একদিন হল কী, আমি দোতলায় বাচ্চাদের মাংস রান্না করেছি, তেল কড়াটা বারান্দায় একপাশে সরিয়ে রেখেছি। কর্ণাকে নিয়ে কোনো ঝামেলা ছিলনা। একজায়গায় বসিয়ে খাইয়ে, মুখ মুছিয়ে, পিঠ চাপড়ে দিলেই ঘুমিয়ে পড়তো। ওর পর্ব মিটিয়ে ছুটকীকে নিয়ে পড়তাম। ও দৌড়োতো, আমিও থালা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতাম। মেয়ে মাংসের তেলকড়া নিয়ে তেল মাখতে বসল, সেই ফাঁকে আমি দুটো দুটো গাল মুখে ঢুকিয়ে দিই। এমন সময়ে রুণাদা বাটি ভরা টমেটোর চাটনি দিয়ে গেল। আমি জানি রুণাদা যে বাটিটাতে চাটনি এনেছে, সে বাটিটাও আগে খাবার জলে ধুয়ে নেয়। এখানে সমুদ্র কাছে বলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি। তাই মাটির স্তরে জল প্রাকৃতিক ভাবে ফিল্টার হবার সুযোগ পায়না। টিউবয়েল খুঁড়লে এক পাইপে জল পাওয়া যায়, লোকে তাই আরও গভীরে যাবার জন্য খরচ করেনা। আর এই জল খেয়ে ঘরে ঘরে পেটের বালাই। আমরা যতদিন থাকি খাবার জল কিনতে হয়। বাড়িতে খরচ করে মেশিন বসাতে ভয়। পরের বার এসে হয়তো দেখবো, ভোল্টেজের জন্য মেশিন পুড়ে গেছে, বা ঝেড়ে মুছে সব ফাঁকা। ... ...
মূল বইটির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে পারি যে, ইংরাজি বইটি ২০২১ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের আগে করণ থাপার, বরখা দত্তের মত সাংবাদিকরা আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। দ্য উইক ম্যাগাজিনে কভার স্টোরি হয়। অ্যামাজনে বইটি অনেকদিন ধরেই বেস্ট সেলার হিসাবে আছে এবং বিক্রিও ভালই হচ্ছে। মারাঠি, পাঞ্জাবি, বাংলা, কন্নড় ও হিন্দীতে অনূদিত হয়েছে। তামিল অনুবাদ-ও শীঘ্রই আসছে। বইতে আপত্তিজনক কি কি আছে তা যদি কেউ তুলে ধরতে পারতেন তাহলে ভালো হত। আমি বলতে পারি, এই বইতে এমন কিছুই নেই যাতে একে মাওবাদী বলা যায়। বইটির উপসংহার বলছে যে পরিবর্তনের জন্য আনা যে কোনও সামাজিক প্রকল্প সফল হতে গেলে তাতে ব্যাক্তিত্বের স্বাভাবিকতা, অকপটতা, সততা, সারল্যের মত ভ্যালু বা মূল্যবোধের স্থান থাকতেই হবে – এমন কিছু গুণ যা আমি আমার প্রয়াত স্ত্রী অনুরাধার মধ্যে দেখেছিলাম। সেই সাথে, স্বাধীনতার অন্যতম উদ্দেশ্যই হতে হবে অধিকাংশের জন্য সুখ/আনন্দ। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাদের কি অসুবিধা? তদুপরি, এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে মূল বিচার্য ছিল অনুবাদের উৎকর্ষ। তিনি এই কাজটি করেছেন একজন পেশাদার অনুবাদক হিসাবে। যাঁর জীবিকা অনুবাদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁর থেকে পুরস্কার কেড়ে নিয়ে সরকার কি বার্তা দিতে চাইল? ... ...
ফরিশতা ও মেয়েরা! কোথা থেকে যে শুরু করি বুঝে উঠতে পারছিনা। বইটি ঘরে ফেরত আসার পর আবার একবার গোটা বইয়ের তেরোটি গল্প তাড়িয়ে তাড়িয়ে পড়লাম। দ্বিতীয় বারের পড়ায়ও ততটাই নতুন লাগলো যা কিনা প্রথমবার লেগেছিল। বরং বেশ কিছু বিষয় আরো আরো স্পষ্ট হয়ে ধরা দিলো। চারপাশের নতুন নতুন অধরা বিষয়গুলো তাঁর গল্পে স্থান পেয়েছে। ... ...
নূরবানুর মনে পড়ল। তাঁর কিশোরীবেলায় দাদার হিন্দু বন্ধুরা বাড়ি থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে এসে মুরগির মাংস খেয়ে যেত তাঁদের বাড়িতে। কিশোরী নূর তখন রূপের ছটা ছড়ায়। তার দিকে আড়চোখে তাকাতও হিন্দু ছেলেদের কেউ কেউ। কিন্ত ঐ তাকানো পর্যন্তই। টুবাইয়ের ছোট দাদুও আসতো। মলিনার ছোট খুড় শ্বশুর। দিব্যি হাট্টা কাট্টা জওয়ান ছেলে। নূরবানুর বেশ ভালোই লাগত তাকে। অসময়ে পটাশ করে মরে গেল লোকটা। তাকানোর ভঙ্গী ভারি ভালো ছিল তার। ... ...
আজ মহামহিম গৌতম আদানির কর্মকান্ডের ওপর নির্মিত ফোর কর্ণারের তথ্যচিত্র ডিগিং আদানি দেখে প্রত্যয় হলো যে এই একটা বিরাট ভুল আমি করেই চলেছি। যেভাবে শকুনের ফিস্টির, মানে পরিবেশ ও মানুষ খাওয়া উন্নয়নের ছবি পরতের পর পরত উঠে এলো স্ক্রিনে, তাতে আমি নিশ্চিত যে এইরকম বহুকেলে ছাপ (লাস্টিং ইমপ্রেশন) রেখে যাওয়া আর কোনো মাধ্যমের পক্ষে বিরল-সম্ভব। যেমন, বেঁটেখাটো গোলগাল ফর্সাপানা একটি লোক, বিন্দুমাত্র হাসলে যার ঠোঁটের দুদিকের কোণ উন্মুক্ত হয়ে থাকে, সেইই হলো সেরা প্রফিটজীবী গৌতম আদানি, পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা যার সম্বন্ধে বলেছেন, এমন কোনো কাজ নেই যা সে প্রফিট- মেকিংয়ের জন্য করতে পারেনা। এবার থেকে ধনের দেবতা কুবের আর ঠোঁটখোলা হাসি হাসা আদানি আমার মনে একাকার হয়ে গেল, জেগে রইল শুধু পরমারাধ্য প্রফিট। ... ...
তার পুব দিকের ঢালের উঁচুতে বড় বড় ওটের ঘাস জন্মেছে। ওই ঘাসবনের পরেই খাড়া পাহাড় সোজা নেমে গেছে কোশি নদীর পাড় অবধি। একদিন খাড়াই পাহাড়ের উত্তর দিকের গ্রাম থেকে একদল মেয়েবউ ওখানে ঘাস কাটছিল। হঠাৎ এক বাঘ তাদের মধ্যে এসে পড়ে, হুড়োহুড়িতে এক বয়স্কা মহিলা হুমড়ি খেয়ে পড়ে ঢাল বরাবর গড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। বাঘটা যেমন হঠাৎ আসে তেমনই চিৎকার চেঁচামেচিতে রহস্যময় তার পালানো। খানিকটা ভয় কাটলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে মেয়েরা আর ঘেসো জমির ঢাল ধরে খানিকটা নেমে এক সরু ধাপিতে ওনাকে আহত অবস্থায় পাওয়া গেল। মহিলা কোঁকাতে কোঁকাতে বলেন তিনি মারাত্মক চোট পেয়েছেন। ... ...
কোনো এক বিশেষ ব্যক্তির নামাঙ্কিত চার শতাধিক বছর প্রাচীন খিচুড়ি—যেমন উদাহরণ আর দ্বিতীয়টি নেই—আসলে কী, সেরহস্যের কিছুটা সমাধান হল। এবার শুরু এ খানা কত প্রাচীন এই মহাখোঁজ। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
আমাদের শুরুতেই দেখতে হবে, মেডেলের আশা আমাদের ঠিক কোন কোন খেলাগুলিতে ছিল। আসলে অলিম্পিক স্পোর্টসগুলি সম্পর্কে আমাদের ধারণা এতটাই কম থাকে, যে চার বছর ধরে খবরের কাগজের পাতায় তাদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, উন্মাদনার কথা ছেড়েই দিলাম। অধিকাংশ ক্রীড়ামোদীই জানেন না – কোন খেলায় কে অলিম্পিকের যোগ্যতা মান পেরোচ্ছেন এবং কারা কারা অংশ নিচ্ছেন। এটা তো আর শুধুমাত্র ক্রিকেটকে আর মিডিয়াকে দোষারোপ করে কাটিয়ে দিলে চলে না। পাবলিক যা খায় মিডিয়া তাই-ই খাওয়ায়। আমরা এই পর্বে দেখে নেব, কারা কারা পদক পাবার সম্ভাবনা নিয়ে টোকিও গিয়েছিলেন। এবং তারপর একে একে ভিন্ন ভিন্ন খেলায় আমাদের পারফরম্যান্সের বিচার করার চেষ্টা করব, প্রস্তুতি সহ। ... ...
প্রত্যেক আবিষ্কারের যেমন একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, এই টেকনোলজিরও খুঁত ডিম বেচতে গিয়েই ধরা পড়ে। ডিমের ভেতরে ও খোসায় অধিক আয়রন থাকার দরুন কিছুদিনের মধ্যেই ডিমের গায়ে জল ও অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জং পড়া শুরু হয় ও ফেরোসোফেরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়ে খাবার অযোগ্য করে তোলে। ডিম কোম্পানীরা কিছুদিনের মধ্যেই গবেষণার মাধ্যমে স্টেনলেস ডিম তৈরি করতে সক্ষম হয়, কিন্তু তার দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে হওয়াতে সাধারন মুরগির ডিম কেনাই মানুষের পক্ষে শ্রেয় হয়ে ওঠে। ... ...
আজ আমি এক ডাক্তার দিদির গল্প শোনাবো। ডাঃ পারমিতা মুৎসুদ্দি। আমার প্রথম পোস্টিং খড়গ্রাম হাসপাতালে যোগ দেওয়ার থেকেই শুনে যাচ্ছিলাম এখানে একজন মহিলা ডাক্তার আছেন। যিনি বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। হাসপাতালে তখন চরম অবস্থা। আছি দুজন মেডিকেল অফিসার। আমি আর ডাঃ সঞ্জীব রায়। আরেকজন অবশ্য ছিলেন। আমাদের বিএমওএইচ ম্যাডাম। কিন্তু তিনি অনেকটা গেছোদাদার মত। কোথায় যে কখন থাকতেন বলা ভারি শক্ত। অত কঠিন অঙ্ক করতে পারলে কি আর ডাক্তারি পড়ি। আমরা দুজন চিকিৎসক মিলে খড়গ্রাম ব্লকের সাড়ে তিনলক্ষ মানুষের ষাট বেডের একমাত্র হাসপাতালটি চালাতে গিয়ে নাকানি চোবানি খাচ্ছিলাম। এর উপর আবার সঞ্জীবদা সকাল, সন্ধ্যে প্র্যাকটিস করত। ফলে আমি কথা বলার একজন লোকও পাচ্ছিলাম না। ... ...
সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে অর্থবানের টাকার থলির বাঁধন আলগা করার আইনি নির্দেশ সব আব্রাহাম পন্থী ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। ইহুদি ধর্মে প্রথমে ফসলের, পরে আয়ের কিছু শতাংশ (দশ অবধি) অভাবী মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার আদেশ পাওয়া যায় – এর নাম জেদেকাহ (আক্ষরিক অর্থে ন্যায়)। সবাই সমান উপার্জনে সক্ষম নন বলে অর্জিত ধন ভাগ করে নেওয়াটা ন্যায় বলে বিবেচিত হয়। প্রাচীন সমাজে আপামর জনসাধারণের জন্য সরকারি দাতব্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না -রাজা রাজড়ারা কর আদায় করে যুদ্ধু বাধাতেন। জনসেবায় কুয়ো খোঁড়া বা রাস্তা বানানোর কাহিনি ইতিহাসে পাওয়া যায় বটে তবে সেটি সবসময় প্রয়োজন অনুযায়ী সাধিত হত কিনা তা বিতর্কের বিষয়। অতএব দরিদ্র জনগণের ভরসা স্বচ্ছল জনগণ। এই দানের সদিচ্ছা স্বচ্ছল জনগণের ওপরে ছেড়ে না দিয়ে একটা ধর্মীয় আদেশ সেই দান ব্যবস্থাটিকে কায়েম করে। ... ...
আজ সকাল থেকে পুলিস-পিসিকে মনে পড়ছে। পুলিস-পিসি আমাদের বাগবাজারের বাড়ির প্রতিবেশি ছিলেন। পুলিস-পিসি লালবাজারে কর্মরতা ছিলেন।সে আমলে মানে সত্তরের দশকের শুরুতে মহিলা পুলিস সচরাচর দেখা যেত না।আমাদের চারপাশে অন্তত ঐ একজনই ছিলেন।পুলিশ-পিসি ছিলেন অবিবাহিত, কড়া ধাঁচের মানুষ। আমরা পাড়াসুদ্ধ কচিকাঁচারা ওকে ভয় পেতুম।শুধু ছোটরাই নয়, পাড়ার বড়রাও, এমনকি মুরুব্বিরাও পুলিস-পিসিকে বেশ সমঝে চলত।মহিলারা ওর সঙ্গে খানিকটা সম্ভ্রম আর খানিকটা ‘আহা বেচারী, বিয়ে হোল না’ গোছের অনুভূতির মিশেল এক দূরত্ব বজায় রাখতেন।আজ মনে হয়, আমাদের সেই গোপীমোহন দত্ত লেনের সাবেকি পাড়ার জীবনে পুলিস-পিসিকে খানিক ব্রাত্যই করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কেন পুলিস-পিসি পাড়ায় থেকেও এমন ‘আলাদা’ থেকে গেলেন?আর শুধু কি পাড়ায়? তাঁর নিজের পরিবারেও কি তিনি মূলস্রোতের বাইরে ছিলেন না? পুলিস-পিসি বাস করতেন তার বাবার বাড়িতে, এক মাঝারি সাইজের একান্নবর্তী পরিবারে।রোজ ঘড়ি ধরে সকাল নটায় পুলিস-পিসি কাজে বেরোতেন। পিসি কাজে বেরোনো অবধি নিজের প্রাত্যহিক রুটিনে চলতেন আর কাজ থেকে ফিরেই সেতার বাজাতে বসে যেতেন নিজের ঘরে। পরিবারের সঙ্গে তার লেনাদেনা ছিল নিতান্ত কেজো এবং নিক্তিতে মাপা। সংসারে থেকেও তিনি ছিলেন সংসারের বাইরে। ... ...
শহর বা আধাশহরের পরিবারগুলোতে কাজ করতে আসা গৃহ পরিচারিকাদের একটা বড় অংশই আসে শহরের থেকে দূরে কোন গ্রাম মফঃস্বল থেকে। শহরতলির বস্তি থেকেও আসে কিন্তু তার সংখ্যা গ্রাম থেকে আসা মেয়েদের তুলনায় বেশ কম। যারা দূর থেকে রোজ ট্রেনে করে আসেন শহরে কাজ করতে তাদের দিন শুরু হয় মধ্য রাত্রি থেকেই। বাড়ির কাজ রান্না ইত্যাদি করে রেখে তারা ভোরের ফার্স্ট সেকেন্ড ট্রেনগুলো ধরেন, যেগুলোর নামই হয়ে গেছে ‘ঝি-লোকাল’। তারপর সকালের আলো ফোটার সাথে সাথেই তাদের কাজের জায়গায় পৌঁছে কাজ শুরু। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময়েই জোটে না সকালের চা জলখাবারও। এনেকেই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসেন। সেটাই দস্তুর। খাবার দেওয়া দূর কি বাত, বাড়ির বাথরুম ব্যবহার করতে দেয় না এদের। লুকিয়ে যেতে হয় অথবা স্টেশন চত্ত্বরেই সেরে রাখতে হয় সব শৌচ কর্ম। তাতেও সমস্যা বাড়িতে লুকিয়ে বাথরুম ব্যবহার করলে যদি বুঝতে পারে তাহলে অপমান। এভাবেই নিত্যদিন অভ্যস্ত এরা। এভাবেই একের পর এক বাড়ির কাজ সেরে আবার বিকেলের দিকে ট্রেন ধরে ফেরা নিজেদের বাড়ি। অনেক সময়েই এই মেয়েদের ট্রেনে বাসে আমাদের সহযাত্রী হিসেবে পেতে হয় যারা ট্রেনের সীটে না বসে দরজার কাছে পা মেলে ‘আরাম করে’ (!) মুড়ি খেতে খেতে বা গল্প করতে করতে যান। অনেক অফিসযাত্রী মহিলাদের সাথেই ট্রেনে দাঁড়ানোর জায়গার অভাবের জন্য এই নিয়ে অনেক ক্ষোভও দেখতে পাওয়া যায়। আসলে পরিচারিকাদের সাথে কথা বললেই বোঝা যায় ওই ট্রেনের যাতায়াতের পথটুকু বাদ দিলে প্রায় বসার বা ঝিমোবার সময় তারা না বাড়িতে পান, না কাজের ক্ষেত্রে। এ তো গেল যারা দূর থেকে আসেন তাদের কথা। আর যারা শহরের আশেপাশে বস্তিতে থাকেন? তারা কেমন আছে জানতে চাইলে ঢুঁ মারতে হবে ঢাকুরিয়া বস্তিতে কিংবা, বিধাননগর বস্তিগুলোতে। শহরতলিতে বাস করে বাজারের আগুন দামে পাল্লা দিয়ে জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখতে অবস্থা জেরবার। মাথা ওপর একটুকরো আশ্রয়ের ভরসা নেই অথচ তাকে উদয়াস্ত শ্রম দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয় অন্যের সাজানো সংসার। ... ...
জাহাঙ্গির বাদশা স্বয়ং লিখে গেছেন বটে বাজরা খিচড়িকে তাঁর দস্তরখওয়ানে বা-ইজ্জত ইস্তেমাল করার কিস্সা-কারণ, কিন্তু মুঘল শাহি পাকোয়ানে খিচুড়ির দাপুটে উপস্থিতি মহামতি আকবরের জমানা থেকেই। কেমন ছিল সেই আকবরি খিচড়ির স্বাদ? খিচুড়ি মহারহস্য সিরিজের এ কিস্তিটি তাই নিয়েই চর্চা, যার কেন্দ্রে আছে মুঘলাই জমানার চালের হালচাল। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
করোনা প্রতিরোধের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলকে এড়িয়ে খোলা হয়েছিল " PM Care Fund"- যার পরিচালক মন্ডলী শাসকদলের কার্যকর্তায় ভর্তি। উঠেছে ৩৫ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীরা কর ছাড়ের জন্য ঐ তহবিলে ঢেলে অনুদান দিয়েছেন। সে টাকা কোথায় গেল? ভারতের ১৩৮ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ৪০% এর বয়স ১৮- এর নীচে। বাকি রইলো ৮৪ কোটি নাগরিক। ১৫০টাকা (বর্তমান বিক্রয়মূল্য?) করে ডোজ দিতে খরচ হয় ২৫,২০০ কোটি টাকা। এই টাকা কি ভারত সরকারের নেই! ২০২১ শে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বাজেটে মোট বরাদ্দ প্রায় ২.২০ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৩৪ হাজার কোটি কোভিড টীকার জন্য। P. M. Care এ আরো ৩৫ হাজার কোটি। এই সত্তর হাজার কোটি টাকা থেকে ২৫ হাজার কোটি বার করা কি অসম্ভব? আরও আশ্চর্যের বিষয় নিধিরাম সর্দার রাজ্যগুলির দিকে দায়িত্ব পুরো ঠেলে দেওয়া হল, তাদের সরাসরি একটা বেসরকারি সংস্থার থেকে টীকা কিনে নিতে বলা হলো অগ্রিম অর্থ দিয়ে। অথচ টীকার সামগ্রিক উত্পাদন ও বন্টনে রাজ্যের কোনো হাত নেই। বর্তমানে যে হারে দুটি ভ্যাক্সিন উত্পাদন হচ্ছে, তাতে সবাইকে টীকা দিতে গেলে দেড় বছর সময় লেগে যাবে। তার মধ্যে তৃতীয়( বুস্টার) ডোজের দরকার হবে কিনা কে জানে ! প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার ৬০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন যা নাগরিকদের করের টাকা। যুক্তি ছিল জনস্বার্থ। এখন পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য আদার পুনাওয়ালা আবার সাহায্য চাইছেন। অথচ মানুষ টীকা কিনবে সাত থেকে দশগুণ দামে (যদি ক্ষমতায় কুলোয়)। এরা কি সাধারণ ভারতবাসীকে দিয়ে লাশবিপণি খুলে বসেছেন? ... ...
মাঠে মাঠে সরষের ফুল এসেচে। উঁচু,নিচু টিলা জমি। সব ইখন হলুদ। ইখন তো ফুলেরই পরব। সরু লিকলিকে আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে মেলা দিখতে যাচ্ছে বুড়ো,বুড়ি,ছেলে-ছুকরা। কেউ কেউ লাল মোরাম রাস্তা ধরে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটচে। বনের পাশেই ডাঙা টিলা মাঠ,উখানেই মেলা বসেছে। মনোহারি জিনিসের দুকান,বাচ্চাদের বাঁশি,ডুগডুগি খেলনা। কত রকমের খাবার দাবার,তেলে ভাঁজা,ঝিলাপি। কুথাও বা গাছের তলায় মাটির হাঁড়ি-কুড়ি বিচছে। এক জায়গায় সাইকেল,পিক-আপ ভ্যান দাঁড় করানো সারি সারি। ইকটো সাঁওতাল বুড়হা ঘুরে ঘুরে আড়বাঁশি বিচছে। লিজেই সুর তুলচে মন গেলে। লাল ধুলো উড়ছে আকাশে। সেই ধুলো মেখেই মেয়ে মরদ হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। আশপাশের সব গিরাম থিকেই ভিড় জমিয়েছে। শুধু কি সাঁওতাল? বাবুরাও মজা লুটতে আইচে। ... ...
২০১৯ - আমার দেখা প্রথম রমজানে ফুড ডিস্ট্রিবিউশনে বিএমডাব্লিউ, অডি, মার্সেডিজ চড়ে লোক আসছে ডোনেশন নিতে। যেমন পোশাকের জৌলুস, তেমন গয়না। মহিলারা সবাই বোরখা আর হিজাব। শরীরের যতটুকু দেখা যায় দামিদামি মণি-মুক্তো-হিরে। চড়া মেকআপ। আপাদমস্তক ব্র্যান্ডেড। তখনো রোহিঙ্গা ক্লায়েন্ট আমি দেখিনি। আমার জ্ঞানের পরিধি যতটা জানে রিফিউজি শব্দকে - তাকে গরিব হতে হবে। আমার রিফিউজি কলিগ আর এই ডোনেশন নিতে আসা মানুষদের সাথে ঐ সংজ্ঞার কোন মিল নেই। রোহিঙ্গা ক্লায়েন্টরা ওদের ধারেকাছে আসতে পারবে না। আফগানি, ইরানি ক্লায়েন্টের বাড়ি ঢুকলে সুন্দর গন্ধ। দারুন সব চায়ের সেট। অসাধারণ চা, পেস্তা, বাদাম, বিরিয়ানি, ফিরনি। রোহিঙ্গা ক্লায়েন্টের বাড়ি জুতোর জঙ্গলের পাশে রান্না, দুর্গন্ধ ভরা ঘর। দম বন্ধ হয়ে আসে। জুতোর পাশে বসি। পানের পিকের পাশে বসি। নিজেও পান খাই। ... ...
প্রথম যেদিন সাকিনা মেজদিকে ওইরকম থুতনি নিয়ে দেখল এবং মেজদির মুখে শুনল যে ওর ক্যানসার হয়েছে সে কী কান্না বুড়ির। শুধু বলে, “ও মা, তাহলে তো তুই বাঁচবি না রে মেয়ে৷” মেজদিই বরং ওকে সান্ত্বনা দিত। এরপরই সাকিনা বিবি এমন একটা কাজ করেছিল যা আমি কোনোদিন ভুলব না। মেজদিকে, যবেই আসত গোটা তিনেক করে ডিম দিত খেতে। পয়সা নিত না। কিছুতেই নিত না৷ বলত, “তোর শরীর খারাপ রে মেয়ে৷ রোজ খাবি একটা করে। দিশি ডিম। উপকার হবে৷” অবাক হতাম। এক হতদরিদ্র গ্রাম্য মহিলা কোন্ মনের জোরে এমন কাজ করতেন!! ... ...
সুতরাং আমরা এই লেখায় অন্তত কয়েকজন এমন ক্রীড়াবিদের নাম লিখে রাখি যাঁদের কথা শোনা যাচ্ছেনা। ধরা যাক দীক্ষা ডগরের কথা। গল্ফে অদিতি অশোকের পাশাপাশি ইনিও ফাইনাল রাউন্ডে খেলছিলেন। গল্ফেই উদয়ন মানে, অনির্বাণ লাহিড়ী পুরুষদের ইভেন্টে ছিলেন। ২০ কিমি রেসওয়াক ইভেন্টে ফাইনাল রাউন্ডে ছিলেন সন্দীপ কুমার, রাহুল রোহিলা, ইরফান থোরি (পুরুষ ), প্রিয়াংকা গোস্বামী এবং ভাবনা জাট (মহিলা )। মহিলাদের ডিসকাস থ্রো তে কমলপ্রীত ক'র । রোইং এ অর্জুন লাল এবং অরভিন্দ সিং। সেইলিং এ পুরুষদের ইভেন্টে বিষ্ঞু সার্ভানন, কে সি গণপতি, বরুণ ঠক্কর, এবং মহিলাদের ইভেন্টে নেত্রা কুমানন। শুটিং এ সৌরভ চৌধুরি। কুস্তির দীপক পুনিয়ার কথা আমরা তাও একটু আধটু শুনতে পেয়েছি, পঞ্চম স্থানে শেষ করায়। হাতে গোনা যে কয়েকজনের নাম এখানে লেখা হলো, এঁরা সবাই স্ব স্ব বিভাগে ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। এর বাইরে রয়ে গেলেন বহু ক্রীড়াবিদ, যাঁদের অনেকের নাম আর কোনদিনই প্রচারের আলো পাবেনা। প্রসঙ্গত ভারত এবার মোট ১২০ জনের দল পাঠিয়েছিলো, দেশের ইতিহাসে এর থেকে বেশি খেলোয়াড় আগে কখনো অলিম্পিকে অংশ নেন নি। ... ...