নিঝুম রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে ফেরা। বোম্বে বাজারে ফেরার রাস্তায় ওই অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া বাঙালি ছেলে দেখলে চুরি-ছিনতাই-গালাগাল ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই সোনার কারিগরদের আর একটা প্রাপ্তি প্রায় কমন। সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি বা এধার ওধার দেখলেই পিঠে পড়বে মার। অবাঙালি শেঠ মালিকদের হাতে বা লাঠিতে পেটানি। সঙ্গে অবাঙালি মুখের অন্য ভাষার গালাগাল। ওই টাইট রুটিনে সোনার কাজের কারিগরি শিখতে শিখতে মইনুদ্দিন হয়ে উঠল পাকা কারিগর। ওর হাতদুটো ওই সোনালি ধাতুতে কারুকার্য তুলতে হয়ে উঠল পারদর্শী। মইনুদ্দিনের পড়াশোনার বুদ্ধিটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্ট্যাম্পমারা রেজাল্টের ছাপা কাগজে ছাপ না ফেললেও বারবার সে বুদ্ধি ছাপ ফেলেছে ওর লেবার জীবনে। ... ...
জাহেরা কসাই বাড়ির মেয়ে। তাঁর হাঁকডাক কম নয়, দরকারে ছুরি-চাপাতিও চালাতে পারেন। চাইলে তিনি প্রবল প্রতিরোধ করতে পারতেন, হৈচৈ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেসবের কিছুই করলেন না। তাঁর সকল প্রতিরোধের শক্তি গত কয়েক মাসে একটু একটু করে নিঃশেষ হয়ে গেছে। যেদেশে নারীর পরিধেয় ব্লাউজ, পেটিকোট বা শেমিজ বিহীন শাড়ি আর পুরুষের পরিধেয় ধুতি বা লুঙ্গি—সেদেশে তাদের যৌনকর্মে লিপ্ত হতে বেশি আয়াসের দরকার হয় না, সম্পূর্ণ বিবস্ত্রও হতে হয় না। নাজির খাঁ’র ভারি দেহের নিচে নিষ্পেষিত হতে হতে জাহেরা ভাবলেন, উদয়াস্ত পরিশ্রম করলে তাঁদের তিন জনের দু’বেলার খাবার হয়তো জোটানো যাবে, কিন্তু সবার নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়তি কিছু মূল্য দিতে হবে। বাইরের দুনিয়ায় শেয়াল শকুনের খাবার হবার চেয়ে এটা হয়তো মন্দের ভালো হল। ... ...
আমরা ট্যাঁকখালির জমিদারের মত অন্য সমুদ্রতটে গিয়ে থানা গাড়লাম। দিব্যি ঝলমলে রোদ, পরিষ্কার বালি, র্যাল্ফ ফিনেসের চোখের মত রঙের দিগন্তবিস্তৃত সমুদ্রের জল --- হঠাৎ দেখলে মনে হবে এখানেই আসেপাশে একতা জেড পাথরের ঘর দেখতে পাওয়া যেতে পারে। শুয়ে বসে, বই পড়ে, জলের ধার দিয়ে হেঁটে, আবার ডাব খেয়ে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে আমরা দুগ্গা বলে গড়িতে উঠলাম। এবার ঘরের ছেলেমেয়ে ঘরেই অর্থাৎ স্যান হুয়ানে ফিরে যেতে হবে। পরের দিন ফিরতি ফ্লাইট। উত্তর পূব কোণ থেকে স্যান হুয়ান যাওয়া খুবই সোজা। সটান পুব বরাবর গেলেই আয়তক্ষেত্র সম্পূর্ণ হবে। তেমন তাড়াহুড়ো না করেই পুরো দ্বীপটা বেড় দিয়ে ঘুরে আসা গেল। ... ...
যেন ট্রেনে উঠেছিল লিপি- হুইশল দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে ট্রেন আর লিপি বার্থে উঠে বসছে, তারপর রেলের কামরা বদলে যাচ্ছে ওর বাপের বাড়ির পুরোনো ঘরদোরে - মলিন দেওয়ালে ঝুলে থাকা ছবি, ক্যালেন্ডার- খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে আলো ঢুকছে আর দেওয়ালে ছবি তৈরি হচ্ছে- বকুল গাছ, জবা, টগর, এই উঁচু নারকেল গাছ তারপর মেপল। লাল হলুদ ঝরা পাতার রাশ পেরোচ্ছিল ট্রেন খুব আস্তে, সে ট্রামে করে চলেছে এরকম মনে হচ্ছিল - তারপর একটা লম্বা ব্রিজে উঠল , স্পীড বাড়াল- ঝমঝম ঝমঝম ঝমঝম; ট্রেনের তীব্র গতিতে ভেঙে গেল বাপের বাড়ির দেওয়াল, ঘরদোর, দেওয়ালের ছবি- ... ...
মুর্শিদাবাদ বাসীদের যেখানে বিশ্বাসঘাতক কিম্বা বিশ্বাসঘাতকের জেলার মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় সেখানে মীরজাফরের বংশধরদের কী অবস্থা হয়? তাঁরা কী তবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন? পূর্ব পুরুষদের কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জা পান? নাকি তাঁদের পূর্ব পুরুষদের গায়ে লেগে থাকা 'বিশ্বাসঘাতক' তকমার বিরোধিতা করেন নিজস্ব যুক্তি দিয়ে? চলুন কেল্লায় বসবাসকারী নিজামত পরিবারের কিছু প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এই বিষয়ে জানা যাক। ... ...
অনেক কিছু বদলে যেতে দেখলাম। নয়ের দশকে জেরুসালেম থেকে বেথলেহেম বা বেথানি (শেষ বারের মত জেরুসালেম আসার আগের রাতটি সেখানে কাটান যিশু) অথবা তেল আভিভ থেকে হাইফা, সেখান থেকে বাস বদলে নাজারেথ যাওয়া যেতো সহজেই। কখনো কোথাও পাসপোর্ট দেখাতে হতো না। প্যালেস্টাইন আর ইজরায়েল যে দুটো আলাদা দেশ তা সব সময় বোঝা যেত না। ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান সলোমনের ভগ্ন মন্দিরের প্রাচীরের (ওয়েলিং ওয়াল) পাশ দিয়ে ভারা বাঁধার মত সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেছি টেম্পল মাউন্টে, স্বর্ণ মণ্ডিত ডোম অফ দি রক চত্বরে। সেটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম ভূমি। তারপর মুসলিম মহল্লা দিয়ে চলে গেছি গলগথা- যেখানে যিশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়। ফিরে এসে লোককে বলেছি একবার জেরুসালেমে যাও – দুই কিলো মিটারের মধ্যে তিনটি মহান ধর্মের ছায়া মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। এখন সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব। এবার মায়াকে নিয়ে বেথলেহেম যেতে পার হতে হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া, সুড়ঙ্গের মতো সীমান্ত। বারে বারে প্রমাণ করতে হয়েছে আমাদের পরিচিতি। ডোম অফ দি রকে যাওয়া অসম্ভব – অনেক জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হয়। পদে পদে প্রহরী। ... ...
সংসারে উচ্চতম আদর্শ কি ব্রহ্মচর্য্য?পরাশরকে এ প্রশ্ন করেছিলেন সত্যবতী।তাঁর কৌতুহল ছিল খুব স্বাভাবিক।সাধারণভাবে এই ব্রহ্মচর্য্য নিয়ে এত কথা বলা হয়।তাহলে যাঁরা সংসারত্যাগী তাঁদের মধ্যে একাংশ কেন স্ত্রী-পুত্রাদির অভিলাষ রাখেন?অন্য অংশটা,যাঁরা দুরূহ পাহাড় বা জঙ্গলে চলে যান সাধনা করতে সেই অংশটা অতি ক্ষুদ্র।পরাশরের কাছে নানান কাহিনী শুনতে শুনতে তাঁর কৌতুহল জেগেছিল যে এত এত মহা ঋষি বা মুনি কেন সংসার করলেন? তারই সঙ্গে ধীমতি আরেকটি প্রশ্নও করেছিলেন!এই যে যাঁরা সংসার ত্যাগ সত্যি করেন,নারী সংসর্গকেও অনাচার বলে গণ্য করে এক দীর্ঘ্য সময় সাধনা করতে থাকেন বারেবারে দেখা যায় দেবরাজ তাঁদের ভয়ে ভীত,অথবা দেবকূল চূড়ামণি ব্রহ্মা বা বিষ্ণু বা মহাদেব স্বয়ং তাঁকেই বর দিয়ে সন্তুষ্ট করছেন।এই আখ্যানের মধ্যখানে থাকে দেবরাজ ইন্দ্র বা অন্যান্য দেব অপ্সরা পাঠিয়ে নারীর প্রলোভনে ভাঙতে চাইছেন তপস্যা।কেন?নারী কি শুধুই পাপ?... ... ...
একটা দল খুনোখুনিতে ছিল না, কিছু লুটও করেনি – তাদের লক্ষ্য ছিল ভেতর বাড়ি। প্রতিটি ঘর, রান্না ঘর, বারান্দায় তারা কী যেন খুঁজে শেষে ভাঁড়ার ঘরের ভেতরে জাহেরাদের তিনজনকে আবিষ্কার করে। এইবার এই দলটি ‘নেড়েটার মাগীগুলোকে পেয়ে গেছি রে!’ বলে উল্লাস করে ওঠে। তারা জাহেরাদেরকে টেনে হিঁচড়ে ভেতরের শোবার ঘরে নিয়ে এসে উপর্যুপরি ধর্ষণ শুরু করে। ধর্ষণ কি জিনিস তা জাহেরা বা ঝিয়ের জানা থাকলেও তেরো বছরের মাহিরার অজ্ঞাত ছিল। তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে চেপে ধরাতে সে চেঁচাচ্ছিল, কিন্তু প্রথমবার তাকে যখন বিদ্ধ করা হল তখন সে এক অপার্থিব জান্তব চিৎকার দিয়ে উঠল। ... ...
বলতে বলতে, কী আশ্চর্য, দাদুর গলায় আক্ষেপ ঝরে পড়ে! আগের কথার রেশ টেনে বলেন – “তবু ভাতেরও অভাব কিছু মানুষের।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন দাদু। তারপর আবার বলতে থাকেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে, বিশ্বযুদ্ধের পরে পরে পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের ছায়া বাংলার এই শস্যগোলাকেও গ্রাস করল।তারপর স্বাধীনতা লাভ। এদিকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ -ষাট বছরেই অতিরিক্ত রাসায়নিক সার আর কীটনাশক মাটির গুণ অনেকটা নষ্ট করে দিলো। বড় বড় দেশী আর বিদেশি কোম্পানিগুলো মানুষকে কম শোষণ করল? কোটি কোটি ডলার লুঠ করে নিয়ে গেল। বেশি ফসলের আশায় চাষীরা তা দিল! কী করবে তারা? লোভের দেখানো পথের বাইরে আর কোনো বিকল্প তারা নিজেরা ভাবতে পারল না, কেউ ভাবাল না।” ... ...
চাষে প্রচুর বিষের ব্যবহার আর অন্যদিকে ঝড় বন্যার ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে থাকায় চ্যাং, বাসা, শাল, খলসি, সরপুঁটি ও জিওল রা প্রায় বিদায় নিলো। পুরানো কিছু পুকুরে কোনোরকমে বেঁচে আছে। মাগুরের দেশী জাত খুঁজে পাওয়া কঠিন। জমিদারী যুগে পুকুরের অন্য সম্মান ছিলো তার অন্যতম কারণ পুকুরের জল পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন সে কাল গেছে। পুকুরের প্রতি খুব অবহেলা। পুকুর আগে পুরো সেচে দিতোনা। আর দিলেও হাপা করে কালো মাছ রেখে দিতো। এমন করে পুকুর সংস্কার করতো যে জলের মান নষ্ট হতোনা। এখন সেসব জ্ঞান গেছে। দিকে দিকে মেশিন। হাতে সময় কম। শ্রমিক কম। সবুজ বিপ্লবের পর থেকে কৃষিকে অলাভজনক করে তোলা হয়েছে বলে যুবসমাজের অনেকাংশের প্রবল অনীহা... ... ...
আমাদের গ্রামে ১৯ মাঘ ওলাইচণ্ডী পূজার মেলা। এই মেলাতেই হিন্দু মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষ বাড়ি ফেরেন। ইদ বকরিদ বা পূজা অনুষ্ঠানে না ফিরলেও মেলায় ফেরা চাই। বহু মানুষ এভাবেই ঘরে ফেরেন। আমিও। ... ...
বৃত্তরৈখিকের শেষ পর্ব আজ। লেখকের কথায়ঃ "বৃত্তরৈখিককে উপন্যাস বলেছি, কিন্তু হয়তো ইতিহাসও বলা চলতো। মোটামুটি বিশ শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তরের দশকের গোড়ায় যাঁদের যৌবনের শুরু এবং পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বেড়ে ওঠা, বাংলাভাষী সেই মধ্যবিত্তদের একদলের ইতিহাস এই রচনার রসদ। পাঠযোগ্যতার খাতিরে একটা গল্পের বুননের চেষ্টা এতে আছে – উপন্যাস নামের আকাঙ্খা সেখানেই – সেটা কতটা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে পাঠকই তা বলতে পারবেন। কাহিনীর পাত্রপাত্রীদের পুর্ববর্তী প্রজন্মের কথা কোন কোন ক্ষেত্রে গল্পের খাতিরে এসে পড়লেও এই ইতিকথার প্রধান চরিত্ররা মোটামুটি ভারতের স্বাধীনতার সমবয়েসী। এবং এই স্বাধীনতার মতই আশাবাদিতা এবং নৈরাশ্য, আদর্শ এবং আদর্শচ্যুতি, মেধানিষ্ঠা এবং নিম্নগামী মেধা এখানে পাশাপাশি উপস্থিত।" ... ...
মানসের কাছ থেকে যতটুকু জানা গেল, তা হল এই, যে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ তুহিন আর ঋক পার্টিতে পৌঁছয়। তারপর যথারীতি হাই-হ্যালো, নাচ, ড্রিংক্স এসব চলছিল। সবাই বেশ ভাল মুডেই ছিল। কথা নেই, বার্তা নেই – কোথা থেকে ওই আমন শর্মা নামে ছেলেটা এসে তুহিনকে চুমু খেতেই পুরো সিচুয়েশন পাল্টে গেল। ঋক তো রেগে টং। তারপর খানিক কথা কাটাকাটির পর তুহিন আর ঋক দু’জন পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে যায়। নাহ্, কোথায় গেছিল সেটা মানস জানে না। পার্টিতে তুহিনের হাতে গ্লাস ছিল, সে ব্যপারে মানস নিশ্চিত। কিন্তু কী খেয়েছে, কার থেকে খেয়েছে – তা মানস জানে না। ... ...
আজ খুব বেশী রান্না হবে না। দুপুরের খাওয়া সেড়ে আজ মুড়ির ধান বানা হবে যে। আজ বাজারের ব্যাগ নিয়ে কোনো রিক্সাওয়ালাও তাই আসবে না। রান্নাঘরের মাচার নীচে রাখা সবজির ধামার তলানিতে যা আছে তা দিয়েই দুপুরের পর্ব সারা হবে। ঠাকুমা কালো পাথরের বাটি হাতে বড়ঘরের দিকে যেতেই আমি পিছু পিছু হাঁটা ধরি, ও ঠাকুমা নেলপলিশের রঙটা কত সুন্দর দেখছো? ঠাকুমা পেছনে ফেরে না, ওসব রঙ ভাল না; আমার দিদি তো রঙ ছাড়াই সুন্দর। আমি থেমে যাই। লাল বারান্দায় বসে ভাবি, কাল ফেরিওয়ালা এলে সব ফিরিয়ে দেবো। ... ...
ঠাকুমাকে পেছনে ফেলে আমি দৌড়ে নামি কাঠের দোতলা থেকে। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে সঞ্জীব কাকু। বুকের কাছের আদর্শলিপি ধরে আমাকে ইশারায় ডাকে, কই স্লেট নিয়ে আয়। আমি দৌড়ে গিয়ে দাদুর রেডিও'র পাশ থেকে স্লেট হাতে নিয়েই কাকুর সামনে গিয়ে দাঁড়াই, আমি সব স্বরবর্ণ লিখতে পারলে সন্দেশ বিস্কুট দেবে তো? ঘাড় নেড়ে 'হ্যাঁ' বলে সঞ্জীব কাকু বড়ঘরের মেঝেয় পাটি পাড়ে। সন্দেশ বিস্কুট দেবো, তার আগে সবগুলো স্বরবর্ণ লিখে শুদ্ধ উচ্চারণে আমাকে শোনাতে হবে। আমি দেরী না করে পাটিতে বসেই কালো স্লেট সাদা দাগে ভরিয়ে তুলি। আর মুখে বলি, অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ ৯(লী)। দেখেছো সঞ্জীব কাকু আজ কিন্তু ৯ (লী) লিখতে ভুল করিনি। ... ...
কোবরাপোস্টের দাবী অনুযায়ী তাদের সাংবাদিক পুষ্প শর্মা কালনিক একটি সংস্থা শ্রীমদ্ভগবতগীতা প্রচার সমিতির কর্মকর্তা জনৈক আচার্য সেজে দেশের বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংবাদ সংস্থার (যার মধ্যে খবরে চ্যানেল, নিউজ পেপার এবং ওয়েব পোর্তাল সবই আছে) কর্তাব্যাক্তিদের অ্যাপ্রোচ করেন টাকার বিনিময়ে একটি বিশেষ আইডিওলজিকে প্রোমোট করতে। এটি তিনটি ফেজে বিভক্ত। প্রথম ফেজে গীতার বাণী প্রচারের মাধ্যমে, দ্বিতীয় ফেজে বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের রিডিকিউল করার মাধ্যমে এবং তৃতীয় ফেজে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি রাজনৈতিক দলের সুবিধামতো অ্যাগ্রেসিভ প্রোমোটিং করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ... ...
অর্চনার একজনের ওপর বিরাট ক্রাশ ছিলো। জনৈক 'লেদা রাজা'। যে যেখানে কারুর কোনো গুণের কথা বলুক না কেন, অর্চনা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতো "লেদা রাজার মত"। আমি তো কিছুতেই ভেবে পেতামনা যে কোনো রাজা 'ল্যাদা' হলে তাঁর এত ভক্ত হবার কী আছে! এদিকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন এই 'লেদা রাজা'টি কে, অর্চনা খালি ফিক করে হেসে বলতো "আমি কী জানি?" শেষে একদিন কৃষ্ণর গল্প শুনে সে সটান বলে বসলো "এটা তো লেদা রাজার গল্প। আন্টি মোটেই জানেনা, লেদা রাজার গল্পে শুধুশুধু ভুলভাল কান্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে!" সবাই মিলে তখন নানা প্রশ্ন, নানা মন্তব্য। কারুর রাগ হয়েছে, কেউ আন্টিকে বলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিয়েই অর্চনা আবার সেই – ফিক, "আমি কী জানি?" মোডে চলে গেছে। ... ...
শীতের বিকেলে বৃষ্টি হলে ঠান্ডা যেন চামড়া ফুটো করে হাড়ে ঢুকে যায় সটান, তার ওপর ভেজা ফুটপাথ শুকোতে অনেক সময় নেয়- রাতে শোয়ার জন্য একটা শুকনো জায়গা খুঁজছিল প্রফুল্ল। এমনিতে, মন্দিরের সামনের ফুটপাথে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকে। গতবছর একটা কম্বল পেয়েছিল - সেদিন কালীমন্দিরে শ্রাদ্ধ- প্রফুল্ল, কপিল, নাথু আর রঘুবীর ফুটপাথে বসে পিন্ডমাখা দেখছে- ন্যাড়া মাথা দুটো ফরসা ছেলে পুজো করতে করতে চোখ মুছছিল। কাজ মিটে গেলে ছেলেদুটো ওদের হাতে লাড্ডু দিল। তারপর টাকা, ধুতি আর কম্বল। গতবারের শীত এই কম্বলের নিচে দিব্যি কেটেছে; তারপর প্লাস্টিক মুড়ে রেখে দিয়েছিল। ... ...
ডানজিগে জার্মান অধিবাসনের ইতিহাস হাজার বছরের বেশি পুরোনো। হের রিখটারের পূর্বপুরুষ ছিলেন সেখানকার বাসিন্দা। ১৯৪৫ সালে ছিন্নমূল রিখটার পরিবার কিশোর মাক্সিমিলিয়ানকে নিয়ে হেঁটে জার্মানি এসেছেন। মাক্সিমিলিয়ান কখনো ফিরে যাননি ডানজিগে। লৌহ যবনিকার সময় সেটা শক্ত ছিল। হের রিখটার ডানজিগকে ভুলেই গিয়েছিলেন বা মনে রাখতে চাননি। ড্রেসনার ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড সামলানোর ব্যাপারে আমার দক্ষতার অভাবে তাঁর একটা সূত্র যোগ হয়ে গেল ডানজিগের সঙ্গে। আমাদের সংক্ষিপ্ত সংলাপের পরে তাঁর মন নিশ্চয় চলে গিয়েছিল ডানজিগের অলিতে গলিতে। ঠিক যেভাবে আজ এপার বাংলার অনেক অশীতিপর মানুষের মন চলে যায় বিক্রমপুরের গ্রামে। ... ...
লোহিতসাগর বড় চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। ফিনিসিয় নাবিক, টায়ারের রাজা সকলের সাহায্যে রাজা সলোমনের বাণিজ্যের কী দাপট! শেবার তো সবই আছে পণ্য আছে, নৌকা আছে, পণ্যের বাজার আছে। কিন্তু এখন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে খোদ সলোমন। শেবার বণিকেরা দূর দূর দেশে আগের মত সহজে চলে যেতে পারছে না। না জলে, না স্থলে। তাদের মশলা তাদের রজন সুগন্ধি, নিজেদের দেশে নয়, দূর দূর দেশে এসব পণ্যের প্রবল চাহিদা! নিজেদের দেশে কে কিনবে এসব? তাদের স্বচ্ছন্দ বাণিজ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছেন সলোমন! দেশের সম্পদ সমৃদ্ধি বাড়বে কী করে যদি বাণিজ্য ঠিকমত না হয়? ... ...