নটেন হাঁ করে বড়ো ছেলেকে দেখতে থাকে, দেখতে থাকে নির্নিমেষ। সে একবার ভাবল বাকি ভাত ক'টি কি সত্যেনকে খাইবে দেবে? ফের ভাবে থাক, ভাতটা ঢাকা দিয়ে এখন ছেলেকে খাটে শুইয়ে দেবে? সত্যেন কি অসুস্থ? নাকি ক্ষুধায় মুমূর্ষুপ্রায়? সত্যেনের ওয়াক ওয়াক স্তিমিত হয়েছে। সাপের নিশ্বাসের মতো ফ্যাঁসফেসে শব্দ বেরোচ্ছে এখন মুখ দিয়ে। নটেন কুপি তুলে ধরে সত্যেনের মুখের কাছে ধরতে গেলে তেল ফুরিয়ে যাওয়া কুপির শিখার টুপ করে নিভে-যাওয়া নিপূণ অন্ধকার। ঘরের ভেতরের কুপিটির আলোয় মাটির দেয়ালে আবছা দেখা যাচ্ছে সত্যেনের মা আরতি মরার পর কাগজের ওপর নটেনের নেওয়া পদতলের আলতার জোড়াছাপের ফটো। আধো আলোয় অন্ধকারে দূর থেকে প্রাচীন মথের মতো দেওয়ালে সে পদচিহ্ন। ... ...
সাত্তার সাহেব সামান্য শব্দহীন হাসি হাসলেন। আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘পায়রা সম্পর্কিত তোমাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা কি?”আমরা হঠাৎ এই প্রশ্নে বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। আমরা কোন উত্তর দিতে পারলাম না। এবং এক পর্যায়ে বললাম,” ক্ষমা করবেন। আমাদের পায়রা সম্পর্কিত নিজস্ব কোন চিন্তাভাবনা নেই।” সাত্তার সাহেব তার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “পায়রা হচ্ছে পৃথিবীর আত্মার প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি পায়রা আসলে পৃথিবীর আত্মার এক একটি অংশ। মানুষের জীবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে পায়রাদের জীবন। প্রতিটি মানুষের আত্মা আসলে এক একটি পায়রা অথবা কোন এক পায়রার প্রতিচ্ছবি যা পৃথিবীতে বসবাসরত এবং আকাশে উড্ডয়নরত অনেক অনেক পায়রার প্রভাবে প্রভাবান্বিত। এইসব পায়রাযুক্ত জীবন হয়ত যাপনকারী ব্যক্তি অনুভব করতে পারে না কিন্তু কারো অনুভব করা কিংবা না করার উপরে পৃথিবীর অমোঘ সত্যগুলোর কিছু আসে যায় না।” ... ...
পাখিদা-কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই নম্বর রামমোহন কলোনির একমাত্র ছাতিম গাছ জানায় পাশের জামগাছটিকে। বাতাসে নড়ে ওঠে গাছেদের কানের পাতা। ডালে আলোড়ন, ফিসফিস। পাড়ার গলি-রাস্তার মাঝ বরাবর শুয়ে থাকা কালিচরণের অভ্যেস। সাইকেল, বাইকের হর্নে তার কিছুমাত্র আসে যায় না। তাকে সম্ভ্রমে পাশ কাটিয়ে বাকিদের যেতে হয়। লম্বাটে সরুপানা মুখটায় চোখদুটো আধবোজা। ‘মাধবীবিতান’ বাড়ির ঘোষালদাদু রেডিয়োয় খেয়াল শোনার সময় যে ভাবে কেদারায় শুয়ে চোখ বুজে আরামে তন্দ্রা আনে। কালিচরণের লটপটে কান সজাগ। খবরটা শুনেই গা ঝাড়া দিয়ে ‘মনমঞ্জরী’ বাড়ির প্রশস্ত পাঁচিলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ভুক করে একটা শব্দে পঞ্চাননকে ডাকে, এ পঞ্চা! ... ...
তিনি জানালেন, আমাদের বাসায় যে চুরি হইছে, আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন। আমার বড় ভাই হাসানুর রহমান সাহেবের স্ত্রী যেইভাবে ঘটনাটি বর্ননা করছেন, আপনারা দেখেছেন উনি কিরকম মিথ্যাবাদী। উনি বলতে চাইছেন আমার ছোট ভাই মিজানুর রহমান কোনভাবে এই চুরির সাথে দায়ী। কিন্তু এইটি পুরা মিথ্যা কথা। আমার ভাই মিজানুর রহমান পাঁচ অক্ত নামাযী মানুষ। তিনি বিড়ি সিগারেট কিছুই খান না। আমরা যখন ছোট আছিলাম, তখন ঝড়ের দিনে আমগাছের নিচে আম, জামগাছের নিচে জাম পড়ে থাকত, অনেক পড়ে থাকত। আমার ভাই মিজানুর রহমান মিজান কোনদিনই ঐসব আম জাম হাতে নেন নাই। তিনি কীভাবে চুরি করবেন? তাও নিজের ঘরে তিনি কেনোই বা চুরি করতে যাবেন? আপনারা কস্মিনকালে শুনেছেন কেউ নিজের ঘরে চুরি করে? ... ...
প্রায় এক সপ্তাহ সেই ফোনের অপেক্ষা করেছিল শতদ্রু। আসে নি। আর এই এক সপ্তাহে ধীরে ধীরে ওই অজানা অবয়বটা আকৃতি নিয়েছিল ওর মাথায়। সেই অবয়বটার দেহ সুগঠিত ও পিচ্ছিল, দুটো বাড়ানো সরু হাতের শেষে আঁকশির মত দাঁড়া, ঘন ভুরুর নীচে দীঘল চোখে মায়া ও মোহ, আর শ্রীলেখা মিত্রর মত ভারী ঠোঁঠের তলায় তীক্ষ্ণ মাদকভরা একটা লুকোনো হুল। শতদ্রু এরপর আর দেরি করে নি। বহুদিন ধরে লুকিয়ে রাখা সেই বিছের ছবিগুলো এয়ারমেলে পাঠিয়ে দিয়েছিল কলকাতায় রাজীব ঘোষের অফিসের ঠিকানায়। এক ঝটকায় বিছেটার সমস্ত চিহ্ন মুছে দিয়েছিল নিজের জীবন থেকে। তখন কে জানত, আবার ন বছর বাদে এভাবে বিছেটা ওর সামনে এসে দাঁড়াবে? এই রকম করুণ, থ্যাঁৎলানো, মৃতপ্রায় অবস্থায়? ... ...
তার স্ত্রী তাকে ফিরে আসতে না করেছিল, অনেক অনুনয় করেছিল, কিন্তু সে শোনেনি। বিমানবন্দরে নামামাত্রই তাকে আটক করা হয়েছিল। নিয়ে আসা হয়েছিল রাজধানী থেকে বহু দূরে এই বন্দিশিবিরে। সে জানত এরকমই হবে। সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হতো অন্য একটি ঘরে, পার হতে হতো একটি করিডর, এক পাশে দেয়াল, অন্য পাশে পর পর আটটি কামরা, এর মধ্যে একটি ছিল তার। কিন্তু সেটা সে বুঝতে পারত না, কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকত চোখ। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগলে বুঝতে পারত বাড়িটি থেকে সে বের হয়েছে। এর পরে ত্রিশটি পদক্ষেপ, অন্য একটি বাড়িতে ঢোকা। সেখানে একটি ঘরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে চোখের বাধন সরিয়ে নেওয়া হতো। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর আসত কমিসার। প্রথম দিন সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমি কে আপনি জানেন?’ কমিসার বলেছিল, ‘আমি জানি আপনি জনগণের শত্রু, এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।’ বেশি জানা কমিসারের জন্য ভালো নয়। ... ...
মাঠে মাঠে সরষের ফুল এসেচে। উঁচু,নিচু টিলা জমি। সব ইখন হলুদ। ইখন তো ফুলেরই পরব। সরু লিকলিকে আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে মেলা দিখতে যাচ্ছে বুড়ো,বুড়ি,ছেলে-ছুকরা। কেউ কেউ লাল মোরাম রাস্তা ধরে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটচে। বনের পাশেই ডাঙা টিলা মাঠ,উখানেই মেলা বসেছে। মনোহারি জিনিসের দুকান,বাচ্চাদের বাঁশি,ডুগডুগি খেলনা। কত রকমের খাবার দাবার,তেলে ভাঁজা,ঝিলাপি। কুথাও বা গাছের তলায় মাটির হাঁড়ি-কুড়ি বিচছে। এক জায়গায় সাইকেল,পিক-আপ ভ্যান দাঁড় করানো সারি সারি। ইকটো সাঁওতাল বুড়হা ঘুরে ঘুরে আড়বাঁশি বিচছে। লিজেই সুর তুলচে মন গেলে। লাল ধুলো উড়ছে আকাশে। সেই ধুলো মেখেই মেয়ে মরদ হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। আশপাশের সব গিরাম থিকেই ভিড় জমিয়েছে। শুধু কি সাঁওতাল? বাবুরাও মজা লুটতে আইচে। ... ...
বাদশা আকবর ফুফুর হাত দু’টো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন, “গল্প শুনতে এসেছি ফুফু হজরত।” ফুফু এবারে একটু দুষ্টু মিষ্টি হেসে বলে ওঠেন, “কেন রে? দরবার খানকে ছুটি দিয়েছিস নাকি? দরবার খান ছেড়ে শেষে আমাকে নিয়ে পড়লি কেন?” জালালুদ্দিন আকবর বললেন, “সে আলাদা আর আপনি আলাদা। সে আমাকে কোথায় কোথায় নিয়ে যায় আমি তার হদিশ রাখতে পারি না। উড়িয়ে নেয়, ভাসিয়ে নেয়। একরাশ রঙে সাঁতার কাটি। কখনো রক্তে টগবগে তুফান ছুটিয়ে দেয়। আমাকে খেপিয়ে দেয়, মাতিয়ে দেয়। কিন্তু কখনো মন চায় গাছের ছায়ায় বসতে, শান্ত হতে চায়। জিরোতে চায়, ঘরে ফিরতে চায়, পিদিমের আলোয় বসে থাকতে চায়। আপনি আমার সেই জিরেন, সেই ছায়া, ফুফু হজরত। তা ছাড়া দরবার তো বানিয়ে বানিয়ে গল্প শোনায় শুধু। আমাদের ঘরের কথা, বাবার কথা, দাদুর কথা – এসব আপনি ছাড়া আমাকে আর কে শোনাবে ফুফু হজরত?” ... ...
এক ছিল শান্ত , নিরিবিলি পাড়া। সেই পাড়াতে একটা বাড়িতে থাকতাে একটি পরিবার। পরিবারে ছিল দাদু , দিদা, বাবা, মা আর দুই বিচ্ছু ছেলে মেয়ে – টগর আর রবি। বিছুদুটোর খেলার সাথী ছিল একটা কুকুর টম আর একটা বেড়াল মিনি। ওরা সারাদিন টম আর মিনির সাথে খেলে বেড়াত। একদিন ওরা ঠিক করল টম আর মিনিকে ঘােরাতে নিয়ে যাবে। বড়রা বারবার ওদের মানা করল। দাদু বলল, “তােরা ওদের সামলাতে পারবি না।” মা বলল , “রাস্তার কুকুরেরা ওদের তাড়া করবে।” কিন্তু ওরা শুনলে তাে! ... ...
দেশের রাজার ভারী অসুখ করেছে। মুখে হাসি নেই, চোখের তলায় কালি, মাঝেমাঝেই কাতরে কাতরে ওঠে আর বলে, ‘ও হো হো, আমি আর বাঁচব না।’ আমেরিকা থেকে সাহেব ডাক্তার এল। টিপেটুপে দেখে বলল, ‘মহারাজ, বেদনাটা চিনচিন না ঝনঝন, উপর থেকে নীচে, না পাশ থেকে মাঝে?’ রাজা রেগে গিয়ে বলল, ‘সবই আমি বলে দিলে তোমাকে হাওয়াই জাহাজের টিকিট কেটে আনা হল কেন হে?’ ... ...
সি-বিচে জলের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে, সর্ষে দানার মত থেকে শুরু করে, ছোট মটর-কড়াই এর মত আকারের বালির গোল গোল ঢেলা প্রচুর পড়ে থাকতে দেখলাম; প্রথমে এগুলি কি তা না বুঝলেও, পরে আবিষ্কার করেছিলাম যে লাল কাঁকড়ারা তাদের গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করার জন্য দাঁড়া দিয়ে বালির ঢেলা তৈরি করে – যেগুলি বাড়ির উপর ছড়িয়ে রেখেছে। এদের বাসার গর্তগুলি বেশ গভীর ছিল। উপর থেকে গর্তের ভিতর বসে থাকা কাঁকড়াকে দেখতে পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সমুদ্রের জলের ধারে এরা এমন দল বেঁধে বসেছিল, যে একটু দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন জলের ধারে বালির উপর কেউ লাল চাদর পেতে রেখেছে। সমুদ্রের জলের ঢেউ কখনও অল্প, আবার কখনও বালির অনেকটা উঁচু পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। লাল কাঁকড়ারাও দল বেঁধে সেই ঢেউয়ের তালে উপরে নিচে ওঠানামা করছিল। দূর থেকে মনে হচ্ছিল যেন লাল চাদরটা জলের দামে একবার নিচে নেমে যাচ্ছে ও আবার ঢেউয়ের ঠেলায় উপরে উঠে যাচ্ছে। ... ...
বৃদ্ধা এক গাল হেসে, এক অদ্ভুত অকুন্ঠ এবং তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন, আমার তখন ২ বছর বয়েস যখন আমার বাবা ওকে নিয়ে আসে এই বাড়িতে। আমি ওকে কোনোদিন পছন্দ করতাম না। ও আসার পর থেকেই বাড়িতে নানা অশান্তি শুরু হয়। ওর যখন ৬ বছর বয়েস তখন থেকেই ওকে আমার বাবা প্রায়ই ওপরের একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে সন্ধ্যে বেলা দরজা বন্ধ করে দিত। ও চিৎকার করলে ওর মুখ বেঁধে দিত। আমিও তখন ছোট। তেমন কিছু বুঝতাম না। কিন্তু ওর চিৎকার করলে আমার ভালো লাগতো। আমার যখন ৯ বছর বয়েস তখন আমার মা মারা যায়। বাবা আবার বিয়ে করে। সেই বছরই। আর সেই বছরই, ওর তখন নয় কি দশ হবে, ও আমাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।" একটা অদ্ভুত নিষ্ঠুর হাসির রেখা ফুটে ওঠে বৃদ্ধার মুখে, চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে। ... ...
করুণাদের বাড়ির দুদিক জুড়ে পুকুর আর সামনে বিশ্বাসদের আদিম উদোম বাড়ি। বাড়িটার জায়গায় জায়গায় পলেস্তেরা খসে গেছে। সেই বাড়ির ভেতর থেকে কখনো ভেসে আসে শরিকি খেউর, কখনো টেলিভিশনের সস্তা চটুল গান। এই বিশ্বাস বাড়ির চৌহদ্দিটুকুকেও কত্তারা ছাড়েনি। খুপরি ইটের ঘর বানিয়ে ভাড়া বসিয়েছে। ননা, মনি, সতুদের মত দিন আনা দিন খাওয়া লোকেরা ভাড়া নিয়েছে সেসব ঘর। ননার মা রাতদিনের কাজ করে, মনির বাপটা মিলে কাজ করত, এখন মিল বন্ধ। এখন কেবল নিয়ম করে মনির মাকে পেটায়। সতুর বাপ মুদির দোকানে মাল মাপে, ওরাই এখনো একটু ভালো আছে, গেরস্ত মতো। ... ...
দু’কামরার ছ’শো তিরিশ ফুট ফ্ল্যাটে ততোধিক ছোটো ব্যালকনিটায় বসানো টব, ঝোলানো টবে নানান ফুল, পাতাবাহার গাছে এমন ভাবে ভরিয়ে রেখেছে যে দূর থেকে দেখলে যে কেউ ব্যালকনি না ভেবে ছোট্ট একটা বাগান বলেই মনে করবে। তাতানের ছ’বছর বয়েস পর্যন্ত সোনারপুরের একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো ওরা। ছোটোবেলায় খাওয়া নিয়ে খুব ঝকমারি ছিল। ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবেরও ছিল তাতান। হঠাৎ তখন পাঞ্চালী আবিষ্কার করে গাছ-গাছালির কাছে নিয়ে গেলে ছেলে একদম চুপ করে থাকে। বড়ো বড়ো নরুনচেরা চোখদুটোয় গাছপালাদের অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। গাছ দেখতে দেখতে মুখের খাবার থুঃ করে ফেলে না দিয়ে বিনা বাধায় খেয়ে নিত। তাতানের পাঁচ বছর বয়েসে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। সে বছর সাংঘাতিক এক কালবৈশাখীর ঝড়ে শোভনদের সেই ভাড়াবাড়ির ছোট্টো বাগানটায় বেশ ক’টি গাছ উপড়ে ভেঙে পড়ে। ... ...
ঝুমুর এক হাত দিয়ে ডালটা ধরে, নিজেকে টেনে তুলল গাছের উপরে। ওর মনে পড়ে গেল, যে ঠিক এক মাস আগে কি হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটাতে, এই গাছটার নিচে। ... ...
একটু বেলা পড়ার দিকে পদ্মপাতায় খাবার সময় ও জোরে জোরে নাক টানত, আর বলত, আঃ! কী সুন্দর গন্ধ গো বাবা! যেন ভোজ খাচ্ছি। অথচ গাছ কীই বা রাঁধতো তার পাতায়? আওতার গাছ, যতটুকু রোদ-জল রুক্ষ মাটি থেকে টেনে নিতে পারে, তা বইতো নয়? সেই তো শাক ডাঁটা, বিড়ির ডাল। বড্ড জোর চুনোমাছের চটচটে করে ঝাল। কোথাও জল ছিঁচে, নাহলে জাল টেনে ধরা। বিক্কিরি করার পর বাকিটা রান্না। বড্ড ভালো রান্না করতো। পদ্মপাতায় খেলে মনে হবেই ভোজবাড়িতে খাচ্ছো। ও আঙুল চেটে চেটে খেতো। পাত আঙুলের ডগায় পরিষ্কার হয়ে যেত। ওর খাওয়া দেখে ওরা দুজনে কী খুশিই না হতো! হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকত ওর দিকে। তারপর তিনজনে একসঙ্গে হেসে উঠত। বড় সুন্দর ছিলো সেসব দিন। ... ...
একটা ঢিল ছোড়া যাক। ঢিলটা কাক-ওড়া সরলরেখা ধরে যেতে থাক। যদিও কাকেরা সরলরেখায় ওড়ে, বিষয়টা এমন, মানে, প্রামাণ্য নয়। বিষয়টা কাক নয় ঢিল, ঢিলটা মহাজাগতিক দ্রুতগতিতে সাঁই সাঁই ধাবমান, সরলরেখা কিম্বা প্যারাবোলায়। সরলরেখা, প্যারাবোলা বা নেহায়েৎ ছাপোষা বক্ররেখা ধরে যেতে যেতে ঢিল টাল খেতে বা লড়খড়াতে পারে, নাও পারে। বিষয়টা সেটা নয়। মানে, ঢিলটা কি আদৌ আছে? থাকলেও সেটা কি দৌড়োচ্ছে? আরো মোদ্দা কথা যেটা, সেটা কি ছোড়া হয়েছে? এ সব প্রশ্নের মীমাংসা ধীরে ধীরে হবে, কিম্বা আদৌ, কখনোই হবে না। ... ...
বেগুনের ভরের চেয়েও, বেগুনের জিন এর এই গুরুত্ব কিন্তু এর আগে বোঝা সম্ভব হয় নি। আসলে ভেবে দেখতে গেলে, জিএম বেগুনের জিনে এত বেশি রকমের তারতম্য, যে এগুলি বেগুনের উপসর্গ মাত্র। প্রকৃত প্রস্তাবে, এটি একটি সম্পূর্ণ নূতন প্রজাতির সিন্থেটিক সব্জি। এই তো কদিন আগেই বিদেশমন্ত্রী জুবেদা খাতুন রাষ্ট্রসংঘের বক্তৃতায় বললেন যে অর্গ্যানিক বেগুন চাষ বাংলাদেশের কৃষি স্বাধীনতা এবং সামাজিক পছন্দ (সোসাল চয়েস) এর দৃঢ় প্রতীক। কৃত্রিম উপায়ে প্রস্তুত জিএম বেগুন যে শুধু মুনাফালোভী চক্রান্ত তাই নয়, সেগুলি বেগুনই নয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সদ্ভাব রক্ষা ও গবেষণায় সম্পূর্ণ সাহায্যে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মহামান্য আদালতের রায়ের পরে আশা করা যেতে পারে যে এ নিয়ে কোনওরকম ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না ও প্রকৃতির দান প্রকৃতির কাছেই থাকবে। এ নিয়ে যেন দুই দেশের মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ববোধে আঘাত না লাগে। এমন কি তিনি এও বললেন - লেট বাইগনস বি বাইগনস। ... ...
মনে পড়ে যায়, রবি একদিন বলেছিল গল্পটা। বড় নিকাশি নালা গায়েব, যেটুকু বেঁচে, পরিষ্কার হয় না। একবার জনপদের, এমনকি স্কুলের মাঠের জল কিছুতেই নামে না। পাবলিকের হল্লায় নালা পরিষ্কার করতে লোক লাগাল পঞ্চায়েত। একদিনের কাজ শেষ হয় তিনদিনে। নালা সিল হয়ে ছিল কোটি কোটি প্লাস্টিকের চিকচিকি, ব্যাগ, মোড়ক, গ্লাস আর থার্মোকলের ট্যুরিস্ট বাটি-থালায়। আটাত্তর, দু’ হাজার, আয়লা, আম্পান, ইয়াস। একের পর এক বন্যা। সন্দেশখালির নালার হাজার মেগাটন প্লাস্টিক তুলে নিয়ে যেতে লরি লেগেছিল গোটা কুড়ি। ... ...