যে-কোনো রূপে সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবির নেপথ্যে থাকে ‘অন্য’-কে চিহ্নিত করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার দুরভিসন্ধি, সে বিষয়ে নিরন্তর চেতাবনি সুকুমারী ভট্টাচার্যের লেখালিখি। চতুর্বর্ণ ব্যবস্থায় সামাজিক সুস্থিতি এবং সহাবস্থান ছিল, কিংবা এই উপমহাদেশে ইসলামের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েমের আগে সমাজে নারীর মর্যাদা ছিল অতি উচ্চ— ইত্যাকার ভ্রান্ত ধারণা নস্যাৎ করেন তিনি। দেখিয়েছিলেন বৈদিক যুগে শূদ্র ও অবর্ণদের প্রতি ব্রাহ্মণ্য নিষ্ঠুরতা, নারীকে কার্যত এক হস্তান্তরযোগ্য সামগ্রী করে রাখার প্রয়াশ। তাঁর রচনা শুধু বৌদ্ধিক চর্চার জন্য নয়, জীবনযাপনের জন্যও অপরিহার্য। লিখছেন ইতিহাসকার রণবীর চক্রবর্তী ... ...
প্রয়োজন আছে, তবে সে তুলনায় মান নেই বা দাম। প্রাইভেট টিউটররা যেন ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। আমাদের রোজগার নেই, ক্রমশ ফুরোচ্ছে নুন-পান্তা। ঘিরে ধরছে অচেনা দারিদ্র্য আর অবসাদ। ... ...
আঁকা বাঁকা সরু সরু রাস্তা দিয়ে চলেছি। পুরোন শহর। ঝাঁ চকচকে নয় মোটেই। বরং একটু ধুলোভরা, অগোছালো – পথের পাশের বেআব্রু দারিদ্রে একটু যেন আবছা মত। পথের বাঁক ঘুরলে হঠাৎ হঠাৎ চোখে ভেসে ওঠে এক একটা পাথরে গড়া মায়া – কালের প্রলেপে ধুসর তাদের রং। ট্যুরিস্ট নেই মোটেই – শুধু পাড়ার দু চার জন লোকের ইতস্তত ঘোরাফেরা, নতুন লোক দেখে একবার তাকিয়ে দেখা – ব্যস ওইটুকুই। অটো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থামছে, ড্রাইভার শুধু জায়গার নামটা বলে দিচ্ছেন। বেশি কথাবার্তা হচ্ছে না, দুপক্ষেরই ভাষাজ্ঞানে ঘাটতি হচ্ছে। এরই মধ্যে দেখে নেওয়া গেল ইব্রাহিম রোজা। দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহের স্ত্রী তাজ সুলতানার সমাধি, সুলতানেরও। পাথরের দৃঢ়তার সঙ্গে অলংকরণের সূক্ষ্মতার আর আর্চের পেলবতার মিশেলে তৈরি একটা ছবি। ... ...
যে কোনও সময়কালে, যে কোনও প্রেক্ষাপটে সত্যিকারের প্রেম বা ট্রু লাভ সবসময় লারজার দ্যান লাইফ। নাহলে সেটা প্রেমই নয়, সম্পর্কের সমঝোতা মাত্র। ওয়েব সিরিজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে, প্রেম যদি এভাবে, এত ঠুনকো হয়ে ধরা দেয়, তবে তা দুশ্চিন্তার। ... ...
আলমুদেনা গ্রান্দেস। দীর্ঘ স্বৈরাচার থেকে সদ্যমুক্ত স্পেনের সাহিত্যে ঘটিয়েছিলেন নারীদৃষ্টিকোণের বিস্ফোরণ। ‘লুলুর নানা বয়স’ নামক উপন্যাসে। সমালোচক ও সাধারণ পাঠক উভয়েরই সমাদৃত এই লেখক। বহু পুরস্কারে ভূষিত। তাঁর লেখালিখিতে মেলে সাহিত্যিক বেনিতো গালদেস ও ডেনিয়েল ডেফো এবং চলচ্চিত্রকার লুই বুনুয়েলের ছায়া। লিখছেন জয়া চৌধুরী ... ...
বগাই হল একটা গাব্দাগোব্দা ছাইরঙা বেড়াল। ঝামরি ঝুমরি লেজ। একটা চোখ তার নীল আর একটা চোখ সবুজ। গেরস্তবাড়ির গিন্নিমার ভারি পেয়ারের বেড়াল সে। বিশেষ করে ওই নীল আর সবুজ চোখের জন্য বগাইয়ের ভারি গরব। হাজার বদমাইশি করলেও গিন্নিমা তাকে মোটেই বকাঝকা করেন না, শাস্তিও দেন না। সেই সুযোগ নিয়ে বগাই সব দোষ চাপায় ইনি আর উনির ঘাড়ে। বগাই এ বাড়িতে আসার পর থেকে ইনি আর উনির সুখের জীবনে কাঁটার মত গেঁথেই আছে। মাছের চুপড়ি থেকে ল্যাজাটা মুড়োটা তুলে নিয়ে থাবা চাটতে চাটতে ইনি আর উনির গর্তের দিকে চেয়ে মুখ তুলে ছলোছলো চোখ করে করুণ সুরে ডাকবে ‘মিয়াঁও’! ওমনি গিন্নিমা এসে দুষতে থাকবেন ‘উফ কী উৎপাতই না হয়েছে ইঁদুরের! আজ মাছ চুরি করেছে, সেদিন লেপতোষক ছিঁড়ে কুটিকুটি করেছিল! দাঁড়া আজই ইঁদুর ধরার কল কিনে আনব বাজার থেকে। দেখাচ্ছি মজা বজ্জাতগুলোকে! চল রে বগাই সোনা। তোকে দুধুভাতু দিই।’ ... ...
বালুরঘাট ব্লকের কাশমুলাই গ্রামে মানুষ গাছের কচি পাতার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়বে, তবে তাই দিয়ে রান্না হবে। রান্না কী হচ্ছে? ত্রাণ দিতে গিয়ে আমার বন্ধুরা দেখে এসেছে, গরু যে ঘাসপাতা চিবিয়ে খাচ্ছে, তাই সিদ্ধ করে গ্রামের মানুষ খাচ্ছে। মানুষ আর পশুর খাবার এক হয়ে গিয়েছে। ... ...
একবার সাত আটদিন এ ঠেক ও ঠেকে কাটিয়ে সোজা ইউনিভার্সিটি গেছি। চুল-দাড়ি জট পাকিয়ে বীভৎস দেখাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে নামার মুখে আমাকে দেখেই খপাত করে পাকড়াও করলেন। “খালাশিটোলাতেই গড়াগড়ি খাওয়া হচ্ছিল বুঝি!” সঙ্গের বান্ধবীটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওর বাপ কী করে? এত পয়সা পায় কোত্থেকে মাল খাওয়ার?” তারপর ট্যাঁক খালি শুনে পয়সা দিয়ে পাঠালেন চুল-দাড়ি কাটতে। নিজের ঘরে বসে বই পড়ছিলেন—আমি শ্মশ্রুগুম্ফহীন হয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়াতে খুব খুশি হয়ে বাড়ি গেলেন। আমাকে কোনোদিন একবারের তরেও বলেননি খালাশিটোলায় যেও না। বরং হিজলিতে চাকরি করার সময় কবি শক্তি চাটুজ্জে একবার কেমন ওঁর বুকে চেপে বসে গলা টিপে মাল খাওয়ার পয়সা আদায় করেছিলেন সে গল্প শোনাতেন রসিয়ে। ... ...
প্রথম থেকে এই তালিকা বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। বর্তমানে এনার্সি শুধু আসাম নয়, ভারত নয়, এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রক্ষাপটেও একটি উল্লেখযোগ্য আলোচ্য বিষয়। প্রতিটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তাদের গণসংগঠন, প্রতিটি ভাষিক গোষ্ঠী, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দল উপদল, প্রতিটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ভূগোল-ইতিহাস, তারা নিজের সুবিধামতো, নিজের রাজনৈতিক লাভ, সামাজিক লাভ ক্ষতি বিবেচনায়, একটি করে আনুমানিক সংখ্যা ঠিক করেছেন, এবং প্রত্যাশা করেছেন সেই সংখ্যাই প্রতিফলিত হবে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকায়। অসমীয়া চেয়েছেন বাঙালির নামকর্তন হোক প্রভূত পরিমাণে, বাঙালিরা উল্টোটা চেয়েছেন। হিন্দুরা চেয়েছেন মুসলমান বিতাড়িত হোক এই ভূখণ্ড থেকে, মুসলমানরা চেয়েছেন মুসলমানের সংখ্যা কম হোক, হিন্দুরা চিহ্নিত হোক বেশি পরিমাণে। এবং এই ভাবেই সম্পূর্ণ নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে নাম বিয়োজনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে এনার্সির চূড়ান্ত তালিকা। ... ...
রুচিকা গিরহোত্রার কথা হয়ত কারোর কারোর মনে থাকবে। এই চৌদ্দ বছরের লন টেনিস প্লেয়ারটি হরিয়ানার লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও পুলিশ অফিসার রাঠোরের দ্বারা যৌন নিগৃহীত হয় ১৯৯০ সালে। ঘটনার তিনদিন বাদে মেয়েটি নালিশ জানায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অফিসারের দোষও ধরা পড়ে। কিন্তু এফ আই আর হয় না। ইতিমধ্যে রাঠোরের চাপে মেয়েটি নিজের স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়। তার দাদার বিরুদ্ধে ছটি কেস রুজু করা হয়। রাঠোরের সমর্থনে রাজপুত সভার সদস্যরা রুচিকার বাড়ির সামনে দিয়ে প্রসেসন করে, তাঁকে রাস্তাঘাটে রেন্ডি বলে অভিহিত করা হয়। ক্রমাগত মানসিক নির্যাতনে মেয়েটি ১৯৯৩ সালে আত্মহত্যা করে। কত বছর বয়স তখন ওর? আর সেই পুলিশ অফিসারের কি হয়? ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। জাহাঙ্গির নন, মুঘলাই শাহি দস্তরখওয়ানে খিচড়ির রমরমা মহামতি আকবর বাদশার জমানা থেকে। কিন্তু তেমন খিচুড়ি আর কোনও দিন রসনা-রসিকের পাতে পড়বে না। গৃহস্থালি, ভোজবাড়ি, রেস্তোরাঁ কোত্থাও তা আর মিলবে না। ভ্যানিশ! নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
তখন আমি সবে মাধ্যমিক, কিন্তু বাংলা আকাডেমিতে দিব্য যাতায়াত, লাইব্রেরির থেকে Esperanto-র ওপর একটা বই নিয়ে বাবার ঘরে বসে বসে পড়ছি। বাবার সঙ্গে তখন একজন ঝকঝকে মানুষ তরতর করে অনেক গল্প করছেন, আমি কিছু শুনছি, কিছু বইতে মন। যাই হোক, একটা ছটফটে বাচ্চা মেয়েকে এস্পেরান্তো পড়তে দেখে তাঁর আমাকে খুব মজাদার লেগেছিল, সেদিনই প্রথম তাঁর মুখে শুনেছিলাম স্প্যানিশরা J কে খ বলে, আর উনি তার মানে খাদবপুরের অধ্যাপক! ... ...
জগৎ পারাবারের তীরে বিক্রম জগৎ পারাবারের তীরে লেগেছে কী ঝামেলা জুনের শেষ, জুলাই মাস ঝিলিক মরে স্বল্পবাস বাজিল বুঝি শীতের রাতে নিবিড় ভুভুজেলা ... ...
বিশ্বসাহিত্যের ২২ জন বিখ্যাত লেখকের কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সমাহার নৈঃশব্দের সংলাপ বইটি। এখানে লেখকেরা জানিয়েছেন তাঁরা কীভাবে লেখালেখি করেন, কী ধরনের লেখা পড়তে ভালোবাসেন, কোন কোন লেখক তাঁদের প্রভাবিত করেছেন, লেখার ক্ষেত্রে কত ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা তাঁদের করতে হয় ইত্যাদি নানা বিষয়। পড়লেন সৌভিক ঘোষাল। ... ...
উৎসবের দেশ জাপানের পাঁচটি ঋতু-কেন্দ্রিক উৎসবের অন্যতম দুটি হল পুতুল-কেন্দ্রিক। পুতুল উৎসবের একটি ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত “হিনা মাৎসুরি”। এর অন্য নাম “বালিকা-উৎসব”। অন্যটি হল ৫ই মে অনুষ্ঠেয় “তানগো-নো-সেক্কু” বা “বালক-উৎসব”। জাপানের অন্যান্য উৎসবের মত এই পুতুল উৎসব দুটিরও শুরু বহুযুগ আগেই। তবে নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে যে, নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পথ পেরিয়ে বর্তমানের উৎসব অন্যরূপে প্রতীয়মান। ... ...
ঝিম। এসময় বড়ো মায়াবী লাগে চারপাশ। গোধূলির জাদু আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে গাছেদের পাতায় পাতায়। সামনে শ্যাওলা-ঝাঁঝিতে ভরা ছলাৎছল ঝিলের জল। একপাশে ভিড় করে আছে কুচো কচুরিপানা। ত্রস্ত পায়ে জলপিপি ছুটে যায় জল বেয়ে বেয়ে। রূপসী জলসাপ সোনা ও কাজলে মুড়ে ডুবে থাকে নিঝুম আলস্যে। পানাকৌড়ি যুগল ডুবে যায় ভেসে ওঠে এমনিই। ওপারে এক দারুণ বালক চার খুঁটিতে বাঁধা নৌকায় এক মনে দাঁড় বায়। সে নৌকা কোথাও যায় না। স্থির সেই নৌকাটিতে দাঁড় বেয়ে চলে বালক অবিরাম, অক্লান্ত। সে বুঝি অনুশীলনরত। নৌকা যাবে না কোথাও, কোত্থাও। তেমনই কথা দেওয়া আছে ঘাটের সাথে। অথচ বালকটিকে যেতে হবে দূরে বহুদূরে....। আর আমরা, তাম্বুরিন বাজানো ডিলানের মানুষটির মত, কোথাও যাবার নেই যার, গাইতে থাকি। ... ...
সর্বভারতীয় বলে পরিচিত যে ইংরেজি কাগজগুলো, সেগুলোর শিরোনামে প্রায়শই হিন্দি শব্দ/শব্দবন্ধ নিয়ে খেলা লক্ষ্য করা যায়, রোমান হরফে পুরোপুরি হিন্দি শিরোনামও দেখা যায়। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ২০১০ এর বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এন ডি এ জোট জয়ী হওয়ার পর ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ এর শিরোনাম ছিল ‘Rajnitish’। ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ র পাতায় অভিনেত্রী জেসি রনধাওয়া সম্বন্ধে প্রতিবেদনে ‘Jesse jaisi koi nahin’ শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে। স্পষ্টতই এইসব কাগজের হিন্দিভাষী সম্পাদকরা ধরে নেন যে পাঠকের মাতৃভাষা হিন্দি নয়, সে-ও হিন্দি বোঝে। বাংলা, ওড়িশা বা দক্ষিণ ভারতের পাঠকদের অসুবিধার কথা ভাবা হয় না। ... ...
অন্নদা দিদি হলেন গল্পের ভাণ্ডার। আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি, তিনিও আমাকে ভালোবাসেন। কারণ বুড়ো মানুষের কথা কেউ শুনতে চায়না, সময় নষ্ট মনে করে। আর আমি তাঁকে ডেকে ডেকে গল্প শুনি। অন্নদা দিদি বলেন, আগের দিনে কথা ছিল, “যার আছে মাটি, তাকে দাও বেটি।” অর্থ খুব পরিষ্কার। যার জমিজমা আছে, সঙ্গতি আছে সে ঘরেই মেয়ের বিয়ে দিতে হয়। সেই আপ্ত বাক্য মেনে, আমার দাদা শ্বশুর তারিণী প্রসাদের সাত বোনেরই বিয়ে হয়েছিল জমিদারের ঘরে। বড় জনের বিয়ে হল বালিসাইতে। তার পরের জনের বালেশ্বরের খরসুয়াতে, পরের জন মানে তৃতীয়া গেলেন বালিসাইয়ের কাছাকাছি গড় মুহুরি ওরফে গড় ভৌঁরিতে।, চতুর্থ জন কেয়াবটতলায়, পঞ্চম জন মোহনপুরে, ষষ্ঠ কন্যা মানে দ্য গ্রেট ভব অপার শ্বশুর বাড়ি ছিল এগরায়। সপ্তম কন্যে গেলেন কাঁথির দুরমুঠে। ... ...
আর দেখুন, রবীন মণ্ডল তো কলকাতার লোক কেনে নি। কিনেছে দিল্লী আর মুম্বাইয়ের বায়াররা। লাস্ট ফোর-ফাইভ ইয়ার্স, দে আর বায়িং টু বিল্ড আপ দেয়ার স্টক। এরপর কী হবে? মার্কেটে যা পড়ে আছে, ওরাই কিনে নেবে - দরকার হলে, বেশী দামে হলেও। দেন, দে উইল ক্রিয়েট আ ডিমান্ড, আ ক্রাইসিস - প্রাইস চড়চড় করে বাড়বে। দিস হ্যাপেনড উইথ সুজা অ্যান্ড টেক মাই ওয়ার্ডস, দ্য সেম ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন উইথ রবীন মণ্ডল। বেশ কথা। শাঁসালো কালেক্টর কদ্দূর সহমত হলেন, বলতে পারি না। আমার শুধু মনে পড়ে গেল, রবীন মণ্ডল চেয়েছিলেন, তাঁর ছবি দেখে দর্শক যেন দর্পণের মুখোমুখি হন। কে সেই দর্শক? দর্পণের মুখোমুখি হয়ে ডিজাইনার হেয়ার-সালোঁ থেকে ছেঁটে আসা চুলটুকু গুছিয়ে নেওয়া বাদে সেই ধনী মানুষটি আর কী করবেন? ... ...
ছবিটি প্রথম দর্শনে যতটা সরলরৈখিক দেখায় ততটা একতলবিশিষ্ট আদপে নয়, এবং ঠিক সে কারণেই পরিসর বা বিনির্মিত বিষয় বৈচিত্রে গাঢ় মনোযোগ ও বিশ্লেষণ দাবী করে। ছবি দেখে ফেলার পর যে চিন্তা ভাবনার অবশ্যম্ভাবী বুদবুদ ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে দর্শকের মন এবং মগজকে। তার এক সুদূরপ্রসারী আমেজ আর কথাজাল তৈরি হয়। অনেকটা সময় ধরে সে আমেজের বিস্তার, অনেকগুলি কথামুখের ধাপে তার অবধারিত আলোকপাত। মানসমুকুলের গপ্প তৈরি করার উপাদান অথবা গপ্পের বুননের ধরন, তার বাধাহীন এগিয়ে চলা, বাঁক নেওয়া বা ন্যারেটিভের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে উপনীত হওয়া, সমস্তটাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় গল্পের মেজাজ, অনুভূতির ভিত্তি এবং বিষয়ের সংগে। বলার ধরন এবং কি বলা হচ্ছে সেই বিষয়ের সনির্বন্ধ সমণ্বয়ে যে অভূতপূর্ব নির্মাণ প্রকল্পের ছায়াপ্রতিমা ক্রমপ্রতীয়মান হতে থাকে এই আপাত সহজ অথচ গভীর চলচ্ছবি-আখ্যানের সরল দ্রুতির চালে ছন্দে, বিষাদে, হরষে – সেই একান্ত শিল্পরূপটিই সহজ পাঠের গপ্প-কে চলচ্চিত্র হিসেবে একুশ শতকের বাংলা সংস্কৃতির চালচিত্রে অসাধারন করে তুলেছে। ... ...