মেঘনার মন ভালো নেই। ওর মনে হচ্ছে দুটো কাছের মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেঘনা দেখল একটা চড়ুইপাখি... ... ...
---- "অ বৌদি, কি কর গো? ভাবলাম যাই দেখে আসি, তোমরা কেমন আছ?" ---- "আরে এসো এসো, আয় রমা, এই তো এখানে এসে বস।" ... ...
ফিরে এসে দেখি আমার থার্মোডিনামিক্স, মেশিন ডিজাইন আর ফ্লুইড মেকানিক্স বই তিনখানা বেচুরা বেচে দিয়েছে। দরজা খুলে রেখে যাওয়াই আমার ভুল হয়েছিল। তিন তলায় বেচুর ঘরে গিয়ে দেখি বই বেচার পয়সায় জমিয়ে মেহফিল বসেছে। যেতেই সবাই হই হই করে ওঠে এসো এসো এসো। বেচু বলে থার্মোডিনামিক্স বইটা বেঁচে গেছে, নিয়ে যাবি? আমাদের এই তিনতলা হোস্টেলে সবকটা ছেলে জাতে মাতাল হলেও তালে আল্লারাখা, সুপার অব্দি। মাথা গরম করলে ফাঁকতালে মালটাও ফসকে যেতে পারে, তাই ওদের সঙ্গেই বসে যাই। ... ...
টুকুন কোঁচড় থেকে ডিমগুলো বের করতেই সক্কলে হাঁ হয়ে গেল! নদীর ধারে এমন হুটোপাটির চড়ুইভাতি, তাতে আবার ডিম! তার ওপর আধাআধি ভাগাভাগি নয়, মাথাপিছু একটা করে গোটা ডিম! প্রথম চোটে আনন্দে কথা ফুটল না কারো মুখে। তারপর বিস্ময় একটু থিতোতেই হইহই করে উঠল কচিকাঁচার দল। যক্ষের ধনের মতো ডিমগুলো কোথায় রাখবে তাই নিয়ে টগবগ করতে লাগল নানান মতামত। আজ ওদের চড়ুইভাতি। বিল্বপত্র গ্রামের একধার দিয়ে বয়ে গেছে রূপনারায়ণ। নদীতটের এই অঞ্চলটা ফাঁকা। উঁচুনিচু। এদিকে-ওদিকে ঘাসের গুছি, শুকিয়ে যাওয়া কাশ আর বেতঝোপ। ফেরিঘাটও নেই কাছাকাছি। জনহীন হওয়ায় এইখানটা ছেলেপুলেদের ভারি প্রিয়। কখনও ওরা দলবেঁধে খেলতে আসে, কখনও বা জলে ঝাঁপিয়ে সাঁতার কাটে। ... ...
লোকটা মরে ফর গেল না তো! অজ্ঞান হয়ে গেছে নাকি? কপালের কাছটা তো অনেকটা কেটে গেছে, হলদে হ্যালোজেন আলোয় রক্তের দাগ কালো দেখাচ্ছে। আশেপাশে কেউ দেখেছে নাকি? এদিকে তো আবার সব জায়গাতেই সিসিটিভি ক্যামেরা বসান। কিন্তু দোষ তো লোকটারই, সেটাও নিশ্চয় বোঝা যাবে ক্যামেরায় আর ওর কাছে অস্ত্র ... ...
অনিমেষ সচরাচর রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে আসে। গোপাল বহুদূর থেকে ওর গন্ধ পেয়ে ডেকে উঠত। সেই ডাক শুনে ভৌ ভৌ করে দৌড়োদৌড়ি করত গলির কুকুর, তারপর বড় রাস্তার কুকুররা ডেকে উঠত -মেক্সিকান ওয়েভের মত কুকুরের ডাক পৌঁছত অনিমেষের কানে। গলি টুকু প্রায় দৌড়ে ঢুকত বাড়িতে। গোপাল দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে মুখ চাটত অনিমেষের। লিপি ততক্ষণে ভাত বসিয়েছে। আজ পাড়া নিশ্চূপ, গলি শুনশান -শুধু আলোর তলায় লিপি একলা দাঁড়িয়ে । লিপির দাঁড়ানোর ভঙ্গী, ওর কান মুখ ঢাকা শাল, ওর দীর্ঘ ছায়া, মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে আসা মশা অনিমেষকে যেন সমস্ত বলে দিল এক মুহূর্তে। এমনকি অনিমেষ যেন লিপির হাতের হাতের ছেঁড়া শিকলিও দেখতে পেল যাতে গোপালের বকলশ ঝুলে রয়েছে। হাতের ব্যাগ নামিয়ে রেখে অনিমেষ বলল- -'কখন? কষ্ট পেয়েছিল?' -'ঘরে চলো'। লিপি বলেছিল শুধু। ... ...
সবচেয়ে বেশি বছর ধরে, সবচেয়ে বেশি করে ত্রিদিব এটা বুঝেছে, তার নিজের জীবনে সবচেয়ে কদর্য ব্যাপারটা আসলে সে নিজেই। কিন্তু, যখন শেষ অব্দি এটা বুঝল, তখন বড্ড দেরি হয়ে গেছে, আর, নিজেকে নিজেই বদলানো মানে নিজেকে দিয়ে বদলানো, যে নিজের মধ্যেই রয়েছে গন্ডগোলটা। ওসব আসলে হয় না। কিন্তু এসব জেনে টেনে গেলে সুবিধে একটা হয়ই। নলেজ ইজ পাওয়ার। সুঠাম সঙ্গত দক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়। ... ...
বেশ দূর। বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর। যখন পুলিশ স্টেশনে গেলাম দেখলাম বকুল বসে আছে। তার মুখ ফ্যাকাশে। নিজের নাম বলতেই পুলিশি স্টাইলে অফিসার কিছু প্রশ্ন করলেন আমাকে। তারপর একটা চিরকুট বের করে দেখালেন- দেখেন। সুইসাইড নোটে আপনাদের দুজনের নাম আর ফোন নম্বর লেখা আছে। অবশ্য তেমন কিছু না। শুধু লেখা আপনাদের সাথে যেন যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু আপনারাতো কোনো রিলেটিভ নন। স্রেফ বন্ধু। অবশ্য তার এক চাচাকেও ফোন করা হয়েছে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে। তিনি দুপুরের মধ্যেই এসে পড়বেন। তাকে বলা হয়েছে তিনি যেন ছেলের বাবাকেও খবর দেন। তিনিও হয়ত এসে পড়বেন বিকেলের মধ্যে। ...কিন্তু ঘটনা হলো কেন সে সুইসাইড করল? আপনারা কী জানেন এ ব্যাপারে? ...অত মানুষ থাকতে আপনাদের নাম কেন সে লিখে গেলো সুইসাইড নোটে? বিষয়টা পুলিশ হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে... ... ...
বাঁ দিকের রাস্তাটা নেব নাকি সোজা? ঘরে পৌঁছব কী করে? বারবার এই রাস্তায়ই বা আসছি কেন? কীরকম যেন গা ছমছম করছে। কী করব? যদি এখান থেকে বেরোতে না পারি। এখানেই ঘুরব? এত বলে বড়রা, এতবার করে বলে, দলের বাইরে না যেতে – একদম নতুন জায়গা, কাউকে চিনি না, রাস্তা চিনি না... নিজের দলের সাথে সবসময় থাকতে। ... ...
দু’কামরার ছ’শো তিরিশ ফুট ফ্ল্যাটে ততোধিক ছোটো ব্যালকনিটায় বসানো টব, ঝোলানো টবে নানান ফুল, পাতাবাহার গাছে এমন ভাবে ভরিয়ে রেখেছে যে দূর থেকে দেখলে যে কেউ ব্যালকনি না ভেবে ছোট্ট একটা বাগান বলেই মনে করবে। তাতানের ছ’বছর বয়েস পর্যন্ত সোনারপুরের একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতো ওরা। ছোটোবেলায় খাওয়া নিয়ে খুব ঝকমারি ছিল। ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে স্বভাবেরও ছিল তাতান। হঠাৎ তখন পাঞ্চালী আবিষ্কার করে গাছ-গাছালির কাছে নিয়ে গেলে ছেলে একদম চুপ করে থাকে। বড়ো বড়ো নরুনচেরা চোখদুটোয় গাছপালাদের অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতো। গাছ দেখতে দেখতে মুখের খাবার থুঃ করে ফেলে না দিয়ে বিনা বাধায় খেয়ে নিত। তাতানের পাঁচ বছর বয়েসে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়। সে বছর সাংঘাতিক এক কালবৈশাখীর ঝড়ে শোভনদের সেই ভাড়াবাড়ির ছোট্টো বাগানটায় বেশ ক’টি গাছ উপড়ে ভেঙে পড়ে। ... ...
গুরু কয়েছেন স্যাভেজের মধ্যে যেমন সেজ, ঠিক তেমনি জানার মধ্যে জান লুকিয়ে আছে। এই যে গুরুর কাছে সমাদ্দারস্যার আসেন, ওনার কাছ থেকেই না জানলাম কিভাবে তিরুপতির থেকে কাটাচুল এনে উনি "বালকুন্তল" ব্র্যান্ড উইগ বানিয়ে বাজারে ছাড়েন। স্পেশাল মাল ওনলি ফর টেকো বাচ্চাস। এই সমাদ্দার স্যারের থেকে কম জেনেছি! মধ্যমগ্রামে ফ্ল্যাটের পার স্কোয়ার ফিট হাজার হয়ে গেছে, অশোকনগর হরিদাস নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের হেডমাস্টারের গরুভাড়া দেওয়ার সাইড বিজনেস আছে, চাম্পাহাটি স্টেশনের এক মাসির কাছে বেস্ট সবরিকলা পাওয়া যায়, মায় "যাহাদের লিঙ্গে তিল থাকে তাহাদের কামভাব প্রবল হয়" এত অব্দি। ... ...
তখনই সবাই জানতে পারে যে, এই দু’মুখো যন্ত্রটি আদতে ফরেনের মাল। সাগরবালার শ্বশুর অর্থাৎ অজাত ফরেনের বাবা ফরেন শব্দটির ধ্বনিমাধুর্যে বিমোহিত হয়ে পড়ে। খেতে নিড়ানি দিতে দিতে, পিঠের দাদ চুলকোতে গিয়ে, এমন কী রাতে বিছানায় তার বউ মালতীকে সোহাগ করার সময় ফলুই বর্মন ‘ফরেন’ শব্দের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়। শব্দটি নিয়ে সে মুখের ভেতরে এধার ওধার করে। তখন ধানের গোছ, দাদনিসৃত রস ও মালতীর শরীরের উষ্ণতা পার হয়ে সে নতুন এক রকম সুখ টের পাচ্ছিল। মালতী সন্তানসম্ভবা সে ঠিক করে ব্যাটাছুয়া যদি জন্মায়, তবে তার নাম হবে ফরেন বর্মন। বিশেষত তার নিজের নাম ফলুই হওয়ায় ‘ফ’-এর বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এ-ও ঠাকুরের এক লীলা। ... ...
সে পেছন দিকে আর না তাকিয়ে একা উস্কোখুস্কো হয়ে যবুথবু পা ফেলতে থাকে রেল লাইন ধরে। তার ডানহাতের দিকে রেল পাঁচিল আর কয়েকটি ভাঙাচোরা রেল কোয়ার্টার, কোয়ার্টারগুলো এখন মালিকানাহীন ভূতুড়ে আস্থানা; কোনো দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে, মনে মনে বলে সে “হে আল্লাহতালা! যেসব ডাক্তাররা আমার কালুয়ার চিকিৎসা ঠিক মতো করেনি; তাদের তুমি হেদায়েত দান করো, ক্ষমা করে দিও তাদের।” ... ...
প্রথমে দেখতে পাই নি। ছিল হয়তো,খেয়াল করি নি। টিফিনের সময় চোখে পড়ল। বছরের মধ্যিখানে নতুন ছেলেপুলে ভর্তি হওয়া পাড়াগাঁয়ের স্কুলে এমন কিছু বিরল ঘটনা নয়। তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেইও। প্রথম দিন গোবেচারার মতো পেছনের বেঞ্চিতে বসে থাকবে,কেউ লক্ষ্য করবে না। দিদিম২৪৬৭;২৪৯৫; নাম জিজ্ঞেস করবেন, জানতে চাইবেন আগে কোন স্কুলে পড়ত। শহরের স্কুল থেকে এসে থাকলে নরম হেসে বসতে বলবেন। ... ...
"দিম্মা, ও দিম্মা! শোনো না, আমাদের না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে, তুমি আমায় একটু সাহায্য করবে? ও দিম্মা!" মণিমালা দেবী আকস্মিক এই ডাকে পেছন ফিরতেই দেখলেন, মিমি তার গলা জড়িয়ে খাটের উপর বসে! এখনো তার গালে অতীতের কথা চিন্তা করার প্রমাণ দৃশ্যমান। "এ বাবা, দিম্মা! তুমি কাঁদছো?" "না, দিদিভাই! ও এমনি। তুমি বলো কী বলছিলে!" "দিম্মা আমাদের স্কুলে না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে! তুমি আমায় একটু বলে দেবে?" ... ...
ইয়োর অনার, আমি সত্যি কথাই বলব। আমি তো আর কম দেখলাম না, স্যার, জগতটা যদি ঠিকঠাক দেখেন আপনার ঘেন্না করবে স্যার! এভাবে বেঁচে থাকাও অন্যায়। বাপ ফাপ জানি না কিন্তু যা কিছু করছি তাতে তো কিছু সুবিধার বুঝছি না। আজ আমাদের মানুষ মরছে কাল ওদের। আচ্ছা স্যার আমাদের তোমাদের কী? মানুষের ভাগ বাটোয়ারা সেসব তো হত স্যার মিশরে, হলিউডের ফিল্মে। লোহার শিকলের ঝনঝন শব্দ, মানুষ মরুভূমির বুকে পাথর টেনে আনছে, পিরামিড তৈরি হচ্ছে। ... ...
সুমনের কোন গন্ধবাতিক নেই। যেখানে সেখানে যে কোন গন্ধ তার নাকে লাগে না। বিশেষত যে গন্ধ যেখানে লাগবার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ভালো কিংবা মন্দ হোক যে কোন রকম। গন্ধ তার প্রাত্যহিকতাকে কোনো ভাবেই প্রভাবিত করে না। গন্ধকে প্রিয় কিংবা অপ্রিয় কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করার বাতিক ও তার নাই, যেমন ছিল দুলালের। দুনিয়ার তাবৎ ভালো গন্ধকেই তার লাগতো হাসনাহেনা ফুলের মতো। কিন্তু এই ঝামেলা সুমনের নাই, পাশের দোতালা বাসায় পোলাও রান্না হলে ঘি গরম মশলা ফোড়নের গন্ধই নাকে লাগে তার, মেসে শুঁটকি রান্না হলে শুঁটকির। রোজ রাতে মধুবন রেস্তোঁরার পাশ দিয়ে ফেরার সময় ড্রেনে জমে পচে উঠা বাসি খাবারের নাড়ি-ভুড়ি উল্টে আসা গন্ধ আর বারান্দায় শিককাবাব ভাজার পেটের তীব্র ক্ষুধা জাগিয়ে দেয়া গন্ধ মিলেমিশে যে খানিক গন্ধময় ঘোর তৈরি করে তার ক্লান্ত ক্ষুধার্ত শ্রান্ত দেহ ঘিরে, তাও খুব স্বাভাবিকই বোধ হয় সুমনের। মোটেই তা বাতিকগ্রস্ততার পর্যায়ে পড়ে না। কিন্তু আজ ২৫ মাইল সি এন জি চালিত যান আর বর্ষার কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় ১০ মাইল রিক্সায় আদিত্যপুর গ্রামে দুলালের বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই তার চোখ যায় বাড়ির শেষ মাথায়। ... ...
হঠাৎ শুনলাম আমাকে কেউ ডাকছে – তার গলার আওয়াজ খুবই মিষ্টি৷ “কে কথা বলছেরে বাবা? আমি ভয পেয়ে ওই ঘর থেকে দৌড়ে চলে গেলাম৷ কেউ যেন আমাকে তাও ডাকছিল মিষ্টি আওয়াজে৷ “ভয় পেও না আমি তোমায় সাহায্য করতে এসেছি...। ... ...
জনির মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো................................. ছেলেটাকে দেখলেই বড়রা ওকে বলত, "খাও খাও। বেশি বেশি খাও । ভালো ভালো খাবার খাও।".............................. আইসক্রিমের কোণ চাটতে চাটতে দুগ্গা ঠাকুর দেখছিলাম। এমন সময় পকেটে কি যেন খরখর করে উঠলো........ ... ...