আমরা এক সচেতন প্রয়াস-এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিগত চার বছরে রামনবমী উত্তর পর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসার স্বরূপ বুঝতে বিভিন্ন জনপদে তথ্যায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮-২০২০ এই তিন বছর আমরা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ভাটপাড়ায় ক্ষেত্র গবেষণা চালিয়েছি, ইতিমধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশিত। সেই ধারাবাহিকতায় তেলেনিপাড়া হোল দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ... ...
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আন্তরিক ভাবে লড়েছি। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাব হয়তো ছিল, কিন্তু তা বলে চুপ করে বসে কারও মৃত্যু মেনে নিই নি। অনেক রোগী বেড পাননি। তবু মেঝেতেই রোগীর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এমন কী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও চেষ্টা করেছি। শুধু আমি একা নই, আমার সাথে অন্যান্য চিকিৎসক এবং জুনিয়ার চিকিৎসকরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নার্সদিদিরা, ওয়ার্ডবয় ভাইরা সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেক সময় সাহায্য করেছেন। ... ...
ছোট থেকেই বাড়িতে, বৃহত্তর পরিবারে বামপন্থার আবহাওয়া, জলবায়ু সবই ছিল। ছিল মুক্ত চিন্তাও। রুশ ও চিন দেশের সাহিত্য পড়া হত নিয়মিত। মামার বাড়িতে আসত সোভিয়েত দেশ, সোভিয়েত নারী। ঝকঝকে ছাপা। রঙিন ছবি। মনে আছে আমার এক পিসির কাছ থেকে একবার মাত্রওস্কা পুতুল উপহার পেয়েছিলাম। মা পুতুলের ভিতর আর একটা পুতুল। তার ভিতর আর একটা। তার ভিতর আরও একটা। সবশেষে একটা খুদে মেয়ে পুতুল। বাবা কিনে আনতেন সোভিয়েত দেশের রূপকথা। ইভানের গল্প। যে রাতেরবেলায় শস্য পাহারা দিত। আর ছিল ঠাকুরমার ঝুলি। রেডিওতে গল্পদাদুর আসরে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে বুদ্ধুভুতুম আর লালকমল নীলকমল শোনাত। আমরা ভাইবোনেরা শুনে শুনে সেগুলো মুখস্ত করে ফেলতাম। আর ছিল আবোলতাবোল। সহজপাঠ। এইসব মিলিয়েই বড় হয়ে ওঠা। মোটের ওপর পরিবারের জলবায়ু ছিল মুক্তচিন্তার বামপন্থী দর্শনের। ... ...
সোনা সুগন্ধি জড়িবুটি রত্নসম্ভার! শেবার রানি চলেছে জেরুজালেম। যেতে যেতে রানি কী করছে? মনেমনে মহড়া দিচ্ছে প্রশ্নবাণগুলোকে নেড়েচেড়ে ধার দিয়ে রাখছে মনের সিন্দুকে নিজেকে তৈরি করতে করতে পথ চলছে রানি বিপুলকে যাচাই করতে গেলে তার সমকক্ষ হতে হবে সমকক্ষ না হলে পরখ হবে কেমন করে? তা না হলে সেটা হয়ে উঠবে অক্ষমের আর্তনাদ! রানি তো সেই দলে পড়ে না সেই কোন কাল থেকে হেঁয়ালির মধ্যে জ্ঞান আর মেধা যাচাই এর খেলা শুরু হয়েছে উদ্ভট শ্লোক! তার ভেতর থেকে অর্থ খুঁজে বের করে আনো রানি নিঃসীম মরুভূমির বুকে একাকী চলতে চলতে নিজেকে তৈরি করছে এক মনে আর ভাবছে রাজা তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন তো? রাজা তার হাত থেকে উপহার নেবেন তো?মরুজাহাজের আঁকাবাঁকা এক দীর্ঘ সারি মরুভূমি ভেঙে ভেঙে চলেছে তারা নিজেকেও কি ভেঙে ভেঙে চলেছে রানি? এই যাত্রা পথে কত অনিশ্চিয়তা ও বিপদ মাথায় নিয়ে চলেছে সে! প্রতিমুহূর্তেই নিজেকে নানাভাবে নতুনরূপে দেখছে সে! বন্ধু দেশের পাশ দিয়ে, শত্রু দেশের সীমানা দিয়ে আগে থেকেই অনেক প্রস্তুতি নিতে হয় সশস্ত্র কড়া নজরদারি। ... ...
লোকটির প্রশ্নগুলো কিছুই বুঝতে পারছিল না নিমাই। দুর্বোধ্য, অব্যক্ত একটা যন্ত্রণা হচ্ছিল তার ভেতরে। জেরার পর জেরায় খুবই ক্লান্ত বোধ করছিল। তীক্ষ দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে ছিল সার্টিফিকেটটার দিকে। আর কান পেতে শুনছিল গির্জার ঘণ্টাধ্বনি। এই শব্দটি ওর খুব প্রিয়। গির্জার ফ্রেস্কোগুলোও খুব সুন্দর। কালই একবার গিয়ে দেখতে হবে। শুধু একবার যদি ওই ধুলোয় ধূসর হয়ে যাওয়া কাগজটা ওর হাতে দিত লোকটা। খুব যত্ন করে আগে ধুলোগুলো পরিষ্কার করত সে। তারপর সেটাকে ল্যামিনেশন করে নিজের আলমারির লকারে রেখে দিত। কিন্তু লোকটা এখনও দিচ্ছে না কেন? কেন ওইভাবে ধরে আছে কাগজের টুকরোটা? বিশ্রিভাবে ওর চোখের ওপর নাচাচ্ছে? চোখের ইশারায় ওকে ধুলোমাখা মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসতে আর ক্ষমা চাইতে বলছে? নিমাইয়ের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে যায় ... ...
পরিবর্তনশীলতা মানেই খামখেয়ালিপনা (arbitrariness) নয়। - একদল মানুষ একটি বস্তুকে জল নামে চেনে। কিন্তু, যেহেতু শব্দ-জল আর বস্তু-জলের মধ্যে পরিবর্তনশীল ‘কিছু একটি’ আছে বলেই তারা হঠাৎ বস্তু-জলকে ‘স্থল’ বলে ডাকতে শুরু করে না। নামকরণের সময় সচেতনে বা অবচেতনে তারা নামের মাধ্যমে বস্তু/ বিষয়টির কোনও একটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য যেন প্রকাশ পায় (বা নাম থেকে বস্তু/ বিষয়টিকে কিছুটা হলেও চেনা যায়) –সে’টুকু খেয়াল অবশ্যই রাখে। এমনকি একজন ‘মাতাল’কে দেখে ‘পেটে জল পড়েছে’র মতো (ব্যঞ্জনামূলক) মন্তব্য করার সময়ও সে সচেতনে/ অবচেতনে বা অভ্যেসে (ঐতিহাসিক সংগঠন বজায় রেখে) মদ ও জলের পানযোগ্যতা, তাদের তরল অবস্থা, ইত্যাদি ধর্মের (ক্রিয়াবৈশিষ্টের) একটি তুলনামূলক সংশ্লেষ সেরে ফেলে। ... ...
পরলোকের জীবনকে পান-ভোজনের মাধ্যমে উদযাপনে বিশ্বাস করত এট্রাস্কানরা, তাই কফিনের ঢাকনা আর দেয়ালচিত্র দুই জায়গাতেই এই ছবি। যৌনতা ও নাচগানের দেয়ালচিত্রও সমাধিগৃহে থাকত। দুই, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এট্রাস্কান সমাজে কম ছিল। কীভাবে বোঝা যায়? এই ধরনের পানভোজনের দৃশ্যে, গ্রীক সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষকে কখনওই একসাথে দেখা যেত না। গ্রীক নারী ছিল মূলতঃ অন্তঃপুরবাসিনী- রাজনীতি ও সমাজে তার ভূমিকা ছিল সীমিত। অতএব গ্রীক কুমোরশিল্পে গোষ্ঠীগত পানভোজনের দৃশ্যগুলোতে পুরুষেরাই একে অপরের সাথে থাকত। রোমানরাও এই ব্যাপারে গ্রীকদের থেকে খুব আলাদা ছিল না। অন্যদিকে এট্রাস্কানদের পানভোজনের দৃশ্যে নারী-পুরুষ একত্রে সামাজিকতা করত। ... ...
এই বক্তিয়াররা আরেকটি কাজ খুঁজে পেলেন। দেখা গেলো রাজা বা আমলাদের সামনে সকল নাগরিক নিজেদের কেস ঠিক ভাবে উপস্থিত করতে পারছেন না। বাদী বা বিবাদী তো আর্ট অফ পাবলিক স্পিকিং শেখেন নি। আন্তিফন নামক গরগিয়াসের এক চেলা পরামর্শ দিলেন দুই বিবদমান পক্ষের প্রয়োজন এমন একজন মানুষের যিনি মোটামুটি লেখাপড়া জানেন এবং আদালতে দাঁড়িয়ে কোন পক্ষের যথাযথ বয়ান দিতে পারেন।এই মানুষটি হবেন একজন নিঃস্বার্থ বন্ধু মাত্র যাঁদের কাজ অশিক্ষিত বাদী বিবাদীদের সহায়তা করা। অন্য অর্থে বলা যেতে পারে ইতস্তত ভ্রমণরত বাগ্মীরা একটা কাজের কাজ খুঁজে পেলেন! গ্রিকরা সেটি মেনে নিলেন কিন্তু সাব্যস্ত হলো মামলায় এই সহায়তার জন্য কোন পারিশ্রমিক দেওয়া বা নেওয়া চলবে না। বন্ধু রূপে যদি তাঁরা বিচারকের সামনে অবতীর্ণ হন, টাকা পয়সার প্রশ্ন ওঠে কোথা থেকে। মামলা জিতে কোন পক্ষ যদি সেই বক্তাকে আগোরার কোন শুঁড়ি খানায় দু পাত্তর সুরা পান করায় সেটাকে অবশ্য উকিলের ফি বলে ধরা হবে না। ... ...
আমাদের আরো একটি প্রোগ্রাম হল “কম্যুনিটি হেল্থ প্রমোটার”। রেফিউজি হতে হবে। সিটিজেন হলেও রেফিউজি হিসেবে এ দেশে এসেছে এমন মহিলা ইংরেজী পড়তে লিখতে আর বলতে পারলে এই প্রোগ্রামে ঢোকা যায়। ১৮ বছর হতে হবে। ওদেরকে বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হয় আর অনেক সাপোর্টিভ কাগজপত্র। মূল উদ্দেশ্য হল কম্যুনিটিকে স্বাস্থ্য সচেতনতার উপকারিতা নিয়ে বলা আর পরামর্শ দেওয়া। এই প্রোগ্রাম আমার হাত দিয়েই শুরু। কঠিন কাজ - কারণ, প্রথমত: ট্রেনিং এর জন্য উপযুক্ত স্পিকার খুঁজে বার করা, ওদের রেজ্যুমে জমা দিয়ে আ্যাপ্রুভ করা, এবং স্পিকাররা কোন সান্মানিক পাবে না। পুরোটাই স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান সময় কম্যুনিটিকে উৎসর্গ করা। দ্বিতীয়ত: কারা কারা এই প্রোগ্রামের জন্য এলিজেবল। তৃতীয়ত: প্রত্যেক ভাষার একজনকে খুঁজে বের করে রাজী করানো- অনেক কাজ। যথারীতি কোন রোহিঙ্গা মহিলা পেলাম না। ... ...
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে। ... ...
বহু দিন ধরে ঐতিহাসিকরা, তাত্ত্বিকরা উৎস খুঁজতে চেষ্টা করেছেন এই দশকব্যাপী ভয়ানক, বিষময় সংঘর্ষের। কেউ দায়ী করেন অটোমান সাম্রাজ্যের পতনকে, কেউ ব্রিটিশ চক্রান্ত বা ১৯১৭-র বেলফোর ঘোষণাকে, কেউ বা বারংবার ব্যর্থ হওয়া শান্তিপ্রস্তাব অথবা বহু শতাব্দীর বঞ্চনার ইতিহাসকে। সেইসব কূট তর্কের মধ্যেই দ্রুত বদলে যায় জেরুজালেম, ইতিহাসের চিরস্থায়ী রক্তাক্ত রঙ্গমঞ্চ, যা একইসাথে ক্রিশ্চান, ইহুদি ও ইসলাম ধর্মবিশ্বাসী মানুষের পবিত্র ভূমি। কারুর বধ্যভূমি, কারুর নির্বাসন, কারুর বা প্রতিশ্রুত নিজভূম। ইতিহাসের ক্লাস নয়, একজন সাধারণ মানুষের ডায়রির পাতায় ধরে রাখা সেই আমূল বদলের একটুকরো ছবি, হীরেন সিংহরায়ের কলমে। ... ...
আগুন জ্বললো পরের দিন, সম্পূর্ণ নতুন আবহে। এমনটা কাজি দেখেনি আগে; দোলের আগের দিন, সন্ধ্যে পেরিয়ে তখন রাত অনেকটাই। পরের দিন পূর্ণিমা, আজই আকাশ ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। নানারকমের কাঠকুটো যোগাড় করে গ্রামের ছেলেরা এসে জমিদারবাবুর প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালাল। ছেলের দল বলল নেড়াপোড়া, কিরণশঙ্কর বললেন চাঁচর। তারপর বললেন, ওদের নেড়াপোড়া কথাটাও কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত। ধানকাটা হয়ে গেছে, পিঠেপায়েসের উৎসবও শেষ। এখন নতুন করে জমিতে কাজ শুরু হবে, তার আগে ক্ষেতে পড়ে-থাকা শস্যস্তম্ব, মানে, শস্য কেটে নেবার পর ক্ষেতে পড়ে থাকে যেটুকু, যাকে গ্রাম্য ভাষায় নেড়া বলে, তা পোড়ানো হবে। ... ...
মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামতের ভেতরে ছোট ছোট নানান দর্শনীয় বিষয় ছিল যার অধিকাংশই আজ নষ্ট হয়ে গেছে, বিশেষ করে কেল্লার ভেতরের যেসব দৃষ্টি নন্দন বাগান ছিল আজ সেসব গভীর জঙ্গলে ঢাকা পরে আছে, যেমন আজ সেদিনের কেল্লার ‘মহল সেরা’ এলাকায় গেলে দেখা যাবে একটি বিরাট অঞ্চল জঙ্গলে পরিণত হয়েছে অথচ নবাবী আমলে এই এলাকাতেই ছিল দেশ বিদেশের দামি সুগন্ধি ফুলের বাগান, আজও অবশ্য সেই জঙ্গলের ভেতরে নবাবী আমলের কিছু ফুলের গাছ দেখা যায়। ... ...
বিদেশে এসে যুদ্ধ করে টিকে গেলে NRI - আর যে অতি কষ্ট করছে টিকে যাওয়ার জন্য - তার দিকে নাক সিঁটকে সমালোচনা- বিদেশে থাকার এত লোভ!” - নিজে সহজে রাস্তা করতে পেরেছে বলে অন্যদের সংগ্রাম/ ইচ্ছে / স্বপ্ন ছোট করার অধিকার অর্জন করে নেয়। স্টিমুলাস চেক - কী সব কথা! বাড়ি বসে বসে গরিব লোককে খোলামকুচির মত টাকা দিয়ে ওদের কাজ করার মানসিকতা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে! আমার চেনা বেশ কিছু অতি স্বচ্ছল পরিবার সেই নিয়মের ফাঁকে দিয়ে স্টিমুলাস চেকগুলো পেল! এক গুজরাটি পরিবার যার বেশ কিছু বাড়ি আর ব্যবসা - দশ হাজারের ডলারের বেশি স্টিমুলাস চেক পেয়ে নানা জায়গা ঘুরে এল। আর আমার সাথে কথা হলেই শুধু বলবে যে কাজ করার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনিফিট আর স্টিমুলাস দিয়ে শ্রমিকদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বাঙালি তো লজ্জায় বলতেও পারে না যে স্টিমুলাস পেয়েছে। যে মুখে সমাজ সংস্কার আর দাতব্যের এত গল্প - সোসাইটিতে নাক উঁচু স্টেটাস - ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় দয়ার দান যারা নেয় তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ। কিন্তু নিজের ভাগ কেউ ছাড়েনা। হ্যাঁ - নিজের ভাগ ছাড়ার তো কথা ও না। কিন্তু অন্য কেউ ভাগ নিচ্ছে সেটা যদি হজম না হয় - তবে তো সমস্যা। ... ...
মহামারীর আবহে মামুলি এক মাস্ককে ঘিরে যে বহুমাত্রিক তাৎপর্য সেটিও আমাদের কাছে ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। শতবর্ষ আগের নিছক গজ আর কাপড়ের মাস্ক আজ বিপণনের অমূল্য সামগ্রী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তাবড় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সংবাদমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া আর সর্বজ্ঞ হিতৈষীদের প্রতিনিয়ত উপদেশ ও পরামর্শের ঠেলায় এবং 'ইনফরমেশন প্যানডেমিকে'র দাপটে সাধারণ মানুষ আজ দৃশ্যতই বিভ্রান্ত। আর মানুষের মনের এই বিভ্রান্তি ও আতঙ্ককে মূলধন করেই দুনিয়া জুড়ে পসরা বসেছে নানা ধরনের মাস্কের। শুধু স্বাস্থ্য সুরক্ষার তাগিদে নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের চাহিদা, প্রয়োজন, মর্যাদা, ও মানসিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে রকমারি মাস্ককে অনবরত বাণিজ্যিক ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে 'কালচারাল' বা 'ফ্যাশন স্টেটমেন্ট' হিসেবেও। ... ...
জোর? জোর করার কথা আসে কোথা থেকে? – বলেন আবুবক্র্, মোগল সম্রাট আকবরের জন্মের কথা জানেন তো? তাঁর জন্মের সময় তাঁর পিতা যুদ্ধপর্যুদস্ত হুমায়ুন কিছু পারিষদ এবং গর্ভবতী যুবতী সম্রাজ্ঞীসহ অমরকোটের রাণার দুর্গে আশ্রিত। সেই অবস্থায় পুত্র জালাল উদ্দিন মহম্মদ আকবরের জন্ম হয়। পারিষদদের কাছে মহার্ঘ কিছু আছে কিনা খোঁজ করতে করতে জৌহর নামক একজন পণ্ডিত আমীরের কাছে দু'শো খোরাসানী স্বর্ণমুদ্রা, একটি রজতনির্মিত রিস্টলেট এবং এবং খানিকটা মৃগনাভি হুমায়ুন পেয়ে গেলেন। স্বর্ণমুদ্রা বা রজতনির্মিত অলঙ্কারটি হুমায়ুন গ্রহণ করলেন না। মৃগনাভিটুকু স্বহস্তে বহু ছোট ছোট টুকরো করে উপস্থিত সকলকে একটি করে টুকরো তিনি উপহার দিলেন। নিজের শরীরজাত যে মৃগনাভির সুগন্ধে মাতোয়ালা মৃগটি নিজেই উন্মাদগ্রস্ত হয়, সেই গন্ধে বহু যোজন আমোদিত হল। মঙ্গলাচরণ করে হুমায়ুন উপস্থিত সকলকে বললেন, আপনারা প্রার্থনা করুন, এই আশ্চর্য সুগন্ধের মতো আমার এই সদ্যোজাত পুত্র আকবারের সুকর্মের ফল এবং যশ যেন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ... ...
আটের দশকের একটি ঘটনা মনে পড়ে। লেবাননে তখন গৃহ যুদ্ধ চলছে। ইউনি লিভারের মাইক ডার্বিশায়ারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনারা যে লেবাননে সাবান শ্যাম্পু বেচছেন তার টাকা ডলারে বা পাউনডে ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত নন? যে সব দেশে মাল বিক্রির ঝুঁকি নিয়ে আপনারা চিন্তিত সে তালিকায় লেবাননের নাম দেখি না! মাইক হেসে বললেন আমরা সে দেশে কোন ব্যাঙ্ক নয়, সরাসরি একটি লেবানিজ পরিবারের সঙ্গে বাণিজ্য করি। যুদ্ধ হোক আর শান্তি বারি বর্ষিত হোক, তারা ঠিক দাম মিটিয়ে দেবে। শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম। ইউনি লিভারের মতো কর্পোরেট ব্যাপারী মনে করেন লেবাননের একটি পারিবারিক সংস্থা তাঁদের আস্থার যোগ্য। সবাই তাহলে একই ম্যানেজমেন্ট মন্ত্রে বিশ্বাসী নন। একই ইস্কুলে এম বি এ করেন নি। ... ...
রাত সাড়ে এগারোটা। প্রচণ্ড জোর আওয়াজ আসছে নিচ থেকে। বিল্ডিং-এর একেবারে নিচে লোহার মেইন গেট। ওই গেটে প্রচণ্ড ধাক্কা মারছে কারা যেন! ঝন ঝন - খট খট - ধড়াম ধড়াম। নানারকমের আওয়াজ হয়ে চলেছে গেটে। সঙ্গে চিৎকার। শোনা যাচ্ছে না ভালো মত। কী যেন বলে চলেছে উগ্র চিৎকারে। হলঘরের ভেতর আর কোনও কথার শব্দ নেই। যা শব্দ, এখন কেবল বিল্ডিং-এর নিচ থেকে। মেইন দরজার বাইরে কি কথাবার্তা চলছে - কান পেতে শুনছে ওরা। কথাগুলো ফার্সিতে। হুমকি দিয়ে চলেছে। বোঝা যাচ্ছে, ওরা সেই কোম্পানির মালিকপক্ষের লোক। ওদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। ওদের সেই ফার্সি কথাগুলো বাংলা করলে হয়, সব কটাকে মেরে ফেলব। পুঁতে দেব এখানেই। কেউ ফিরতে পারবে না দেশে। দরজা খোল…। কথাগুলো হয়ে চলেছে অনেকগুলো কন্ঠস্বরে। এবার সঙ্গে অন্য একটা আওয়াজ। বুকের ভেতরগুলো কেঁপে উঠলো। ফাঁকা ফায়ারিং হচ্ছে নীচে। কেউ নামছে না ওরা নিচে। গেট ভেতর থেকে লক করা। ওরা বুঝতে পারছে লক একবার খুলে দিলে আর উপায় নেই। আজ রাতেই মরতে হবে সবার। কেউ খোলেনি লক। কিন্তু ওই লোহার গেট কতক্ষণই বা বন্ধ করে রাখা যাবে? ভেঙে ফেলার চান্স আছে। বেরোতে তো হবেই কখনও না কখনও। বেরোলে যে কী হবে সেটা আর ভাবতে পারছে না ওরা। বাইরে চলল চিৎকার। ... ...
গতকাল, কাজি বলে, ঘুম আসছিল না কাল রাতে; তারপর হঠাৎ কেমন মনে হল, একটা কবিতা লিখতে হবে। ওদিকে মুজফ্ফর তখন গভীর ঘুমে। আমি উঠে ভয়ে ভয়ে আলোটা জ্বালালুম, পাছে ওর ঘুম ভাঙিয়ে দিই। দেখলুম ও ঘুমিয়েই চলেছে, আলো বুঝতেও পারছে না। তখন লিখতে শুরু করলুম, পেনসিল দিয়ে। কেমন যে একটা তোলপাড় হচ্ছিল মনের মধ্যে বোঝাতে পারব না আপনাকে। মনে হচ্ছিল, দোয়াত-কলম দিয়ে পারব না লিখতে, কালি শুকিয়ে যাওয়া, দোয়াতে আবার কলম ডোবানো, এসব করতে পারব না, করার সময় হবে না। পেনসিল দিয়ে কিন্তু ঝর ঝর করে লেখাটা হয়ে গেল অবিনাশদা। লেখাটা দেখুন, বিশেষ কিছু কাটাকুটি নেই, যেন আমার মাথার মধ্যে ছিলই কবিতাটা। শুরু করতেই নিজেই নিজেকে যেন টেনে নিয়ে গেল। লেখা শেষ হতে, মুজফ্ফরকে ঘুম ভাঙিয়ে টেনে তুললুম। কাউকে একটা শোনাতেই হবে। ... ...
এদিকে শেবার রানির মন উথাল পাথাল। সে আগ্রহী। সে ভয়ানক কৌতূহলী। সে শান্তি পায় না। সে জানতে চায় সেই রাজাকে। প্রজ্ঞা তো হৃদয়ের অলঙ্কার! এও তো একরকমের যুদ্ধ যাত্রা। মননের যুদ্ধ। মেধার যুদ্ধ। চাতুর্যের কৌশলী তির। জ্ঞানের শাণিত তরবারি। মগজাস্ত্র! রানি ভাবে, এই যাত্রা কি খুব সহজ? মোটেই নয়। ইতিহাসে এমন যুদ্ধযাত্রার হদিশ কি পেয়েছ কখনো আলমিত্রা? পনেরশ মাইলের এক দীর্ঘ মরুপথ। সে পথ এঁকে বেঁকে গেছে আরব মরুভূমির গভীর প্রদেশ দিয়ে, নোনা সাগরের তীর ঘেঁষে মোআব, জর্ডন, কানানের ফসলের খেত আর আঙুর বাগানের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেছে জেরুজালেমের পাহাড়ে। দুইমাসেরও বেশি সময় চাই। ... ...