এত বড় ধরনের জঙ্গি হানা কীভাবে ঘটতে পারল,সেনা চলাচলের সময় সমস্ত সুরক্ষাবিধি ঠিকমত মানা হয়েছিল কীনা - এই সমস্ত প্রশ্নকে আমল না দিয়ে শাসক দলের দিক থেকে বেছে নেওয়া হল যুদ্ধোন্মাদনা তৈরির পথ। সেনাবাহিনীর প্রতি দেশবাসীর বৃহত্তর অংশের আবেগ এবং পাকিস্থানের প্রতি দীর্ঘলালিত বৈরিতার মনোভাবকে পুঁজি করে যুদ্ধের আবহ গড়ে তোলা হল।সার্জিকাল স্ট্রাইক -২ থেকে শুরু করে পুরোদস্তুর যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে চায়ের দোকান থেকে ফেসবুকের ওয়াল, ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে নামজাদা টেলিভিশন চ্যানেলের নিউজরুম – সর্বত্র ব্যাপক উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা শুরু হয়ে গেল। অচিরেই শত্রুর তালিকা বাড়তে শুরু করল এবং পাকিস্থানের পাশাপাশি কাশ্মীরী আম জনগণকেও শত্রু তালিকায় ঢুকিয়ে ফেলা হল। কাশ্মীরী ব্যবসায়ীদের পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হল, কাশ্মীরের মানুষজনকে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে রাজ্যে ফিরে যাবার হুমকি দেওয়া হল। আমাদের কোলকাতা শহরেও হুমকির মুখোমুখি হলেন এক কাশ্মীরী চিকিৎসক, যিনি বহুবছর এই শহরে ডাক্তারী করছেন। বিভিন্ন রাজ্যে কাশ্মীরী মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, কাশ্মীরের ছাত্র সহ বিভিন্ন মানুষদের হেনস্থা নিগ্রহ করা হচ্ছে – এরকম উদ্বেগজনক ভিডিও আমরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পেতে শুরু করলাম। ... ...
হঠাৎই অফিসের কাজে জাপান চলে গেলাম। গৌতমদা বলল – এই যে তুই জাপান চলে যাচ্ছিস ... আমিও ইউরোপ চলে যাবো ভাবছি। খুব ভালোবাসতো আমাকে, আর আমিও। জাপানে পৌঁছে একদিন ফোন করলাম। গৌতমদা প্রচণ্ড এক্সাইটেড আমার ফোন পেয়ে, বলল – সুব্রত, উফফ তুই কীভাবে বরফের মধ্যে ঘুরছিস ভাবতে পারছিনা! আচ্ছা শোন, এপ্রিলের ১৭ তারিখে যাদবপুর এ কনসার্ট আছে। চলে আসিস”। আমার যাওয়ারও কথা ছিল সেই সময় দেশে, তা কোনও কারণে পিছিয়ে গেলো। মিস করলাম কনসার্টটা। একটু খটকা লেগেছিলো, কী ব্যপার, ছন্দপতন হচ্ছে নাকি! আগে গৌতমদা বললে শত বাধা সত্ত্বেও অফিস কাটিয়ে ঠিক হাজির হয়ে যেতাম। শুধু যেতাম বললে ভুল হবে, এরকম হতো যে, হঠাৎই খেয়াল করতাম গৌতমদার সাথে ট্যাক্সি করে কনসার্ট করতে যাচ্ছি,আর, ফিরতাম এক সপ্তাহ পর। যাই হোক, সেবার দেশে ফেরার পর, সল্ট লেকে BE park এ গান আড্ডা হল আবার।আমি জাপান থেকে গৌতমদার জন্য একটা Pan flute কিনে এনেছিলাম (সেটা আজ ও আছে গৌতমদার ঘরে সাজানো), বলল যে নেক্সট অ্যালবামে ওটা ইউজ করবে। গৌতমদা was gifted in such a way যে কোন মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্ট প্রথম বার তুলে নিয়েই বাজাতে পারত। আর একসেট বিদেশি গিটারের স্ট্রিং। তা গৌতমদার তখন কোন গিটারই নেই! আসলে একটা করে গিটার কিনত আর গিটার শিখতে সদ্যআগ্রহী কাউকে দিয়ে দিত, তো বলল ঠিক আছে আরেকটা গিটার কিনবে কয়েকদিনের মধ্যেই, তারপর স্ট্রিংগুলো লাগাবে। সেই দিন আমাদের গান স্বাভাবিক ভাবেই চলল প্রায় রাত দুটো অবধি। যেমন চলত আর কী! তারপর আমরা আমদের এক বন্ধুর গাড়ি করে ট্যাক্সি ধরিয়ে দিলাম ফুলবাগান থেকে। বিদায় জানানোর আগে আমরা সেই প্রথম দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম। বোধ হয় আমি পরের দিনই জাপান চলে যাবো সেই জন্যেই হয়তো। বসন্তকালের সেই রাতে হুল্লোড় করতে করতে আমরা ফিরে এলাম, আর গৌতমদার ট্যাক্সি আস্তে আস্তে সেই ধূসর রাত্রে মিলিয়ে গেলো... ... ...
এক রবিবার সকালবেলা আমি আমার বাড়িতে বসে দাবা খেলছিলাম। আমার বাবা ছিলেন আমার খেলার সঙ্গী। ... ...
এই বহুমুখী আক্রমণ অস্বস্তিকর হলেও, হাসিমুখে মজাদার প্রতিক্রিয়া দিতে হয়। সীমা অতিক্রম করলে একটু মৃদু বিষ মিশিয়েও দিতে হয়। অনেক বছর ধরে এটা করতে হচ্ছে। অন্য কোনো সমবয়সী কিম্বা জুনিয়র সহকর্মীর বিয়ের আগে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর আয়োজন হয়। তখন এই উপদ্রব আরও বেশি হয়। সরাসরি বলার সাহস হয় না বেশির ভাগ পুরুষ সহকর্মীর। তাদের কথার মধ্যে থাকে পরোক্ষ প্রশ্নমালা। ... ...
"ও মা, আমায় এই রোবটটা কিনে দেবে?" "না! তোমার প্রচুর রোবট আছে।" "তুমি আমায় কক্ষনো রোবট কিনে দাও না।" "চুপ করো।" যে ছেলেটি বায়না করছে তার প্রচুর রোবট আছে; সে যত রোবট খেলনা পায় তত রোবট চায়। ... ...
তাঁর গল্পের প্রধান চরিত্ররা সকলেই অ্যান্টি হিরো। অসফল মানুষ, জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ মানুষ। সমুদ্র গল্পের লোকটিও তাই, মঙ্গল গ্রহ বা তারিণীর বাড়ি বদল গল্পের তারিণী, সামনে চামেলি গল্পের ক্রাচ বগলে লোকটিও তাই। কিন্তু প্রতিটি চরিত্রই হল গভীর অনুভূতিপ্রবণ। তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় সব সময় সজাগ। এই সব ব্যর্থ মানুষের ভিতর আবার অন্য মানুষও আছে। তিনি ছিলেন জাত শিল্পী। শুধু মাত্র কাহিনি কথনের যখন রমরমা, দগদগে কাহিনি যখন বিক্রি হয়ে যায় হাজার হাজার, তখন প্রায় নিভৃতে তিনি শিল্পের সাধনা করে গেছেন। হ্যাঁ, একমাত্র জীবনানন্দকেই যেন মনে পড়ে যায় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীকে পড়তে পড়তে। আমি যখন জীবনানন্দের জলপাইহাটি উপন্যাসটি পড়ি, সেই ব্যর্থ অসফল মানুষটির কথা পড়ি, তখন মনে পড়ে যায় জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর কথা। ট্রাঙ্ক বন্দী সেই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি উদ্ধার হয়েছিল জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর মৃত্যুর বছর সাত আট বাদে তো নিশ্চয়। শিল্পের কথা যখন বলছি, ‘রাইচরণের বাবরি’ গল্পটির কথা বলি। ... ...
দাড়িওয়ালাদের অবির্ভাব ঘটল। তীব্র অসন্তোষে গনগন করছে ওদের মুখ, আমাদেরও তো ঘর ভেসেছে --- রায়হান গা বাঁচায়, আরে ভাইসাব আমরা তো সামান্য সাংবাদিক। এই যে ছবি টবি তুলে নিলাম এগুলো পত্রিকায় দিয়ে নিউজ করলে আপনাদের জন্যে ত্রাণ চলে আসবে। সুন্দর চেহারার এক দাড়িওয়ালা চোখ ঘোঁচ করে জানতে চায়, কিন্তু লিস্টি যে করলেন আপনারা আমাদের নাম তো লিখলেন না? রায়হান মাখনের মত হাসে, ভাইরে আপনারা ত এখানে ছিলেন না তাই লেখা হয়নি। এবার হবে দেখবেন। কায়দা করে দাড়ি রাখা বেঁটে মত একজন সামনে এসে মারমুখী দাঁড়ায়, এখন ত এসেছি, নিন আমাদের নাম লিখেন লিস্টিতে। ... ...
ফের অন্যায় হল সুদর্শনের সাথে। বিস্মিত পদার্থবিজ্ঞান মহল। সুদর্শন নোবেল না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হলেন অনেকেই। স্থির হল প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে নোবেল কমিটিকে। সেই মতো লেখা হল এক চিঠি। চিঠিতে লেখা হল, “আমরা সবিনয়ে জানাতে চাই... সুদর্শনের আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের মৌলিক অবদানের প্রতি উদাসীন থেকে ন্যায়ের জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছে” কমিটি। ১০ জন (মূলত ভারতীয়) পদার্থবিদের সই সম্বলিত এই পত্র পাঠানো হয় নোবেল দফতরে। প্রতিবাদ জানিয়ে নোবেল দফতরে পত্র লেখেন সুদর্শনও। লিখলেন, “এই বছরের ঘোষণায় আমি প্রকৃত অর্থেই বিস্মিত এবং হতাশ।” ... ...
এখন বুঝতে পারি যে সেবার কানকুনে গিয়ে আমি এই ভিন্নায়নেরই জালে পড়েছিলাম। সেখানে সবই আছে, একেবারে দস্তুরমতো, ঝাঁ-চকচকে, কিন্তু, আমি যেন থেকেও নেই। আমি যেন সব পেতে চাই, কিন্তু কোথায় যেন বাধে। আমার একইরকম পোশাক-পরিচ্ছদ, একই বুলি, একই পড়াশুনো, একই গবেষণা - তবুও আমি আর সবার থেকে দূরে, আর সবার থেকে ভিন্ন। দস্তয়েভস্কির লেখায় যেন এক ভিন্নায়িত মানুষেরই মনের গোপন অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ভয়মিশ্রিত বিস্ময়বিষাদের অনুরণন ধরা পড়ে। ... ...
মিলান কুন্দেরার মত তকতকে স্বচ্ছতার সাথে খুব কম ঔপন্যাসিককে পড়া যায় । তাঁর গদ্য জলের মত পাতলা, স্পষ্ট, সহজবোধ্য, সহজপাঠ্য। তাঁর তীক্ষ্ণ, কড়া, অব্যাহতিহীন সুশৃঙ্খল বুদ্ধিমত্তা পাঠককে একইসাথে উত্তেজিত এবং উত্যক্ত করে। কুন্দেরার ন্যারেটিভ ভয়েস মনোরমভাবে অন্তরঙ্গ, কখনও আবার স্বীকারোক্তিমূলক, হামেশাই আনন্দ ছলনা সম্মোহিনী প্রতারণা প্রবণ — প্রলোভিত করে। কুন্দেরা শহুরে, কুন্দেরা রুচিশীল, যুক্তিসঙ্গত। পরিশীলিত সতর্ক বিদ্রূপে তাঁর গুরু গাম্ভীর্য কম, সঙ্গে নাস্তিকবাদের হতাশার প্রান্তে ঘোরাফেরা করা চিন্তা — গল্পকার হিসেবে এ এক অমোঘ অবদান। ... ...
লারপেন্ট সাহেবের দপ্তরের ভার নিলাম আমি। প্রথম দিন অফিসে ঢুকে মনে হল ভুল করে কোন ছাপাখানায় চলে এসেছি না তো? পর পর দাঁড়িয়ে আছে ফোটোকপি মেশিন। হু হু করে কপি হচ্ছে দিস্তে দিস্তে কাগজ। বান্ডিল বান্ডিল অডিট রিপোর্ট। ৩৩৫৪ টা গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩৪১ টা পঞ্চায়েত সমিতি আর ১৮ খানা জিলা পরিষদ। পৌরসভা আর কর্পোরেশনও পিছিয়ে নেই। চারদিকে শুধু কাগজ কাগজ আর কাগজ। বসার জায়গা নেই, চলা ফেরার জায়গা নেই ।ফাইলের পেছনে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানুষের মাথা। উন্নয়নের খতিয়ান কাগজবন্দি করে চলেছে লোকাল অডিট অফিস। এমন অদ্ভুত অফিসে এর আগে কাজ করিনি। ... ...
কোথা দিয়ে কেটে গেছে দুটি বছর, টেরও পাইনি। সাক্ষাৎ পরিচয় হয়েছে এক অনবদ্য পরিবারের সাথে। আমার জানা নেই, এমন পরিবার কোলকাতা শহরে আর দ্বিতীয় আছে কি না। সাহিলের বাবা মারিয়ো পিটার পেরিওয়াল ধার্মিক খ্রিস্টান। ভালোবেসে জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছেন শেহনাজকে। শেহনাজ ধর্মে মুসলিম। পিটারের মা বাবাও পরস্পরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। এবং পিটারের মা কিন্তু খ্রিস্টান নন, মাড়োয়াড়ি। পিটারের শ্যালক, মানে সাহিলের মামা আবার যাঁকে বিয়ে করেছেন, তিনি ধর্মে হিন্দু এবং বাঙালি। দু'বছরে ঈদ, ক্রিসমাস, বিজয়া দশমী, তিনটি উৎসবের নেমন্তন্ন পেয়েছি ওদের বাড়িতে। এমন নয় যে পরিবারে কেউ ধর্মের ধার ধারেনা। একই ছাদের তলায় নামাজ পড়া এবং রবিবারে চার্চে যাওয়া নিত্যকারের কাজ হিসাবেই দেখতাম আর অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম, এও সম্ভব!! ... ...
সুবা বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানান দোষগুণ বহুল আলোচিত এবং এই নিয়ে প্রচুর লেখাও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ ইতিহাসের সহজলভ্য জনপ্রিয় সূত্রগুলি দেখলে, সেখানে সচরাচর তাঁকে নিয়ে একতরফা বিরূপ অভিমতই চোখে বেশি পড়ে, যেমন- সর্বসাধারণের তথ্য সংগ্রহের প্রধান উৎস উইকিপিডিয়া তে সিরাজ যে তথ্য পাওয়া যায় তা বাঙালির পক্ষে খুব স্বস্তিকর নয়। শুধু সিরাজ নয়, ওই শতকের বাংলার ইতিহাস আমরা সচরাচর যেভাবে পাই তা যেন বাংলা ও বাঙালির প্রতি একটু বেশিই বিরূপ। ইতিহাসের student হয়ে ইতিহাসচর্চা করতে গিয়ে জেনেছি ঐতিহাসিক বিবরণ লেখার প্রধান শর্ত হল নিরপেক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব ত্যাগ করা। সময় বা মহাকাল ও সেই নিয়ম মেনে চলে। তবে ওই অষ্টাদশ শতকের বর্ণনা একটি জাতির প্রতি কীভাবে এত বিরূপ হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে, খটকা লাগে। এই লেখা সেই খটকা, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। ... ...
প্রতিদিন কোথাও না কোথাও খবর আসছিল প্রতিবাদের। উত্তর-পূর্ব দিল্লীর জাফরাবাদ, চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, পুরোনো মুস্তাফাবাদ, সেলামপুর, তুর্কমান গেট, করডমপুরি, সুন্দর নগরী, লালবাগ, উত্তর-পশ্চিম দিল্লীর ইন্দরলোক, দক্ষিণ দিল্লীর নিজামুদ্দিন, হৌজরানী, উত্তর দিল্লীর সদর বাজার। সারা দেশ দেখছিল জামা মসজিদ চত্বর, ইন্ডিয়া গেট- শ্লোগানে, গানে উত্তাল! উত্তাল সারাদেশ! তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। কলকাতাতেও পার্ক-সার্কাস, রাজাবাজারে আমরা দেখেছি শাহিনবাগের মতোই সংখ্যালঘু নারীসমাজের নেতৃত্বে নানাবিধ প্রতিকূলতাকে জয় করে দীর্ঘমেয়াদি অসামান্য প্রতিবাদী জমায়েত। ... ...
বাড়ি সাজানো ছাড়াও চাইনিজ নিউ ইয়ারের আরো দুই আবশ্যিক অঙ্গ ছিল ফায়ার-ক্র্যাকার এবং লাল রঙের এনভেলপ। এই নিউ ইয়ার সাধারণত জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারি মাসেই আসত বলে, আমাদের অনেক চাইনিজ বন্ধু ইংরাজি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনের সময় যে আতসবাজি বিক্রি হত, সেগুলি কিনে স্টক করে রেখে দিত। তবে চাইনিজ নিউ ইয়ারে চাইনিজ দোকানগুলিতে ফায়ার-ক্র্যাকার পাওয়া যেত কিনতে – সেখান থেকেও আমরা কিনে নিয়ে আসতাম। আর সেই লাল রঙের খামে থাকত ‘টাকা’ – এটা একটা ট্র্যাডিশন ওদের, যেখানে বাড়ির বড়রা ছোটদের এই টাকা গিফট করে, তবে ছোটদের ছাড়াও প্রিয়দের এই খাম দেওয়ারও ট্র্যাডিশন আছে। সেইমত আমরা আমাদের চাইনিজ বন্ধুদের থেকে পেতাম খুব সুন্দর হাতে নাম লেখা, চাইনিজ লিপিতে। ... ...
খবর শুনে মা কাঁদল না, তবে পরের দিন আমাদের বস্তিতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা হল। পেট পুরে খেল ওই দুজন লোক, তারপর চলে গেল। আমি ততদিনে সেকেণ্ড ক্লাশ, মানে ক্লাশ নাইন-এ উঠেছি। মা আমাকে বলল, আমাকে যুদ্ধে যেতে হবে। আর যেতে হবে মেসপটমা না কী বলে, সেই আরব দেশেই। শুধু আমাকে বলেই ক্ষান্ত হল না মা, বস্তির সবাই জানল পিংলাকে তার মা যুদ্ধে পাঠাবে। আমাদেরই বস্তির মাতব্বর গোছের একজন শুধু মাকে সাবধান করে দিল, এখনই কিছু কোরো না, কেউ যদি বলে দু পয়সা খরচ করলেই সে তোমার ছেলেকে যুদ্ধে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেবে, বিশ্বাস কোরো না তাকে। আঠের বছর অন্তত বয়েস না হলে যুদ্ধে নেয় না। আর তা ছাড়া সাহেবরা সব দেশের ছেলেদের নেয়, কিন্তু বাঙালিদের নেয় না যুদ্ধে। বাঙালিদের জন্যে শুধু ইশকুল আপিস আর কোর্টের কাজ, সাহেবরা বাঙালির হাতে বন্দুক দেবে না। ... ...
লক ডাউন ও বইমেলা মিলিয়ে শক্তি দত্তরায়ের দুইখানা বই প্রকাশিত হয়েছে খবর পেয়ে একটু চেষ্টা করে দুটিই সংগ্রহ করা গেল। বইদুটি হল ‘পিরবতীর নাকছাবি ও অন্যান্য’ প্রকাশক নান্দীমুখ প্রকাশনী এবং '৪৬ হরিগঙ্গা বসাক রোড' প্রকাশক গুরুচন্ডা৯। প্রথম বইটি হার্ড বাউন্ড, চোদ্দটি ছোট গল্প নিয়ে। অধিকাংশ দুই কি তিন পাতার ক্ষীণতনু গল্প, দুই একটি সাত কি আট পাতার। গল্পগুলি একবসায় পড়ে ফেলা যায় বটে, কিন্তু তারপর এক একটি গল্পের গুরুভার চেপে বসে মনের উপরে, হাঁসফাঁস লাগে যেন। রয়েসয়ে পড়লেই ভাল হতো মনে হয়। ... ...
তামিলনাড়ু সরকারের মন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ প্রসঙ্গে মন্তব্যের জেরে জোর শোরগোল পড়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন এই বলে যে, বিরোধী রাজনৈতিক জোট ‘সনাতন ধর্ম’ ধ্বংস করতে সচেষ্ট। তুমুল রাজনৈতিক বাদানুবাদের মধ্যে ‘সনাতন ধর্ম’ বিষয়টি প্রসঙ্গে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ... ...
না, আমি কবিতারও কেউ নই। কবিতা কস্মিনকালেও আমাকে ডাকেনি তার সাতমহলা নাটমহলে। অথচ হাভাতে, হাঘরে আমি তার হিমজানালায় গাল ঠেকিয়ে দেখেছি অন্দরের তারা ও তুবড়ি, পানপাত্রের ক্রিস্টাল আর কলস্বনা মেয়েদের; তাদের শাড়ির ভাঁজের খসখস, তাদের হাসির ঠমক যে রূপোর ঘন্টার কেলাসিত টুং টাং-এসবই হল জনশ্রুতি। জনশ্রুতিকে আমি সত্যি হতে জেনেছি, জানালার কাচে গাল ঠেকানো বোকাহাবা ছেলে । আর বাইরে অবিরাম ঝরে গেছে বরফ। সাদা হয়ে গেছে মাঠঘাট। জ্যোৎস্না ও তুষারে। না, আমি রাজার বাড়ির বরাতি নই। সোনার জলে ছাপা নেমন্তন্নর চিঠি আমার জন্য আসেনি কখনো। তবু ঘুমের ঘোরে কখনো তো শুনেছি রাতের শেষ ট্রেনের বাঁশি; আমার বাড়ির পাশ দিয়ে, আমার জানালার ফাঁক দিয়ে, আমার মশারির চাল আর মনসার ঘট ছুঁয়ে সে আবার মিলিয়ে গেছে দূরে, দিগন্তের দিকে। একবার, শুধু একবার। এ বেঁচে থাকায় শুধু একটিবার। ... ...