আমাদের চারদিকে সারাক্ষণ খড়মড়ে মত বাস্তব ছড়িয়ে আছে। কাগজে, রুপোলী বা সোনালী পর্দাতেও। আমি তাদের সাথে কথা বলি। অন্য সবার মত। কথা বলি, হাঁটি একসাথে কিছুটা, কখনো কখনো তাদের বাড়ি লৌকিকতা করতে যাই। কিন্তু ওদের আমি ভালোবাসিনা। কঠোর বাস্তব, তাকে আমি ভালোবাসিনা। সমাজের খাতায় আমার অনেক রকম নাম লেখা আছে। বোকা, ভিতু, ক্যাবলা, অসুস্থ মস্তিষ্ক, এইসব। তবু আমি ঐ তাদের ভালোবাসি। কোমল অবাস্তব গল্পদের। রূপকথা, উপকথা, লোককথা, পুরাণ। তাতেও খড়মড়ে আছে, ধারালো, ছুঁচলো, টগবগে গরম, এসব আছে। তবু কেমন যেন মনে হয় জলের ভেতর দিয়ে শোনা শব্দের মত হয়ে যায় ওরা। নরম, ফিসফিসে। আমার মনে হয়। আমি অবাস্তব গল্পদের ভালোবাসি। রূপকথাদের । ... ...
কড়ে আঙুলে গুনে গেঁথে রাখি কয়টা পুজো দেখলাম। স্কুলে সব্বাই জিগ্যেস করবে তো "কটা ঠাকুর দেখলি রে"? অথচ, কোনোবারই সংখ্যা দশ ছাড়ায় না। অথচ, অন্যেরা কত কত ঠাকুর দেখে। চারদিনই দেখে। কলকাতায় থাকতাম সময়ে তো একদিন বাবা নিয়ে বেরোত। তাও প্রায় দিনেদিনেই। সন্ধ্যের পর থেকে তো বাবা যাবে 'বনফুলে'। বিজয়ার দিন বাবা নিয়ে যেত আউট্রাম ঘাটে, আর অল্প একটু অন্ধকার হতেই ফেরত। সেখানেও মাত্র ২-৩ টে ঠাকুরই দেখা হত। অত তাড়াতাড়ি শুধু বাড়ীর ঠাকুরই দুই একখান আসে তো। ... ...
শ্রেণি বিভাজনে আজ যদি প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-প্রলেতারিয়েত, লুম্পেন-বুর্জোয়া, বুর্জোয়া, পেটি-বুর্জোয়া ইত্যাদি বলা হয় তাহলে মানুষ যার পর নাই বিরক্ত হবেন। আবার সেইসব বস্তাপচা বিশেষণ! এসব বিংশ-শতাব্দীর ব্যাপার, একবিংশ শতাব্দীতে এইসব চলে না। একবিংশ শতাব্দী হল উত্তরাধুনিকতার যুগ এবং উত্তরাধুনিকতা বামপন্থা বা মার্কসবাদকে আধিপত্যকামী বা হেজিমনিক মনে করে ও বিরোধিতা করে। ব্যাপার যে এখন আরও অনেক জটিল এবং উক্ত বিশেষণগুলি যে এখন আর এদের সম্যক পরিচয় বহন করে না জগার মত সিন্ডিকেট-বস বা বিউটি (দেশান্তরিত ও অত:পর স্বামী কর্তৃক বিক্রিত), মালাদের মত একবিংশ শতাব্দীর শহুরে যৌনকর্মীদের দেখলে অবশ্যই বোঝা যায়। সত্য বিউটিদের সঙ্গে জগা গণেশ এবং চাঁদু সোমাদের সঙ্গে সুধাময়দের পরিবার - দুটি আলাদা উলম্বে স্থাপিত। ... ...
সুভাষ মুখোপাধ্যায়। জীবনের অন্তিম পর্বের একগুচ্ছ কবিতা। তবু এর পাঠে কদাচ বোধ হয় না এ কোনো অশীতিপরের রচনা। বরং যেন এক পথ-ভোলা পর্যটক, জগতের অসংতিগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুতা পাতিয়ে ফেলেছেন নীরবে। এবং তারই মধ্যে সম্পৃক্ত তাঁর কবিতার অতি-পরিচিত রাজনৈতিক দর্শন, শ্লেষ, ব্যঙ্গ, রসিকতা, ব্ল্যাক হিউমর, এসমস্ত কিছুই। পড়লেন হিন্দোল ভট্টাচার্য। ... ...
বাড়িতে অনেকে কানাঘুষো করলেও আমার খুব ভাল লেগেছিল যখন জানতে পারলাম বিয়ের পর দিদি-জামাইবাবু এই বাড়িতেই থাকবে। আমার কাছে তো এটা মেঘ না চাইতেই জল ছিল। এক তো দিদি বাড়িতেই থাকবে আর উপরি হিসেবে ডাক্তার জামাইবাবু। বিজ্ঞানে লবডঙ্কা এই শালিকে কি দয়া করে একটু পড়া দেখিয়ে দেবে না? যখনই সময় পেতাম ঘুরঘুর করতাম নতুন দম্পতির আশেপাশে। জামাইবাবুও আমাকে খুব পছন্দ করে। দোকানে নিয়ে যায়, পড়া দেখিয়ে দেয়, কত গল্প বলে। আর কত কত গল্পের বই আছে জামাইবাবুর কাছে। এর মধ্যে এসে যায় অন্যরকম একটা দিন। দুপুরবেলা দিদি-মা-জ্যেঠিমারা বাইরে যেতে ডাক পড়ে আমার নতুন জামাইবাবুর ঘরে। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাই। ... ...
মানসিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমত অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে, দ্বিতীয়ত অনেক সময় আদৌ নেওয়াই হয় না। পুলিশ চায় আপোষ মীমাংসা করে নেওয়া হোক, ক্ষতিপূরণ দিয়ে মিটিয়ে ফেলা হোক। সুতরাং পুলিশি চিন্তা ভাবনারও বদল চাইছেন ওঁরা। চাইছেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ... ...
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন। ... ...
কবিতা লেখা ও পড়ার, কবিতার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবার পরেই অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন আসে, তার বহুমুখী অভিঘাত নিয়ে। যেহেতু কবিতা একটি মাধ্যম যেখানে একজন লেখক ও পাঠক একটি স্বতন্ত্র পথে নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করছেন, তাই এই বিষয়ে কোন সাধারণ উপলব্ধি বলে কিছু হয়না। আমরা এরকম বলতে পারিনা যে জীবনানন্দের বনলতা সেন যা বলতে চেয়েছিলেন তার "মানে" ঠিক এই। কবি ও পাঠকের কথোপথন অনেকটা দুটি মানুষের মধ্যে একান্ত নিভৃত টেলিফোনে বাক্যালাপের মত হয়ে দাঁড়ায়। আগে একটা সময় মনে করা হত এই কথোপকথনের নিজস্ব ব্যাকরণ থাকা উচিত, কালক্রমে সেই মজবুত বাঁধন অনেক আলগা হয়েছে। এখন লেখক ও পাঠক দুজনের ব্যক্তিগত যাপন ও দর্শনের প্রত্যক্ষ প্রভাব নির্দিষ্ট করে দেয় লেখায় কী থাকবে, পাঠকের সেই জিনিস ভালো লাগবে কিনা, এবং ব্যাকরণ বহির্ভূত কবিতা বলে সেইভাবে আর হয়ত কিছু নেই, যদি কবিতার সার্থকতা ভালো লাগা দিয়ে নির্ধারিত হয়। অবশ্য ভালো লাগার বাইরেও, শিল্পবোধ বা বহুদিন ধরে মানুষকে ভাবিয়ে তোলার নিরিখেও কবিতার ভালোমন্দ বিচার হয়, এবং কী সেই আশ্চর্য ভারসাম্য যা কবিতাকে কালজয়ী ও পাঠকের অন্তরঙ্গ করে, সেই কূট তর্ক আপাতত আমরা সরিয়ে রাখবো। নাট্যমঞ্চে যেমন আলোর বৃত্ত ফেলে ফেলে ঠিক করা হয় দর্শকের কী দেখা উচিত, সেইভাবে জীবনদর্শনের ফোকাস দিয়ে কবি ঠিক করেন কী লিখবেন, পাঠক ঠিক করেন সে জিনিস তার পছন্দের কিনা। এই দ্বন্দ্ব, এই কখনও ভালো কখনও খারাপ লাগার চর্চাকেই কেউ কেউ কবি ও পাঠকের মধ্যে ঘটে চলা নিরন্তর লড়াই বলেছেন। উৎসব সংখ্যা দ্বিতীয় পর্বের কবিতা। এই পর্বে লিখেছেন যশোধরা রায়চৌধুরী, চিরশ্রী দেবনাথ, হিন্দোল ভট্টাচার্য, সাম্যব্রত জোয়ারদার, হীরক সরকার, সোমনাথ রায়, জগন্নাথদেব মন্ডল এবং সোনালী সেনগুপ্ত। ... ...
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন। ... ...
গত সপ্তাহে ট্রেনে করে দিল্লী থেকে হরিয়ানায় নিজের বাড়ি ফেরার পথে, চলন্ত ট্রেনের মধ্যে একদল দুষ্কৃতির মারধোর ও ছুরির আঘাতে ১৬ বছরের ছেলে জুনেদ খান মারা যায়। দুষ্কৃতিদের সন্দেহ ছিল যে জুনেদদের কাছে গো-মাংস রয়েছে। এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে ২০১৭-র ২৮শে জুন, দিল্লীর জন্তর মন্তরে "#NotInMyName" শীর্ষ নামে এক বিশাল সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে জুনেদের বন্ধু মহম্মদ আজহারউদ্দীন একটি চিঠি পাঠ করেন। সেই পাঠ শুনে সমাবেশে উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। স্বর্গ থেকে জুনেইদ তার মা-কে চিঠি লিখলে কী লিখতে সেটাই এই চিঠির মূল বিষয়। উর্দুতে লেখা এই চিঠির ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন আলিয়া খান ... ...
"সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয় লেখক কবিদের বইয়ের নাম অক্লেশে ব্যবহার করতে পারেন। জীবনানন্দের 'কারুবাসনা' শঙ্খ ঘোষের 'দিনগুলি রাতগুলি'র মতো তাঁর দুটি উপন্যাসের নাম। এক সহবাসী সঞ্জয়ের মৃত্যু দিনে কথক বুনো এক কল্পিত তরুণী কস্তুরীকে দেখতে পান। পাঠক বোঝেন এ বিভ্রম। কিন্তু বুনোর বন্ধু সিদ্ধার্থ বোঝে না।" সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিনগুলি রাতগুলি, পড়লেন ইমানুল হক। ... ...
জয় শ্রীরামের ভিরাট দেশে আইন কানুন সর্বনেশে! কুর্তা টুপি পরলে তাকে নেহরু ভেবে ক্যাম্পে রাখে ... ...
আজ ৬ই পৌষের নিদ্রাহীন রাতে, ৭ই পৌষ সকালের প্রার্থনায় অনুপস্থিতির জন্য তেমন মনখারাপ না হলেও, যে দেবতা অগ্নিতে, বনষ্পতিতে, চরাচরে ব্যপ্ত, তাঁর কাছে বা নিজেদের ই কাছে প্রশ্ন ঐ একটাই, যে প্রজন্ম আঘাত পেল, আঘাত পেয়েও স্বপ্ন দেখতে ভুললো না, আমরা ঠিক কতটা আত্মবিস্মৃত হলে , কতটা ক্ষমতালোভীর নৈকট্যের আকাংখায় নিমজ্জিত হলে, আজকে এই খানে এসে দাঁড়াতে পারি। উত্তরের খোঁজ টা সম্ভবত শুধু নিস্তব্ধ ভোরের একাকী স্তবে আটকে থাকবেনা, তাকে কলরব হতে হবে। ... ...
‘রাইডিং দ্য ওয়াইল্ড হর্স মেডিটেশন’ আমি আর কখনো করিনি। ঐ পাঁচদিন আমার শরীরের, মনের ওপর যে ছাপ ফেলেছিল – তার জের সামলে উঠতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম, যে জীবনকে আমি এতদিন যা বলে জেনে এসেছি, তা ঐ পাঁচদিনে একেবারে শেষ হয়ে গেছে। সেই ‘আমি’ শেষ হয়ে গেছে তার সঙ্গেই। আমি বুনো ঘোড়ার পিঠে উঠতে গেছিলাম। বুনো ঘোড়ারা আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ঐ ধুলোর মধ্যে এখন রয়েছি পড়ে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের ক্রিচারের মত এই ‘আমি’। নিজের অচেনা। নতুন। হ্যাঁ, ঐ বুনো ঘোড়া আমার জন্মদাতা। ... ...
বিরতির সময় পলাশের সাথে দুই সেকশনের কয়েক জন খেলোয়ারের মধ্যে কী কথা হয়েছে সেটা হারাধন জানে না। কিন্তু খেলা আবার শুরু হবার পর থেকে দেখা গেলো বল বার বার তার প্রান্তে চেপে আসছে। হারাধন প্রাণপনে বল ফেরাতে থাকে। একপর্যায়ে বলের দখল নিয়ে সৃষ্ট এক জটলায় কেউ একজন হারাধনকে খুব জোরে ধাক্কা মারে। তাল সামলাতে না পেরে সে পড়ে যেতে হঠাৎ কে যেন তার বাঁ হাতের উপর লাফিয়ে পড়ে। সেটা কি সেকশন-এ’র মোটকা সাদমান নাকি সেকশন-বি’র বখা বাদল সেটা বোঝা যায় না, তবে হারাধনের কবজিতে কড়াৎ করে একটা শব্দ হয়। তারপর তীব্র ব্যথায় তার আর কিছু মনে থাকে না। ... ...
স্যার, এইবার আমি আমার পিতার কথা বলব, আমার মনে হচ্ছে যে মানুষের জীবনের সাথে তার পিতার জীবন জড়িত, ফলে আমার বিষয়ে বলতে গেলে আমার পিতার কথা আসবে, আমার বিষয়ে বুঝতে আমার পিতার বিষয়ে বুঝতে হবে। আপনি কি মনে করেন এই ব্যাপারে? বলব কি স্যার? হ্যাঁ, হ্যাঁ, বলুন। আমার পিতার নাম ছিল আরশাদ মিয়া। তবে লোকে তাকে ডাকত কাবিল কবিরাজ নামে। তিন গ্রাম গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াইতেন আর অনেক অনেক লতাপাতা সংগ্রহ করতেন। আর আমাদের বাড়ির পাশে ছিল সামান্য ধান্য ক্ষেত। সেখানে চাষবাসও করতেন অল্প অল্প। আচ্ছা এই মুহুর্তে, এই ধান্য জমির কথা স্মরণে আসায় আমার দাদাজির কথা মনে হলো আমার। তিনি আমার পিতার পিতা। ফলে তিনিও আমার সাথে সংযুক্ত, তাই ধান্য জমি সংশ্লিষ্ট অদ্ভুত ঘটনাটি আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, বলব কি স্যার? ওকে বলুন। ... ...
বেগম কোম্পানি সাহেবের রাতের খানায় রাখবেন রোগনি রোটি, শামি কাবাব, বড় ডেগচিতে সারা রাত জারানো মাংস আর শালগম দিয়ে বানানো শাবডেগ। সঙ্গে মাহি পোলাও। ভাগীরথীর টাটকা মাছের পোলাও, কাঁটা ছাড়া, সুগন্ধি মশল্লায় জাফরানে আর গোলাপজলে আদুরে মখমলি মাছ ফিরিঙ্গি জিভে জমবে ভালো। বেগমের ইচ্ছে ছিল বারো ঘন্টা ধরে তরিবৎ করে বানানো সাত খানা পরত দেওয়া মিঠি পরোটাও রাখা হোক। হ্যাঁ, তাও হচ্ছে বৈকি শেষ পর্যন্ত! ... ...
আমার সম্পর্কে আমি যা জানলাম তা হল, আমি মানুষকে আত্মহত্যাচিন্তা দূর করতে সাহায্য করতাম। গায়ে আগুন দেওয়ার আগে, বসার ঘরে দাঁড়িয়ে গায়ে কেরোসিন ঢালার পর, কেরোসিনের বোতল রান্নাঘরে আমি রেখে আসলেও আসতে পারি। আমার স্বামীরও আমার মতো একাধিক নিজেকে খোঁজার ও খুঁজে পাওয়ার বাতিক আছে। কারণ আমার স্বামী প্রথমবার দাবী করেছেন তিনি ঘটনার সময় অন্য ঘরে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। পরে আবার এটাও দাবি করেছেন, ঘটনার সময় তিনি সিগারেট কিনতে বাইরের দোকানে গিয়েছিলেন। আমার ছোটোবেলার বন্ধুদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল বরাবর। তারা প্রত্যেকে আমার উপর এতকাল ধরে হয়ে আসা অত্যাচারের খবর জানতো। আমি আমার স্বামীর নামে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি আগে একাধিকবার। আমার স্বামী প্রতিবার জামিন পেয়ে ফিরে এসে আরও আরও আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে আমি বাধ্য হয়ে আমার এক বন্ধুর বাড়ি চলে গেছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে আমার কর্মস্থল দূর হয়ে যাওয়ায় আমাকে ফিরে আসতে হয়। স্রেফ এই কারণে আমি সেদিন আমার অভিজাত আবাসনে উপস্থিত ছিলাম। এই কারণে সেদিন আমি আমার গায়ে আগুন লাগাতে পেরেছি। এছাড়া আমার মৃত্যুর আর কোনো কারণ নেই। ... ...
কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে অপহরণের কোনও আপাত সম্পর্ক নেই, তবে এই কাহিনিতে আছে। আসলে পুরো ধানাই পানাই জুড়েই কাকতালীয় ঘটনার ছড়াছড়ি। সব এখানে লেখা সম্ভব নয়, তবু কিছু তুলে দিলাম। আমার এক বন্ধু, তার নাম বাবলু, ভাল নাম বি- আচ্ছা থাক। বাবলুই চলুক। আমি নিজের বাড়িতে ফোটো ল্যাব বানানোর আগে ওর বাড়িতে ছবি প্রিন্ট করতে যেতাম। ডার্ক রুমটা ছিল ছাদের ওপর। ছবি ছাপার সঙ্গে সঙ্গে গপ্পো গুজবও চলত সমানে। ওর আসল নামটা যেমন উল্লেখ করলাম না, বাড়িটা কোথায় ছিল, সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাচ্ছি সঙ্গত কারণেই। ... ...
বাঙালি এতকাল ভোটমগ্ন ছিল। ঘুম ভাঙছে এতদিনে! যখন বলা হচ্ছিল, মহারাষ্ট্র দিল্লি গুজরাট মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা ট্রেনের যাত্রী দের সবাইকে অন্তত 'ৱ্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট' করে ট্রেনে ওঠানো হোক, সবাই ভোটধ্যানে ছিলেন। আগেরবারের অভিজ্ঞতা বলছে, একমাস আগে থেকে এবার অন্তত এয়ারপোর্টে টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক হলে এত রোগ ছড়াতে পারত না বাঙলায়। এসব বলতে গিয়ে 'জিঙ্গল বেল আইটি সেল' এর খাতায় নাম তুললেন যারা, তাদের গাল দিন মনের সুখে। শুধু মাথায় রাখুন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। মাস্ক না - পরে, দূরত্ববিধি না মেনে যারা ঘুরে বেড়িয়েছি যত্রতত্র, দিল্লি বাঙলা ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে গেলেন যারা, সঙ্গে আনা বহু স্ট্রেনের করোনা ভাইরাস তাদের অনেককেই রেয়াত করবে না। 'ভাইরাসের স্মৃতি নেই', বিলকুল ঠিক, তবে ভাইরাসটা কিন্ত মানুষ মারতে আসে নি, এসেছে নিজেদের বাঁচাতে। নিজে বাঁচতে মরণকামড় এবারও হয়তো দেবে না, এখনো পর্যন্ত সংক্রমিত মানুষের মৃত্যুহার কুড়ি সালের তুলনায় সামান্য বেশি, খুব বেশি নয়। তবে, এই ঢেউই শেষ নয়, লাইনে আছে আরও অনেক বাস্তুচ্যুত ভাইরাস, গোটা বিশ্ব জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে একের পর এক স্ট্রেন, কোনটা নবজাতক, কোনটা হাইব্রিড, বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে চলা বিজ্ঞানীরা। ... ...