বিশ্বরূপা থিয়েটারের সেই বাড়ি জুড়ে ছিল শিশিরকুমারের স্মৃতি। আমি দেখেছি কী অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন অভিনেতারা, কলাকুশলীরা শিশিরকুমারকে। শিশিরকুমারের দুই খাস অনুচরকে আমি দেখেছি। একজন তাঁর খাস চাকর রামচরণ। আমরা বলতাম রামচরণদা আর একজন তাঁর খাস ড্রেসার গোবিন্দ অধিকারী। আমাদের গোবিন্দ কাকা। এমনই প্রভাব ছিল শিশিরকুমারের যে বিশ্বরূপার তদানীন্তন মালিকদের দুজন, দক্ষিণেশ্বর সরকার এবং রাসবিহারী সরকারকে সকলে বলতেন মেজবাবু আর ছোটবাবু। বড়বাবু? নৈব নৈব চ। সেটা একমাত্র শিশিরকুমারের প্রাপ্য। প্রত্যেকদিন, কেউ না কেউ একবার শিশিরকুমাররের নাম নিতেনই। একটা শ্রদ্ধার জায়গা, সেই সময়েই আমার মনে ঢুকে গেছিল সে সব শুনে। ... ...
পবিত্র বোধ হয় আবার কিছু বলবার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সুভাষ নজরুলের দিকে তাকিয়ে বলল, নজরুল সাহেব, আজ সকালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে আপনি যখন কনফার্ম করলেন আপনিই নজরুল ইসলাম, আমি তখনই আপনাকে একটা প্রস্তাব দেব ভাবছিলাম। সেই জন্যেই আমি আপনার নবযুগের কথাটা তুলছিলাম। আপনারা তো এতক্ষণে শুনেইছেন, কয়েকমাস আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেবার বাসনায় আমি চিত্তরঞ্জন দাশ মশায়ের সঙ্গে দেখা করি। তিনি অতি স্নেহে আমাকে তাঁর সঙ্গী করতে রাজি হলেন। আমাকে তিনি প্রথম দিনেই দুটো কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন; এক, গৌড়ীয় বিদ্যায়তনের অধ্যক্ষতা, এবং দুই, বাংলায় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচারের দায়িত্ব। ওই যে স্টেট্স্ম্যানের মন্তব্যের যে-কথা পবিত্রবাবু বলছিলেন সেটা ওই প্রচারেরই একটা অংশবিশেষ। কিন্তু আমার বাসনা আছে, বাংলার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটা বাংলা দৈনিকপত্র বের করার। আমি ভাবছিলাম, এ ব্যাপারে যদি আপনার সক্রিয় সাহায্য পাওয়া যায়। ... ...
হিব্রু পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার উর শহরে বাস করতেন আব্রাম এবং সেরাই। গোরু ভেড়া চড়িয়ে কাটে নিঃসন্তান জীবন। স্থানীয় রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী আব্রাম বিশ্বাস করেন নানান দেব দেবতায়। একদিন ঈশ্বর প্রকট হলেন আব্রামের কাছে। বললেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। আমাকে মান্য করো। আব্রামকে নির্দেশ দিলেন- তোমার পৈত্রিক দেশ ত্যাগ করে চলো কানান অভিমুখে (আজকের ইজরায়েল, সিরিয়া – হাঁটা পথে বারো দিন) সেখানে বংশ প্রতিষ্ঠা করো। তোমার নাম হবে আব্রাহাম, বহু সন্তানের জনক।সেরাই হবে সারা (অভিজাত মহিলা / সুখী) । কানান তোমার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসভূমি। ... ...
গলা খাঁকড়িয়ে ইবন, মুখে দুটো লবঙ্গ ফেলে বললেন, সে এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম, বুঝলেন! সবে চিন দেশ ছেড়েছি। সমুদ্রের কোন অজানা অঞ্চল দিয়ে চলেছি মাঝিমাল্লার দল বুঝতেই পারছে না। শোঁ শোঁ হাওয়া। আকাশ কালো অন্ধকার। দশ দিন সূর্যের মুখ দেখিনি। বেঁচে থাকবো কি না বুঝতেই পারছি না! জাহাজের সবাই আবার চিন দেশে ফিরে যেতে চাইলো কিন্তু তখন তা আর সম্ভব নয়। বিয়াল্লিশ দিন সমুদ্রে আমাদের এইভাবেই কাটল। অনিশ্চিত। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না কী হতে চলেছে। তেতাল্লিশ দিনে দূর থেকে একটা পাহাড় দেখা গেল। পাহাড়! মানে ডাঙা! বাতাসের বেগ আমাদের সেই দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। জলের মধ্যে পাহাড়! অভিজ্ঞ নাবিকের দল বলাবলি করতে লাগলো, এরকম কোনো ধারণাই তাদের নেই। কোথাও মস্ত বড় কিছু ভুল হচ্ছে! ... ...
জায়গাটার কথা ভাসা ভাসাই বলেছিলেন গণেশদা, কম কথা বলেন; খোঁজ কোরে কোরে জয়ি পৌঁছিয়ে গেলো একদিন জি-সি-লাহার দোকানের উল্টোদিকে ন্যূয়র্ক সোডা ফাউন্টেন রেস্টোর্যান্টে। এখানে ওখানে নানা টেবিলে ছড়িয়ে বসে আছে অনেক চেনা মুখ। দাড়িওয়ালা যে ভদ্রলোক এগজিবিশনে ওর ছবিটাকে বাঁধিয়ে আনতে বলেছিলেন দেখা গেলো তিনি বসে আছেন গণেশদার সাথে। জয়ির অভ্যেস আছে বিনা আহ্বানে বসার, কফি হাউজে এরকম বসেছে বিস্তর, বসে গেলো। ... ...
সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সাহায্যার্থে অর্থবানের টাকার থলির বাঁধন আলগা করার আইনি নির্দেশ সব আব্রাহাম পন্থী ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। ইহুদি ধর্মে প্রথমে ফসলের, পরে আয়ের কিছু শতাংশ (দশ অবধি) অভাবী মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার আদেশ পাওয়া যায় – এর নাম জেদেকাহ (আক্ষরিক অর্থে ন্যায়)। সবাই সমান উপার্জনে সক্ষম নন বলে অর্জিত ধন ভাগ করে নেওয়াটা ন্যায় বলে বিবেচিত হয়। প্রাচীন সমাজে আপামর জনসাধারণের জন্য সরকারি দাতব্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না -রাজা রাজড়ারা কর আদায় করে যুদ্ধু বাধাতেন। জনসেবায় কুয়ো খোঁড়া বা রাস্তা বানানোর কাহিনি ইতিহাসে পাওয়া যায় বটে তবে সেটি সবসময় প্রয়োজন অনুযায়ী সাধিত হত কিনা তা বিতর্কের বিষয়। অতএব দরিদ্র জনগণের ভরসা স্বচ্ছল জনগণ। এই দানের সদিচ্ছা স্বচ্ছল জনগণের ওপরে ছেড়ে না দিয়ে একটা ধর্মীয় আদেশ সেই দান ব্যবস্থাটিকে কায়েম করে। ... ...
হঠাৎ যুবকদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করে, এখানে যদি থেকে যেতে চাই আমরা দুদিন, কাছাকাছি অ্যাকোমোডেশন কোথায় পাবো? এখান থেকে বাঁ দিকে গিয়ে মাইল আষ্টেক দূরে বান্দোয়ান নামে একটা ছোট শহর আছে, সেখানে শুনেছি পি-ডব্ল্যু-ডি-র একটা ডাক-বাংলো গোছের কিছু আছে, খোঁজ করে দেখতে পারেন। বাঁদিকে না গিয়ে যদি ডান দিকে যান, তিন-চার মাইলের পর সাত-ঘুরুং নদীর কাছে একটা সরকারি ট্যুরিস্ট লজ গোছেরও আছে শুনেছি। এ ছাড়াও যেখানে বসে আছেন সেই চৌহদ্দির মধ্যে চারখানা ঘর আছে, তবে তা কী পছন্দ হবে আপনাদের? ... ...
ইন্ডিয়ান মেডিকেল গেজেটে প্রকাশিত একটি হিসেবে জানা যায় ১৮১৭ থেকে ১৮৩১ সালের মধ্যে শুধু অবিভক্ত বঙ্গে এক কোটি ৮০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। মৃতদের মধ্যে এক বিরাট অংশ ছিল ব্রিটিশ সেনা। তবে তার আগেও প্রতি বছর হাজারে হাজারে মানুষ মারা গেছে কলেরায়। কলেরার আতঙ্ক ইউরোপিয়ানদের মধ্যেও যে কতটা জাঁকিয়ে বসেছিল তার চমকপ্রদ সাক্ষ্য মেলে পৃথক এক ব্রিটিশ সরকারি নথিতে। ১৭২০ সাল নাগাদ জনৈক ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ডানকান ওলাবিবি মন্দির তৈরি করার জন্যে দিয়েছিলেন চার হাজার টাকা। হাওড়ার শিবপুর অঞ্চল তখন ছিল গভীর জঙ্গল। সেই জঙ্গলে ওলাবিবি রূপে পূজিত পাথরের ঢিপিকে ডানকানের টাকায় তৈরি হওয়া মন্দিরে স্থানান্তরিত করে শিলাখন্ডটির ওপরে এক দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তী কালে শিবপুরে বন কেটে বসতের প্রসার ঘটলে স্থানীয় জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় ওলাবিবির মন্দিরের জনপ্রিয়তা লোকমুখে আরও ছড়িয়ে পড়ে। ... ...
মিষ্টি হাসে জয়মালিকা। সামনের গ্লাসটার কমলা রঙের সফ্ট্ ড্রিঙ্কটায় ছোট একটা চুমুক দিয়ে বলে, থ্যাঙ্ক য়্যু। একটা কথা একটু বিশদে বলে দিই। কুরুখ আমাদের ভাষার নাম, ঐ ভাষার সুবাদেই আমাদের অঞ্চলের লোকরা আমাদের কুরুখ বলে পরিচয় দেয়। আসলে যে উপজাতির মানুষ আমরা, তার নাম হলো ওরাওঁ। এ নামটা অনেক বেশি পরিচিত, আপনারা অনেকেই শুনেছেন নিশ্চয়ই। আর, সৌন্দর্যের যে কথা ম্যাডাম বললেন, সেটার সম্বন্ধে শুধু এইটুকুই বলবো, আমি আমাদের অঞ্চলের সেরা সুন্দরী নই, এমনকি, সেরাদের মধ্যে একজনও নই। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে, আমাদের গণমাধ্যমে তথাকথিত ট্রাইবালদের যে অতি পরিচিত মুখটা দেখানো হয়, সেটা কোন্ ট্রাইবের কেউ জানে না। ট্রাইবাল-মেনস্ট্রীম ডিভাইডের ট্রাইবাল ফেস ওটা। ... ...
এই গুলিয়ে ফেলা থেকে আরো বড় বিভ্রান্তি জন্ম নেয়। মধ্য যৌনতায় (খেয়াল করবেন, ‘মধ্যলিঙ্গ’ বলি নি) অবস্থানকারী মানুষরা যেহেতু ‘ট্রান্সজেণ্ডার’ এর অংশ, তাই কেউ কেউ সমকামিতা আর অন্তর্বর্তী লিঙ্গকে একসূত্রে ফেলে দেয়। এদের উৎপাতেই ফেসবুকে ‘গে শি-মেল হিজড়ে’ নামের একাধিক পেজ অবস্থান করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সমানাধিকার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ লেখা থাকে, কিন্তু সাইটটাকে সাজানো হয় অন্তর্লিঙ্গ মানুষদের ছবি দিয়ে। অন্তর্লিঙ্গ ও সমপ্রেম দুটোই যেহেতু গোঁড়াদের বক্রদৃষ্টির আওতায়, তাই উদারপন্থীরা হিজড়ে ও সমকামীদের এক মঞ্চে বসিয়ে তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। চেতনা উদযাপক লেখায় অনেকে রূপান্তরিত, রূপান্তরকামী, ইউনাক, অ্যাণ্ড্রোজিনাস, বৃহন্নলা সব্বার কথা লিখে যান। বুঝি যে, তাঁরা দরদ দিয়ে লিখছেন, সমবেদনাও জাগাচ্ছেন পাঠকদের মধ্যে, কিন্তু উল্লিখিত নামগুলোর মধ্যে একের সাথে আরেকের পার্থক্য কিছুই বোঝাতে পারছেন না। ফলে ঠেলাগাড়ির ঠেলা খেয়ে সবাই গিয়ে পড়ছে ‘ট্রান্স’ বর্গে। ... ...
ঘুমের অতলে হঠাৎ জেগে ওঠে হলুদ আলোর চাঁদ। আমি আর ঠাকুমা সেই আলোয় নিশ্চিন্তিপুরের পথে। ক্ষেতের আইল, নদীর ঘাটে ভাঙা বাড়ি, মরিচের ক্ষেত, আমবাগান সব পেছনে রেখে আমি আর ঠাকুমা ছুটছি। আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি যে! ঠাকুমা আর আমি বারবার একই ক্ষেতের আইলে ঘুরপাক খাচ্ছি। কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে তাঁত মাকুর আওয়াজ। চাঁদের আলোয় আরেক পোচ হলুদ জমলো। বাতাস কেটে ভেসে এলো সুর। বাঁশির সুর। ... ...
গোলেনূর দাদীর বাড়ির পেছনে ঝোপ-জঙ্গল থেকে ঘুঘু পাখি থেমে থেমে ডেকে উঠছে। আর গোলেনূর দাদীর ছায়াঘেরা উঠোন একটু পরপর চঞ্চল হয়ে উঠছে রান্নার ছ্যাঁত ছ্যাঁত শব্দে। কড়াইয়ে এবার থেঁতলানো রসুন পড়লো। একটু নাড়তেই তা বাদামী হয়ে আসলো। এরপর অনেকটা পেঁয়াজ কুঁচি আর বুকচেরা কাঁচামরিচ যোগ হলো তাতে। গনগনে আঁচে তেতে থাকা কড়াইয়ে তা পড়তেই ঝাঁঝ ছড়িয়ে পড়লো উঠোনে। দমকে কেশে উঠলাম আমি। ... ...
পলিটিক্স্ তো এক-একজনের এক-এক রকমের হতে পারে। যেমন ধরুন আপনি নিজেই ন্যাশনাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ হয়েছেন। তার মানে তো এই নয় যে, সরকারী স্কুল-কলেজ যারা এখনও ছাড়তে রাজি নয় আপনি তাদের বিরোধী। মূল একটা ঐকমত্য থাকলেই সংবাদপত্রে এক সঙ্গে কাজ করা যায়, বলে মুজফ্ফর, সেখানেই আমাদের প্রগতিশীলতা। নানা মতকে একটা প্ল্যাটফর্মে এনে আলোচনায় কোন আপত্তি নেই আমাদের। নিজেদের একটা মত থাকতেই পারে, কিন্তু বিরুদ্ধ মতকেও যথেষ্ট শ্রদ্ধা দেখিয়ে সেই মত কাগজে ছাপতে কোন আপত্তি হবে না আমাদের। তবে হ্যাঁ, কৃষক শ্রমিক অভুক্ত অর্ধভুক্তদের কথা আমরা লিখব, লিখব পূর্ণ স্বাধীনতার কথা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পাব না। সংবাদপত্র কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের মুখপত্র এ কথা আমরা বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাঁবেদারও নয় কারো। ... ...
সকালের আলোয় নন্দাদেবী, ত্রিশূল অন্নপূর্ণা লালে লাল হয়ে বলে ওঠে, আজ যে হোলি। আমি অমনি শুনতে পাই পাহাড়ে ঢোলের আওয়াজ। দূর থেকে ভেসে আসছে। আজ তেওহার। এখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সবাই রং মাখায়। সবাই একজায়গায় জড়ো হয়ে একে অন্যকে রং লাগিয়ে দিচ্ছে। কেউ তোমাকে জোর করে রং দেবে না। হাতে হাতে মিঠাই, আঙুর। মিঠাই-এর কথায় মনে হল, আজ হোলি। ঘরে কিছু মিছু আনিয়ে রাখা দরকার। অবিশ্যি কেই বা আসবে আমার বাড়ি। কিন্তু আয়োজনটি যে সম্পূর্ণ হওয়া চাই। যদি আমায় পড়ে তাহার মনে …। ভালো মিষ্টি কিনতে হলে আলমোড়া যেতে হবে। এই জায়গাটা তো একেবারেই গ্রাম। আলমোড়া বাজারে খিম সিং মোহন সিং রোউতালার দোকান থেকে বালমেঠাই, চকোলেট আর সিঙ্গোরি কিনে আনতে হবে। সিঙ্গোরি ভারী মজার। ... ...
২০১৭-র শীতকাল। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত’র কাছে আমার জানার ইচ্ছে একেবারেই সিনেমা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে। সেই ইচ্ছেই আমার জানতে চাওয়ার মধ্যে ধরা পড়েছে আশা করি। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁর গোলপার্কের বাড়িতে গেলেও এত প্রশ্ন করার দুঃসাহস আগে হয়নি। তিনি নিজেই এই দুঃসাহস জুগিয়েছেন প্রশ্রয় দিয়ে। এই কথোপকথন তাঁর অভিষিক্তার ফ্ল্যাটে বসে। প্রবল শরীর খারাপ নিয়েও অনেকক্ষণ সময় দিয়েছেন আর এর বাইরেও হয়েছে অনেক ব্যক্তিগত কথা। সেগুলো এখানে অপ্রয়োজনীয়। আর এই প্রথম প্রকাশ পাচ্ছে এই কথোপকথন, চিরতরে তাঁর হারিয়ে যাওয়ার বেদনা গায়ে মেখে। দ্বিতীয় কিস্তি। ... ...
রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি শুধু নন, এই মহামনীষীর লেখার সূত্রে আমরা অনেকেই জগৎ চিনেছি। অথচ কী আশ্চর্য, রবীন্দ্রনাথ পড়লে আপনার কখনও মনেই হবে না নিউজিল্যান্ড বলে কোনো কহতব্য দেশ আছে, বা সেদেশে ইংরেজ বাদে আর কেউ থাকে, বা আর কোনো পুরোনো সভ্যতা ছিল যার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। প্রকাশিত রবীন্দ্ররচনাবলি ঘাঁটলে নিউজিল্যান্ডের মাত্র একটি উল্লেখ পাবেন ইংরেজের কলোনি প্রতিষ্ঠার সূত্রে একটি প্রবন্ধে। অথচ দেখুন, রবীন্দ্রনাথের সময়, তাঁর বাল্যকালে বহু ভারতীয় তথা বাঙালি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে পাড়ি জমিয়েছেন, নানা অবস্থায়। রবীন্দ্রনাথ কি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের কথা জানতেন না? রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ক্যাথারিন ম্যানসফিল্ড (তখন ইংল্যান্ডে থাকতেন), নিউজিল্যান্ডে-জাত লেখিকা, রবীন্দ্রনাথ কি তাঁর কথা জানতেন না? নাকি মনে করার মতন কেউ নন বলে মনে করেননি? ... ...
সুতরাং আমরা এই লেখায় অন্তত কয়েকজন এমন ক্রীড়াবিদের নাম লিখে রাখি যাঁদের কথা শোনা যাচ্ছেনা। ধরা যাক দীক্ষা ডগরের কথা। গল্ফে অদিতি অশোকের পাশাপাশি ইনিও ফাইনাল রাউন্ডে খেলছিলেন। গল্ফেই উদয়ন মানে, অনির্বাণ লাহিড়ী পুরুষদের ইভেন্টে ছিলেন। ২০ কিমি রেসওয়াক ইভেন্টে ফাইনাল রাউন্ডে ছিলেন সন্দীপ কুমার, রাহুল রোহিলা, ইরফান থোরি (পুরুষ ), প্রিয়াংকা গোস্বামী এবং ভাবনা জাট (মহিলা )। মহিলাদের ডিসকাস থ্রো তে কমলপ্রীত ক'র । রোইং এ অর্জুন লাল এবং অরভিন্দ সিং। সেইলিং এ পুরুষদের ইভেন্টে বিষ্ঞু সার্ভানন, কে সি গণপতি, বরুণ ঠক্কর, এবং মহিলাদের ইভেন্টে নেত্রা কুমানন। শুটিং এ সৌরভ চৌধুরি। কুস্তির দীপক পুনিয়ার কথা আমরা তাও একটু আধটু শুনতে পেয়েছি, পঞ্চম স্থানে শেষ করায়। হাতে গোনা যে কয়েকজনের নাম এখানে লেখা হলো, এঁরা সবাই স্ব স্ব বিভাগে ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। এর বাইরে রয়ে গেলেন বহু ক্রীড়াবিদ, যাঁদের অনেকের নাম আর কোনদিনই প্রচারের আলো পাবেনা। প্রসঙ্গত ভারত এবার মোট ১২০ জনের দল পাঠিয়েছিলো, দেশের ইতিহাসে এর থেকে বেশি খেলোয়াড় আগে কখনো অলিম্পিকে অংশ নেন নি। ... ...
যারা এতদিন বিভিন্ন জনসভায় মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়ে কান্নাকাটি করছিলেন, ভোট মিটতেই এবং করোনা বাড়তেই যে যার ঘরে গিয়ে খিল এঁটেছেন। যখন মানুষের জন্য কাজ করার, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সবচেয়ে বেশি দরকার তখন এই রকম কয়েকটি তরুণ যুবক ছাড়া কারোরই পাত্তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যেকটি পাড়ায় পাড়ায় এখন এরকম ছেলেদের বেশি দরকার। তারা যদি পাড়ার প্রতি বাড়ির অসুস্থ রোগীদের খবর রাখে, তাঁদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন সহ অন্যান্য সহজ শারীরিক পরীক্ষা গুলি করতে পারে এবং রোগীর অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে তাহলে বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে। ... ...
তার দৌড় ছিল খিদিরপুরের জাহাজঘাটা অবধি। একটা বড় বাক্স ভরে গেলেই একদিন নৌকায় করে হুগলি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যাও কলিঙ্গা বাজার। খিদিরপুর। কলিন লেন, টার লেনে জাহাজে মাল চড়ানোর জন্য বসে আছে চিকনদারি কাজের ব্যবসাদার। মাল পাঠাবে নিউ অরলিন, চার্লেস্তান, সাভানা আর কীসব খটমটো নামের সব জায়গায়। আলেফ সেসব হদিশ জানত না তখন। কে বিক্রি করে কাকে তাও না। আলেফের চাচা মোকসাদ আলি আগে এই কাজ করত, তারপরে চলে গেল ওই দেশে। তার কাছেই শুনেছে সে নাকি বসেছে এখন নিউ ইয়র্কের ডকে। মাল পৌঁছালে চলে যায় তার কাছে কি তার মত আরও সব লোকজন যে যেখানে আছে। চাচা যে এরপর তাকেও সঙ্গে নিতে চাইবে তখনো খবর ছিল না আলেফের। ... ...
পবিত্র পরিচয় করিয়ে দিলো, এই আমিনুলদা, বিপ্লবের ভার বহন করতে করতে চিঁড়ে-চ্যাপ্টা হওয়ার যোগাড়; আর উজ্জয়িনী, উজ্জয়িনী ভৌমিক, এত বড় নামটা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে, সাবজেক্টিভ আর অবজেক্টিভ কণ্ডিশন মিলে গেলেই ওজনদার নামটা ত্যাগ করে বিপ্লবকে নিয়ে নেবে মাথায়। আমিনুলদা, আমাদের নতুন কমরেড সোমেশ্বর, সোম বলে ডাকতে পারো, ফাটাফাটি কবিতা লেখে। লাল-টালের ছিটে আছে, রক্তপাতও ঘটাচ্ছে একটু একটু, আর এই ওর বন্ধু স্বরাজ। একে একে বিভিন্ন কলেজের কিছু কিছু ছেলেমেয়ে আসতে শুরু করলো, আড্ডা শুরু হলো, একটু-আধটু কবিতা, গান, আর তার পরেই জোর তর্ক। এ তর্কে যোগ দিতে পারলো না সোমেশ্বর, বিষয়টা প্রায় অজানাই ওর। তেনালী নামের কোন একটা জায়গায় কম্যুনিস্ট পার্টির লোকজনরা কিছু একটা মীটিং করেছে, সেই মীটিং নিয়েই তর্ক। ... ...