস্ফুট হচ্ছিল শৌভিকের। যেন কিছুটা উৎকণ্ঠা, কিছুটা সতর্কতা নিয়ে জোরকদমে হাঁটছে সে। কাঁধে একটা মাঝারি সাইজের ব্যাগ। বোঝাই যাচ্ছে সে পিছুটান ফেলে রেখে বেরিয়ে আসতে চেয়েছে আজ। উল্টোদিকে শৌভিকের সঙ্গে কিন্তু কোনও ব্যাগ নেই। এমনকী পকেটে পার্সও নেই। আসলে শৌভিকের এমনিতেও কোনও পিছুটান নেই। মাঝেমধ্যেই সে রাতেরবেলা পায়ে হেঁটে বেরিয়ে পড়ে কলকাতার রাস্তায়, রাতের জীবন দেখবে বলে। একাধিকবার ফুটপাতে শুয়ে থেকেছে সারারাত। ভিখারি-চোর-মাতাল-কাগজকুড়ুনিদের সঙ্গে। এরকমই এক রাতে, তার মনে আছে, এক স্বল্পবয়সি ভিখারিনি, যার মরদ একসপ্তাহ অন্য মেয়ের ডেরায় কাটিয়ে ফিরে এসেছে, লোকটাকে চ্যালাকাঠ হাতে শাসিয়েছিল—“আর কোনওখানে নয়। তোর ঠিকি ওইখানটায় মারব। মর্দানি জন্মের মতো ঘুচে যাবে, বাঞ্চোত”। ... ...
পরদিন সকালে বাইসনের পাল এড়িয়ে ঘাসের ওপর হাঁটি, কয়েক মাইল যাবার পরে একটা বড় হ্রদ পড়ল, তার পাড় ধরে দক্ষিণদিকে আরো মাইল দশেক হাঁটলাম। অবশেষে একটা বড় খামার দেখা গেল। অন্তত তিন শ একরের খামার, সয়াবিন চাষ হচ্ছে। চাষ-জমির শেষে কিছু সারি দিয়ে দেবদারু গাছ। সেটা পার হয়ে খামার বাড়ির শস্য রাখার উঁচু সাইলো ঘর, গোলাঘর, শস্য নিয়ে কাজ করার কয়েকটা ট্র্যাক্টর ও কম্বাইন। পাশে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে যখন আমরা দাঁড়িয়ে তখন সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে, আমাদের লম্বা ছায়া পড়ে বাড়ির দরজায়। আমরা ইতস্তত করি, এখানে জীবিত কি কেউ আছে? পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এই বাড়ির ভেতর রয়েছে হয়ত মৃতদেহ। যে রোগে তারা মরেছে সেই রোগ কি ছোঁয়াচে নয়? আমরা একটা কাপড় মুখে বেঁধে নিই। হঠাৎ দুটো কুকুর দৌড়ে আসে, শেপার্ড, কিন্তু তারা ঘেউ ঘেউ করে না, দাঁত খিঁচায় না, লেজ নাড়ায়, এমন যেন এই খামার বাড়ির প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। ... ...
নিনি দৌড়াচ্ছে, নিনি দৌড়াচ্ছে, খুব দৌড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে। সামনেই স্পোর্ট্স। ওর খুব ইচ্ছে রিলে রেসে নাম দেয়, খুব একটা ভাল দৌড়াতে পারে না বলে বাকীরা ওকে রাখতে চাইছে না। তা দিদিমনি বলেছেন ও যদি সবিতা আর রিমার সাথে সমানে সমানে দৌড়াতে পারে তবেই ওকে নাম দিতে দেবেন। ... ...
তিস্তা আর মেঘনা ছোটবেলা থেকেই ভাল বন্ধু । তিস্তা যেমন ভালোমানুষ মেঘনা তেমনই দুষ্টু। সবসময় তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে। কোনো নিয়ম দেখলেই তার সেটা ভাঙার ইচ্ছে করে। তিস্তা আর মেঘনা অনেক ঝগড়া করে কিন্তু তারপর তাদের ঝগড়া মিটিয়েও নেয়। কিন্তু সেদিনের ঘটনার পর তাদের আর কথা হয়নি। এর কারণ হল লকডাউন । কোভিড ১৯ এর জন্য তাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ... ...
যে স্রোতস্বিনী তাদের উন্নতির জন্য দিবা নিশি অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই স্রোতস্বিনী কে তারা কেবলি অজ্ঞাত কুলশীল ভেবে ব্রাত্য করে। তারা স্রোতস্বিনী কে কোন দিন তার কাজের দক্ষতা দিয়ে বিচার করে নি। বরং সকলেই তার দিকে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে জিজ্ঞেস করে তার জাতের পরিচয়। ... ...
বিদুষীর মা সকালের জলখাবার লুচি, আলুর দম নিয়ে এলো। বিদুষী লুচির নরম পাতলা অংশটা টুনটুনিকে খেতে দিলো। টুনটুনি তো খুব খুশি লুচিটা পেয়ে। কিন্তু একটা মুশকিল হল লুচির ওই অংশটা টুনটুনির থেকে বেজায় বড়ো। তাই সে লুচিটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে আরম্ভ করল। কিভাবে খাবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। অবশেষে বিদুষী তাকে সাহায্য করল লুচিটা খেতে। বিদুষী লুচির পাতলা অংশ ছোট ছোট টুকরো করে দিলো টুনটুনিকে। টুনটুনি মহাখুশিতে অর্ধেকটা খেয়ে নিল। বিদুষীরও খাওয়া শেষ হল। ... ...
সুশান্তর লাইন ছিল এগারো জনের পরে। বারো নম্বর। ও সবজি শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা মাঝে মধ্যে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছিলো আর সবজিওয়ালার সাথে রিপিট করছিলো “আপনার পঁচাশি আর এককেজি কাঁচা আম... একশো পাঁচ”। আর শেষে একটা করে “..হুঁ” মনে হচ্ছিলো পবিত্র মন্ত্রপাঠ চলছে। ‘হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম্ | হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে।‘ ওদিকে ইলেকট্রনিক ওয়েট মেশিনের সামনে ‘পুরোহিত’, এদিকে সুশান্ত। হাতে শুধু ছেঁড়া ফুলের বদলে ছেঁড়া ব্যাগ। ছুঁড়ে না দ্যায়। ... ...
ছোট্ট বেলা থেকে বাচ্চাগুলোকে ভূগোলের নামে পড়ানো হয় জেলার নাম। আঁকানো হয় লাল দগদগে আন্তর্জাতিক সীমারেখা। যে মেয়ে নিজের উঠোনের থেকে লাফ মেরে প্রাচীর ডিঙিয়ে পাশের বাড়ির পেয়ারা গাছে দোল খায়, সে কী করে খুঁজে পাবে দাগ, প্লট! অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশর খোপ খোপ অংশগুলো তো তার কাছে কিতকিত কিম্বা এক্কাদোক্কা খেলার কোর্ট। তবুও সে পড়ায় স্বাধীনতা উত্তর ভাষার ভিত্তিতে রাজ্যের বন্টন, তবুও তাকে চেনাতে হয় মাটির বুক চিরে চিরে খন্ড খন্ড করে তৈরি হওয়া দেশ। কারণ সে তো একজন সামান্য দিদিমণি। ... ...
শান্তিনিকতেনে পৌছেই সবাই আগে বিশ্বভারতী-টা ঘুরে নিল। পরেরদিন সকালে ওরা বাকি জায়গাগুলো ঘুরে নিল । শান্তিনিকেতনকে বিদায় জানিয়ে কলকাতার দিকে ফেরার পথে সন্ধেবেলায় শুরু হল মারাত্মক দুর্যোগ। গাড়ির কাঁচ ঝাপসা হয়ে আসছিলো , সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, তাই গাড়িটাকে রাস্তার এক ধারে দাঁড় করানো হল। বড়রা ঠিক করলো যে এই দুর্যোগ- গাড়ি চালানো ঠিক হবে না। তাই তারা কাছাকাছির মধ্যে কোনো হোটেল খুঁজতে লাগলো। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজির পর ও তারা কোন হোটেল পেলনা। ইতিমধ্যে ঝড় ও বৃষ্টি বাড়তে থাকলো। তবে অদিতি লক্ষ্য করল যে সামনে ছোট্ট হোটেল তার পাশে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে ছিলেন । ... ...
এই কথাটি বলেছিলেন আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন গুরু। যিনি তার ধ্যানে পেয়েছিলেন কিছু জিনিস, যা তার মতে সত্যের কাছাকাছি। ওঃ ঈশ্বর! এসব কথা বাইরে প্রকাশ করার রীতি নেই। কিন্তু আমাদের ভেতরটাকে টুকরে খাচ্ছে অন্ধকারের বিষপোকা। যদিও বাইরে থেকে হয়ত বুঝা যাচ্ছে না তথাপি আমাদের ভেতর ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, আমাদের অন্তর নিরন্তর অনুভব করছে এক ধরনের ভয়াবহ অস্বস্থি। তাই আমরা বলে ফেলছি যে, আমাদের সেই গুরু হঠাৎ একদিন তার ধ্যানে পেয়েছিলেন মানুষের আত্মার কোটা শেষ হয়ে গেছে। এখন আত্মাহীন মানুষেরা জন্ম নিবে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা তার কথা শুনেছিলেন এবং তারা স্বভাবতই বিশ্বাস করেন নি। এমন উদ্ভট কথা কখনো কী হয় আর? তারা একে হেসে উড়িয়ে দেন, অতঃপর তারা রাগে ফেটে পড়েন এবং সেই মহান গুরুকে সবাই মিলে ধরে নিয়ে ফেলে দেন এক অন্ধকার কুয়ায়। আমাদের ধারনা তিনি সেই অন্ধকারে এখনো বসে আছেন, ধ্যানে আছেন। ... ...